রূপ পরিবর্তিত করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার রোধে তৎপরতা শুরু করেছে বাংলাদেশ-ইন্দোনেশিয়া থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া, ইসরায়েল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ। আবার আরোপ করা হচ্ছে নানা বিধিনিষেধ।
এ পর্যন্ত করোনার পরিবর্তিত রূপের ও ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের যত ধরনের ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে, তার মধ্যে ডেল্টা সবচেয়ে বেশি ছোঁয়াচে।
মহামারির এ পর্যায়ে দেশে দেশে সংক্রমণ বাড়তে থাকার জন্য দায়ী করা হচ্ছে এই ভ্যারিয়েন্টকে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিদ্যমান টিকাগুলো ডেল্টার বিরুদ্ধে কতটা কার্যকর, তা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে জোরদার টিকা কার্যক্রম সত্ত্বেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বিভিন্ন দেশের মহামারি পূর্ববর্তী স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার চেষ্টা।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, বেশির ভাগ ধনী দেশে টিকা কার্যক্রমের মাধ্যমে দৈনিক সংক্রমণ অনেকটা কমিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে পরিস্থিতি যেকোনো সময় উল্টে যেতে পারে বলে উদ্বিগ্ন দেশগুলো।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক টেডরোস আধানম শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বিশ্বের কমপক্ষে ৮৫টি দেশে শনাক্ত হয়েছে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। পর্যাপ্ত টিকাদান না করা দেশগুলোতে দ্রুতগতিতে বাড়ছে এর বিস্তার।
এমন পরিস্থিতিতে চলতি সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশে আবারও কমপক্ষে এক সপ্তাহের জন্য জাতীয় পর্যায়ে কঠোর লকডাউন শুরু হতে যাচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ায় ৫০ লাখ বাসিন্দার বৃহত্তম শহর সিডনিতে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে দুই সপ্তাহের কঠোর লকডাউন।
নিকটতম প্রতিবেশী অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে কোয়ারেন্টিনমুক্ত ভ্রমণ ব্যবস্থা তিন দিনের জন্য স্থগিত করেছে নিউজিল্যান্ড।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ইন্দোনেশিয়ায় শনিবার রেকর্ড ২১ হাজার মানুষের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। করোনা প্রতিরোধী টিকার দুই ডোজ নিয়ে ফেলার পরও চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ভাইরাসটিতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনায় শঙ্কিত প্রশাসন।
গত এপ্রিলে ভারতে প্রথম শনাক্ত হয় ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ডেল্টা।
স্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, ভাইরাসটি এত বেশি ছোঁয়াচে যে, একটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে এর বিস্তার নিয়ন্ত্রণে দ্রুততম সময়ে টিকার আওতায় আনতে হবে কমপক্ষে ৮০ শতাংশ মানুষকে।
অথচ বিশ্বের ধনী দেশগুলো চলতি বছরেও ৮০ শতাংশ নাগরিককে টিকার আওতায় আনতে প্রস্তুত নয়।
যুক্তরাজ্যে করোনার সাম্প্রতিক শনাক্তের ৯০ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রে শনাক্ত ৩০ শতাংশই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রথম অস্তিত্ব জানা যায় মানবদেহে সংক্রামক করোনাভাইরাসের নতুন প্রজাতির। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভাইরাসটির রূপ পরিবর্তিত নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হচ্ছে।
এসব ভ্যারিয়েন্টের মধ্যে যুক্তরাজ্যে প্রথম শনাক্ত আলফা ভ্যারিয়েন্টের (বি.১.১.৭) সংক্রমণের মাত্রা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়। কারণ ২০১৯ সালে আবিষ্কৃত করোনার চেয়ে ৭০ শতাংশ বেশি সংক্রামক ছিল নতুন ভ্যারিয়েন্টটি।
ইউরোপের গবেষকরা বলছেন, আলফার চেয়েও ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ বেশি সংক্রামক ডেল্টা।
স্বাস্থ্যবিধি শিথিল বলে আগস্ট নাগাদ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে করোনা সংক্রমণের ৯০ শতাংশ ডেল্টা হবে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা।
এ অবস্থায় স্পেন, নেদারল্যান্ডসসহ বিভিন্ন দেশে অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি শিথিল থাকলেও মাস্ক পরার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের টিকা বিশেষজ্ঞ ড. অ্যানেলিস ওয়াইল্ডার স্মিথ বলেন, ‘ডেল্টা বেশি মানুষকে আক্রান্ত করেছে। এটি দ্রুত ছড়াতে সক্ষম। ভারতের পর অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া আর যুক্তরাজ্যেও এর উপস্থিতি মিলেছে।
‘আমার ধারণা, এখন ইউরোপ আর আমেরিকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে ডেল্টা।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাসের যে অংশটির মাধ্যমে মানবদেহের সঙ্গে এটি আটকে থাকে, রূপ পরিবর্তনের মাধ্যমে তার আকৃতি বদলে যাচ্ছে।
এর মাধ্যমে করোনা প্রতিরোধী বিদ্যমান টিকাকে ফাঁকি দিয়ে মানবশরীরে জীবিতই থেকে যাচ্ছে সেটি।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেল্টার বিরুদ্ধে বিদ্যমান টিকা কম কার্যকর। কম কার্যকারিতা পাওয়া যায় দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার পর।
বিশ্বে এখন পর্যন্ত টিকা কার্যক্রমে সবচেয়ে সফল ইসরায়েলেও কয়েক দিন ধরে বাড়ছে সংক্রমণ। মাস্ক ব্যবহারের নির্দেশ শিথিলের পর থেকেই দেশটিতে করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী।
আফ্রিকার ১২টি দেশে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে বলে নিশ্চিত করেছে অঞ্চলটির রোগ প্রতিরোধ ও প্রশমন কেন্দ্র।
পুরো অঞ্চলে টিকাগ্রহীতার হার মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র এক শতাংশ, যা সারা বিশ্বে অঞ্চলের হিসাবে সর্বনিম্ন।
আরও পড়ুন:দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য