বিশ্বের ধনী দেশের জোট জি-সেভেনের সম্মেলনে উইঘুরসহ অন্যান্য মুসলমান সম্প্রদায় ও হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থিদের ওপর চীনের নির্যাতনের সমালোচনা করে জোটটির নেতারা। এতে চটেছে চীন; দিয়েছে কড়া বিবৃতি।
যুক্তরাজ্যে চীনের দূতাবাস সোমবার ওই বিবৃতি দেয় বলে বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
শুক্রবার শুরু হওয়া ৩ দিনের সম্মেলন শেষে জি-সেভেনের প্রজ্ঞাপনে শিনজিয়াংয়ে জাতিগত সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায় ও হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থি অধিকারকর্মীদের ওপর চীনের নির্যাতনের সমালোচনা করা হয়।
জি-সেভেনের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘আমরা আমাদের মূল্যবোধ প্রচারে আগ্রহী। এরই অংশ হিসেবে মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি সম্মান জানাতে চীনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে।’
সম্মেলনে মানবাধিকার বিষয়ে আন্তর্জাতিক নীতি মেনে আরও দায়িত্বশীল আচরণ করতে চীনের প্রতি আহ্বান জানান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
চীনের দূতাবাসের এক মুখপাত্র বিবৃতিতে বলেন, ‘শিনজিয়াং সংশ্লিষ্ট বিষয়কে ঘিরে রাজনৈতিক রং দেয়ার চেষ্টা করছে জি-সেভেন। পাশাপাশি চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপেরও সুযোগ নিতে চাইছে তারা। আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করি।’
বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলো বিভিন্ন সময় বলে আসছে, শিনজিয়াংয়ের বন্দিশিবিরে প্রায় ১০ লাখ উইঘুরসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে আটকে রেখেছে চীন।
নিউ ইয়র্কে উইঘুরদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি
অন্যদিকে চীনের ভাষ্য, সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদবিরোধী পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বন্দিশিবিরগুলোকে মূলত কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় কর্নওয়াল কাউন্টিতে শুক্রবার থেকে টানা তিন দিনব্যাপী সম্মেলনে বসেন জি-সেভেনভুক্ত সাত দেশ কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতারা। সেখানে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা, জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার ও বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা হয়।
সম্মেলনে চীনে করোনার উৎস নতুন করে অনুসন্ধানেরও আহ্বান জানান জি-সেভেনের নেতারা। এ নিয়েও প্রতিক্রিয়া জানায় চীনের দূতাবাস।
দূতাবাসের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সাম্প্রতিক মহামারি এখনও বিশ্বব্যাপী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বৈশ্বিক বিজ্ঞানীদের অংশগ্রহণেই করোনার উৎস সংক্রান্ত অনুসন্ধান শুরু করা উচিত। এ নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক হবে না।’
২০১৯ সালের শেষের দিকে চীনের উহান শহরে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভাইরাসটির উৎস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ নিয়ে গঠিত দল উহানে পাঠায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
তবে মার্চে প্রকাশিত বিশেষজ্ঞ দলটির অনুসন্ধানের প্রতিবেদন সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়। প্রতিবেদনটিতে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে বলে বিশ্বব্যাপী এ নিয়ে সমালোচনাও হয়।
আরও পড়ুন:সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নতুন তিন বিচারক নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন বুধবার জারি করা হয়েছে। খবর বাসসের
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের তিনজন বিচারককে তাদের শপথ গ্রহণের তারিখ হতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করেছেন।
নবনিযুক্ত আপিল বিভাগের বিচারপতিগণ হলেন-বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ, বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি কাশেফা হোসেন।
তীব্র গরমে জনসাধারণকে স্বস্তি দিতে মাঠে নেমেছে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসন।
জেলার জনবহুল স্থানগুলোতে খোলা হয়েছে সুপেয় পানির বুথ, যেখান থেকে পথচারীসহ সাধারণ মানুষ বিনা মূল্যে পানি ও স্যালাইন পান করতে পারছেন। একই সঙ্গে বুথ থেকে নিম্ন আয়ের শ্রমিক-কর্মজীবীদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে ছাতা।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবু জাফর রিপন বুধবার বেলা ১১টার দিকে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
জেলা প্রশাসনের এমন উদ্যোগের সুফল পাওয়া লোকজন জানিয়েছেন তাদের স্বস্তির কথা।
এ বিষয়ে ডিসি আবু জাফর রিপন জানান, জেলার ৬৮টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভাসহ শতাধিক স্থানে জনসচেতনতার অংশ হিসেবে বসানো হচ্ছে বুথ। এসব বুথ থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী পানি ও ছাতা নেয়া যাবে।
তিনি আরও জানান, স্বাস্থ্য সচেতনতায় জেলার সর্বত্র করা হচ্ছে মাইকিং। যতদিন অসহ্য দাবদাহ থাকবে, এ কার্যক্রম ততদিন চলবে।
কর্মসূচির উদ্বোধনের সময় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অফিফা খানসহ জেলা প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
একই দিন মুন্সীগঞ্জ সেবা কেন্দ্র নামের একটি বেসরকারি সংগঠন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও পুরাতন কাচারি এলাকায় বিনা মূল্যে শরবত বিতরণ করে পথচারীদের কাছে।
আরও পড়ুন:মিয়ানমারে জান্তাবাহিনী ও সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর চলমান সংঘাতের মধ্যে এবার কক্সবাজারের টেকনাফে একটি গুলির খোসা এসে পড়েছে।
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে উপজেলার জাদিমুড়া সিআইসি অফিসের জানালায় এসে পড়ে ওই গুলির খোসা। এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
জাদিমুড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি আহমদ বলেন, মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে গোলাগুলি থেকে এপারের ক্যাম্প-২৭ সিআইসি অফিসের জানালায় একটি গুলির খোসা এসে পড়ে ছিদ্র হয়ে যায়।
হোয়াইক্যংয়ের বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, রাতে মিয়ানমারের ওপারে চলা গোলাগুলির শব্দে ভয়ে লবণচাষিরা ঘরে ফিরে আসতে বাধ্য হন। গোলাগুলির বিকট শব্দে ঘরে থাকতে পারিনি। রাতভর থেমে থেমে গোলাগুলি হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও দায়িত্বশীল কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গত ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইনে বিদ্রোহীদের সঙ্গে জান্তার সংঘাত চলছে। এরই মধ্যে ঘুমধুম-উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে এসে পড়ে মর্টারশেল ও গুলি। এ নিয়ে সীমান্তে উত্তেজনা রয়েছে।
বেশ কিছুদিন মিয়ানমার থেকে কোনো গুলি বা মর্টারশেল দেশে না এসে পড়লেও ওপারের শব্দ আসছে এপারে। মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সদস্যরা পালিয়ে আশ্রয় নেন বাংলাদেশে।
উপজেলা নির্বাচন থেকে মন্ত্রী ও এমপিদের স্বজনরা সরে না দাঁড়ালে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বুধবার দলের সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
কাদের বলেন, ‘দলীয় সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রীদের নিকটাত্মীয় এবং স্বজনদের প্রার্থী না হতে দলীয় যে নির্দেশনা, তা না মানলে সময়মতো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় পেরিয়ে গেছে। এদের মধ্যে অনেকেই বলেছেন যে, আমরা বিষয়টি আরও আগে অবহিত হলে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হতো। তারপরও কেউ কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন, কেউ কেউ করেননি।
‘নির্বাচন কমিশনে সময়সীমা শেষ হয়ে গেলে কেউ ইচ্ছা করলে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে পারেন। এ বিষয়টা চূড়ান্ত হতে নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এখানে কেউ অমান্য করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে দলে; সময়মতো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিষয়ে কাদের বলেন, ‘আমাদের দলে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশনের বিষয়টি আছে। দল যার যার কর্মকাণ্ড বিবেচনায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশলে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন নিয়ে থাকে। চূড়ান্ত পর্যায়ে যারা প্রত্যাহার করবে না, এ ব্যাপারে দলের সিদ্ধান্ত সময়মতো নেয়া হবে।’
চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেও কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে কি না, এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সাধারণ ক্ষমা একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে দলীয় রণকৌশল। সেটা হতেই পারে। সেটা দলের সভাপতি নিতে পারেন। নির্বাচন হওয়া পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগ আছে।’
বিএনপির সমাবেশের দিনে আওয়ামী লীগেরও সমাবেশ থাকে—সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির সন্ত্রাস থেকে জনগণকে রক্ষায় কর্মসূচি দেয় আওয়ামী লীগ। বিএনপি একতরফা সমাবেশ করতে গেলে সন্ত্রাস, আগুন সন্ত্রাসের আশঙ্কা থেকেই যায়। জনগণের জানমাল রক্ষায় সরকারি দল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব আছে।
‘আমরা মাঠে থাকলে তারা এসব অপকর্ম করতে মানসিকভাবে চাপে থাকবে। সে জন্য আমরা কর্মসূচি দিই। বিএনপির চোরাগোপ্তা হামলা প্রতিহত করতে জনগণের স্বার্থে আমাদের কর্মসূচি থাকা উচিত।’
আরও পড়ুন:ছিয়াত্তর বছর বয়সী আবদুর রহিম স্ত্রীকে হারিয়েছেন দেড় যুগ আগে। পরিবারের সদস্য বলতে এক ছেলে, তাও থাকেন প্রবাসে। ছেলে প্রবাসে যাওয়ার পর অন্য ঘরে চলে গেছেন ছেলের বৌও। তাই রান্না-বান্না থেকে শুরু করে সব কিছুই করতে হয় নিজেকে।
জীবন যুদ্ধে তিনি কখনও দমে যাননি, তবে এবার হার মেনেছেন টিউবওয়েলের পানির কাছে। ১৫ থেকে ১৬ বার টিউবওয়েল চাপার পরেও মিলছে না এক গ্লাস পানি। তাই পানি সংকটের কারণে গোসল থেকে শুরু করে গৃহস্থালির সব কাজ হচ্ছে ব্যাহত।
তাই অধিকাংশ সময় বাড়ির পাশে থাকা মসজিদে গিয়ে পানির চাহিদা পূরণ করছেন আবদুর রহিম।
এদিকে গৃহবধূ ছানোয়ারা খাতুন গৃহস্থালির সব কাজ করেন একাই। বাড়িতে রয়েছে তিনটি গাভি ও চারটি ছাগল। এর মধ্যেই আজ সপ্তাহ দুয়েক ধরে টিউবওয়েলে উঠছে না পানি। খাওয়া থেকে ওজু, গোসল সব কিছুতেই বেগ পেতে হচ্ছে পানি সংকটের কারণে।
ছানোয়ারা খাতুন জানান, তীব্র তাপদাহের মধ্যে আজ সপ্তাহখানেক ধরে বাড়িতে থাকা গরুর গোসল করাতে পারেননি তিনি, তবে নিজে প্রতিবেশীর বাড়িতে গিয়ে গোসল করে আসেন।
মেহেরপুরের গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের হস্তচালিত টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। ফলে এলাকার মানুষের মধ্যে পানির সংকট এখন চরমে পৌঁছেছে। একদিকে গৃহস্থালির কাজে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে বোরো চাষে পানির সংকটের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বললে তারা সুপেয় পানির সংকটের কথা জানান। বিশেষ করে মুজিবনগর উপজেলার, জয়পুর, আমদহ, তারানগর, বিশ্বনাথপুর; সদর উপজেলার শালিকা, আশরাফপুর, আমদাহ, বুড়িপোতা, আলমপুর এবং গাংনী উপজেলার ষোলটাকা ইউনিয়নের আমতৈল, মানিকদিয়া, কেশবনগর, শিমুলতলা, রইয়েরকান্দি, সহড়াবাড়িয়া, মিনাপাড়া, ভোলাডাঙ্গা, কুমারীডাঙ্গা কাথুলি ইউনিয়নের গাঁড়াবাড়িয়া, ধলাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় চলতি শুষ্ক মৌসুম শুরু থেকেই সুপেয় পানির সংকট প্রকট হচ্ছে।
দীর্ঘ সময় ধরে অনাবৃষ্টি, ভূ-গর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার, অপরিকল্পিতভাবে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি তোলা, এবং পুকুর-খাল-বিল ভরাটের কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে সীমান্তবর্তী মেহেরপুর জেলার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমেই নিচে নামছে। আগামীতে বৃষ্টিপাত না হলে পরিস্থিতি আরও অবনতি হবে বলেও জানান তারা।
গ্রামবাসীরা বলছেন, গ্রীষ্মকাল শুরু না হতেই এবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। অথচ গ্রামে সুপেয় পানির জন্য নলকূপই শেষ ভরসা।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলার গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সুপেয় পানির স্তর প্রতি বছর ১০ থেকে ১১ ফুট নিচে নামছে। ১০ বছর আগেও এই এলাকায় ৬০ থেকে ৭০ ফুটের মধ্যে ভূ-গর্ভস্থ সুপেয় পানির স্তর পাওয়া যেত। অথচ এখন পানির জন্য যেতে হয় ৩০০ ফুটেরও বেশি গভীরে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, গত কয়েক বছরে এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ সুপেয় পানির স্তর ১০ থেকে ১৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। ফলে অকেজো হয়ে পড়েছে হস্তচালিত অনেক টিউবওয়েল। যেখানে আগে ভূগর্ভের ৫০ থেকে ৬০ ফুট গভীরতা থেকেই পাওয়া যেত সুপেয় পানি। গত এক দশকে ক্রমেই পানির স্তর নিচে নেমে গেছে।
জেলায় গভীর-অগভীর মিলিয়ে ৯ হাজার ৯১৩টি নলকূপ আছে। এর মধ্যে অকেজো হয়ে পড়ে আছে ২ হাজার ২৩৯টি।
গাংনী উপজেলার ভোলাডাঙ্গা গ্রামের পল্লি চিকিৎসক মতিন বলেন, ‘আমি ২০ বছর ধরে গ্রামে গ্রামে চিকিৎসা দিয়ে বেড়াই। আজ ১০ দিন ধরে আমার বাড়ির নলকূপে পানি উঠছে না। রোদের মধ্যে সারা দিন গ্রাম গ্রাম ঘুরে বাড়ি এসে যদি পানি না পাই তাহলে কেমন লাগে? আমি তাই মসজিদের নলকূপে গিয়ে গোসল সেরে আসি।’
একই এলাকার দিনমজুর সিরাজ বলেন, ‘আমি সারা দিন মাঠে কাজ করি। বাড়িতে দুটি গরুও পালন করি অথচ গরু দুটি আজ কয়দিন গা ধোয়াতে পারিনি। আবার মাঠে এক বিঘা ধানের আবাদ আছে, তাতে সেচ দিতে গিয়ে বিপদে পড়তে হচ্ছে। যেখানে দুই ঘণ্টা মেশিনে পানি দিলে হয়ে যেতো। সেখানে এখন চারটা ঘণ্টা পানি দিয়েও হচ্ছে না।’
এ অঞ্চলের আবহাওয়া নির্ণয়কারী চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘কয়েকদিন ধরেই চুয়াডাঙ্গাসহ এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এখানে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অঞ্চলে আপাতত আজকে বৃষ্টির সম্ভবনা নেই।’
মেহেরপুরের জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন জানান, সুপেয় পানির সমস্যা নিরূপণে যেসব এলাকায় সংকট সেখানে ১০টি বাড়িকে কেন্দ্র করে একটি ৯০০ ফুট গভীর নলকূপ স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে সরকার। এসব এলাকায় ৫০০টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হবে, তবে অতিবৃষ্টি ও পানির অপচয় রোধ করা না গেলে পানি সংকটের সমাধান মিলবে না।
আরও পড়ুন:রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর পূর্তিতে বুধবার প্রাণ হারানো শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন হতাহত শ্রমিক, তাদের পরিবার, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও পুলিশ সদস্যরা।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঘটে যাওয়া ওই দুর্ঘটনায় পাঁচটি পোশাক কারখানার এক হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক প্রাণ হারান। পঙ্গুত্ব নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন দুই সহস্রাধিক শ্রমিক।
ট্র্যাজেডির বার্ষিকীতে আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসন ও সুচিকিৎসা নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন শ্রমিক ও সংগঠনগুলোর সদস্যরা।
সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বুধবার সকাল থেকে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানানো শুরু হয়।
একে একে নিহত শ্রমিকের পরিবার, আহত শ্রমিক, পুলিশ ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ফুলের শ্রদ্ধায় সিক্ত হয়ে ওঠে বেদি। ওই সময় নিহত শ্রমিকদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
পরে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি আদায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ, র্যালি ও মানববন্ধন করা হয়।
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে প্রাণ হারানো শ্রমিকদের অনেক স্বজন প্রিয়জনের কথা স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
সমাবেশে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর পর এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে তা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান বক্তারা।
একই সঙ্গে ভবনের মালিক সোহেল রানার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডেরও দাবি জানান তারা।
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের চকরিয়ায় ডুলহাজারা স্টেশনে একটি ঈদ স্পেশাল ট্রেনের তিনটি কোচ লাইনচ্যুত হয়েছে।
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রেলপথে বুধবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় ট্রেনটি আটকা পড়ে। তবে কোনো হতাহতের ঘটে ঘটেনি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজারের চকরিয়া রেলস্টেশনের ইনচার্জ মো. ফরহাদ নিউজবাংলাকে বলেন, ট্রেনটির কয়েকটি বগি কেবল লাইন থেকে সরে গেছে। ট্রেনে আসনের বিপরীতে ৫০০ যাত্রীর পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকা আরও ৮০ জন যাত্রী ছিলেন। সবাই নিজ ব্যবস্থাপনায় গন্তব্য রওনা হয়েছেন।
ডুলাহাজারা স্টেশনের ইনচার্জ আবদুল মান্নান বলেন, ঈদ স্পেশাল-৯ ট্রেনটি সকাল ৭টায় চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। পৌনে ১০টার দিকে ডুলাহাজারা স্টেশনে ঢোকার সময় ট্রেনটির ইঞ্জিনসহ তিনটি কোচ লাইনচ্যুত হয়। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
তিনি আরও বলেন, লাইনচ্যুত কোচগুলো লাইনে তুলতে সময় লাগবে। তবে বিকল্প থাকায় কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রেলপথে রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকবে না।
মন্তব্য