করোনা সংকট মোকাবিলায় রাজ্যের বণিকসভাগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
নবান্নের সভা ঘরে বৃহস্পতিবার বণিকসভার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী করোনা মোকাবিলায় সাহায্য ও অক্সিজেন তৈরির জন্য বণিকসভাগুললোকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘দুই তরফ থেকে ত্রাণ যাচ্ছে বলে কেউ বেশি পাচ্ছে, কেউ পাচ্ছে না। তাই দুদিক দিয়ে ত্রাণ না দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিপর্যয় মোকাবিলার ত্রাণ তহবিলে অর্থ দান করে একযোগে ত্রাণ পাঠানো উচিত।’
মুখ্যমন্ত্রী করোনা মোকাবিলায় জেলার বাজারহাটগুলোকে নিয়মিত স্যানিটাইজ করার পাশাপাশি, মানুষের হাতে মাস্ক, স্যানিটাইজার তুলে দেয়ার জন্য বণিক সভাগুলোকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান বৈঠকে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে বিশেষজ্ঞরা টিকাকরণে জোর দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এদিন বণিকসভার বৈঠকে বলেন, ‘রাজ্যে ইতোমধ্যে এক কোটি ৪০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে। প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ হাজার ডোজ টিকা দেয়া হচ্ছে। বণিক সভাগুলোও টিকাকরণের কাজে এগিয়ে আসুক।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা নিজেদের কর্মীদের টিকাকরণ করুন। আপনাদের জন্য যে টিকা লাগবে, সেই টাকা মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দিয়ে দিন। সেই টাকায় টিকা কিনে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে দেবে রাজ্য সরকার।’
‘সবার কথা ভেবে, অন্য রাজ্যের মতো আমরা লকডাউন বা কারফিউ দেইনি। কিছু বিধিনিষেধ থাকলেও নিয়ম মেনে দোকান বাজার খুলছে। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করছেন।’
এবার করোনা বিধি মেনে কর্মীদের টিকা দিয়ে হোটেল-রেস্তোরাঁও বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টার জন্য খোলা রাখতে পারবেন বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী ।
তিনি বলেন, ‘সুপার স্প্রেডারদের টিকাকরণে জোর দেয়া হচ্ছে। করোনা মোকাবিলায় কলকাতার বাজারগুলোতে টিকাকরণ শুরু হয়েছে। এবার জেলার বাজারগুলোতেও টিকাকরণ চালু হওয়া উচিত। দুর্গত এলাকাগুলোতেও যেনো টিকা দেয়া হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
‘ শ্রমিকদের টিকাকরণের অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। রাজ্যে সংক্রমণের হার কমেছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে কম বয়সীদের মৃত্যুর হার বেড়েছে। এক একটা গ্রামের চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে পারে বণিকসভা। এটা একটা মহান কাজ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।’
আরও পড়ুন:সিলেটের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথর থেকে লুট হওয়া আরও ৪৫ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করেছে প্রশাসন। গতকাল শুক্রবার দিনভর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এসব পাথর জব্দ করা হয়।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) রাতেই জেলা প্রশাসনের মিডিয়া সেল এ তথ্য নিশ্চিত করে। এতে জানানো হয়, গত দুই দিনে মোট প্রায় ১ লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধারকৃত পাথরের অর্ধেক ইতিমধ্যে সাদাপাথরে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে, বাকিগুলো প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার (গোপনীয় শাখা, মিডিয়া সেল) মো. মাসুদ রানা বলেন, শুক্রবার দিনভর কোম্পানীগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৪৫ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়েছে। গত বুধবার মধ্যরাত থেকে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত মোট প্রায় ১ লাখ ঘনফুট পাথর জব্দ হয়েছে। উদ্ধারকৃত পাথর পর্যায়ক্রমে সাদাপাথরে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
পাথর ব্যবসায়ীরা অভিনব কৌশলে এসব লুট হওয়া পাথর লুকিয়ে রাখছেন বলে জানা গেছে। শুক্রবার খবর পেয়ে জেলা প্রশাসন কোম্পানীগঞ্জের কলাবাড়ি এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় মাটিচাপা অবস্থায় বিপুল পরিমাণ পাথর উদ্ধার হয়।
এর মধ্যে সাত ট্রাক পাথর ইতোমধ্যে সাদাপাথর এলাকায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরও আনুমানিক পাঁচ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়েছে, যা আজ শনিবার ফেরত পাঠানোর হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (রাজস্ব শাখা, জেলা ব্র্যান্ডিং ও পর্যটন সেল) মাহমুদ আশিক কবির।
এদিকে, গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং পর্যটন স্পট জিরো পয়েন্ট থেকে চুরি হওয়া পাথর উদ্ধারে উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে অভিযান শুরু করেছে।
পিয়াইন নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন স্থান থেকে বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে সাড়ে ৮ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা পাথর পূনরায় নদীতে প্রতিস্থাপনের লক্ষে জাফলং জিরো পয়েন্টে নৌকা দিয়ে ফেলা হয়েছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রতন কুমার অধিকারী বলেন, ‘জাফলংয়ের জিরো পয়েন্ট থেকে কিছু দুষ্কৃতকারী রাতের আধারে বৃষ্টির মধ্যে কিছু পাথর সরিয়ে ফেলছিল। আমরা খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত পদক্ষেপ নিই। এরপর থেকে ২৪ ঘণ্টা পুলিশ ও বিজিবির টহল অব্যাহত আছে। এরই ধারাবাহিকতায় সেখান থেকে যে পাথরগুলো সরানো হয়েছে আমরা সেই পাথরগুলো খুঁজে বের করে সাড়ে ৮ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করেছি।’
তবে পাথর লুটপাটের সঙ্গে জড়িত কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের এই অভিযান আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে।’
শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি জন্মাষ্টমী উপলক্ষে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সব ধরনের পণ্য আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম আজ (শনিবার) বন্ধ রয়েছে। তবে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসাধারী যাত্রীদের যাতায়াত স্বাভাবিক রয়েছে।
হিলি কাস্টমস সিএঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ফেরদৌস রহমান জানান, আজ শনিবার সারা দেশে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা শুভ জন্মাষ্টমী উদযাপন করছে। দিনটি উপলক্ষে সরকারি ছুটি থাকায় এই স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সব ধরণের পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। আগামীকাল (রবিবার) থেকে পুনরায় বন্দরের কার্যক্রম শুরু হবে।
হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। যাত্রীরা বৈধ পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চলাচল করতে পারবেন।’
এ বিষয়ে হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দীন জানান, সরকারি ছুটির কারণে আজ কাস্টমসের সব বিভাগ বন্ধ থাকবে। তবে আগামীকাল থেকে কাস্টমস অফিস খোলাসহ পণ্য আমদানি-রপ্তানিও পুনরায় শুরু হবে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারিতেই হবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। এমন কোনো শক্তি নেই নির্বাচন প্রতিহত করবে।
গতকাল শুক্রবার মাগুরায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ মেহেদী হাসান রাব্বি ও আল আমিনের কবর জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রেস সচিব বলেন, ইতোমধ্যে নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত সব দপ্তর বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। আমরা একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেখতে চাই। আশা করছি সেটি সবার সহযোগিতায় সম্ভব হবে।
জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণ করে প্রেস সচিব বলেন, যারা জীবন দিয়ে আমাদের জন্য একটি স্বাধীন দেশ দিয়ে গেছে, তাদের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে দেশটাকে সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়তে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বর্ষাটা শুরু হয় জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। বর্ষাটা শেষ হলে দেখবেন পাড়া-মহল্লায় নির্বাচনের আমেজ নেমে এসেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা ভোটের জন্য দুয়ারে দুয়ারে যাবেন। পাড়ায় পাড়ায় ভোটের অফিস হবে। এই ভোটের আমেজটা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে।
‘আমরা নিশ্চিত যে পুরো জাতি, কারও মনে যদি কোনো সন্দেহ থাকে সেই সন্দেহটুকু চলে যাবে। নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে এবং রোজার আগেই হবে।’
চব্বিশের জুলাই-আগস্টে মাগুরায় মোট ১০ জন শহীদ হয়েছেন জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, আওয়ামী লীগ-যুবলীগের খুনি বাহিনীর হাতে শহীদ হয়েছেন মেহেদী হাসান রাব্বি। উনি ছাত্রদলের স্থানীয় একজন নেতা ছিলেন। আমি তার কবরে গিয়েছিলাম। একই এলাকার আল আমিন ছোট ব্যবসা করতেন ঢাকায়, ওনাকেও গুলি করে মারা হয়েছে, ওনার কবর মাগুরার উপকণ্ঠে রয়েছে। সেখানেও গিয়েছিলাম ফুল দিতে। মাগুরা জেলায় মোট ১০ জন শহীদ আছেন। বাকি আটজন প্রত্যেকের কবরস্থানে যাব।
এই শহীদদের নতুন বাংলাদেশের নির্মাতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের আত্মদানের ফলে আমরা নতুন একটা দেশ পেয়েছি। আমরা আজকের এই দিনে সবাই মুখ ফুটে কথা বলতে পারছি। আমরা এখন পলিটিক্যাল সেটেলমেন্ট করছি। সামনে সুন্দর একটি নির্বাচন হবে। শহীদদের কারণে আমরা নতুন বাংলাদেশটা পেয়েছি।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার পাবনা–কুষ্টিয়া হাইওয়ে সড়কের বারোমাইল এলাকায় বন্ধুদের সঙ্গে মোটরসাইকেল রেসিং চলাকালে পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে সংঘর্ষে দুই কিশোর নিহত হয়েছে।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন—নাহিদ হোসেন (১৭), দৌলতপুর উপজেলার তাগুনিয়া সরদারপাড়া গ্রামের নিপুল হোসেনের ছেলে এবং তার বন্ধু সিয়াম হোসেন (১৬), একই উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের কুরবান আলীর ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুর্ঘটনার সময় প্রায় ১০টি মোটরসাইকেল লালন শাহ সেতু থেকে উচ্চগতিতে রেসিং করছিল। এসময় নাহিদ ও সিয়াম যে মোটরসাইকেলে ছিলেন, সেটি বারোমাইল এলাকার যাত্রীছাউনি সংলগ্ন ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশে একটি পিকআপ ভ্যানের পেছনে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই নাহিদ মারা যান। গুরুতর আহত সিয়ামকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
কুষ্টিয়া হাইওয়ে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) জয়দেব কুমার সরকার জানান, নিহত দুই কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না থাকায় আইনগত প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রব তালুকদার বলেন, বিষয়টি হাইওয়ে পুলিশ দেখভাল করছে।
দেশের জ্বালানি পরিবহন খাতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসছে। এই প্রথম চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় সরাসরি পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পাঠানোর প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে তেল সরবরাহকালে জিরো সিস্টেম লস অর্জিত হওয়ার রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে।
সফল প্রাক-কমিশনিংয়ের পর আজ শনিবার চট্টগ্রামের পতেঙ্গার গুপ্তাখালে পদ্মা অয়েল কোম্পানির ডেসপাস টার্মিনালে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত তেল পরিবহণে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) বার্ষিক খরচ হয় প্রায় ৩২৬ কোটি টাকা। একই পরিমাণ তেল পাইপলাইনে সরবরাহ করতে খরচ হবে কেবল ৯০ কোটি টাকা। এই হিসাবে বছরে অন্তত ২২৬ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। এছাড়া সিস্টেম লস এবং চুরি ঠেকানোর মাধ্যমেও কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। তবে কর্মকর্তা বলছেন বছরে সাশ্রয়ের পরিমাণ বেড়ে আড়াই হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াবে।
বিপিসির বাস্তবায়নে এবং সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের নির্মাণে ২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন চট্টগ্রাম থেকে ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর ও মুন্সীগঞ্জ হয়ে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত। পাইপলাইনটি ২২টি নদী ও খাল অতিক্রম করেছে এবং এর সঙ্গে নয়টি স্টেশন ও আধুনিক ডিপো নির্মিত হয়েছে।
সূত্র জানায়, আজ শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর থেকে এই পাইপলাইন ব্যবহার করে তিনটি তেল বিপণন কোম্পানি জ্বালানি তেল সরবরাহ করবে। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লার বরুড়া হয়ে জ্বালানি তেল যাবে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল এবং ঢাকার ফতুল্লায়।
কুমিল্লার বরুড়ায় স্থাপন করা হয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ অটোমেটেড ডিপো। এই ডিপো থেকে চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সন্নিহিত অঞ্চলের প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হবে। যা এখন নৌপথে চাঁদপুরে পাঠানো হয়ে থাকে।
এই ডিপোতে জ্বালানি তেল গ্রহণ এবং সরবরাহ সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হবে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে। তেলের ওজন, তাপমাত্রা, সরবরাহ সবই পরিচালিত হবে কম্পিউটারাইজড প্রযুক্তিতে।
২০১৮ সালে ২ হাজার ৮৬১ কোটি টাকায় অনুমোদিত এ প্রকল্প করোনা পরিস্থিতিতে বিলম্বিত হয়ে চলতি বছরের মার্চে শেষ হয়েছে, বাড়তি খরচ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সূত্র জানায়, দেশের চাহিদার ৭০ লাখ টন জ্বালানির অন্তত ৩০ লাখ টন ব্যবহৃত হয় ঢাকা ও কুমিল্লা অঞ্চলে। এসব জ্বালানির বেশির ভাগ বেসরকারি অয়েল ট্যাংকারের মাধ্যমে নৌপথে পরিবাহিত হয়। এতে কোটি কোটি টাকার তেল চুরিসহ নানা ধরনের অনিয়ম ঘটে। ট্যাংকারে জ্বালানি তেল পরিবহণের ক্ষেত্রে শূন্য দশমিক ১৭ শতাংশ সিস্টেম লস বিপিসি মেনে নেয়। বছর শেষে এটা বিশাল অঙ্ক হয়ে দাঁড়ায়। সিস্টেম লস কিংবা তেল চুরির এই লোকসান থেকে জ্বালানি তেল সেক্টরকে বাঁচাতেই মূলত চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়।
পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রতি ঘণ্টায় ৩৫০ মেট্রিকটন এবং বছরে সর্বোচ্চ ৫ মিলিয়ন মেট্রিকটন তেল পরিবহন সম্ভব হবে। আগে নৌপথে ট্যাংকারে নিতে লাগতো ৪৮ ঘণ্টা, এখন লাগবে মাত্র ১২ ঘণ্টা। ফলে বিপিসির বার্ষিক পরিবহণ খরচ ৩২৬ কোটি টাকা থেকে নেমে আসবে মাত্র ৯০ কোটি টাকায়—সাশ্রয় হবে অন্তত ২২৬ কোটি টাকা। পাশাপাশি সিস্টেম লস ও চুরি প্রায় শূন্যে নেমে আসবে।
চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, যেখান থেকে পুরো পরিবহণ প্রক্রিয়া ও নিরাপত্তা ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং হবে।
প্রকল্প পরিচালক মো. আমিনুল হক ইউএনবিকে জানিয়েছেন, পরীক্ষামূলকভাবে ইতোমধ্যে পাঁচ কোটি লিটার ডিজেল কোনো ক্ষতি ছাড়াই পরিবহণ সফল হয়েছে। তিনি বলেন, এখন রিজার্ভার থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ডিপোতে দ্রুত ও নিরাপদে তেল পৌঁছে দেওয়া যাবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন জ্বালানি সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এবং সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশনের প্রধান মেজর জেনারেল মুহাম্মদ হাসান উজ-জামান।
সূত্র: ইউএনবি
বেশ কিছুদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। সব ধরনের সবজির দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে, যার প্রভাব গতকাল শুক্রবারও রাজধানীর বাজারে দেখা গেছে। কোনো সবজির দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকার নিচে নাই। চলতি মাসের শুরুতে ডিমের দাম কম ছিল। কিন্তু এখন ডিমের দাম ডজনপ্রতি ৩০ টাকা বেড়েছে। মাস দেড়েক আগে দাম কম থাকলেও বাজারে চড়া চালের দামও। পাশাপাশি গত দুই সপ্তাহ ধরেই দাম বেড়েছে পেঁয়াজ, আদা ও এলাচের। বাড়তি দামে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস।
সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি সবজির দাম কেজিতে বেড়েছে ২০-৫০ টাকা পর্যন্ত।
সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ভালো মানের গোল বেগুন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেগুনের দাম দ্বিগুণ, বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৫০ টাকা কেজিতে। লম্বা জাতের বেগুনের দাম ১৬০-১৮০ টাকা এবং সাদা জাতের বেগুন কেজিপ্রতি ১২০-১৪০ টাকা।
ঝিঙা, ধুন্দল, শসা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজিতে; ঢেঁড়স, পটোল, কাকরোল কেজিপ্রতি ৮০ টাকা। ৮০ টাকার নিচে বিক্রি হচ্ছে শুধু পেঁপে—৪০ টাকা কেজি। প্রতি পিস জালি কুমড়া ১০০-১২০ টাকা, লাউ ১০০-১৫০ টাকা।
বাজারে বরবটি প্রতি কেজি ৮০-১০০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, কচুমুখী ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দাম বেড়েছে কাঁচামরিচেও—কেজিপ্রতি ২২০-২৪০ টাকা। পাইকারি বাজারে পাল্লা (৫ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়।
বাজারে আসা ক্রেতারা বলছেন, সবজির এমন নাগালবিহীন দামে খরচ মেটাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। খরচের ধাক্কা সামলাতে পরিমাণ কমিয়ে কিনতে হচ্ছে সবজি।
উত্তর বাড্ডা কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা একজন কর্তা বলেন, ‘বেগুনের দাম শুনে রীতিমতো আকাশ থেকে পড়লাম। এক সপ্তাহে বেগুনের দাম কেজিতে ১০০ টাকা কী করে বাড়ে! বেগুন না কিনে পেঁপে কিনে বাসায় যাচ্ছি।’
আরেক ক্রেতা বলেন, ‘সাধারণত এক কেজির নিচে কোনো সবজি কেনা হয় না। আজকে তিন রকমের সবজি আধা কেজি করে কিনে নিয়ে যাচ্ছি। সবজির দাম শুনে মানতেই পারছি না। গত এক বছরের মধ্যে এবারই সবজির দাম এত বেশি।’
বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজারে সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। এতে করে অনেক ক্রেতাই সবজি না কিনে ফিরে যাচ্ছেন, অনেকে কিনছেন আধা কেজি বা ২৫০ গ্রাম করে। সব মিলিয়ে তাদেরও মুনাফা কম হচ্ছে।
রাজধানীর কাওরান বাজার ঘুরে দেখা যায়, গতকাল শুক্রবার ভোরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা সবজির প্রতিটির দাম ছিল বাড়তি। মৌসুমের এ সময়ে ফলন কম হওয়ায় সবজির দাম বেড়েছে বলে দাবি করেন বিক্রেতারা।
কাওরান বাজার সবজির আড়তের বিক্রেতা নূর ইসলাম জানান, পাল্লাপ্রতি সবজির দাম বেড়েছে ১০০-২০০ টাকা। এতে করে প্রতি কেজি সবজিতে খরচ বাড়ছে। অক্টোবর মাস আসলে সবজির দাম আবার কমে আসবে বলে জানান তিনি।
আরেক ব্যবসায়ী আবদুস সালাম বলেন, মার্চ থেকে মাঠে সবজির পরিমাণ কমতে থাকলেও চাহিদা আগের মতোই থাকে। তাই সবজির দাম বাড়ে এ সময়ে। এ ছাড়া রাস্তায় গত বছরের তুলনায় এ বছর বাড়তি খরচ বেড়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
শুধু সবজি নয়, উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজও। গত সপ্তাহের ৭৫ টাকা কেজির পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৯০ টাকায়। পাইকারি বাজারে পাল্লাপ্রতি পেঁয়াজের দাম ৪০০-৪৩০ টাকা।
এর বাইরে দাম বেড়েছে ডিমের। প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির বাদামি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৫-১৫০ টাকায়। সাদা ডিমের দাম ডজনপ্রতি ১৩০-১৩৫ টাকা।
স্থানভেদে সোনালি এবং ফার্মের মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। সোনালি বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৪০ টাকায়, ফার্ম ১৭০-১৮৫ টাকা। আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস—কেজি ৭৫০-৮০০ টাকা; খাসির মাংস কেজিপ্রতি ১১০০-১২০০ টাকা।
বাজারে দাম বেড়েছে প্রতিটি মাছের; কেজিতে ৫০-২০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে মাছ। কাঁচকি মাছের দাম গত সপ্তাহে ৫০০ টাকা থাকলেও এ সপ্তাহে ৬০০ টাকা। চাপিলা মাছ ৪৫০-৫০০ টাকা। পোয়া মাছ সাইজভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৭০০ টাকায়। শিং-মাগুর কেজিপ্রতি ৫০০-৬০০ টাকা।
বড় মাছের মধ্যে রুই কেজিপ্রতি ৩৮০-৪২০ টাকা, কাতল ৪০০-৪৮০ টাকা, কালিবাউশ ৪০০-৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০-২৮০ টাকা, চাষের পাঙাশ ২৫০ টাকা, নদীর পাঙাশ ৮০০-১০০০ টাকা, বোয়াল ৮০০-১২০০ টাকা, আঁড় মাছ ১ হাজার টাকা।
গত সপ্তাহের তুলনায় দাম বেড়েছে ইলিশ মাছেরও। এক কেজির নিচে মাঝারি সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ টাকায়, ছোট সাইজের ইলিশ ১২০০-১৬০০ টাকা। এক কেজির ওপরে ইলিশের দাম ২০০০-২৫০০ টাকা পর্যন্ত।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সবজি এবং পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রভাব পড়েছে বাজারের প্রতিটি পণ্যের দামে। দাম কমাতে সিন্ডিকেটের কারসাজি, পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি এবং বাজার মনিটরিংয়ের ওপর জোর দেন তারা।
রাজশাহীর পবা উপজেলায় একটি বাড়িতে দুই সন্তানসহ এক দম্পতির লাশ পাওয়া গেছে। পারিলা ইউনিয়নের বামনশিকড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। | বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) গভীর রাত থেকে শুক্রবার (১৫ আগস্ট) ভোরের মধ্যে যেকোনো সময় এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মতিহার থানার ওসি আব্দুল মালেক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মৃত ৪ জনকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। মরদেহের পাশে পাওয়া একটি চিরকুটে লেখা আছে, ‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে।’
ঘটনা জানাজানি হয় শুক্রবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে। তারপর দুপুরে মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মৃত ব্যক্তিরা হলেন- ওই এলাকার বাসিন্দা মিনারুল ইসলাম (৩৫), স্ত্রী মনিরা বেগম (২৮) এবং তাদের ছেলে মাহিন (১৩) ও মেয়ে মিথিলা (২)। মাহিন খড়খড়ি উচ্চবিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। আর মিনারুল কৃষি কাজ করতেন।
পরিবারের সদস্য, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মিনারুল আগে একসময় জুয়া খেলতেন। পরে ছেড়ে দেন। এ জন্য তিনি ঋণগ্রস্ত ছিলেন। দেড় বছর আগে বাবা রুস্তম আলী ধানিজমি বিক্রি করে ঋণের একটা অংশ দেড় লাখ টাকা পরিশোধ করেন। এরপরও তার দুই লাখ টাকা ঋণ ছিল। এই ঋণের জন্য প্রতি সপ্তাহে তাকে ২ হাজার ৭০০ টাকার বেশি কিস্তি পরিশোধ করতে হতো। কিন্তু কিস্তি চালাতে পারছিলেন না মিনারুল। বাবাকে মিনারুল আর কিছু জমি বিক্রি করে পুরো টাকা পরিশোধ করতে বলেছিলেন। কিন্তু বাবা জমি বিক্রি করতে চাননি। এ নিয়ে মা–বাবার সঙ্গে মিনারুল কথা বলা বন্ধ করে দেন। এমনকি ছেলেমেয়েদেরও মিশতে দিতেন না।
চিঠিতে লেখা হয়, ‘আমি মিয়ারুল যেসব লেখা লেখব, সব আমার নিজের কথা। লিখে যাচ্ছি এই কারণে আমরা চারজন আজ রাতে মারা যাব। এই মরার জন্য কারো দোষ নাই। কারণ লেখে না গেলে বাংলার পুলিশ কাকে না কাকে ফাসা টাকা খাবে। আমি মিনারুল প্রথমে আমার বোকে মেরেছি। তারপর আমার মাহিমকে মেরেছি। তারপর আমার মিথিলাকে মেরেছি। তারপর আমি নিজে গলাতে ফাঁস দিয়ে মরেছি। আমাদের ৪ জনের মরা মুখ যেন বাপের বড় ছেলে ও তার বো বাচ্চা না দেখে এবং বাপের বড় ছেলে যেন জানাজায় না যায়। আমাদের ৪ জনকে কাপন দিয়ে ঢাকতে আমার বাবা টাকা যেন না দেয়। এটা আমার কসম। ইতি মিনারুল, আসসালামু আলাইকুম।’
অপর একটি চিঠিতে লেখা রয়েছে, ‘আমি নিজ হাতে সবাকে মারলাম। এই কারণে যে আমি একা যদি মরে যাই,আমার বো, ছেলে, মেয়ে কার আশায় বেঁচে থাকবে। আমরা মরে গেল ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে। এত কষ্ট আর মেনে নিতে পারছি না। তাই আমাদের বেঁচে থাকার চেয়ে মরে গেলাম সেই ভালো হলো। কারো কাছে কিছু চাইতে হবে না। আমার জন্য কাউকে মানুষের কাছে ছোট হতে হবে না। আমার বাবা আমার জন্য লোকের কাছে ছোট হয়েছে। আর হতে হবে না। চিরদিনের জন্য চলে গেলাম। আমি চাই সবাই ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।’
এই দুটি চিঠি লাশের পাশে পাওয়া গেছে।
এ ঘটনার পর সোয়া ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে যান রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, মিনারুল স্ত্রী-সন্তানদের শ্বাস রোধ করে হত্যা করে নিজে ‘আত্মহত্যা’করেছেন। মরদেহগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করা হবে। এ ঘটনায় মামলা হবে। তিনি বলেন, একটা চিরকুট পাওয়া গেছে। চিরকুটে তিনি ঋণগ্রস্ত ও আর্থিক অনটনের কথা লেখেছেন। সিআইডির ফরেনসিক টিম ও পিবিআই এসেছে। তারা ক্রাইম সিনের আলামতগুলো সংগ্রহ করবে। পরে বিস্তারিত জানাতে পারবেন।
স্থানীয় পারিলা ইউপির চেয়ারম্যান মো. সাহেদ আলী বলেন, মিনারুল ঋণগ্রস্ত ছিলেন। তাকে সপ্তাহে ২ হাজার ৭০০ টাকার বেশি কিস্তি দিতে হতো। তিন দিন আগে তার কাছ থেকে দুই হাজার টাকা নিয়ে চালসহ অন্যান্য জিনিসপত্র কিনেছেন। বর্ষাকালে কাজকর্ম ছিল না। এ জন্য চাপে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘সকালে ঘটনা জানার পর দ্রুত এখানে আসি। পরে পুলিশকে জানাই। সে আগে জুয়া খেলত, পরে আর খেলেনি। ঋণের একটি টাকা মিনারুলের বাবা পরিশোধ করেছেন। এ জন্য পাঁচ কাটা জমিও বিক্রি করেছিলেন। আরেকটি ঋণ টানছিল মিনারুল।’
মিনারুলের বাবা রুস্তম আলী বলেন, ‘ছেলের কিছু ঋণ ছিল। সেটা খুব বেশি না। নতুন করে কোনো ঋণ আছে কি না, তা জানি না। আগে যেটা ঋণ করেছিল, সেটা ধানিজমি বিক্রি করে দিয়েছি। পরে আর কবে কবে ঋণ করেছিল, সেটা জানি না।’
মিনারুলের মা আঞ্জুয়ারা বলেন, ‘কোনো গন্ডগোল ছিল না। ভরণপোষণ আমিই দিই। ধারদেনা ছিল, মাটি (জমি) বিক্রি করে আমি দিয়েছি। আবার নতুন করে ধার করেছে। আজ সকালে মাছ কিনে আনলে ডাকাডাকি করি। পরে দেখি ছেলে ঝুলে আছে। নাতিকে আমিই মানুষ করেছি। আমার ওখানেই থাকত। কীভাবে কী হয়ে গেল।’ একপর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
মন্তব্য