‘আমি বিদেশি ব্যাংকে সঞ্চিত প্রতিটি টাকা ফিরিয়ে আনব এবং এটি যাতে গরিবদের পুনর্বাসনের জন্য ব্যবহার করা হয়, তা নিশ্চিত করব’- ২০১৪ সালে ভারতে সংসদীয় নির্বাচনে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদির প্রচারে এটাই ছিল কথিত কেন্দ্রবিন্দু। কার্যত দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে শতাব্দীপ্রাচীন কংগ্রেসকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট জাতীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা বা এনডিএ।
দিল্লির মসনদ দখল করে, প্রশাসন খানিকটা গুছিয়ে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর মোদি নেমেছিলেন দেশের অর্থনীতির সমান্তরালে চলতে থাকা আইনবহির্ভূত অর্থনীতির গহ্বর থেকে কালোটাকা উদ্ধারে।
প্রথমেই নজর দিয়েছিলেন বিদেশের ব্যাংকগুলোতে ভারতীয়দের গচ্ছিত কালোটাকা উদ্ধারে।
২০১৫ সালে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার ঘোষণা করে, আগামী ১ জুলাই থেকে তিন মাসের জন্য অর্থাৎ ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ‘কালোটাকা আইনের’ আওতায় বিদেশি ব্যাংকে বেআইনিভাবে গচ্ছিত টাকার হিসাব সরকারকে জানালে কোনো শাস্তি হবে না। তবে ঘোষিত অর্থের ৩০ শতাংশ কর ও ৩০ শতাংশ পেনাল্টি বাবদ সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে।
কিন্তু এই প্রকল্প কার্যত মুখথুবড়ে পড়ে। প্রকল্পের সময়সীমা শেষ হবার পর দেখা যায়, মাত্র ৬৩৮ জন তাদের বিদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে গচ্ছিত ৪ হাজার ১৪৭ কোটি টাকার তথ্য সরকারকে জানিয়েছে। এই ক্ষমাদান প্রকল্প থেকে কর ও পেনাল্টি বাবদ সরকারি কোষাগারে জমা পড়ে ২ হাজার ৪৮৮ কোটি টাকা।
প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. অরুণকুমার মনে করেন, ১৯৪৮ সাল থেকে বিদেশের ব্যাংকে ভারতীয়রা যত কালোটাকা গচ্ছিত রেখেছে, তার ১ শতাংশও জমা পড়েনি সরকারের ক্ষমাদান প্রকল্পে।
২০১২ সালের মে মাসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের সরকার কালোটাকা-সম্পর্কিত একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছিল। সেখানে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের সূত্র উল্লেখ করে বলা হয়েছিল, ২০১০ সালের শেষ পর্যন্ত সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে ভারতীয়দের ৯২ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন টাকা গচ্ছিত আছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে সুইজারল্যান্ড সরকার টাকার ওই অঙ্ক নিশ্চিত করে।
কালোটাকা উদ্ধারে নরেন্দ্র মোদি সরকারের দ্বিতীয় প্রয়াস ২০১৬ সালে। এবার দেশের ভিতরে থাকা কালোটাকা উদ্ধারে সেই একই ক্ষমাদান প্রকল্পের পথে হাঁটে সরকার। ঘোষণা করা হয়, ১ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যারা তাদের বেআইনিভাবে গচ্ছিত টাকার হিসাব সরকারকে জানাবে, তাদের কোনো শাস্তি হবে না। শুধু দিতে হবে ঘোষিত টাকার ৩০ শতাংশ কর এবং ১৫ শতাংশ পেনাল্টি। এই ১৫ শতাংশের ৭ দশমিক ৫ শতাংশ সারচার্জ এবং বাকি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ কৃষি কল্যাণ বাবদ।
৯০ দিনের এই ক্ষমাদান প্রকল্পের নিট ফল কী? ১ অক্টোবর, ২০১৬ তে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অরুন জেটলি সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়ে দেন, ৬৪ হাজার ২৭৫ জন ক্ষমাদান প্রকল্পের সুযোগ নিয়ে ৬৫ হাজার ২৫০ কোটি টাকার হিসাব দিয়েছে। এই প্রকল্প থেকে কর ও পেনাল্টি বাবদ সরকারের আয় হয়েছে ২৯ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা।
স্বাধীন ভারতে করখেলাপিদের কালোটাকা সাদা করার জন্য সরকারি ক্ষমাদান প্রকল্পের শুরু সেই ১৯৫১ সালে। প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সরকার ঘোষণা করেছিল, ‘ভলোন্টারি ডিসক্লোজার অব ইনকাম স্কিম’।
স্বাধীন দেশকে নতুন করে গড়ে তোলার আবেগ টগবগ করে ফুটতে থাকলেও সেবার গোপনে গচ্ছিত ধনের হিসাব সরকারকে জানানোর উৎসাহ দেখা যায়নি মানুষের মধ্যে। মাত্র ৭০ কোটি ২ লাখ কালো টাকার হিসাব পাওয়া গিয়েছিল।
এরপর সাত দশক পেরিয়ে এসেছে ভারত। এই সময়ে কালোটাকার পাহাড় পরিণত হয়েছে সুউচ্চ পর্বতে। দেশের আইনি অর্থনীতির সমান্তরালভাবে চলছে বেআইনি অর্থনীতির সাম্রাজ্য। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইন্টারপোলের প্রথম দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর (সিবিআই) ডাইরেক্টর এ পি সিং বলেছিলেন, কর ছাড়ের ক্ষেত্রে স্বর্গ হিসেবে চিহ্নিত দেশগুলোতে ভারতীয়দের আনুমানিক ৫০০ বিলিয়ন ডলার বেআইনি অর্থ মজুত আছে।
জার্মান অর্থনীতিবিদ ফ্রিডরিচ জর্জ স্নাইডার ২০০৬ সালে একটি গবেষণাপত্রে জানিয়েছিলেন, ভারতের গড় অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ২৩ থেকে ২৬ শতাংশ কালোটাকার অর্থনীতি। অথচ ১৯৫১ সাল থেকে ২০২১– এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত সরকার কালোটাকা উদ্ধারে আইনের নানা সংশোধন ছাড়া ১২টি ক্ষমাদান প্রকল্প ঘোষণা করেছে। ৭০ বছর ধরে এ ১২ প্রকল্পে ১ লাখ ১৭ হাজার ৪৩৭ কোটি ২০ লাখ কালোটাকার সন্ধান পাওয়া গেছে। ভারতের মধ্যে বা বিদেশে ভারতীয় নাগরিকরা কত বেআইনি টাকা গচ্ছিত রেখেছেন, তার সঠিক হিসাব পাওয়া সম্ভব নয়। তবে বিভিন্ন সময় অর্থনীতির গবেষকরা, সরকার নিয়োজিত সংস্থা বা কমিটি যে রিপোর্ট দেয়, তা থেকে পরিস্থিতির ভয়াবহতা উপলব্ধি করা যায়।
গত শতাব্দীর ছয়ের দশকে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিকোলাস কালডোর তার এক লেখায় বলেছিলেন, ১৯৫৩-৫৪ আর্থিক বছরে ভারতে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত টাকার পরিমাণ ছিল আনুমানিক ৬০০ কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদ ড. ডি কে রঙ্গনেকারের অনুমান ১৯৬১-৬২ সালে কালোটাকার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা, ১৯৬৪-৬৫-এ ২ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা, ১৯৬৮-৬৯-এ ২ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা ও ১৯৬৯-৭০ সালে ৩ হাজার ৮০ কোটি টাকা।
কালোটাকা নিয়ে তথ্য আর সংখ্যার অভাব নেই। অভাব নেই কালোটাকার কারবারিদের ক্ষমাদানের সরকারি প্রকল্পের। ঢাকঢোল পিটিয়ে সেই সব প্রকল্প ঘোষণা করা হয়, একসময় তার মেয়াদও শেষ হয়। কর খেলাপিরা নির্বিকার থেকে যান।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৬ সালের ২৬ জুন ‘মান কি বাত’ অনুষ্ঠানে, ৩০ সেপ্টেম্বরের সময়সীমার মধ্যে সাধারণ ক্ষমা প্রকল্পের অধীনে নাগরিকদের তাদের অঘোষিত আয়ের ঘোষণা দেওয়ার শেষ সুযোগ হিসেবে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন। অর্থনীতিবিদরা অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর সেই হুশিঁয়ারিকে অভিহিত করেছিলেন ইতিহাসকে প্রত্যাখ্যান করার সমতুল্য বলে।
প্রধানমন্ত্রী এটিকে ‘শেষ’ সুযোগ বলে দাবি করলেও বাস্তবে দশকের পর দশক ধরেই সরকারগুলো কালোটাকা উদ্ধারের নামে সাধারণ ক্ষমার প্রকল্প ঘোষণা করে কর ফাঁকি দেওয়া মানুষদের সুযোগ করে দেয় কালোটাকা সাদা করার। কিন্তু প্রায় সবক্ষেত্রেই দেখা গেছে ‘বহু আড়ম্বরে লঘু ক্রিয়া’।
ক্ষমাদান প্রকল্পের মাধ্যমে আশানুরূপ ফল না পেয়ে নরেন্দ্র মোদি আচমকা ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল করে কালোটাকা গোপন কুঠুরি থেকে বাইরে আনার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু লাভ কিছু হয়নি। সরকার আশা করেছিল, নোট বাতিলের ফলে ২ থেকে ৩ লাখ কোটি টাকা পাওয়া যাবে। অথচ রিজার্ভ ব্যাংক ঘোষণা করল বাজারে ৫০০ ও ১০০০ টাকার যে নোট ছিল, তার ৯৯ দশমিক ৩ শতাংশই ব্যাংকে জমা পড়েছে।
আসলে কালোটাকার বিরুদ্ধে লড়াই নিছক ক্ষমাদান প্রকল্প বা নোট বাতিল করে জেতা যায়, এই ভাবনাটা সাধারণ নাগরিককে বিভ্রান্ত করার প্রয়াস ছাড়া আর কিছু নয়। কালোটাকার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রধান ও পূর্বশর্ত হলো রাজনৈতিক সদিচ্ছা। কর ফাঁকি দেওয়া করপোরেট ব্যবসায়ীদের টাকায় রাজনৈতিক দল চালানো, ভোটে লড়া আর দুর্নীতিমুক্ত আর্থিক ব্যবস্থার কথা বলা, তঞ্চকতা ছাড়া আর কী? আর এই তঞ্চকতার কারণেই ক্ষমাদানের লোভনীয় প্রস্তাব বা সুযোগ দিয়েও কালোটাকা বের করা যায় না। বরং তা বেড়ে চলে উল্কার গতিতে।
আরও পড়ুন:বিতর্কিত তিন জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে জড়িত সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনারগণ ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিবদের ভূমিকা তদন্তে অবিলম্বে একটি কমিটি গঠনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বৈঠকে এ সংক্রান্ত আলোচনা শেষে এ নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা ও কমিশন প্রধান প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
বৈঠকে কমিশন সদস্যগণ জুলাই সনদ তৈরির কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। কমিশনের সহ-সভাপতি প্রফেসর আলী রীয়াজ বলেন, ‘বেশকিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। খুব শিগগিরই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সনদ চূড়ান্ত করে ফেলা সম্ভব হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সবাই জুলাই সনদের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আমি আশা করি আগামী জুলাই মাসের মধ্যে আমরা এটি জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারব।’
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা তাঁর লন্ডন সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, ‘লন্ডনে বাংলাদেশি কমিউনিটির যাদের সঙ্গেই দেখা হয়েছে তারা সংস্কার নিয়ে জানতে চেয়েছে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা খুব আগ্রহী। তারা বিস্তারিতভাবে ঐকমত্য কমিশনের কাজ নিয়ে আমার সঙ্গে আলোচনা করেছে, মতামত দিয়েছে। যেখানেই গেছি সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিরা আমাকে জিজ্ঞেস করছেন, ‘আমরা আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে পারব তো?’ আমাদের প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। পোস্টাল ব্যালট এবং আর কী কী অপশন আছে সেগুলো নিয়ে ভাবতে হবে, সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনায় বসতে হবে।’
বৈঠকে নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশন প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘সকল রাজনৈতিক একমত হয়েছে যে, অতীতের তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন আয়োজনে কর্মকর্তাদের ভূমিকা তদন্ত ও জবাবদিহিতার আওতায় আনা প্রয়োজন।’
কীটনাশক ও বিষমুক্ত ফল, সবজি ও ফসল আবাদের লক্ষ্যে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন, এন্টারপ্রেনরশিপ অ্যান্ড রেসিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ (পার্টনার) এর আওতায় পার্টনার কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গতকাল সোমবার (১৬ জুন) উপজেলা কৃষি বিভাগের আয়োজনে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলামের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি ময়মনসিংহের উপ-পরিচালক ড. মোছাঃ নাছরিন আক্তার বানু।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি ফসলি জমিতে কীটনাশক ব্যবহারে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় শরীরে পিপিই ও মাস্ক পড়ে কীটনাশক স্প্রে করার বিষয়ে গুরুত্বরোপ ও নির্দেশনা প্রদান করেন।
ড. মোছাঃ নাছরিন আক্তার বানু বলেন, ফুলবাড়িয়া উপজেলার মাটি অনেক ভালো। ফসলি জমিতে আগাছা সরাতে হবে, তাহলে আবাদ আরও বেশি ভালো হবে। অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারে মানবদেহে মারাত্মক প্রভাব পড়ে।
এসময় তিনি আরও বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কীটনাশক ও বিষমুক্ত ফল, সবজি ও ফসল উৎপাদনে বিশেষ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। মাঠপর্যায়ে এ কার্যক্রম ইতিমধ্যেই ভালো সাড়া ফেলেছে।
এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ নূর মোহাম্মদ। অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার আ র ম আতিকুর রহমান, বাকতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজলুল হক মাখন, কালাদহ ইউনিয়নের নজরুল ইসলাম মাস্টার, কৃষক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, কৃষানী আকলিমা আক্তার প্রমুখ।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রে (Central African Republic) নিয়োজিত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে (MINUSCA), Bangladesh Armed Military Utility Helicopter Unit-5 (BANAMUHU-5) কন্টিনজেন্ট এর মোট ১২৫ জন সদস্য প্রতিস্থাপন করতে যাচ্ছে। বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন, বিবিপি, ওএসপি, জিইউপি, এনএসডব্লিউসি, পিএসসি সোমবার (১৬-৬-২০২৫) বিমান বাহিনী সদর দপ্তর-এ মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রগামী কন্টিনজেন্ট (BANAMUHU-6) এর সদস্যদের উদ্দেশ্যে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন।
এসময় তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সততা, পেশাদারিত্ব ও আন্তরিকতার সাথে অর্পিত দায়িত্ব পালন করে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী তথা দেশের সুনাম বয়ে আনার জন্য কন্টিনজেন্ট সদস্যদের প্রতি আহবান জানান। পরিশেষে তিনি মিশনের সাফল্য কামনায় আয়োজিত এক বিশেষ মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মাঝে বিমান বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারগণ, ঢাকাস্থ বিমান ঘাঁটি দ্বয়ের এয়ার অধিনায়ক এবং বিমান সদর ও ঘাঁটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সমরাস্ত্র ব্যবহারে সক্ষম এবং নাইটভিশন প্রযুক্তি সমৃদ্ধ ০৩ টি এমআই-১৭১ হেলিকপ্টার ও বিভিন্ন গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইকুইপমেন্ট মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রে MINUSCA জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিযুক্ত রয়েছে। BANAMUHU-6 কন্টিনজেন্টের নেতৃত্বে থাকবেন এয়ার কমডোর ইমরানুর রহমান, বিইউপি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, জিডি(পি)। আগামী ১৯ জুন ২০২৫ তারিখে কন্টিনজেন্ট এর সদস্যগণ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, ঢাকা হতে মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন।
দ্বিতীয় মেয়াদে গত জানুয়ারিতে শপথ নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি ‘সব যুদ্ধ বন্ধের’ পক্ষে থাকবেন এবং একজন ‘শান্তির দূত ও ঐক্য প্রতিষ্ঠাকারী’ হিসেবে নিজের উত্তরাধিকার রেখে যাবেন।
কিন্তু মাত্র ছয় মাসের মাথায় মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছোড়া শুরু হয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র। গত শুক্রবার ভোরে ইরানে ইসরায়েলি হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে—এমন এক সর্বাত্মক যুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। আর শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকেও এটি সংঘাতে টেনে নিতে পারে।
ইসরায়েলের ওই হামলাকে ট্রাম্প প্রায় প্রকাশ্যেই সমর্থন জানিয়েছেন। ফলে নিজেকে শান্তির দূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার তার প্রতিশ্রুতিই এখন সবচেয়ে বড় পরীক্ষার সম্মুখীন।
ট্রাম্পের এ সমর্থন তার অনুগত রাজনৈতিক গোষ্ঠীকে, যাদের অনেকে ডানপিন্থি রাজনীতিক ও ভাষ্যকার, বিভক্ত করে ফেলেছে। তারা মনে করছেন, ইসরায়েলকে বিনা প্রশ্নে সমর্থন দেওয়া প্রকৃতপক্ষে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির পরিপন্থি। অথচ ট্রাম্পের মূল নির্বাচনী স্লোগান ছিল এটি।
আন্তর্জাতিক কূটনীতিবিষয়ক মার্কিন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান কুইন্সি ইনস্টিটিউটের নির্বাহী সহসভাপতি ত্রিতা পারসি বলেন, ‘আমেরিকা ফার্স্ট ঘাঁটির (এ নীতির সমর্থক গোষ্ঠী) অনেক অংশে এখন প্রবল ক্ষোভ ও বিশ্বাসঘাতকতার অনুভূতি বিরাজ করছে। কারণ, তারা সত্যিকার অর্থেই যুক্তরাষ্ট্রকে আর কোনো যুদ্ধে জড়িয় পড়া বা তাতে সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি দেখতে চায় না।’
ত্রিতা পারসি আরও বলেন, ‘তারা (এ গোষ্ঠী) এখন ইসরায়েল নিয়ে ব্যাপক সংশয়ের মধ্যে পড়েছে। তারা মনে করে, এ ধরনের যুদ্ধই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টদের ব্যর্থ ও তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ অগ্রাধিকারগুলো ক্ষুণ্ন করেছে।’
ইরানে গত শুক্রবার ইসরায়েলি হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন রক্ষণশীল নেতাও এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র যেন এমন কোনো যুদ্ধে না জড়ায়, যা তার স্বার্থ রক্ষা করবে না।
ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ (এমএজিএ) আন্দোলনের বড় মুখ ও প্রভাবশালী রক্ষণশীল ভাষ্যকার টাকার কার্লসন বলেন, ইসরায়েলের বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ‘যুদ্ধপিপাসু সরকার’কে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন দেওয়া উচিত নয়।
‘ইসরায়েল চাইলে যুদ্ধ করতেই পারে। ওটা স্বাধীন রাষ্ট্র। তারা যা খুশি করতে পারে। কিন্তু সেটা যেন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিয়ে না হয়,’ গত শুক্রবার ‘টাকার কার্লসন নেটওয়ার্ক’–এর সকালের নিউজলেটারে লেখা হয়।
নিউজলেটারে আরও বলা হয়, ইরানের সঙ্গে (যুক্তরাষ্ট্রের) যুদ্ধ হলে তা ‘পরবর্তী প্রজন্মের সন্ত্রাসবাদের জন্ম দিতে পারে’ কিংবা একটি বিদেশি এজেন্ডার নামে হাজার হাজার মার্কিনের মৃত্যু ডেকে আনতে পারে।
‘এ কথা বলাই বাহুল্য যে এ ধরনের কোনো সম্ভাবনাই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য লাভজনক হবে না। কিন্তু অন্য একটি পথও আছে: ইসরায়েলকে বাদ দাও। ওরা নিজেরা যুদ্ধ করুক,’ লেখা হয় নিউজলেটারে।
রিপাবলিকান সিনেটর র্যান্ড পলও ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানো নিয়ে সতর্ক করেছেন এবং ওয়াশিংটনের যুদ্ধ–সমর্থক রক্ষণশীলদের কঠোর সমালোচনা করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে র্যান্ড পল লিখেছেন, ‘মার্কিন জনগণ যে যুদ্ধের শেষ নেই, তার ঘোরবিরোধী এবং ২০২৪ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দিয়ে তাঁরা সেটাই দেখিয়েছেন।’
‘আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অনুরোধ করব যেন তিনি তার অবস্থানে অটল থাকেন, যুক্তরাষ্ট্রকে অগ্রাধিকার দেন এবং অন্য দেশের মধ্যে চলা কোনো যুদ্ধে জড়িত না হন,’ বলেন র্যান্ড পল।
ডানপন্থী কংগ্রেস সদস্য মারজোরি টেলর গ্রিনও একটি বার্তায় ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তিনি হামলার পক্ষে নন। এর আগেও তিনি ট্রাম্পকে সতর্ক করেছিলেন, তেহরান পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হচ্ছে—এমন ইসরায়েলি অভিযোগের ভিত্তিতে যেন ইরানে হামলা চালানো না হয়।
মারজোরি টেলর এক্সে লেখেন, ‘আমি শান্তির জন্য প্রার্থনা করছি। শান্তি। এটাই আমার আনুষ্ঠানিক অবস্থান।’
যদিও ইসরায়েলের সমর্থকেরা ইরানের সম্ভাব্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির হুমকির কথা উল্লেখ করে দেশটিতে হামলাকে যৌক্তিক বলে দাবি করছেন; তেহরান বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। এমনকি ট্রাম্পের গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ডও গত মার্চে এক সাক্ষ্যে বলেছেন, ‘আমাদের মূল্যায়ন অনুযায়ী, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে না।’
ইসরায়েলের একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে পরিচিত রিপাবলিকান কর্মী ও ভাষ্যকার চার্লি কার্কও ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানো নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
নিজ পডকাস্টে কার্ক বলেন, ‘আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, আমাদের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ ঘাঁটি কোনো যুদ্ধই চায় না। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা চায় না (ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে)। তারা চায় না যুক্তরাষ্ট্র এতে জড়িয়ে পড়ুক।’
গত শুক্রবার ইসরায়েল যখন ইরানের সামরিক ঘাঁটি, পারমাণবিক স্থাপনা ও আবাসিক এলাকায় বোমাবর্ষণ শুরু করে, তার কয়েক ঘণ্টা আগেই ট্রাম্প বলেছিলেন, তেহরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছাতে তিনি আগ্রহী।
গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘বিষয়টা খুবই সহজ। জটিল কিছু না। ইরান পারমাণবিক অস্ত্র রাখতে পারে না—এই একটাই কথা। তার বাইরে আমি চাই, তারা সফল হোক। আমরা সাহায্য করব।’
গতকাল রোববার ওমানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ে ষষ্ঠ দফা আলোচনা হওয়ার কথা ছিল।
তবে শুক্রবার ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, তিনি আগেই ইসরায়েলের হামলার ব্যাপারে জানতেন। অবশ্য তিনি হামলা চালাতে ইসরায়েলকে নিষেধ করেছিলেন কি না, তা বলেননি। যদিও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইসরায়েলের হামলাকে ‘একতরফা’ বলেই উল্লেখ করেছেন।
অথচ ট্রাম্প ইরানের ওপর হামলার দায় চাপিয়ে বলেন, দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য তার আহ্বানে ইরানের কর্মকর্তাদের সাড়া দেওয়া উচিত ছিল।
ট্রাম্প পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘আমি আগেই বলেছিলাম, তাদের জন্য এটা হবে এমন কিছু, যা তারা কল্পনাও করতে পারেননি। যুক্তরাষ্ট্র তৈরি করে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও জীবনঘাতী সামরিক সরঞ্জাম—অনেক অনেক বেশি। আর ইসরায়েলের কাছে এর অনেক কিছুই আছে, আরও আসছে।’
ত্রিতা পারসি বলেন, শুরুতে ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে সমঝোতা চেয়েছিলেন, কিন্তু তার চরম শর্ত—ইরানকে সম্পূর্ণভাবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করতে হবে—আলোচনায় অচলাবস্থা তৈরি করে।
‘এটা অনুমেয় ছিল যে এ চূড়ান্ত দাবির ফলে আলোচনা ব্যর্থ হবে। ইসরায়েল সেই ব্যর্থতাকে কাজে লাগিয়ে ট্রাম্পকে সামরিক পথ বেছে নিতে বাধ্য করেছে,’ বলেন ত্রিতা পারসি।
পারসি আরও বলেন, ‘গত সপ্তাহজুড়ে ট্রাম্প কূটনৈতিক উদ্যোগের পক্ষে কথা বললেও, তিনি জানতেন ইসরায়েলের হামলা আসন্ন। এভাবে তিনি সবাইকে ভুল বার্তা দিয়েছেন যে হামলা হবে আলোচনার পরে। অথচ সেটা আগেই হয়েছে।’
ইসরায়েলের হামলার পর কংগ্রেসে কিছুটা সমালোচনা হলেও বহু রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট এই হামলার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্পের ঘাঁটির একটি বড় অংশ, বিশেষ করে তরুণ ডানপনন্থিরা, ইসরায়েলকে অন্ধ সমর্থনের বিষয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ক্যাটো ইনস্টিটিউটের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক বিশ্লেষক জন হফম্যান বলেন, ‘তারা (ডানপন্থিরা) রিপাবলিকান পার্টির একটি উল্লেখযোগ্য অংশের প্রতিনিধিত্ব করে, বিশেষত তরুণদের মধ্যে।’
হফম্যান আরও বলেন, ‘পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপ বলছে, ৫০ বছরের নিচের অর্ধেক রিপাবলিকানই এখন ইসরায়েল সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ এই নিরন্তর যুদ্ধক্লান্তির মধ্যে হাঁপিয়ে উঠেছেন।’
বিশ্লেষকদের মতে, ইরানে ইসরায়েলি হামলার প্রতি ট্রাম্পের নমনীয় অবস্থান তাঁকে আবারও এমন একটি সংকটের মুখে ফেলেছে, যেটা একসময় বুশ প্রশাসনকে ফেলেছিল।
হফম্যান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং রিপাবলিকান পার্টির অভ্যন্তরে দীর্ঘদিন ধরে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কামনা করা প্রভাবশালীদের উপস্থিতি, যেমন লিন্ডসে গ্রাহাম—এসবই বড় ঝুঁকির সৃষ্টি করছে।’
‘এ পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলার আশঙ্কা অনেক বেশি,’ বলেন হফম্যান।
সূত্র: আল জাজিরা
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার চারটি গ্রামের পাঁচ যুবকের অপহরণের এক যুগ পেরিয়ে গেলেও এখনো তাদের সন্ধান মেলেনি। অপহৃতদের কেউ বেঁচে আছেন কিনা, নাকি তাঁরা চিরতরে হারিয়ে গেছেন—সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি পরিবার, প্রশাসন কিংবা গোয়েন্দা সংস্থার কাছেও।
২০১৩ সালের ১৯ মে রাতে বড়াইগ্রামের গুরুমশৈল গ্রামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অস্ত্রধারী ১০-১২ জনের একটি দল মাইক্রোবাসে এসে কৃষক কামাল হোসেনকে বাড়ির পাশ থেকে তুলে নেয়। একই রাতে একই কায়দায় অপহরণ করা হয় ওই গ্রামের দিনমজুর ইব্রাহিম তালুকদার এবং পার্শ্ববর্তী মহিষভাঙ্গা গ্রামের ভুটভুটি চালক তৈয়ব আলীকে।
অপহরণের সময় অস্ত্রধারীরা এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং অপহৃতদের মারধর করে তুলে নিয়ে যায়। এর ঠিক দুদিন আগে একই উপজেলার কালিকাপুর গ্রাম থেকে নিখোঁজ হন বিজিবি সদস্য রাসেল গাজী ও তার বন্ধু কাটাশকুল গ্রামের সেন্টু হোসেন। ছুটিতে বাড়ি এসে রাসেল তার বন্ধুর ফোন পেয়ে বের হওয়ার পর থেকেই নিখোঁজ হন দুজনই।
স্বজনরা জানান, অপহরণের পরপরই তারা থানায় জিডি ও মামলার পাশাপাশি প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। কিন্তু তৎকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো দৃশ্যমান তৎপরতা দেখা যায়নি। গুরুমশৈল গ্রামের কামালের মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘এক যুগ হয়ে গেল, আমার ছেলের ছবি বুকে নিয়ে কাঁদি। কে নিল, কেন নিল, কোনো উত্তর নেই।’
নিখোঁজ ইব্রাহিম তালুকদারের মা বলেন, ‘ছেলেকে হারিয়ে আমরা পথে বসেছি। কোনো দিন কেউ খোঁজও নেয়নি।’ রাসেল গাজীর বাবা বলেন, ‘বিজিবির মতো চাকরিতে থেকেও যদি অপহৃত হয়, তবে সাধারণ মানুষের কী হবে?’
নাটোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন বলেন, ‘এই ঘটনার বিষয়ে আমরা নতুন করে তদন্ত শুরু করেছি। ইতোমধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও হাতে এসেছে। আশা করছি, দ্রুতই রহস্য উদঘাটন এবং দায়ীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।’
অপহৃতদের স্বজনরা বলছেন, ‘বর্তমান সরকারের কাছে তারা আকুতি জানাচ্ছেন—তাদের প্রিয়জনেরা জীবিত না থাকলেও অন্তত কী ঘটেছে, কোথায় গেল তারা—সে রহস্য তো উন্মোচিত হোক।’
গৃহস্থদের কাছ থেকে ৭০০-৮০০ টাকায় ৪৫ কেজিতে এক মণ নাক ফজলি আম কিনছেন পাইকারি দোকানিরা। তারা সেই আম ১ হাজার ২০০ টাকায় ৪০ কেজিতে এক মণ বিক্রি করছেন। প্রতি মণ আমে নিচ্ছেন ৫ কেজি ধলতা। এতে গৃহস্থরা ওজনে আর খুচরা আম ক্রেতারা দামে ঠকছেন। পাইকারি বিক্রেতারা প্রতি মণে অর্ধেকেরও বেশি টাকা লাভ করছেন। জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌর শহরে রেলগেট এলাকায় এভাবেই সিন্ডিকেট করে আম বেচাকেনা হচ্ছে। খুচরা ক্রেতারা ও গৃহস্থরা আম ক্রয়-বিক্রয়ে প্রশাসনের নজরদারির দাবি জানিয়েছেন।
নওগাঁর বদলগাছি উপজেলায় প্রচুর নাক ফজলি আমের উৎপাদন। বদলগাছির এই নাক ফজলি আম অনান্য এলাকার চেয়ে সুস্বাদুও। প্রতি বছর আমের মৌসুমে আক্কেলপুর পৌর শহরের কিশোর মোড় থেকে রেলগেট পর্যন্ত সড়কে আমের পাইকারি বাজার বসে। এবারও আমের পাইকারি বাজার বসছে। প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে ৭টা পর্যন্ত আম বেচাকেনা হয়। বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন ও পাইকারিরা এসে আম কিনেন।
গৃহস্থ ও খুচরা আম ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের আগে নাক ফজলি আম ১ হাজার ৪০০ টাকা মণ বিক্রি হয়েছে। ঈদের পর নাক ফজলি আমের আমদানি বেড়েছে। এ কারণে আমের মণে ৬০০ থেকে ৪০০ টাকা দাম কমেছে। ৪০ কেজিতে মণ হলেও পাইকারিরা গৃহস্থদের কাছে ৪৫ কেজি মণে আম কিনছেন। পাইকারিরা দোকানে সেই আম ১ হাজার ২০০ টাকায় ৪০ কেজিতে মণ বিক্রি করছেন।
বদলগাছির ভাণ্ডারপুর গ্রামের গৃহস্থ মনোয়ার হোসেন বলেন, আক্কেলপুর বাজারে ৮০০ টাকা দরে তিন মণ আম বিক্রি করেছি। তিন মণ আমে আমাকে ১৫ কেজি আম বেশি দিতে হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তাদের কাছে ৪৫ কেজিতে পাইকারিরা আম কিনছেন। এটি চরম অন্যায়। আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
খুচরা বিক্রেতা বেলাল হোসেন বলেন, রেলগেট এলাকার দোকান থেকে এক মণ নাক ফজলি আম ১ হাজার ২০০ টাকায় কিনলাম। দোকানিরা প্রতি মণে ৪০০-৫০০ টাকা লাভ করছে। আবার গৃহস্থদের কাছে নেওয়া ওজন দিচ্ছেন না। মৌসুমি আম বিক্রেতা হারুন বলেন, ৪৫ কেজিতে আম বিক্রি হয়। আমরা দূরে নিয়ে গিয়ে আম বিক্রি করি। তবে রেলগেট এলাকার দোকানিরা একটু বেশি দামে বিক্রি করছেন।
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে মামুন জমাদ্দার (৪০) নামে এক জেলের জালে ২৩ কেজি ওজনের বিশাল একটি সামুদ্রিক কোরাল মাছ ধরা পড়েছে। পরে মাছটি ২৪ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়।
গতকাল রোববার সকালে কুয়াকাটা মাছ বাজারের মনি ফিস নামে মৎস্য আড়তে মাছটি বিক্রি করার জন্য আনা হয়। ডাকের মাধ্যমে ১ হাজার ৫০ টাকা কেজি দরে ২৪ হাজার ১৫০ টাকায় মাছটি কিনে নেন কুয়াকাটা মাছ বাজারের ব্যবসায়ী মো. মোস্তাফিজ।
জানা গেছে, পটুয়াখালীর মহিপুর সদর ইউনিয়নের নিজামপুর গ্রামের জেলে মামুন জমাদ্দার ১২ জুন রাতে সমুদ্রে জাল ফেলেন এবং ১৪ জুন রাতে জাল তুললে তিনি তার জালে এই বিশাল আকৃতির সামুদ্রিক কোরাল মাছটি পান।
জেলে মামুন জমাদ্দার বলেন, এত বড় মাছ পাব সেটা ভাবতেও পারিনি। প্রায় দুই মাস মাছ ধরতে পারিনি। কারণ মাছ ধরায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা ছিল। এই অবরোধের পর মাছটি পেয়ে ভালো দামে বিক্রি করতে পেরে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছি। মাছটির ক্রেতা কুয়াকাটা মাছ বাজারের ব্যবসায়ী মো. মোস্তাফিজ বলেন, আমাদের এলাকায় বড় বড় হোটেলগুলোতে সামুদ্রিক বড় কোরাল মাছের চাহিদা রয়েছে। আশা করছি মাছটি বিক্রি করে ভালো টাকা লাভ করতে পারব। তবে এলাকায় বিক্রি না হলে ঢাকায় পাঠিয়ে দেব।
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা সমুদ্রে মাছ ধরতে নেমেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই জেলেদের জালে বড় মাছ ধরা পড়বে। জেলেরা সঠিকভাবে নিষেধাজ্ঞা পালন করেছে বিধায় সামনের দিনগুলোতে তাদের জালে ভালো সংখ্যক মাছ ধরা পড়বে।
মন্তব্য