কয়েক বছর পর এবার পশ্চিমবঙ্গে আমের ফলন ভালো হয়েছে। তাই চাষিরা খুশি। কিন্তু যে সময়ে আম বিক্রি শুরু সে সময়েই চলছে লকডাউন। করোনার প্রভাবে অচলাবস্থা চারদিকে। এ অবস্থায় চাষিরা পাকা আম নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। কী করবেন তারা, বুঝতে পারছেন না।
শুধু বাঙালি নয় সমস্ত ভারতীয়দের কাছে আমের কদর রয়েছে। প্রতিবছর মৌসুমে আমের বাজার থাকে সরগরম। কিন্তু এ বছর করোনা ভাইরাস সংক্রমণ সামাল দিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার লকডাউনের মতো কড়া বিধিনিষেধ জারি করেছে। চলবে ১৫ জুন পর্যন্ত। জরুরি পরিষেবা ছাড়া, সরকারি-বেসরকারি বাস-ট্রাম, লোকাল ট্রেনের মতো সব গণপরিবহন বন্ধ। তাই বাগানের আম বাজারজাত করায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমচাষিরা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।
পশ্চিমবঙ্গের মালদহে আমের চাষ সবচেয়ে বেশি হয়। ৩৩ হাজার হেক্টর জায়গাজুড়ে এখানে আমের বাগান আছে। মুর্শিদাবাদে ২১ হাজার এবং নদীয়ায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের আমের চাষ হয়। বাঁকুড়া, শিলিগুড়ি, মেদিনীপুরেও আমের চাষ হয়। আম চাষ থেকে বাজারজাত করা পর্যন্ত বিভিন্ন কাজে জড়িত লাখ লাখ মানুষ।
মালদহের আম ব্যবসায়ী বুলবুল হালদার বলেন, ‘রাজ্যে লকডাউনের কারণে ব্যবসায়ীরা কাজ করতে পারছেন না। আম কেনার জন্য বাগানে আসতে পারছেন না। ভালো ফলন হলেও এবার খরিদ্দারের অভাবে চাষিরা গাছ থেকে আম ভাঙতে পারছেন না।’
আমচাষি অমূল্য প্রধান বলেন, হিমসাগর, ফজলি ও ল্যাংড়া জাতের আম মালদহে বেশি চাষ হয়। কিন্তু এবার তো করোনায় বাগান কেনাবেচা হচ্ছে না।
ব্যবসায়ী বুলবুল বলেন, আমের ফড়িয়ারা আসছে না। বিহারে কিছুটা যাচ্ছে কিন্তু লোকাল মার্কেটে মেদিনীপুর থেকে আলিপুরদুয়ার, লকডাউনের জন্য দশটার পর থেকে বাজার বন্ধ থাকার কারণে, আম যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা আম বিক্রি করতে পারছেন না। বাজারের মাল বাজারে থেকে যাচ্ছে। গোলাপভোগ ও ল্যাংড়া এ সময় পেকে যায়। বাজার বন্ধের কারণে আম ভাঙতে পারছেন না চাষিরা।
মালদহের আম ত্রিপুরা, অসম ও ওড়িশায় যায়। লকডাউনের কারণে ব্যবসায়ীরা আম কিনতে আসছেন না। এলসির কারণে এখন বাংলাদেশে পাঠানো পুরোপুরি বন্ধ।
ব্যবসায়ীরা জানান, আম মালদহের বাইরে না পাঠাতে পারলে চাষিরা ক্ষতির মুখে পড়বেন। কেননা, পাকা আম বেশি দিন গাছে রাখা যাবে না। ১৫ দিনের মধ্যে পরিবহনব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন ধরনের আমের চাষ হয়। সারা দেশে, খাদ্য রসিকদের মধ্যে ফলের রাজা আম নিয়ে গ্রীষ্মের মরশুমে রীতিমতো উন্মাদনা দেখা যায় ।
রসালো সুমিষ্ট ফল আম আর গ্রীষ্ম যেন সমার্থক। ভারতের জাতীয় ফল আমের বৈজ্ঞানিক নাম ম্যাগনিফেরা ইন্ডিকা। পশ্চিমবঙ্গে গোলাপভোগ, ল্যাংড়া, ফজলি, মধু কুলকুলি, অরুনা, আম্রপালি, গোলাপখাস, হিমসাগরসহ বিভিন্ন ধরনের আম চাষ হয়।
কেরলের ‘মুভান্দন’ ডাঁসা অবস্থায় নুন মসলা দিয়ে মেখে খেতে ভালোবাসেন কেরালিয়ানরা। কর্নাটকের রসালো ‘মুলগুয়া’ আম ভারতের ওজনে ভারী আমগুলোর অন্যতম। একেকটার ওজন তিন থেকে সাড়ে তিন কেজি হয় ।
অন্ধ্রের ‘হিমায়াত’ আম ‘ইমাম পসন্দ’ নামেও পরিচিত। মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে বাগান থেকে বাজারে আসে। অন্ধ্র ও কর্নাটকে ‘পোদ্দারসুপুলু’ নামে এক ধরনের রসালো আম পাওয়া যায়। সেখানকার মানুষ আদর করে ‘রসাপুরি’ বলে ডাকেন। এছাড়া নিলম, নাদন, থাম্বুর, চন্দ্রকরণ আমগুলো খুবই জনপ্রিয় ।
উত্তরপ্রদেশের বেনারসি ল্যাংড়ার খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। পাতি লেবুর মত আভা সারা গায়ে। যেমন গন্ধ তেমন অতুলনীয় এর স্বাদ। দিল্লি ও উত্তরপ্রদেশে এর ফলন হয় প্রচুর।
উত্তরপ্রদেশের দশেরি, চৌসা আমও বেশ জনপ্রিয়। চৌসা আম এর মুখটা দাঁত দিয়ে কেটে চুষে খাওয়ার রীতি। সেখান থেকেই বোধহয় এর নাম চৌষা। গোলাপখাস লালচে রঙের, গোলাপ ফুলের গন্ধের মতো এই আম দিয়ে বাহারি সব পদ বানানো হয়।
গোয়া ও গুজরাতে বিখ্যাত ‘পইরি’ আম দিয়ে বোতন ও কোটায় আমরস ব্যবসা বেশ প্রসিদ্ধ। ঘন, রসালো এই আমরস দুধে, শরবতে, পুডিং, কাস্টার্ড, ডেজার্ট বা অন্য খাবারের মিশিয়ে সুস্বাদু খাবার বানানো হয়।
মহারাষ্ট্রের রাজকীয় আম আলফানসো। গোয়ার আবিষ্কারক স্যার আলফানসো আলবুকার্ক এর নাম থেকে এই আমের নামকরণ। স্থানীয় কোঙ্কনি ভাষায় আলফানসো থেকে ‘অহপস’ পরে মহারাষ্ট্র ভাষায় ‘হাপুস’ নামে বদলে যায়।
আলফানসোর খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। বাক্সবন্দি করে বিদেশে রপ্তানি করা হয়। বিদেশী মুদ্রা আসে দেশে। কিন্তু বিদেশের বিভিন্ন বাজারে, আলফানসো বাতিল হয়েছে। আলফানসো আমের রাসায়নিক দূষণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে ও অন্যান্য কারণে রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। এর ফলে ধাক্কা খেয়েছে ভারতের আম বাণিজ্য।
এসব ব্যবসায়ী লাভ-ক্ষতির বাইরে যুগে যুগে দেশে-বিদেশে খাদ্য রসিকদের মধ্যে, আম নিয়ে মাতামাতি চোখে পড়ার মতো। মুঘল সম্রাট আকবর থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কেউ বাদ যাননি।
বিহারের দারভাঙা জেলায় সম্রাট আকবর এক লাখ আমগাছ রোপন করিয়েছিলেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও লিখেছেন ‘আমসত্ত্ব দুধে ফেলি, তাহাতে কদলি দলি, সন্দেশ মাখিয়ে তাতে, হাপুস হুপুস শব্দ, চারিদিক নিঃশব্দ পিপিরা কাঁদিয়া যায় পাতে..’
ভারতীয় খাদ্য এবং সংস্কৃতিতে আম রাজকীয়ভাবে বিরাজ করে। আমগাছ, গাছের পাতা, মুকুল, ফল সবই মঙ্গলের প্রতীক।
আরও পড়ুন:পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন এলাকায় কোরবানির পশু জবাই ও মাংস কাটতে গিয়ে অসাবধানতাবশত শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।
শনিবার(৭ জুন) সকাল থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।
জেলা সদরসহ আশপাশের অঞ্চল থেকে আসা আহতদের মধ্যে বেশিরভাগই ধারালো ছুরি, চাপাতি বা দা ব্যবহারে অদক্ষ থাকায় হাত-পা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে কেটে যায়। যদিও অধিকাংশ আহতের অবস্থা আশঙ্কাজনক নয় বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
আহতদের মধ্যে রয়েছেন—ফুলবাড়িয়া এলাকার পাবেল মিয়া (২৭), ঘাটুরা গ্রামের সেলিম (৪৫), চাঁনপুরের আরস মিয়া (২৬), জহিরুল হক (৫০), মো. মিলন (২৩), আজিজুল (২১), শাকিব (২৮), জীবন (৪০), সুমন (২৬), রামরাইলের আলামিন (২৩), আক্কাস (৪৫), উবায়দুল (৩৩), ইউবিন (২২), রহমত আলী (৫৫), সুলতানপুর এলাকার আবু সুফিয়ান (১৫), সাদেক (১৮) সহ অনেকেই। কারও হাতে, কারও বা পায়ে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে।
আহত সুফিয়ান বলেন, পায়ের নিচে রাখা মাংস কাটতে গিয়ে অসতর্কভাবে ছুরির কোপ পায়ে লাগে। পরে হাসপাতালে এসে সেলাই নিতে হয়।
আরেকজন, রিকশাচালক আরস মিয়া বলেন, মাংস কাটার সময় হাত ফসকে ছুরি লেগে যায়। হাসপাতালে তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. শুভ্র রায় বলেন, ঈদের দিন সকাল থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত অন্তত ১০০ জন রোগী আমাদের এখানে এসেছেন। এদের প্রায় সবাই কোরবানির পশুর মাংস কাটতে গিয়ে আহত হয়েছেন। সবাইকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়েছে। গুরুতর কেউ নয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডে একযোগে কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কোরবানির বর্জ্য দ্রুত অপসারণ কার্যক্রম পরিদর্শন করার জন্য কলাবাগান শিশু পার্ক সংলগ্ন সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) পরিদর্শন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এ সময় স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মানিত সচিব জনাব মো: রেজাউল মাকছুদ জাহেদী এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রশাসক জনাব মো. শাহজাহান মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
পরিদর্শনকালে উপদেষ্টা বলেন, শহরে কোরবানির বর্জ্য পরিষ্কার করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সময়মতো বর্জ্য অপসারণ না হলে দুর্গন্ধ ছড়ায়, এমনকি রোগ-জীবাণু সৃষ্টি হতে পারে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ১২ ঘন্টা সময়ের মধ্যেই সকল বর্জ্য অপসারণ করতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে উপদেষ্টা বলেন এ বছর কোরবানির বর্জ্যের কারণে নগরবাসীর ঈদ আনন্দ বাঁধাগ্রস্ত হবে না।
কোরবানির বর্জ্য অপসারণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রায় ১০০০০ হাজারের অধিক জনবল মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। ২০৭টি ডাম্প ট্রাক, ৪৪টি কম্পেক্টর, ৩৯টি কন্টেইনার ক্যারিয়ার, ১৬টি পে-লোডারসহ বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রমে ৭৫টি ওয়ার্ডে মোট ২০৭৯টি যানবাহন নিয়োজিত রয়েছে।
কোরবানির বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম ব্যবস্থাপনায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জরুরি পরিচালন কেন্দ্রে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপিত হয়েছে এবং সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে।
পরিদর্শনকালে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টার একান্ত সচিব জনাব মো: আবুল হাসান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সচিব জনাব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মোঃ মাহাবুবুর রহমান তালুকদারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া পাচার রোধে সীমান্ত এলাকাগুলোতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা (পিআরও) শরীফুল ইসলাম ইউএনবিকে জানান, সীমান্ত নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি কাঁচা চামড়া পাচার ও ভারতে পুশ-ইনের যেকোনো অপচেষ্টা প্রতিহত করতে বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, ঈদ মৌসুমে কাঁচা চামড়া পাচার অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এমন বাস্তবতায় সীমান্তজুড়ে নজরদারি ও টহল জোরদার করা হয়েছে।
পাশাপাশি, ভারতের দিক থেকে যেকোনো পুশ-ইন ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে সীমান্তরক্ষী এই বাহিনী।
বিজিবির পিআরও আরও জানান, ঈদের দিনেও ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিজিবির সদস্যরা। টহল ও নজরদারি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, কোরবানির পশুর চামড়া যাতে বৈধ বাণিজ্য চ্যানেলের মধ্য দিয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে, সেজন্য স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ে কাজ করছে বিজিবি।
জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় যেকোনো অপচেষ্টা প্রতিহত করতে বিজিবি দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ঈদ মৌসুমজুড়েই তারা সর্বোচ্চ সতর্কতায় থাকবে বলে জানানো হয়।
ঈদুল আজহার ছুটিকে কেন্দ্র করে পর্যটকদের ভিড় সামলাতে প্রস্তুত করা হয়েছে সিলেটের সাতটি প্রধান পর্যটন স্পট। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি হিসেবে পরিচিত এই অঞ্চলের টিলা, চা-বাগান, ঝরনা ও স্বচ্ছ জলের ধারায় মুগ্ধ হতে ছুটে আসছেন সারা দেশের ভ্রমণপিপাসুরা।
সিলেট মহানগরীর আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে ঐতিহাসিক কিন ব্রিজ, আলী আমজাদের ঘড়ি, শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরান (রহ.) মাজার, খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান, শাহী ঈদগাহ ও গৌর গোবিন্দের টিলা। তবে নগরীর বাইরে ছড়িয়ে থাকা প্রাকৃতিক দর্শনীয় স্থানগুলোই সবচেয়ে বেশি পর্যটকের মনোযোগ কাড়ছে।
সাদাপাথর (ভোলাগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ): সিলেট শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সাদাপাথরে চোখে পড়ে দিগন্তজোড়া সাদা পাথরের মেলা, স্বচ্ছ নীল জল, আর পাহাড়ের কোলে ঝরনার ধারা। ধলাই নদীর জলে মিশে প্রকৃতি এখানে যেন তার রঙের খেলায় ব্যস্ত।
রাতারগুল: দেশের একমাত্র স্বীকৃত জলাবন রাতারগুল বর্ষায় ২০ থেকে ৩০ ফুট পানিতে ডুবে থাকে। ৭৩ প্রজাতির গাছগাছালিতে ঘেরা এ বনাঞ্চলে নৌকাভ্রমণ পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ।
জাফলং: মেঘালয়ের পাদদেশে পিয়াইন নদীর তীরে অবস্থিত জাফলং পর্যটকদের কাছে বছরের পর বছর ধরে প্রিয় গন্তব্য। পাথরের স্তূপ, ঝরনা ও খাসিয়া সংস্কৃতির পাশাপাশি শ্রীপুর চা-বাগান ও ইকোপার্কের সৌন্দর্য জাফলং সফরকে স্মরণীয় করে তোলে।
রাংপানি (গোয়াইনঘাট): সাদা পাথর ও পাহাড়ি ঝরনার মিলনস্থল রাংপানির পাশে খাসিয়াদের ঐতিহ্যবাহী গ্রাম মোকামপুঞ্জি অবস্থিত। সিলেট শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৫৪ কিলোমিটার।
উৎমাছড়া (কোম্পানীগঞ্জ): ঝরনার স্বচ্ছ জলের ধারা, সবুজ পাহাড় এবং বিশাল পাথরের বিছানায় ঘেরা উৎমাছড়ায় ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়তে শুরু করেছে।
লালাখাল (কানাইঘাট): নীলজলের লালাখাল ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের অন্যতম গন্তব্য। আঁকাবাঁকা নদীপথ, পাশের পাহাড়ি বন ও চা-বাগান লালাখালকে করেছে ছবির মতো সুন্দর।
লোভাছড়া (কানাইঘাট): ঐতিহাসিক লোভাছড়া চা-বাগান ও তার আশপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঝুলন্ত সেতু, ঝরনা, খাসিয়া গ্রাম এবং ব্রিটিশ আমলের স্থাপনাগুলো একসঙ্গে দেখতে পাওয়া যায় এখানে। সুরমা ও লোভা নদীর মিলনস্থলও এ অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণ।
পর্যটন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে এসব এলাকায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন সহায়তাও নিশ্চিত করা হয়েছে।
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় পারিবারিক কলহের জেরে এ্যামি বেগম নামে এক গৃহবধূকে গলাকেটে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে।
শনিবার (৭ জুন) সকালে উপজেলার কুচলিবাড়ি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত স্বামী হাসিবুল পলাতক রয়েছেন।
নিহত এ্যামি বেগম একই ইউনিয়নের ইসরাক হোসেনের মেয়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক কলহ চলছিল। এর জেরে শনিবার ঈদের দিন সকালে হাসিবুল ধারালো অস্ত্র দিয়ে স্ত্রী এ্যামি বেগমের গলাকেটে হত্যা করে পালিয়ে যায়। পরে পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি জানতে পেরে পাটগ্রাম থানা পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে এবং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে।
পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক কলহের কারণেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত হাসিবুলকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুজনকে আটক করা হয়েছে।
বিচার, সংস্কার, জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র এবং ভোটের সমতল মাঠ তৈরি হলে রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্বাচন সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামের আমীর ডা. শফিকুর রহমান।
শনিবার (৭ জানুয়ারি) সকালে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নে নিজ গ্রাম তুলাপুর পাঁচগাঁও ঈদগাহে নামাজ আদায় শেষে তিনি এসব বলেন।
তিনি বলেন, ‘জাতি যেনতেন নির্বাচন চায় না। বিচার, সংস্কার, জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র এবং ভোটের সমতল মাঠ তৈরি হলে রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্বাচন সম্ভব হবে। পরপর তিনবার মানুষ ভোট দেওয়ার কোনো সুযোগ পাননি। এবার নতুন ভোটার যুব সমাজকে ভোটের সুযোগ করে দিতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা কোনো সহযোগিতা চাইলে তারা সহযোগিতা করবেন বলেও জানান জামায়াতের এই নেতা। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দেশের সংকট দূর করা খুবই জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
এর আগে, ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘ঈদুল আজহা ত্যাগ, কুরবানি ও আল্লাহর সন্তুষ্টির পরীক্ষা। এই মহিমান্বিত দিনে আমাদের প্রতিজ্ঞা হোক অন্যায়, জুলুম-নিপীড়ন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। দেশের চলমান সংকট উত্তরণে জাতিকে সত্য, ন্যায় ও ইসলামি আদর্শের পথে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
নামাজ শেষে এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা ও কুশল বিনিময় করেন তিনি।
তার সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন সিলেট মহানগরীর আমীর ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মো. ফখরুল ইসলাম, মৌলভীবাজার পৌর আমীর হাফেজ তাজুল ইসলাম, ছাত্রশিবির জেলা সভাপতি মো. নিজাম উদ্দিন, ভাটেরা ইউনিয়ন সভাপতি মাওলানা আব্দুল করিম ও ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুল লতিফ প্রমুখ।
আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের শুরুতে অনুষ্ঠিত হবে বলে জাতীর উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ঘোষণা গোটা জাতিকে হতাশ করেছে বলে অভিহিত করে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করেছে বিএনপি।
শনিবার (৭ জুন) সকালে দেওয়া এক বিবৃতিতে এমন মন্তব্য করেছে দলটি।
বিবৃতিতে বিএনপি জানায়, ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ছাত্রসমাজ ও জনতার বিপুল ত্যাগের মধ্য দিয়ে জনগণের বিজয় অর্জিত হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন আয়োজনের অযৌক্তিক বিলম্ব জনগণকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে।’
এ সময় রমজান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষা এবং আবহাওয়া পরিস্থিতি ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করে বিএনপি।
এর আগে, শুক্রবার (৬ জুন) রাতে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জরুরি ভার্চুয়াল বৈঠকে বসে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম। বৈঠকের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে শনিবার ভোরে বিবৃতিটি দেওয়া হয়।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের বিষয়বস্তু বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করা হয়। সেখানে এই ঘোষণা দীর্ঘ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করেছে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রায় দেড় দশক ধরে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত এ দেশের জনগণ। বারবার গুম, হত্যা, কারাবরণ, হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েও তারা ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।’
ঐকমত্য গঠনের কথা বললেও অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নিজেদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।
তারা বলেন, ‘এ কারণে বৈঠকে মনে করে এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে কি না; তা নিয়ে জনগণ উদ্বিগ্ন হওয়াই স্বাভাবিক।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভাষ্যে, এপ্রিলের শুরুতে নির্বাচন দিলে তা আবহাওয়াজনিত জটিলতা ও রমজান মাসে প্রচার-প্রচারণা ও নির্বাচন-সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে, যা পরবর্তীতে নির্বাচনের সময়সূচি পেছানোর অজুহাত হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
তারা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব নয়— এমন কোনো সুস্পষ্ট যুক্তি উপস্থাপন করা হয়নি।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আরও বলা হয়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাণী দেওয়ার কথা থাকলেও প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য এক পর্যায়ে জাতির উদ্দেশ্য ভাষণে রূপ নেয়।
দীর্ঘ ওই ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস নিজেই স্বীকার করেছেন বন্দর ও করিডর ইস্য অন্তবর্তী সরকারের তিনটি নির্দিষ্ট দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।
এ ছাড়াও ওই ভাষণে ব্যবহৃত কিছু শব্দ রাজনৈতিক সৌজন্যের সীমা অতিক্রম করেছে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপির নেতারা।
মন্তব্য