করোনাভাইরাস সংক্রমণে নাকাল ভারতে অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে ব্যাপক সমালোচিত হওয়ার পর তা প্রত্যাহার করেছেন ভারতের আলোচিত যোগগুরু বাবা রামদেব।
ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (আইএমএ) তীব্র প্রতিবাদ ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধনের চিঠির পর রোববার রামদেব মন্তব্যটি প্রত্যাহার করেন, যা তিনি জানান টুইট করে।
বাবা রামদেব আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানকে হেয় করে বলেন, করোনাকালে ভারতে চিকিৎসা না পেয়ে কিংবা অক্সিজেনের অভাবে যত মানুষের মৃত্যু হয়নি, তার চেয়ে বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন শুধু অ্যালোপ্যাথি ওষুধের কারণে।
টুইটে রামদেব লেখেন, ‘ড. হর্ষবর্ধন, আপনার চিঠি পেয়েছি। এই অবস্থায় এবং বিভিন্ন পদ্ধতির চিকিৎসার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এই পুরো বিতর্ক শেষ করতে আমি আমার মন্তব্যটি প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।’
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, টুইটের মাত্র আট মিনিট পরই রামদেব এক ব্যবহারকারীর পোস্টে রিটুইট করেন, ‘যোগব্যায়াম ও আয়ুর্বেদ আপনাকে একটা পুরো স্বাস্ব্যব্যবস্থা দিতে পারে। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান আপনাকে শুধু লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে পারে, যেখানে যোগ ও আয়ুর্বেদ আপনাকে একটি পদ্ধতিগত চিকিৎসা দিতে পারে।’
বাবা রামদেবের বিতর্কিত মন্তব্যের পর তাকে হিন্দিতে লেখা দুই পৃষ্ঠার একটি চিঠি দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা নিয়ে আপনার মন্তব্যে দেশের মানুষ খুব আহত হয়েছেন। আমি এরই মধ্যে আপনাকে ফোনে সেই অনুভূতি সম্পর্কে বলেছি। আমাদের দেশে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা এই সময় মানুষের কাছে অনেকটা ভগবানের সমান। তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যেভাবে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ছেন তা অসামান্য।
‘আপনি শুধু করোনাযোদ্ধাদের অপমানই করেননি, পাশাপাশি দেশের মানুষের অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছেন। আপনি গতকাল বিষয়টি নিয়ে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা অস্পষ্ট। আমি আশা করছি আপনি বিষয়টি নিয়ে আরও গভীরভাবে ভেবে আপনার পুরো বক্তব্য প্রত্যাহার করে বিবৃতি দেবেন।’
রামদেবের মন্তব্যে সবচেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে আইএমএ। দেশটির চিকিৎসকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন থেকে রামদেবের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানানো হয়।
সেই সঙ্গে যোগগুরু ও ভারতে আয়ুর্বেদ পণ্যের অন্যতম বড় ব্যবসায়ী রামদেবকে লিখিত ক্ষমা চাইতে বলে আইএমএ।
সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, করোনায় যখন দেশে প্রতিদিন প্রায় চার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে, তখন অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসার সুনাম ক্ষুণ্নই শুধু নয়, আধুনিক বিজ্ঞানকে অবজ্ঞা করে অপমানও করা হচ্ছে।
ভারতে যোগসাধনা ও ওষুধের বিকল্প প্রাকৃতিক পণ্যের প্রচারকারী রামদেবের কোটি কোটি অনুসারী রয়েছে। ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে।
গেরুয়া রঙের পোশাকে আয়ুর্বেদিক পণ্যের প্রচার চালানো ৫৫ বছর বয়সী রামদেবের প্রতিষ্ঠান পতঞ্জলি গ্রুপের পক্ষ থেকে অবশ্য রামদেবের বক্তব্যকে বিকৃত করার দাবি করা হয়েছে।
গ্রুপের দাবি, ‘ভিডিওটি এডিট করা এবং তার বক্তব্যের ছোট্ট একটি অংশ আলাদা করে প্রচার করা উদ্দেশ্যমূলক।’
অন্যদিকে সর্বভারতীয় চিকিৎসক সমিতি এফএআইএমএ রামদেবের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে। নোটিশে বলা হয়, ‘সস্তা খ্যাতি কুড়ানোর লক্ষ্যে ভিত্তিহীন অপপ্রচার চালাচ্ছেন রামদেব।’
এর আগে মহামারি রোগ আইনে রামদেবের বিচার করতে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন জানায় আইএমএ।
সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘রামদেবের বিজ্ঞাননির্ভর ওষুধকে খাটো করে দেখানো এবং মূর্খের মতো কথাবার্তা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।’
গত বছর মহামারির শুরুতেও বিতর্ক উসকে দিয়েছিলেন রামদেব। সে সময় ‘করোনাভাইরাসের প্রথম প্রমাণসাপেক্ষ ওষুধ’ উদ্ভাবনের দাবি করেছিলেন তিনি।
নিজেদের প্রতিষ্ঠানে উদ্ভাবিত করোনিল নামের ওষুধে খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) অনুমোদন আছে বলে দাবি করেছিলেন রামদেব। বিষয়টি নিয়ে ভারতজুড়ে তোলপাড় শুরু হওয়ায় রীতিমতো বিবৃতি দিয়ে ডব্লিউএইচও জানাতে বাধ্য হয় যে, করোনাভাইরাসের কোনো ভেষজ ওষুধ কার্যকর নয়। এ রকম ওষুধ প্রতিষ্ঠানটি অনুমোদন দেয়নি।
ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজার ২০০ জনের বেশি চিকিৎসক। মোট প্রাণহানি তিন লাখ ছাড়িয়েছে।
আরও পড়ুন:Till now it was still tolerable but this video by Ramdev has crossed all limits. I am not against Ayurveda but this fraud man is making serious allegations now!Considering the following this bigot has,he is nothing less than a pandemic now ! He should be taught his limits ASAP ! pic.twitter.com/d0twVO4ZNc
— Tushar Mehta (@dr_tushar_mehta) May 21, 2021
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য