প্রিন্সেস ডায়ানার সাক্ষাৎকার নেয়ার মধ্য দিয়ে তার ক্ষতি করার উদ্দেশ্য ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন বিবিসির আলোচিত সাবেক সাংবাদিক মার্টিন বশির।
দ্য সানডে টাইমস পত্রিকার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন বলে রোববার জানিয়েছে বিবিসি।
১৯৯৫ সালে প্রিন্সেস ডায়ানার সাক্ষাৎকার নিতে বিবিসির তৎকালীন সাংবাদিক বশির প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে বৃহস্পতিবার এক তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে।
যুক্তরাজ্যের শক্তিশালী সংবাদমাধ্যমটিকে নিয়ে এরপরই শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। একপর্যায়ে শনিবার পদত্যাগে বাধ্য হন বিবিসির সে সময়কার ডিরেক্টর অফ নিউজ লর্ড হল।
ডায়ানার সাক্ষাৎকার ঘিরে চলমান আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে বশিরের সাক্ষাৎকার নেয় সানডে টাইমস।
তিনি সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, যা হয়েছে তার জন্য প্রয়াত ডায়ানার দুই ছেলের কাছে ‘গভীরভাবে দুঃখিত’ তিনি।
ডায়ানার মানসিক অস্থিরতা বাড়াতে বশির ভূমিকা রেখেছেন বলে প্রিন্সেসের বড় ছেলে প্রিন্স উইলিয়াম অভিযোগ করেছেন। তবে বশির সেটি খারিজ করেছেন।
বশির বলেন, ডায়ানার সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো ছিল।
সানডে টাইমসকে বশির বলেন, ১৯৯০ সালের শুরুর দিকেও ব্রিটিশ রাজপরিবার ঘিরে অনেক কানাঘুষা ছিল। সে সময় গোপনে ফোন রেকর্ডও হয়। কিন্তু এসবের কোনো কিছুরই সোর্স ছিলেন না তিনি।
বশির বলেন, সাক্ষাৎকারের বিষয়বস্তু নিয়ে ডায়ানা কখনোই অসন্তুষ্ট ছিলেন না। সাক্ষাৎকার সম্প্রচার শেষেও তাদের বন্ধুত্ব অটুট ছিল।
তিনি বলেন, ‘ডায়ানা যেভাবে চেয়েছিলেন, সেভাবেই সাক্ষাৎকারটি সাজানো হয়। রাজপরিবারকে কবে নাগাদ সতর্ক করা জরুরি, কবে ওই সাক্ষাৎকার সম্প্রচার হবে, সাক্ষাৎকারের বিষয়বস্তু কী হবে, সবই তার ইচ্ছা অনুযায়ীই হয়।’
ডায়ানার ভাই আর্ল স্পেনসারকে ভুয়া ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখানোর বিষয়ে বিবিসির সাবেক এ সাংবাদিক বলেন, ‘অবশ্যই আমি এ জন্য অনুতপ্ত। এটি ঠিক হয়নি।
‘তবে এর সঙ্গে ডায়ানা সাক্ষাৎকারে যা বলেছেন, তার কোনো যোগসূত্র নেই।’
১৯৯৫ সালে মার্টিন বশিরের মুখোমুখি হন প্রিন্সেস ডায়ানা। ছবি: এএফপি
এদিকে বশিরের সাক্ষাৎকার নেয়ার পর নিজের মতামত জানান সানডে টাইমসের সাংবাদিক রোজামুন্ড উরউইন।
বিবিসি রেডিও ৫ লাইভে তিনি বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে একজন মানুষের যতটা অনুতপ্ত হওয়া উচিত ছিল, বশিরকে দেখে আমার তা মনে হয়নি। অপরাধ স্বীকারের পরিবর্তে কেউ যখন নিজের সাফাই গাইতে অজুহাত খোঁজেন, তখন আমার কাছে বিষয়টি সমস্যাজনক মনে হয়।’
ডায়ানার সাক্ষাৎকার নিয়ে বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারক লর্ড ডাইসন তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।
এতে বলা হয়, ১৯৯৫ সালে প্রিন্সেস ডায়ানার সাক্ষাৎকার নিতে প্রযোজনা নীতিমালা ‘ভয়াবহ লঙ্ঘন’ করেন বিবিসির সাংবাদিক মার্টিন বশির। ওই সময় ‘প্রতারণামূলক আচরণের’ পাশাপাশি ভুয়া ব্যাংক স্টেটমেন্টও ব্যবহার করেন তিনি।
ঘটনাটির সময় বিবিসির ডিরেক্টর অফ নিউজ ছিলেন লর্ড হল।
২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে ন্যাশনাল গ্যালারির ট্রাস্টি ছিলেন লর্ড হল। পরে গত বছরের জুলাই মাসে বোর্ডের চেয়ারম্যান হন তিনি।
ডায়ানার সাক্ষাৎকার নিয়ে বিচারক ডাইসনের তদন্ত প্রতিবেদনের পর বিবিসির কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করা যুক্তরাজ্যের হাউস অফ কমন্সের ডিজিটাল কালচার, মিডিয়া ও স্পোর্ট সিলেক্ট কমিটির চেয়ারম্যান জুলিয়ান নাইটের প্রশ্ন ছিল, ২০১৬ সালে বিবিসিতে বশিরকে ফের নিয়োগ দেয়া হয়েছিল কেন।
সে সময় বিবিসির মহাপরিচালক ছিলেন লর্ড হল।
১৯৯৫ সালে বিবিসির এক অনুষ্ঠানে সাক্ষাৎকারে হাজির হন ডায়ানা। সাক্ষাৎকারটি নেন মার্টিন বশির। তবে সাক্ষাৎকারটি নেয়ার ক্ষেত্রে সততা ও স্বচ্ছতার বিষয়ে বিবিসির যে মানদণ্ড রয়েছে, তা মানা হয়নি।
বিবিসির মহাপরিচালক টিম ড্যাভি বলেন, ডায়ানার ওই সাক্ষাৎকার ঘিরে লর্ড ডাইসনের তদন্তে যেসব তথ্য উঠে এসেছে, তা পুরোপুরি মেনে নিচ্ছে বিবিসি।
গত বছরের নভেম্বরে ডায়ানার বহুল আলোচিত ওই সাক্ষাৎকার নিয়ে তদন্ত করতে ব্রিটেনের অবসরপ্রাপ্ত সর্বজ্যেষ্ঠ বিচারক ও সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারক লর্ড ডাইসনকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিবিসি।
বৃহস্পতিবার বিবিসির মহাপরিচালক ড্যাভি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘লর্ড ডাইসনকে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই। ১৯৯৫ সালের সাক্ষাৎকার ঘিরে তার তদন্ত প্রতিবেদন পূর্ণাঙ্গ ও বিস্তারিত। বিবিসি তার প্রতিবেদনের পুরোটাই গ্রহণ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রিন্সেস অফ ওয়েলস ডায়ানা বিবিসিকে সাক্ষাৎকার দেয়ার বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন। তবে এটি পরিষ্কার, সাক্ষাৎকারটি নিতে যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া হয়েছে, তা বিবিসির মানদণ্ড অনুযায়ী ছিল না। এ জন্য আমি ক্ষমা চাইছি। লর্ড ডাইসন আমাদের ব্যর্থতাগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পেরেছেন।’
বিবৃতিতে ড্যাভি আরও বলেন, ‘সাক্ষাৎকার গ্রহণে বিবিসির পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া এখন অনেক উন্নত। ডায়ানার সাক্ষাৎকারটি নিতে যে প্রক্রিয়া ওই সময় অবলম্বন করা হয়েছিল, তা পরিহার করা যেত।
‘সাক্ষাৎকারটি নেয়ার সময় কী কী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তা জানার চেষ্টা করা উচিত ছিল বিবিসির।’
তিনি বলেন, ‘বিবিসির পক্ষে ২৫ বছর আগের সময়ে ফিরে যাওয়া সম্ভব না। পুরো ঘটনার জন্য আমরা এখন নিঃশর্ত ক্ষমা চাইছি।’
ডায়ানার সাক্ষাৎকার সাংবাদিক বশিরকে রীতিমতো জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে দেয়।
ওই সাক্ষাৎকার নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক দিন আগে শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে বিবিসি থেকে পদত্যাগ করেন বশির।
আরও পড়ুন:শেরপুরের নকলায় বসতবাড়ির সীমানা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এক নারীর লাঠির আঘাতে প্রতিবেশি মোরাদ হোসেন নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পর ওই নারী ও তার মেয়েকে আটক করেছে পুলিশ।
শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে উপজেলার টালকী ইউনিয়নের পূর্বটালকী গ্রামে ঘটনাটি ঘটে।
নিহত ৫৫ বছর বয়সী মোরাদ হোসেন নকলার পূর্বটালকী গ্রামের মৃত রহিম মাস্টারের ছেলে। চাকরির সুবাদে রাজধানী ঢাকায় বসবাস করতেন তিনি।
নকলা থানার ওসি মো. আব্দুল কাদের মিয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয়দের বরাতে পুলিশ জানায়, নকলার মোরাদ হোসেন দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর কল্যাণপুরে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে চাকরি করতেন। অনেকদিন থেকে তার প্রতিবেশি চাচাতো ভাই জালাল উদ্দিনের সঙ্গে বসতবাড়ির সীমানা নির্ধার্ণ নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। শুক্রবার সকালে ছুটিতে ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন মোরাদ। বাড়িতে প্রবেশ করার পর তার প্রতিবেশি চাচাত ভাইয়ের বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে উত্তেজিত ওই নারী লাঠি দিয়ে মোরাদের মাথার পেছনে আঘাত করেন। এতে আহত হয়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা মোরাদকে নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষনা করেন।
ঘটনার পর জালাল উদ্দিনের স্ত্রী ও মেয়েকে আটক করে পুলিশ।
নকলা থানার ওসি মো. আব্দুল কাদের মিয়া বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই নারীকে আটক করা হয়েছে। মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।’
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় হত্যা মামলার আসামি মোহন আলীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
বৃহস্পতিবার রাত ১০ টার দিকে উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী চকমহাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মোহন ওই গ্রামের মোজাম্মেল হকের ছেলে।
বাগাতিপাড়া মডেল থানার ওসি নান্নু খান জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মোহন তার ব্যাটারিচালিত ভ্যানটি মেরামতের জন্য পার্শ্ববর্তী বাঘা উপজেলার খাগড়বাড়িয়া বাজারে যান। ফেরার পথে রাত ১০টার দিকে বাগাতিপাড়ার চকমহাপুর এলাকায় পৌঁছালে তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করে দুর্বৃত্তরা। পরে স্থানীয়রা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় ওই রাতেই তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হলে ঢাকা নেয়ার পথে ভোর ৫টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
ওসি আরও জানান, ২০২১ সালে ১১ জুলাই বাগাতিপাড়ার সীমান্তবর্তী রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের হরিপুরে অনার্সপড়ুয়া ছাত্র জাকির হোসেন ছুরিকাঘাতে হত্যার শিকার হন। মোহন আলী ওই হত্যা মামলার আসামি ছিলেন।
নিহতের মা হনুফা বেগম জানান, হত্যা মামলায় আসামি হওয়ায় তার ছেলে মোহন কারাগারে ছিল। প্রায় চার মাস আগে জামিনে মুক্ত হয়ে সে বাড়ি ফেরে। বাড়িতে আসার পর থেকেই মোহনকে হুমকি-ধামকি দিচ্ছিলেন জাকিরের স্বজনরা।
পূর্বপরিকল্পিতভাবে জাকিরের স্বজনরা মোহনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে দাবি করেন হনুফা বেগম। তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে এ ঘটনায় নিহত মোহনের মামা আয়নাল আলী বাদী হয়ে বাগাতিপাড়া মডেল থানায় শুক্রবার সকালে একটি হত্যা মামলা করেছেন। ওই মামলায় চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো মামলাই রাজনৈতিক নয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অগ্নিসংযোগ, গ্রেনেড হামলা, আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালান ও দুর্নীতির মতো সুনির্দিষ্ট ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্তরাই এ সংক্রান্ত মামলার আসামি হয়েছেন।
তিনি বলেন,“আজকে তারা (বিএনপি) সব জায়গায় কান্নাকাটি বলছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা। তাদের জিজ্ঞেস করতে হবে মামলাগুলো কীসের মামলা? অগ্নিসন্ত্রাস, অস্ত্রপাচার, গ্রেনেড হামলাসহ বিভিন্ন অপরাধের মামলা। তারা অপরাধ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সেটাই তো বাস্তবতা।”
এসব মামলাগুলো দ্রুত শেষ করে এগুলোর শাস্তি দিয়ে দেয়া উচিত বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা শুক্রবার সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ কৃষক লীগের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে দেয়া ভাষণে এসব কথা বলেন। খবর বাসসের
২০১৩ ও ১৪ সালে নির্বাচন বানচালের জন্য এবং পরবর্তীতে বিএনপি-জামায়াতের আগুন সন্ত্রাস ও সহিংসতার প্রসংগ টেনে তিনি বলেন, তারা ৩ হাজার ৮০০ গাড়ি পুড়িয়েছে, বাস, লঞ্চ ও রেল পুড়িয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে না তো কি হবে।
তিনি বলেন, ওদের বিরুদ্ধে কোনো মামলাইতো পলিটিক্যাল মামলা না, প্রত্যেকটা মামলা হচ্ছে অগ্নিসন্ত্রাসের মামলা। তারা মানুষ হত্যা করেছে আগুন দিয়ে। নির্বাচন ঠেকাতে যেয়ে তারা রেলে আগুন দিয়ে মা-শিশুকে পুড়িয়ে মেরেছে, যারা এগুলো করলো তাদের বিরুদ্ধে কি মামলা হবে না?
“যারা এগুলো করলো তাদের বিরুদ্ধে কি মামলা হবে না? তাদেরকে কি মানুষ পূজা করবে,” সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।
বিএনপির নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কান্নাকাটি করে তারা সব জায়গায় বলছে এত লাখ লোক তাদের গ্রেপ্তার। সারা দেশে যত জেলখানা আছে সেগুলোর একটা ধারণ ক্ষমতা রয়েছে, তারা যত লক্ষ গ্রেপ্তার হয়েছে বলছে জেলখানাগুলোর তত ধারণ ক্ষমতা নেই।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “তারা (বিএনপি) যেভাবে বলছে তাদের ৬০ লাখ লোক গ্রেপ্তার হয়েছ, ৬০ লাখ লোক ধারণ করার ক্ষমতাও নাই এসব জেলে। তারপরও যতটুকু ধারণ ক্ষমতা আছে সবই বিএনপির লোক এটাই তো তারা বলতে চাচ্ছে। তার মানে বাংলাদেশে যত অপরাধ সব অপরাধ করে বিএনপি।”
শেখ হাসিনা বলেন, তাদের ভাগ্য ভালো আমরা ক্ষমতায় আছি, আমরা তাদের মতো প্রতিশোধপরায়ণ না, তাই তারা এখনো কথা বলার সুযোগ পায়। তারা সারাদিন কথা বলে মাইক লাগিয়ে, তারপর বলবে কথা বলার সুযোগ পায় না।
বিরোধী দলে থাকার সময়কার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ অফিসেতো আমরা ঢুকতেই পারতাম না। কীভাবে তারা অত্যাচার করেছে আমাদের ওপর, আমরা তো তার কিছুই করি নাই। আমরা প্রতিশোধ নিতে ব্যস্ত থাকিনি। আমরা আমাদের সব শক্তি-মেধা কাজে লাগিয়েছি দেশের উন্নয়নে, দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাংক অনুসরণ করে সমবায় ভিত্তিক কৃষি নিশ্চিত করে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি দেশের প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে সার্বিক উৎপাদন বাড়ানোর জন্য তার আহবান পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমবায় ভিত্তিক কৃষি চালু করে জমির আইল দূর করে বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি রক্ষা করা যেতে পারে। কৃষিতে গবেষণার পাশাপাশি কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “কৃষি গবেষণায় বাংলাদেশ সবচেয়ে সফল। আমাদের সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের উদ্যোগে কৃষিখাতের উন্নয়ন এবং খাদ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থানার পদক্ষেপ সমূহের চুম্বকাংশ তুলে ধরে বলেন, “বাংলাদেশের কৃষি উন্নত হয়েছে, কারণ সরকার কৃষিখাতের গবেষণাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার কৃষি খাতে ২৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন সময়োপযোগী ও কার্যকর পদক্ষেপের ফলে দেশের খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে।
তিনি বলেন, “একসময় যারা নুন-ভাত বা ডাল-ভাতের কথা ভাবতেন, তারা এখন মাছ-মাংস-ডিমের কথা ভাবেন। তাই যারা সরকারের সমালোচনা করেন, তাদের বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত যে, বাংলাদেশ উন্নত হয়েছে কি না।”
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলের কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানান সংগঠনের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকার বিটু।
মধ্যসত্ত্বভোগীরা যেন সুবিধা নিতে না পারে, সিন্ডিকেট করে কৃষকদের যেন বিপদে ফেলতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুস শহীদ।
শুক্রবার সকালে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার দেখার হাওরে বোরো ধান কাটা উৎসবে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, মধ্যস্বত্বভোগীরা যেন সুবিধা নিতে না পারে, সিন্ডিকেট করে কৃষকদের যেন বিপদে ফেলতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা সজাগ থাকলে কৃষকরা বঞ্চিত হবেন না।
মন্ত্রী বলেন, কৃষকের উৎপাদিত ফসলের সঠিক মূল্য দিতে চায় সরকার। সরকারের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সুনামগঞ্জ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। এখানে বন্যা দুর্যোগ বেশি হয়। খড়াও হয়। জেলা প্রশাসনকে বলেছি, কৃষকদের ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিতে।
তিনি বলেন, কৃষিকে সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ। কৃষকের ধানের মূল্য নির্ধারণ করতে আগামী পরশু মিটিং করব। দাম নির্ধারণ করে সরকারের কাছে প্রস্তাবনা পাঠাব।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, সুনামগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য ড. মোহাম্মদ সাদিক, ১ আসনের সংসদ সদস্য রনজিত চন্দ্র সরকার, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী।
তীব্র তাপদাহ চলমান থাকা চুয়াডাঙ্গায় শুক্রবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
টানা তিন দিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে সীমান্তবর্তী জেলাটিতে।
অতি তাপে অতিষ্ঠ চুয়াডাঙ্গার লোকজন। জেলার হাসপাতালে বাড়ছে গরমজনিত রোগীর সংখ্যা।
প্রচণ্ড গরমে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। প্রয়োজনের তাগিদে ঘর থেকে বেরিয়েও কাজ করতে পারছেন না তারা।
দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ড এলাকার ভ্যানচালক ইকবাল হোসেন বলেন, ‘গত কয়েক দিন থেকি যে তাপ পড়চি মনে হচ্চি যেনে সূর্য মাতার ওপর চলি এসিচে। আজ যেনে সব থেকি বেশি তাপ পড়চি। গা দিয়ি তরতর করি ঘাম ঝরচি।’
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, সরকারি ছুটির দিন শুক্রবার বিকেল তিনটায় জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘আরও কয়েক দিন এমন দাবদাহ অব্যাহত থাকতে পারে, তবে এখনই এই এলাকায় বৃষ্টির কোনো সম্ভবনা নেই।’
হিট অ্যালার্ট
তীব্র দাবদাহে জনসাধারণকে সচেতন করতে হিট এলার্ট জারি করেছে জেলা প্রশাসন। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় মাইকিং করে পথচারী ও এলাকাবাসীকে সতর্ক করা হচ্ছে।
সতর্কতার অংশ হিসেবে খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হতে নিষেধ করা হচ্ছে। শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে অনুরোধ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের প্রথম পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিবনারায়ণ দাশ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
বার্তা সংস্থা ইউএনবির প্রতিবেদনে জানানো হয়, ঢাকার একটি হাসপাতালে শুক্রবার সকালে শিবনারায়ণের মৃত্যু হয়, যার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।
শিবনারায়ণ দাশের ছেলে অর্ণব আদিত্য দাশ মোবাইল ফোনে ইউএনবিকে বলেন, ‘রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) শুক্রবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে বাবা চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।’
কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করা শিবনারায়ণ দাশের বাবা সতীশচন্দ্র দাশ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনারা তাকে ধরে নিয়ে হত্যা করে।
শিবনারায়ণ দাশের স্ত্রী গীতশ্রী চৌধুরী ও তাদের সন্তান অর্ণব আদিত্য দাশ।
ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের হাত ধরে রাজনীতিতে আসেন শিবনারায়ণ দাশ। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন অংশগ্রহণ করে কারাবরণ করেন তিনি।
ঢাকার পল্টন ময়দানে ১৯৭০ সালের ৭ জুন অনুষ্ঠিত ছাত্রদের এক সামরিক কুচকাওয়াজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অংশগ্রহণের কথা ছিল। এমন প্রেক্ষাপটে ছাত্রদের নিয়ে একটি জয়বাংলা বাহিনী, মতান্তরে ‘ফেব্রুয়ারি ১৫ বাহিনী’ গঠন করা হয়। ছাত্রনেতারা এ বাহিনীর একটি পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়।
এ লক্ষ্যে ১৯৭০ সালের ৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের (তৎকালীন ইকবাল হল) ১০৮ নম্বর কক্ষে ছাত্রলীগ নেতা আ স ম আবদুর রব, শাহজাহান সিরাজ, কাজী আরেফ আহমদ, মার্শাল মনিরুল ইসলাম পতাকার পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠকে বসেন।
এ বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা স্বপন কুমার চৌধুরী, জগন্নাথ কলেজের ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম, কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা শিবনারায়ণ দাশ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাসানুল হক ইনু ও ছাত্রনেতা ইউসুফ সালাউদ্দিন।
সভায় কাজী আরেফের প্রাথমিক প্রস্তাবের ওপর ভিত্তি করে সবার আলোচনার শেষে সবুজ জমিনের ওপর লাল সূর্যের মাঝে হলুদ রঙের বাংলার মানচিত্র খচিত পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়।
কামরুল আলম খান (খসরু) তখন ঢাকা নিউ মার্কেটের এক বিহারির দর্জির দোকান থেকে বড় এক টুকরো সবুজ কাপড়ের মাঝে লাল একটি বৃত্ত সেলাই করে নিয়ে আসেন। এরপর প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কায়েদে আজম হলের (বর্তমানে তিতুমীর হল) ৩১২ নম্বর কক্ষের এনামুল হকের কাছ থেকে অ্যাটলাস নিয়ে ট্রেসিং পেপারে আঁকা হয় পূর্ব পাকিস্তানের মানচিত্র।
শিবনারায়ণ দাশ পরিশেষে তার নিপুণ হাতে মানচিত্রটি আঁকেন লাল বৃত্তের মাঝে। এমনি করে রচিত হয় ফেব্রুয়ারি ১৫ বাহিনীর পতাকা, যা কিছুদিন পর স্বীকৃত হয় বাংলাদেশের প্রথম পতাকা হিসেবে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ধরা আগুন প্রায় এক ঘণ্টা পর নিভিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
বাহিনীর মিডিয়া সেল জানায়, শুক্রবার বেলা দুইটা ৩৯ মিনিটে আগুন নেভানো হয়।
এর আগে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষের কর্মকর্তা লিমা খানম নিউজবাংলাকে জানান, বেলা একটা ৪৭ মিনিটে হাসপাতালের শিশু হৃদরোগ কেন্দ্রে আগুন ধরার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাহিনীর পাঁচটি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ করে।
আগুনে হতাহতের কোনো কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে জানান এ কর্মকর্তা।
তিনি আরও জানান, আগুন ধরার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয় তদন্তের পর বলা যাবে।
এদিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বার্তায় জানায়, আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয় নৌবাহিনী।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য