যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোতে একটি জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গুলিতে ছয়জন নিহত হয়েছেন। তাদের হত্যার পর বন্দুকধারী নিজেই নিজেকে গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কলোরাডোর স্প্রিং পুলিশ রোববার রাতে জরুরি কল পাওয়ার পর একটি বাড়ি থেকে ছয়জনের মরদেহ উদ্ধার করে। এ ছাড়া সেখানে একজন পুরুষ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে ছিলেন।
তাকে উদ্ধার করে পুলিশ স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেয়ার পর তিনিও মারা যান।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ বলছে, একটি পরিবার তাদের হোম পার্কের বাড়িতে জন্মদিনের অনুষ্ঠান করার সময় বন্দুকধারী ওই হামলা চালিয়েছে।
এক বিবৃতিতে পুলিশ জানায়, সন্দেহভাজন বন্দুকধারী ওই পরিবারের এক নারীর বয়ফ্রেন্ড। তিনি স্বাভাবিকভাবেই হেঁটে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে গুলি চালিয়ে তার গার্লফ্রেন্ডসহ ছয়জনকে হত্যা করেন। পরে নিজেও নিজের গুলিতে মারা যান।
‘আমরা এর কারণ অনুসন্ধানে কাজ করে যাচ্ছি।’
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলার ঘটনায় কোনো শিশু আহত হয়নি। পরিবারের অন্য সদস্যরা এখন শিশুদের দেখভাল করছেন। নিহত ব্যক্তিদের পরিচয় জনসমক্ষে প্রকাশ করেনি পুলিশ।
কলোরাডো স্প্রিং পুলিশের প্রধান ভিন্স নিস্কি বলেন, ‘বন্দুক হামলার ঘটনার তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হামলার যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা খুবই ভয়ংকর।
‘আমরা প্রত্যাশা করি, আমাদের কমিউনিটিতে এমন ঘটনা আর ঘটবে না।’
কলোরাডো স্প্রিংয়ের মেয়র জন সোথারস এমন সহিংসতাকে নির্বোধের কাজ উল্লেখ করে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
হোম পার্কের এক বাসিন্দা জানান, তারা মধ্যরাতে গুলির শব্দে ঘুম থেকে উঠেছেন। এত পরিমাণ গুলি হচ্ছিল যে, তিনি সেটাকে বজ্রপাত ভেবেছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রে এমন বন্দুক হামলা প্রায়ই ঘটতে দেখা গেছে। গত মাসে দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বন্দুক সহিংসতাকে মহামারি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এ বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘আন্তর্জাতিকভাবে বিব্রতকর’ বলেও বর্ণনা করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের গান ভায়োলেন্স আর্কাইভের তথ্যমতে, গত বছর দেশটিতে আত্মহত্যা ও বন্দুক হামলায় ৪৩ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে।
ফেনীর ফুলগাজীতে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ উঠেছে।
বিএনপির অভিযোগ, হামলায় ৩০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। এ ছাড়া আহতদের হাসাপাতলে নিয়ে যাওয়া হলে পুনরায় হামলা চালানো হয়। এতে আহতের ৩০ স্বজনও আহত হন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ফুলগাজী বাজারে হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ দলটির।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল জানান, ফুলগাজী উপজেলার দৌলতপুরে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে বন্যার্ত অসহায় মানুষের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ কর্মসূচি ছিল। সেখানে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেনের আশার কথা রয়েছে।
এ উপলক্ষে শুক্রবার সন্ধ্যায় ফুলগাজী উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা ফুলগাজীর মুন্সিরহাটে আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ওই সময় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়।
হামলায় উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ভিপি ফখরুল আলম স্বপন, সদস্য সচিব আবুল হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম রসুল গোলাপ, নরুল হুদ শাহিন, যুগ্ম আহ্বায়ক ফুলগাজী উপজেলা যুবদল আকবর হোসেন, ফুলগাজী উপজেলা যুবদল সদস্য মোহাম্মদ দিদার, শিমুল, রবিউল হক বাবু, ফুলগাজী সদর ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতি রতন মুত্তরসহ ৩০ জন নেতাকর্মী আহত হন।
আলাল উদ্দিন আলাল জানান, চিকিৎসা নিতে নেতাকর্মীরা উপজেলা হাসপাতালে যাওয়ার পর চিকিৎসাধীন নেতাকর্মীদের ওপর পুনরায় হামলা চালানো হয়। এতে নেতাকর্মীদের স্বজনসহ আরও প্রায় ৩০ জন আহত হন। ভাঙচুর করা হয় হাসপাতালের আসবাবপত্র।
ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ মজুমদার বলেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীরা সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি নিজাম কোম্পানীর ওপর হামলা চালিয়ে ৫ জনকে আহত করেন। পরে দুই পক্ষের মধ্যে সামান্য ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সামান্য হাতাহাতিও হয়েছে।’
ফুলগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘ঘটনা শুনে আমরা সেখানে গিয়েছি। কাউকে পাওয়া যায়নি।’
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার (এলএও) সার্ভেয়ার আতিকুর রহমানকে ২০ লাখ টাকাসহ ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, জব্দ করা ওই টাকা ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগদ টাকাসহ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি দল আতিকুরকে আটক করে।
এর আগে শুক্রবার সকাল ৯টায় ইউএস-বাংলার একটি ফ্লাইটে তিনি কক্সবাজার থেকে ঢাকায় পৌঁছান বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে সম্মিলিত কক্সবাজারের দুদুকের উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কক্সবাজারে দায়িত্বরত সার্ভেয়ার আতিককে নগদ ২০ লাখ টাকাসহ আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে এ পর্যন্ত ওই টাকার উৎস সম্পর্কে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।’
এ বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মামুনুর রশীদকে একাধিকবার কল করা হলেও ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
রাজধানীর শাহবাগে বাসার বারান্দা থেকে ছিটকে পড়ে গিয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে শাহবাগের পরীবাগে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, বাসার দ্বিতীয় তলা থেকে পাশে আম গাছ থেকে আম পাড়তে গিয়ে বারান্দা থেকে পড়ে যান ৫৫ বছর বয়সী আব্দুর রাজ্জাক।
তাকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান সহকর্মী ইমরান হোসেন। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন। তার পায়ে জুতা ছিল।
রাজ্জাকের সহকর্মী ইমরান হোসেন জানান, রাজ্জাক ডানকান ব্রাদার লিমিটেডের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি জামালপুর সদর।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, মরদেহ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি শাহবাগ থানায় জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন:টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে মহাসাগর, সাগর ও সামুদ্রিক সম্পদের সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করতে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) ১৪-এর সব লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
পর্তুগালের লিসবনে দ্বিতীয় জাতিসংঘ মহাসাগর সম্মেলনের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরার সময় তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘অবৈধ, অনবহিত এবং অনিয়ন্ত্রিতভাবে মাছ ধরা বন্ধ করতে বাংলাদেশ সরকার বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের মোট প্রায় ৮ দশমিক ৮ ভাগ এলাকাকে সামুদ্রিক সুরক্ষিত এলাকা হিসাবে ঘোষণা করেছে এবং ২০১৯ সালে জাতীয় কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম, পর্তুগালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারিক আহসান ও প্রতিনিধি দলের অন্যান্য কর্মকর্তারা সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।
মোমেন বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব ও নির্দেশনায় বাংলাদেশ তার দুই প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সমুদ্রসীমা সমস্যার সমাধান করেছে এবং যৌথভাবে সম্পদ কাজে লাগাতে প্রস্তুত।’
দারিদ্র্য দূরীকরণ, খাদ্য নিরাপত্তায় অবদান রাখা, বিশ্বের সামুদ্রিক পরিবেশ ও সম্পদ সংরক্ষণ, প্রাকৃতিক ও মানব সৃষ্ট দূষণ সম্পর্কে পূর্বাভাস প্রদান ও পদক্ষেপ গ্রহণ এবং মহাসাগর ও সাগরের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে সমুদ্র বিজ্ঞানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন আব্দুল মোমেন।
মোমেন বলেন, বাংলাদেশ সরকার ‘বাংলাদেশ শিপ রিসাইকেল অ্যাক্ট ২০১৮’ সংশোধন করেছে এবং ২০২৩ সাল থেকে হংকং কনভেনশন মেনে চলার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
বাংলাদেশ ২০২৩ সাল থেকে নিরাপদে জাহাজ রিসাইক্লিং নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নতুন পদক্ষেপেরও ঘোষণা দিয়েছে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক শপিং ব্যাগ উৎপাদন নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে বলেও বিশ্ব নেতাদের অবহিত করেন মোমেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সক্ষমতা গড়ে তোলা এবং বৈজ্ঞানিক জ্ঞান বিনিময়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, ‘মহাসাগরের টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে আর্থিক, প্রযুক্তিগত এবং মানব সম্পদের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক সক্ষমতার বৈষম্যগুলি অবশ্যই দূর করতে হবে।’
পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিসবনের একটি পাবলিক পার্কে স্থাপন করা স্থায়ী শহীদ মিনার পরিদর্শন করেন এবং ভাষা শহীদদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানান।
আরও পড়ুন:বিয়েকে স্মরণীয় করে রাখতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক সাবেক নেতা হেলিকপ্টারে করে গেলেন কনে আনতে। এ সময় শত শত লোক ভিড় জমান। উৎসুক লোকজনের ভিড় সামলাতে ও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনে ছিল পুলিশও।
এ জমকালো বিয়ের বর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি রিদওয়ান আনসারি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের মুন্সেফপাড়া এলাকার আনসারি বাড়ির এ আর আনসারি বাবরু ও রোকসানা আনসারি পপির ছোট ছেলে তিনি।
পরিবারটি আগে থেকেই বেশ স্বচ্ছ্বল।
শুক্রবার দুপুরে শহরের অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বোর্ডিং এর মাঠ থেকে রিদওয়ান হেলিকপ্টারে যাত্রা শুরু করেন। সদর উপজেলার সুহিলপুর ইউনিয়নের সুহিলপুর বাজারে তার আকাশযান অবতরণ করে। কনের বাড়ি সুহিলপুর গ্রামে।
কনে তামান্না খানম চাঁদনী সুহিলপুর গ্রামের আক্তার খানের মেয়ে। তিনি এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী। বর ও কনে উভয়ের বাড়ি একই জেলায় হওয়ায় এ ঘটনায় আজ সাড়া পড়ে গিয়েছে।
বিকেলে এই বিয়ের পর বর রিদওয়ান ফের হেলিকপ্টারে চড়ে কনে নিয়ে শহরের বোর্ডিং এর মাঠে অবতরণ করে নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন।
হেলিকপ্টারে চড়ে বিয়ের আয়োজনের খবর পেয়ে পুলিশ যায় ঘটনাস্থলে। কৌতূহলী ও উৎসুক লোকজনের ভিড় সামলাতে পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে।
সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ইব্রাহীম বলেন, ‘হেলিকপ্টারে চড়ে বিয়ের আয়োজনের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছিল। কৌতূহলী ও উৎসুক লোকজনের ভিড় সামলাতে পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে।’
বরের বড় ভাই রাইয়ান আনসারি রিকি জানান, তাঁরা দুই ভাই, কোনো বোন নেই। রিদওয়ান সবার ছোট। আদরের ভাইয়ের বিয়েকে স্মরণীয় করে রাখতে হেলিকপ্টারে করে বরযাত্রা ও কনে নিয়ে আসার আয়োজন করা হয়। ঢাকা থেকে ভাড়া করে হেলিকপ্টার আনা হয়।
তিনি বলেন, ‘ছোট ভাইয়ের খুব ইচ্ছে ছিল বিয়ের দিন কনের বাড়িতে হেলিকপ্টারে যাবে। সেই আশায় আমরা পূরণ করেছি।’
কনের গ্রাম সুহিলপুরের বাসিন্দা ও সুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ ভূইয়া বলেন, ‘হেলিকপ্টারে চড়ে বিয়ের আয়োজনে গ্রামের উৎসুক লোকজন হেলিকপ্টার ও বর-কনেকে দেখতে ভিড় জমান। গ্রামবাসীর মধ্যে এ সময় আনন্দ-উচ্ছ্বাস ছিল বলে স্থানীয় বিভিন্ন জানিয়েছেন। ব্যক্তিগত ব্যস্ততায় আমি বিয়েতে যেতে পারিনি। তবে বিষয়টি শুনেছি।’
আরও পড়ুন:কিশোরগঞ্জের সদর উপজেলায় সুবিধাভোগীদের কার্ড কৌশলে জমা নিয়ে টোকেনের মাধ্যমে টিসিবি পণ্য বিতরণের অভিযোগ উঠেছে একটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
শুক্রবার দুপুরে সদর উপজেলার মাইজকাপন ইউনিয়নে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের দাবি, সবাইকে দেয়ার মতো পর্যাপ্ত পণ্য তিনি পাননি। এ কারণে এই ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছেন। তবে কার্ড জমা রাখার বিষয়ে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা বলছেন, চেয়ারম্যান তাদের বলেছিলেন পণ্য কম এসেছে। তাই বেছে বেছে দেবেন। কিন্তু প্রতি ওয়ার্ডে যতজনকে দেয়া হবে বলেছিলেন, দেয়া হচ্ছে তার চেয়ে অনেক কম।
চেয়ারম্যান দাবি করেছেন, তার এই উদ্যোগের বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলছেন, পণ্যের কোনো সংকট নেই। এভাবে টোকেন দিয়ে পণ্য দেয়া যাবে না। এই অভিযোগ জানার পর তিনি পণ্য বিতরণই বন্ধ করে দিয়েছেন।
কৌশলে প্রকৃত সুবিধাভোগীদের কার্ড জমা নিয়ে টোকেনের মাধ্যমে নিজেদের আত্মীয়স্বজন আর সমর্থকদের মধ্যে এ পণ্য বিতরণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
ঈদের আগে কার্ড নিয়ে আর দেননি চেয়ারম্যান
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সুবিধাভোগী জানান, ঈদুল ফিতরের আগে তাদের তেল, ডাল, আর চিনি দেয়ার সময় চেয়ারম্যান তাদের কাছ থেকে কার্ডগুলো জমা নিয়েছিলেন। পরে আর ফেরত দেননি।
একজন সুবিধাভোগী বলেন, ‘সহালে হুনলাম টিসিবির মাল দেওয়া অইতাছে। আয়া দেহি যারার আতো (হাতে) টোহেন (টোকেন) আছে তারাই মাল পাইতাছে। হেরারে (তাদেরকে) জিগাইলাম টোহেন কইত্তে (কোথায়) পাইছেন? হেরা কয়, এইহানো (এখানে) আওনের পরে চেয়ারম্যান সাব তারার আতো আতো (হাতে হাতে) এইডি (এগুলো) দিছুইন।
‘আমরা ইউনিয়ন পরিষদের ভিতরে গেয়া মাল চাইলে চেয়ারম্যান কয়, তুমরার (তোমাদের) মাল আইছে না। আইলে পাইবা।’
ক্ষুব্ধ ইউপি সদস্যরাও
নাম প্রকাশে একাধিক সাধারণ ইউপি সদস্য ও সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য জানান, ২৭ তারিখে চেয়ারম্যান তাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। তখন তিনি বলেন, গতবারের তুলনায় এবার মাল কম এসেছে। এগুলো কীভাবে বণ্টন করা যায় সে মতামত নেন তিনি।
সেই বৈঠকে উপস্থিতি এক জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘চেয়ারম্যান সাহেব আমাদের মতামত নিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু বিতরণের সময় তিনি তার ইচ্ছেমতো সেগুলো বিতরণ করেছেন।
‘মিটিংয়ের সময় সিদ্ধান্ত হয়েছে প্রতি ওয়ার্ডে ৬৫টি করে টোকেন দেবেন। আমরাও রাজি হয়েছি। কিন্তু আজ সকালে আসার পর মাত্র ৯টি টোকেন হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন। এগুলো থেকে আমরা কাকে রেখে কাকে দেব?
‘চেয়ারম্যান সাহেব নিজের লোক ঠিক রাখতে এই কাজ করেছেন। কিন্তু আমাদের ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষ অনেকেই এসে মাল না পেয়ে খালি হাতে ফিরে গেছেন। তারা অনেকেই আমাদের প্রতি ক্ষোভ ঝেড়েছেন। তাদের কিছু দিতে পারিনি বলে আমরাও লজ্জিত হয়েছি।’
ইউপি সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার সময় একজন সুবিধাভোগী এসে তার ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যের কাছে ভাড়া চান। একজন সুবিধাভোগী ইউপি সদস্যের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মাল দিতে পারবেন না তো আমাদের আনলেন কেন?এখন বাড়ি যাব আসা-যাওয়ার ভাড়া আপনি দিবেন। যদি তাও না পারেন তবে আগামীতে যখন ভোটের জন্য আসবেন তখন ভাড়াটা ঠিকই আদায় করব।’
কী বলছেন চেয়ারম্যান?
মাইজকাপন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ। তিনি এ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে ২ হাজার ৬৮৪ জন টিসিবি কার্ডধারী সুবিধাভোগী রয়েছেন। কিন্তু আমি মাল পেয়েছি এক হাজার। এখন কী করব? এ বিষয়ে আমার ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডের সদস্যদের নিয়ে মিটিং করে ইউএনও সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার সঙ্গে পরামর্শ করেই এভাবে পণ্য বিতরণ করেছি।
‘এখন যদি কার্ড দিয়ে পণ্য বিতরণ করি, তবে সবাই এসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। বিশৃঙ্খলা ঠেকাতেই এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আপনার আরও কিছু জানার থাকলে ইউএনও স্যার আর ডিসি স্যারের সঙ্গে কথা বলেন।’
সুবিধাভোগীদের হাতে কার্ড নেই কেন, এগুলো কোথায়- এই প্রশ্নে চেয়ারম্যান বলেন, ‘সব কার্ড ডিলারের কাছে।’
তবে পাশেই বসা ছিলেন মেসার্স আবদুস সালাম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো.আবদুস সালাম। তিনি বলেন, ‘সুবিধাভোগীদের কার্ডগুলো আমার কাছে ছিল ঠিকই, কিন্তু আজ থেকে আরও ২০ দিন পূর্বেই চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছি। এখনও তার কাছেই আছে।’
তিনি বলেন, ‘গোডাউনে পর্যাপ্ত পরিমাণ পণ্য না থাকায় একসঙ্গে বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। আজ আমরা যে পরিমাণ পণ্য পেয়েছি তাতে এক হাজার পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা যাবে। বাকিটুকুও দু-এক দিনের মধ্যেই দিয়ে দেব।’
চেয়ারম্যানের দাবি নাকচ ইউএনওর
প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে এভাবে পণ্য বিক্রির বিষয়ে চেয়ারম্যান যে দাবি করেছেন, তা নাকচ করেছেন কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আলী। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টোকেনের মাধ্যমে পণ্য বিতরণের বিষয়টি জেনে আমি চেয়ারম্যানকে ফোন করে বিতরণ বন্ধ করে দিয়েছি।
‘অনেক সময় সুবিধাভোগীদের কার্ড ছিঁড়ে যায়, হারিয়ে যায়। তাই প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের প্রতি নির্দেশনা আছে আপনারা তালিকা দেখে পণ্য বিতরণ করবেন। কিন্তু তারা যদি তালিকার বাইরে টোকেনের মাধ্যমে পণ্য বিতরণ করে থাকেন, তবে এ বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
পণ্য সংকট বলে চেয়ারম্যান যে দাবি করছেন, সেটিও সঠিক নয় বলে জানান ইউএনও। তিনি বলেন, ‘পর্যাপ্ত পরিমাণ পণ্য মজুত রয়েছে। এগুলো ঢাকা ও ময়মনসিংহ থেকে আসে। অনেক সময় পরিবহন সমস্যার কারণে এক-দুদিন সময় লাগে।’
আরও পড়ুন:সরকার উন্নয়ন নয়, উন্নয়নের কল্পকাহিনি শোনাচ্ছে বলে মনে করেন গণফোরামের একাংশের সভাপতি ও গত নির্বাচনে সরকারবিরোধী জোট ঐক্যফ্রন্টের নেতা মোস্তফা মোহসীন মন্টু।
শুক্রবার গণফোরামে তার নেতৃত্বাধীন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন ড. কামাল হোসেনকে ছেড়ে আসা এই গণফোরাম নেতা।
মন্টু গত নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন। নির্বাচনের পর থেকেই গণফোরাম নিয়ে ‘নাটকীয়’ পরিস্থিতি তৈরি হয়। যার এক পক্ষের নেতা তিনি।
গত বছরের ৩ ডিসেম্বর ড. কামালকে ছাড়াই সম্মেলন করে দলের সভাপতি হন তিনি। দল হয়ে যায় দুই টুকরো।
গত ১২ মার্চ ড. কামাল হোসেনপন্থিদের সম্মেলনে মন্টুপন্থিদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ পাওয়া যায়। এরপর দুই অংশ বিভিন্ন স্থানে কাউন্সিলও করছে।
মন্টু বলেন, ‘উৎপাদনহীন খাতে বরাদ্দের নামে মহা লুটপাট করছে, কিন্তু বেকার-যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ নেই। উন্নয়নের যে কল্পকাহিনি শোনাচ্ছেন এগুলো জনগণের উন্নয়ন নয়, আপনাদের সুবিধাভোগী দুর্নীতিবাজদের উন্নয়ন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে দুঃশাসনের রাজত্ব কায়েম করে মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার থেকে বহুদূর চলে গেছেন।’
তিনি বলেন, ‘ছয় দফাকে কবর দিয়ে তো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন হয় না। আপনারা বলুন তো এই সরকারের আমলে ছয় দফার একটি দফাও কি জীবিত আছে? পাকিস্তান আমলে ভোট-ভাতের অধিকার নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি, আজ ৫০ বছর পরেও একইভাবে ভোটের অধিকার আদায়ে লড়াই করছি, বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছি। তাহলে আপনারা কীভাবে, কোন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের কথা বলছেন? মুক্তিযুদ্ধ কোটার নামে তরুণ মেধাবীদের দেশের সেবা করা ও নেয়া থেকে বঞ্চিত করছেন। এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হলো সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের মাধ্যমে কার্যকরী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা।’
সকাল ১০টায় ইনস্টিটিউশন অফ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান বক্তা ছিলেন গণফোরাম নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ।
তিনি বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম ধনী-গরিবের বৈষম্য কমাতে; কিন্তু এরা দুর্নীতির মাধ্যমে আরও বৈষম্য সৃষ্টি করছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিপক্ষের সনদপত্র দিচ্ছে তা স্রেফ জনগণের সঙ্গে ধোঁকাবাজি ব্যতীত আর কিছুই নয়।’
আবু সাইয়িদ বলেন, ‘পদ্মা সেতু তৈরিতে আপনাদের ভূমিকার প্রশংসা করছি, কিন্তু পদ্মা সেতুর শ্বেতপত্র জনগণের সামনে প্রকাশ করতে হবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী। এ ছাড়া গণফোরাম নির্বাহী সভাপতি মহসীন রশিদ, নির্বাহী সভাপতি মহিউদ্দিন আবদুল কাদেরসহ ঢাকা মহানগর ও কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন।
গণফোরাম ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সম্মেলনে হাবিবুর রহমান বুলুকে সভাপতি ও তাজুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫১ সদস্যবিশিষ্ট জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য