বিজেপির আসল পরিবর্তন স্লোগানকে উড়িয়ে দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের প্রত্যাবর্তন ঘটেছে।
আর এ কৃতিত্বের অনেকটাই ভাতিজা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রাপ্য বলে মনে করেন খোদ তৃণমূল নেত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি বলেন, ‘এবার ভোটে ওয়্যার রুম ও কর্মসূচি তৈরি করে, আগাগোড়া ভোট যুদ্ধ পরিচালনা করেছে ওরা।'
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে অভিষেকের পরিণত নেতা হিসেবে নিজেকে ও রাজ্য রাজনীতিতে তুলে ধরা উল্লেখযোগ্য হয়ে থাকবে।
মমতা পুরো ২৯৪টি বিধানসভা আসনের দায়িত্ব নিয়ে হুইল চেয়ারে বসে ভোট প্রচার করেন। একইভাবে তৃণমূলের যুবনেতা অভিষেক ভোট প্রচারে গোটা রাজ্য চষে ফেলেন। মমতার পাশে ভোট প্রচারে একমাত্র অভিষেক সবার নজর কাড়েন।
পশ্চিমবঙ্গে টানা ১০ বছর ধরে তৃণমূল কংগ্রেসের শাসন চলছে। এবারের নির্বাচনে সরকারবিরোধীদের সামলানোর চ্যালেঞ্জ তৃণমূলের ছিল। বিভিন্ন দুর্নীতিতে তৃণমূল সরকার ও দলের নেতাদের জড়িয়ে পড়ায় মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া আগে থেকেই ছিল।
এ ছাড়া এবারের ভোটে ছিল ধর্মীয় মেরুকরণ। জোরালোভাবে জাতপাতের রাজনীতি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। আদিবাসী, রাজবংশী, মতুয়া ভোটারদের হিসাব কষা শুরু হয়েছিল। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকে বিজেপি ও তৃণমূল উভয় দলই ওইসব ভোটের অংশীদারি পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে।
পাশাপাশি উঠে আসে মমতার বিজেপিকে ‘বহিরাগত’ হিসেবে আক্রমণ আর 'পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি বাংলার মেয়েকে চায়' আবেগকে প্রচারে তুলে আনার কৌশল।
বিভিন্ন প্রচার সভায় মমতার সুরে আক্রমণ শানিয়ে অভিষেক বলেন, ‘আমি নাম করে বলছি, অমিত শাহ বহিরাগত। দিল্লির বিজেপি নেতারা বহিরাগত।’
অভিষেকের পাশে দাঁড়িয়ে মমতা বলেছিলেন, ‘যদি দিদি আর ভাতিজা বলতে হয়, তবে আমি অমিত শাহকে চ্যালেঞ্জ করছি, আগে অভিষেকের সঙ্গে ফাইট করুন। দেন টেল দ্য নেম।'
এসব আক্রমণে থেমে থাকেনি বিজেপিও। অভিষেককে কয়লা পাচারকারী, গরু পাচারকারী বলার পাশাপাশি অভিষেকের স্ত্রী সারিকাকেও আক্রমণ করে বিজেপি।
অভিষেকও জোরালো আক্রমণ করে গেছেন বিজেপি নেতাদের। তিনি বলেন, ‘যারা বলেন সুনার বাংলা- তারা গড়বে সোনার বাংলা? বিজেপি বাংলার সংস্কৃতি নষ্ট করছে। বিজেপি বহিরাগত।'
মোদি-অমিত শাহর সঙ্গে টক্কর দিয়ে লড়াই করে নির্বাচনে জিতে গেছেন অভিষেক।
যুব তৃণমূল সভাপতি ও তৃণমূল কংগ্রেসের উত্তরাধিকার অভিষেক প্রচার সভায় বিজেপি নেতাদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘যতই নাড়ো কলকাঠি, নবান্নে এবার হাওয়াই চটি।’
আরও পড়ুন:বিদেশি নাটক-সিনেমা দেখা বা শেয়ার করার মতো কাজের জন্য উত্তর কোরিয়ায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হচ্ছে - জাতিসংঘের নতুন এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য। শুক্রবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, কিম জং উনের নেতৃত্বে গত এক দশকে দেশটিতে প্রযুক্তি-নির্ভর দমননীতি আরো ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। খবর আল জাজিরা।
জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তর জানায়, সাত দশক ধরে কিম রাজবংশ উত্তর কোরিয়ায় পরম ক্ষমতা ধরে রেখেছে। এর ফলে জনগণ দীর্ঘদিন ধরেই ভীতি, দমন-পীড়ন ও সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে বাস করছে।
জাতিসংঘের উত্তর কোরিয়া মানবাধিকার কার্যালয়ের প্রধান জেমস হিনান জেনেভায় ব্রিফিংয়ে বলেন, কোভিড-যুগের বিধিনিষেধের পর থেকে রাজনৈতিক ও সাধারণ অপরাধ উভয়ের জন্যই মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়ার জনপ্রিয় কে-ড্রামা ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে অজ্ঞাত সংখ্যক মানুষকে ইতিমধ্যেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রযুক্তিগত উন্নতির ফলে রাষ্ট্রীয় নজরদারি ব্যবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে নাগরিকদের জীবনের প্রতিটি দিক এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে। এমনকি শিশুদেরও বাধ্যতামূলকভাবে কয়লাখনি ও নির্মাণকাজের মতো কঠিন শ্রমে নিয়োজিত করা হচ্ছে।
এ প্রতিবেদনকে জাতিসংঘ বলছে গত এক দশকের বিস্তৃত পর্যালোচনা। এর আগে ২০১৪ সালের ঐতিহাসিক প্রতিবেদনে মৃত্যুদণ্ড, ধর্ষণ, নির্যাতন, অনাহার এবং ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার মানুষকে কারাগারে আটকে রাখার মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ উঠে এসেছিল।
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক সতর্ক করে বলেন, “যদি উত্তর কোরিয়া বর্তমান গতিপথে এগিয়ে চলে, তবে জনগণ আরো বেশি নির্মম দমননীতি, ভয় ও ভোগান্তির শিকার হবে।”
নতুন প্রতিবেদন নিয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি উত্তর কোরিয়ার জেনেভা মিশন কিংবা লন্ডন দূতাবাস।
জাপানে ১০০ বা তারও বেশি বয়সি মানুষের সংখ্যা ১ লাখের কাছাকাছি পৌঁছেছে। যা নতুন এক রেকর্ড। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শতবর্ষী এসব মানুষের প্রায় ৯০ শতাংশই নারী।
গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করে জাপান। যা বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির জন্য এক গভীর সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। একদিকে যেমন জাপানের জনসংখ্যা কমছে, অন্যদিকে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাপানে মোট ৯৯ হাজার ৭৬৩ জন শতবর্ষী ছিলেন। গত বছরের তুলনায় এই সংখ্যা ৪ হাজার ৬৪৪ জন বেশি। এদের মধ্যে প্রায় ৮৮ শতাংশই নারী।
জাপানের সবচেয়ে প্রবীণ নাগরিক হলেন ১১৪ বছর বয়সি শিগেকো কাগাওয়া। তিনি কিয়োটোর কাছে নারা অঞ্চলে থাকেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছেন, এ নারীর বয়স যখন ৮০ বছর ছিল তখনও তিনি চিকিৎসক হিসেবে তার কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন।
দীর্ঘজীবী হওয়ার ব্যাপারে কাগাওয়া বলেন, ‘রোগীর বাড়ি বাড়ি হেঁটে গিয়ে সেবা দেওয়ার অভ্যাস আমার পা দুটিকে মজবুত করেছে, আর এটাই আমার বর্তমান প্রাণশক্তির মূল উৎস।’
বয়স ১১৪ হলেও তিনি এখনো খালি চোখে ভালো দেখতে পান। তার দিন কাটে টিভি দেখে, খবরের কাগজ পড়ে ও ক্যালিগ্রাফি করে।
জাপান গত কয়েক বছর ধরেই জনসংখ্যার সংকটে রয়েছে। বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ায় স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক সুরক্ষার খরচ বেড়েছে কয়েক গুণ। কিন্তু এই ব্যয় মেটানোর জন্য প্রয়োজনীয় কর্মশক্তির সংখ্যা ক্রমশ কমে আসছে।
গত মাসে প্রকাশিত সরকারি তথ্যে দেখা গেছে যে, ২০২৪ সালে জাপানি নাগরিকের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ ৯ লাখেরও বেশি কমেছে।
দেশটির সদ্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা ওই সময় এ পরিস্থিতিকে ‘নীরব জরুরি অবস্থা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন। জনসংখ্যা হ্রাসের এই প্রবণতা ঠেকাতে তিনি পরিবার-বান্ধব নানা উদ্যোগ হিসেবে কর্মঘণ্টার নমনীয়তা এবং বিনামূল্যে ডে-কেয়ারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে সরকারের এই প্রচেষ্টাগুলো এখনো জনসংখ্যা হ্রাস ও বয়স্কতা রোধে তেমন কোনো কার্যকর প্রভাব রাখতে পারেনি।
ইসরায়েল পশ্চিম তীরে ব্যাপক অভিযান চালিয়ে একদিনেই এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করেছে। একইসঙ্গে গাজায় বিমান হামলা অব্যাহত আছে। সেখানে দুর্ভিক্ষে জর্জরিত সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন করে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। খবর শাফাক নিউজের।
টুলকার্মের গভর্নর জানিয়েছেন, শুক্রবারের অভিযানে ইসরায়েলি সেনারা একযোগে এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে আটক করে।
এদিকে, রামাল্লার কাছে আইন ইয়াবরুদ এলাকায় চারজন ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী একটি ডাউন সিনড্রোম আক্রান্ত যুবককে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গাজার আল-আওয়দা হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় বিমান হামলায় তিনজন নিহত ও অন্তত ৩৮ জন আহত হয়েছেন। হামলাগুলো হয়েছে মানবিক সহায়তার লাইনে দাঁড়ানো ভিড়ে এবং মধ্য গাজার কয়েকটি আবাসিক এলাকায়।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে মোট মৃতের সংখ্যা ৬৪ হাজার ৭০০ ছাড়িয়েছে। পাশাপাশি ক্ষুধায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৩৮ জন শিশু।
জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ বলছে, গাজার সাধারণ মানুষ এখনো ‘কোনো নিরাপদ আশ্রয় ছাড়াই’ বন্দি রয়েছে এবং তীব্র খাদ্যসংকটে পড়েছে।
ক্ষুধা-অনাহারে আরও ৭ ফিলিস্তিনির মৃত্যু
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় দুর্ভিক্ষ ও অনাহারে প্রতিদিনই প্রাণহানি ঘটছে। গত ২৪ ঘণ্টায় শুধু ক্ষুধায় আরও সাতজনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে একটি শিশুও রয়েছে। শুক্রবার বার্তাসংস্থা আনাদোলু এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, গাজায় ইসরায়েলের হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪ হাজার ৭১৮ জনে। বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহার ও অপুষ্টিতে একজন শিশুসহ আরও সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে যে, গত একদিনে ৭২ জনের মরদেহ হাসপাতালে পৌঁছেছে এবং আরও ৩৫৬ জন আহত হয়েছেন। এর ফলে ইসরায়েলি হামলায় মোট আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৫৯ জনে। অনেক নিহত ব্যক্তি এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে আছেন, উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় ত্রাণ সংগ্রহের সময় ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে আরও নয়জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং অন্তত ৮৭ জন আহত হয়েছেন। এতে ২৭ মে থেকে ত্রাণ নিতে গিয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৬৫ জনে এবং আহত হয়েছেন অন্তত ১৭ হাজার ৯৪৮ জন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহার ও অপুষ্টিতে মারা যাওয়া সাতজনের মধ্যে একটি শিশু রয়েছে। এর ফলে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে দুর্ভিক্ষে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪১১ জনে, যাদের মধ্যে ১৪২ জন শিশু। এর মধ্যে শুধু গত মাসে জাতিসংঘ সমর্থিত ক্ষুধা পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইপিসি গাজাকে আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ অঞ্চল ঘোষণা করার পর থেকে ১৩৩ জন মারা গেছেন, যাদের মধ্যে ২৭ জনই শিশু।
চলতি বছরের মার্চ মাসের শুরু থেকে ইসরায়েল গাজার সব সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে, যার ফলে ২৪ লাখ মানুষের এই জনপদ মারাত্মক দুর্ভিক্ষের শিকার হয়েছে। এরপর ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েল নতুন করে হামলা শুরু করার পর এ পর্যন্ত ১২ হাজার ১৭০ জন নিহত এবং ৫১ হাজার ৮১৮ জন আহত হয়েছেন। এই হামলার মধ্য দিয়ে জানুয়ারিতে হওয়া যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় চুক্তি কার্যত ভেঙে যায়।
এর আগে গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োআভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। একইসঙ্গে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) মামলা চলছে।
নেপালে চলমান জেন-জি বিক্ষোভে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫১ জনে দাঁড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে কাঠমান্ডু ছাড়াও বিভিন্ন জেলার মানুষ রয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজন পুলিশ সদস্য ও একজন ভারতীয় নারীও আছেন। নেপাল পুলিশের কেন্দ্রীয় মুখপাত্র ও ডিআইজি বিনোদ ঘিমিরে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে শত শত মানুষ আহত হয়েছেন। হাসপাতালগুলোতে ক্রমাগত আহতদের ভিড় বাড়ছে। কোথাও ৫০০, আবার কোথাও এক হাজারেরও বেশি আহতের কথা বলা হচ্ছে। ফলে সঠিক সংখ্যা এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।
বিক্ষোভ কিছুটা শীতল হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেনা ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সংসদ ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে সেনা পাহারা বসানো হয়েছে। সহিংসতার সময় কয়েকজন মন্ত্রীকে হেলিকপ্টারে করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
তাছাড়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় কারফিউ জারি রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক থাকতে বলা হলেও একাধিক স্থানে গুলিবর্ষণ ও গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে তদন্ত ও ক্ষতিপূরণের দাবি উঠছে।
আবার বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ায় সীমান্তেও কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সীমান্ত পারাপার কঠোরভাবে তদারকি করা হচ্ছে। নয়াদিল্লি জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
জানা গেছে, অস্থিরতার সুযোগে কারাগারগুলোতেও বড় ধরনের ভাঙচুর হয়েছে। পুলিশের হিসাবে, দেশজুড়ে ১৩ হাজার ৫৭২ জন বন্দি পালিয়ে গেছে। এছাড়া তদন্তাধীন অবস্থায় পুলিশের হেফাজতে থাকা আরও ৫৬০ জনকে হারিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
রাজধানীসহ দেশজুড়ে সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও বন্দিদের পালানো- সবকিছু মিলিয়ে নেপালের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বড় ধরনের চাপে পড়েছে। সরকার বলছে, এ সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজন সংলাপ, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও জনগণের আস্থা পুনর্গঠন।
জনগণকে গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান নেপালের সেনাবাহিনীর
বর্তমান জাতীয় পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী নিয়ে ছড়িয়ে পড়া বিভ্রান্তিকর ও ভুয়া তথ্যের ব্যাপারে সতর্ক করে দেশটির সেনাবাহিনী জনগণকে গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
নেপালের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বাহিনীটি নিয়মিতভাবে প্রেস বিজ্ঞপ্তি, প্রেস নোট এবং নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক বার্তা ও কার্যক্রম সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিত করে আসছে।
তাই সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্যের জন্য শুধু এই অফিসিয়াল যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ওপরই ভরসা রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সেনাবাহিনী আরও জানিয়েছে, তারা ভবিষ্যতেও সময় মতো ও স্বচ্ছ তথ্য দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সবাইকে অনুরোধ করেছে—যেন তারা আতঙ্ক না ছড়িয়ে শান্তি বজায় রাখতে সহায়তা করে এবং যাচাই-বাছাই না করা বার্তা ছড়ানো থেকে বিরত থাকে।
এদিকে সরকারি কর্মকর্তাদের হিসাব অনুযায়ী, দুই দিনের সহিংসতায় সরকারি অবকাঠামোর ক্ষতির পরিমাণ ২০০ বিলিয়ন (২০ হাজার কোটি) রুপিরও বেশি।
গুরুত্বপূর্ণ ভবনের পাশাপাশি অমূল্য ঐতিহাসিক নথি ও দলিলপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। নগর উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সিংহ দরবার, পার্লামেন্ট ভবন ও সুপ্রিম কোর্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় অগ্নিকাণ্ডে ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে। প্রতিটি স্থাপনা নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল কোটি কোটি রুপি।
মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, এসব ভবন কেবল সংস্কার বা রেট্রোফিটিং করে চালানো সম্ভব নয়। এগুলো পুনর্নির্মাণ করতে ২০০ বিলিয়ন রুপিরও বেশি খরচ হবে। এই হিসাব কেবল ভবনের, অফিস সেটআপ ও ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত অর্থ এতে ধরা হয়নি।
নেপালে আন্দোলনের নেপথ্যে ‘নেপো কিডস’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের সিদ্ধান্তের জেরে তীব্র গণবিক্ষোভে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে নেপাল। পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর যে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন দেশটির কমিউনিস্ট প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি। সরকারের প্রায় সব মন্ত্রীই হয় দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, নয়তো আত্মগোপনে আছেন। বিক্ষুব্ধ জনতা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-মন্ত্রীদের বাড়িতে আগুন দিয়েছে, এমনকি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে সংসদ ভবনও।
পুলিশের দমন-পীড়নে এক হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। দেশে বর্তমানে কোনো কার্যকর সরকার নেই এবং সেনাবাহিনী কারফিউ জারি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে।
প্রাথমিকভাবে সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধের সিদ্ধান্তকে বিক্ষোভের কারণ মনে করা হলেও, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মূল কারণ হলো রাজনৈতিক নেতাদের সীমাহীন দুর্নীতি ও সামাজিক বৈষম্য। তাই বিক্ষোভের সময় রাজনৈতিক নেতা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা বারবার আক্রমণের শিকার হয়েছেন। বিশেষ করে নেপো কিডসদের বিলাসী জীবনযাত্রা জনগণের ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলেছে। যখন সাধারণ নেপালিরা বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি ও দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করছে, তখন প্রভাবশালী নেতা-মন্ত্রীদের ছেলেমেয়েদের বিলাসবহুল জীবন এবং সামাজিক মাধ্যমে তার প্রদর্শন তরুণদের আরও বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে।
টিকটক, ইনস্টাগ্রাম, রেডিট এবং এক্স-এর মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই নেপো কিডসদের বিলাসবহুল গাড়ি, দামি ডিজাইনার পোশাক, বিদেশে ছুটি কাটানোর ছবি রীতিমতো ভাইরাল হয়। বিক্ষোভের আগে #PoliticiansNepoBabyNepal এবং #NepoBabies হ্যাশট্যাগগুলো লক্ষাধিক ভিউ পেয়েছে। এসব পোস্টে নেপো কিডদের বিলাসী জীবনের পাশাপাশি সাধারণ নেপালিদের দুর্দশার ছবিও পোস্ট করা হয়।
কয়েকজন নেপো কিডস
শৃঙ্খলা খাতিওয়াড়া: প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিরোধ খাতিওয়াড়ার ২৯ বছর বয়সি এই মেয়ে, যিনি একসময় মিস নেপাল ছিলেন, বিক্ষোভকারীদের কাছে বিশেষ সুবিধাভোগী অভিজাতদের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। তার বিদেশ ভ্রমণ ও বিলাসবহুল জীবনযাত্রার ছবি ভাইরাল হলে প্রতিবাদকারীরা তার বাবার বাড়িতে আগুন দেয়।
জানা গেছে, ঘটনার পর থেকে তিনি ইনস্টাগ্রামে ১ লাখেরও বেশি অনুসারী হারিয়েছেন।
শিবানা শ্রেষ্ঠা: জনপ্রিয় গায়িকা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবার পুত্রবধূ শিবানা প্রায়ই তার বিলাসবহুল বাড়ি ও দামি ফ্যাশনের ভিডিও পোস্ট করেন। তিনি ও তার স্বামী জয়বীর সিং দেউবাও অনলাইনে আক্রমণের শিকার হন এবং কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হিসেবে তাদের ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
স্মিতা দহল: সাধারণ মানুষ যখন চাকরির জন্য লড়ছেন, তখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহলের (প্রচণ্ড) নাতনি স্মিতা দহল সামাজিক মাধ্যমে লক্ষাধিক টাকার হ্যান্ডব্যাগের ছবি পোস্ট করে সমালোচিত হন। প্রতিবাদীরা প্রচন্ডর বাড়িতেও হামলা চালিয়েছে।
সৌগত থাপা: আইনমন্ত্রী বিন্দু কুমার থাপার ছেলে সৌগতও তার বিলাসবহুল জীবনযাত্রা ও অনলাইন প্রদর্শনের জন্য চিহ্নিত হয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, সাধারণ মানুষ যেখানে দারিদ্র্যে মারা যাচ্ছে, সেখানে এই নেপো কিডসরা লাখ লাখ টাকার পোশাক পরছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আনুষ্ঠানিকভাবে পশ্চিম তীরের দখলীকৃত এলাকায় বসতি সম্প্রসারণের একটি পরিকল্পনার অগ্রগতি নিশ্চিত করেছেন, যা ভবিষ্যতে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনাকে কার্যত অসম্ভব করে তুলবে।
গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় তিনি একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যার মাধ্যমে পশ্চিম তীরকে দ্বিখণ্ডিত করে বসতি প্রকল্প বাস্তবায়নের পথ সুগম হবে।
এক অনুষ্ঠানে নেতানিয়াহু বলেন, আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে যাচ্ছি। কোনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র হবে না। এই জমি আমাদের। তিনি আরও বলেন, আমরা এই শহরের জনসংখ্যা দ্বিগুণ করতে যাচ্ছি।
এই উন্নয়ন পরিকল্পনার আওতায় ৩ হাজার ৪০০টি নতুন ইসরায়েলি বসতি নির্মাণের কথা রয়েছে। এতে দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেম থেকে পশ্চিম তীরের বড় একটি অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে এবং ওই অঞ্চলের হাজারো ইসরায়েলি বসতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হবে।
পূর্ব জেরুজালেম ফিলিস্তিনিদের কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটি তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে বিবেচিত।
১৯৬৭ সাল থেকে দখলীকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতিগুলো আন্তর্জাতিক আইনের চোখে অবৈধ, এমনকি সেগুলো ইসরায়েলি অনুমোদিত হলেও।
সংবেদনশীল তাইওয়ান প্রণালীর মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করেছে চীনের তৃতীয় বিমানবাহী রণতরী ‘ফুজিয়ান’। শুক্রবার বেইজিং জানিয়েছে, দক্ষিণ চীন সাগরে বৈজ্ঞানিক গবেষণা পরীক্ষা এবং প্রশিক্ষণ মিশন পরিচালনার জন্য এই যাত্রা।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন সামরিক বাহিনীকে আধুনিকীকরণের জন্য মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এতে পূর্ব এশিয়ার কিছু সরকার ‘হতাশা’ প্রকাশ করেছে করেছে। যদিও চীন জোর দিয়ে বলেছে, তাদের লক্ষ্য শান্তিপূর্ণ।
চীনের দুটি বিমানবাহী রণতরী জাহাজ চালু ছিল - লিয়াওনিং ও শানডং। নতুন রণতরী ফুজিয়ান বর্তমানে সমুদ্রে পরীক্ষামূলকভাবে চলছে।
শুক্রবার চীনের নৌবাহিনী জানিয়েছে, আন্তঃআঞ্চলিক পরীক্ষা চালানো ‘বিমানবাহী রণতরীটির নির্মাণ প্রক্রিয়ার একটি স্বাভাবিক অংশ।’
তবে সংবেদনশীল তাইওয়ান প্রণালী দিয়ে রণতরীটির ট্রানজিট ‘একটি শক্তিশালী সামরিক শক্তি এবং এর বাইরেও একটি সামুদ্রিক সুপারপাওয়ার হিসাবে চীনের উত্থানের ইঙ্গিত।’ এমনটাই বলছেন সিঙ্গাপুরের এস. রাজারত্নম স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো কলিন কোহ।
তিনি বলেন, ‘এটি চীনের নতুন সামরিক শক্তিকে আরও জোরদার করার এবং সম্ভাব্য প্রতিপক্ষদের কাছে একটি সত্যিকারের সংকেত পাঠানোর জন্য’ হতে পারে।
শুক্রবার তাইওয়ানের জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা ‘পরিস্থিতি সম্পূর্ণরূপে বোঝার জন্য যৌথ গোয়েন্দা ও নজরদারি উপায় ব্যবহার করেছে।’
জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে তারা তিনটি চীনা নৌবাহিনীর জাহাজ চিহ্নিত করেছে, যারা বিতর্কিত সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জের (চীনা ভাষায় দিয়াওয়ু দ্বীপপুঞ্জ) প্রায় ২০০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে জলসীমায় দক্ষিণ-পশ্চিমে অগ্রসর হচ্ছে।
একটি বিবৃতিতে তারা বলেছে, জাপান মেরিটাইম সেলফ-ডিফেন্স ফোর্স প্রথমবারের মতো ফুজিয়ান বিমানবাহী রণতরীটিকে শনাক্ত করেছে।
জাপান জুলাই মাসে বলেছিল, চীনের তীব্রতর সামরিক তৎপরতা তাদের নিরাপত্তার ওপর ‘গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।’ গত আগস্টে একটি বার্ষিক হুমকি মূল্যায়নে জাপান চীনা সামরিক বিমানের ‘অনুপ্রবেশ’র কথা উল্লেখ করে।
চীন বলেছে, শুক্রবার একটি উপকূলরক্ষী নৌবহর দিয়াওয়ু দ্বীপপুঞ্জের আঞ্চলিক জলসীমার মধ্যে টহল দিয়েছে।
জাপানের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর জাপান-শাসিত দ্বীপপুঞ্জের কাছে চীনা জাহাজগুলো রেকর্ড ৩৫৫ বার যাত্রা করেছে।
চীনের সামরিক ভাষ্যকার সং ঝংপিং বলেন, অন্যান্য সমুদ্রের তুলনায় দক্ষিণ চীন সাগর ‘আরও কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে আরও চ্যালেঞ্জিং পরিবেশ উপস্থাপন করে, যা ফুজিয়ানের জন্য পরীক্ষাগুলোকে আরও কঠোর করে তুলেছে।’
সং বলেন, সমুদ্রে পরীক্ষা এবং আরও অভিযোজিত প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করার পর ফুজিয়ানকে সম্ভবত সক্রিয় পরিষেবায় আনা হবে।
সোভিয়েত-নির্মিত লিয়াওনিং হলো চীনের পুরোনো বিমানবাহী রণতরী। এটি ২০১২ সালে চালু হয়েছিল। শানডং নামক রণতরীটি ২০১৯ সালে পরিষেবায় প্রবেশ করেছিল।
ওয়াশিংটন-ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ‘CSIS’-এর বিশ্লেষকরা বলেছেন, ফুজিয়ানে আরও উন্নত টেক-অফ সিস্টেম থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। এর ফলে চীনা বিমান বাহিনী বৃহত্তর পেলোড এবং আরও জ্বালানি বহনকারী জেট মোতায়েন করতে পারবে।
প্রশান্ত মহাসাগরে নাগাল বৃদ্ধি এবং মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটকে চ্যালেঞ্জ জানাতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন তার নৌবাহিনীর ব্যাপক সম্প্রসারণ করেছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ এক প্রতিবেদনে বলেছে, সংখ্যাগতভাবে চীনের নৌবাহিনী বিশ্বের বৃহত্তম। দেশটির ৩৭০টিরও বেশি জাহাজ এবং সাবমেরিন রয়েছে।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ বৃহস্পতিবার কাতারে সাম্প্রতিক হামলার নিন্দা জানিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার আহ্বান জানিয়েছে। তবে এই হামলা চালানো দেশ ইসরাইলের নাম বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়নি।
জাতিসংঘ সদরদপ্তর থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
বিবৃতিতে বলা হয়, নিরাপত্তা পরিষদ ‘পরিস্থিতি শান্ত করার ওপর জোর দিচ্ছে এবং কাতারের প্রতি তাদের সংহতি প্রকাশ করেছে।’
ইসরাইলের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রসহ নিরাপত্তা পরিষদের ১৫টি দেশের সম্মতিতেই বিবৃতিটি গৃহীত হয়।
বিবৃতিতে পরিষদের সদস্যরা জানায়, তারা কাতারের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানায়।
মঙ্গলবার ইসরাইল হামাসের শীর্ষ নেতাদের লক্ষ্যবস্তু করে কাতারের রাজধানী দোহায় একটি নজিরবিহীন হামলা চালায়।
হামাস জানায়, তাদের শীর্ষ নেতারা বেঁচে গেছেন। তবে পাঁচ সদস্য নিহত হয়েছেন এবং কাতারের একজন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যও প্রাণ হারিয়েছেন।
নিরাপত্তা পরিষদের বিবৃতিতে দোহাকে ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী দেশের ভূখণ্ড’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। কারণ মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি কাতারও ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে শান্তি আলোচনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, হামাসের হাতে জিম্মি থাকা ব্যক্তিদের মুক্ত করা, নিহতদের মরদেহ ফেরত পাওয়া এবং গাজায় যুদ্ধ ও দুর্দশা বন্ধ করাই আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার।
জরুরি বৈঠকে যোগ দিতে নিউইয়র্কে যাওয়া কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আব্দুলরহমান আল-থানি নিরাপত্তা পরিষদের এই সমর্থনমূলক বিবৃতিকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, তার দেশ মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা অব্যাহত রাখবে।
তিনি বলেন, ‘রক্তপাত বন্ধে আমরা মানবিক ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব। তবে সার্বভৌমত্বে কোন আঘাত মেনে নেওয়া হবে না। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী যে সকল ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার আমাদের আছে, আমরা তা প্রয়োগ করব।’
তিনি ইসরাইলের নেতাদের ‘রক্তপিপাসু চরমপন্থী’ বলেও অভিহিত করেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরাইল পাল্টা হামলা শুরু করে। তখন থেকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এ বিষয়টি নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিতে চাইলেও যুক্তরাষ্ট্রের একের পর এক ভেটো দেওয়ায় কারণে পরিষদ কিছুই করতে পারেনি।
তবে ইসরাইলের প্রতি সমর্থন থাকা সত্ত্বেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার দোহায় চালানো হামলায় ‘খুশি নন’ বলে জানিয়েছেন। এই হামলায় হামাস নেতাদের এক আবাসিক কমপ্লেক্সকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল।
জাতিসংঘের রাজনৈতিক বিষয়ক আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল রোজমেরি ডিকার্লো বলেন, এই হামলা ‘চরম উদ্বেগজনক উত্তেজনার সূচনা’ হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘দোহায় ইসরাইলি হামলা এ ভয়াবহ সংঘাতে নতুন ও ঝুঁকিপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে, যা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে গুরুতর হুমকির মুখে ফেলবে।’
মন্তব্য