তীব্র উত্তেজনার পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার নির্বাচনের আট দফার ভোট গ্রহণ শেষ। এবার ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণার পালা। তবে বুথফেরত জরিপগুলোর জোরালো আভাস, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে তীব্র উত্তাপ ছড়ানো এই নির্বাচনে জয় পেতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসই।
আট দফায় ৩৪ দিনের জমজমাট ভোট যুদ্ধ শেষে রোববার সকাল ৮ থেকে শুরু হবে ভোট গণনা, এদিনই জানা যাবে ফলাফল। করোনার কারণে এবার ভোট গণনা বুথ কম রাখায় ফলাফল ঘোষণা কিছুটা বিলম্ব হতে পারে।
ভোট গণনা শুরুর আগেই প্রকাশিত হয়েছে বুথফেরত জরিপগুলো। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পূর্বাভাস- তৃতীয়বারের মতো নবান্নে যাচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেস। বলা হচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলটি অনায়াসে পেয়েই যাবে সরকার গঠনের ‘ম্যাজিক ফিগার’।
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার নির্বাচনে মোট আসন ২৯৪টি। সমশেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুরে দুটি আসন করোনা আক্রান্ত হয়ে দুই প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে ওই দুই আসনে ভোট ১৬ মে। যে দল বা জোট ‘ম্যাজিক ফিগার’ ১৪৮টি আসন পাবে সরকার গঠন করবে তারাই।
বাংলাভাষী রাজ্যটিতে জিততে চেষ্টার কোনো কমতি রাখেনি সর্বভারতীয় ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। নির্বাচন উপলক্ষে করোনার মধ্যেও কয়েক দফা রাজ্যটি সফর করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে মোদির বাংলাদেশে সফরের নেপথ্যেও পশ্চিমবঙ্গের ভোটের রাজনীতিই উদ্দেশ্য ছিল বলে মনে করেন অনেকে। ওই সফরে মোদি গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দি সফরে যান। সেখানে ‘মতুয়া’ সম্প্রদায়ের তীর্থস্থানে পূজা দেন তিনি। এ অঞ্চল থেকে ছড়িয়ে পড়া ‘মতুয়া’ নামে একটি হিন্দু সম্প্রদায় পশ্চিমবঙ্গে বড় ভোট ব্যাংক, যারা তৃণমূলে ভোট দিয়ে থাকে বলে মনে করা হয়। বিশ্লেষকদের মতে, সেই ভোট বিজেপির ঘরে নিয়ে আসাই লক্ষ্য ছিল মোদির।
আট ধাপের প্রতিটি ধাপের ভোট ঘিরেই কম-বেশি সহিংসতা ছড়িয়েছে। বোমা, গুলির ঘটনা ঘটেছে। হতাহত হয়েছেন অনেকে। এসবের দায় বিজেপি-তৃণমূল একে-অপরের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করেছে।
এসব সহিংসতার কেন্দ্রে ছিল তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি। একে-অপরকে নিয়ে কটাক্ষমূলক ও উত্তেজক বক্তব্য দিয়েছেন তারা। আপত্তিকর মন্তব্যের জন্য প্রচারণায় ২৪ ঘণ্টার জন্য নিষিদ্ধও হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে যখন গোটা ভারতের অবস্থা নাকাল হলেও নির্বাচন উপলক্ষে বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান ছিল পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিকদের মধ্যে। করোনার বিস্তারের মধ্যেও বিশাল আয়োজনে মিছিল, সমাবেশ করেছে বিজেপি, তৃণমূলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো।
কিছুটা ব্যতিক্রম ছিল কংগ্রেস। করোনার মধ্যে ভোট ঘিরে পশ্চিমবঙ্গ সফরে আসেননি রাহুল গান্ধী ও পিয়াংকা গান্ধীসহ দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।
বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গের অষ্টম ও শেষ দফার ভোট হয়েছে। এদিন ভোট হয় চার জেলায় ৩৫টি আসনে। শেষ ধাপেও বিভিন্ন জায়গায় দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।
ভোট শেষ হতেই প্রকাশ করা হয় বুথফেরত জরিপগুলোর ফল। বেশির ভাগ জরিপেই তৃণমূলের জয়ের সম্ভাবনা বেশি।
এপিবি-আনন্দ বুথফেরত জরিপ বলছে, ৪২ শতাংশ ভোট পেয়ে ক্ষমতা ধরে রাখবে তৃণমূল কংগ্রেস। দলটি আসন পেতে পারে ১৫২ থেকে ১৫৪টি। বিজেপির ঘরে যেতে পারে ১০৯ থেকে ১২১টি আসন। আর বাম-কংগ্রেস জোট পেতে পারে ১৪ থেকে ২৫টি আসন।
এই জরিপ ঠিক থাকলে এককভাবেই তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে পারবে তৃণমূল।
একই আভাস এনডিটিভির বুথফেরত জরিপেও। তাদের হিসাবে মমতার ঘাসফুল মার্কা ২৯৪টি আসনের মধ্যে পেতে পারে ১৫৬টি আসন। আর পদ্মফুল মার্কা বিজেপি পেতে পারে ১২১টি আসন। ১৭টি আসন যেতে পারে অন্যদের ঘরে।
মমতার অনায়াস জয়ের কথা বলছে টাইমস নাউয়ের জরিপও। এতে দেখা যাচ্ছে, মমতা পাচ্ছেন ১৫৮টি আসন, আর মোদির বিজেপি পেতে পারেন ১১৫টি আসন। অন্যদের ঘরে যেতে পারে ২১টি আসন।
‘অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়া’ এর জরিপে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস দেয়া হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে বিজেপি পেতে পারে ১৩৪ থেকে ১৬০টি আসন। তৃণমূল পেতে পারে ১৩০ থেকে ১৫৬টি আসন। অন্যান্য দলের ঘরে যেতে পারে তিনটি আসন।
মমতার জয়জয়কারের কথা বলছে ‘গ্রাউন্ড জিরো রিসার্চ’। তাদের হিসাবে তৃণমূল পেতে পারে ১৫৪ থেকে ১৮৬টি। বিজেপি পেতে পারে ৯৬ থেকে ১২৪টি আসন। বামসহ অন্যরা পেতে পারে ছয়টি থেকে ১৪টি আসন।
পশ্চিমবঙ্গে বামদের আধিপত্য গুঁড়িয়ে ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসে মমতার তৃণমূল কংগ্রেস। ২০১৬ সালেও নির্বাচনেও নিরঙ্কুশ জয় পায় দলটি। সেবার ২৯৪ আসনের মধ্যে তৃণমূল পায় ২১১টি আসন। কংগ্রেস জিতে ৪৪টি আসন; বাম ফ্রন্ট ৩২টি আসন।
আর বিজেপি পায় মাত্র তিনটি আসন। ওই নির্বাচনের পর থেকেই এই রাজ্যে শক্ত ঘাঁটি স্থাপনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রের ক্ষমতায় থাকা নরেন্দ্র মোদির দলটি। বুথফেরত জরিপ বলছে, এই আশা পূর্ণ হবে না দলটির। ক্ষমতায় থেকে যাবেন ‘দিদি’।
আরও পড়ুন:কমনওয়েলথ মহাসচিব শার্লি আয়র্কর বোচওয়ে বলেছেন, আগামী বছরের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক সংস্কারে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে আগ্রহী সংস্থাটি।
গতকাল লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বোচওয়ে বলেন, 'বাংলাদেশ যদি চায়, বিশেষ করে সাংবিধানিক সংস্কারের জন্য, তাহলে আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।'
বোচওয়ে বলেন, গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে সহায়তা করা আগামী পাঁচ বছরের জন্য কমনওয়েলথের অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার।
তিনি আরও জানান, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সংগ্রামে সহায়তা করাও সংগঠনের অগ্রাধিকারভিত্তিক লক্ষ্য।
কমনওয়েলথ ২.৭ বিলিয়ন জনগণের প্ল্যাটফর্ম উল্লেখ করে ঘানার এই নাগরিক বলেন, বর্তমানে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৮৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং আগামী কয়েক বছরে তা কমপক্ষে ১ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি বলেন, কমনওয়েলথের অনেক সদস্য রাষ্ট্র জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এবং এর মধ্যে অনেক দেশ আকারে অত্যন্ত ছোট।
'আমরা তাদের জলবায়ু অর্থায়নে প্রবেশাধিকার পেতে সহায়তা করার চেষ্টা করব,' তিনি বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস কমনওয়েলথ মহাসচিবকে ক্রীড়া খাতে সম্ভাবনা অনুসন্ধান এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে তরুণদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর আহ্বান জানান।
'ক্রীড়া শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, এটি একটি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিও। আমরা ক্রীড়াবিদদের উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য উৎসাহ দিচ্ছি। কমনওয়েলথের স্মরণীয় হয়ে ওঠার জন্য ক্রীড়া হতে পারে একটি ভালো মাধ্যম,' বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
কমনওয়েলথ মহাসচিব জানান, চলতি মাসে তারা ঢাকায় একটি যুব প্রোগ্রাম আয়োজন করতে যাচ্ছেন।
তিনি আরো জানান, কমনওয়েলথের ১.৫ বিলিয়ন জনগণ তরুণ এবং তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত করার জন্য তারা কাজ করছেন।
তিনি জানান, তারা কমনওয়েলথ বৃত্তিগুলো পুনর্গঠনের পরিকল্পনাও করছেন, একটি ক্ষেত্র যা প্রধান উপদেষ্টা গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
সাক্ষাৎকালে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ এবং যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা-রাজশাহী রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ জানানো হয়, রাজশাহীর চারঘাটের কাছে ‘নন্দনগাছি’ স্টেশনে আন্ত:নগর ট্রেনের যাত্রাবিরতির দাবিতে করা রেলপথ অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে ঢাকা-রাজশাহী রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার চন্দনা নদী থেকে মো. আসলাম প্রামানিক (৪২) নামে এক ইজিবাইক চালকের মরদেহ উদ্ধার করেছে কালুখালী থানা পুলিশ।
বুধবার (১১ জুন) সকাল ৭টার দিকে উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের চন্দনা ব্রিজের নিচ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত আসলাম শেখ পাংশা উপজেলার চরলক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং পিয়ার আলী প্রামানিকের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আসলাম শেখ গত মঙ্গলবার ইজিবাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। রাত পর্যন্ত তিনি আর বাড়িতে ফেরেননি। বুধবার সকালে স্থানীয়রা চন্দনা ব্রিজের নিচে একটি মরদেহ দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। পরবর্তীতে মরদেহটি আসলাম শেখের বলে শনাক্ত করেন।
এ বিষয়ে রাজবাড়ীর সহকারী পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল) দেবব্রত সরকার জানান, “প্রথমে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। পরে পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি, ইজিবাইক ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে আসলাম শেখকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।”
পুলিশ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে এবং প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত পাচারকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং তাদের পাচার করা অবৈধ অর্থ বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে জরুরি ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তিনটি দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা— ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), স্পটলাইট অন করাপশন এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-ইউকে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর উপলক্ষে মঙ্গলবার (১০ জুন) এক যৌথ বিবৃতিতে এই আহ্বান জানায় সংস্থাগুলো।
যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত সন্দেহভাজন অর্থ পাচারকারী বাংলাদেশি অলিগার্ক, যাদের দুর্নীতি ও চৌর্যবৃত্তির সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহের যথেষ্ট কারণ রয়েছে, তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং যুক্তরাজ্যে পাচার হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধারে দেশটির আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর প্রচেষ্টা জোরদার করতে দেশটির সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাগুলো।
এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও জবাবদিহিমূলক সুশাসনের পথে অগ্রযাত্রার অভূতপূর্ব সম্ভাবনার বর্তমান সুযোগের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের লক্ষ্যে যুক্তরাজ্য সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে এগিয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্রসংস্কারের চলমান উদ্যোগ, বিশেষ করে দুর্নীতির কার্যকর নিয়ন্ত্রণের অন্যতম ক্ষেত্র হিসেবে পাচার হওয়া সম্পদ বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দিতে যুক্তরাজ্যকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে এমন জোরালো বার্তা দিতে হবে যে, চূড়ান্ত বিবেচনায় অর্থপাচারকারীদেরকে শুধু উৎস হিসেবে বাংলাদেশই নয়, গন্তব্য দেশ যুক্তরাজ্যেও কার্যকরভাবে জবাবদিহি করতে হয়।’
স্পটলাইট অন করাপশনের নির্বাহী পরিচালক সুসান হাওলি বলেন, ‘সময়ের অপচয় না করে তাৎক্ষণিকভাবে যুক্তরাজ্য সরকারের উচিত বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ জব্দের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। একইসঙ্গে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ ও অর্থ পুনরুদ্ধারে সংশ্লিষ্ট আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে।’
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকের পলিসি ডিরেক্টর ডানকান হেমস বলেন, ‘অর্থপাচারের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্য সরকার যে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, তার প্রতিফলন ঘটাতে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজনদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও চৌর্যবৃত্তির মাধ্যমে অর্জিত (বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত) যুক্তরাজ্যে ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ড সম্পদের যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, যথাযথভাবে অনুসন্ধান করে যুক্তরাজ্য সরকারকে তা জব্দ করতে হবে।’
তার আহ্বান, ‘ইউকে সরকারের প্রতিশ্রুতি যেন শুধু কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পুনর্যাত্রার প্রচেষ্টায় কার্যকরভাবে সহযোগীর ভূমিকা পালন করতে হবে।’
উল্লেখ্য, দ্য অবজারভার ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকের তদন্তে যুক্তরাজ্যে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজনদের মালিকানাধীন কমপক্ষে ৪০ কোটি পাউন্ড মূল্যের সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) ইতিমধ্যে ৯ কোটি পাউন্ড মূল্যের সম্পদ জব্দ করেছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দুর্নীতি নির্মূল ও শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে পাচার হওয়া কোটি কোটি পাউন্ড পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যার আনুমানিক পরিমাণ প্রতি বছর ১১০০ কোটি পাউন্ড (১৬০০ কোটি ডলার)। বাংলাদেশ সরকারের গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির অনুমান অনুসারে, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বার্ষিক ১৬ বিলিয়ন ডলার হারে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার দেশ থেকে পাচার হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক ইউনুস এর আগে দুর্নীতি নির্মূল এবং শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তার সরকারের শ্বেতপত্র কমিশনের অনুমান অনুসারে, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে প্রতি বছর গড়ে ১১০০ কোটি পাউন্ড (১৬০০ কোটি ডলার) করে মোট ২৩৪ বিলিয়ন বা ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার শান্তি পুনরুদ্ধার ও জবাবদিহি নিশ্চিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অন্যদিকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রসচিব ‘অর্থ পাচারের স্বর্ণযুগ শেষ হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন।
মধুপুর বনাঞ্চলের কুল ঘেঁষা ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার সন্তোষপুর বনাঞ্চল। ৩ হাজার ৬৩৯ একর আয়তনের সংরক্ষিত এ বনে সামাজিক বানর, শাল,গজারী, রাবার,আগর বাগান ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর।
ঈদকে ঘিরে যান্ত্রিক জীবনের কর্মব্যস্ততার ফাঁকে কুরবানি ঈদের তৃতীয় দিনেও আনন্দ উপভোগ করতে সন্তোষপুর বনাঞ্চলে দেখা গেছে হাজারো মানুষের উচ্ছ্বাস। ভ্যাপসা গরম কিংবা তপ্ত রোদের তীব্রতাও যেনো থামাতে পারেনি তাদের এই আনন্দযাত্রা।
মঙ্গলবার (১০ জুন) সরেজমিনে সন্তোষপুর শাল, গজারি, রাবার ও আগর বাগানে দেখা গেছে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। আগত পর্যটকরা খাবার ছিটিয়ে বানরকে কাছে ভিড়ানোর চেষ্টা করছেন। পরে তা আবার ক্যামেরায় বন্দি করে নিচ্ছেন। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেশের নানা প্রান্তের বিনোদন প্রেমী লোকজন পরিবার-
পরিজন ও প্রিয় মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আনন্দে মেতে উঠছেন। দর্শনার্থীদের এ সমাগমকে কেন্দ্র করে ফরেস্ট বিট অফিস সংলগ্ন মাঠে ভ্রাম্যমান খাবার ও বাচ্চাদের খেলাধূলার দোকানের পসরা বসিয়েছে দোকানিরা। একই অবস্থা উপজেলার পদ্মবিল খ্যাত বড়বিলা ও আলাদিনস পার্কের।
স্থানীয় হেলাল মিয়া ও আইনুদ্দিন বলেন, সন্তোষপুর রীতিমতো ভিড় জমাচ্ছেন পর্যটকরা। ঈদের ছুটিতে প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে ঈদের দিন থেকে এখন পর্যন্ত দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছে । এতে করে বনে থাকা বানরের খাদ্য ঘাটতিও পূর্ণ হচ্ছে।
রাজধানীর উত্তরা ও শেরপুরের ঝিনাইগাতী থেকে ঘুরতে আসা রাহিম, শফিকুল ইসলামসহ একাধিক দর্শনার্থীদের দাবি সন্তোষপুর বনে প্রবেশের কাচা রাস্তাঘাটগুলো সংস্কার ও স্পটটিতে পর্যটকদের বসার ব্যবস্থা করা হলে এ পর্যটন স্পটটি আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।
উর্মি রানী জানান, প্রথমবারের মতো সন্তোষপুরে ঘুরতে এসেছি। এখানকার সামাজিক বানরের দল ও বনের সবুজায়ন দেখে আমি মুগ্ধ। এখানে গণশৌচাগার ও বসার নির্দিষ্ট জায়গার ব্যবস্থা থাকলে আরও অনেক সুন্দর হতো।
শিল্পী আক্তার জানান, ঈদের মধ্যে বাচ্চাদের নিয়ে এমন প্রাকৃতিক জায়গাগুলোতে ঘুরতে ফিরতে পেরে বেশ ভালোই লেগেছে। এখানে না আসলে এ সৌন্দর্য উপভোগ করার শান্তি উপলব্ধি করতে পারতাম না। রাস্তার অবস্থা ভালো হলে লোকজনের উপস্থিতি আরও বাড়বে। এতে করে এখানকার পরিবেশও উন্নত হবে। তাই সরকারের নিকট রাস্তা সংস্কার ও বসার ছাউনী তৈরীর দাবি জানান তিনি।
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সোমবার (৯ জুন) সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশে কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি। এ সময়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৮ জন।
মঙ্গলবার (১০ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ভর্তি হয়েছেন ৩৮ জন। নতুন আক্রান্তের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৩ জন। আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ২৫ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, চলতি বছর আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৩ দশমিক ৫ শতাংশ নারী।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৬ মে পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৫ হাজার ১৫ জন। এর মধ্যে ৫৯ দশমিক ৭ শতাংশ পুরুষ এবং ৪০ দশমিক ৩ শতাংশ নারী।
মেহেরপুর মুজিবনগরে আবারো নারী পুরুষ শিশুসহ ১২ জনকে পুশ ইন করলো ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ।
আজ মঙ্গলবার ভোররাতে মুজিবনগর উপজেলার আনন্দবাস সীমান্ত পিলার ১০১ কাগমারী মাঠ দিয়ে তাদেরকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দেয় বিএসএফ।
তারা সীমান্ত পার হয়ে আসলে আনন্দবাস বিওপি ক্যাম্পের টহলরত বিজিবি সদস্যরা আনন্দবাস মাঠ থেকে তাদের আটক করে।
পরে তাদের মুজিবনগর থানায় হস্তান্তর করা হলে পুলিশ তাদের থানা হেফাজতে নেই।
আটকৃত হল
১। মোঃ জাহাঙ্গীর আলম (৪২), পিতা- মৃত রহমত আলী, সাং- ফুলমতি, ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম।
২। মোছাঃ শাহাজাদী খাতুন (৩০), পিতাঃ মৃত শাফেলা ব্যাপারী, সাং- চৌধুরীটারি, ফুলবাড়ি, কুড়িগ্রাম।
৩। মোঃ মিরাজ আলী (১৫), পিতা- মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, সাং- ফুলমতি, ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম।
৪। মোঃ হাছেন আলী(২০), পিতা- আব্দুল মজিদ, সাং- কবুরমাবুদ, ফুলবাড়ি, কুড়িগ্রাম।
৫। মোহাঃ জান্নাতী (১৮), পিতা- মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, সাং- ফুলমতি, ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম।
৬। মোছাঃ হাসিনা খাতুন (১০ দিন), পিতা- মোঃ হাছেন আলী, সাং- কবুরমাবুদ, ফুলবাড়ি, কুড়িগ্রাম।
৭। মোছাঃ লাভলী খাতুন (৪২), স্বামী- আব্দুল মজিদ, সাং- কবুরমাবুদ, ফুলবাড়ি, কুড়িগ্রাম।
৮। মোঃ বাবুল হোসেন (২৪), পিতা- আব্দুল মজিদ, সাং- কবুরমাবুদ, ফুলবাড়ি, কুড়িগ্রাম।
৯। মোছাঃ জেসমিন খাতুন (২০), স্বামী- মোঃ বাবুল হোসেন, সাং- কবুরমাবুদ, ফুলবাড়ি, কুড়িগ্রাম।
১০। মোঃ জাহিদ হোসেন (০৩), পিতা- মোঃ বাবুল হোসেন, সাং- কবুরমাবুদ, ফুলবাড়ি, কুড়িগ্রাম।
১১। মোঃ জাকের হোসেন (০১), পিতা- মোঃ বাবুল হোসেন, সাং- কবুরমাবুদ, ফুলবাড়ি, কুড়িগ্রাম।
১২। মোঃ ইয়াছিন হোসেন (২৫), পিতা- মৃত আজিজুল, সাং- আর্ডিয়েন্স, কুড়িগ্রাম সদর, কুড়িগ্রাম।
অভ্যন্তরে ঠেলে দেওয়া মানুষদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা বাংলাদেশের নাগরিক দীর্ঘ ১২/১৪ বছর আগে দালালের মাধ্যমে কাশিয়াবাড়ি সীমান্ত দিয়ে কাজের সন্ধানে তারা অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে।
ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে পরিবার নিয়ে বসবাস করত এবং সেখানে বিভিন্ন ইট ভাটায় কাজ করে জীবন জাপন করে আসছিলো।
হঠাৎ গত ছয়-সাত দিন আগে তাদেরকে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের পুলিশ বিভিন্ন এলাকার ইটভাটা থেকে আটক করে গাড়ি করে নিয়ে এসে সোমবার ভোরবেলায় সীমান্ত দিয়ে তাদেরকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দেওয়া হয়।
পুলিশ হেফাজতে নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে মুজিবনগর থানার তদন্ত অফিসার জাকির হোসেন জানান, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিএফএস তাদেরকে সীমান্তের কাঁটাতার পার করে দেয় পরে বিজিবি তাদের আটক করে মুজিবনগর থানায় হস্তান্তর করা হয়।
তারা এখন থানা হেফাজতে আছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য