ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি দেশটিতে করোনা পরিস্থিতির ভয়ংকর অবস্থা মোকাবিলায় বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে শুক্রবার এক জরুরি বৈঠক করেছেন।
মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক হলেও সেখানে ডাক পাননি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাকে বৈঠক ডাকা হয়নি। ডাকলে যেতাম। বাংলা দখল করতে দেশকে করোনা বিপদে ফেলছে বিজেপি।
‘বাংলাকে ভাতে, পাতে মারতে চায়। দেশে ওষুধের হাহাকার, অন্য দেশে ওষুধ পাঠাচ্ছে। ভ্যাকসিন নিয়ে কেন্দ্র বৈষম্যমূলক আচরণ করছে।’
মমতা বলেন, বাংলার অক্সিজেন সরবরাহকারীদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে। বাংলার অক্সিজেন সেলকে উত্তর প্রদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
মমতার এমন অভিযোগকে বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য ভিত্তিহীন দাবি করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর ডাকা বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রীকে হেয় করার চেষ্টা বিজেপি কখনও করেনি। তৃণমূল করোনা নিয়ে রাজনীতি করছে। আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন মমতা।
করোনা পরিস্থিতির অবনতিতে রাজ্যে প্রতিদিন ৪৫০ মেট্রিক টন অক্সিজেন প্রয়োজন।
রাজ্যজুড়ে দিকে দিকে অক্সিজেনের জন্য হাহাকারের মাঝে ‘বাড়তি অক্সিজেন চাই’ মর্মে রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর কেন্দ্রের স্বাস্থ্য দপ্তরকে চিঠি দিয়েছে।
রাজ্যের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন বাইরে না পাঠানোর আরজি জানানো হয়েছে সেই চিঠিতে।
এদিকে মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠন করেছে রাজ্য সরকার। শুক্রবার এক ভিডিও কনফারেন্সে জেলার জেলা শাসকদের সঙ্গে বৈঠকে স্বরাষ্ট্রসচিব করোনা নিয়ে জরুরি কিছু নির্দেশ দিয়েছেন।
অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে শেষ দুই দফা ভোটের আগেই অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে জোর দেয়ার কথা বলা হয়েছে। জোর দেয়া হয়েছে কোভিড সতর্কতায় ও বুথের নিরাপত্তায়।
শুক্রবারও পশ্চিমবঙ্গে অনেক স্থানে ভোট-পরবর্তী সহিংসতা হয়েছে। বেলগাছিয়া মেট্রো স্টেশনের কাছে বিজেপি নেতা অর্জুন সিংয়ের সভাকে ঘিরে সংঘর্ষ হয়েছে। সেখানে গোলাগুলিও হয়েছে।
করোনাভাইরাসের এমন পরিস্থিতিতে কেন সভা, প্রশ্ন তুলে অর্জুন সিংকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ চলে। একপর্যায়ে সেখানে চলে ধস্তাধস্তি, সেটা গড়ায় সংঘর্ষে।
অর্জুন সিংয়ের অভিযোগ, তৃণমূলের দষ্কৃতকারীরা তার নিরাপত্তারক্ষীর অস্ত্র ছিনিয়ে নিতে গেলে আত্মরক্ষার্থে গুলি চালিয়েছে তারা।
কমিশন কোথায় গুলি চলেছে, কখন গুলি চলেছে, কী কারণে গুলি চলেছে জানতে প্রতিবেদন চেয়ে পাঠিয়েছে।
এ ঘটনার পর তৃণমূলের নেতা অতীন ঘোষ বলেছেন, এটা সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ।
আরও পড়ুন:ঈদের ছুটিতে সিলেটে বেড়াতে এসে হেনস্তার শিকার হয়েছেন পর্যটকরা। একদিনের ব্যবধানে জাফলংয়ে পর্যটকদের উপর হামলা ও কোম্পানীগঞ্জে পর্যটনকেন্দ্র থেকে পর্যটকদের বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। দুটি ক্ষেত্রেই পর্যটকদের বিরুদ্ধে অশ্লীলতা ও পরিবেশ নষ্টের অভিযোগ তোলা হয়েছে। যদিও স্থানীয় একটি অংশের অভিযোগ, নির্বিঘ্নে চোরাচালান ও পাথর লুট করতেই পর্যটকদের বাধা দেয়া হচ্ছে। পর্যটক সমাগম বাড়লে লুটপাট ও চোরাকারবারে সমস্যা হয়। তাই পর্যটকদের আসতে বাধা দেয়া হচ্ছে বলে দাবি তাদের।
অশ্লীলতার অভিযোগ এনে সোমবার রাতে মৌলভীবাজারের রাজনগরে “রাজনগর রিসোর্ট এন্ড কফি হাউজে” তালা দিয়েছে স্থানীয় একদল লোক। এসময় স্থানীয় থানার পুলিশ সদস্যদেরও ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। সিলেটে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দুটি স্থান জাফলং ও কোম্পানীগঞ্জ। সবসময়ই এই দুই এলাকায় পর্যটকদের ভিড় থাকে। ঈদের মতো বড় ছুটিতে ভিড় কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সীমান্তবর্তী এই দুই এলাকা দিয়েই ভারত থেকে দেদারছে চোরাই পণ্য আসে। এছাড়া এসব এলাকার পাথুরে নদী ও ছড়া থেকে পাথর লুটপাটও নিত্তকার ঘটনা। গত বছরের ৫ আগস্টের পর চোরাচালান ও পাথর লুট অনেকটা বেড়ে গেছে। প্রশাসনও লুটপাটকারী ও চোরাকারবারীদের ঠেকাতে পারছে না।
জানা যায়, ঈদের পরদিন রোববার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর রনিখাই ইউনিয়নের পাহাড় থেকে নেমে আসা পাথুরে ছড়া উৎমাছড়া পর্যটনকেন্দ্রে ভিড় করেন অনেক পর্যটক। বিকেলে সেখানে কিছু সংখ্যক মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও স্থানীয় কিছু লোক জড়ো হয়ে পর্যটকদের বের করে দেয়। এ রকম একটি ভিডিও সোমবার রাত থেকে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। জড়ো হওয়া যুবকরা পর্যটকদের বিরুদ্ধে অশ্লীলতা, মদ্যপান ও এলাকার পরিবেশ নষ্টের অভিযোগ করেন।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পর্যটকদের বের করে দেয়ার একটি ভিডিওতে এক যুবককে বলতে শোনা যায়, 'এই এলাকা আলিমদের এলাকা, দ্বীনদার এলাকা। কিন্তু এইখানে অনেকে অনেক পরিবেশে থেকে আসে। এসে মদ খায়, আরও অনেককিছু করে, এতে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয়। তাই আমাদের আবেদন, আপনারা এখানে আর আসবেন না। তাছাড়া এটি পর্যটনভুক্ত এলাকাও নয়'।
ভিডিওতে আরও বলতে শোনা যায়, ‘এই এলাকার আলেম-ওলামা ও স্থানীয়রা সিদ্ধান্ত নিয়েছে উৎমাছড়াকে পর্যটন করা যাবে না। তাই আপনারা যারা এখানে এসেছেন দয়া করে এখান থেকে চলে যান। আপনারা এখানে থেকে এখানের পরিবেশ নষ্ট করবেন না। এই এলাকার পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য আমরা এখানে পর্যটকদের আসতে নিরুৎসাহিত করছি আজকের পর আপনারা এখানে আর কোনদিন আসবেন না’।
পর্যটকদের বের করে দেয়ার এই ভিডিও যুক্ত করে পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা), সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম ফেসবুকে লিখেন, ‘একদিকে চলবে পর্যটক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা অন্যদিকে পর্যটনে বাঁধা! দেশের ভেতরে সরকার ঘোষিত সংরক্ষিত এলাকা ও ব্যক্তি বা গোষ্ঠী মালিকানাধীন জায়গা ব্যতীত কোথাও জনসাধারণের প্রবেশে বাঁধা দেয়া মানুষের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ। মানুষের চলাচলে বাঁধা প্রদান ও হুমকি প্রদান দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু সিলেটে এই অপরাধ ইতিপূর্বেও ঘটেছে।
কিম লিখেন, 'বছর কয়েক পূর্বে গোয়াইনঘাট উপজেলায় এক ঈদে মায়াবন নামে পরিচিত যুগীরকান্দি জলারবনে পর্যটকদের উপর হামলা করা হয়েছিল। এরপর থেকে ওই বনে কোন পর্যটক আর পা রাখেনি। স্থানীয় মাদ্রাসা ওই জলার বনের মাছ ভোগ করে বলে এখানে পর্যটক আসুক তা চায় না। অশ্লীলতার দোহাই দিয়ে যুগীরকান্দি বন বা মায়াবন সবার দৃষ্টির আড়ালে নিয়ে যাওয়া হয়। উতমাছড়ার পাথর লুটে ওই মাদ্রাসার সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা তা জানা প্রয়োজন।'
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ বলেন, ‘উৎমাছড়ায় বেড়াতে যাওয়া জন্য নির্দিষ্ট কিংবা উপযুক্ত রাস্তা নেই। এ জন্য পর্যটকেরা স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িঘর মাড়িয়ে যাতায়াত করেন। এতে তারা অসুবিধায় পড়েন। বৈঠকে এমন দাবি করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই এলাকায় মাদক সেবন ও অশ্লীলতা হয়, এমনটিও দাবি করা হয়েছে’।
উৎমাছড়ায় পর্যটকদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, ‘এ অঞ্চলে এমন ঘটনা আগে কখনোই ঘটেনি। বিষয়টি ইউএনওকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। তিনি তদন্ত করে দেখছেন। ইউএনও জানার চেষ্টা করছেন, বিষয়টি কী?’
এদিকে, সিলেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে পর্যটকদের উপর হামলা চালিয়েছে স্থানীয় কিছু লোক। হামলাকারীরা চোরাকারবারের সাথে সম্পৃক্ত বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। সোমবার বিকেলে জাফলং বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কবির হোসেন বলেন, স্থানীয় বখাটেরা পর্যটকদের ওপর হামলা করেছে। পরে সাংবাদিক ও ইউপি সদস্য মিলে ঘটনাস্থলেই বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রতন কুমার অধিকারী বলেন, ‘তুচ্ছ বিষয় নিয়ে পর্যটকদের সঙ্গে ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছিল। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গেই সমাধান হয়ে গেছে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় অনেকের ভুল ধারণা হয়েছে।’
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের সামরিক অস্ত্র ১১ টি অবিস্ফোরিত মর্টার শেল উদ্ধারের পর বিস্ফোরিত করানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত তিনঘণ্টা উপজেলার পার্শ্ববর্তী নলিন এলাকায় যমুনা নদীতে মর্টার শেলগুলো বিস্ফোরিত করে সেনাবাহিনীর একটি টিম।
এসময় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তারিকুল ইসলাম, ভূঞাপুর থানা অফিসরা ইনচার্জ (ওসি) একেএম রেজাউল করিম ও সেনাবাহিনীর সদস্যসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
ওসি একেএম রেজাউল করিম জানান, বুধবার রাতে উপজেলার পাটিতাপাড়া এলাকার যমুনা নদীর তীর থেকে অবিস্ফোরিত ১১ টা মর্টার শেল উদ্ধার করে সেনাক্যাম্পে প্রেরণ করা হয়েছিল। পরে সেগুলো আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টা থেকে বেলা ১ টা পর্যন্ত নলিন এলাকার যমুনা নদীতে বিস্ফোরিত করা হয়েছে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তারিকুল ইসলাম জানান, ১১ টি মর্টার শেল বিস্ফোরিত করা হয়েছে।
গত বুধবার ১১ জুন সন্ধ্যায় উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের পাটিতাপাড়ার শাহাদত নামে এক ব্যক্তি যমুনা নদীতে পাড়ে মাছ ধরতে গিয়ে মর্টার শেলগুলো দেখতে পান। হঠাৎ এসব বস্তু দেখে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
এরপর আশপাশের লোকজনকে বিষয়টি জানালে মর্টার শেলগুলো এক নজর দেখতে এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে ভিড় জমায় এবং পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মর্টার শেলগুলো উদ্ধার করে।
এলাকাবাসীর ধারণা, ১৯৭১ সালে পাটিতাপাড়া ও মাটিকাটা যমুনা নদীর তীরে পাকস্তানি বাহিনীর একটি যুদ্ধ জাহাজ ধ্বংস হয়েছিল। উদ্ধারকৃত মর্টার শেলগুলো মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের সামরিক অস্ত্র। যমুনা নদী পাড়ে মরিচা ধরা অবস্থায় মর্টার শেলগুলো একত্রে পড়ে ছিল। কিছু শেলের গায়ে জং ধরে গেছে।
আগামী শনিবার (১৪ জুন) থেকে প্রধান বিচারপতির বাসভবনসহ হাইকোর্ট এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাদ আলী স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জনশৃঙ্খলা রক্ষায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স (অর্ডিন্যান্স নং-III/৭৬) এর ২৯ ধারায় আগামী শনিবার (১৪ জুন) থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত প্রধান বিচারপতির সরকারি বাসভবন, বিচারপতি ভবন, জাজেস কমপ্লেক্স, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের প্রধান গেট, মাজার গেট, জামে মসজিদ গেট, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১ ও ২ এর প্রবেশ গেট, বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট ভবনের সম্মুখে সকল প্রকার সভা, সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ প্রদর্শন ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হলো।
এতে, বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায় ও প্রতিবাদ কর্মসূচির নামে যখন-তখন সড়ক অবরোধ করে যান চলাচলে বিঘ্ন না ঘটানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করা হয়।
এর আগে, গত ২৬ মে সচিবালয় ও যমুনা-সংলগ্ন এলাকায় সভা-সমাবেশে নিষিদ্ধ করেছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
নাফ নদীর ভাঙন যেন থামছেই না। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের জালিয়া পাড়ায় প্রতিদিনই নদীর গর্ভে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, ভেঙে যাচ্ছে স্বপ্ন। কিছুদিন আগেও যেখানে ছিল ঈদের প্রস্তুতি, হাসি-আনন্দে মুখর পরিবার—আজ সেখানে কান্না আর হাহাকার। প্রবল জোয়ার ও টানা বৃষ্টির তোড়ে শত শত পরিবার এখন আশ্রয়হীন, চরম মানবিক বিপর্যয়ের মুখে। বসতভিটা হারিয়ে কেউ খোলা আকাশের নিচে, কেউ গাছতলায় কিংবা নদীর পাড়েই মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজছে।
‘নাফের পানি ও তুফানে আমার ঘরবাড়ি ভেসে গেছে। ঈদের দিনেও কোরবানি দিতে পারিনি, ছেলেমেয়েদের নতুন জামা কিনতে পারিনি। এর চেয়ে বড় কষ্ট কিছু হতে পারে না।’-বলেন ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দা আবুল আলী। আলোকিত শহরের ঈদ আনন্দের বিপরীতে এই দ্বীপে নেই রান্নার হাঁড়ি, নেই নতুন জামার ঝলক, শুধু অসহায়ত্ব আর কান্নার সুর।
ভাঙনের মধ্যে দাঁড়িয়ে এক বৃদ্ধের আহাজারি
বৃদ্ধ আবুল আলী, কাঁপা গলায় হাতের ইশারায় দেখালেন যে জায়গাটিতে দাঁড়িয়ে আছেন, সেখানেই ছিল তার ছোট্ট ঘর। নাফের পানি একরাতে সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, ঘর, চুলা, শোবার জায়গা, কিছুই নাই আর। কতবার ঘর তুলুম? আমাদের দেখার কেউ নাই। বারবার আশার বাণী শুনিয়েছেন প্রশাসন। কেউ আজো কিছু দেয়নি। তবে কিছু করবে এমন আশায় আছি।’
ঈদের রান্নাও থেমে গেছে
বৃদ্ধা চলেমা খাতুন বলেন, ‘নাফের পানি চুলোতে ঢুকে ভেঙ্গে গেছে। এখনো রান্না করতে পারি না। ঈদের দিনেও ছেলে-মেয়েদের মুখে ভাত দিতে পারি নাই। নতুন কাপড় তো দূরের কথা। কোরবানিও করা সম্ভব হয় নাই। সাহায্য আসলেও তা আমরা পাই না।’
শুধু আবুল আলী বা চলেমা খাতুনই নন, এমন গল্প আজ জালিয়াপাড়ার শত শত পরিবারের। ঈদের সময় যখন দেশের অন্যপ্রান্তে আনন্দে মুখর প্রতিটি বাড়ি, তখন এই দ্বীপে ঈদ মানে কষ্ট, ভাঙা ঘর, খালি পেট, আর ভেজা চোখ।
আশ্বাস, প্রতিশ্রুতি—কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ নেই
ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, বহুবার প্রশাসনের লোকজন এসেছেন, ছবি তুলেছেন, কথা দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে কোনো সহায়তা তারা পাননি। ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন,
‘কেবল ছবি তুললে আর রিপোর্ট করলেই কি ঘর ফিরে পাই? আমরা তো বাস্তব সাহায্য চাই।’ এক দশকের বেশি সময় ধরে চলছে নদীভাঙনের আতঙ্ক। শাহপরীর দ্বীপে নাফ নদীর ভাঙন নতুন নয়। ২০১২ সালের ভয়াবহ সামুদ্রিক জোয়ারে এই দ্বীপের চারটি পাড়ার অনেক ঘরবাড়ি, মসজিদ, দোকান সাগরে বিলীন হয়ে যায়। নোনা পানি নষ্ট করে দেয় কৃষিজমি, নিশ্চিহ্ন হয় গ্রাম, গৃহহীন হয়ে পড়ে হাজারো মানুষ। কিন্তু এত বড় অভিজ্ঞতার পরও দীর্ঘমেয়াদি কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
২০২৫ সালের এই ঈদুল আজহার সময়, ইতিহাস যেন আবার নিজের পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছে—আর এই পুনরাবৃত্তি শুধু কষ্টের, শুধু কান্নার। ধ্বংসের চিত্র এখনো স্পষ্ট জালিয়াপাড়ার বিভিন্ন স্থানে এখনো পড়ে আছে ভাঙা কাঠামো, উপড়ে যাওয়া গাছের শিকড়, পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া ঘরের চিহ্ন। পথচারীদের চোখে-মুখে শোক, মুখে একটাই প্রশ্ন—‘এই ভাঙন কি আর থামবে না?’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন জানান, শাহপরীর দ্বীপের জালিয়া পাড়ায় যেসব বাংলাদেশি নাফ নদীর ভাঙনে বাস্তুচ্যুত হচ্ছে তাদের তালিকা করে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
দেশের রাজনীতি-সচেতন সবার দৃষ্টি এখন রাজধানী লন্ডনে। আগামীকাল শুক্রবার যুক্তরাজ্যে সফররত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে ভোটের দিনক্ষণ, সংস্কার, জুলাই সনদসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে কী বোঝাপড়া হয়, তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।
সংস্কার, নির্বাচনসহ চলমান রাজনৈতিক নানা ইস্যুতে বিএনপি ও অন্তর্বর্তী সরকারের চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মাঝে এমন একটি বৈঠক নিয়ে দেশের রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণিপশার মানুষের মধ্যে বেশ কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক এপ্রিলে ভোটের ঘোষণাকে বিএনপি মেনে নেয়নি। ফলে ভোটের সময় নিয়ে বিতর্ক এখনো মেটেনি। তবে এই বৈঠকের খবরে এসব বিষয় নিয়ে কয়েক মাস ধরে রাজনীতিতে যে অস্থিরতা বিরাজ করছিল, ভোটের সম্ভাব্য সময় ঘোষণায় সেটি আপাতত কমেছে।
গত সোমবার বিকালে চার দিনের সফরে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। লন্ডনে যে হোটেলে প্রধান উপদেষ্টা উঠেছেন সেখানেই তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। সুনির্দিষ্ট কোনো এজেন্ডা না থাকলেও ২ ঘণ্টার গুরুত্বপূর্ণ এ বৈঠকে সব বিষয়েই তাদের মধ্যে কথা হবে বলে জানা গেছে।
রাজনৈতিক মহল এই সাক্ষাতকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের সাক্ষাৎ ফলপ্রসূ হলে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার এবং জুলাই সনদসহ আরও অনেক বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপির যে দূরত্ব বা মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে, সেটা কমে আসতে পারে।
ঈদুল আজহার আগের দিন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে যেকোনো দিন জাতীয় নির্বাচন হতে পারে। বিএনপিসহ অনেক দল এ ‘সময়সীমা’ মেনে না নিলেও ভোটের সম্ভাব্য সময় ঘোষণাকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন রাজনৈতিক অঙ্গনের অনেকে। যদিও রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট অনেকে মনে করেন, রোজার আগে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভোটের সময় নির্ধারণ করতে পারলে রাজনৈতিক বোঝাপড়া আরও স্বস্তিদায়ক হতো।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই সাক্ষাৎ যাতে হয়, এ ব্যাপারে সর্বশেষ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও ভূমিকা রাখেন। পরে দুই পক্ষের ইচ্ছায়, বিশেষ করে সরকারের দিক থেকে বাড়তি আগ্রহে সাক্ষাতের সময় নির্ধারণ হয়। এ বিষয়ে গত সোমবার রাতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়। তারা এই সাক্ষাতকে দেশ ও জাতির ভবিষ্যতের জন্য হিতকর হবে বলে মনে করেন।
বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, এ ক্ষেত্রে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ভূমিকা রাখেন। খালেদা জিয়াকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে ৭ জুন রাতে তাঁর বাসভবনে যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। তখন তিনি জ্যেষ্ঠ নেতাদের কাছে জানতে চান, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে এত দূরত্ব তৈরি করা হলো কেন। তিনি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, এই সময়ে কোনো বিষয় নিয়ে রাজপথে যাওয়া ঠিক হবে না। যত সমস্যাই থাকুক, আলোচনায় বসে সমাধান করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্থায়ী কমিটির নেতাদের এই সাক্ষাতের পরদিন রোববার খালেদা জিয়া তার বড় ছেলে ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলেন। এরপরই সোমবার রাতে স্থায়ী কমিটির সভা হয়। এই সভা থেকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সৌজন্য সাক্ষাতকে স্বাগত জানানো হয়। বিএনপির নেতারা মনে করেন, এই সাক্ষাৎ বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট কাটাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ প্রস্তুত করতে সহায়ক হতে পারে।
এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দেশের রাজনৈতিক সংকট কাটাতে বৈঠকটি ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের এ বৈঠক অত্যন্ত বড় একটি ইভেন্ট, ‘মেজর পলিটিক্যাল ইভেন্ট’। এ সাক্ষাৎটি হলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে, নতুন ডাইমেনশন সৃষ্টি হতে পারে দেশের রাজনীতিতে। এ সময় তিনি খুব শিগগিরই তারেক রহমান দেশে ফিরবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়ে যেকোনো বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেলে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশন ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
শফিকুল আলম বলেন, ‘১৩ জুন শুক্রবার লন্ডনে অনুষ্ঠেয় ওই বৈঠকের নির্দিষ্ট কোনো এজেন্ডা (আলোচ্যসূচি) নেই। তিনি বলেন, ‘তারেক রহমান এই মুহূর্তে বাংলাদেশের বড় রাজনৈতিক দলের নেতা এবং প্রফেসর ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান। তারা যখন বসবেন, তখন বাংলাদেশের এখনকার যেকোনো বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। আলোচনায় বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী জাতীয় নির্বাচন, জুলাই চার্টার (জুলাই সনদ)—এগুলোর যেকোনো বিষয়ে আলাপ হতে পারে।’
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লন্ডনে অনুষ্ঠেয় বৈঠক প্রসঙ্গে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল বুধবার বলেন, ‘গোটা জাতি আজ লন্ডনের দিকে তাকিয়ে।’
বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি বলেন, ‘বিশ্বাস করি, এটি হবে ঐতিহাসিক বৈঠক এবং এ বৈঠকের মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে সুবাতাস বইবে।’
রিজভী বলেন, ইতোমধ্যে ডিসেম্বরে নির্বাচনের যৌক্তিকতা তুলে ধরেছে বিএনপি। যৌক্তিক সময়েই নির্বাচন হবে বলে জাতি প্রত্যাশা করে। আলোচনার মধ্য দিয়ে নির্বাচনসহ সব সমস্যার সমাধান সম্ভব।
ঈদ উপলক্ষে লম্বা ছুটিতে বেশ কিছুদিন ধরে একপ্রকার ফাঁকা হয়ে গেছে শহর ঢাকা। সড়কগুলোতে নেই যানবাহনের চাপ; স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতও বন্ধ; রাস্তায় লোকজনও হাতেগোনা। এই অবস্থায় গত কয়েকদিন বৃষ্টি কমে গেলেও রাজধানীর বাতাসের মানে খুব বেশি অবনতি হয়নি।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সকাল ১০টার দিকে ঢাকার বাতাসের একিউআই স্কোর ছিল মাত্র ৬৬। আর দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান আরও অবাক হওয়ার মতো। প্রতিনিয়ত বায়ুদূষণে শীর্ষ শহরগুলোর তালিকায় জায়গা করে নিলেও ঢাকার অবস্থান আজ ৫৫তম।
কণা দূষণের একিউআই মান যদি ০ থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকে, তবে তা ‘ভালো’ হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০-এর মধ্যে হলে সেটি ‘মাঝারি’। ঢাকার বাতাস আজ মাঝারি হলেও ‘ভালো’ থেকে খুব বেশি দূরে নয়।
এই সময়ে ৬৭ একিউআই স্কোর নিয়ে দূষিত শহরের তালিকার ৫২তম স্থানে ছিল স্পেনের বার্সেলোনা, ৫০তম স্থানে সুইজারল্যান্ডের বেয়ার্ন, ৬৮ স্কোর নিয়ে ৪৯তম স্থানে যুক্তরাষ্ট্রের সল্ট লেক সিটি, ৭০ ও ৭১ স্কোর নিয়ে ৪৪ ও ৪৩তম স্থানে নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটন ডিসি, ৭৩ স্কোর নিয়ে ৩৮তম স্থানে কানাডার টরেন্টো, ৮০ স্কোর নিয়ে ২৭তম দূষিত শহর শিকাগো, ৯৯ স্কোর নিয়ে ১৫তম স্থানে ইতালির রোম এবং ১২৮ স্কোর নিয়ে তালিকার সপ্তম স্থানে রয়েছে মিলান।
তবে ১৬৮ একিউইউ স্কোর নিয়ে এই সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর ছিল ভারতের দিল্লি। ১৬২, ১৫৬ ও ১৩৭ স্কোর নিয়ে এর পরের তিন দূষিত শহর যথাক্রমে ইরাকের বাগদাদ, পাকিস্তানের লাহোর ও সৌদি আরবের রিয়াদ।
একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ১৫০ হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ বলে গণ্য করা হয়। এই পর্যায়ে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-এর বেশি হলে তা ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশে একিউআই সূচক নির্ধারিত হয় পাঁচ ধরনের দূষণের ভিত্তিতে— বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও₂), কার্বন মনো-অক্সাইড (সিও), সালফার ডাই-অক্সাইড (এসও₂) ও ওজোন।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় ভুগছে। শীতকালে এখানকার বায়ুমান সাধারণত সবচেয়ে খারাপ থাকে, আর বর্ষাকালে তুলনামূলকভাবে উন্নত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট (সিওপিডি), ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এলাকায় ঢাকা থেকে সিলেট ছেড়ে আসা আন্তঃনগর জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে শাহিন মিয়া (৩০) নামে যুবকের এক পা ও বুবেক এক অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নিহত শাহিনের লাশের সাথে থাকা রাসেল মিয়া।
বুধবার (১১ জুন) বিকাল ৫ টার দিকে উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শাহিন মিয়া কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের আধকানী গ্রামের বাজিদ মিয়ার ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী আন্তঃনগর জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেন লাউয়াছড়া উদ্যান অতিক্রম করার সময় হঠাৎ ওই ব্যক্তি রেললাইনের উপর চলে আসেন। এ সময় তিনি ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
শাহিনের লাশের সাথে থাকা রাসেল মিয়া জানান, শাহিন লাউয়াছড়ায় ঘুরতে এসে ট্রেনের নিচে পড়ে গুরুত্বর আহত হয়। সেসময় আমার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের প্রধান ফটকের পাশে ছিলাম। অন্যদের সাথে আমিও তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু পথেই শাহিনের মৃত্যু হয়। তবে এ প্রতিবেদন লেখা অবস্থায় শাহিনের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
কমলগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত শামীম আকনজি বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বলেন, ঘটনার খবর পাওয়ার সাথে সাথেই ঘটনাস্থলে পুলিশের একটি টিম পাঠিয়েছি, তবে কিভাবে তিনি রেল লাইনে চলে আসেন, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মন্তব্য