পাকিস্তানের কোয়েটায় অল্পের জন্য শক্তিশালী বোমা হামলা থেকে রক্ষা পেয়েছেন দেশটিতে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত নং রং।
বেলুচিস্তান প্রদেশের রাজধানী নগরীর একমাত্র অভিজাত হোটেলটিতে বুধবার রাতে হামলার কিছু আগেই চেক-ইন করেন তিনি।
একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে নং রং হোটেলের বাইরে থাকা অবস্থায় হামলাটি হয় বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এআরওয়াই নিউজকে জানিয়েছেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ আহমেদ।
স্থানীয় সময় বুধবার রাত সোয়া ১০টার দিকে বহুজাতিক হোটেল চেইন সেরেনার গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় হয় এ হামলা। নিহত হন পুলিশ কর্মকর্তাসহ কমপক্ষে চারজন। আহত হয়েছেন আরও ১২ জন।
নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন পাকিস্তান তালেবান হামলার দায় স্বীকার করেছে। তারা জানিয়েছে, এটি আত্মঘাতী হামলা ছিল। যদিও হামলার কারণ জানায়নি।
চীনের রাষ্ট্রদূতসহ হোটেলটির সব অতিথিই নিরাপদে আছেন বলে নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ।
কুয়েটায় চার সদস্যের একটি চীনা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আছেন নং রং। হামলার আগে তিনি প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রী জাম কামালের সঙ্গেও বৈঠক করেন।
প্রাদেশিক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জিয়াউল্লাহ লাঙ্গো সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের পর নং রং-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার কোয়েটা সফর শেষ করে পূর্বনির্ধারিত সময়েই ইসলামাবাদে ফিরবেন রাষ্ট্রদূত।
প্রশ্ন উঠেছে, নং রংকে হত্যার উদ্দেশ্যেই এ হামলা হয়েছে কি না।
সন্ত্রাসী হামলা ধরে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে প্রশাসন। জানিয়েছে, গাড়িবোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হামলাটি হয়েছে। আত্মঘাতী হামলা হয়েছে কি না, নিজস্ব তদন্তে তা জানার চেষ্টা করছে গোয়েন্দারা।
চীনা রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিদলটিকে লক্ষ্য করে এ হামলা হয়েছে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে অতীতে বেশ কয়েকবার অঞ্চলটিতে পাকিস্তান তালেবান ও বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর আক্রোশের শিকার হয়েছেন চীনা নাগরিকরা।
গ্যাসসহ নানা খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদসমৃদ্ধ বেলুচিস্তান পাকিস্তানের অন্যতম দরিদ্র অঞ্চল। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে বাসিন্দাদের মধ্যে। অঞ্চলটিতে সক্রিয় সশস্ত্র বেশ কিছু সংগঠন।
বিশেষ করে সম্প্রতি চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের (সিপিইসি) মাধ্যমে অঞ্চলটিতে চীনের বিনিয়োগ ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্ষোভ আরও দানা বাঁধে। এতে বেলুচিস্তানের মানুষ কোনোভাবে উপকৃত হচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের। সিপিইসির নানান প্রকল্পে নিয়োগ পাওয়া বেশির ভাগ মানুষই ভিন্ন অঞ্চল বা দেশের বাসিন্দা।
সাড়ে ছয় হাজার কোটি ডলারের কর্মসূচি চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্প, যার অন্যতম অংশ এই সিপিইসি।
২০১৯ সালে সিপিইসির একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের অংশ হিসেবে আরেকটি বিলাসবহুল হোটেলে হামলা চালিয়ে আটজনকে হত্যা করে বন্দুকধারীরা। আরব সাগরে চীনের সহজ প্রবেশ নিশ্চিতে বেলুচিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে নির্মিত গভীর সমুদ্রবন্দরের শহর গদরে হয় ওই হামলা।
গত বছরের জুনে চীনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আংশিক মালিকানার অন্তর্ভুক্ত পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জেও হামলা চালায় বেলুচ স্বাধীনতাকামীরা।
এ ছাড়া স্বাধীনতার দাবিতে বেলুচিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট নামে আরও একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীও দীর্ঘদিন ধরে সশস্ত্র বিদ্রোহ চালিয়ে আসছে অঞ্চলটিতে। আছে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের তৎপরতাও।
আরও পড়ুন:ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম লিমিটেড থেকে ১০ কোটি ৩১ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগে করা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আটজনের জড়িত থাকার সত্যতা খুঁজে পায়নি পুলিশ। তাদের অব্যাহতির সুপারিশ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের কোতোয়ালি জোনাল টিমের পরিদর্শক মো. সাজ্জাদ হোসেন।
মঙ্গলবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের শাহবাগ থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখায় এ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। আগামী ২৭ নভেম্বর এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
আদালতের শাহবাগ থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের এসআই সাইফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অব্যাহতির সুপারিশ করা অন্যরা হলেন- ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ওবায়দুল্লা খন্দকার, কামরুজ্জামান, ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুল আলম, ইঞ্জিনিয়ার একেএম শোয়েব বাশুরী ওরফে হাবলু, আজিজুল করিম তারেক ও মনিজুর রহমান ওরফে মানিক।
পুলিশের অব্যাহতির আবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাদী ২০০৭ সালের ৩০ জুন দরখাস্ত মারফত মামলার এজাহারে বর্ণিত চাঁদার টাকার পরিমাণ ভুল উল্লেখ করে তা সংশোধনের জন্য আবেদন করেন। সর্বশেষ ২০০৯ সালের ৭ মে বাদী নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য একখানা হলফনামা সম্পাদন করেন। তাতে তিনি উল্লেখ করেন, তিনি বিশেষ মহলের চাপে বাধ্য হয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন। এজাহারভুক্তদের বিরুদ্ধে তার কোনো অভিযোগ নেই এবং তিনি মামলা পরিচালনা করতে ইচ্ছুক নন।
এছাড়াও তদন্তকালে তদন্ত কর্মকর্তা বাদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বাদী তার হলফনামায় বর্ণিত ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান যে, তখনকার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপে পড়ে তিনি মামলাটি দায়ের করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে গিয়াস উদ্দিন আল মামুন এবং এজাহারনামীয় অপরাপর আসামিকে তিনি চিনতেন না। এজাহারে বর্ণিত চাঁদাবাজির কোনো ঘটনা ঘটেনি।
চাঁদাবাজির অভিযোগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম লিমিটেডের মহা-ব্যবস্থাপক খায়রুল বাশার ২০০৭ সালের ৯ এপ্রিল বাদী হয়ে রাজধানীর শাহবাগ থানায় এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় তারেক রহমানসহ আটজনকে আসামি করা হয়।
আরও পড়ুন:বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিপদ শেষ হয়ে যায়নি। নতুন করে বিপদ আসার আশঙ্কা আছে। গণতন্ত্রকে আঘাত ও নষ্ট করার চক্রান্ত চলছে। বাংলাদেশকে আবারও নতুন বিপদে ঠেলে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে।
‘ঐতিহাসিক বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির বিরুদ্ধে সবসময় ষড়যন্ত্র হয় মন্তব্য করে দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আবারও গণতন্ত্রকে দুর্বল ও ধ্বংস করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আপনারা সবাই সজাগ ও সতর্ক থাকবেন। সংগঠনকে আরও দৃঢ় করেন।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘শেখ হাসিনা তার ১৬ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে মহিলা দলসহ বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর নির্মমভাবে দমন-পীড়ন চালিয়েছে।
‘অবৈধভাবে ক্ষমতায় থেকে শেখ হাসিনা ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথা বলতেন। তার কারণে শিক্ষার্থীসহ বহু মানুষ নিহত হয়। সেই ভয়ংকর দানবকে সরিয়ে ৫ আগস্ট আমরা মুক্ত হয়েছি। এটা সত্য যে, শেখ হাসিনা গণঅভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।’
ফখরুল বলেন, ‘স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটলেও জাতি এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এই চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে আমাদের খুব সাবধানে এগুতে হবে।’
প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রীয় সংস্কার দ্রুত বাস্তবায়ন করে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের সমর্থনে জনগণের সেবা করার জন্য একটি নির্বাচিত সরকারই সর্বোত্তম সরকার। নির্বাচনই হচ্ছে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চাবিকাঠি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কেউ দলকে বিভক্ত করতে পারেনি। বরং বিএনপি আরও শক্তিশালী হয়েছে। দলকে আরও শক্তিশালী করে আমরা এগিয়ে যাব এবং নিঃসন্দেহে নির্বাচনে জিতে দেশ পুনর্গঠনে কাজ করব।’
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের টেকনাফে নাফ নদের মোহনায় মাছ ধরতে যাওয়া ২০ জেলে ও মাঝি-মাল্লাকে অস্ত্রের মুখে ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। এ সময় তাদের ব্যবহৃত দুটি বোট ও ১৩টি নৌকাসহ জালও নিয়ে গেছে তারা।
সোমবার বিকেলে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের অদূরে নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকায় বঙ্গোপসাগর থেকে ওইসব জেলে ও মাঝি-মাল্লাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে।
শাহপরীর দ্বীপের ইউপি সদস্য আবদুস সালাম বলেন, ‘আবারও বাংলাদেশের জলসীমানায় প্রবেশ করে মাছ ধরার ১৫টি নৌকাসহ ২০ জেলে ও মাঝি-মাল্লাকে ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমারের আরাকান আর্মি।
‘এর আগে মিয়ানমারের নৌবাহিনী বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন জেলেকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। সে সময় একজন জেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এসব ঘটনায় টেকনাফে জেলেদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘটনটি বিজিবিকে অবহিত করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে টেকনাফ-২ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘মাছ ধরার ট্রলারসহ ২০ জেলে ও মাঝি-মাল্লাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অবহিত হয়েছি। এ ঘটনায় আমরা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। তাদের ফেরত আনার চেষ্টা চলছে।’
শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা মো. আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) বিকেলে নাফ নদ মোহনা হয়ে বঙ্গোপসাগরের নাইক্ষ্যংদিয়া নামক জায়গায় মাছ ধরতে যাওয়া ১৫টি নৌকা মাছ শিকারে যায়। এ সময় মিয়ানমারের বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সদস্যরা ওইসব নৌকা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়ে। এতে জেলেদের পরিবারের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা খোরশেদ বলেন, ‘আমার এলাকার ১৫টি নৌকা নাফ নদে মাছ ধরতে গেলে তাদের ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। নৌকার মালিক পক্ষ থেকে প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।’
এর আগে ৯ অক্টোবর টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাট থেকে মাছ ধরার ছয়টি ট্রলারে ৫৮ জন জেলে গভীর সাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার সময় জেলে ও মাঝি-মাল্লাদের অপহরণ করে সে দেশের নৌবাহিনী। সে সময় মিয়ানমার নৌবাহিনীর টহলরত একটি স্পিডবোট থেকে বাংলাদেশি একটি ট্রলারকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে এক জেলে নিহত ও দুই জেলে আহত হন। পরে আটক অন্য জেলেদের ফেরত দেয়া হয়। ওই ঘটনায় সে সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কঠোর প্রতিবাদ জানানো হয়েছিল।
এছাড়া ১৫ অক্টোবর মিয়ানমারের রাখাইনে অনুপ্রবেশ করা মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মির হেফাজতে থাকা বাংলাদেশি ১৬ জেলেকে ফেরত আনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
আরও পড়ুন:কোনো ধরনের ছলচাতুরির আশ্রয় না নিয়ে অবিলম্বে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা এবং রাষ্ট্রীয় সংস্কারের সুস্পষ্ট রূপরেখা দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মঙ্গলবার ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আজকের বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মুক্তিযোদ্ধা মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ সাবুর ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম ও প্রজন্ম একাডেমি যৌথভাবে এই আলোচনার আয়োজন করে।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র কাঠামোর কী কী সংস্কার করতে চায় এবং সেটা করতে কতদিন লাগবে, কোনো ছলচাতুরি ছাড়াই তা স্পষ্ট করে অবিলম্বে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার আহ্বান জানাচ্ছি।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘জাতিকে অন্ধকারে রেখে আপনারা যা খুশি তাই করবেন, আমরা তো সেটা মেনে নিতে পারব না। সুতরাং জাতিকে ধোঁয়াশায় রাখবেন না। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন গত ১৬ বছরের বিনা ভোটের সরকারকে মানেনি। এই সরকারকেও দীর্ঘদিন মানবে না।
‘কোনো প্রকার কূটকৌশল বা ছলচাতুরি ছাড়াই কবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তা জাতিকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিন। জাতি নির্বাচনের তারিখ জানতে চায়। আপনি যদি জাতিকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে রাখেন তবে তাদের অলস বসে থাকা এবং আপনার প্রহসন দেখার কোনো কারণ নেই।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, “সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানকে যারা ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন তারা প্রকৃতপক্ষে দেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ ও ১৯৭১ সালে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার বিরোধী।”
নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে সরকার নিজের অবস্থান স্পষ্ট না করায় দেশে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা।
তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের কথা বললেই আপনারা বলেন, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আমরা উদগ্রীব হয়ে পড়েছি। এখন আমরা যদি বলি, আপনারা নির্বাচনের কথা না বলে ক্ষমতায় থাকার জন্য পাগল হয়ে গেছেন? সুতরাং কোনোরকম ছলচাতুরি করবেন না।
‘দেশের পরিস্থিতি বর্তমানে অস্পষ্ট এবং আগামী দিনগুলোতে এটি আরও জটিল হতে পারে। এই প্রতিকূল সময়ে আমরা বিশ্বাস করতে চাই, বর্তমান সরকার জাতিকে আশার আলো দেখাবে। অনুরোধ করব, এমন কিছু করবেন না যাতে জাতি আপনাদের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে।’
মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপি ১৭ বছর ধরে গণতন্ত্র ও মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার জন্য সংগ্রাম করছে। যারা বলছেন আমরা ক্ষমতায় ফিরতে মরিয়া, তারা ভুল করছেন। বাস্তবে আমরা মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য লড়াই করছি।’
সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে সরকারের উপদেষ্টাদের বক্তব্যের সমালোচনা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। তিনি বলেন, ‘এসব সংস্কার বাস্তবায়নে কত সময় লাগবে সে বিষয়ে আপনারা পরিষ্কার করে কিছু বলছেন না। বাস্তবে আমরা সংস্কারের কোনো লক্ষণ দেখছি না। নির্বাচন নিয়েও আপনারা স্পষ্ট করে কিছু বলছেন না।
‘সরকারের ভেতরের লোকজনও সংবিধান সংশোধন ও সংবিধান পরিবর্তন নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিচ্ছেন।
প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘সংবিধান সংশোধনের আপনি কে? সংসদ ছাড়া কি সংবিধান পরিবর্তন হবে? আপনাদের মনে রাখতে হবে, সংবিধান কোনো রুক্ষ খসড়া নয় যে আপনি নিজের ইচ্ছামতো পরিবর্তন করতে পারেন।
‘সরকার গঠনতন্ত্র সংশোধন করতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধা ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অংশীজনের মতামত নেয়া জরুরি।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যোগ না দিয়ে বিদেশে পালিয়ে থাকা কিছু ব্যক্তি এখন দেশে ফিরে উচ্চৈস্বরে কথা বলছেন। তারা সংবিধান পরিবর্তনের কথাও বলছেন।’
তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ শান্তি চায়, পরিত্রাণ চায়। যথেষ্ট হয়েছে- আমাদের শান্তি দিন, আমাদের স্বস্তি ফিরিয়ে দিন। আপনারা নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এসেছেন, কিন্তু এখন কোনো সুস্পষ্ট রূপরেখা ছাড়াই সংস্কারের কথা বলছেন। আপনারা কী করতে চান তা জনগণকে স্পষ্টভাবে বলুন। জাতিকে অন্ধকারে রেখে আমরা আপনাদের যা খুশি তাই করতে দেব না।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কেন দেশে ফিরতে পারছেন না তা বোধগম্য নয়। আমরা বুঝতে পারছি না, কেন তার মামলা বা আমাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করা হচ্ছে না। অধ্যাদেশের মাধ্যমে এসব মামলা প্রত্যাহার করা যায়, কিন্তু আপনারা তা করছেন না।’
আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘দেশে বর্তমানে একটা ধোঁয়াশাচ্ছন্ন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এই সরকার বেশি সময় থাকবে, না যথাসময়ে দায়িত্ব পালন করে চলে যাবে- বুঝতে পারছি না। আপনারা আমাদের সহযোগিতা চান কি-না সেটাও বুঝতে পারছি না।’
তিনি বলেন, ‘এই সরকার ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল, তাদের রক্তের ফসল। এই সরকারের কাছে দেশবাসীর প্রত্যাশা, তারা নির্বাচনমুখী প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুততম সময়ে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। সরকার এই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে ইতিহাসে তারা উজ্জ্বল হয়ে থাকবেন। এর ব্যত্যয় ঘটলে দেশটা ধ্বংসের দিকে যেতে পারে। তাই এই সরকারের ব্যর্থ হওয়া যাবে না।’
অনুষ্ঠানে আলোচ্য বিষয় নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সৈয়দ মোজাম্মেল হোসেন শাহীন।
প্রজন্ম একাডেমির সভাপতি কালাম ফয়েজীর সভাপতিত্বে ও মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের সিনিয়র সহসভাপতি মো. জহিরুল ইসলাম কলিমের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ প্রমুখ।
আরও পড়ুন:বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বিএনপি এমন রাষ্ট্রীয় সংস্কার চায়, যা দেশের কোটি কোটি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন এবং তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে।
লন্ডন থেকে এক সমাবেশে ভার্চুয়ালি দেয়া বক্তব্যে তিনি একথা বলেছেন।
বিএনপির প্রয়াত মন্ত্রী ও স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার যশোর টাউন হল মাঠে এই সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি।
তারেক রহমান বলেন, ‘জাতি এখনও এক সংকটময় সময় পার করছে। কারণ ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী সরকারের অশুভ প্রেতাত্মারা এখনও দেশের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা অনেকেই এখন সংস্কারের কথা শুনি। অনেকে বিভিন্ন সংস্কারের কথা বলছেন। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন এবং এই দেশকে বদলে দিতে বিএনপিই প্রথম সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিল।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ২০১৭ সালে বিএনপির ভিশন-২০৩০ সনদ ঘোষণা করে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের রূপরেখা দিয়েছেন।
‘পরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যুগপৎ আন্দোলনে যোগ দেয়া গণতান্ত্রিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের জন্য ৩১ দফা রূপরেখা দিয়ে বিএনপি ২০২৩ সালেও সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিল।’
বিএনপির এই দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা বলেন, ‘এসব সংস্কারের মূল উদ্দেশ্য কী? এটা কি শুধুই সংবিধানের কয়েক লাইন পরিবর্তনের জন্য? অবশ্যই না। দেশ পরিচালনায় পরিবর্তিত সময় এবং বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য সংস্কার প্রয়োজন।
‘একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি মনে করি, দেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা এবং দেশে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সংস্কার হওয়া উচিত।’
বিএনপির এই নেতা মনে করেন, সংবিধানের শুধু কয়েকটি লাইন পরিবর্তন করাই সংস্কার নয়।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপির ৩১ দফা রাষ্ট্রীয় সংস্কার প্রস্তাবে সুস্পষ্টভাবে দেশের গুণগত পরিবর্তন নিশ্চিত করতে এবং জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রমের রূপরেখা রয়েছে।
‘একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি একবাক্যে সংস্কারের কথা বলছি- যা মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করবে, বেকারদের কর্মসংস্থান করবে, নারীর স্বাধীনতা ও অধিকার নিশ্চিত করবে, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, আমাদের সন্তানদের উন্নত শিক্ষা নিশ্চিত করবে এবং জনগণকে ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করবে।’
তিনি বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পরও দেশ এখনও সংকটময় সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
‘স্বৈরাচারী সরকারের পতন ও তার প্রধান দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও তাদের প্রেতাত্মারা রয়ে গেছে সমাজে, প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায়। সেখান থেকে তারা এখনও নানা ষড়যন্ত্রের বীজ বপনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
জাতির এই দুঃসময়ে তরিকুল ইসলামের মতো একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের অনুপস্থিতির অনুভূতিও ব্যক্ত করেন তারেক রহমান।
তিনি বলেন, ‘তরিকুল ইসলামের মতো কেউ আজ বেঁচে থাকলে তিনি আমাকে মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিতে পারতেন, যা দেশ ও দল উভয়ের কল্যাণে অবদান রাখত।’
আরও পড়ুন:ধর্ম মন্ত্রণালয়ে নতুন সচিব নিয়োগ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান (গ্রেড-১) এ. কে. এম. আফতাব হোসেন প্রামাণিককে পদোন্নতি দিয়ে এই পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে বলা হয়েছে, জনস্বার্থে জারি করা এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত সংবিধান সংস্কার কমিশনের ওয়েবসাইট চালু করা হয়েছে। সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে আগ্রহী ব্যক্তি বা সংগঠন এই ওয়েবসাইটে আগামী ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত পরামর্শ, মতামত ও প্রস্তাব দিতে পারবেন।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বলা হয়, ওয়েবসাইটটি আজ মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) চালু হয়েছে। ওয়েবসাইটের ঠিকানা- crc.legislativediv.gov.bd
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ওয়েবসাইটে আগামী ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত সংবিধান সংস্কার বিষয়ে আগ্রহী ব্যক্তি বা সংগঠন পরামর্শ, মতামত ও প্রস্তাব জানাতে পারবেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক থেকেও মতামত দেয়ার সুযোগ রয়েছে।
এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কমিশন পরিচিতি, নোটিশ বোর্ডে এই কমিশনের সাম্প্রতিক তথ্য, অংশীজনের প্রস্তাব, কমিশনের প্রতিবেদন, যোগাযোগের ঠিকানা ও গুরুত্বপূর্ণ লিংক পাওয়া যাবে।
মন্তব্য