মিয়ানমারে ‘গণতন্ত্রের সুরক্ষার’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান মিন অং হ্লাইং।
গত ১ ফেব্রুয়ারির সেনা-অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে রাজপথে নিয়মিত বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এ প্রতিশ্রুতি দেন।
দেশটির সশস্ত্র বাহিনী দিবসে শনিবার জাতীয় টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান আবারও নির্বাচন দেয়ার কথা বলেন। তবে নির্বাচন কবে হতে পারে, সে বিষয়ে কিছু জানাননি তিনি।
এর আগে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে শুক্রবার সেনাদের উদ্দেশে পৃথক দুটি বার্তায় বলা হয়েছিল, গুলি খাওয়ার ভয় থাকলেও রাস্তায় নামতে পারে বিক্ষোভকারীরা।
মিয়ানমারে সেনা-অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৩২০ জনের বেশি নাগরিক প্রতিবাদ করতে গিয়ে গুলিতে নিহত হয়েছেন।
বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার দাবি, এই সংখ্যা জান্তা সরকার গোপন করছে। প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
এমন বাস্তবতায় সেনাপ্রধান মিং অং হ্লাইং শনিবার এক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্রের সুরক্ষায় জনগণের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করে যাব।
‘দেশের সুরক্ষা ও স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং নিরাপত্তার জন্য সহিংস কাজ করা উচিত নয়।’
বক্তব্যে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনে জয়ী নেতা অং সান সুচি ও তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্যাসি ‘বেআইনি কাজ’ করায় বাধ্য হয়ে সেনাবাহিনী ক্ষমতা নিয়েছে।
বক্তব্যে সেনাপ্রধান বিক্ষোভে গুলি চালিয়ে হত্যার ব্যাপারে সরাসরি কিছু বলতে চাননি। তবে বিক্ষোভ দমনে সেনাবাহিনীকে গুলি করার নির্দেশ দেননি, এমনটাও স্পষ্ট করে বলেননি।
এর আগে জান্তা সরকার বলেছিল, গুলি চালানো হয়েছে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে থেকেই।
‘রাশিয়া সত্যিকারের বন্ধু’
সশস্ত্র বাহিনী দিবসের ভাষণে সেনাপ্রধান দেশটিতে ১৯৪৫ সালে জাপানের দখলদারত্বের কথাও স্মরণ করেন।
মিয়ানমারে প্রতিবছর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের প্যারেডে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক দেশের প্রতিনিধি অংশ নেন। এবার সেনা-অভ্যুত্থানের পর দিবসটির প্যারেডে একমাত্র রাশিয়ার উপ প্রতিরক্ষামন্ত্রী আলেকজান্ডার ফোরম্যান অংশ নেন।
এ নিয়ে মিন অং হ্লাইং বলেন, ‘রাশিয়া আমাদের সত্যিকারের বন্ধু।’
সেনা-অভ্যুত্থানের প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন মিয়ানমারের সেনাপ্রধানসহ দেশটির বেশ কিছু কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। সেই সঙ্গে দেশটিতে অবরোধ আরোপ করেছে দেশগুলো।
এমন প্রেক্ষাপটে পশ্চিমা অনেক দেশের সঙ্গে বৈরিতা থাকা রাশিয়ার প্রশংসা করলেন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান।
রাশিয়া ও মিয়ানমারের সম্পর্ক গত কয়েক বছরে অনেকটাই ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। মিয়ানমারের কয়েক হাজার সেনা সদস্যকে সম্প্রতি উচ্চতর প্রশিক্ষণ দিয়েছে বৈশ্বিক পরাশক্তিটি।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মাঝে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গত শনিবার মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া গতকাল রোববার পর্যন্ত এই সংঘর্ষে প্রায় ১৫০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌথ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হাটহাজারী উপজেলার নির্বাহী অফিসার ১৪৪ ধারা জারি করেছে।
এক অফিস আদেশে বলা হয়, যেহেতু অদ্য ৩১ আগস্ট ২০২৫ তারিখে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলাধীন ফতেপুর ইউনিয়নের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেট বাজারের পূর্ব সীমা থেকে পূর্বদিকে রেলগেইট পর্যন্ত রাস্তার উভয়পার্শ্বে সকাল আনুমানিক সাড়ে ১১টায় স্থানীয় জনসাধারণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরস্পর মুখোমুখি ও আক্রমণাত্মক হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং বর্তমানে পক্ষসমূহ আক্রমণাত্মক অবস্থায় রয়েছে।
সেহেতু, আমি মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আমার উপর অর্পিত ক্ষমতাবলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, জনসাধারণের জীবন, সম্পদ রক্ষা ও শান্তি শৃঙ্খলা স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলাধীন ফতেপুর ইউনিয়নের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেট বাজারের পূর্ব সীমা থেকে পূর্বদিকে রেলগেইট পর্যন্ত রাস্তার উভয়পার্শ্বে অদ্য দুপুর ২টা থেকে ১ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ১৪৪ ধারার আদেশ জারি করলাম। ওই সময়ে উল্লিখিত এলাকায় সকল প্রকার সভা সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, গণজমায়েত, বিস্ফোরক দ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র ও সকল প্রকার দেশী অস্ত্র ইত্যাদি বহনসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় ৫ বা ততোধিক ব্যক্তির একত্রে অবস্থান কিংবা চলাফেরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করলাম। ১৪৪ ধারা জারির পর বিকাল ৪ টায় সংঘর্ষ এলাকায় যৌথবাহিনী অভিযান শুরু করে।
জানা গেছে, গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের এক নারী শিক্ষার্থী ২নং গেটসংলগ্ন এলাকায় রাত ১২টায় বাসায় ঢুকতে চাইলে দারোয়ানের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে দারোয়ান মেয়েটিকে মারধর করে। ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থীর নাম সাকিফা খাতুন। এরপর আশেপাশে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা তা দেখে এগিয়ে যায়। তখন সেই নারী শিক্ষার্থী তার এক ছেলে বন্ধুকে মুঠোফোনে ডেকে আনলে তাকেও লাঞ্চিত করা হয়। এসময় ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জড়ো হয়ে যায়। একপর্যায়ে স্থানীয়রা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
পরে স্থানীয় বাসিন্দারা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানোর জন্য লোকজন জড়ো করার ঘটনা ঘটে। এসময় ২ নং গেটসংলগ্ন বাচামিয়ার দোকানের সামনে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলে হামলা চালায় স্থানীয়রা। এতে অন্তত ৭০ জন শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। যার মধ্যে ২৪ জন শিক্ষার্থীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) পাঠানো হয়েছিল। পরে সারারাত ধরে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় অবস্থান করে। পরে রাত সাড়ে তিনটার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এদিকে গতকাল রোববার সকাল এগারোটায় আবারও শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেইট সংলগ্ন এলাকায় ২য় দফায় সংঘর্ষ শুরু হয়। এই সংঘর্ষে প্রায় ৭০-৮০ জন শিক্ষার্থী আহত হওয়ার তথ্য জানা গেছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন ও প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ এবং উপাচার্যসহ আরও ১০ জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।
হামলায় আহতদের দাবি সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর টার্গেট করে আক্রমণ করা হয়েছে। যেটি পুঁজি করেছে স্থানীয় সন্ত্রাসী হানিফ গং। যারা গণঅভ্যুত্থানের কারণে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসার দখল হারিয়েছে। পুরো হামলায় ধারাল অস্ত্র, রাম দা, চাপাতি, ছুরি, বটি ও দা ব্যবহার ও সরবরাহ করেছে তাদের প্রশিক্ষিত লোকরা।
ঘটনার প্রেক্ষিতে উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, আমার ছাত্ররা আহত হয়েছে। প্রত্যেকটা ছাত্রকে তারা দা দিয়ে কোপিয়েছে। এটা কোন জগতে আছি আমরা। আপনারা আমাদের ছাত্রদের উদ্ধার করুন। আমাদের প্রক্টর, প্রো-ভিসি (অ্যাকাডেমিক) আহত, আমাদের প্রায় সব শিক্ষক-ছাত্র আহত। আমরা মেডিকেলে জায়গা দিতে পারছি না।
চমেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) বেলায়েত হোসেন জানান, বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৫১ জনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। আরও অনেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনি বলেন, হাসপাতালে নিয়ে আসা আহত শিক্ষার্থীদের কারও মাথায় জখম, কারও শরীর রক্তাক্ত, কেউ হাতে কিংবা শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত পেয়েছেন।
রোববারের সংঘর্ষের ঘটনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নির্মমভাবে কুপিয়ে আহত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুই ছাত্রকে ভবনের ছাদে কুপিয়ে সেখান থেকে ফেলে দেওয়া হয়। দুই ছাত্রের মধ্যে একজনের নাম রাজিউর রহমান রাজু। তিনি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, তবে বিভাগের নাম জানা যায়নি। আরেকজনের নাম জানা যায়নি। পরে কয়েক শিক্ষার্থী তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় আহতদের কথা বিবেচনায় নিয়ে রোববারের সব পরীক্ষা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। চবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়দের হামলার ঘটনায় বহু শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অনেকের গতকাল রোববার পরীক্ষা ছিল। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
এদিকে চবি শিক্ষার্থীর সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনায় শিক্ষার্থীদেরকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দেওয়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য উদয় কুসুম বড়ুয়াকে বহিষ্কার করেছে দলটি। রোববার বিকেলে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে তাকে বহিষ্কারের তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ দলের নির্দেশনা অমান্য করে সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার জন্য গঠনতন্ত্রের বিধান মোতাবেক বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য উদয় কুসুম বড়ুয়াকে দলের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর আগে, রোববার সকালে চবির শিক্ষার্থীদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছিল তিনি।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনার তদন্ত করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্র দল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। সন্ধ্যা ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেটে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি করেন।
অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী মোড়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। এরপর জিরো পয়েন্টে এসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
সম্প্রতি চীন সফর শেষে দেশে ফিরেই গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের স্বাস্থ্যের খোঁজ নিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম, সার্জিস আলমসহ দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।
রোববার (৩১ আগস্ট) রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নুরের খোঁজ নিতে যান এনসিপি নেতারা। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি হাসপাতালে পৌঁছান তারা।
এনসিপি নেতারা নুরের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন এবং হামলায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এ সময় এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিবসহ আরও কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত শুক্রবার (৩০ আগস্ট) রাত ৯টার দিকে জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের সংঘর্ষের পর আল রাজী টাওয়ারের সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লাঠিপেটায় গুরুতর আহত হন নুরসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। ঘটনাস্থল থেকে নুরকে উদ্ধার করে হাসপাতালের দিকে নিয়ে যান সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই বলে তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন।
আজ রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, তিনি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে নির্বাচনের যে সময় ঘোষণা করেছেন সেই সময়ের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
প্রেস সচিব জানান, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন— “কেউ যদি নির্বাচনের কোন বিকল্প নিয়ে ভাবে সেটা হবে এই জাতির জন্য গভীর বিপজ্জনক। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে উৎসবমুখর পরিবেশে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”
প্রফেসর ইউনূস জোর দিয়ে বলেছেন-অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠ নির্বাচন আয়োজন করা। প্রেস সচিব বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা বারবার উল্লেখ করেছেন যে, এ নির্বাচন হবে বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম সেরা নির্বাচন। ”
তিনি আরও জানান, বৈঠকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল জুলাই সনদ বাস্তবায়ন বিষয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। এ সময় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. আলী রিয়াজ এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মুনির হায়দার প্রধান উপদেষ্টাকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করেন।
শফিকুল আলম বলেন, আজ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকগুলো খুবই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন নিয়ে নিজেদের উদ্বেগ ও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উদ্যাপনের বিষয় আলোচনায় উঠে আসে। দুর্গাপূজাকে ঘিরে কেউ যেন দেশে ষড়যন্ত্র বা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সে বিষয়ে সকল রাজনৈতিক দলকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে প্রেস সচিব বলেন, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের চিকিৎসার জন্য ইতোমধ্যে বিশেষ মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে এবং প্রয়োজন হলে তাঁকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত রয়েছে সরকারের।
সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে এক গুদামে অবৈধভাবে মজুত করা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ২২০ (বস্তা) ১০ টন ৬শ'ত কেজি চাল উদ্ধার করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। রবিবার বিকালে উপজেলার গাড়ামাসী বাশঁতলা এলাকার একটি গুদামে এই অভিযান চালানো হয়। চালসহ ইব্রাহিম মন্ডল (২৬) নামের একজনকে আটক করা হয়। তবে গুদামের মালিক পলাতক রয়েছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরিন জাহান।
অভিযান পরিচালনার সময় সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম, বেলকুচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, খাদ্য ইন্সপেক্টর ইমরুল কায়েসহ স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে বেলকুচি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফরিন জাহান বলেন, জেলা এনএস আই কার্যালয়ের গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারি, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির বিপুল পরিমাণ চাল একটি গুদামে মজুত রয়েছে। পরে সেখানে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে চালগুলো উদ্ধার করা হয়। এ সময় একজন কে আটক করা হয়।
মাত্র ১২০ টাকায় পুলিশের চাকরি পেয়ে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে জবেদা আক্তারের। বাবা-মায়ের আদর স্নেহ না পেয়ে বেড়ে ওঠা জবেদা আক্তার সরকারি চাকরি পেয়ে এবার নিজেই নিজের স্বপ্ন পূরণ করবেন। দেড় বছর বয়সে জবেদা আক্তারের বাবা-মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। প্রথমে বাবা মো: জামিনুর ও কয়েক বছর পরে মা মোছা: ঝর্না আক্তার অন্যত্র বিয়ে করে আলাদা সংসার শুরু করেন। বাবা-মা থেকে বিচ্ছিন্ন শিশু জবেদা আক্তারের ঠাই হয় নানা-নানীর কাছে। নানা জয়নাল, নানী মোছা: লাইলী ও মামাদের আশ্রয়ে বেড়ে উঠে জবেদা আক্তার। জামালপুরে এবারের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে চাকরি পেয়েছেন জবেদা আক্তার (১৮)।
নিজের যোগ্যতায় সরকারি চাকরি হওয়ায় স্বপ্ন পূরণে জবেদা আক্তারের চোখ বেয়ে অশ্রু বইছে। জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার দুরমুট নয়াপাড়া এলাকার জবেদা আক্তার বলেন, নানা-নানী ও মামার সংসারে থেকে লেখাপড়া করেছি। সেভাবে বাবা-মায়ের আদর পাইনি, তারা থেকেও যেন নেই, আমার চলার পথ সহজ ছিলো না। মেলান্দহ উপজেলার কলাবাধা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে এখন স্থানীয় টনকি বাজারস্থ আলেয়া আজম কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীতে লেখাপড়া করছি। আমি ভাবিনি আমার সরকারি চাকরি হবে। বাড়ি থেকে একা একাই পুলিশ লাইন্সে এসেছি চাকরির পরীক্ষা দিতে, আমার সাথে কেউ আসেনি। এখন সবাইকে ফোন করে চাকরির বিষয়টি জানাচ্ছি। মাত্র ১২০ টাকায় চাকরি পেয়ে আমি অনেক খুশি, এখন থেকে আমার আনন্দের সময় শুরু- বেশ উচ্ছাস নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন জবেদা আক্তার।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চেংটিমারী গ্রামের মো: আবু তালেবের ছেলে কোরআনে হাফেজ মো: রুহেল মিয়া (১৯) পুলিশে চাকরি পেয়েছেন। তিনি জানান, এর আগে আরও দুই বার পরীক্ষা দিয়েছিলাম, আমি দেখেছি সবারই নিজ নিজ যোগ্যতায় চাকরি হয়েছে। তাই হাল ছাড়িনি, এবার আমি তৃতীয় বারের মত পরীক্ষা দিয়েছি এবং উত্তীর্ণ হয়েছি। এবার আমার চাকরি হয়েছে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই, আলহামদুলিল্লাহ। আমি ব্র্যাক স্কুল থেকে ৫ম শ্রেণী পাশ করে আমার এলাকার মাঠেরঘাট হাফেজিয়া মাদ্রাসা থেকে হাফেজ হয়েছি। এরপর গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের জামিয়া ইবনে আব্বাস কওমী মাদ্রাসায় পড়াশুনা করেছি। বর্তমানে আমি টঙ্গী সরকারি কলেজে ইসলাম শিক্ষা বিভাগে অনার্স ১ম বর্ষে অধ্যয়নরত।
মশিউর রহমান (১৯), আনোয়ার হোসেন (১৮), তাপসী তৃষা (২০) ছাড়াও আরও কয়েকজন পুলিশে নিয়োগপ্রাপ্তরা বলেন, এত স্বচ্ছ নিয়োগ হবে জানতাম না। ভাবতাম পুলিশে চাকরি নিতে অনেক তদবীর করতে হয়, লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। চাকরি হবে কিনা সংশয় ছিলো, তবুও পুলিশ লাইন্সে এসেছি নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে। কোন অনিয়ম, দুর্নীতি, তদবীর ও লেনদেন ছাড়াই মাত্র ১২০ টাকায় যোগ্যাত ও মেধায় পুলিশে চাকরি হয়েছে।
পুলিশ সুপার সৈয়দ রফিকুল ইসলাম বলেন, ২৪ এর জুলাই বিপ্লব তথা ৫ই আগষ্টের পর সাধারণ মানুষ যে জনআকাঙ্খার পুলিশ চায় সেই পুলিশ গড়ে তুলতে হলে সবার আগে স্বচ্ছ নিয়োগ ব্যবস্থা দরকার। সারাদেশে এভাবেই স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় পুলিশে নিয়োগ হচ্ছে। আমরা অভিভাবকদের আহবান জানাবো তারা যেন তাদের সন্তানদের পুলিশে যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করেন। ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে এবার প্রায় ১ হাজার ৪শ জন চাকরিপ্রার্থী আবেদন করেন। যাচই-বাছাই শেষে এদের মধ্যে মোট ৮০৩ জন লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। সেখান থেকে ৭৩ জন মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেয়, তাদের মধ্যে মোট ৩২ জনের নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২৯ জন পুরুষ, ৩ জন নারী, একজনকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে, অপেক্ষমান রয়েছে ৬ জন।
বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার কয়েক ঘন্টা পর সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি দেখে সনাক্ত হলো গৃহবধুর সপ্নার পরিচয়।
গতকাল কুষ্ঠিয়ার মিরপুরের ট্রেন লাইন থেকে নিহত গৃহবধুর মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় রেলওয়ে পুলিশ।
পরবর্তীতে ময়নাতদন্তের জন্য নিহতের মরদেহ রাখা হয়েছে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে।
তার পরিচয় সনাক্ত করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া হয় ছবি।
ছবি দেখে সনাক্ত হয় গৃহবধু মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার মটমুড়া ইউনিয়নের পুরাতন মটমুড়া গ্রামে মোবাইল মেরামতকারী সুজনের স্ত্রী দুই সন্তানের জননী স্বপ্না।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গাংনী উপজেলার বাওট গ্রামের রাজধানী পাড়ার মৃত রেজাউল হকের মেয়ে স্বপ্নার সাথে মটমুড়া গ্রামের সুজনের বিয়ে হয় প্রায় ১ যুগ আগে। সুজন স্বপ্নার সংসারে রয়েছে একটি মেয়ে ও একটি ছেলে।
স্বপ্নার মৃত্যুতে শোকে ভাসছে দুটি পরিবার সহ আত্মীয় স্বজনরা।
সপ্নার মৃত্যুর সংবাদে অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন স্বামী সুজন আলী।
স্বপ্নার শাশুড়ি জানিয়েছে, গতকাল শনিবার বিকেলে সে পাশের বাড়িতে যায়। ফিরে এসে জানতে পারে তার পুত্রবধু স্বপ্না বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে শুনতে পাই স্বপ্নার মৃত্যুও খবর।
গৃহবধু স্বপ্নার মা জানিয়েছে তার মেয়ের সাথে দুদিন কোন কথা হয়নি। শনিবার রাত ৯টার দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবেশীরা স্বাপ্নার ছবি দেখে তাকে দেখালে সে তার মেয়ে স্বপ্নাকে চিনতে পারে। আমি এখন কি করবো? আমার সাথে এম কি হলো? যে সে নিজ জেলা ছেড়ে অন্য জেলায় গিয়ে আত্মহত্যা করলো।
মন্তব্য