প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীরা নন, ভারতে ভোটের সময় নির্বাচন কমিশনই শেষ কথা বলে। পাঁচ রাজ্যের আসন্ন বিধানসভা ভোটের আগে ভারতীয় নির্বাচন কমিশন সে কথাই আবার প্রমাণ করছে। সমালোচনা হলেও কমিশন অটল তাদের ভাবমূর্তি রক্ষায়।
২৭ মার্চ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও অসম, কেরালা, তামিলনাডু ও পুদুচেরিতে ভোট শুরু হচ্ছে। ভোট গণনা হবে ২ মে। পাঁচ রাজ্যের ৮২৪টি কেন্দ্রে ভোট দেবেন ১১ কোটি ৩৮ লাখ ৫৯ হাজার ৬০ জন।
ভারতে ভোটের দিন ঘোষণার পরই আচরণবিধি মেনে চলা শুরু হয়। নির্বাচিত সরকারের তখন আর নীতিগত কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা ঘোষণার সুযোগ থাকে না। এমনকি নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে এমন সিদ্ধান্তও নেয়া যায় না।
তাই ভোট ঘোষণার দিনটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আর এটি পুরোপুরি নির্ভর করে কমিশনের মর্জির ওপর। গোপন রাখা হয় ভোট ঘোষণার সময়সূচি। ফলে আগে থেকে কেউ জানতে পারেন না। রাজনৈতিক দলগুলোকে আন্দাজের ওপরেই নির্ভর করতে হয়।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও এবার জানতে পারেননি ভোটের সময়সূচি ঘোষণার দিন। তাই অসম সফরের সময় বলেছিলেন, মার্চের প্রথম সপ্তাহে ভোট ঘোষণা হতে পারে।
কিন্তু খোদ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে ভুল প্রমাণ করে ২৭ ফেব্রুয়ারি সময়সূচি ঘোষণা দেয় নির্বাচন কমিশন। চালু হয় আচরণবিধি। পাঁচ রাজ্যের প্রশাসন পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনের কাছেই দায়বদ্ধ। মন্ত্রীরা সরকারি কাজ ছাড়া কোনো প্রোটোকল পাবেন না।
নিরাপত্তার কারণে অনেকটাই ছাড় পান প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী। তবে তাদের যাতায়াতের খরচ দলকেই দিতে হয়। ভোটের সময় সবাই সমান। রাজনৈতিক দলগুলো সর্বোচ্চ কত টাকা খরচ করতে পারবে সেটিও ঠিক করে দেয় নির্বাচন কমিশন। এটি তদারক করেন কমিশনের পর্যবেক্ষকরা।
ভোটের সময়সূচিও হয় কমিশনের মর্জিতেই। যেমন পশ্চিমবঙ্গে ৮ দফায় ভোট হবে। অসমে হচ্ছে ৩ দফায়। কিন্তু তামিলনাডু, কেরালা ও পুদুচেরিতে এক দিনেই ভোট শেষ। এ ক্ষেত্রে কমিশন নিরাপত্তা বাহিনীর চাহিদাকে গুরুত্ব দেয়।
পশ্চিমবঙ্গে ভোটারের সংখ্যা ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৭ হাজার ৮৩২ জন। তামিলনাডুতে ৬ কোটি ২৮ লাখ ২৩ হাজার ৭৪৯ জন। অসমের ভোটার ২ কোটি ৩২ লাখ ৪৪ হাজার ৪৫৪ জন। কিন্তু অসমে ভোট হচ্ছে ৩ দফায়। তামিলনাডুতে ১ দফায়।
নির্বাচনি সময়সূচি অনুযায়ী ২৭ মার্চ বেশির ভাগ আসনেরই ভোট নেয়া শেষ হবে। কিন্তু গণনা হবে ২ মে।
এ সময়ে তিন স্তরের নিরাপত্তাবলয়ের মধ্যে রাখা হবে জনগণের মত। এই পদ্ধতি নিয়ে আপত্তি নেই রাজনৈতিক দলগুলোরও।
২০০৪ সাল থেকে ভারতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেয়া হয়।
২০১৭ সালে ইভিএমের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভোটার ভেরিফাইড পেপার অডিট ট্রেইল (ভিভিপ্যাট)। এর সাহায্যে নিজের দেয়া ভোট যাচাই করে নিতে পারেন ভোটাররা। এতে সহজ হয়েছে ভোটগণনা। সুবিধা বেড়েছে ভোট গ্রহণেও।
ইভিএম নিয়ে অনেকের মনেই সন্দেহ রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন ইভিএমে ভোট বদলে ফেলা যায়। এ নিয়ে মামলাও হয়েছে। পরে কমিশনও চ্যালেঞ্জ জানায় প্রযুক্তিবিদদের। কিন্তু কেউই প্রমাণ করতে পারেনি ইভিএমে জালিয়াতি করা যায়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে দেখিয়েছে, ইভিএমে নেয়া ভোটে ২০০৪ সাল থেকে বিভিন্ন নির্বাচনে জয় পেয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। কোনো একটি বিশেষ জাতীয় বা আঞ্চলিক দল নয়, বহুদলীয় ব্যবস্থায় বিজেপি, কংগ্রেস, বাম, তৃণমূলসহ সব দলই জিতেছে। আবার হেরেছেও।
নির্বাচন কমিশনের দাবি, ইভিএম জালিয়াতি হলে ভোটের ফলে হেরফের হতে পারে না। বিধানসভা ভোটের পাশাপাশি লোকসভাতেও ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। জিতেছে কংগ্রেস বা বিজেপি উভয় দলই। হেরেছেও। তাই আত্মবিশ্বাসী নির্বাচন কমিশন।
নিরপেক্ষতার প্রশ্নে বেশ সক্রিয় ভারতের নির্বাচন কমিশন। তৃণমূল স্তর থেকে রাজ্যস্তর পর্যন্ত পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেন তারা। অন্য রাজ্য থেকে আসা পর্যবেক্ষকদের হাতে থাকে প্রচুর ক্ষমতা।
এই পর্যবেক্ষকদের প্রতিবেদনের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। এখন কমিশন প্রতি রাজ্যেই পুলিশের নিরপেক্ষতা দেখতে পুলিশ পর্যবেক্ষক, কালো টাকা রোধে আর্থিক পর্যবেক্ষক এবং সামগ্রিক বিষয় দেখতে সাধারণ পর্যবেক্ষকরা থাকেন।
পুলিশ ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ দেখা দিলেই কড়া ব্যবস্থা নেয় কমিশন। একদম নিচুতলা থেকে ওপরতলা পর্যন্ত সবাই কমিশনের ভয়ে তটস্থ থাকেন। ভোটের সময় বদলি ও বরখাস্ত হওয়া ভারতে খুব সাধারণ ঘটনা।
এবারও একই পরম্পরা চলছে। ভারতে পুলিশের প্রধান পদের নাম ডিরেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ বা ডিজিপি। তিনি আইজিপির চেয়েও বেশি ক্ষমতাবান। পশ্চিমবঙ্গের ডিজিপিকেও বদলি করেছে কমিশন।
৯ মার্চ পশ্চিমবঙ্গের ডিজিপি বীরেন্দ্রকে হঠিয়ে নতুন ডিজিপি হিসাবে পি নিরঞ্জনকে দায়িত্ব দেয় কমিশন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি চোট পাওয়ার ঘটনায় তার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিনিয়র পুলিশ অফিসার বিবেক সহায়কে বরখাস্ত করা হয়।
বিবেক সহায় অতিরিক্ত ডিজিপি পদমর্যাদার অফিসার ছিলেন। তাকে বরখাস্ত করে জ্ঞানবন্ত সিংকে দেয়া হয় মমতার নিরাপত্তার দায়িত্ব। সংশ্লিষ্ট জেলাশাসক বিভু গোয়েল ও পুলিশ সুপার (এসপি) প্রবীণ কুমারকেও বদলি করেছে কমিশন।
ভোটের দায়িত্বে থাকেন রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের কর্মীরা। কিন্তু তাদের ওপর সব সময়ই নজরদারি থাকে কমিশনের। পান থেকে চুন খসলেই কড়া দাওয়াই। পশ্চিমবঙ্গের ভোটে ৫৫ জন পুলিশ ও ২০৯ জন সাধারণ পর্যবেক্ষক থাকবেন।
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সাবেক চেয়ারম্যান বা মেয়রদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন মমতা। কিন্তু কমিশন সরকারি অফিসারদের সেই পদে নিয়োগ করেছে।
শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, সব রাজ্যেই নির্বাচন কমিশন এ ধরনের কড়া পদক্ষেপ নিতে অভ্যস্ত। ভারতের সাবেক মুখ্য নির্বাচন কমিশনার প্রয়াত টি এন শেষণের আমল থেকেই বেশ সক্রিয় কমিশন।
তবে এখন নির্বাচন কমিশনও বেশ চাপে থাকে। তাদের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিশেষ করে মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল বহুদিন ধরেই কমিশনের সমালোচক। এবারও ৮ দফায় ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্তের বিরোধী তারা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটাও চাপের রাজনীতি। কমিশনকে চাপে রাখতে চান নেতারা। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন কমিশনকে মানতে বাধ্য সব দলই। মানছেনও নেতারাও।
বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে ভারতীয় নির্বাচন কমিশন আজ ভোট পরিচালনায় অনেকটাই দক্ষ। তাই ভোটের ফলাফলে এতটা বদল ধরা পড়ে। ভারতীয় গণতন্ত্রের এই সুস্বাস্থ্যের জন্য নির্বাচন কমিশন অবশ্যই প্রশংসা পেতে পারে।
বিজেপি ও কংগ্রেসের মতো সর্বভারতীয় দল কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে কোনো গুরুতর প্রশ্ন তোলেনি। অপছন্দের সিদ্ধান্ত নিয়ে মৃদু সমালোচনা হতেই পারে। কিন্তু আস্থা বিন্দুমাত্র টোল খায়নি আজও। বরং বেড়েছে।
তাই ২৭ মার্চ ভোট গ্রহণের পর ২ মে ভোট গণনা নিয়ে কারও কোনো আপত্তি নেই। রাজ্য পুলিশের বদলে কেন্দ্রীয় আধা সেনা ব্যবহার করে ইভিএম রাখার ঘরগুলোকে নিশ্ছিদ্র রাখার ঐতিহ্যই সকলকে আস্থাশীল করে তুলেছে।
পাঁচ রাজ্যের ভোটপর্ব আবার প্রমাণ করবে ভারতের নির্বাচন কমিশন ঠুঁটো জগন্নাথ নয়। অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে তারা দক্ষ ও নিরপেক্ষ। ফের প্রমাণিত হবে। এটি আবারও প্রমাণিত হবে ২ মে।
আরও পড়ুন:
পাকিস্তানে আকস্মিক বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩২৭ এ পৌঁছেছে। গতকাল শনিবার প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (পিডিএমএ) এর বরাত দিয়ে ডন অনলাইন এ তথ্য জানিয়েছে।
সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, খাইবার পাখতুনখোয়ার বুনের জেলায় প্রাণহানির সংখ্যা বেশি। গিলগিট-বালতিস্তান এবং আজাদ জম্মু ও কাশ্মিরে নজিরবিহীন বন্যায় যথাক্রমে কমপক্ষে ১২ জন এবং নয়জনের প্রাণহানি ঘটেছে, পাশাপাশি ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞও ঘটেছে।
গত শুক্রবার খাইবার পাখতুনখোয়ায় ভয়াবহ দৃশ্য দেখা গেছে। ভারী বৃষ্টিপাত এবং মেঘ ভাঙনের ফলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় একদিনে দুই শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে মোহমান্দে ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযানের সময় বিধ্বস্ত প্রাদেশিক সরকারের একটি হেলিকপ্টারের পাঁচজন ক্রু সদস্যও রয়েছেন।
পিডিএমএর পরিস্থিতি প্রতিবেদন অনুসারে, প্রদেশে গত ৪৮ ঘন্টায় ২০৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন, ১২০ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া ৫০ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
বুনেরে ১৮৪ জন, অ্যাবোটাবাদে শাংলায় ৩৬ জন, মানসেহরা ২৩ জন, সোয়াত ২২ জন, বাজাউরে ২১ জন, বটগ্রাম ১৫ জন, লোয়ার দিরে পাঁচজন এবং দুবেতে এক শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া গিলগিট-বালতিস্তান এবং আজাদ জম্মু ও কাশ্মিরে কমপক্ষে ১২ জন এবং নয়জনের প্রাণহানি ঘটেছে।
বেসরকারি সংস্থা আল-খিদমত ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক মুহাম্মদ খালিদ সিনহুয়া বলেন, ‘বন্যায় গ্রামগুলো ডুবে যাওয়ায় পুরো পরিবার ভেসে গেছে, অন্যদিকে অবিরাম বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট ভূমিধসের ফলে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গেছে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।’
পিডিএমএ এএফপিকে জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপ থেকে মৃতদেহ উদ্ধার এবং নয়টি ক্ষতিগ্রস্ত জেলায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় প্রায় দুই হাজার উদ্ধারকর্মী নিয়োজিত রয়েছেন।
রেসকিউ ১১২২ এর মহাপরিচালক মুহাম্মদ তৈয়ব আবদুল্লাহ ডন ডটকমকে জানিয়েছেন, যেসব এলাকায় অভিযান ‘তীব্র অসুবিধার’ সম্মুখীন হচ্ছে, সেখানে ৮০ জনের একটি বিশেষ উদ্ধার দল গঠন করা হয়েছে।
দাফনের মতো লোকও নেই এক গ্রামে
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বেশন্ত্রি গ্রামে আকস্মিক বন্যার খবর পেয়ে মসজিদের স্থানীয় ইমাম মওলানা আব্দুল সামাদ অন্য গ্রামবাসীর মতো তার পরিবারকেও দ্রুত বাড়ি খালি করার নির্দেশ দেন।
তিনি তখন নফল নামাজ পড়ছিলেন। কিছুক্ষণ পর যখন তিনি বাড়ি ফিরে আসেন, তখন তিনি দেখতে পান আকস্মিক এই বন্যার পানির তোড়ে তার বাড়িসহ অনেকের বাড়িঘর সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।
পাকিস্তানের সরকারি হিসাবে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টিপাত ও বন্যার কারণে গত ৪৮ ঘণ্টায় বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটেছে, যাতে মৃতের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়েছে।
সেখানকার প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (পিডিএমএ) জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ৩০৭ জন নিহত এবং ২৩ জন আহত হয়েছেন। পিডিএমএ -এর সর্বশেষ প্রতিবেদনের অনুযায়ী নিহতদের মধ্যে ২৭৯ জন পুরুষ, ১৫ জন নারী এবং ১৩ জন শিশু রয়েছে। আহতদের মধ্যে ১৭ জন পুরুষ, চার জন নারী এবং দুই জন শিশু রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারী বৃষ্টিপাত এবং আকস্মিক বন্যার কারণে এখন পর্যন্ত মোট ৭৪টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৬৩টি আংশিক এবং ১১টি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে।
এমন দুর্ঘটনা প্রদেশের বিভিন্ন জেলা যেমন সোয়াত, বুনের, বাজাউর, তোরঘর, মানসেহরা, শাঙলা এবং বটগ্রাম। বন্যায় পুরো বাড়ি ভেসে যাওয়ার সময় আব্দুল সামাদের পরিবারের পাঁচজন সদস্য ছিলেন ভেতরে। তারা এখনো নিখোঁজ। কেউ তাদের খবর জানে না।
সেই সময় পীর বাবা সাহেব উপজেলার প্রাক্তন কর্মকর্তা বা তহসিল নাজিম আশফাক আহমদ ইসলামাবাদে ছিলেন। যখন তিনি তার বাড়ি থেকে খবর পান যে বিশাল বন্যা হানা দিতে পারে, তিনি তখনই তার পরিবারকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে যাওয়ার নির্দেশ দেন
কয়েক মিনিটের মধ্যে পরিবারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে গেলে কারও কোনো খোঁজ মেলেনি। এমনকি পুরো গ্রামের কাউকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
এই উদ্বেগজনক অবস্থায় তিনি যখন তার গ্রামে পৌঁছান, তখন সর্বত্র কেয়ামতের দৃশ্য দেখা যায়। পুরো গ্রাম ধ্বংসপ্রাপ্ত, বাড়ি-ঘর বিনষ্ট হয়ে গেছে, আহতরা এখানে সেখানে লুটিয়ে পড়ে আছে।
দুই দেশের যৌথ সীমান্ত সংক্রান্ত নিয়ে আলোচনার জন্য আগামী সপ্তাহে ভারত সফর করবেন চীনের প্রধান কূটনীতিক। একই সঙ্গে দুই দেশ পাঁচ বছর বন্ধ থাকা সীমান্ত বাণিজ্য পুনরায় শুরু করার সম্ভাবনাও পরীক্ষা করছে।
শনিবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব কথা জানিয়েছে। বেইজিং থেকে এএফপি এ সংবাদ জানায়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, ১৮ থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ভারত সফর করবেন এবং চীন-ভারত সীমান্ত ইস্যুতে ২৪তম বিশেষ প্রতিনিধিদলের বৈঠকে যোগ দেবেন।
শীতল ও উচ্চভূমি হিমালয় সীমান্তের মধ্য দিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে অতীতে বাণিজ্য সাধারণত সামান্য পরিমাণে হলেও পুনরায় শুরু হওয়া তা প্রতীকী দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। ২০২০ সালে সীমান্তে সৈন্যদের মধ্যে প্রাণহানিকর সংঘর্ষের পর বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়।
ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, আলোচনা করতে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং সোমবার নয়াদিল্লি সফরে আসবেন। গত জুলাই মাসে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্করও বেইজিং সফরে গিয়েছিলেন।
দুইটি বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তি দক্ষিণ এশিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে কৌশলগত প্রভাব বিস্তারে প্রতিযোগিতা করে আসছে।
তবে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক ব্যবস্থার ফলে সৃষ্ট বিশ্ব বাণিজ্য এবং ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে তারা আটকে থাকা সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের দিকে এগিয়ে গেছে।
কয়েক সপ্তাহে চীনা ও ভারতীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন যে দুই দেশ সীমান্ত বাণিজ্য পুনরায় শুরু করার বিষয়ে আলোচনা করছে।
পুনরায় সরাসরি ফ্লাইট চালু করার এবং পর্যটক ভিসা প্রদান সংক্রান্ত চুক্তিগুলো তাদের সম্পর্ক পুনর্গঠনের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এয়ার কানাডার ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টরা শনিবার থেকে ধর্মঘটে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফলে শতাধিক ফ্লাইট বাতিল ও এক লাখেরও বেশি যাত্রী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
টরন্টো থেকে এএফপি জানায়, এমনকি এর ফলে সংস্থাটির পুরো সেবা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
এয়ার কানাডার ১০ হাজার ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টের প্রতিনিধিত্বকারী কানাডিয়ান ইউনিয়ন অফ পাবলিক এমপ্লয়িজ (সিইউপিই) বুধবার ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘটের নোটিশ দেওয়ার পর স্থানীয় সময় রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে ধর্মঘটের আইনি অবস্থানে রয়েছে।
গণমাধ্যম সিবিসি জানিয়েছে, শেষ মুহূর্তে সমঝোতা না হলে শ্রমিক আন্দোলন ভোর ১টার দিকে শুরু হতে পারে।
প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার যাত্রী পরিবহনকারী এয়ার কানাডা জানিয়েছে, সম্ভাব্য ধর্মঘটের আগে তারা ধীরে ধীরে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেবে। শুক্রবার রাত ৮টা পর্যন্ত সংস্থাটি ৬২৩টি ফ্লাইট বাতিল করেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন এক লাখের বেশি যাত্রী।
ইউনিয়নের দাবি, বেতন বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বোর্ডিং প্রক্রিয়াসহ সমস্ত গ্রাউন্ড কাজের জন্যও যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশনস-এর প্রধান রাফায়েল গোমেজ এএফপিকে বলেন, সারা বিশ্বেই সাধারণত আকাশপথে কাটানো সময়ের ভিত্তিতেই ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টদের বেতন দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, ইউনিয়ন এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে একটি কার্যকর প্রচার চালিয়েছে, যা জনসাধারণের মনে এক ধরনের বৈষম্যের ধারণা তৈরি করেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘একজন সাধারণ যাত্রী যিনি বিমানে যাত্রী পরিবহণের ব্যবসা নিয়ে তেমন কিছু জানেন না তিনি ভাবতে পারেন, ‘আমি বোর্ডিংয়ের জন্য অপেক্ষা করছি, ফ্লাইট অ্যাটেনড্যান্ট সাহায্য করছে, কিন্তু তারা এই কাজে পয়সা পাচ্ছেন না। এটা অবশ্যই সবার সামনে আনার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
এয়ার কানাডা বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তাদের সর্বশেষ প্রস্তাবের বিস্তারিত জানিয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে প্রস্তাবিত শর্ত অনুযায়ী ২০২৭ সালের মধ্যে একজন সিনিয়র ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট গড়ে কানাডিয়ান ৮৭ হাজার ডলার (মার্কিন ৬৫ হাজার) আয় করবেন।
সিইউপিই বলেছে, এই প্রস্তাব ‘মূল্যস্ফীতির নিচে এবং বাজারমূল্যের নিচে’।
ইউনিয়ন ফেডারেল সরকার ও এয়ার কানাডার বাকি বিষয়গুলো স্বাধীন সালিশির মাধ্যমে সমাধানের অনুরোধও প্রত্যাখ্যান করেছে।
গোমেজ বলেন, যদি ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টরা ধর্মঘট করে, তবে তিনি মনে করেন না যে এটি খুব বেশিদিন স্থায়ী হবে।
তিনি বলেন, এটি পিক সিজন। এয়ারলাইন শত শত মিলিয়ন ডলারের রাজস্ব হারাতে চায় না। তারা প্রায় ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টদের সঙ্গে ‘চিকেন গেম’ খেলছে।
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের কয়েকটি জেলায় ভূমিধস ও আকস্মিক বন্যায় ধসে পড়া বাড়িগুলো থেকে আরও ৬৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছেন উদ্ধারকর্মীরা। শুক্রবার রাতভর উদ্ধার অভিযানের পর চলমান প্রাকৃতিক দুর্যোগে সেখানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২০ জনে।
তবে গত ২ জুন থেকে এখন পর্যন্ত সেখানে প্রায় ৫৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে খাইবার পাখতুনখোয়ার প্রাদেশিক দুর্যোগ তত্ত্বাবধান কর্তৃপক্ষ। এই অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
পাকিস্তানের জরুরি সেবা দপ্তরের মুখপাত্র মোহাম্মদ সুহেইল জানিয়েছেন, শুক্রবার প্রবল বর্ষণের ফলে খাইবার পাখতুনখোয়ার বুনার জেলায় বন্যার পানি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এ সময় বহু বাড়িঘর ভেসে গেছে।
বুনার জেলা প্রশাসক কাশিফ কাইয়ুম বলেন, পীর বাবা ও মালিকপুরা গ্রাম দুটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুক্রবারই এসব গ্রামে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
পীর বাবা গ্রামের ৫৩ বছর বয়সী মোহাম্মদ খান বলেন, ‘কোথা থেকে হঠাৎ করে বানের পানি চলে আসল, তা আমরা বুঝতেই পারিনি। মানুষ সরে যাওয়ার মতো সুযোগ পায়নি। এত দ্রুত চারদিক পানিতে ভরে যায় যে অনেকে ঘর ছেড়ে বের হতেই পারেনি।’
বুনার সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক মোহাম্মদ তারিক জানান, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই অনেকের মৃত্যু হয়েছে। তার ভাষ্যে, ‘নিহতদের মধ্যে অনেকই পুরুষ, শিশুও ছিল কিছু। তবে নারীরা ওই সময়র জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ ও গবাদিপশু চরাতে পাহাড়ে গিয়েছিলেন বলে রক্ষা পেয়েছেন।’
প্রাদেশিক দুর্যোগ তত্ত্বাবধান কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, চলতি সপ্তাহে শুধু খাইবার পাখতুনখোয়া ও উত্তরাঞ্চলের গিলগিট-বালতিস্তান অঞ্চলে বৃষ্টিজনিত দুর্ঘটনায় অন্তত ৩৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ওই অঞ্চল থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরেও সাম্প্রতিক বন্যায় অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সেখানেও শত শত মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছেন।
ভারতের হিমালয় অঞ্চল ও পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে এ ধরনের মেঘভাঙা বৃষ্টি ক্রমেই বেড়ে চলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ফলে এই প্রবণতা আরও তীব্র হয়েছে।
পাকিস্তানের সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার থেকে এখন পর্যন্ত সারা দেশের বন্যাকবলিত এলাকা থেকে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি পর্যটককে উদ্ধার করা হয়েছে। সরকার বন্যাকবলিত এলাকা এড়িয়ে চলার ব্যাপারে সতর্ক করলেও সেই সতর্কবার্তা অনেকেই উপেক্ষা করেছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
২০২২ সালে পাকিস্তানে ভয়াবহ মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ঘটনায় ১ হাজার ৭০০–এর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। সেবার প্রায় ৪০০০ কোটি ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।
পশ্চিম তীরে চার হাজারের বেশি নতুন আবাসন নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে ইসরায়েল। কট্টর ডানপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ গত বৃহস্পতিবার এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। আলজাজিরার খবরে বলা হয়, ইসরায়েলি বসতিবিরোধী পর্যবেক্ষক সংস্থা ‘পিস নাউ’ জানিয়েছে— অনুমোদিত ৪ হাজার ৩০টি আবাসন ইউনিটের মধ্যে ৭৩০টি নির্মিত হবে আরিয়েলের পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্যমান বসতিতে এবং বাকি ৩ হাজার ৩০০টি স্থাপন করা হবে মা’আলে আদুমিম এলাকায়।
ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী স্মোট্রিচ জানান, নতুন বসতি প্রকল্পের জন্য শিগগিরই বাড়ি নির্মাণের দরপত্র অনুমোদন করা হবে। এর লক্ষ্য জেরুজালেম ও ইসরায়েলি বসতি মা’আলে আদুমিমের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন। তিনি আরও দাবি করেন, এই উদ্যোগ শেষ পর্যন্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনাকে চিরতরে শেষ করবে। তার ভাষায়, ‘এমন কিছু নেই যা স্বীকৃতি পাবে, আর এমন কেউ নেই যাকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। আজ যদি কেউ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা করে, আমরা মাটিতেই তার জবাব দেব।’
ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই পরিকল্পনাকে ‘গণহত্যা, বাস্তুচ্যুতি এবং দখলদারিত্বের সম্প্রসারণ’ হিসেবে নিন্দা করেছে। তাদের মতে, এটি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ সম্পর্কিত বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনি। পর্যবেক্ষকদের মতে, এই বসতিগুলো কার্যকর হলে ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে বড় বাধা তৈরি হবে। পরিকল্পিত এলাকা অধিকৃত পশ্চিম তীরকে উত্তর ও দক্ষিণে ভাগ করে দেবে, ফলে পূর্ব জেরুজালেমকে বেথলেহেম ও রামাল্লার মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরের সঙ্গে সংযুক্ত করে সংলগ্ন ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গঠন অসম্ভব হয়ে পড়বে।
উল্লেখ্য, এর আগেও ইসরায়েল ওই এলাকায় বসতি স্থাপনের চেষ্টা করেছিল। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের চাপে পরিকল্পনা স্থগিত হয়। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নেতানিয়াহুর কট্টর ডানপন্থি সরকার সেখানে রাস্তা প্রশস্তকরণ প্রকল্প অনুমোদন করেছে এবং ফিলিস্তিনিদের প্রবেশাধিকার সীমিত করেছে।
মা’আলে আদুমিমের মেয়র গাই ইফ্রাচ নতুন বসতি পরিকল্পনার প্রশংসা করে বলেছেন, এটি জেরুজালেমের সঙ্গে মা’আলে আদুমিমের সরাসরি সংযোগ স্থাপন করবে। তার অভিযোগ, ফিলিস্তিনিরা ওই এলাকায় অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা করেছিল, যা এই প্রকল্প ব্যর্থ করে দেবে।
গাজায় তীব্র গরম, চর্মরোগে ভুগছে শিশুরা
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নতুন এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ফিলিস্তিনিরা। তীব্র গরমে এখন চর্মরোগে ভুগছে শিশুরা।তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়।
আল শিফা হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সালমিয়া বলেন, গাজার আশ্রয়শিবিরে থাকা অনেক শিশুই বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাদের কাছে চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত সরঞ্জামও নেই। আনাদোলুর প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়াফা নামের এক মায়ের ছেলে সারা রাত চুলকানির কারণে ঘুমাতে পারছে না। তার ছেলের শরীরে সাদা-লাল ফুসকুড়ি দেখা গেছে।
ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ) এর গাজার মেডিকেল কো-অর্ডিনেটর মোহাম্মদ আবু মুগাইসিব বলেন, শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে, কারণ তারা শিশু এবং সেখানকার পরিবেশ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ঠিকমতো গোসলের জন্য পর্যাপ্ত পানিও নেই তাদের।
গাজায় একদিনে ৩২ ফিলিস্তিনি নিহত
যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা আবারও ভয়াবহ হামলার মুখে পড়েছে। লাগাতার বোমাবর্ষণ ও বিমান হামলায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, বাজার—এবং প্রতিদিন বাড়ছে নিহতের সংখ্যা। স্থানীয়রা বলছেন, গাজার উত্তরাংশ এখন প্রায় ‘নিষ্প্রাণ ধ্বংসস্তূপ’। আন্তর্জাতিক মহল এই হামলা ও দখল পরিকল্পনার বিরুদ্ধে নিন্দা জানালেও পরিস্থিতি দিন দিন আরও জটিল হয়ে উঠছে।
গতকাল শুক্রবার আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইসরায়েলি বিমান হামলায় একদিনে অন্তত ৩২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১৩ জন ছিলেন ত্রাণের সন্ধানে। একই দিনে খাদ্য সংকট ও অপুষ্টিতে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এই হত্যাযজ্ঞ এমন সময় ঘটছে যখন ইসরায়েল গাজা সিটিতে হামলা আরও তীব্র করেছে এবং সম্প্রতি নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা শহরটি দখলের পরিকল্পনা অনুমোদন দিয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে লাখো ফিলিস্তিনিকে দক্ষিণ গাজায় গাদাগাদি করে বসবাসে বাধ্য করা হতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজা সিটির একটি আবাসিক ভবনে ইসরায়েলি বিমান হামলায় আটজন নিহত হন এবং তুফাহ এলাকায় অন্য এক হামলায় আরও দুজন প্রাণ হারান। কয়েকটি চিকিৎসা সূত্রও এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। এদিকে উত্তর গাজার বড় অংশ এখন সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। শহরের বাসিন্দারা নতুন করে বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কায় আতঙ্কিত, কারণ ইসরায়েল শহর ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে তাদের আরও দক্ষিণে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
বাসিন্দা ওয়ালা সুবহ জানান, যুদ্ধ শুরুর পর তিনি উত্তরাঞ্চলের বেইত লাহিয়া থেকে গাজা সিটিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এখন আর কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই, আয়ও নেই—তিনি একজন বিধবা। তার ভাষায়, ‘যদি আমাদের বের করে দিতে চায়, তবে অন্তত আমাদের থাকার জায়গা দিক, তাঁবু দিক, বিশেষ করে বিধবা, শিশু আর অসুস্থদের জন্য। এখানে কয়েকজন নয়, লাখো মানুষকে বাস্তুচ্যুত করা হবে, যাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।’
উম সাজেদ হামদান নামে আরেক নারী বলেন, তিনি পাঁচ সন্তানের মা, স্বামী বন্দি—তাই সন্তানদের নিয়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পালানো সম্ভব নয়। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, ‘আল-মাওয়াসিতে যাওয়ার চেয়ে আমি গাজা সিটিতেই মৃত্যুর মুখোমুখি হতে রাজি।’
ভারী মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ফলে পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে ভূমিধস ও আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে, যার ফলে কমপক্ষে ২৩ জনের মৃত্যু আরও অনেকে আটকা পড়েছেন।
দেশটির দুর্যোগ কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে শুক্রবার পেশোয়ার থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
আঞ্চলিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগটিতে পাহাড়ি খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে কমপক্ষে ১৬ জন এবং পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে সাত জন প্রাণ হারিয়েছেন।
ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্রদেরকে বাদ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে বৈঠকের প্রাক্কালে বৃহস্পতিবার লন্ডনে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
লন্ডন থেকে এএফপি জানিয়েছে, স্টারমার ইউক্রেনের নেতা জেলেনস্কিকে তার ডাউনিং স্ট্রিট বাসভবনে উষ্ণ আলিঙ্গন ও হাত মেলানোর মাধ্যমে স্বাগত জানান।
এর কয়েক ঘণ্টা পরেই জেলেনস্কি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একটি ভার্চুয়াল ফোনালাপে অংশ নেন।
শুক্রবার আলাস্কার একটি বিমান ঘাঁটিতে ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে প্রথমবারের মতো সাক্ষাৎ হতে যাচ্ছে। এতে করে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর পুতিন পশ্চিমা মাটিতে প্রবেশ করার সুযোগ পাচ্ছেন।
তবে ইউক্রেনে অব্যাহত রুশ হামলা ও জেলেনস্কিকে এই বৈঠকে আমন্ত্রণ না করায় উদ্বেগ বেড়েছে। কারণ ট্রাম্প ও পুতিন এমন একটি চুক্তি করতে পারেন, যার ফলে ইউক্রেনকে বড় কিছু ছাড় দেওয়া লাগতে পারে।
তবে স্টারমার বুধবার বলেন, ইউক্রেনে তিন বছরের বেশি যুদ্ধের পর এখন ‘একটি সম্ভাব্য’ যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের সুযোগ রয়েছে।
এদিকে শুক্রবার ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধবিরতি নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করা হলেও এরই মধ্যে ইউক্রেন রাশিয়ায় ডজনখানেক ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এতে তিন জন আহত হয় এবং ভোলগোগ্রাদ শহরের একটি তেল শোধনাগারে আগুন লেগে যায়।
কিয়েভ দাবি করেছে, এই হামলাগুলো মস্কোর নিত্যদিনের মিসাইল ও ড্রোন হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ন্যায্য।
জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি রাশিয়াকে কোনো ভূখণ্ড ছেড়ে দেবেন না। ইউরোপীয় নেতারা আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করেন, ইউক্রেনের জন্য কোনো ছাড় দেওয়া ছাড়াই মার্কিন প্রেসিডেন্ট যুদ্ধবিরতির দিকে নজর দেবেন।
মন্তব্য