× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য ইভেন্ট শিল্প উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ কী-কেন ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও ক্রিকেট প্রবাসী দক্ষিণ এশিয়া আমেরিকা ইউরোপ সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ শারীরিক স্বাস্থ্য মানসিক স্বাস্থ্য যৌনতা-প্রজনন অন্যান্য উদ্ভাবন আফ্রিকা ফুটবল ভাষান্তর অন্যান্য ব্লকচেইন অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

আন্তর্জাতিক
ব্রিটিশ রাজে বর্ণবাদের দেড়শ বছর নতুন শিকার মেগান
google_news print-icon

ব্রিটিশ রাজে বর্ণবাদের দেড় শ বছর!

ব্রিটিশ-রাজে-বর্ণবাদের-দেড়-শ-বছর-
রানী ভিক্টোরিয়ার ধর্মসন্তান ভিক্টোরিয়া গৌরাম্মা (বামে) এবং ডাচেস অফ সাসেক্স মেগান মার্কেল (বামে)।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের দাদার দাদি ভিক্টোরিয়ার ১৮৬০’র দশকে বিশ্বের নানা প্রান্তের ভিন্ন বর্ণের মানুষকে ‘গডচিলড্রেন’ বা ‘ধর্মসন্তান’ হিসেবে দত্তক নেন। মেগানের ভাগ্যকে তাদের সঙ্গেই মেলাচ্ছেন ইতিহাসবিদরা।

ব্রিটিশ সিংহাসনের ষষ্ঠ উত্তরাধিকারী প্রিন্স হ্যারিকে বিয়ে করার সুবাদে রাজপরিবারের সদস্য হয়েছেন আফ্রো-আমেরিকান বংশোদ্ভূত সাবেক হলিউড অভিনেত্রী মেগান মার্কেল। তিনি প্রথম নন; তার আগেও শ্বেতাঙ্গ রাজপরিবারের সদস্য হিসেবে যুক্ত হয়েছে ভিন্ন বর্ণের আরো অনেকে।

অবশ্য মেগানের মতো নাম-যশ-খ্যাতি আর কারও ছিল না।

রাজপরিবারে পা রাখার আগেই নিজ পরিচয় ও যোগ্যতায় শক্ত অবস্থান তৈরি করেছিলেন সাধারণ পরিবারে জন্ম নেয়া মেগান। হলিউড অভিনেত্রী হিসেবে নাম ছড়ানো শুরু হয় তার; কাজ করেছেন সমাজকল্যাণ আর নারী অধিকার কর্মী হিসেবেও।

ব্রিটিশ রাজপরিবারের বধূ হতে নিয়ম মেনে অভিনয় ছাড়লেও এখনও নিয়মিত সংবাদ শিরোনাম দেখা যায় মেগানের নাম। স্বামী ডিউক অফ সাসেক্স প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে প্রখ্যাত আমেরিকান উপস্থাপক অপরাহ উইনফ্রের একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সবশেষ আলোচনায় আসেন ডাচেস অফ সাসেক্স মেগান।

২০১৮ সালে বিয়ের পর থেকে রাজপরিবারে এবং সংবাধমাধ্যমে কীভাবে বর্ণবাদী আচরণের শিকার হয়েছেন, অনুষ্ঠানে সেটাই তুলে ধরেন হ্যারি-মেগান দম্পতি।

আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় আসাসহ রাজপরিবারের সঙ্গে থাকাকালীন নানা অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন মেগান।

তিনি বলেছেন, ‘রাজপরিবারের সদস্য হলাম যেদিন, তারপর থেকে রাজপরিবারকে বিদায় জানিয়ে যুক্তরাজ্য ছাড়ার আগ পর্যন্ত নিজের পাসপোর্ট, গাড়ি চালানোর অনুমতিপত্র, আমার চাবির চেহারাও দেখিনি আমি। সব নিয়ে নেয়া হয়েছিল আমার কাছ থেকে।’

মেগান ও হ্যারি সুনির্দিষ্ট কারও নাম উল্লেখ না করে অভিযোগের তীর তুলেছেন রাজপরিবার পরিচালনা করা ‘দ্য ফার্ম’-এর বিরুদ্ধে।

ব্রিটিশ রাজে বর্ণবাদের দেড় শ বছর!
অপরাহ উইনফ্রের সঙ্গে প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেল

মেগান জানান, মানসিকভাবে ভেঙে পড়ায় মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে চাইলে তাতেও বাধা দেয় এই কথিত ‘ফার্ম’।

কাকে বা কাদের নিয়ে এই ‘ফার্ম’, কীভাবে পরিচালিত হয় সেটি, মেগানের বিরুদ্ধে বর্ণবাদ কীভাবে উসকে দিয়েছে তারা, এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছে দ্য টাইমস।

এ প্রসঙ্গে উঠে আসে ‘রয়্যালস অ্যান্ড রেবেলস: দ্য রাইজ অ্যান্ড ফল অফ দ্য শিখ এম্পায়ার’-এর লেখক ইতিহাসবিদ প্রিয়া আটওয়ালের গবেষণার কথা। ব্রিটেন ও দক্ষিণ এশিয়ার সাম্রাজ্য, রাজতন্ত্র ও সাংস্কৃতিক রাজনীতি বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রে মেগান-হ্যারির সাক্ষাৎকার প্রচারের একদিন আগে, গত ৭ মার্চ টুইটারে নিজের মত তুলে ধরেন আটওয়াল। সেখান থেকে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের দাদার দাদি- ১৮৩৭ সাল থেকে ১৯০১ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা রানি ভিক্টোরিয়ার ‘গডচিলড্রেন’ বা ‘ধর্মসন্তানদের’ কথা জানা যায়।

১৮৫০ থেকে ১৮৬০’র দশকে তৎকালীন গ্রেট ব্রিটেন সাম্রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভিন্ন বর্ণের এই ব্যক্তিরা রানীর ‘ধর্মসন্তান’ হিসেবে রাজপরিবারে ঠাঁই পান। অর্থাৎ ধর্মীয় বিধি অনুসারে তাদের লালনপালনের দায়িত্ব নেন রানি ভিক্টোরিয়া।

আটওয়াল বলছেন, সে সময় সেই ‘ধর্মসন্তানদের’ সঙ্গে যেমন আচরণ হতো রাজপরিবারে, ঠিক তেমনটাই হয়েছে মার্কেলের সঙ্গেও। দেড় শ বছরেও ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের বৈষম্যপূর্ণ আচরণে কোনো পরিবর্তন আসেনি।

আটওয়াল আরও বলেন, ‘রাজপরিবারের সংস্কৃতির গোড়াতেই গলদ। নিজেদের ভাবমূর্তি রক্ষাই তাদের জন্য সবকিছু। মুকুট ছাড়া আর কিছুই গ্রাহ্য করে না তারা। কোনোভাবে এতে আঘাত আসছে বলে মনে হলে যেকোনো মানুষকে সরিয়ে দিতেও দ্বিধা করেনি কখনো।

রানী ভিক্টোরিয়ার ‘ধর্মসন্তান’ ও রাজপরিবারের নতুন সদস্য

ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ব্রিটেন, ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ও ব্রিটিশ রাজতন্ত্রে বড় পরিবর্তন আসে। সারা বিশ্বে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তনের নাটকীয় সূচনাও তখনই। বিশেষ করে ১৮৫৮ সালে সাম্রাজ্যের পরিধি তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশ পর্যন্ত বিস্তার এবং এশিয়া ও আফ্রিকায় বাণিজ্য সম্প্রসারণ হয় সে সময়।

পশ্চিম আফ্রিকায় জন্ম নেয়া সারাহ ফোর্বস বোনেট্টাকে দুই বছর আটকে রাখার পর তাকে ‘উপহার’ হিসেবে দেয়া হয় রানি ভিক্টোরিয়ার প্রতিনিধি, ব্রিটিশ নৌবাহিনীর এক ক্যাপ্টেনকে। সেই শুরু। এরপর এভাবেই বিশাল সাম্রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ‘ধর্মসন্তান’ হিসেবে অনেক মানুষকে দত্তক নেন রানি।

আটওয়াল জানান, ভীষণ উৎসাহের সঙ্গেই এই তরুণ-তরুণীদের নিজের ছায়ায় নিয়ে এসেছিলেন ভিক্টোরিয়া। কিন্তু আদতে তারা ছিল ব্রিটিশ রানীর ভাবমূর্তি রক্ষার, তার মাহাত্ম্য তুলে ধরার মাধ্যম মাত্র।

ব্রিটিশ রাজে বর্ণবাদের দেড় শ বছর!
কুর্গের ক্ষমতাচ্যুত রাজা ও তার মেয়ে প্রিন্সেস গৌরাম্মা (১৮৫২)

এদের মধ্যে একজন ছিলেন কুর্গের প্রিন্সেস গৌরাম্মা। ভারতের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলে ব্রিটিশ শাসন শুরুর পর ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ১৮৫২ সালে ১১ বছর বয়সে বাবার সঙ্গে ইংল্যান্ডে পৌঁছান তিনি।

খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করা ভারতের কোনো রাজপরিবারের প্রথম সদস্য গৌরাম্মা। রানি ভিক্টোরিয়া তার ধর্মমাতা হওয়ায় দীক্ষা নেয়ার সময় তার নামের সাথে ভিক্টোরিয়া শব্দটি যোগ হয়।

‘প্রিন্সেস’ পদবি দেয়ার পাশাপাশি দামি পোশাক আর অলঙ্কারে সজ্জিত গৌরাম্মাকে রাজপরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত দেখা যেত। কিন্তু তার জীবন, বেড়ে ওঠা সবকিছুতেই কড়া নজরদারি করতেন স্বয়ং রানি।

আটওয়াল জানান, ভিক্টোরিয়ার ধর্মসন্তান হওয়ার পর জীবনে আর কোনোদিন নিজের বাবার সঙ্গে দেখা করতে পারেননি গৌরাম্মা। ধীরে ধীরে মাতৃভাষা হিন্দিতে কথা বলাসহ আরো অনেক অধিকার কেড়ে নেয়া হয় তার। অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে গৌরাম্মাকে দেখা হতো ঔপনিবেশিক মানসিকতার চশমায়। পুরো বিষয়টিই ছিল যে তার আচরণ এবং পুরো মানুষটিকে কীভাবে রাজপরিবারের ভাবমূর্তি তৈরিতে কাজে লাগানো যায়।’

কিশোর বয়সে অনেকবার রাজপ্রাসাদ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেছেন গৌরাম্মা। আটওয়াল জানান, নিজেকে ভীষণ উপেক্ষিত অনুভব করেছিলেন গৌরাম্মা; যার আধুনিক সংস্করণ মেগান।

গৌরাম্মাকে নিজের ঘনিষ্ঠ মহারাজা দুলিপ সিংয়ের সাথে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন রানি ভিক্টোরিয়া।

ব্রিটিশ রাজে বর্ণবাদের দেড় শ বছর!
লাহোরের মহারাজা দুলিপ সিং (১৮৩৭-১৮৯৩)

ভারতের উত্তরাঞ্চলের পাঞ্জাবে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ১৮৫৪ সালে ১৬ বছর বয়সে খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করে যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন দুলিপ। তার সন্তানদের ধর্মমাতা ছিলেন ভিক্টোরিয়া। এই ধর্মসন্তানদের অন্যতম ছিলেন, ইংল্যান্ডে নারীদের ভোটাধিকারের দাবি বিক্ষোভের সূচনা করা সোফিয়া দুলিপ সিং।

১৮৬০’র দশকে তৎকালীন আবিসিনিয়ার (বর্তমান ইথিওপিয়া) সম্রাটের ছেলে প্রিন্স আলামায়ুকে ধর্মসন্তান হিসেবে গ্রহণ করেন ভিক্টোরিয়া। পরে অ্যালবার্ট ভিক্টর পোমেয়ার নামে আরেক কিশোরেরও ধর্মমাতা হন তিনি।

সারাহ ফোর্বস বোনেট্টা আর গৌরাম্মার মতোই এই দুই কিশোরও পদমর্যাদাসম্পন্ন অন্য পরিবারের তত্ত্বাবধানে বেড়ে ওঠেন।

এদের প্রত্যেকের শিক্ষা, আচার-আচরণ ও অন্যান্য প্রশিক্ষণসহ সব সিদ্ধান্তে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকতেন ভিক্টোরিয়া।

আটওয়াল বলেন, ‘রাজপরিবারের সদস্য এবং খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারী হিসেবে তাদের প্রতি সহানুভূতি ও আত্মীয়তার মনোভাব পোষণ করতেন ভিক্টোরিয়া।’

রাজপরিবারের ভাবমূর্তি রক্ষায় কর্তৃত্বারোপ‌

ব্রিটেন ছাড়াও বিশ্বের নানা প্রান্তে যত জায়গায় ব্রিটিশ উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেই পুরো সাম্রাজ্যে নতুন ভাবমূর্তি তৈরি করতে এই ধর্মসন্তানদের দত্তক নিয়েছিলেন ভিক্টোরিয়া, বলেছেন আটওয়াল।

তিনি বলেন, ‘রাজপরিবারের জনসংযোগ তৈরির এখনকার যে চর্চা, সংবাদপত্রসহ সব গণমাধ্যমের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি ও রক্ষার যে প্রবণতা, এর সবটারই গোড়াপত্তন হয়েছে ভিক্টোরিয়ার শাসনামলে।’

ঐতিহাসিক নথিপত্র থেকে জানা যায়, রাজপরিবারের ছবির অ্যালবাম তৈরির ধারণা প্রথম শুরু করেন রানি ভিক্টোরিয়া আর প্রিন্স অ্যালবার্ট।

ব্রিটিশ রাজে বর্ণবাদের দেড় শ বছর!
রানি ভিক্টোরিয়ার প্রথম ধর্মসন্তান সারা ফোর্বস বোনেট্টা ও তার স্বামী জেমস ডেভিস (১৮৬২)

এসব অ্যালবামে গৌরাম্মা-বোনেট্টাসহ ভিক্টোরিয়ার ধর্মসন্তানদের ছবিও সংরক্ষিত রয়েছে; যা জনসাধারণের মধ্যে রাজতন্ত্রকে জনপ্রিয় করে তুলতে বড় ভূমিকা রেখেছে।

আটওয়াল বলেন, ‘দিনে দিনে রাজপরিবারের মানমর্যাদার প্রায় পুরোটাই জনমত-নির্ভর হয়ে গেছে। তাই সময়ের সঙ্গে ভাবমূর্তি রক্ষার ব্যাপারেও তারা আরও অনড় হয়েছে। আর এভাবেই ব্রিটিশ রাজতন্ত্র, সিংহাসন ও রাজপরিবারের স্বার্থরক্ষাকে ঘিরেই যাবতীয় কার্যক্রম বাকিংহাম প্যালেসের; সাম্প্রতিককালে যা সবচেয়ে বেশি।

আর ইতিহাস বলছে, যখনই সেই আদর্শ ভাবমূর্তি রক্ষায় কোনো ধর্মসন্তান ব্যর্থ হয়েছেন কিংবা রাজপরিবারের স্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু করেছেন, তখনই সংবাদমাধ্যমে তাদের ‘খলনায়ক’ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।

১৮৭০’র দশকে ব্রিটিশরাজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন দুলিপ সিং। পাঞ্জাব থেকে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে ব্রিটিশ উপনিবেশ তৈরি, বিলাসবহুল জীবনযাপনের ওপর রানির কর্তৃত্বারোপসহ নানা কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে তার এই বিদ্রোহ। সে সময় তার ব্যাঙ্গাত্মক ছবি প্রকাশ থেকে শুরু করে সংবাদমাধ্যমে নানাভাবে প্রচার চালিয়ে তাকে নেতিবাচক হিসেবে তুলে ধরা হয়।

আটওয়ালের মতে, রাজপরিবারের বর্ণবাদী আচরণের সূচনা হয়েছে সে আমলেই। মেগানের ক্ষেত্রে কেবল সে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়েছে। আধুনিককালে প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে রাজপরিবারের আগ্রাসী প্রবণতা বেড়েছে। প্রকট হয়েছে গণমাধ্যমের পুরোনো আচরণ।

বিংশ শতাব্দীজুড়ে ব্রিটিশ সমাজে বেড়েছে ট্যাবলয়েড পত্রিকার দৌরাত্ম্য। ১৯৯৭ সালে পাপারাজ্জিদের ধাওয়া এড়াতে গিয়ে গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রিন্স হ্যারির মা প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যুসহ সাম্প্রতিক অনেক কেলেঙ্কারি আর দুর্ঘটনায় নাম জড়িয়েছে ট্যাবলয়েড সাংবাদিকদের।

অপরাহ উইনফ্রেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে হ্যারি বলেছিলেন, মায়ের মতো স্ত্রীর সঙ্গেও ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির শঙ্কায় রাজপরিবারের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেয়ার সিদ্ধান্ত তার।

আরও পড়ুন

আন্তর্জাতিক
Womens participation in the renewable energy sector will increase gender equality

‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াবে জেন্ডার সমতা’

‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াবে জেন্ডার সমতা’ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন আয়োজিত রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যান্ড জেন্ডার ইমপ্যাক্ট শীর্ষক গবেষণা ফলাফল আলোচনা অনুষ্ঠানে অতিথিরা। ছবি: নিউজবাংলা
গবেষণা ফলাফল উপস্থাপনের সময় ইন্সপাইরার পরিচালক সালমান রহমান বলেন, ‘প্রথাগতভাবে এ দেশে নারীরাই মূলত বাড়ির রান্নার কাজের সঙ্গে জড়িত। তবে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও পুঁজির ওপর নিয়ন্ত্রণের অভাব নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নারীর সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে। জ্বালানি সংক্রান্ত সরকারি কোনো নীতিমালা বা পরিকল্পনাতেও নারীদের অংশগ্রহণের বিষয়টি অনুপস্থিত থাকায় জেন্ডার সমতা নিশ্চিতে যথেষ্ট উদ্যোগ দেখা যায় না।’

বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে নারীদের অংশগ্রহণ জেন্ডার সমতা নিশ্চিতের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হতে পারে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

বুধবার সকালে রাজধানীর এমজেএফ টাওয়ারের আলোক অডিটোরিয়ামে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) আয়োজিত রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যান্ড জেন্ডার ইমপ্যাক্ট শীর্ষক গবেষণা ফলাফল আলোচনা অনুষ্ঠানে এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়।

উইমেন্স এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড এনার্জি প্রজেক্টের আওতায় এমজেএফের সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণাটি করেছে ইন্সপাইরা অ্যাডভাইজরি অ্যান্ড কনসালটিং লিমিটেড।

গবেষণা ফলাফল উপস্থাপনের সময় ইন্সপাইরার পরিচালক সালমান রহমান বলেন, ‘প্রথাগতভাবে এ দেশে নারীরাই মূলত বাড়ির রান্নার কাজের সঙ্গে জড়িত। তবে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও পুঁজির ওপর নিয়ন্ত্রণের অভাব নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নারীর সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে। জ্বালানি সংক্রান্ত সরকারি কোনো নীতিমালা বা পরিকল্পনাতেও নারীদের অংশগ্রহণের বিষয়টি অনুপস্থিত থাকায় জেন্ডার সমতা নিশ্চিতে যথেষ্ট উদ্যোগ দেখা যায় না।’

নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিত্বকারী ৩৬ জন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার এবং বাংলাদেশ ও একই ধরনের অর্থনীতির চারটি দেশ ও এই খাতে এগিয়ে থাকা আরও চার দেশের সংশ্লিষ্ট নীতিমালা ও পরিকল্পনা বিশ্লেষণের ভিত্তিতে গবেষণা ফলাফল তৈরি হয়েছে।

এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য নবায়নযোগ্য জ্বালানি সংক্রান্ত নীতিমালার মূল স্রোতধারায় জেন্ডার সমতার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে নারীর ক্ষমতায়ন ও জ্বালানি রূপান্তর প্রক্রিয়ার ন্যায্যতা নিশ্চিত করা।

গবেষক সালমান তার উপস্থাপনায় জানান, পর্যাপ্ত জ্ঞান, প্রশিক্ষণ ও দক্ষতার অভাবে এবং জেন্ডার বৈষম্যের কারণে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের নীতিনির্ধারণী অবস্থানে নারীরা পৌঁছাতে পারছে না। এতে জেন্ডার বৈষম্য প্রকট হচ্ছে। প্রশিক্ষণ দেয়া গেলে তৃণমূল পর্যায়ের নারীরাও শুধু নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারকারী হিসেবে নয়, টেকনিশিয়ান, ইঞ্জিনিয়ার এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপক হিসেবেও ভূমিকা রাখতে পারে।

গবেষণার আলোকে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জাতীয় নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা ২০২৩ এবং সমন্বিত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা ২০২২ এখনও খসড়া পর্যায়ে আছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার একটি লক্ষ্য জেন্ডার সমতা অর্জনের জন্য এই দুই নীতিমালায় নারীদের অংশগ্রহণের বিষয়টি সুনির্দিষ্ট ও বিস্তারিতভাবে যুক্ত করা প্রয়োজন। তবে শুধু নীতিমালায় সংযোজনই যথেষ্ট নয়। এর সঙ্গে প্রয়োজন যথাযথ পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন।

‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলে একই সঙ্গে যেমন নারীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমবে, গৃহস্থালি কাজের সময় বাঁচবে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ ও জীবনযাত্রার মান বাড়বে তেমনি ২০৪০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও সহজ হবে।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান।

প্রধান অতিথি বলেন, ‘দেশে জ্বালানির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দশ বছর আগেও ভাবা হয়নি আমাদের এত বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে। গ্রামাঞ্চলেও এখন অনেকে এসি, রাইস কুকার ইত্যাদি যন্ত্রাদি ব্যবহার করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এনার্জি ডিপ্লোম্যাসি নিয়ে যেভাবে কাজ করেছেন, বিশ্বের অনেক সরকারপ্রধানই তা করেননি। নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বেশ কয়েকটি চুক্তি হয়েছে। প্রায় ৩৩টি নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে। আমাদের সোলার, উইন্ড পাওয়ার আছে। একটি হাইড্রো পাওয়ার প্ল্যান্টও আছে।’

তিনি বলেন, ‘কপ সম্মেলনে লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড থেকে যুদ্ধের জন্য প্রচুর বরাদ্দ দেয়া হয়, কিন্তু জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য কোন বরাদ্দ দেয়া হয় না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশই প্রথম নিজস্ব অর্থায়নে একটি ক্লাইমেট ফান্ড করেছে। আমাদের দেশে কার্বন নিঃসরণ খুব কম হলেও আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে গুরুত্ব দিচ্ছি, যেন আমাদের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশনারি নেতৃত্বে বাংলাদেশে নারীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত। স্টেম এডুকেশনে আগ্রহী করার জন্য নারীদের মেন্টরশিপের প্রয়োজন। সারা পৃথিবীতে রিনিউয়েবল এনার্জি সেক্টরে মাত্র ৩২ ভাগ নারী আছে। আমাদের পুরো লেবার ফোর্সে এখন ৪০ শতাংশ নারী আছেন। নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাওয়ায় জিডিপিতেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।’

ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্লান বাস্তবায়নের ফলে প্রচুর কর্মসংস্থান তৈরি হবে। এক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। প্রতি বছর সব মন্ত্রণালয় যেভাবে নারীদের উন্নয়নের জন্য বাজেট বরাদ্দ দিচ্ছে তাতেও অংশগ্রহণ বাড়ছে। এক্ষেত্রে আরো গবেষণা ও বিশ্লেষণের প্রয়োজন যে কীভাবে নারীদের অংশগ্রহণ ও জীবনযাত্রার মান বাড়ানো যায়। নারীদের জীবনমানের উন্নয়নে নীতিনির্ধারকদের ভূমিকা রাখতে হবে।’

এই অনুষ্ঠানে আলোচকদের মধ্যে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করায় নারী-পুরুষ সবার ওপরই ভীষণ নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তা ছাড়া জীবাশ্ম জ্বালানির খরচ দিন দিন বাড়ছে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির কমছে। ফলে অর্থনৈতিকভাবে এটি সবাইকে লাভবান করবে।’

২০৪১ সাল নাগাদ নবায়নযোগ্য জ্বালানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিষয়ে মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যানের সঙ্গে সমন্বিত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা ২০২২ সমন্বয় করার আহ্বান জানান ড. মোয়াজ্জেম।

নীতিনির্ধারণী জায়গায় মূলত পুরুষরা থাকায় পুরো সেক্টরেই এর প্রভাব পড়ছে বলে মনে করেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা সেন্টার ফর জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক ড. তানিয়া হক।

তিনি বলেন, ‘নীতিমালা তৈরির সময় জেন্ডার লেন্স থেকে বিষয়টি দেখতে হবে। নারীদের মধ্যেও নানা ভাগ আছে যেমন, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন, চাকরিজীবী, গৃহিণী, প্রবীণ ইত্যাদি। সবার সুবিধার বিষয় বিবেচনা করেই নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। পুরুষতান্ত্রিক খাত হওয়ায় পুরুষদের ওপরও কিন্তু এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তাই পুরুষদের স্বার্থেও নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো প্রয়োজন।’

এটুআই-এর জেন্ডার স্পেশালিস্ট নাহিদ শারমিন বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রয়োজন তাহলে তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবে। সেই সঙ্গে তাদের দক্ষতা বাড়াতে হবে যেন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে পারে।’

অনুষ্ঠানের সভাপ্রধান মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে নারীদের অংশগ্রহণ নিয়ে সাধারণত তেমন আলোচনা হয় না। অথচ গৃহস্থালি কাজে জ্বালানি ব্যবহারের সঙ্গে মূলত নারীরাই জড়িত। নবায়নযোগ্য জ্বালানিই আমাদের ভবিষ্যত। এই খাতে আমাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে এবং নারীদের কথা মাথায় রেখে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।’

মন্তব্য

আন্তর্জাতিক
4 students of Karnataka face punishment for wearing burka

বোরকা পরে নেচে শাস্তির মুখে কর্ণাটকের ৪ ছাত্র

বোরকা পরে নেচে শাস্তির মুখে কর্ণাটকের ৪ ছাত্র বোরকা পরে নাচছেন ভারতের কর্ণাটের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত
একটি বিবৃতিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, যারা নেচেছে তারা মুসলিম ছাত্র ছিলেন। এটি অনুমোদিত অনুষ্ঠানের অংশ ছিল না।

ভারতের কর্ণাটকের মেঙ্গালুরুর একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অনুষ্ঠানে বোরকা পরে নেচে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন চার ছাত্র। সেন্ট জোসেফ নামের কলেজটির স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে বুধবার এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। যাতে দেখা যায়, হিন্দি গান ছেড়ে বোরকা পরে নাচছে ওই চার ছাত্র।

কলেজটির প্রিন্সিপালের বরাত দিয়ে এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ঘটনায় ওই চার ছাত্রকে সাময়িক বহিষ্কারের পাশাপাশি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ।

একটি বিবৃতিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, যারা নেচেছে তারা মুসলিম ছাত্র ছিলেন। এটি অনুমোদিত অনুষ্ঠানের অংশ ছিল না। সম্প্রীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এমন কোনো কার্যক্রমকে সমর্থন বা ক্ষমা করে না কর্তৃপক্ষ।

চলতি বছরের শুরুতে ভারতের কর্ণাটকে হিজাব বিতর্ক শুরু হয়। সেই ঘটনার জেরে শুধু কর্ণাটক নয়, গোটা ভারতে বিতর্ক ও সংঘাত হয়। দীর্ঘ সময় বেশ কিছু স্কুল ও কলেজ কর্ণাটক রাজ্যে বন্ধ রাখা হয়েছিল।

বিষয়টি শেষ পর্যন্ত ভারতের সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। স্কুলে হিজাব পরা যাবে কি যাবে না, তা নিয়ে বিতর্কের অবসান সুপ্রিম কোর্টের সাধারণ বেঞ্চেও হয়নি। বিষয়টি উচ্চতর বেঞ্চে পাঠানোর জন্য আবেদন করেন বিচারপতিরা।

আরও পড়ুন:
বোরকা পরা সাংবিধানিক অধিকার: হাইকোর্ট
সুইজারল্যান্ডে বোরকা নিষিদ্ধ নিয়ে গণভোট ৭ মার্চ

মন্তব্য

আন্তর্জাতিক
Harry Meghan relationship trailer on Netflix

হ্যারি-মেগান সম্পর্কের ট্রেলার নেটফ্লিক্সে

হ্যারি-মেগান সম্পর্কের ট্রেলার নেটফ্লিক্সে নেটফ্লিক্স ডকুমেন্টারিতে সাসেক্সের ডিউক এবং ডাচেস। ছবি: সংগৃহীত
ডকুমেন্টারিতে হ্যারি-মেগান দম্পতির কিছু ব্যক্তিগত ছবি রয়েছে, এগুলো আগে কখনও প্রকাশ হয়নি। বলা হচ্ছে, এটি একটি বৈশ্বিক ঘটনা।’   

ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য হ্যারি এবং তার স্ত্রী মেগানের নতুন ডকুমেন্টারি সিরিজের ট্রেলার প্রকাশ করেছে নেটফ্লিক্স। এক মিনিটের ট্রেলারে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের সঙ্গে দম্পতির অপ্রকাশিত কিছু সাদা-কালো ছবি দেখা গেছে।

ট্রেলারে দম্পতিকে প্রশ্ন করা হয় কেন তারা এই ডকুমেন্টারি বানাতে চান? যার উত্তরে হ্যারি বলেন, ‘বন্ধ দরজার আড়ালে কি ঘটছে তা কেউ দেখে না।

‘পরিবারকে রক্ষা করার জন্য যা যা করা সম্ভব আমাকে তাই করতে হয়েছিল’... এ সময় পাশে থাকা মেগানকে চোখের পানি মুছতে দেখা যায়।

মেগানের একটি বক্তব্য দিয়ে ট্রেলারটি শেষ হয়।

মেগান বলেন, ‘যেহেতু বিষয়টা এতোই গুরুত্বপূর্ণ, তখন আমাদের গল্পটা আমাদের কাছ থেকেই শোনা ভালো না?’

ট্রেলারে যে ছবিগুলো প্রকাশ হয়েছে সেগুলোর মধ্যে আছে, ২০২০ সালে কমনওয়েলথ ডে সার্ভিসে বড় ভাই উইলিয়াম ও ভাবী কেটের সঙ্গে হ্যারি-মেগান দম্পতির ছবি। রাজপরিবারের সদস্য হিসেবে জনসম্মক্ষে তাদের সর্বশেষ উপস্থিতি ছিল সেদিন।

রান্নাঘরের টেবিলে বসা মেগানকে চুমো খাচ্ছেন হ্যারি...এমন আনন্দের মুহূর্তের ছবিও আছে ট্রেলারে। এ ছাড়া নবদম্পতি তাদের বিয়েতে নাচছে, একটি ফটোবুথে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে এবং মেগানের বেবি বাম্পের ছবিও প্রকাশ হয়েছে ট্রেলারে।

এসবের পাশাপাশি তাদের কষ্টের মুহুর্তগুলোও স্থান পেয়েছে ট্রেলারে; যেখানে মেগানকে চোখের পানি মুছতে এবং মুখ ঢেকে বসে থাকতে দেখা যায়।

হ্যারি-মেগান সম্পর্কের ট্রেলার নেটফ্লিক্সে

হ্যারি অ্যান্ড মেগান শিরোনামের ডকুমেন্টারিটিকে একটি ‘গ্লোবাল ইভেন্ট’ বলে বর্ণনা করছে নেটফ্লিক্স। ‘শিগগিরই আসছে’ লেখা দিয়ে ট্রেলারটি শেষ হয়। ধারণা করা হচ্ছে, ৮ ডিসেম্বর এটি মুক্তি পাবে।

নেটফ্লিক্স জানায়, বিয়ের পরপর হ্যারি-মেগানের গোপন দিনগুলো; রাজপরিবার থেকে তাদের দূরে সরে যাওয়া বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে ডকুমেন্টারিতে। এতে হ্যারি-মেগান দম্পতির বন্ধু, তাদের পরিবার এবং রাজকীয় ইতিহাসবিদদের বক্তব্যও রয়েছে।

নেটফ্লিক্স জানায়, সিরিজটিতে এক দম্পতির প্রেমের গল্পের চেয়েও বেশি কিছু রয়েছে। এখানে বিশ্ব এবং একে-অপরের সঙ্গে আমরা কেমন আচরণ করি, সেসবের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

এমি-জয়ী পরিচালক লিজ গারবাস এটি নির্মাণ করেছেন। দুইবার একাডেমি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন তিনি।

রাজতন্ত্র ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাওয়ার পর নেটফ্লিক্স এবং স্পোটিফাই-এর সঙ্গে ‘লোভনীয়’ চুক্তিতে সই করেন হ্যারি-মেগান। বলা হচ্ছে, এই চুক্তির মূল্য ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড।

মন্তব্য

আন্তর্জাতিক
Outrage over French cartoons denigrating Qatars football team

কাতার ফুটবল দলকে হেয় করে ফরাসি কার্টুনে ক্ষোভ

কাতার ফুটবল দলকে হেয় করে ফরাসি কার্টুনে ক্ষোভ ব্যঙ্গচিত্র এঁকে সমালোচনার ‍মুখে পড়েছে ফরাসি সাময়িকী।
ফরাসি ব্যঙ্গাত্মক সাপ্তাহিক লে ক্যানার্ড এনচাইনের ওই কার্টুনে তাদের যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তাতে ‘বর্ণবাদ ও ইসলাম বিদ্বেষ’ মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীা।

ফিফা বিশ্বকাপের দেরি নেই খুব বেশি, আসছে খেলা নিয়ে নানা খবর। তবে এসবের ভিড়ে আয়োজক দেশ কাতারের দলের খেলোয়াড়দের দিয়ে ফ্রান্সের একটি কার্টুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

ফরাসি ব্যঙ্গাত্মক সাপ্তাহিক লে ক্যানার্ড এনচাইনের ওই কার্টুনে তাদের যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তাতে ‘বর্ণবাদ ও ইসলাম বিদ্বেষ’ মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীা।

সাময়িকীটির অক্টোবরের শেষ সংখ্যায় প্রকাশিত ওই কার্টুনে কাতারের খেলোয়াড়দের কাউকে বড় দাড়ি, কাউকে মুখে মাস্কসহ হাতে আগ্নেয়াস্ত্র, কাউকে রকেট লঞ্চারও বহন করতে দেখা গেছে। কার্টুনে ১০ নম্বরের জার্সি পরানো এক খেলোয়াড়কে পরানো হয়েছে সুইসাইডাল ভেস্ট।

এই খেলোয়াড়েরা ছুটছেন একটি ফুটবলের পেছনে। তাদের পেছনে লেখা কাতার। সাতজনের পাঁচজনের পোশাকের রঙ নীল, দুজনের কালো। তাদের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন মুসলিম পোশাকের কয়েকজন পুরুষ।

কদিন ধরেই এ কার্টুন নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে কাতারজুড়ে। বক্তব্য দিয়েছে দেশটির জাতীয় গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষও। অন্তত খেলার পরিবেশ বজায় রাখতে অনুরোধ করেছে তারা।

প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় গ্রন্থাগারের সভাপতি হামাদ আল-কাওয়ারী কাতারের ক্রীড়াঙ্গন দেখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, কাতারে এমনকি কঠোর ব্যঙ্গকেও স্বাগত জানানো হয়। কিন্তু তারা কাতারকে আক্রমণ করতে এবং হেয় করতে মিথ্যা, ঘৃণা এবং ক্ষোভের আশ্রয় নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সাময়িকীটির বিরুদ্ধে ইসলাম বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ তুলে কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তারা বলছেন, অক্টোবর সংখ্যার প্রচ্ছদে নারীদের প্রতিকৃতি আঁকা হয়েছে। এতে পুরো শরীরে কালো কাপড়ে ঢাকা অবস্থায় দেখানো হয়েছে তাদের।

এ প্রেক্ষাপটে গত সপ্তাহে কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানি দোহারের বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর আচরণকে হামলা উল্লেখ করে তাদের ‘ভন্ডামি’ থামাতে বলেন। এর বিরুদ্ধে নিন্দা করেন তিনি।

তিনি বলেন, এই বিতর্কিত কর্ম করা হচ্ছে অল্প কিছু মানুষের দ্বারা। এসব দেশের মানুষই সবচেয়ে বেশি টিকিট কিনেছেন। যে ১০টি দেশ কাতার বিশ্বকাপের সবচেয়ে টিকিট কিনেছে তার মধ্যে ইউরোপের ফ্রান্সও একটি বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আল থানি।

এর আগে অবশ্য ফরাসি সাময়িকী ‘শার্লি হেবদো’তে প্রকাশিত ব্যঙ্গচিত্র নিয়েও বেশ সমালোচনা হয় বিশ্বজুড়ে। ওই কার্টুনে একটি ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করা হয়। এতে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে কটাক্ষ করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। সাম্প্রতিক ঘটনার পর ওই প্রসঙ্গও সামনে আনছেন অনেকে।

কাতারের বিরুদ্ধে পরিবেশ বিপর্যয় ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে ফ্রান্সের অনেক শহর এরই মধ্যে বড় পর্দায় এবারের বিশ্বকাপ না দেখানোর কথা জানিয়েছে।

অবশ্য এসব বিতর্ক এক পাশে রেখে ২০ নভেম্বর হতে যাওয়া এই বিশ্বকাপে নিরাপত্তাকর্মী পাঠাতে কাতারের সঙ্গে চুক্তি করেছে ফ্রান্স। এ নিয়ে দেশীয় গণমাধ্যমের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে সরকারকে।

আরও পড়ুন:
৬ হাজার আর্জেন্টাইন সমর্থক নিষিদ্ধ
বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত মেসি
মাঠে করোনা পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা তুলে নিল কাতার

মন্তব্য

আন্তর্জাতিক
How Indian Sage really is

ঋষি আসলে কতটা ভারতীয়  

ঋষি আসলে কতটা ভারতীয়   ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। ছবি: সংগৃহীত
জিও নিউজ বলছে, ৪২ বছর বয়সী ঋষি ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটনে একটি হিন্দু-পাঞ্জাবি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তার দাদা-দাদি পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের গুজরানওয়ালা শহরে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং সেখানেই বেড়ে উঠেছেন।

প্রথম হিন্দু ও কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি হিসেবে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হয়ে ইতিহাস গড়েছেন দেশটির সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক।

জিও নিউজ বলছে, ৪২ বছর বয়সী ঋষি ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটনে একটি হিন্দু-পাঞ্জাবি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তার দাদা-দাদি পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের গুজরানওয়ালা শহরে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং সেখানেই বেড়ে উঠেছেন।

তবে অদ্ভূত উপায়ে ঐতিহ্যগতভাবে ভারত এবং পাকিস্তান দুই দেশেরই ঋষি। তিনি একজন হিন্দু অনুশীলনকারী; গীতার ওপর হাত রেখে কমন্সে শপথ নিয়েছেন।

ঋষির দাদা রামদাস সুনাক চাকরিসূত্রে গুজরানওয়ালা ছেড়ে ১৯৩৫ সালে কেনিয়ার নাইরোবিতে চলে যান। এর পর রামদাসের স্ত্রী সুহাগ রানী সুনাক তার শাশুড়ির সঙ্গে গুজরানওয়ালা থেকে দিল্লিতে চলে যান। দুই বছর দিল্লিতে কাটানোর পর ১৯৩৭ সালে স্বামীর কাছে কেনিয়ায় ফেরেন তিনি।

রামদাস ও সুহাগ দম্পতির ৬ সন্তান; ৩ ছেলে, ৩ মেয়ে। ঋষির বাবা যশবীর সুনাক ১৯৪৯ সালে নাইরোবিতে জন্মগ্রহণ করেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে লেখাপড়ার জন্য ১৯৬৬ সালে তিনি লিভারপুলে চলে আসেন। ভর্তি হন ইউনিভার্সিটি অফ লিভারপুলে। লিসেস্টারে ১৯৭৭ সালে উষাকে বিয়ে করেন যশবীর।

তিন বছর পর ১৯৮০ সালে সাউদাম্পটনে ঋষি জন্মগ্রহণ করেন। অবসর নেয়ার আগ পর্যন্ত তার বাবা-মা সফলভাবে ফার্মেসি ব্যবসা চালিয়ে গেছেন।

এক টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘গুজরানওয়ালার একটি পাঞ্জাবি খত্রী পরিবার থেকে সুনাকরা এসেছে। ঋষির দাদা রামদাস সুনাক ১৯৩৫ সালে নাইরোবিতে কেরানি পদে কাজ করার জন্য গুজরানওয়ালা ছেড়ে চলে যান।’

ঋষি যে পরবর্তী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হবেন, তা স্পষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টুইটারে পাকিস্তানি নেটিজেনরা ঋষিকে নিজেদের দাবি করে আসছে।

টুইটে একজন লিখেছেন, ‘আমি মনে করি পাকিস্তানেরও ঋষি সুনাকের ওপর দাবি করা উচিত। কারণ তার দাদা গুজরানওয়ালার বাসিন্দা। তারা সেখান থেকে কেনিয়া এবং তারপর ব্রিটেনে চলে যান।’

অন্য একজন লেখেন, ‘বাহ! কী অসাধারণ অর্জন। একজন পাকিস্তানি এখন ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ পদে আরোহণ করেছেন। আত্মবিশ্বাস থাকলে সবই সম্ভব।’

অনেকেই আবার লিখেছেন, ঋষির এই অর্জন ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশের জন্যই আনন্দের ঘটনা।

একজন লেখেন, ‘গুজরানওয়ালার এক পাঞ্জাবি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন এই আশা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঘুমাতে যাচ্ছি! এই মুহূর্তে পাকিস্তান ও ভারত দুই দেশেরই যৌথভাবে গর্ব করা উচিত!’

অন্য একজন লেখেন, ‘যেহেতু গুজরানওয়ালা পাকিস্তানের অংশে পড়েছে, তাই ১০০ বছর আগেও যিনি বা যারা এই শহরের বাসিন্দা ছিলেন, তারা আজও পাকিস্তানি।’

লোভনীয় খাবার ও কুস্তির সংস্কৃতির জন্য গুজরানওয়ালা পরিচিত। সড়ক পথে লাহোর থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা গাড়ি চালালে এই শহরে পৌঁছানো যায়।

জিও নিউজ বলছে, দেশভাগের আগে যখন ঋষির দাদা-দাদিরা গুজরানওয়ালায় থাকতেন, তখন শহরটি অন্তত সাতটি গেট দ্বারা বেষ্টিত ছিল। এগুলো প্রবেশ ও প্রস্থান পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

তবে আজকের গুজরানওয়ালা একটি যানজট ও ঘনবসতিপূর্ণ শহর। দেশভাগের আগে এই শহরে সমৃদ্ধশালী একটি হিন্দু সম্প্রদায়ের বাস ছিল।

ঋষি আসলে কতটা ভারতীয়
গুজরানওয়ালা একটি যানজট ও ঘনবসতিপূর্ণ শহর

যখন ব্রিটিশ ভারতে (আজকের ভারত ও পাকিস্তান) সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়, তখন অনেক হিন্দু, শিখ এবং মুসলমান দেশান্তরিত এবং স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হন। অনেক মুসলিম ও হিন্দু পরিবার আজকের ভারত ও পাকিস্তান ছেড়ে কেনিয়া এবং অন্যান্য দেশে চলে যায়।

ব্রিটেনে এশিয়ান এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো ঋষির উত্থানে ভীষণ আশাবাদী। এ ঘটনাকে তারা নতুন যুগের ভোর উল্লেখ করে স্বাগত জানিয়েছে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক থিংঙ্ক ট্যাঙ্ক ব্রিটিশ ফিউচারের পরিচালক সুন্দর কাটওয়ালা বলেন, ‘ঋষির প্রথম ব্রিটিশ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হওয়া একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এক বা দুই দশক আগেও এটা সম্ভব হতো না। ঋষির প্রধানমন্ত্রী পদে আসা এটাই প্রমাণ করে যে ব্রিটেনের সর্বোচ্চ পদটি সব ধর্ম ও জাতিগত পটভূমির মানুষের জন্য উন্মুক্ত।’

ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ড-সমর্থিত ব্রিটিশ ভারতীয় থিঙ্ক ট্যাঙ্ক দ্য ১৯২৮ ইনস্টিটিউট বলছে, একজন ব্রিটিশ ভারতীয়কে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখা অবিশ্বাস্য। আমাদের দাদা-দাদিদের অনেকেই ব্রিটিশদের প্রজা ছিলেন। যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ অফিসে ভারতীয় ঐতিহ্যের কাউকে দেখা সত্যিই দারুন।

আরও পড়ুন:
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে ঋষি সুনাক
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে যারা    
কে হচ্ছেন যুক্তরাজ্যের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী
৪৫ দিনেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ
১৩ বছরেই ফিলিপের প্রেমে ভেসে যান এলিজাবেথ

মন্তব্য

আন্তর্জাতিক
Many girls face huge challenges today Guterres

অনেক মেয়েই আজ ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখে: গুতেরেস

অনেক মেয়েই আজ ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখে: গুতেরেস জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। ছবি: সংগৃহীত
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবসের দশম বার্ষিকীতে আমরা বিশ্বজুড়ে সব কন্যার জীবন ও অর্জনকে উদযাপন করছি। মেয়েরা যখন মানবাধিকার অনুধাবন করতে সহায়তা পায়, তখন তারা নিজেদের সম্ভাবনাগুলোতে পৌঁছাতে পারে এবং ব্যক্তিগত, নিজ সম্প্রদায় ও সমাজের জন্য অপেক্ষাকৃত উত্তম বিশ্ব গড়তে পারে।’

বিশ্বের অনেক মেয়েই আজ ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবসের দশম বার্ষিকীতে মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরের এক বার্তায় এই তথ্য জানানো হয়েছে।

গুতেরেস বলেন, ‘আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবসের দশম বার্ষিকীতে আমরা বিশ্বজুড়ে সব কন্যার জীবন ও অর্জনকে উদযাপন করছি। মেয়েরা যখন মানবাধিকার অনুধাবন করতে সহায়তা পায়, তখন তারা নিজেদের সম্ভাবনাগুলোতে পৌঁছাতে পারে এবং ব্যক্তিগত, নিজ সম্প্রদায় ও সমাজের জন্য অপেক্ষাকৃত উত্তম বিশ্ব গড়তে পারে।

‘মেয়েরা শিক্ষার সুযোগ পেলে স্বাস্থ্যকর, উৎপাদনশীল ও পরিপূর্ণ জীবনযাপনে তাদের সুযোগ আরও বেড়ে যায়। সঠিক স্বাস্থ্যসেবা পেলে তারা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অধিকার সচেতন হয়ে বেড়ে ওঠে।’

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘অনেক মেয়েই আজ ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখে। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে হয়তো তাদের পড়ালেখার ইতি ঘটেছে। সংঘাতের কারণে হয়তো তারা বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তারা হয়তো তাদের শারীরবৃত্তীয় ও প্রজনন অধিকার ভোগের সুযোগ পাচ্ছে না।’

গুতেরেস বলেন, ‘আফগানিস্তানে অব্যাহতভাবে মেয়েদের বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া নিয়ে আমি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। এটা মেয়েদের যেমন ক্ষতি করছে, একইভাবে একটি দেশকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আবারও মেয়েদের পড়ার সুযোগ দিতে তালেবানের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

‘যেকোনো সময়ের তুলনায় আমাদের একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতিকে আরও বেশি জোরদার করতে হবে, যাতে মেয়েরা নিজেদের অধিকার অনুশীলন ও ভোগ করতে পারে। একইসঙ্গে নিজ সম্প্রদায় ও সমাজে সমানভাবে ও নিজের জায়গা থেকে শতভাগ ভূমিকা রাখতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘মেয়েদের জন্য বিনিয়োগ মানে আমাদের সবার ভবিষ্যতের পেছনে বিনিয়োগ। মেয়েরা যেন সব জায়গায় স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে পারে, পড়ালেখার সুযোগ পায় ও নিরাপদ থাকে তা নিশ্চিত করতে আসুন আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবসে আমরা আমাদের প্রচেষ্টা দ্বিগুণ জোরদার করি।’

মন্তব্য

আন্তর্জাতিক
Uttal Iran killed 5 for womens freedom of dress

নারীর পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে উত্তাল ইরান, নিহত ৫

নারীর পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে উত্তাল ইরান, নিহত ৫ ‘সঠিক নিয়মে’ হিজাব না পরায় গ্রেপ্তারের পর মারা যাওয়া মাহসা আমিনিকে (ডানে) কেন্দ্র করে ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে ইরানে। ছবি: এএফপি
কুর্দি নারী মাহসা আমিনিকে ১৩ সেপ্টেম্বর তেহরানের নৈতিকতা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি সঠিকভাবে হিজাব করেননি। পুলিশ হেফাজতে মাহসার হার্ট অ্যাটাক হয়, পরে তিনি মারা যান। এ ঘটনার পর থেকে বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে ইরান।

‘সঠিক নিয়মে’ হিজাব না পরার অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর ২২ বছরের মাহসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে ইরান। তেহরানসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় গত কয়েক দিনে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে।

মাহসার মৃত্যুর পর চলমান বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন অন্তত পাঁচ জন

নারীর পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে এই বিক্ষোভে নারীদের পাশাপাশি ইরানি পুরুষও যোগ দিয়েছেন। রাস্তায় প্রতিবাদের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক নারী নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী পোশাক পরার ঘোষণা দিয়ে ভিডিও পোস্ট করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরাও প্রতিবাদ-বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। রাজধানী তেহরানে আমির কবির বিশ্ববিদ্যালয়, শহীদ বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয় ও তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মাহসার মৃত্যুর প্রতিবাদে সমাবেশ করেছেন।

নারীর পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে উত্তাল ইরান, নিহত ৫
নারীর পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে উত্তাল ইরান

কুর্দি নারী মাহসা আমিনিকে ১৩ সেপ্টেম্বর তেহরানের নৈতিকতা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ইরানের দক্ষিণাঞ্চল থেকে তেহরানে ঘুরতে আসা মাহসাকে একটি মেট্রো স্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি সঠিকভাবে হিজাব করেননি।

পুলিশ হেফাজতে থাকার সময়েই মাহসার হার্ট অ্যাটাক হয়, এরপর তিনি কোমায় চলে যান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার তার মৃত্যু হয়। পুলিশ মাহসাকে হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরিবারের অভিযোগ গ্রেপ্তারের পর তাকে পেটানো হয়।

মাহসার মৃত্যুর প্রতিবাদে গত কয়েক দিন ধরেই উত্তাল ইরান। ফেসবুক ও টুইটারে #mahsaamini এবং #Mahsa_Amini হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে চলছে প্রতিবাদ। ইরানের বিভিন্ন জায়গায় নারীর পোশাকের স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষও চলছে।

ইরানের পশ্চিমাঞ্চলের কুর্দিস্তান প্রদেশের দিভান্দারেহতে সোমবারও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘাত হয়

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে আমির কবির বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী বাহিনীর (আইআরজিসি) আধাসামরিক বাহিনী বাসিজের বিরুদ্ধেও স্লোগান দিতে দেখা গেছে।

নারীর পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে উত্তাল ইরান, নিহত ৫
মাহসা আমিনিকে নিয়ে প্রতিবেদন গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম

কিছু ফুটেজে দেখা যায়, ইরানের কুর্দিস্তান প্রদেশের প্রাদেশিক রাজধানী সানন্দাজ শহরে বিক্ষোভে ইরানের বাধ্যতামূলক হিজাব আইনের প্রতিবাদে অনেক নারী তাদের মাথার স্কার্ফ খুলে ফেলেন। এ সময় বিক্ষোভকারীদের ‘খামিনির মৃত্যু’ বলে স্লোগান দিতে শোনা গেছে।

আয়াতুল্লাহ আলি খোমেনি হলেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা।

প্রাগভিত্তিক রেডিও ফারদা জানিয়েছে, কুর্দি অধ্যুষিত দিভান্দারেহেতে বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনী গুলি ছুড়লে আহত হন ৮ জন।

মাহসাকে দাফনের সময়ও বিক্ষোভকারী গভর্নর ভবনের সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে।

নারীর পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে উত্তাল ইরান, নিহত ৫
নারীর পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে ইরানে চলছে টানা বিক্ষোভ

এর আগে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে তেহরানের পুলিশ কমান্ডার হোসেন রাহিমি বলেন, আমিনিকে নৈতিকতা পুলিশ বাধা দিয়েছে, কারণ তার হিজাব অনুপযুক্ত ছিল। সংবাদ সম্মেলনে আমিনিকে পুলিশের মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেন হোসেন রাহিমি।

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মাহসা আমিনির মৃত্যুর বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া দেশটির নৈতিক পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কর্নেল আহমেদ মিরজাইকে বরখাস্ত করা হয়েছে

ইরানে ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পরই নারীদের জন্য হিজাব বাধ্যতামূলক করা হয়। ইরানের ধর্মীয় শাসকদের কাছে নারীদের জন্য এটি ‘অতিক্রম-অযোগ্য সীমারেখা’। বাধ্যতামূলক এই পোশাকবিধি মুসলিম নারীসহ ইরানের সব জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মের নারীদের জন্য প্রযোজ্য।

এই পোশাকবিধি অনুযায়ী নারীদের জনসমক্ষে চুল সম্পূর্ণভাবে ঢেকে রাখতে হবে এবং লম্বা, ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে।

নারীর পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে উত্তাল ইরান, নিহত ৫
তেহরানের রাস্তায় চলছে বিক্ষোভ-সংঘর্ষ

ইরানি এক সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্ট মাসিহ আলিনেজাদ তার অফিশিয়াল টুইটারে প্রতিবাদী নারীদের ভিডিও শেয়ার করে লিখেছেন, ‘হিজাব পুলিশের হাতে মাহসা আমিনি হত্যার প্রতিবাদে ইরানের নারীরা তাদের চুল কেটে ও হিজাব পুড়িয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। নিজেদের চুল ঢেকে রাখলে আমরা (নারী) স্কুলে যেতে পারব না, চাকরি করতে পারব না। আমরা এই লিঙ্গ বৈষম্যভিত্তিক শাসনে অতিষ্ঠ।’

তিনি আরেক টুইটে বলেন, ‘৭ বছর বয়স থেকে আমরা আমাদের চুল ঢেকে রাখতে বাধ্য। তা না হলে আমরা স্কুলে যেতে পারব না, চাকরি পাব না। আমরা এই লিঙ্গ-বৈষম্যভিত্তিক শাসনের অবসান চাই।’

আরও পড়ুন:
ইরানে নারীর পোশাকের স্বাধীনতার আন্দোলন কি নতুন কিছু
ইরানে বোনের পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে প্রাণ দিচ্ছেন ভাই
ইরানজুড়ে নারীর পোশাকের স্বাধীনতা দাবি, বিক্ষোভে নিহত ৭
হিজাব ছাড়া ভিডিও দেয়ায় ইরানি তরুণীর পৌনে ৪ বছরের জেল
ইরানের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে মামলা

মন্তব্য

p
উপরে