ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মহসেন ফাখরিজাদেহ হত্যায় ইসরাইয়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ জড়িত ছিল বলে দাবি করেছে বিশ্বের প্রাচীনতম ইহুদি পত্রিকা জুইশ ক্রনিকলস।
ব্রিটিশ এ পত্রিকাটি বলছে, ফাখরিজাদেহকে হত্যার আগে এমন নজরদারি চালানো হয়েছিল, যাতে তার নিঃশ্বাসের শব্দও টের পেত মোসাদের গোয়েন্দারা।
বুধবার জুইশ ক্রনিকল- এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তেহরানের উপকণ্ঠে মহসেন ফাখরিজাদেকে হত্যায় অংশ নেন মোসাদের ২০ গোয়েন্দা। প্রায় এক টন ওজনের একটি দূর নিয়ন্ত্রিত বন্দুকের সাহায্যে তাকে হত্যা করা হয়।
ইসরায়েলের একটি গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি বলছে, ইরানের পরমাণু কেন্দ্র থেকে গোপন নথি হাতে পাওয়ার পরই মহসেনকে হত্যার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় ইসরায়েল।
ইরান পরমাণু বোমা বানাতে পারলে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা থাকত মহসেন ফাখরিজাদের। মহসেন দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ও উদ্ভাবন বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। গত বছরের ২৭ নভেম্বর একদল আততায়ীর হামলায় নিহত হন তিনি।
ইরান দাবি করে আসছিল, এই হামলার পেছনে ইসরায়েল জড়িত। তবে এখন পর্যন্ত হামলার দায় স্বীকার করেনি এ ইহুদি রাষ্ট্রটি।
গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে জুইশ ক্রনিকলস তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, প্রায় আট মাস ধরে প্রস্তুতি নেয়ার পর মহসেন ফাখরিজাদেহকে উদ্দেশ করে হামলা চালায় মোসাদের গোয়েন্দারা। আততায়ী দলটিতে ইরানের কয়েকজন নাগরিকও ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫৯ বছর বয়সী ফাখরিজাদেহকে হত্যায় ১৩টি বুলেট খরচ করে মোসাদ। এর সবকটিই নিখুঁতভাবে তার মাথায় বিদ্ধ হয়। মোসাদ জানিয়েছে, ফাখরিজাদে ছাড়া ওই হামলায় অন্য কেউই ক্ষতিগ্রস্ত হননি। হামলার সময় তার স্ত্রী ও ১২ জন দেহরক্ষীও গাড়িবহরে ছিলেন।
জুইশ ক্রনিকলসকে গোয়েন্দাসূত্রটি জানিয়েছে, বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচাতে ‘অত্যন্ত নিখুঁত’ হামলা চালাতে সক্ষম বন্দুক ব্যবহার করা হয়েছিল। এর প্রত্যেকটি যন্ত্রাংশ প্রায় আট মাস ধরে ইরানে গোপনে পাচার করা হয়েছিল।
হামলার আগে এক টন ওজনের বন্দুকটিকে একটি নিসান গাড়ির ওপরে স্থাপন করা হয়। এরপর রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে দূর থেকে ফাখরিজাদেহর গাড়ির ওপর গুলি চালানো হয়। তিনি মারা গেছেন নিশ্চিত হওয়ার পরই বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিসান গাড়িটিকে উড়িয়ে দেয় ইসরায়েলি গোয়েন্দারা। এরপরই সেখান থেকে সটকে পড়ে তারা।
আরও পড়ুন: ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী খুন
ফাখরিজাদেহকে হত্যার পর ইরান দাবি করছিল, তাকে স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রিত অস্ত্রের সাহায্যে হত্যা করা হয়েছে। এমনকি কিছু গণমাধ্যম দাবি করেছিল, হত্যায় ৬২ বন্দুকধারী অংশ নিয়েছিল। জুইশ ক্রনিকল- এর প্রতিবেদনে এমন দাবিকেও নাকচ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এটি এখন প্রমাণিত যে, ইরানের ভূমিতেই দীর্ঘ কয়েক মাস প্রস্তুতি নিয়ে তাদের শীর্ষ বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে মোসাদ।
জুইশ ক্রনিকল এটিও দাবি করেছে, ফাখরিজাদেহকে হত্যায় যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা না থাকলেও অভিযানের ব্যাপারে জানত দেশটি।
পত্রিকাটির মতে, ইরানের বিরোধী পক্ষকে দমনেই সরকার শক্তি খরচে ব্যস্ত থাকায় দেশটির মাটিতে এমন অভিযান চালাতে সক্ষম হয়েছে ইসরায়েল।
ইসরায়লের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাকব নাগেলের মতে, ফাখরিজাদেহ ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে সক্ষম পরমাণু বোমা বানানোর কাজ করছিলেন এমন প্রমাণ আছে মোসাদের কাছে।
জ্যাকব নাগেল বলেন, ‘তিনি (ফাখরিজাদেহ) এই বিষয়ে খুব সিরিয়াস ছিলেন। তিনি যে পরিকল্পনা করেছিলেন, তা বাস্তবায়ন করেই ছাড়তেন। তাই কেউ একজন সিদ্ধান্ত নিল যে, দুনিয়াতে ফাখরিজাদেহর সময় শেষ হয়ে এসেছে।’
জুইশ ক্রনিকল- এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, অন্তত দুই বছর আগে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে বিপুল পরিমাণ গোপন নথি চুরি করতে সক্ষম হয় ইসরায়েলি গোয়েন্দারা। ৩২টি বিশালাকৃতির সিন্দুক থেকে এই নথিগুলো চুরি করা হয়।
প্রায় ৫০ হাজার পৃষ্ঠার কাগজপত্র ও ১৬৩ সিডিতে ইরানের গোপন পরমাণু কর্মসূচির বিস্তারিত লেখা ছিল।
এই নথিগুলো ইসরায়েলের একটি গোপন জায়গায় সংরক্ষিত আছে। দেশটির সরকারের কয়েকটি সূত্র জুইশ ক্রনিকলকে জানিয়েছে, ইরানের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি না করতে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে প্রভাবিত করতে এই নথিগুলো ব্যবহার করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রকে এটি বোঝানোর চেষ্টা করা হবে, পরমাণু ইস্যুতে ইরানকে কোনোভাবেই বিশ্বাস করা উচিত হবে না।
ইসরায়েলের দাবি, ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে করা যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি ইরানের পরমাণু কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে সহায়তা করেছিল।
ইসরায়েলের মতে, ইরানের গোপন নথিগুলো প্রমাণ করে যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে করা চুক্তির বরখেলাপ করেছিল দেশটি। একই নথি দেখিয়ে ইরান প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রকে ট্রাম্পের নীতিতে অটল থাকার ব্যাপারে প্রভাবিত করতে চায় ইসরায়েল।
২০১৮ সালে এই নথিগুলো হাতে পাওয়ার পরই মহসেন ফাখরিজাদেহকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় ইসরায়েল।
দেশটির গোয়েন্দাসূত্র জুইশ ক্রনিকলকে জানিয়েছে, এই নথিগুলোর বেশিরভাগই ফাখরিজাদেহ নিজ হাতে লিখেছিলেন। পরমাণু কর্মসূচির সবকিছুই চলছিল তার নির্দেশনা অনুযায়ী। বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে শুরু করে কর্মী নিয়োগ পর্যন্ত প্রত্যেক ব্যাপারে নিজে সিদ্ধান্ত নিতেন ফাখরিজাদেহ।
২০২০ সালের মার্চ মাস। পুরো বিশ্ব তখন করোনাভাইরাস মহামারিতে নাকাল। এ সময়ই ফাখরিজাদেহকে হত্যার চূড়ান্ত পর্যায়ের কার্যক্রম শুরু করে মোসাদ। ইসরায়েল থেকে চোরাপথে সংস্থাটির একদল গোয়েন্দা ইরানে প্রবেশ করে।
গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে জুইশ ক্রনিকলস বলছে, ‘পুরো দলটির কাজ নিখুঁতভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এমনকি প্রত্যেক মিনিটে তারা কী করবে, সেটি পর্যন্ত। আট মাস তারা ফাখরিজাদেহর ওপর নিবিড় নজরদারি জারি রাখে।’
‘বিষয়টি এমন যেন ফাখরিজাদেহর প্রতিটি নিঃশ্বাসের খবরও গোয়েন্দারা জানত। তারা যেন তার সঙ্গেই থাকত, ঘুমাত, জেগে থাকত, ঘুরে বেড়াত।
‘কোনো সকালে যদি ফাখরিজাদেহ তার দাড়িগোঁফ কামাতেন, তাহলে আফটার শেভের গন্ধ পর্যন্ত গোয়েন্দারা পেয়েছে।’
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠ ফাখরিজাদেহ এমন সব সুযোগসুবিধা ভোগ করতেন, যা অন্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের নাগালের বাইরে ছিল। ইরানের অন্যতম অবকাশ অঞ্চল আবসারদে একটি ভিলা ছিল তার। প্রত্যেক শুক্রবার তেহরান থেকে সেখানে বেড়াতে যেতেন ফাখরিজাদেহ।
মোসাদের গোয়েন্দারা জানতেন, ফাখরিজাদেহ কোন পথে যাতায়াত করেন, কত গতিতে তার গাড়ি চলে এবং গাড়ি থেকে বের হওয়ার জন্য ফাখরিজাদেহ কোন দরজাটি ব্যবহার করেন।
হত্যার দিন একটি কালো রঙের গাড়িতে চড়ে স্ত্রীকে নিয়ে ভিলার দিকে যাচ্ছিলেন ফাখরিজাদেহ। তাদের পাহারা দিচ্ছিল ১২ দেহরক্ষীর একটি গাড়িবহর। এদের অজ্ঞাতসারেই মোসাদের গোয়েন্দারা রাস্তা থেকে নিচে মাটিতে বসে অপেক্ষা করছিল। খেয়াল করছিল তাদের প্রত্যেক গতিবিধি এমনকি নড়াচড়া পর্যন্ত।
ফাখরিজাদের গাড়িটি আগে থেকে ঠিক করা জায়গা পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দূরনিয়ন্ত্রিত অস্ত্রের বোতামে চাপ দেন গোয়েন্দারা। অত্যন্ত নিখুঁত বন্দুকটির ১৩টি বুলেট ফাখরিজাদের মাথায় বিদ্ধ হয়।
জুইশ ক্রনিকলসের কাছে গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, হামলা এত নিখুঁত ছিল যে, ফাখরিজাদেহর থেকে দশ ইঞ্চি দূরে বসা তার স্ত্রীও আহত হননি।
ইরান দাবি করেছিল, ফাখরিজাদেহর নিরাপত্তা প্রধানও হামলায় আহত হয়েছিলেন। তবে এমন দাবি নাকচ করে দিয়েছে মোসাদের সূত্রটি।
হামলার পরই বন্দুকবহনকারী গাড়িটিকে উড়িয়ে দিয়ে নিরাপদে সরে পড়তে সক্ষম হন গোয়েন্দারা।
জুইশ ক্রনিকল- এর মতে, নিজেদের মাটিতে এমন হালমার পরে লজ্জায় পড়ে যায় ইরান। এমনকি মোসাদের শীর্ষ অনেক কর্মকর্তাও এমন সফলতা আশা করেননি।
ইরান জানিয়েছে, ফাখরিজাদেহকে হারানোর ক্ষতি সামলে উঠতে আরও ছয় বছরের মতো সময় লাগবে তাদের। ইসরায়লের মতে, ফাখরিজাদেহ মারা না গেলে হয়ত পরমাণু বোমা বানাতে আর মাত্র তিন মাস সময় লাগত ইরানের।
গোয়েন্দা সূত্রটি জুইশ ক্রনিকলসকে জানিয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র এতে জড়িত ছিল না। এটি পুরোপুরি একটি ইসরায়েলি অপারেশন। এই হত্যা কোনোভাবেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ঘটেনি। নিরাপত্তার স্বার্থেই এমন অভিযান চালানো হয়েছে।
‘যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের সঙ্গে এর কোনো যোগসূত্র নেই। কারণ হামলা হয়েছে বাইডেন নির্বাচিত হওয়ার পরেই। তবে এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে কিছুটা আঁচ দিয়েছিল ইসরায়েল। ঠিক যেভাবে তারা ইরানি জেনারেল সোলেইমানিকে হত্যার আগে ইসরায়েলকে জানিয়েছিল।’
নিজেদের ‘রক্ষার স্বার্থে’ ভবিষ্যতে ইসরায়েল ইরানের ওপর এরকম আরও হামলা চালাবে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা সূত্রটি।
সূত্রটি বলছে, ‘পরিস্থিতি সংকটপূর্ণ হলে আমরা কারও অনুমতির অপেক্ষায় থাকব না।’
এর আগে ২০১০ ও ২০১২ সালে আরও চার জন ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানী খুন হন। এর জন্যও ইসরায়েলকে দায়ী করে আসছে ইরান।
২০১৮ সালে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নির্দিষ্ট করে মহসেন ফাখরিজাদেহর নাম উল্লেখ করেছিলেন।
২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক টাইমস তাকে পরমাণু বোমার জনক রবার্ট ওপেনহাইমারের সঙ্গে তুলনা করেছিল।
আরও পড়ুন:
পাকিস্তানে আকস্মিক বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩২৭ এ পৌঁছেছে। গতকাল শনিবার প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (পিডিএমএ) এর বরাত দিয়ে ডন অনলাইন এ তথ্য জানিয়েছে।
সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, খাইবার পাখতুনখোয়ার বুনের জেলায় প্রাণহানির সংখ্যা বেশি। গিলগিট-বালতিস্তান এবং আজাদ জম্মু ও কাশ্মিরে নজিরবিহীন বন্যায় যথাক্রমে কমপক্ষে ১২ জন এবং নয়জনের প্রাণহানি ঘটেছে, পাশাপাশি ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞও ঘটেছে।
গত শুক্রবার খাইবার পাখতুনখোয়ায় ভয়াবহ দৃশ্য দেখা গেছে। ভারী বৃষ্টিপাত এবং মেঘ ভাঙনের ফলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় একদিনে দুই শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে মোহমান্দে ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযানের সময় বিধ্বস্ত প্রাদেশিক সরকারের একটি হেলিকপ্টারের পাঁচজন ক্রু সদস্যও রয়েছেন।
পিডিএমএর পরিস্থিতি প্রতিবেদন অনুসারে, প্রদেশে গত ৪৮ ঘন্টায় ২০৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন, ১২০ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া ৫০ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
বুনেরে ১৮৪ জন, অ্যাবোটাবাদে শাংলায় ৩৬ জন, মানসেহরা ২৩ জন, সোয়াত ২২ জন, বাজাউরে ২১ জন, বটগ্রাম ১৫ জন, লোয়ার দিরে পাঁচজন এবং দুবেতে এক শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া গিলগিট-বালতিস্তান এবং আজাদ জম্মু ও কাশ্মিরে কমপক্ষে ১২ জন এবং নয়জনের প্রাণহানি ঘটেছে।
বেসরকারি সংস্থা আল-খিদমত ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক মুহাম্মদ খালিদ সিনহুয়া বলেন, ‘বন্যায় গ্রামগুলো ডুবে যাওয়ায় পুরো পরিবার ভেসে গেছে, অন্যদিকে অবিরাম বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট ভূমিধসের ফলে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গেছে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।’
পিডিএমএ এএফপিকে জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপ থেকে মৃতদেহ উদ্ধার এবং নয়টি ক্ষতিগ্রস্ত জেলায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় প্রায় দুই হাজার উদ্ধারকর্মী নিয়োজিত রয়েছেন।
রেসকিউ ১১২২ এর মহাপরিচালক মুহাম্মদ তৈয়ব আবদুল্লাহ ডন ডটকমকে জানিয়েছেন, যেসব এলাকায় অভিযান ‘তীব্র অসুবিধার’ সম্মুখীন হচ্ছে, সেখানে ৮০ জনের একটি বিশেষ উদ্ধার দল গঠন করা হয়েছে।
দাফনের মতো লোকও নেই এক গ্রামে
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বেশন্ত্রি গ্রামে আকস্মিক বন্যার খবর পেয়ে মসজিদের স্থানীয় ইমাম মওলানা আব্দুল সামাদ অন্য গ্রামবাসীর মতো তার পরিবারকেও দ্রুত বাড়ি খালি করার নির্দেশ দেন।
তিনি তখন নফল নামাজ পড়ছিলেন। কিছুক্ষণ পর যখন তিনি বাড়ি ফিরে আসেন, তখন তিনি দেখতে পান আকস্মিক এই বন্যার পানির তোড়ে তার বাড়িসহ অনেকের বাড়িঘর সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।
পাকিস্তানের সরকারি হিসাবে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টিপাত ও বন্যার কারণে গত ৪৮ ঘণ্টায় বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটেছে, যাতে মৃতের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়েছে।
সেখানকার প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (পিডিএমএ) জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ৩০৭ জন নিহত এবং ২৩ জন আহত হয়েছেন। পিডিএমএ -এর সর্বশেষ প্রতিবেদনের অনুযায়ী নিহতদের মধ্যে ২৭৯ জন পুরুষ, ১৫ জন নারী এবং ১৩ জন শিশু রয়েছে। আহতদের মধ্যে ১৭ জন পুরুষ, চার জন নারী এবং দুই জন শিশু রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারী বৃষ্টিপাত এবং আকস্মিক বন্যার কারণে এখন পর্যন্ত মোট ৭৪টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৬৩টি আংশিক এবং ১১টি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে।
এমন দুর্ঘটনা প্রদেশের বিভিন্ন জেলা যেমন সোয়াত, বুনের, বাজাউর, তোরঘর, মানসেহরা, শাঙলা এবং বটগ্রাম। বন্যায় পুরো বাড়ি ভেসে যাওয়ার সময় আব্দুল সামাদের পরিবারের পাঁচজন সদস্য ছিলেন ভেতরে। তারা এখনো নিখোঁজ। কেউ তাদের খবর জানে না।
সেই সময় পীর বাবা সাহেব উপজেলার প্রাক্তন কর্মকর্তা বা তহসিল নাজিম আশফাক আহমদ ইসলামাবাদে ছিলেন। যখন তিনি তার বাড়ি থেকে খবর পান যে বিশাল বন্যা হানা দিতে পারে, তিনি তখনই তার পরিবারকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে যাওয়ার নির্দেশ দেন
কয়েক মিনিটের মধ্যে পরিবারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে গেলে কারও কোনো খোঁজ মেলেনি। এমনকি পুরো গ্রামের কাউকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
এই উদ্বেগজনক অবস্থায় তিনি যখন তার গ্রামে পৌঁছান, তখন সর্বত্র কেয়ামতের দৃশ্য দেখা যায়। পুরো গ্রাম ধ্বংসপ্রাপ্ত, বাড়ি-ঘর বিনষ্ট হয়ে গেছে, আহতরা এখানে সেখানে লুটিয়ে পড়ে আছে।
দুই দেশের যৌথ সীমান্ত সংক্রান্ত নিয়ে আলোচনার জন্য আগামী সপ্তাহে ভারত সফর করবেন চীনের প্রধান কূটনীতিক। একই সঙ্গে দুই দেশ পাঁচ বছর বন্ধ থাকা সীমান্ত বাণিজ্য পুনরায় শুরু করার সম্ভাবনাও পরীক্ষা করছে।
শনিবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব কথা জানিয়েছে। বেইজিং থেকে এএফপি এ সংবাদ জানায়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, ১৮ থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ভারত সফর করবেন এবং চীন-ভারত সীমান্ত ইস্যুতে ২৪তম বিশেষ প্রতিনিধিদলের বৈঠকে যোগ দেবেন।
শীতল ও উচ্চভূমি হিমালয় সীমান্তের মধ্য দিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে অতীতে বাণিজ্য সাধারণত সামান্য পরিমাণে হলেও পুনরায় শুরু হওয়া তা প্রতীকী দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। ২০২০ সালে সীমান্তে সৈন্যদের মধ্যে প্রাণহানিকর সংঘর্ষের পর বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়।
ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, আলোচনা করতে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং সোমবার নয়াদিল্লি সফরে আসবেন। গত জুলাই মাসে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্করও বেইজিং সফরে গিয়েছিলেন।
দুইটি বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তি দক্ষিণ এশিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে কৌশলগত প্রভাব বিস্তারে প্রতিযোগিতা করে আসছে।
তবে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক ব্যবস্থার ফলে সৃষ্ট বিশ্ব বাণিজ্য এবং ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে তারা আটকে থাকা সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের দিকে এগিয়ে গেছে।
কয়েক সপ্তাহে চীনা ও ভারতীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন যে দুই দেশ সীমান্ত বাণিজ্য পুনরায় শুরু করার বিষয়ে আলোচনা করছে।
পুনরায় সরাসরি ফ্লাইট চালু করার এবং পর্যটক ভিসা প্রদান সংক্রান্ত চুক্তিগুলো তাদের সম্পর্ক পুনর্গঠনের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এয়ার কানাডার ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টরা শনিবার থেকে ধর্মঘটে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফলে শতাধিক ফ্লাইট বাতিল ও এক লাখেরও বেশি যাত্রী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
টরন্টো থেকে এএফপি জানায়, এমনকি এর ফলে সংস্থাটির পুরো সেবা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
এয়ার কানাডার ১০ হাজার ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টের প্রতিনিধিত্বকারী কানাডিয়ান ইউনিয়ন অফ পাবলিক এমপ্লয়িজ (সিইউপিই) বুধবার ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘটের নোটিশ দেওয়ার পর স্থানীয় সময় রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে ধর্মঘটের আইনি অবস্থানে রয়েছে।
গণমাধ্যম সিবিসি জানিয়েছে, শেষ মুহূর্তে সমঝোতা না হলে শ্রমিক আন্দোলন ভোর ১টার দিকে শুরু হতে পারে।
প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার যাত্রী পরিবহনকারী এয়ার কানাডা জানিয়েছে, সম্ভাব্য ধর্মঘটের আগে তারা ধীরে ধীরে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেবে। শুক্রবার রাত ৮টা পর্যন্ত সংস্থাটি ৬২৩টি ফ্লাইট বাতিল করেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন এক লাখের বেশি যাত্রী।
ইউনিয়নের দাবি, বেতন বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বোর্ডিং প্রক্রিয়াসহ সমস্ত গ্রাউন্ড কাজের জন্যও যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশনস-এর প্রধান রাফায়েল গোমেজ এএফপিকে বলেন, সারা বিশ্বেই সাধারণত আকাশপথে কাটানো সময়ের ভিত্তিতেই ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টদের বেতন দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, ইউনিয়ন এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে একটি কার্যকর প্রচার চালিয়েছে, যা জনসাধারণের মনে এক ধরনের বৈষম্যের ধারণা তৈরি করেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘একজন সাধারণ যাত্রী যিনি বিমানে যাত্রী পরিবহণের ব্যবসা নিয়ে তেমন কিছু জানেন না তিনি ভাবতে পারেন, ‘আমি বোর্ডিংয়ের জন্য অপেক্ষা করছি, ফ্লাইট অ্যাটেনড্যান্ট সাহায্য করছে, কিন্তু তারা এই কাজে পয়সা পাচ্ছেন না। এটা অবশ্যই সবার সামনে আনার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
এয়ার কানাডা বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তাদের সর্বশেষ প্রস্তাবের বিস্তারিত জানিয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে প্রস্তাবিত শর্ত অনুযায়ী ২০২৭ সালের মধ্যে একজন সিনিয়র ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট গড়ে কানাডিয়ান ৮৭ হাজার ডলার (মার্কিন ৬৫ হাজার) আয় করবেন।
সিইউপিই বলেছে, এই প্রস্তাব ‘মূল্যস্ফীতির নিচে এবং বাজারমূল্যের নিচে’।
ইউনিয়ন ফেডারেল সরকার ও এয়ার কানাডার বাকি বিষয়গুলো স্বাধীন সালিশির মাধ্যমে সমাধানের অনুরোধও প্রত্যাখ্যান করেছে।
গোমেজ বলেন, যদি ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টরা ধর্মঘট করে, তবে তিনি মনে করেন না যে এটি খুব বেশিদিন স্থায়ী হবে।
তিনি বলেন, এটি পিক সিজন। এয়ারলাইন শত শত মিলিয়ন ডলারের রাজস্ব হারাতে চায় না। তারা প্রায় ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টদের সঙ্গে ‘চিকেন গেম’ খেলছে।
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের কয়েকটি জেলায় ভূমিধস ও আকস্মিক বন্যায় ধসে পড়া বাড়িগুলো থেকে আরও ৬৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছেন উদ্ধারকর্মীরা। শুক্রবার রাতভর উদ্ধার অভিযানের পর চলমান প্রাকৃতিক দুর্যোগে সেখানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২০ জনে।
তবে গত ২ জুন থেকে এখন পর্যন্ত সেখানে প্রায় ৫৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে খাইবার পাখতুনখোয়ার প্রাদেশিক দুর্যোগ তত্ত্বাবধান কর্তৃপক্ষ। এই অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
পাকিস্তানের জরুরি সেবা দপ্তরের মুখপাত্র মোহাম্মদ সুহেইল জানিয়েছেন, শুক্রবার প্রবল বর্ষণের ফলে খাইবার পাখতুনখোয়ার বুনার জেলায় বন্যার পানি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এ সময় বহু বাড়িঘর ভেসে গেছে।
বুনার জেলা প্রশাসক কাশিফ কাইয়ুম বলেন, পীর বাবা ও মালিকপুরা গ্রাম দুটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুক্রবারই এসব গ্রামে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
পীর বাবা গ্রামের ৫৩ বছর বয়সী মোহাম্মদ খান বলেন, ‘কোথা থেকে হঠাৎ করে বানের পানি চলে আসল, তা আমরা বুঝতেই পারিনি। মানুষ সরে যাওয়ার মতো সুযোগ পায়নি। এত দ্রুত চারদিক পানিতে ভরে যায় যে অনেকে ঘর ছেড়ে বের হতেই পারেনি।’
বুনার সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক মোহাম্মদ তারিক জানান, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই অনেকের মৃত্যু হয়েছে। তার ভাষ্যে, ‘নিহতদের মধ্যে অনেকই পুরুষ, শিশুও ছিল কিছু। তবে নারীরা ওই সময়র জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ ও গবাদিপশু চরাতে পাহাড়ে গিয়েছিলেন বলে রক্ষা পেয়েছেন।’
প্রাদেশিক দুর্যোগ তত্ত্বাবধান কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, চলতি সপ্তাহে শুধু খাইবার পাখতুনখোয়া ও উত্তরাঞ্চলের গিলগিট-বালতিস্তান অঞ্চলে বৃষ্টিজনিত দুর্ঘটনায় অন্তত ৩৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ওই অঞ্চল থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরেও সাম্প্রতিক বন্যায় অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সেখানেও শত শত মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছেন।
ভারতের হিমালয় অঞ্চল ও পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে এ ধরনের মেঘভাঙা বৃষ্টি ক্রমেই বেড়ে চলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ফলে এই প্রবণতা আরও তীব্র হয়েছে।
পাকিস্তানের সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার থেকে এখন পর্যন্ত সারা দেশের বন্যাকবলিত এলাকা থেকে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি পর্যটককে উদ্ধার করা হয়েছে। সরকার বন্যাকবলিত এলাকা এড়িয়ে চলার ব্যাপারে সতর্ক করলেও সেই সতর্কবার্তা অনেকেই উপেক্ষা করেছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
২০২২ সালে পাকিস্তানে ভয়াবহ মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ঘটনায় ১ হাজার ৭০০–এর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। সেবার প্রায় ৪০০০ কোটি ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।
পশ্চিম তীরে চার হাজারের বেশি নতুন আবাসন নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে ইসরায়েল। কট্টর ডানপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ গত বৃহস্পতিবার এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। আলজাজিরার খবরে বলা হয়, ইসরায়েলি বসতিবিরোধী পর্যবেক্ষক সংস্থা ‘পিস নাউ’ জানিয়েছে— অনুমোদিত ৪ হাজার ৩০টি আবাসন ইউনিটের মধ্যে ৭৩০টি নির্মিত হবে আরিয়েলের পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্যমান বসতিতে এবং বাকি ৩ হাজার ৩০০টি স্থাপন করা হবে মা’আলে আদুমিম এলাকায়।
ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী স্মোট্রিচ জানান, নতুন বসতি প্রকল্পের জন্য শিগগিরই বাড়ি নির্মাণের দরপত্র অনুমোদন করা হবে। এর লক্ষ্য জেরুজালেম ও ইসরায়েলি বসতি মা’আলে আদুমিমের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন। তিনি আরও দাবি করেন, এই উদ্যোগ শেষ পর্যন্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনাকে চিরতরে শেষ করবে। তার ভাষায়, ‘এমন কিছু নেই যা স্বীকৃতি পাবে, আর এমন কেউ নেই যাকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। আজ যদি কেউ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা করে, আমরা মাটিতেই তার জবাব দেব।’
ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই পরিকল্পনাকে ‘গণহত্যা, বাস্তুচ্যুতি এবং দখলদারিত্বের সম্প্রসারণ’ হিসেবে নিন্দা করেছে। তাদের মতে, এটি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ সম্পর্কিত বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনি। পর্যবেক্ষকদের মতে, এই বসতিগুলো কার্যকর হলে ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে বড় বাধা তৈরি হবে। পরিকল্পিত এলাকা অধিকৃত পশ্চিম তীরকে উত্তর ও দক্ষিণে ভাগ করে দেবে, ফলে পূর্ব জেরুজালেমকে বেথলেহেম ও রামাল্লার মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরের সঙ্গে সংযুক্ত করে সংলগ্ন ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গঠন অসম্ভব হয়ে পড়বে।
উল্লেখ্য, এর আগেও ইসরায়েল ওই এলাকায় বসতি স্থাপনের চেষ্টা করেছিল। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের চাপে পরিকল্পনা স্থগিত হয়। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নেতানিয়াহুর কট্টর ডানপন্থি সরকার সেখানে রাস্তা প্রশস্তকরণ প্রকল্প অনুমোদন করেছে এবং ফিলিস্তিনিদের প্রবেশাধিকার সীমিত করেছে।
মা’আলে আদুমিমের মেয়র গাই ইফ্রাচ নতুন বসতি পরিকল্পনার প্রশংসা করে বলেছেন, এটি জেরুজালেমের সঙ্গে মা’আলে আদুমিমের সরাসরি সংযোগ স্থাপন করবে। তার অভিযোগ, ফিলিস্তিনিরা ওই এলাকায় অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা করেছিল, যা এই প্রকল্প ব্যর্থ করে দেবে।
গাজায় তীব্র গরম, চর্মরোগে ভুগছে শিশুরা
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নতুন এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ফিলিস্তিনিরা। তীব্র গরমে এখন চর্মরোগে ভুগছে শিশুরা।তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়।
আল শিফা হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সালমিয়া বলেন, গাজার আশ্রয়শিবিরে থাকা অনেক শিশুই বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাদের কাছে চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত সরঞ্জামও নেই। আনাদোলুর প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়াফা নামের এক মায়ের ছেলে সারা রাত চুলকানির কারণে ঘুমাতে পারছে না। তার ছেলের শরীরে সাদা-লাল ফুসকুড়ি দেখা গেছে।
ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ) এর গাজার মেডিকেল কো-অর্ডিনেটর মোহাম্মদ আবু মুগাইসিব বলেন, শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে, কারণ তারা শিশু এবং সেখানকার পরিবেশ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ঠিকমতো গোসলের জন্য পর্যাপ্ত পানিও নেই তাদের।
গাজায় একদিনে ৩২ ফিলিস্তিনি নিহত
যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা আবারও ভয়াবহ হামলার মুখে পড়েছে। লাগাতার বোমাবর্ষণ ও বিমান হামলায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, বাজার—এবং প্রতিদিন বাড়ছে নিহতের সংখ্যা। স্থানীয়রা বলছেন, গাজার উত্তরাংশ এখন প্রায় ‘নিষ্প্রাণ ধ্বংসস্তূপ’। আন্তর্জাতিক মহল এই হামলা ও দখল পরিকল্পনার বিরুদ্ধে নিন্দা জানালেও পরিস্থিতি দিন দিন আরও জটিল হয়ে উঠছে।
গতকাল শুক্রবার আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইসরায়েলি বিমান হামলায় একদিনে অন্তত ৩২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১৩ জন ছিলেন ত্রাণের সন্ধানে। একই দিনে খাদ্য সংকট ও অপুষ্টিতে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এই হত্যাযজ্ঞ এমন সময় ঘটছে যখন ইসরায়েল গাজা সিটিতে হামলা আরও তীব্র করেছে এবং সম্প্রতি নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা শহরটি দখলের পরিকল্পনা অনুমোদন দিয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে লাখো ফিলিস্তিনিকে দক্ষিণ গাজায় গাদাগাদি করে বসবাসে বাধ্য করা হতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজা সিটির একটি আবাসিক ভবনে ইসরায়েলি বিমান হামলায় আটজন নিহত হন এবং তুফাহ এলাকায় অন্য এক হামলায় আরও দুজন প্রাণ হারান। কয়েকটি চিকিৎসা সূত্রও এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। এদিকে উত্তর গাজার বড় অংশ এখন সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। শহরের বাসিন্দারা নতুন করে বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কায় আতঙ্কিত, কারণ ইসরায়েল শহর ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে তাদের আরও দক্ষিণে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
বাসিন্দা ওয়ালা সুবহ জানান, যুদ্ধ শুরুর পর তিনি উত্তরাঞ্চলের বেইত লাহিয়া থেকে গাজা সিটিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এখন আর কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই, আয়ও নেই—তিনি একজন বিধবা। তার ভাষায়, ‘যদি আমাদের বের করে দিতে চায়, তবে অন্তত আমাদের থাকার জায়গা দিক, তাঁবু দিক, বিশেষ করে বিধবা, শিশু আর অসুস্থদের জন্য। এখানে কয়েকজন নয়, লাখো মানুষকে বাস্তুচ্যুত করা হবে, যাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।’
উম সাজেদ হামদান নামে আরেক নারী বলেন, তিনি পাঁচ সন্তানের মা, স্বামী বন্দি—তাই সন্তানদের নিয়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পালানো সম্ভব নয়। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, ‘আল-মাওয়াসিতে যাওয়ার চেয়ে আমি গাজা সিটিতেই মৃত্যুর মুখোমুখি হতে রাজি।’
ভারী মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ফলে পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে ভূমিধস ও আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে, যার ফলে কমপক্ষে ২৩ জনের মৃত্যু আরও অনেকে আটকা পড়েছেন।
দেশটির দুর্যোগ কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে শুক্রবার পেশোয়ার থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
আঞ্চলিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগটিতে পাহাড়ি খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে কমপক্ষে ১৬ জন এবং পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে সাত জন প্রাণ হারিয়েছেন।
ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্রদেরকে বাদ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে বৈঠকের প্রাক্কালে বৃহস্পতিবার লন্ডনে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
লন্ডন থেকে এএফপি জানিয়েছে, স্টারমার ইউক্রেনের নেতা জেলেনস্কিকে তার ডাউনিং স্ট্রিট বাসভবনে উষ্ণ আলিঙ্গন ও হাত মেলানোর মাধ্যমে স্বাগত জানান।
এর কয়েক ঘণ্টা পরেই জেলেনস্কি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একটি ভার্চুয়াল ফোনালাপে অংশ নেন।
শুক্রবার আলাস্কার একটি বিমান ঘাঁটিতে ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে প্রথমবারের মতো সাক্ষাৎ হতে যাচ্ছে। এতে করে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর পুতিন পশ্চিমা মাটিতে প্রবেশ করার সুযোগ পাচ্ছেন।
তবে ইউক্রেনে অব্যাহত রুশ হামলা ও জেলেনস্কিকে এই বৈঠকে আমন্ত্রণ না করায় উদ্বেগ বেড়েছে। কারণ ট্রাম্প ও পুতিন এমন একটি চুক্তি করতে পারেন, যার ফলে ইউক্রেনকে বড় কিছু ছাড় দেওয়া লাগতে পারে।
তবে স্টারমার বুধবার বলেন, ইউক্রেনে তিন বছরের বেশি যুদ্ধের পর এখন ‘একটি সম্ভাব্য’ যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের সুযোগ রয়েছে।
এদিকে শুক্রবার ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধবিরতি নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করা হলেও এরই মধ্যে ইউক্রেন রাশিয়ায় ডজনখানেক ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এতে তিন জন আহত হয় এবং ভোলগোগ্রাদ শহরের একটি তেল শোধনাগারে আগুন লেগে যায়।
কিয়েভ দাবি করেছে, এই হামলাগুলো মস্কোর নিত্যদিনের মিসাইল ও ড্রোন হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ন্যায্য।
জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি রাশিয়াকে কোনো ভূখণ্ড ছেড়ে দেবেন না। ইউরোপীয় নেতারা আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করেন, ইউক্রেনের জন্য কোনো ছাড় দেওয়া ছাড়াই মার্কিন প্রেসিডেন্ট যুদ্ধবিরতির দিকে নজর দেবেন।
মন্তব্য