বাংলাদেশে গরু পাচার এবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের বড় ইস্যু। পাচারের তদন্তে বেশ বিব্রত শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস।
দলের মহাসচিব ও রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সীমান্তরক্ষী বিএসএফের নামে নালিশ করায় হজম করতে হচ্ছে আরও বিদ্রুপ।
ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিবিআই) গরু পাচারের তদন্তে নেমেছে। এরই মধ্যে বিএসএফের একজন কমান্ড্যান্টকে গ্রেপ্তার করেছে সংস্থাটি। খুঁজছে বেশ কয়েক জন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে।
ওই তালিকায় তৃণমূলের ঘনিষ্ঠরা রয়েছেন। এ ছাড়া রয়েছেন দলের যুব সংগঠনের প্রথম সারির নেতারা।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গে সফররত ভারতের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরার নেতৃত্বাধীন ফুল বেঞ্চের কাছে বিএসএফের বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়েছেন তৃণমূল নেতা পার্থ।
তার অভিযোগ, বিএসএফ জওয়ানরা বিজেপির হয়ে কাজ করছে। তারা সীমান্ত এলাকায় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের বিজেপিতে যোগ দিতেও মদদ দিচ্ছেন।
বিএসএফ গতকাল এ অভিযোগ অস্বীকার করে। তাদের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বিএসএফ যুক্ত নয়।
বিজেপি গরু পাচারে তৃণমূলের যোগসাজশ নিয়ে প্রচার চালাচ্ছে। দলটি তৃণমূলের অভিযোগের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘গরু পাচার বন্ধ। পার্টির লোকদের রোজগার বন্ধ; কষ্ট হচ্ছে। তাই বিএসএফকে দোষারোপ।’
দলের আরেক নেতা শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ, ‘তৃণমূল তোলাবাজদের প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি। কোনো রাজনৈতিক দল নয়; দেড় জনের কোম্পানি।’
মমতার ভাইপো ও তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘তোলাবাজ’ হিসেবে আক্রমণ করেন তিনি। তার অভিযোগ, গরু পাচারের সঙ্গে অভিষেকও যুক্ত।
আরও পড়ুন:ইসরায়েলের বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছে, হামাসের প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় ‘বিস্মিত’ এবং হতবাক হয়ে গেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর আগে বলেছেন, হামাসের প্রতিক্রিয়া মূলত ইতিবাচক দিকে যাচ্ছে এবং তিনি ইসরায়েলকে গাজায় বোমা হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, নেতানিয়াহু চেয়েছিলেন হামাসের বক্তব্যের জবাবে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে সমন্বিত প্রতিক্রিয়া জানাবে। যাতে হামাসের বক্তব্য কোনোভাবেই ইতিবাচক হিসেবে দেখা না যায়।
নেতানিয়াহুর এ অপ্রস্তুত অবস্থা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, তিনি আসলে কী ভাবছেন। নেতানিয়াহুকে এখনো তার সরকারের সঙ্গে বৈঠক করতে হবে এবং জোটের মধ্যে এই চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে হবে। শেষ পর্যন্ত এ বিষয়ে ভোটাভুটি হবে।
তবে ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, নেতানিয়াহুর জন্য একটি ‘রাজনৈতিক সুরক্ষা বেষ্টনী’ থাকবে। এর অর্থ হলো, নেতানিয়াহুর ডানপন্থি জোটের সদস্যরা যদি কোনো কারণে এই চুক্তিতে অংশ নিতে না চান, তাহলে বিরোধী দলগুলো এগিয়ে আসবে। তারা নেতানিয়াহুর সঙ্গে মিলে জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠন করতে পারে।
এই জাতীয় ঐক্যের সরকার চুক্তিটি পাস করবে এবং এরপর দেশ নতুন নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাবে। আমরা ইসরায়েলি বন্দিদের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকেও শুনতে পাচ্ছি যারা বলছেন যে তারা মার্কিন প্রেসিডেন্টের কথাকে সম্পূর্ণ সমর্থন করেন, যার মধ্যে গাজার অভ্যন্তরে বোমাবর্ষণ বন্ধ করাও অন্তর্ভুক্ত। কারণ তারা ভয় পাচ্ছেন যে, এসব বোমা হামলায় সেখানে আটক থাকা বন্দিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং তাদের মৃত্যুও হতে পারে।
ইসরায়েলের ভেতরে আগে থেকেই ব্যাপক রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। আগামী ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে এই চুক্তির দাবিতে দেশটির বিভিন্ন রাজপথে বিক্ষোভ দেখা যেতে পারে।
ট্রাম্পের পরিকল্পনায় হামাসের প্রতিক্রিয়াকে স্বাগত জানাল পাকিস্তান
ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার প্রতি হামাসের ইতিবাচক সাড়াকে ‘ইতিবাচক পদক্ষেপ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে পাকিস্তান।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে লিখেছেন, এখনই যুদ্ধবিরতি হতে হবে, ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে হবে এবং জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। সেই সাথে মানবিক সহায়তা প্রবাহে কোনো বাধা থাকা উচিত নয়। ইসরায়েলকে অবশ্যই তার হামলা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
এর আগের দিনই দার জানান, গাজায় যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে ট্রাম্পের তৈরি ২০-দফা পরিকল্পনা গত মাসে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের পাশাপাশি আরব ও মুসলিম দেশগুলোর প্রস্তাবিত খসড়ার সঙ্গে এক নয়।
মার্কিন ও ইসরায়েলি নেতাদের ঘোষিত নতুন প্রস্তাবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর অনুরোধে উল্লেখযোগ্য কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সংশোধিত প্রস্তাবে ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহারকে হামাসের নিরস্ত্রীকরণের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে এবং ইসরায়েলকে একটি বাফার জোনে ধাপে ধাপে থেকে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে, যতক্ষণ না ‘সন্ত্রাসী হুমকি’ পুরোপুরি নির্মূল হয়।
হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা ৬৭ হাজার ছাড়িয়েছে। শুধু গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে দ্য টাইমস অব ইসরায়েল।
শনিবার মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট প্রাণহানি দাঁড়িয়েছে ৬৭ হাজার ৭৪ জনে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) গত এক দিনে তাদের হামলা বা অভিযানের বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, খাদ্যাভাব ও পুষ্টিহীনতায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে অনাহার ও অপুষ্টিজনিত মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৫৯ জনে। এর মধ্যে ১৫৪ জন শিশু।
সম্প্রতি জাতিসংঘের বৈশ্বিক সম্মেলনে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ। ফ্রান্স ও সৌদি আরবের আয়োজিত এ সম্মেলনে প্রথমে যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, পর্তুগাল, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, আন্দোর্রা, মোনাকো। এরপরও থেমে নেই ইসরায়েলের নিষ্ঠুর হামলা। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া উপত্যকায় দুর্ভিক্ষ চরম আকার ধারণ করেছে।
গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োযভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এছাড়া ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) মামলা চলছে।
হার মানছে হামাস?
গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনার জবাব দিয়েছে হামাস। গাজার প্রশাসনিক কাঠামো নিয়ে দুই পক্ষের অবস্থান ভিন্ন।
ট্রাম্পের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, একটি আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে টেকনোক্র্যাট কমিটি গাজা পরিচালনা করবে এবং এ প্রক্রিয়ায় টনি ব্লেয়ারসহ আন্তর্জাতিক ব্যক্তিরা যুক্ত থাকবেন। হামাস বলেছে, গাজা পরিচালনা করবে একটি ফিলিস্তিনি স্বাধীন টেকনোক্র্যাট কমিটি, যা জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে গঠিত হবে এবং আরব ও ইসলামি সমর্থনে কার্যকর হবে।
গত শুক্রবার দেওয়া এক বিবৃতিতে হামাস পরিকল্পনার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত দিলেও প্রশাসনিক কাঠামো ও নিজেদের ভবিষ্যৎ ভূমিকা নিয়ে মতভেদ প্রকাশ করেছে।
হামাস জানিয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতি, ইসরায়েলি সেনাদের পূর্ণ প্রত্যাহার, জিম্মি ও বন্দিদের বিনিময় এবং গাজায় মানবিক সহায়তা ও পুনর্গঠনের বিষয়গুলোতে সম্মত।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রস্তাবিত সূত্র অনুযায়ী জীবিত ও মৃত ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দিতে তারা প্রস্তুত। তবে এ প্রক্রিয়ায় ‘ক্ষেত্রীয় শর্ত’ পূরণের কথা উল্লেখ করলেও বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়নি।
ট্রাম্পের পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, হামাসের জিম্মিদের ফেরত দেওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই ইসরায়েল ২৫০ আজীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি বন্দি এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর আটক ১ হাজার ৭০০ গাজাবাসীকে মুক্তি দেবে। এর মধ্যে নারী ও শিশুরাও থাকবে। একইসঙ্গে প্রতি ইসরায়েলি জিম্মির মৃতদেহের বিনিময়ে ১৫ জন ফিলিস্তিনির মৃতদেহ ফেরত দেওয়া হবে।
সবচেয়ে বড় মতভেদ হামাসের ভবিষ্যৎ ভূমিকা নিয়ে। ট্রাম্পের পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, হামাস গাজার প্রশাসনে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে কোনো ভূমিকা রাখবে না এবং ধাপে ধাপে গাজা নিরস্ত্রীকরণের পথে যাবে।
তবে হামাস নিজেদেরকে ফিলিস্তিনি জাতীয় কাঠামোর অংশ হিসেবে দাবি করেছে এবং নিরস্ত্রীকরণ প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করেনি।
হামাস জানিয়েছে, গাজার প্রশাসন ও ভবিষ্যৎ কাঠামো নিয়ে আলোচনা একটি জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী হতে হবে। তবে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী বা হামাসের সদস্যদের নিরাপদে দেশত্যাগের মতো প্রস্তাবগুলো নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি সংগঠনটি।
‘যুদ্ধ থামাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে হামাস’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা নিয়ে আশার সুর শোনা যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষকদের কণ্ঠে। তাদের মধ্যে অন্যতম তুরস্কের ইস্তাম্বুল জায়িম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলাম অ্যান্ড গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স সেন্টারের (সিআইজিএ) পরিচালক ও জননীতিবিষয়ক অধ্যাপক সামি আল-আরিয়ান।
তিনি বলেছেন, ট্রাম্পের পরিকল্পনা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে কার্যকর হতে পারে। তবে সেটি নির্ভর করবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গাজা থেকে প্রত্যাহার ও বন্দিদের মুক্তির বিষয়ে ট্রাম্প কীভাবে পদক্ষেপ নেন তার ওপর।
আল-আরিয়ান বলেন, আমার বিশ্বাস হামাস ও অন্যান্যরা এই যুদ্ধের অবসান ঘটাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।
তিনি আরও যোগ করেন, যদি ট্রাম্প সত্যিই যুদ্ধ শেষ করতে আগ্রহী হন, তাহলে তার প্রস্তাবের মাধ্যমেই সে পথে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এদিকে গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থা জানিয়েছে, হামাস যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাবে সম্মত হওয়ার পরও ইসরায়েল গাজা নগরীতে বেশ কয়েকটি বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণ চালিয়েছে। এতে শনিবার ভোর থেকে অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন।
সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল এএফপিকে বলেন, রাতটি ছিল অত্যন্ত সহিংস। ইসরায়েলি সেনারা গাজা নগরী ও উপত্যকার অন্যান্য এলাকায় বহু বিমান হামলা ও আর্টিলারি গোলাবর্ষণ চালিয়েছে, যদিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বোমা হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
ট্রাম্পের প্রস্তাবে হামাসের সম্মতি, স্বাগত জানাল জাতিসংঘ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা গাজা শান্তি পরিকল্পনার আলোকে জীবিত ও মৃত সকল ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে হামাস। হামাসের এই প্রতিক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।
মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, মহাসচিব ‘হামাসের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং এতে উৎসাহিত হয়েছেন’।
ডুজারিক বলেন, ‘মহাসচিব সব পক্ষকে গাজায় চলমান সংঘাত শেষ করার সুযোগটি গ্রহণ করার আহ্বান জানান এবং কাতার ও মিসরকে মধ্যস্থতাকারী ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।’
গাজায় অবরোধ ভাঙতে ত্রাণ নিয়ে যাত্রা করা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা থেকে আটক করা বিভিন্ন দেশের ১৩৭ জন অধিকারকর্মীকে তুরস্কে পাঠাচ্ছে ইসরায়েল। শনিবার তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৬ জন তুর্কি নাগরিকের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আলজেরিয়া, মরক্কো, ইতালি, কুয়েত, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, মৌরিতানিয়া, সুইজারল্যান্ড, তিউনিসিয়া এবং জর্ডানের নাগরিকও রয়েছেন।
এদিকে, যাত্রীদের মধ্যে প্রথম ধাপে ইতালির কয়েকজনকে ইতোমধ্যে দেশে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি বলেছেন, ২৬ জন ইতালীয় জাহাজে ছিলেন, যাদের মধ্যে আরও ১৫ জন এখনো ইসরায়েলে আটক রয়েছেন। আগামী সপ্তাহে তাদের অন্যান্য দেশের কর্মীদের সঙ্গে ইউরোপে ফেরত পাঠানো হবে।
এদিকে, ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্স-পোস্টে লিখেছে, আটক সকলেই ‘নিরাপদ এবং সুস্থ আছেন’। তারা ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব’ নির্বাসন সম্পন্ন করতে আগ্রহী।
ফ্লোটিলা সদস্যদের আইনি সহায়তা প্রদানকারী একটি ইসরায়েলি গোষ্ঠী আদালাহ জানিয়েছে, আটককৃতদের মধ্যে কিছু লোককে আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। তাদের পানি ও ওষুধের পাশাপাশি টয়লেট ব্যবহারের সুযোগ থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভেনিজুয়েলার মাদকচক্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারির মধ্যে পুয়ের্তো রিকোতে মোতায়েন করা মার্কিন সেনারা ভেনিজুয়েলার অঞ্চল দখলের জন্য একটি অভিযান শুরু করতে প্রস্তুত। সামরিক বিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে ওয়াশিংটন এক্সামিনার সংবাদপত্র এমনটাই জানিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যৌথ বাহিনী এখন ভেনিজুয়েলার বন্দর এবং বিমানঘাঁটির মতো গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত লক্ষ্যবস্তু দখল এবং নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট।
ওয়াশিংটন এক্সামিনারের প্রতিবেদন অনুসারে, পেন্টাগন এই সম্ভাব্য অভিযানের জন্য তার প্রস্তুতি বিশেষভাবে গোপন করছে না।
পত্রিকাটি উল্লেখ করেছে, আগস্টের শেষের দিকে মার্কিন যুদ্ধ বিভাগের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জের উপকূলে মহড়ার সময় ‘অবতরণ অভিযান এবং বিমানঘাঁটি দখল অভিযান’ চর্চা করা হয়েছিল।
গত মাসে সিএনএন জানিয়েছিল, ভেনিজুয়েলার ভেতরে সক্রিয় মাদক পাচারকারী চক্রের ওপর সম্ভাব্য হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
এর অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে ক্যারিবীয় সাগরে আটটি যুদ্ধজাহাজ, একটি পারমাণবিক সাবমেরিন এবং এফ-৩৫ স্টিলথ যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে। এটিকে সাম্প্রতিক সময়ে ওই অঞ্চলে মার্কিন নৌবাহিনীর অন্যতম বৃহত্তম মোতায়েন বলে মনে করা হচ্ছে।
ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো গত মাসে স্পষ্ট সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছিলেন, তার দেশের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের আক্রমণ চালানো হলে জাতীয় অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তারা সংগঠিত সামরিক প্রস্তুতি গ্রহণ করবে।
মাদুরো বলেন, ‘যদি ভেনিজুয়েলাকে আক্রমণ করা হয়, তবে শান্তি, আঞ্চলিক অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ব ও আমাদের জনগণের সুরক্ষার স্বার্থে যে কোনো স্থানীয়, আঞ্চলিক বা জাতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এটি একটি পরিকল্পিত ও সংগঠিত সশস্ত্র সংগ্রামে রূপ নেবে।’
উপকূলের কাছে মার্কিন যুদ্ধবিমান!
ভেনিজুয়েলার প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ভ্লাদিমির পাদ্রিনো বৃহস্পতিবার বলেছেন, দেশটির উপকূলের কাছে পাঁচটি মার্কিন যুদ্ধবিমান শনাক্ত করা হয়েছে। এ ঘটনাকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এক ধরনের হুমকি বলে আখ্যা দিয়েছেন।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক ভাষণে ভ্লাদিমির পাদ্রিনো বলেন, ‘সাম্রাজ্যবাদী এই যুদ্ধবিমানগুলো ভেনিজুয়েলার উপকূলের কাছে চলে আসার দুঃসাহস দেখিয়েছে।’ একটি বিমান সংস্থার মাধ্যমে যুদ্ধবিমানগুলোর তথ্য নিয়ন্ত্রণকক্ষে জানানো হয়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি।
পরে এক বিবৃতিতে ভেনিজুয়েলা সরকার বলেছে, কলম্বিয়ার বিমান সংস্থা অ্যাভিয়ানকা জানিয়েছে, ভেনিজুয়েলার উপকূল থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার (৪৭ মাইল) দূরে যুদ্ধবিমানগুলো দেখা গেছে।
অ্যাভিয়ানকা মন্তব্যের অনুরোধে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি। বিবৃতিতে ভেনিজুয়েলা সরকার যুক্তরাষ্ট্রের ‘যুদ্ধমন্ত্রী’ পিটার হেগসেথের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছে, তিনি যাতে অবিলম্বে তার বেপরোয়া ও যুদ্ধংদেহী মনোভাব থেকে সরে আসেন। এই মনোভাব ক্যারিবীয় অঞ্চলের শান্তি বিঘ্নিত করছে।
যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুদ্ধজাহাজের একটি বহর মোতায়েন করেছে। ওয়াশিংটনের দাবি, মাদক চোরাচালান প্রতিরোধে অভিযানের অংশ হিসেবে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভেনিজুয়েলা থেকে আসা কয়েকটি নৌকা ধ্বংসের দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ঘটনায় কয়েকজন আরোহী নিহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় বর্বর হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। উপত্যকাটিতে দখলদার বাহিনীর হামলায় একদিনে আরও ৫৩ জন নিহত হয়েছেন।
একইসঙ্গে গাজা সিটিতে অবস্থানরত লাখো মানুষকে শহর ছাড়তে শেষবারের মতো হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইসরায়েল। এমনকি গাজা সিটিতে থেকে যাওয়া সবাইকে ‘সন্ত্রাসী কিংবা সন্ত্রাসীদের সমর্থক’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় গত বৃহস্পতিবার ভোর থেকে অন্তত ৫৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। একই সঙ্গে গাজা সিটিতে অবস্থানরত লাখো মানুষকে শহর ছাড়তে ‘শেষ সুযোগ’ দিয়ে হুমকি দিয়েছে ইসরায়েল, তা না হলে তাদের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হবে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লেখেন, গাজা সিটিতে থেকে যাওয়া সবাইকে ‘সন্ত্রাসী কিংবা সন্ত্রাসীদের সমর্থক’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
আল জাজিরা বলছে, ইসরায়েলি বিমান ও স্থল হামলায় গাজা সিটি কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন ডজনের পর ডজন মানুষ নিহত হচ্ছে, ভেঙে পড়ছে আবাসিক ভবন ও স্কুল। হাজারো মানুষ বাধ্য হয়ে দক্ষিণের দিকে পালিয়ে যাচ্ছে, তবে পালানোর পথেও হামলার মুখে পড়ছেন তারা।
আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার আল-রাশিদ সড়ক দিয়ে ইসরায়েলি সেনারা মানুষকে শহর ছাড়তে বাধ্য করেছে, আবার উপকূল ধরে দক্ষিণমুখী হওয়ার পথেও হেলিকপ্টার, ড্রোন ও ট্যাংক দিয়ে তাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। এতে সৃষ্টি হয়েছে চরম আতঙ্ক ও বিশৃঙ্খলা।
তিনি বলেন, ‘মানুষ গাজা সিটি ছাড়ছে না মূলত ভয় আর ইসরায়েলি সেনাদের ভয়ঙ্কর তৎপরতার কারণে।’
চিকিৎসা সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার গাজা সিটিতে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। দক্ষিণ গাজায় ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন আরও ১৩ জন। চলমান দুর্ভিক্ষে খাদ্য সংগ্রহে গিয়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা এখন প্রায় ২ হাজার ৬০০, আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৯ হাজার।
আল জাজিরাকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি এই আগ্রাসনে গাজায় মোট প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৬ হাজার ২২৫ জনে। আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ৬৮ হাজার ৯৩৮ জন। আর এ বছরের মার্চে ইসরায়েল একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করার পর থেকে নিহত হয়েছেন ১৩ হাজার ৩৫৭ জন।
অধিকারকর্মীদের আটক
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হাতে গাজামুখী ত্রাণবাহী ‘গ্লোবাল সামুদ ফ্লোটিলা’র প্রায় সব নৌযান আটকের ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে বিশ্ব। সুইডিশ জলবায়ুকর্মী গ্রেটা থুনবার্গসহ ৪৫০ জনের বেশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মীকে আটকের পর ইউরোপ, এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতের এ অভিযানের সময় কিছু নৌযানে থাকা লাইভ ক্যামেরায় ধরা পড়ে ইসরায়েলি সেনারা হেলমেট ও নাইটভিশন পরা অবস্থায় জাহাজে উঠে যাত্রীদের অপহরণ করছে। যাত্রীরা তখন লাইফ ভেস্ট পরে হাত উঁচিয়ে আত্মসমর্পণের ভঙ্গিমায় বসে পড়েন।
ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, আলোচিত পরিবেশ আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ ডেকের এক কোণে বসে আছেন এবং তার চারপাশে দাঁড়িয়ে আছে সশস্ত্র সেনারা।
ফ্লোটিলার কর্মীদের আটক করার প্রতিবাদে ইউরোপের বহু শহরে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ হয়েছে। করাচি, বুয়েনস আইরেস ও মেক্সিকো সিটিতেও বিক্ষোভ হয়েছে। ইতালির শ্রমিক ইউনিয়নগুলো ৪ অক্টোবর সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।
ফ্লোটিলা আয়োজকরা জানিয়েছে, প্রায় ৪৫০ জন স্বেচ্ছাসেবককে আটক করা হয়েছে, যাদের মধ্যে অনেককে একটি বড় কার্গো জাহাজে তুলে পরে আশদোদের বন্দরে নেওয়া হয়েছে।
ফ্লোটিলার ‘ম্যারিনেট’ নামের একটি ছোট নৌযান এখনো ইসরায়েলের বাধার মুখে পড়েনি। এটি পোলিশ পতাকা বহন করছে এবং গাজা উপকূল থেকে প্রায় ৮০ নটিক্যাল মাইল দূরে রয়েছে। আয়োজকদের মতে, এটি অন্য নৌযান আটক হওয়ার স্থান থেকে মাত্র ১০ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছে।
অপহরণের আগে ধারণ করা এক ভিডিওতে গ্রেটা থুনবার্গ বলেন, যদি আপনি এই ভিডিও দেখেন, তাহলে বুঝবেন আমাকে অপহরণ করা হয়েছে এবং ইসরায়েলি বাহিনী জোরপূর্বক আমাকে নিয়ে গেছে। আমাদের মানবিক মিশন ছিল শান্তিপূর্ণ এবং আন্তর্জাতিক আইন মেনে পরিচালিত।
ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি জানান, ইসরায়েল সোম ও মঙ্গলবার ফ্লোটিলা সদস্যদের ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ফেরত পাঠাতে পারে। চার্টার্ড বিমানে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আটকদের সকলে সুস্থ এবং তাদের আশদোদে আনা হয়েছে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান গ্লোবাল সমুদ ফ্লোটিলায় ইসরায়েলি হস্তক্ষেপকে ‘সন্ত্রাসমূলক আচরণ’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘গাজায় অনাহারে মৃত্যুবরণ করা শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর এই প্রচেষ্টাকে যারা থামাতে চায়, তারা শান্তির ভাষা বোঝে না।’
তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আনাদোলু জানায়, ইস্তানবুলের প্রধান কৌঁসুলির দফতর ফ্লোটিলায় থাকা ২৪ জন তুর্কি নাগরিককে আটক করার ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন ফ্লোটিলায় থাকা দক্ষিণ আফ্রিকান নাগরিকদের দ্রুত মুক্তি দেওয়া হয়। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি এনকোসি ম্যান্ডেলা।
ফ্লোটিলা আগস্টের শেষদিকে যাত্রা শুরু করে। এতে ছিল ৪০টিরও বেশি বেসামরিক নৌযান, যেগুলোতে ছিলেন ইউরোপ ও অন্যান্য দেশের সংসদ সদস্য, আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীরা। নৌবহরটি গাজার জন্য খাদ্য ও ওষুধ বহন করছিল।
আন্তর্জাতিক আইনজীবী ও অধিকারকর্মীদের মতে, ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি অবরোধ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং এটি ‘গণহত্যা কনভেনশন’-এর বিরুদ্ধেও দাঁড়ায়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে হামাসকে তার প্রস্তাবিত ২০ দফা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত আলটিমেটাম দিয়েছেন। অন্যথায় গাজায় আরও ভয়াবহ সহিংসতা নেমে আসবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
গতকাল নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ পোষ্ট দিয়ে ট্রাম্প হামাসকে 'নিষ্ঠুর ও সহিংস' হিসেবে আখ্যা দেন। তিনি লিখেখেন—এটাই শেষ সুযোগ। চুক্তি যদি কার্যকর না হয়, তাহলে গাজায় এমন নরক নেমে আসবে যা ইতিহাসে আগে কখনও দেখা যায়নি। ট্রাম্পের ২০ দফা প্রস্তাবের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো হলো:
হামাসকে গাজার শাসন থেকে সম্পূর্ণ সরে দাঁড়াতে হবে এবং ভবিষ্যতে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না।
গাজাকে 'সন্ত্রাসমুক্ত ও প্রতিবেশীদের জন্য হুমকিমুক্ত অঞ্চল' হিসেবে পুনর্গঠনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
মানবিক সহায়তা প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হবে, যেখানে বর্তমানে অর্ধ মিলিয়ন মানুষ দুর্ভিক্ষের শিকার।
হামাসকে ইসরাইলি বন্দিদের মুক্তি এবং নিহতদের মরদেহ হস্তান্তর করতে হবে। এর বিনিময়ে ইসরাইল ১,১৭০ জন গাজাবাসী বন্দি ও যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ২৫০ জনকে মুক্তি দেবে।
'বোর্ড অব পিস' নামে একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসনিক কাঠামো গঠনের কথা বলা হয়েছে, যেখানে ট্রাম্প নিজেই নেতৃত্ব দেবেন এবং সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারসহ অন্যান্য নেতারা
থাকবেন।
সীমান্তে ফিলিস্তিনি পুলিশকে সহায়তা করতে একটি 'আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী' গঠনের প্রস্তাবও এতে রয়েছে
ট্রাম্প দাবি করেন, অক্টোবর ৭-এর হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ইতিমধ্যে ২৫ হাজারের বেশি হামাস যোদ্ধা নিহত হয়েছে। বাকিরা "সামরিকভাবে ঘেরাও' হয়ে আছে এবং 'আমার নির্দেশের অপেক্ষায় আছে'।
পোস্টে তিনি আরও লেখেন— আমরা জানি তোমরা কারা এবং কোথায় আছ। তোমাদের শিকার করে হত্যা করা হবে।
একই সঙ্গে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদের অনুরোধ করছি, এই বিপজ্জনক অঞ্চল ছেড়ে গাজার নিরাপদ অংশে চলে যেতে।
হামাস জানিয়েছে, তারা প্রস্তাবটি বিবেচনা করছে এবং শিগগিরই প্রতিক্রিয়া জানাবে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার অভিযোগ করেছেন, মূল প্রস্তাব থেকে পরিবর্তন আনা হয়েছে—পরিবর্তনের রেকর্ড আমার কাছে আছে।
অনেক পর্যবেক্ষক 'বোর্ড অব পিস' ধারণাটিকে অবাস্তব বলে আখ্যা দিয়েছেন। কারা এতে থাকবেন এবং কতদিনের জন্য এটি কাজ করবে, তা স্পষ্ট নয়।
জাতিসংঘের একটি স্বাধীন কমিশন এর আগে জানিয়েছিল, গাজায় ইসরাইলের কর্মকাণ্ড গণহত্যার শামিল। এ প্রেক্ষাপটে সমালোচকরা বলছেন, ট্রাম্পের পরিকল্পনায় ইসরাইলের দায় বা সীমাহীন সামরিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কোনো বাস্তব পদক্ষেপ নেই।
সূত্র : আল-জাজিরা
ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার আরোহীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশন শুরু করেছেন। গাজার অবরোধ ভাঙতে এই আয়োজন করা আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষ থেকে শুক্রবার এ তথ্য জানানো হয়।
তারা জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক জলসীমায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের শিকার হয়ে আটক নৌবহরের কয়েকজন কর্মী আটক হওয়ার মুহূর্ত থেকেই অনির্দিষ্টকালের অনশনে গেছেন।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার একটি অংশ জানায়, তিউনিসিয়ার অংশগ্রহণকারীরা ইসরায়েলের হাতে আটক হওয়ার পর থেকে অনশন শুরু করেছেন। শুক্রবার ফেসবুকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, তিউনিসিয়ার অংশগ্রহণকারীরা দখলকৃত ফিলিস্তিনের আশদোদ বন্দরে পৌঁছার পর থেকেই অনির্দিষ্টকালের অনশন শুরু করেন। বৃহস্পতিবার সেখান থেকে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে নেগেভ মরুভূমির কেতসিওত কারাগারে, যেখানে তারা অবৈধ বিচারের অপেক্ষায় আছেন।
তিউনিসিয়ান অংশগ্রহণকারীদের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, মুক্তি পাওয়া এবং তাদের বার্তা বিশ্বব্যাপী পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত অনশন চলবে। বিবৃতিতে বলা হয়, বন্দি তিউনিসিয়ানদের এই অটল অবস্থান অবরুদ্ধ গাজার সংগ্রামেরই সম্প্রসারণ। তারা আরও বলেন, আমরা এক অদম্য জাতির ইচ্ছাশক্তি বয়ে বেড়াচ্ছি। অবৈধ বিচার বা উদ্দেশ্যমূলক অনাহার আমাদের সংকল্প ভাঙতে পারবে না।
বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি নৌবাহিনী ফ্লোটিলার ৪৪টি নৌযান দখল করে ৫০টিরও বেশি দেশের ৪৭০ জনের বেশি কর্মীকে আটক করে। নৌবহরের উদ্দেশ্য ছিল গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া এবং ইসরায়েলি অবরোধ ভাঙা।
তথ্যসূত্র: আনাদোলু এজেন্সি
মন্তব্য