যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের দুইটি আসনের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থীরা এগিয়ে আছেন।
সিনেটে অমীমাংসিত দুই আসনে কে জিতবে, তা নির্ধারণে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার অঙ্গরাজ্যটিতে ভোট হয়।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, রিপাবলিকান নাকি ডেমোক্র্যাটিক পার্টি সিনেট নিয়ন্ত্রণ করতে যাচ্ছে, তা এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জানা যাবে।
নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী ডকুমেন্টারি ফিল্মমেকার জন অসফ লড়ছেন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডেভিড পারডুর বিরুদ্ধে। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির রেভারেন্ড রাফায়েল ওয়ারনকের প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান পার্টির কেলি লোফলার।
যুক্তরাষ্ট্রের বুথ-পরবর্তী জরিপবিষয়ক গবেষণা সংস্থা এডিসন রিসার্চের পরিসংখ্যানে বলা হয়, প্রায় ৪৯ শতাংশ ভোট গণনায় লোফলারের চেয়ে ওয়ারনক ৬.৮ শতাংশ পয়েন্টে এগিয়ে। আর অসফ এগিয়ে ৬.৪ শতাংশ পয়েন্টে।
আগাম ভোট ও মঙ্গলবার কেন্দ্রে আসা ভোটারদের নিয়ে এডিসন জরিপটি করে।
গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও জর্জিয়ায় দুই দলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়।
সে সময় এডিসনের বুথফেরত জরিপে দেখা যায়, ৫ হাজার ২০০ জনেরও বেশি ভোটারের মধ্যে অর্ধেক ভোট দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পকে। বাকিরা ভোট দিয়েছিলেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেনকে।
সিনেট কোন দলের নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত, এ নিয়ে তখনও ভোটাররা দ্বিধায় ছিলেন।
সিনেটের নিয়ন্ত্রণ নিতে ডেমোক্র্যাটদের অবশ্যই জর্জিয়ার ওই দুই আসনে জিততে হবে। ডেমোক্র্যাটরা জয়ী হলে সিনেটে উভয় পার্টির সদস্য সংখ্যা সমান (৫০-৫০) হবে।
তাই যদি হয় পরিস্থিতি, তবে ২০ জানুয়ারি বাইডেন ও তার রানিং মেট কমলা হ্যারিস আনুষ্ঠানিকভাবে হোয়াইট হাউজের দায়িত্ব নেয়ার পর কমলাকে টাই-ব্রেকিং ভোট নিতে হবে।
অন্যদিকে জর্জিয়ার সিনেট নির্বাচনে জয়ের মাধ্যমে রিপাবলিকানরা সিনেটের নিয়ন্ত্রণ নিলে বাইডেনের রাজনৈতিক ও বিচারিক নিয়োগে ভেটো দিতে পারবেন তারা। পাশাপাশি অর্থনৈতিক সমস্যা নিরসন, জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্যসেবা ও ফৌজদারি আইনে বিচারের ক্ষেত্রে বাইডেনের সিদ্ধান্তে ভেটো দেয়ার ক্ষমতা থাকবে তাদের।
কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস এখন ডেমোক্র্যাটদের দখলে। তবে তাদের সংখ্যা রিপাবলিকানদের চেয়ে খুব বেশি নয়।
আরও পড়ুন:ইরানের ইসফাহানে অবস্থিত একটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ইসফাহান গভর্নরের ডেপুটি সিকিউরিটি অফিসার আকবর সালেহি বলেছেন, গতকাল শনিবার সকালে ইসফাহানের কয়েকটি স্থানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল, এর মধ্যে একটি পারমাণবিক স্থাপনাও রয়েছে। খবর বিবিসির। সালেহি বলেন, হামলার পর সেখান থেকে ধোঁয়া ওঠতে দেখা গেছে। তবে কোনো ক্ষতিকর পদার্থের গ্যাস বা তরল নির্গমন ঘটেনি। তিনি আরও বলেন, ইসফাহান রিফাইনারি (পরিশোধনাগার) ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্য ছিল না। ইসফাহান, লাঞ্জান, মোবারাকে ও শাহরেজা শহরের কিছু এলাকা ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। আকবর সালেহি বলেন, এসব হামলায় এখন পর্যন্ত কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। তবে কিছু এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
আবার ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ইরানের
ইরান নতুন করে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইরানের বার্তা সংস্থা মেহের নিউজ এই খবর নিশ্চিত করেছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাও জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ঘোষণা করেছে যে, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আটকানোর চেষ্টা করছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা গোলান মালভূমিতে ইরানের একটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এখন ঘোষণা করেছে, বেইত শেআন উপত্যকা এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরের উত্তরে সাইরেন বাজানোর পর তারা আরেকটি ইরানি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। তবে এ থেকে কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এদিকে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র অবকাঠামোতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গতকাল শনিবার ইসরায়েলি বিমানবাহিনী জানিয়েছে যে, মধ্য ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সংরক্ষণ এবং উৎক্ষেপণের বিভিন্ন অবকাঠামোতে বিমান হামলা চালিয়েছে। দুদেশের মধ্যে নয় দিন ধরে সংঘাত চলছে। ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সামাজিক মাধ্যম এক্সে এক পোস্টে জানিয়েছে, তারা মধ্য ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র সংরক্ষণ এবং উৎক্ষেপণ অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
ইরানি হামলা ঠেকাতে ইসরায়েলের দৈনিক ব্যয় ২০০ মিলিয়ন ডলার
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে দৈনিক প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে ইসরায়েল। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এবং অন্যান্য পশ্চিমা ও ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বিপুল খরচের বড় অংশ ব্যয় হচ্ছে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলো চালাতে, যা প্রতিনিয়ত ইরানের লাগাতার হামলা ঠেকাতে সংগ্রাম করছে। বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, শুধু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনা করতেই ইসরায়েলের প্রতিদিন প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হচ্ছে। এদিকে ইরানি হামলার অর্থনৈতিক প্রভাব ইতোমধ্যেই দখলকৃত ফিলিস্তিনি শহরগুলোয় দেখা যাচ্ছে। ইসরায়েলি সংবাদপত্র মারিভ বলছে, তেলআবিবে অর্ধেকের বেশি দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাজার এলাকাগুলো ফাঁকা ও নিস্তব্ধ, জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। বিশ্লেষকদের মতে, এই আর্থিক চাপ এবং নাগরিক জীবনে বিপর্যয় ইসরায়েলি সরকারের ওপর অভ্যন্তরীণ চাপ আরও বাড়িয়ে তুলছে। পরিস্থিতি যত দীর্ঘায়িত হচ্ছে, ক্ষতির পরিমাণ তত দ্রুত বাড়ছে।
ইসরায়েলের বেন-গুরিয়ন বিমানবন্দর ও সামরিক দপ্তরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
ইসরায়েলের বেন-গুরিয়ন বিমানবন্দর ও সামরিক দপ্তর লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। গতকাল শনিবার সকালে ইসলামিক বিপ্লবী গার্ডবাহিনী (আইআরজিসি) এ ঘোষণা দিয়েছে। আইআরজিসি এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা বেন-গুরিয়ন বিমানবন্দর ও কিছু সামরিক সদর দপ্তরকে লক্ষ্য করে ইসরায়েল-অধিকৃত ফিলিস্তিনের অঞ্চলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। গতকাল ভোরে আইআরজিসি ঘোষণা দিয়েছে, তারা ট্রু প্রমিজ অপারেশন-৩ এর ১৮তম পর্যায় শুরু করেছে। এতে ‘শাহেদ ১৩৬’- এর মতো অসংখ্য আত্মঘাতী এবং যুদ্ধ ড্রোন, পাশাপাশি নির্ভুল কঠিন জ্বালানি এবং তরল জ্বালানি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। বিবৃতি অনুযায়ী, আইআরজিসি বেন-গুরিওন বিমানবন্দর এবং সামরিক অপারেশনাল লজিস্টিক সেন্টারগুলোতে পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্যবস্তুগুলো সফলভাবে ধ্বংস করেছে। সরকারের অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইরানি ড্রোনগুলো বাঁধা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। হামলার কারণে ইসরায়েলিরা আশ্রয়কেন্দ্রে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সর্বশেষ হামলায় ১০টির মধ্যে ৫টি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র তাদের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে। এর মধ্যে বন্দরনগরী হাইফাতে আঘাত হানা এক ক্ষেপণাস্ত্রে ৩ জন আহত হয়েছেন বলেও স্বীকার করেছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। এদিকে ইরান ও ইসরায়েল সংঘাত বন্ধের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে গত শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় কূটনৈতিক বৈঠকে বসেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি এবং ইউরোপীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। বৈঠক শেষে গণমাধ্যমে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট কাজা ক্যালাস বলেন, আঞ্চলিক উত্তেজনা কারও জন্যই লাভজনক নয়, তাই আমাদের আলোচনার সুযোগ খোলা রাখা উচিত।
দুইদিন আগে ব্রিটিশ এক যুদ্ধজাহাজের তাইওয়ান উপকূল পাড়ি দেওয়ার ঘটনাকে ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতা ক্ষুণ্নে উদ্দেশ্যমূলক উসকানি’ হিসেবে অভিহিত করেছে চীনের সামরিক বাহিনী। অন্যদিকে ব্রিটিশ রাজকীয় নৌবাহিনী বলেছে, বুধবার ওই প্রণালীতে তাদের এইচএমএস স্পে-র টহল ছিল আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
যুদ্ধজাহাজটি ওই অঞ্চলে মোতায়েন এবং তাইওয়ান প্রণালীতে টহলের পরিকল্পনা অনেক আগের, বলেছে তারা। এর মধ্য দিয়ে চার বছর পর ব্রিটিশ কোনো যুদ্ধজাহাজ তাইওয়ান প্রণালীতে টহল দিল, লিখেছে বিবিসি।
বিমানবাহী রণতরী এইচএমএস প্রিন্স অব ওয়েলসের নেতৃত্বে সম্প্রতি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে এসেছে যুক্তরাজ্যের একটি নৌবহর। তাদের এ অঞ্চলে আট মাস থাকার কথা। এর মধ্যেই এইচএমএস স্পে তাইওয়ান প্রণালীতে টহল দিল।
চীন তাইওয়ানকে তার নিজের ভূখণ্ড মনে করে, এবং মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে একে যুক্ত করতে প্রয়োজনে শক্তি ব্যবহার করতে বেইজিং পিছপা হবে না বলে তাদের হুঁশিয়ারিও আছে।
স্বশাসিত তাইওয়ান তাদের ওপর বেইজিংয়ের খবরদারিকে প্রত্যাখ্যান করে আসছে। মার্কিন যুদ্ধজাহাজগুলোকে প্রায়ই তাইওয়ান প্রণালী পাড়ি দিতে দেখা গেলেও সর্বশেষ ২০২১ সালে যুক্তরাজ্যের যুদ্ধজাহাজ এইচএমএস রিচমন্ড ওই জলসীমায় টহল দিয়েছিল। সেসময় যুদ্ধজাহাজটিকে ভিয়েতনামে মোতায়েন করা হয়েছিল।
সেবারও চীন এ টহলের প্রতিবাদ জানিয়ে ব্রিটিশ জাহাজটির গতিবিধি পর্যবেক্ষণে সেনা পাঠিয়েছিল। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে দুটি ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ স্থায়ীভাবে টহলে রয়েছে, এইচএমএস স্পে তার একটি।
এইচএমএস প্রিন্স অব ওয়েলসের নেতৃত্বে ইন্দো-প্যাসিফিকে আসা নৌবহরে প্রায় ৪ হাজার সেনা রয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
এই বহরটির ৮ মাসে ৩০টি দেশে সফর ও সামরিক অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার সঙ্গে একাধিক মহড়ায় অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
ইরান-ইসরায়েল চলমান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত হওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এই সিদ্ধান্তে হতাশ হয়েছে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং তার জোট। একই সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব ইরানে হামলার বিষয়ে ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত আসবে বলে আশা করেন নেতানিয়াহু।
গতকাল শুক্রবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে এসব কথা বলেন ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজের কলামিস্ট গিডিয়ন লেভি। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের বর্তমান বাস্তবতায় দুই সপ্তাহ অসীম, যদি তিনি ( ট্রাম্প) সত্যিই দুই সপ্তাহ বোঝাতে চেয়েছিলেন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের এই যুদ্ধে জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা ক্রমশ কমছে।’
লেভি আরও বলেন, দীর্ঘমেয়াদে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করতে এবং তার আক্রমণাত্মক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত করতে সফল হলেও, ইসরায়েলের নিরাপত্তা সমস্যা দূর হবে না। কারণ, ইরান আবার তার পারমাণবিক কর্মসূচি শুরু করবে এবং ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা ফিরে পেতে পারে।
এদিকে ইসরায়েলের একজন কর্মকর্তা টাইমস অব ইসরায়েলকে বলেছেন, ‘ইসরায়েল এখনো আশা করে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিরুদ্ধে হামলায় যোগ দেবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আশা করা হচ্ছে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) যোগ দেবে, আমরা আগামী ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জানতে পারব। কিন্তু এ বিষয়ে কেউ তাদের চাপ দিচ্ছে না, তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যায় প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজের হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাকে (কাৎজ) যা করতে বলেন, সে অনুসারেই বক্তব্য রাখেন কাৎজ। তিনি নিজে থেকে কোনো কিছু বলেন না।’
ইরান-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলা আরও তীব্র হচ্ছে। একের পর এক মিসাইল আঘাত হানছে ইসরায়েলে। তেমনি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ইরানের বিভিন্ন শহরে বোমা ফেলছে। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ইরানের অস্ত্র কারখানাসহ সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদন কেন্দ্রও। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ব রাজনীতি আরও ঘোলাটে হচ্ছে। নতুন নতুন দেশ প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে দুভাবে বিভক্ত হয়ে পড়ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ইরানের ওপর সামরিক হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেবেন।
ইরানের সঙ্গে ‘আলোচনার যথেষ্ট সম্ভাবনা’ থাকার কারণে ট্রাম্প দুই সপ্তাহের সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন, যা উত্তেজনার তাপমাত্রা কমিয়ে দিয়েছে। বিবিসির উত্তর আমেরিকার প্রধান সংবাদদাতা সূত্রের বরাতে জানিয়েছেন, ইরানের সঙ্গে গোপনে আলোচনা চলছে বলে মনে হচ্ছে।
ইসরায়েলি হাসপাতালে ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৭১ জন আহত হয়েছেন। এই হামলার পর ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে আর থাকতে দেওয়া যাবে না। ইরান দেশব্যাপী ইন্টারনেট যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। এ পরিস্থিতিকে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ সময় হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির মধ্যে বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য একমত যে ইরানকে কখনই ‘পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে দেওয়া হবে না’। গতকাল শুক্রবার জেনেভায় ফরাসি, জার্মান, ইইউ এবং ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ল্যামির দেখা করার কথা রয়েছে। হামাসের বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের মতে, বৃহস্পতিবার গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৭৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলের হাইফার বাজান তেল শোধনাগার অবিলম্বে খালি করার নির্দেশ দিয়েছেন সেখানকার মেয়র ইয়োনা ইয়াহাভ। তিনি বলেছেন, ইরানি হামলার পর শোধনাগারটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সেখানে কাজ করা বিপদ বয়ে আনতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাদের সঙ্গে ইরানে হামলায় যুক্ত হোক বা না হোক, তেহরানের সব পারমাণবিক স্থাপনা নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার ক্ষমতা ইসরায়েলের আছে, বলেছেন তিনি।
’ইরানে নেতৃত্বের বদল লক্ষ্য নয়, কিন্তু হতে পারে’
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরানে নেতৃত্বের পতন বা বদল তাদের হামলার লক্ষ্য নয়, তবে হামলার কারণে সেটি হতেও পারে। শাসনব্যবস্থা বদলানো কিংবা এই শাসনব্যবস্থার পতনের বিষয়টি প্রথমত এবং পুরোপুরিই ইরানি জনগণের বিষয়। এর কোনো বিকল্প নেই।
‘যে কারণে আমি একে লক্ষ্য হিসেবে ঠিক করিনি। এটা একটা ফল হতে পারে, কিন্তু এটা আমাদের আনুষ্ঠানিক বা নির্ধারিত লক্ষ্য নয়,’ গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের সরকারি টেলিভিশন কান-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব বলেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। নেতানিয়াহু বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাদের সঙ্গে ইরানে হামলায় যুক্ত হোক বা না হোক, তেহরানের সব পারমাণবিক স্থাপনা নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার ক্ষমতা ইসরায়েলের আছে।
তার বক্তব্যের কিছু সময় পরই হোয়াইট হাউস জানায়, ইরান যুদ্ধে ওয়াশিংটন জড়াবে কিনা সে বিষয়ে ট্রাম্প আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন। সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইরানের ফোরদো জ্বালানি সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ধ্বংসে যুক্তরাষ্ট্রের বাঙ্কারবিধ্বংসী বোমার সহায়তা লাগবে ইসরায়েলের।
ফোরদোর এই কেন্দ্রটিকে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ‘মুকুট’ বিবেচনা করা হয়। কোম শহরের কাছে একটি পাহাড়ের নিচে মাটির অনেক গভীরে এই কেন্দ্রটি অবস্থিত। ফোরদোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত কি যুক্তরাষ্ট্রকে সঙ্গে নিয়ে নেওয়া হবে, নাকি তাদের বাদ দিয়েই হবে— এমন প্রশ্নের জবাবে নেতানিয়াহু বলেন,’ আমাদের নিশানায় থাকা সব কিছু, তাদের সব পারমাণবিক কেন্দ্র ধ্বংসের ক্ষমতা আছে আমাদের। এখন যুক্তরাষ্ট্র যোগ দেবে কি দেবে না এটা পুরোপুরিই প্রেসিডেন্টের (ট্রাম্প) সিদ্ধান্ত।’
ইরানের পর এবার পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলের সাবেক উপ–প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও লেবার পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রভাবশালী নেতা মেইর মাসরি।
আরবি ও উর্দু ভাষায় এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে মাসরি বলেন, ‘ইরানের পর এবার আমরা পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধের চিন্তা করছি।’
মাসরির মন্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। অনেকেই পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে তার বক্তব্যের নিন্দা জানান।
বর্তমানে সরকারি কোনো পদে না থাকলেও ইসরায়েলি রাজনীতি ও কৌশল নির্ধারকদের মধ্যে প্রভাবশালী হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকেন মাসরি, বিশেষত লেবার পার্টির জ্যেষ্ঠ সদস্য হিসেবে।
পোস্টে মাসরি আরও লেখেন, ‘পাকিস্তান ইরান থেকে দূরে নয়। এতটুকু বুঝলেই যথেষ্ট।’
বর্তমানে সরকারি কোনো পদে না থাকলেও ইসরায়েলি রাজনীতি ও কৌশল নির্ধারকদের মধ্যে প্রভাবশালী হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকেন মাসরি, বিশেষত লেবার পার্টির জ্যেষ্ঠ সদস্য হিসেবে।
তার এই হুমকির পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। অনেকে পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়িয়ে মাসরির বক্তব্যের নিন্দা জানান। ব্যবহারকারীরা মন্তব্য করেন, এ ধরনের উসকানিমূলক হুমকি পাকিস্তানিদের মনোবল আরও দৃঢ় করবে। কেউ কেউ মনে করিয়ে দিয়েছেন, পাকিস্তানের পারমাণবিক সক্ষমতা ও এর সংযত ব্যবহার বিশ্বে স্বীকৃত।
এদিকে আঞ্চলিক উত্তেজনা চলার মধ্যে গত সোমবার পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার ইসরায়েলকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
ইসহাক দার বলেন, ‘ইসরায়েলের জন্য আমাদের বার্তা স্পষ্ট, পাকিস্তানের দিকে তাকানোর সাহস কেরো না।’ তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছে এবং যেকোনো আগ্রাসনের জবাব দিতে প্রস্তুত ও সক্ষম।
ইসহাক দার স্মরণ করিয়ে দেন, ‘ভারতের সঙ্গে উত্তেজনার সময় পুরো জাতি যেভাবে ঐক্যবদ্ধ ছিল, সেভাবেই সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এখনো সবাই একযোগে প্রস্তুত থাকব।’
এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ায় যে ইরানে হামলা হলে পাকিস্তান ইসরায়েলের ওপর পারমাণবিক হামলা চালাতে পারে। তবে এসব গুজব সরাসরি অস্বীকার করেছে পাকিস্তান সরকার।
গাজা থেকে শুরু করে কঙ্গো প্রজাতন্ত্র পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন সংঘাতময় অঞ্চলে ২০২৪ সালে শিশুদের ওপর সহিংসতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
সম্প্রতি জাতিসংঘের এক বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদরদপ্তর থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে সশস্ত্র সংঘাতে শিশুদের ওপর সহিংসতার মাত্রা নজিরবিহীনভাবে বেড়েছে। আর ২০২৩ সালের চেয়ে গুরুতর সহিংসতার ঘটনা ২৫ শতাংশ বেড়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে শিশুদের বিরুদ্ধে ৪১ হাজার ৩৭০টি গুরুতর সহিংসতার ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ৩৬ হাজার ২২১টিই সংঘটিত হয়েছে ২০২৪ সালে। বাকি ৫ হাজার ১৪৯টি আগের বছরের হলেও তা এ বছর যাচাই করা হয়েছে। এটি গত ৩০ বছরের মধ্যে যা সর্বোচ্চ।
২০২৩ সালেও শিশু সহিংসতায় রেকর্ড হয়েছিল, তবে পরের বছর অবশ্য সেই রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে যায়। ২০২৪ সালে আগের বছরের তুলনায় সহিংসতা বেড়েছে ২১ শতাংশ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৪ সালে সশস্ত্র সহিংসতায় সাড়ে ৪ হাজারেও বেশি শিশু নিহত এবং কমপক্ষে ৭ হাজার জন আহত হয়। বর্তমানে নির্বিচার হামলা ও সহিংসতার প্রধান শিকার শিশুরাই বলেও দাবি করা হয়।
এছাড়াও বহু শিশু একাধিক সহিংসতার শিকার হয়েছে। এমন ভুক্তভোগী শিশুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৪৯৫ জনে।
জাতিসংঘ মহাসচিবের শিশু ও সশস্ত্র সংঘাত বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ভার্জিনিয়া গাম্বা বলেন, যে ২২ হাজার ৪৯৫ শিশুর এখন স্কুলে পড়া বা মাঠে খেলাধুলা করার কথা, তারা আজ শিখছে কীভাবে গোলাগুলি আর বোমার মধ্যেও বেঁচে থাকতে হয়। এই শিশুদের আর্তনাদ আমাদের সবার রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়ার মতো।
তিনি আরও বলেন, এটি যেন আমাদের জন্য সতর্ক সংকেত হয়। কারণ আমরা একেবারে সংকটসীমার কিনারায় পৌঁছে গেছি।
জাতিসংঘ প্রতিবছর বিশ্বের প্রায় ২০টি সংঘাতময় অঞ্চলে ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার তালিকা প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনের পরিশিষ্টে যুক্ত রয়েছে তথাকথিত ‘লজ্জার তালিকা’, যেখানে শিশুদের ওপর সহিংসতার জন্য দায়ীদের নাম প্রকাশ করা হয়।
এ তালিকায় এ বছর নতুন করে যুক্ত হয়েছে হাইতির একটি সশস্ত্র গ্যাং জোটের নাম। তাদের বিরুদ্ধে শিশু হত্যা ও অঙ্গহানি, সশস্ত্র সহিংসতায় নিয়োগ, অপহরণ, মানবিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত করা এবং যৌন সহিংসতার মতো গুরুতর অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।
ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনী এবং ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসের নাম এ বছরের তালিকাতেও রয়েছে।
গত এক সপ্তাহ ধরে চলছে ইসরায়েল ও ইরানের সংঘাত। আর এই সংঘাতকে কেন্দ্র করে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করেছেন খোদ দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার সংঘাতে জড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে নেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) এ সিদ্ধান্তের কথা জানান ট্রাম্প। তিনি বলেন, “তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরুর ‘উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা’ রয়েছে।
তাই এ সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এই সময়ের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সংঘাতের একটি নিষ্পত্তি খোঁজার সুযোগ রাখতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে।
চলমান পরিস্থিতিতে ট্রাম্প এখন বিবেচনা করছেন, ইরানের সুসংরক্ষিত ফোর্ডো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনায় হামলা চালানো হবে কি না। এই স্থাপনাটি একটি পর্বতের নিচে অবস্থিত এবং কেবল যুক্তরাষ্ট্রের ‘বাংকার-বাস্টার’ বোমা দিয়েই এটিকে লক্ষ্যবস্তু করা সম্ভব বলে ধারণা করা হয়।
এর আগে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত একটি হাসপাতাল পরিদর্শনের সময় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেন, “ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে ‘বেঁচে থাকতে দেওয়া যাবে না’। এ ছাড়া, ইরান সরকারকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে হামলা জোরদারের নির্দেশ তিনি।
ইরান যে সময় ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে, একই সময়ে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচীতে হামলা চালায় তেল আবিব।
এদিকে, প্রথমদিকে এই সংঘাত থেকে নিজেকে দূরে রাখলেও পরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি ওই অঞ্চলে বাড়িয়েছেন ট্রাম্প এবং ইরানের ওপর হামলায় মার্কিন বাহিনীকে যুক্ত করার বিষয়টিও বিবেচনা করছেন।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন আমেরিকার সর্বোত্তম স্বার্থেই কাজ করবেন ট্রাম্প।
বৃহস্পতিবার বিয়েরশেবা শহরের সোরোকা মেডিকেল সেন্টারের ধ্বংসস্তূপ ও ভাঙা কাচের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমি বলতে পারি, তারা ইতোমধ্যেই আমাদের অনেক সাহায্য করছে।’
এদিকে, শুক্রবার (২০ জুন) ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিক ও যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের জন্য জেনেভায় যাচ্ছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। এতে নতুন এক কূটনৈতিক উদ্যোগ শুরু হতে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি জানান, তিনি হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে চলমান উত্তেজনা প্রশমনে একটি চুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে তথ্য দেন তিনি।
বৃহস্পতিবারের বৈঠকের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে কূটনৈতিক সমাধান অর্জনের একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে।’
এর আগে ইরানকে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান ট্রাম্প। তবে এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি।
তিনি বলেন, এই সংঘাতে যেকোনো সামরিক হস্তক্ষেপ আমেরিকানদের জন্য ‘অপূরণীয় ক্ষতির’ কারণ হবে।
ইরানকে চড়া মূল্য দিতে হবে বলে হুঁমকি দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গতকাল বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের বিরসেভা শহরের সরোকা হাসপাতালে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। এরপরই ইরানকে এই হুঁশিয়ারি দিলেন তিনি।
এক্স (পূর্বে টুইটার) পোস্টে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী লিখেন, গতকাল সকালে, ইরানের ‘সন্ত্রাসী স্বৈরাচারীরা’ বিরসেভার সোরোকা হাসপাতাল ও মধ্য ইসরায়েলের একটি বেসামরিক জনবসতিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। আমরা তেহরানের ‘স্বৈরাচার শাসকদের’ কাছ থেকে এই হামলার পুরো মূল্য আদায় করব।
ইসরায়েলের জরুরি সেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম (এমডিএ) জানিয়েছে, ইরানের সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ৪৭ জন আহত হয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, দৌড়ে আশ্রয় নিতে যাওয়ার সময় ১৮ জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর ও দুজনের অবস্থা মাঝারি।
এদিকে ইসরায়েলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী উরিয়েল বুসো দাবি করেছেন, বিরসেভা শহরে সোরোকা হাসপাতালের পাশে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ‘লাল সীমানা পেরিয়ে গেছে’ ইরান। তিনি একে ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলে অভিহিত করেছেন। ইসরায়েলি আর্মি রেডিওতে দেওয়া এক বিবৃতিতে বুসো বলেন, এই হামলা ইরানি শাসকগোষ্ঠীর একটি যুদ্ধাপরাধ।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, বিরসেভা শহরে ইরানের বড় ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। হামলায় সোরোকা হাসপাতাল ও তেল আবিবে অবস্থিত ইসরায়েলি স্টক এক্সচেঞ্জ ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জর্ডান থেকে আল জাজিরার এক প্রতিবেদক জানান, হাসপাতালটি সরাসরি লক্ষ্যবস্তু না হলেও পাশে থাকা একটি সামরিক স্থাপনায় আঘাতের পর সেই বিস্ফোরণের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থাও দাবি করেছে, লক্ষ্য ছিল হাসপাতালের পাশের একটি ‘সংবেদনশীল’ সামরিক ও গোয়েন্দা স্থাপনা, যা সোরোকা হাসপাতালের পাশে গাভ-ইয়াম প্রযুক্তি পার্কে অবস্থিত। সোরোকা হাসপাতালটি বর্তমানে গাজা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আহত সেনাদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় বলে জানা যায়।
মন্তব্য