করোনায় থমকে গেছে পৃথিবী। গোটা বিশ্ব চেয়ে আছে একটি নিরাপদ ও কার্যকর টিকার দিকে। তবে কাঙ্ক্ষিত টিকার যখন প্রয়োগ চলছে, ঠিক সে সময় এটি নেয়ার প্রতি অনেকের আগ্রহ কমতে শুরু করেছে।
টিকা নেয়ার আগ্রহ প্রশ্নে ১৭ থেকে ২০ ডিসেম্বর চার দিনের একটি জরিপ চালায় ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরাম (ডব্লিওইএফ)। প্যারিসভিত্তিক মার্কেট রিসার্চ কোম্পানি আইপিএসওএসের সহযোগিতায় ১৫ দেশের সাড়ে ১৩ হাজার প্রাপ্তবয়স্কের ওপর অনলাইনে জরিপ চলে।
এতে দেখা গেছে, অক্টোবরে টিকা নিয়ে মানুষের যতটা আগ্রহ ছিল, ডিসেম্বরে তা কমে গেছে।
ফ্রান্সে অক্টোবরে ৫৪ শতাংশ মানুষ টিকার নেয়ার আগ্রহ দেখালেও, ডিসেম্বরে তা নেমে এসেছে ৪০ শতাংশে।
রাশিয়ায় কেবল ডিসেম্বরেই জরিপ চালানো হয়। দেশটিতে এখন ৪৩ শতাংশ মানুষ টিকা নিতে চাইছেন। বাকিরা চাইছেন না।
সাউথ আফ্রিকায় দু মাস আগে টিকার আগ্রহ ছিল ৬৮ শতাংশের, ডিসেম্বরে এই হার ৫৩। জাপানে অক্টোবরে ৬৯ শতাংশ থাকলেও, এখন ৬০।
ইতালিতে অক্টোবরের চেয়ে ৩ শতাংশ কমে এখন টিকা নিতে চাইছেন ৬২ শতাংশ নাগরিক। স্পেনে ২ এবং জার্মানিতে ৪ শতাংশ কমেছে টিকার আগ্রহ।
যুক্তরাষ্ট্রে ৬৯ থেকে নেমে ৬৪ শতাংশ, কানাডায় ৭৬ থেকে নেমে ৭১। দক্ষিণ কোরিয়ায় ৮৩ থেকে নেমে ৭৫, অস্ট্রেলিয়ায় ৭৯ থেকে ৭৫ শতাংশ,
মেক্সিকোতে ১ শতাংশ কমে ৭৭, যুক্তরাজ্যে ৭৯ থেকে নেমে ৭৭ শতাংশ।
ব্রাজিলে ৮১ থেকে নেমে ৭৮ এবং চীনে ৮৫ থেকে কমে ৮০ শতাংশ নাগরিক এখন টিকা নিতে আগ্রহী।
এ জরিপ বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, চীন, ব্রাজিল, মেক্সিকো, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং কানাডায় টিকার চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
সে তুলনায় পরের সারিতে আছে, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইতালি, স্পেন এবং জাপান। সবচেয়ে বেশি আগ্রহ হারিয়েছেন ফ্রান্স, সাউথ আফ্রিকা ও রাশিয়ার নাগরিকেরা।
টিকার প্রতি আগ্রহ হারানোর কারণ
জরিপ বলছে, করোনার টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে ভীতির কারণেই আগ্রহ হারাচ্ছে লোকে।
দ্বিতীয় কারণ, টিকার কার্যকারিতা নিয়ে সংশয়। রাশিয়া ও জাপানের নাগরিকদের মধ্যে এই সংশয় সবচেয়ে বেশি।
‘করোনা অতোটা প্রাণঘাতী ভাইরাস না’ বলে মনে করছেন অনেকে। আর এটাকেই তৃতীয় কারণ বলছে জরিপ। চীনের ৩২ শতাংশ, যুক্তরাজ্যের ২৫ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ৮ শতাংশ এটা বিশ্বাস করেন।
আরও পড়ুন:চীনের ‘রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিপন্ন’ করায় উইঘুর জাতিগোষ্ঠীর এক অধ্যাপককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে বলে খবর পেয়েছে বিবিসি।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন দুই হুয়া ফাউন্ডেশনের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, সাজার বিরুদ্ধে চলতি মাসে আপিলে হেরে যান ৫৭ বছর বয়সী রাহিলে দাউত।
শিনজিয়াংয়ে উইঘুরসহ বেশির ভাগ মুসলিম থাকা জাতিগোষ্ঠীর ওপর চীন মানবতাবিরোধী অপরাধ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ আছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো মনে করে, গত কয়েক বছরে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ১০ লাখের বেশি উইঘুরকে আটকে রেখেছে চীন। বন্দিশালাগুলোকে ‘পুনঃশিক্ষা ক্যাম্প’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে দেশটি।
লাখ লাখ উইঘুরকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডও দিয়েছে পূর্ব এশিয়ার বৈশ্বিক পরাশক্তিটি।
দুই হুয়া ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক জন ক্যাম বলেন, অধ্যাপক রাহিলে দাউতের সাজা নিষ্ঠুর ট্র্যাজেডি। এটি উইঘুর জাতিগোষ্ঠীর জন্য বিশাল ক্ষতি।
এ মানবাধিকারকর্মী রাহিলের দ্রুত মুক্তি ও পরিবারের কাছে তার নিরাপদে ফিরে যাওয়া নিশ্চিতের আহ্বান জানান।
রাহিলের মেয়ে আকেদা পুলাতি জানান, প্রতিদিনই মাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন তিনি।
আকেদাকে উদ্ধৃত করে দুই হুয়ার বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমার নির্দোষ মা কারাগারে সারা জীবন কাটাবেন, এমন ভাবনা অবর্ণনীয় কষ্টের। ওহে চীন, দয়া দেখাও এবং আমার নির্দোষ মাকে মুক্তি দাও।’
আরও পড়ুন:৩০টিরও বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ ও নিরপেক্ষ দেশ, ব্যাংক এবং ব্রোকারের একটি তালিকা অনুমোদন করেছে রাশিয়া সরকার। তালিকায় থাকা দেশগুলোকে রাশিয়ান মুদ্রাবাজার এবং ডেরিভেটিভস বাজারে বাণিজ্য করার অনুমতি দেবে মস্কো। এ তালিকায় নাম রয়েছে বাংলাদেশের।
শনিবার ঢাকার রাশিয়া দূতাবাস তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক বার্তায় এ তথ্য জানায়।
তালিকায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে– আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, বেলারুশ, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, আলজেরিয়া, বাংলাদেশ, বাহরাইন, ব্রাজিল, ভেনেজুয়েলা, ভিয়েতনাম, মিশর, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, কাতার, চীন, কিউবা, মালয়েশিয়া, মরক্কো, মঙ্গোলিয়া, ওমান, পাকিস্তান, সৌদি আরব, সার্বিয়া, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত।
এদিকে রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, এমন সময়ে এই সিদ্ধান্ত নিল রাশিয়া যখন গত ১৭ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্বল অবস্থায় রয়েছে দেশটির মুদ্রা রুবলের মান। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য ব্যাংক সুদের হার ১৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে রাশিয়া।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে মহামারি-পরবর্তী সময়ে এমনিতেই চাপে রয়েছে বিশ্বের প্রায় সব দেশের অর্থনীতি। এর মধ্যে ইউক্রেনে হামলার পর ভূ-রাজনৈতিক কারণে আরও দুর্বল হয়েছে দেশটির মুদ্রা রুবল।
সমস্যা থেকে বের হতে গত ২৫ সেপ্টেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে দিরহাম-রুবল আন্তঃবিনিময় চুক্তিতে লেনদেন শুরু করে রাশিয়া।
এর আগে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলার পর কোন কোন দেশ রাশিয়ার বন্ধু, আর কোন কোন দেশ তাদের বন্ধু নয়— এমন একটি তালিকা প্রকাশ করেছে পুতিন প্রশাসন।
ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর থেকে যেসব দেশ ও অঞ্চল রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবন্ধুসুলভ পদক্ষেপ নিয়েছে, তাদের ‘নেতিবাচক তালিকায়’ রাখা হয়। বন্ধু নয়, এমন দেশ ও অঞ্চলের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা নাগরিকদের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক পর্যালোচনা করা হবে বলে সেসময় জানায় ক্রেমলিন। এমনকি রাশিয়ায় ওইসব দেশের দূতাবাসে কর্মী নিয়োগেও কড়াকড়ি আরোপ করে দেশটির প্রশাসন।
তরুণ প্রজন্মকে ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষায় যুক্তরাজ্যে সিগারেট নিষিদ্ধ করার চিন্তা করছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। ২০২২ সালে নিউজিল্যান্ডের ধূমপান-বিরোধী পদক্ষেপটি বিবেচনা করেই তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।
নিউজিল্যান্ডের ওই আইনে ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি বা তার পরে জন্মগ্রহণকারী সবার ওপর তামাক বা তামাকজাত সামগ্রী ক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়।
এ ব্যাপারে সুনাক বলেন, ‘২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে ধূমপান মুক্ত করা ও দেশে ধূমপায়ীর হার কমানোর লক্ষ্যে আমরা ইতোমধ্যেই জনগণকে উত্সাহিত করার চেষ্টা করছি।
‘এ লক্ষ্য পূরণে আমরা যে ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করেছি, তার মধ্যে রয়েছে- বিনামূল্যের ভেপ কিট প্রদান, গর্ভবতী মহিলাদের ধূমপান ছাড়ানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে একটি ভাউচার স্কিম প্রদান ও বাধ্যতামূলক সিগারেটের প্যাকেটে এর কুফল সম্পর্কে তথ্য দেয়া।’
চলতি বছরের মে মাসে অপ্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বিনামূল্যে ভেপিং ও ই-সিগারেটের স্যাম্পল বিতরণ বন্ধ করে যুক্তরাজ্য সরকার। সেসময় এক বিবৃতিতে কর্তৃপক্ষ জানায়, অপ্রাপ্তবয়স্কদের ধূমপানে আসক্তি রোধে দেশটি আইনি ফাঁকফোকর বন্ধের চেষ্টা করছে।
পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় গত জুলাই মাসে একবার ব্যবহার করা যায় ২০২৪ সালের মধ্যে এমন ভেপ বিক্রি নিষিদ্ধ করতে পৃথকভাবে যুক্তরাজ্য সরকারকে আহ্বান জানায় ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস কর্তৃপক্ষ।
রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার আর্মি টেকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম তথা এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এনবিসি শনিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
ইউক্রেন কবে নাগাদ ক্ষেপণাস্ত্রটি পাবে, সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি প্রতিবেদনে।
রাশিয়ার অধিকৃত ইউক্রেনের অঞ্চলগুলোতে শত্রুপক্ষের বিমানঘাঁটি, রেলপথ ও যুদ্ধ সরঞ্জাম সরবারহের পথগুলোতে শক্তিশালী হামলা চালাতে পারে, এমন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র অনেকদিন ধরেই বাইডেন প্রশাসনের কাছে চেয়ে আসছে ইউক্রেন।
যদিও হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কির যুক্তরাষ্ট্র সফরকালেও সরাসরি এ বিষয়ে কোনো আলোচনা করতে দেখা যায়নি দুই দেশের নীতিনির্ধারকদের।
জেলেনস্কির সফরকালে ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত ৩২ কোটি ৫০ লাখ ডলারের সামরিক সহায়তা প্যাকেজে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রতিবেদনের বিষয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হয়নি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদরদপ্তর পেন্টাগন। গেন্টাগনের এ বিষয়ে কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা নেই বলে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
ইউক্রেনকে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা দেয়া হতে পারে এ রকম গুঞ্জনের পর চলতি মাসের শুরুর দিকে রাশিয়ার পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে বিষয়টিকে যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে যুদ্ধের সর্বোচ্চ সীমা লঙ্ঘন হিসেবে জানায়।
রাশিয়া আরও জানায়, এমনটি হলে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়েছে বলে মনে করবে তারা।
ক্ষেপণাস্ত্রের বিষয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কাছে জানতে চাইলে তিনি এনবিসিকে সরাসরি কিছু না বললেও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পেতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টও কয়েক দিন আগে করা তাদের এক প্রতিবেদনে ইউক্রেনকে ক্ষেপণাস্ত্র দেয়া হতে পারে বলে জানায়।
যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে আলোচনা হওয়া ক্ষেপণাস্ত্রটি সম্পর্কে জানা যায়, এটি ৩৬০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে যেকোন স্থাপনায় গভীর ও শক্তিশালী আঘাত হানতে পারে।
কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ডে নয়াদিল্লির এজেন্টদের সম্ভাব্য সম্পৃক্ততার তদন্তে ভারত সরকার কানাডার সঙ্গে কাজ করবে বলে আশা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে উদ্ধৃত করে রয়টার্সের শনিবারের প্রতিবেদনে বলা হয়, কানাডার কাছে শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যার সঙ্গে ভারতীয় এজেন্টদের যুক্ত থাকার বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে। এ ঘটনার পর নয়াদিল্লি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো যে অভিযোগগুলো তুলেছেন, সেগুলো নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। এ তদন্তে কানাডার সঙ্গে ভারতের কাজ করা জরুরি। আমরা জবাবদিহি দেখতে চাই।’
এ বিষয়ে ট্রুডো বলেন, ‘আমরা ভারতের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে কাজ করতে চাই। আশা করি তারা আমাদের সঙ্গে যুক্ত হবে, যাতে আমরা তদন্তের গভীরে যেতে পারি।’
বিবিসির বৃহস্পতিবারের প্রতিবেদনে বলা হয়, নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে ট্রুডো ভারতের বিরুদ্ধে তার অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করে বলেন, ‘কানাডার মাটিতে কানাডীয় নাগরিক শিখ নেতা নিজ্জার হত্যায় ভারতীয় সরকারের এজেন্টদের জড়িত থাকার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ রয়েছে।’
কানাডার গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কী প্রমাণ সংগ্রহ করেছে, সে সম্পর্কে ট্রুডো কোনো তথ্য দেননি, তবে কানাডার সরকারের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গোয়েন্দাদের দেয়া তথ্যের ওপর আস্থা না থাকলে ট্রুডো প্রকাশ্যে কথা বলতেন না।
শিখ নেতা নিজ্জার হত্যাকাণ্ড ঘিরে কানাডার সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। কানাডা খালিস্তানপন্থি আন্দোলনকারীদের সমর্থন করে তাদের আশ্রয় দেয় বলে অভিযোগ ভারতের।
ভারত গত বুধবার বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং দুষ্কৃতি নেটওয়ার্কে ৪৩ জন জড়িত বলে তাদের তালিকা কানাডা সরকারকে পাঠিয়েছে। এতে অভিযোগ করা হয়েছে, ভারতে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় থাকা অনেকেই কানাডায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
আরও পড়ুন:চীনকে যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের অস্তিত্বের জন্য ‘হুমকি’ উল্লেখ করে ভারতীয়-আমেরিকান রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী নিকি হ্যালি দাবি করেছেন, বেইজিং যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ারে শুক্রবার তিনি এ কথা বলেন।
হ্যালিকে উদ্ধৃত করে শনিবার এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, চীন আমেরিকাকে পরাজিত করার জন্য অর্ধশতাব্দী পার করেছে। কিছু ক্ষেত্রে চীনা সামরিক বাহিনী এরই মধ্যে আমেরিকার সশস্ত্র বাহিনীর সমকক্ষ হয়ে গেছে।
রিপাবলিকান পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার দৌড়ে থাকা বিবেক রামাস্বামী ওহাইওতে চীন সম্পর্কে বৈদেশিক নীতি নিয়ে আলোচনার দুই দিন পর উল্লিখিত কথা বলেন হ্যালি।
সাবেক আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের পর হ্যালি ও রামাস্বামী রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন।
নিকি হ্যালির অভিযোগ, প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতে যুক্তরাষ্ট্রের কাজগুলো বাগিয়ে নিচ্ছে চীন। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যসংক্রান্ত গোপনীয়তাগুলোও নিয়ে গেছে পূর্ব এশিয়ার দেশটি। বর্তমানে দেশটি ওষুধ থেকে শুরু করে উন্নত প্রযুক্তি শিল্পের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে।
তিনি উল্লেখ করেন, অল্প সময়ের মধ্যে চীন অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া দেশ থেকে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে চলে গেছে।
হ্যালি বলেন, ‘কমিউনিস্ট পার্টির উদ্দেশ্য স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দিতে তারা অত্যাধুনিক বিশাল সামরিক বাহিনী গড়ে তুলছে, যা এশিয়া ও তার বাইরেও আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম।’
আরও পড়ুন:ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যার প্রমাণ কানাডার হাতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। এ ঘটনায় ভারতীয় এজেন্টরাই জড়িত বলে ফের মন্তব্য করে তিনি জানিয়েছেন, তবে নিজ্জর হত্যার প্রমাণ কানাডা ফাঁস করবে না।
বিবিসি জানায়, গত বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে ট্রুডো ভারতের বিরুদ্ধে তার অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করেন। তিনি বলেন, কানাডার মাটিতে কানাডীয় নাগরিক শিখ নেতা নিজ্জর হত্যায় ভারতীয় সরকারের এজেন্টদের জড়িত থাকার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ রয়েছে।
বিবিসি জানায়, গত ১৮ জুন কানাডায় খলিস্তানপন্থি আন্দোলনকারী শিখ নেতা হরদীপ সিংহ নিজ্জর খুন হন। তিনি ছিলেন খলিস্তানপন্থি সংগঠন ‘খলিস্তান টাইগার ফোর্স’ বা কেটিএফের প্রধান তথা কানাডার সারের গুরু নানক শিখ গুরুদ্বার সাহিবের প্রধান। দুই অজ্ঞাতপরিচয় আততায়ী ৪৬ বছরের নিজ্জরকে গুলি করে খুন করেন। শুরু থেকেই কানাডা সরকারের দাবি, এই হত্যাকাণ্ডে ভারতের ‘হাত’ রয়েছে। গত সোমবার পার্লামেন্টের জরুরি অধিবেশনে প্রথম ভারতের এজেন্টদের জড়িত থাকার ব্যাপারে সরাসরি অভিযোগ তোলেন ট্রু়ডো। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় এক কূটনীতিককে বহিষ্কার করে ট্রুডো সরকার। এদিকে, ভারত কানাডার এ অভিযোগকে ‘অযৌক্তিক’ বলে অভিহিত করেছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেছেন, ‘কানাডা যে অভিযোগ করেছে, কিন্তু আমাদের মনে হয়েছে, এ অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা মনে করি, তাদের অভিযোগ পক্ষপাতপূর্ণ।’
তিনি বলেন, ‘অভিযোগ করার আগে বা পরে কানাডা কোনো তথ্যপ্রমাণ ভারতকে দেয়নি। আমরা বলেছি, কোনো নির্দিষ্ট তথ্য পেলে দেখব। এখনো কিছু পাইনি। আমাদের তরফ থেকে কানাডাকে কিছু ব্যক্তির ভারতবিরোধী কাজের নির্দিষ্ট তথ্য দিয়েছি। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’
অরিন্দম বাগচি বলেন, ‘আমরা আমাদের বন্ধু দেশগুলোর সঙ্গে এ বিষয়সহ নানা বিষয়ে কথা বলেছি এবং বলছি। আমরা আমাদের অবস্থানের কথা জানিয়েছি।'
শিখ নেতা নিজ্জর হত্যাকাণ্ড ঘিরে কানাডার সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। কানাডা খালিস্তানপন্থি আন্দোলনকারীদের সমর্থন করে তাদের আশ্রয় দেয় বলে অভিযোগ ভারতের। ভারত গত বুধবার বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং দুষ্কৃতি নেটওয়ার্কে জড়িত ৪৩ জনের তালিকা কানাডা সরকারকে পাঠিয়েছে। এতে অভিযোগ করা হয়েছে, ভারতে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় থাকা অনেকেই কানাডায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, কানাডায় বহু ভারতীয় বাস করেন। দেশটির মোট জনসংখ্যা ৩ কোটি ৭০ লাখ। তার মধ্যে অন্তত ১৪ লাখ ভারতীয় আছেন। উচ্চশিক্ষা কিংবা চাকরির সূত্রে ভারত থেকে তারা কানাডায় গেছেন। কানাডায় প্রবাসী ভারতীয়ের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৩.৭ শতাংশ। কানাডায় প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে অনেকেই শিখ ধর্মাবলম্বী। সেখানে ৭ লাখ ৭০ হাজার শিখ রয়েছেন, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশ। ভারতে শিখদের অনুপাত কানাডার চেয়ে কম। ভারতের মোট জনসংখ্যার বিচারে শিখদের সংখ্যা মাত্র ১.৭ শতাংশ। কানাডায় জাস্টিন ট্রুডোর সরকার গঠনে শিখদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। শিখরা কানাডার রাজনীতিতেও যথেষ্ট সক্রিয়। কানাডার হাউস অব কমন্সে ১৮ জন শিখ সাংসদ রয়েছেন। শতাংশের বিচারে যা ভারতের চেয়েও বেশি। তাই ট্রুডো বা কানাডার কোনো রাজনৈতিক দলই শিখদের চটাতে চান না।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য