ফাইজার-বায়োএনটেক উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকার জরুরি ব্যবহারের স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সংস্থাটি এ স্বীকৃতি দেয় বলে এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
৮ ডিসেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ফাইজার ও জার্মানির বায়োটেকনোলজি কোম্পানি বায়োএনটেক উদ্ভাবিত টিকা দেয়া শুরু করে যুক্তরাজ্য। পরে করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে।
ডব্লিউএইচওর পক্ষ থেকে বলা হয়, এক বছর আগে চীনে করোনা মহামারি শুরুর পর এই প্রথম ফাইজার-বায়োএনটেক উদ্ভাবিত টিকার স্বীকৃতি দেয়া হলো।
ইউনিসেফ, প্যান-আমেরিকান হেলথ অর্গানাইজেশনসহ অন্য সংস্থাগুলোকে করোনায় নাজুক পরিস্থিতিতে থাকা দেশগুলোতে টিকা সরবরাহের আহ্বান জানায় ডব্লিউএইচও।
ডব্লিউএইচওর শীর্ষ কর্মকর্তা ম্যারিয়েনগেলা সিমাউ বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে করোনার টিকা ব্যবহার নিশ্চিতে এটি বেশ ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে বিশ্বের সব প্রান্তে প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যাপ্ত টিকা সরবরাহে আরও বেশি বৈশ্বিক উদ্যোগে জোর দিতে চাই আমি।’
এর আগে নিজেদের ও বিশ্বের অন্য বিশেষজ্ঞদের ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার কার্যকারিতা ও গুণমান নিয়ে তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনার আহ্বান জানায় ডব্লিউএইচও।
পর্যালোচনায় টিকার নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা সংক্রান্ত ডব্লিউএইচওর মানদণ্ড ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা বজায় রেখেছে বলে ডব্লিউএইচও জানায়।
লিভারের মারাত্মক এক রোগ লিভার সিরোসিস। এ রোগে প্রতি বছরই অনেকের মৃত্যু হয়। প্রাণঘাতী রোগটির চিকিৎসা পদ্ধতি গত ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এক ভিডিওতে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হেপাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মেডিসিন, লিভার ও পরিপাকতন্ত্র রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ফরহাদ হোসেন মো. শাহেদ। পরামর্শগুলো তার ভাষায় পাঠকদের জন্য উপস্থাপন করা হলো।
লিভার সিরোসিসের চিকিৎসাটা আমরা তিন ভাগে ভাগ করে থাকি। একটা হলো সাধারণ চিকিৎসা, একটা হলো যে সমস্ত কারণে লিভার সিরোসিস হয়, কারণভিত্তিক চিকিৎসা এবং সর্বশেষ হচ্ছে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন।
সাধারণ চিকিৎসা
সাধারণ চিকিৎসার মধ্যে আসবে রোগীর খাওয়া-দাওয়া। সাধারণত লিভার সিরোসিসের রোগীদের আমরা হাই প্রোটিন ডায়েট দিই, হাই ফাইবার ডায়েট দিই এবং ব্রাঞ্চড চেইন অ্যামাইনো অ্যাসিড দিই।
হাই প্রোটিন ডায়েটের মধ্যে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ এগুলো থাকবে। হাই ফাইবার ডায়েটের মধ্যে টাটকা শাকসবজি, ফলমূল এগুলো থাকবে। আর ব্রাঞ্চড চেইন অ্যামাইনো অ্যাসিডেরে মধ্যে মটরশুঁটি, মসুরের ডাল, বাদাম এগুলো থাকবে।
এ ধরনের খাবারগুলো দেওয়া হয়, কারণ লিভার সিরোসিস হচ্ছে একটা ক্ষয়জনিত রোগ। এখানে লিভার কাজ করে না। লিভার না কাজ করার কারণে রোগীরা শরীরে শক্তি পায় না। এভাবে আস্তে আস্তে ওয়েট (ওজন) কমে যায়। এ জন্য প্রোটিনটা খুবই ইম্পরট্যান্ট। প্রোটিন যাতে রোগীরা সঠিকভাবে পায়, এটা আমাদের খেয়াল রাখতে হয়।
লিভার সিরোসিস রোগীদের সাধারণ চিকিৎসার মধ্যে দুই নম্বর হলো সবসময় লিভার সিরোসিস রোগীদের কিছু না কিছু ইনফেকশন থাকে এবং অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া লাগে। তারপরে রোগীর বাথরুম যাতে ক্লিয়ার থাকে। গাট স্টেরিলাইজেশন। এ জন্য আমরা লেক্সেটিভজাতীয় কিছু দিয়ে থাকি, যেমন: অ্যাভোলাক সিরাপ, লেকটিটলের মতো ওষুধ দিয়ে থাকি, যাতে বাথরুম দুই থেকে তিনবার হয়। তাহলে রোগীর ইনফেকশনটাও কম হয়, গাট স্টেরিলাইজ থাকে। রোগীর ইমপ্রুভ থাকে।
এরপর হলো পোর্টাল হাইপারটেনশন থাকে। লিভার সিরোসিসের রোগীদের পোর্টাল প্রেশারটা কমায়া রাখতে হয়, যে কারণে আমরা ইনডেভারের মতো ওষুধগুলো প্রেসক্রাইব করে থাকি। পোর্টাল প্রেশার কম থাকলে ব্লিডিংয়ের সম্ভাবনাও কম থাকে। এগুলো হচ্ছে সাধারণ চিকিৎসা।
কারণজনিত চিকিৎসা
কারণের চিকিৎসার মধ্যে আছে, যাদের হেপাটাইটিস বি বা বি ভাইরাস থাকে, তাদের বি ভাইরাসের চিকিৎসা দেওয়া হয়। বি ভাইরাসের জন্য আগে ভাইরাস ধরা পড়লে আমরা এক বছর, দুই বছর, তিনি বছর পরীক্ষার মাধ্যমে যতটুকু ইন্ডিকেশন দিতাম, কিন্তু এখন যেটা গেছে ভাইরাসের চিকিৎসা বন্ধ করার পর অনেক রোগী আমাদের কাছে সিরোসিস বা ক্যানসার নিয়ে আসে।
কাজেই এখন ট্রেন্ড হচ্ছে ভাইরাসের ওষুধ বন্ধ করা যাবে না। ডাক্তারের পরামর্শমতো প্রয়োজনে ৪ বছর, ১০ বছর, ১৫ বছর যা লাগে, সবসময় কন্টিনিউ করতে হবে। লিভার বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে যেভাবে খেলে ভালো হয়, সেভাবে খেতে হবে।
সি ভাইরাস যদি থাকে, আমরা সি ভাইরাসের চিকিৎসা দিয়ে থাকি। এটার একটা ভালো চিকিৎসা আছে।
ফ্যাটি লিভার যদি থাকে, অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের ক্ষেত্রে আমরা অ্যালকোহল বন্ধ করে দিই। আর নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের কারণগুলোর মধ্যে হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, ওবেসিটি এগুলো কমানোর কথা বলে থাকি।
এগুলো কমানোর সাথে সাথে এগুলো কন্ট্রোলের যে ওষুধ, সেগুলো আমরা খেতে বলি।
এরপর অটোইমিউন হেপাটাইটিস যদি থেকে থাকে, সেখানে আমরা স্টেরয়েড দিয়ে থাকি। এ ছাড়া যদি অটোইমিউন বিগ ডিজিজ থাকে, এগুলো চিকিৎসা করা হয়। এ ছাড়া উইলসন’স ডিজিজের মতো বংশগত যেসব রোগ আছে, এগুলোর সুন্দর চিকিৎসা আছে। চিকিৎসা করলে রোগী ইমপ্রুভ করে, অনেক দিন ভালো থাকে।
হার্ট ফেইলিউর রোগীদের যদি লিভার সিরোসিস থাকে, আমরা হার্ট ফেইলিউর কন্ট্রোল করি। তখন রোগী অনেক দিন ভালো থাকে।
ড্রাগসের কারণে যদি লিভার সিরোসিস হয়, সে অনুযায়ী ওষুধ পরিবর্তন করা হয়।
লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট
লিভার সিরোসিসের আমরা যে চিকিৎসাগুলো বলেছি, এগুলো এ কারণে যে, রোগী যেন জাস্ট সুস্থ থাকে এবং উপসর্গবিহীন থাকে, কিন্তু লিভার সিরোসিস যেটা হয়ে গেছে, এটার আসলে কোনো চিকিৎসা নাই। এর একটাই চিকিৎসা; লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট। এটা আমাদের দেশে চার-পাঁচটা অলরেডি হয়ে গেছে এবং সাকসেস খুবই ভালো। এ জন্য আমাদের বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অতি শিগগিরই লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট শুরু হচ্ছে। এটা নিয়ে এখন আর আমাদের কোনো চিন্তা নাই।
ইনশাল্লাহ যে সমস্ত লিভার সিরোসিস রোগী আছেন, আপনাদের চিকিৎসা ইনশাল্লাহ আছে। এটাও একটা চিকিৎসা, যেটাতে রোগী ইনশাল্লাহ সুস্থ হয়ে যায়, যে জন্য লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট এটা হচ্ছে লেটেস্ট ট্রিটমেন্ট। এটার মাধ্যমে রোগী সুস্থ হয়।
আরও পড়ুন:ফরিদপুরে ভুল অস্ত্রোপচারে প্রসূতির জরায়ু কেটে ফেলার অভিযোগটি সঠিক নয় জানিয়ে সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন রোগীর পরিবারের সদস্যরা।
অভিযোগটির বিষয়ে হাসপাতাল ও ডাক্তারের কোনো প্রকার দায় নেই জানিয়ে হাসপাতালে গণমাধ্যমের কাছে শনিবার একটি অঙ্গিকারনামা পাঠিয়েছেন প্রসূতির শ্বশর ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের গেন্দু মোল্লার হাটের রফিক মোল্যা।
এর আগে গত ২৪ মার্চ সন্ধ্যায় রফিক মোল্যা তার পুত্রবধূকে নিয়ে শহরের মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের জন্য ভর্তি হন। সেখানে রাতে একটি ছেলে সন্তান জন্ম দেন পুত্রবধূ। অস্ত্রোপচারের সময় রোগী ও সন্তানকে বাঁচাতে প্রসূতির পরিবারের সম্মতিতে তার জরায়ু কেটে ফেলেন ডাক্তার। এ ঘটনায় দেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ফরিদপুরে ‘ভুল অস্ত্রোপচারে প্রসূতির জরায়ু কেটে ফেলার অভিযোগ’ এ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়।
যা ভুল বলে অঙ্গিকারনামায় রফিক মোল্লা বলেন, ‘আমি গ্রামের সহজ সরল কৃষক। আমার পুত্রবধূর অস্ত্রোপচারের পর তার জরায়ু অপসারণের বিষয়টিকে একটি মহল ভুলভাবে আমার কাছে উপস্থাপন করে। আমি অন্যের প্ররোচনায় বিষয়টি প্রথমে মিডিয়ার সামনে তুলে ধরলে তারা সংবাদ প্রকাশ করে। এর ফলে হাসপাতালের সুনামের যে ক্ষতি হয়েছে এজন্য আমি জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সংবাদকর্মীরা সংবাদে ডাক্তার বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য নেননি। তাদের বক্তব্য নিলে আমার ভুল তথ্য উপস্থাপনের সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া যেত। এখন আমার পুত্রবধূ ও নাতি সুস্থ আছে। এ হাসপাতালেই তারা চিকিৎসা নিচ্ছে। আমার কোনো অভিযোগ নেই, আমি অন্যের প্ররোচনায় পরে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলাম, আমি ক্ষমা চাই।’
অস্ত্রোপচারের পূর্বে বন্ড সই করা রফিকের জামাতা সোহান শরীফ বলেন, ‘অস্ত্রোপচারের পূর্বে আমিই স্বাক্ষর করি। অস্ত্রোপচার চলার সময় ওটি রুম থেকে কয়েকবার রোগীর অবস্থা সম্পর্কে আমাদের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়। রোগীর প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে তাই রক্ত জোগাড় করতে বলেন। কিন্তু আমরা না বুঝেই ডাক্তারকে দোষারোপ করতে থাকি।’
ওই হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে প্রসূতি মা রিক্তা বলেন, ‘আমি ও আমার সন্তান সুস্থ আছি। কোথায় কি হয়েছে আমি কিছুই জানি না। শুধু এটুকু জানি জীবনের চেয়ে বড় মূল্যবান কিছু নেই।’
প্রসূতির অস্ত্রোপচার করেন ডা. কল্যাণ কুমার সাহা ৷ তিনি মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে সপ্তাহে দুইদিন শুক্রবার ও শনিবার চেম্বার ও ওটি করেন। তিনি মূলত ঢাকার পিজি হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ডাক্তার।
ডা. কল্যাণ কুমার সাহা বলেন, ‘ওটিতে নেবার পর রোগীর অবস্থা ভাল ছিল না। মা ও সন্তানের মধ্যে একজনকে বাঁচানোর অবস্থা তৈরি হয়। তখনও রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলি। কাকে বাঁচাবো মতামত নিই। এরপর অস্ত্রোপচার সঠিক হয়। একটি ছেলে সন্তান হয়। সন্তান সুস্থ ছিল। কিন্তু তখনও মায়ের রক্তক্ষরণ বন্ধ হচ্ছিল না। তখনও আমরা রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলি ও দ্রুত রক্ত জোগাড় করতে বলি। একপর্যায়ে মাকে বাঁচাতে তার জরায়ু কাটতে বাধ্য হই। এখন মা ও সন্তান সুস্থ আছেন। এখানে ভুল অস্ত্রোপচার কোথায় বলুন?’
মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক মানিক চৌধুরী বলেন, ‘বিভিন্ন মিডিয়াতে যে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে তাতে ডাক্তার বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো মতামত বা বক্তব্য নেই। একটি অসম্পূর্ণ তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে আমার প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। যা আইন সমর্থন করে না।’
হাসপাতালটির চেয়ারম্যান নুর মো. মাজেদ বলেন, ‘একটি মহল আমাদের প্রতিষ্ঠানের নামে অপপ্রচার চালানোর জন্য তাদেরকে প্ররোচনা দিয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করিয়েছেন। অপরদিকে রোগীর স্বজনরাও তাদের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চেয়েছেন। আমরা অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ভাবছি।’
আরও পড়ুন:লিভারের একটি মারাত্মক রোগ লিভার সিরোসিস। এ রোগে প্রতি বছরই অনেকের মৃত্যু হয়। প্রাণঘাতী রোগটি কী এবং এটি কেন হয়, তা এক ভিডিওতে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হেপাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মেডিসিন, লিভার ও পরিপাকতন্ত্র রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ফরহাদ হোসেন মো. শাহেদ। পরামর্শগুলো তার ভাষায় পাঠকদের জন্য উপস্থাপন করা হলো।
লিভার সিরোসিস কী
লিভার সিরোসিস লিভারের একটা রোগ, যেটা লিভারে যেকোনো ইনফেকশন (সংক্রমণ) বা যেকোনো একটা রোগ হলে এটা যদি ভালোভাবে চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে এটা আল্টিমেটলি লিভার সিরোসিসে টার্ন করে।
লিভার সিরোসিস হচ্ছে এমন একটা লিভারের কন্ডিশন যেখানে লিভার কাজ করে না। লিভারের স্বাভাবিক গঠন এবং কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।
বৈশিষ্ট্য
নরমালি লিভারের স্বাভাবিক কিছু টিস্যু থাকে। এ টিস্যুগুলো সিরোসিসে নষ্ট হয়ে শক্ত হয়ে যায়। এটাকে বলা হয় ফাইব্রোসিস এবং এ শক্ত টিস্যুগুলো কিছুদিন গেলে আস্তে আস্তে কতগুলো মডিউলের মতো ডেভলাপ করে। গোলাকৃতির মডিউল। ফাইব্রোসিস বা মডিউল, এগুলো হচ্ছে লিভার সিরোসিসের ক্যারাকটারিস্টিকস বা বৈশিষ্ট্য। এগুলো হলে আমরা বুঝে নিই যে, লিভার সিরোসিস হয়ে গেছে।
লিভার সিরোসিস হচ্ছে লিভারের একটা অ্যাডভান্সড ডিজিজ যেখান থেকে আর ফিরে আসা যায় না। এটা আল্টিমেটলি মানুষের মৃত্যুর একটা কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
লিভার সিরোসিস যাদের বেশি হয়
লিভার সিরোসিস পুরুষদের বেশি হয়; নারীদের কম হয়। সারা পৃথিবীতে প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ মানুষ লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়। মানুষ যে সমস্ত কারণে মারা যায়, তার মধ্যে ১১তম হচ্ছে লিভার সিরোসিস।
লিভার শরীরে কোন কোন কাজ করে
১. লিভার আমাদের শরীরে ১০০টির ওপরে কাজ করে। এর মধ্যে প্রধান কাজ হচ্ছে পিত্তরস তৈরি করে, যেটা শরীরে হজমে কাজ করে।
২. তারপরে লিভার বিলিরুবিন, কোলেস্টেরল, হরমোন তৈরি করে এবং আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকম ইম্পরট্যান্ট কাজ করে থাকে।
৩. প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট এগুলোর মেটাবোলিজম লিভারে সম্পন্ন হয়।
৪. লিভার প্লাজমা প্রোটিন তৈরি করে। এর মধ্যে কোয়াগুলেশন ফ্যাক্টরস অ্যান্ড অ্যালবুমিন। কোয়াগুলেশন ফ্যাক্টরগুলো শরীরে রক্তক্ষরণ বন্ধ করে। আর অ্যালবুমিন শরীরে পানি ধরে রাখে। ফলে লিভার সিরোসিসে অ্যালবুমিন কমে যায়। তখন শরীরে পানি চলে আসে।
৫. এ ছাড়া ভিটামিন, মিনারিল, গ্লাইকোজেন এগুলো লিভারে জমা হয়।
৬. আমাদের শরীরে লিভার এনার্জি অ্যাকটিভেশন বা এনার্জি সাপ্লাই (শক্তির জোগান) করে।
৭. মানবদেহে লিভার একটা ফিল্টার হিসেবে কাজ করে এবং ডিটক্সিফিকেশন করে। তার মানে আমরা যেকোনো ধরনের খাদ্য, পানীয়, ওষুধ গ্রহণ করি, এগুলো পাকস্থলী বা ইনটেস্টাইন থেকে লিভারে যায়। ওখানে ফিলট্রেশন (পরিশোধন) হয়। ফিল্টার হওয়ার পর যেগুলো বর্জ্যজাতীয় জিনিস, এগুলো ডিটক্সিফিকেশন হয়। এরপরে ব্লাডে যায়। কাজেই লিভার আমাদের ইম্পরট্যান্ট ফিল্টার হিসেবে কাজ করার কারণে আমাদের শরীরের অবিচ্ছেদ্য একটা অংশ।
লিভার সিরোসিসের কারণ
১. অনেকগুলো কারণে মানুষের শরীরে লিভার সিরোসিস হয়, তবে আমাদের দেশের জন্য যে কারণগুলো কমন, এগুলো হচ্ছে ক্রনিক হেপাটাইটিস-বি, ক্রনিক হেপাটাইটিস-সি। বি ভাইরাস এবং সি ভাইরাস যখন আমাদের শরীরে অনেক দিন ধরে থাকে, তখন এগুলো লিভার সিরোসিসে টার্ন করে। সাধারণত ভাইরাস গিয়ে অ্যাফেক্ট করার পর লিভার সিরোসিস হতে ১০ থেকে ১৫ বছর সময় লাগে। কাজেই কারও যদি বি ভাইরাস, সি ভাইরাস থাকে, এগুলো অবশ্যই আমাদের চিকিৎসা করা উচিত।
২. এর পরের কারণ হচ্ছে ফ্যাটি লিভার। ফ্যাটি লিভার আমাদের দেশে দুইভাবে হয়। অ্যালকোহলিক, নন-অ্যালকোহলিক।
অ্যালকোহলিক লিভার সিরোসিস: অ্যালকোহলিক মানে যারা অ্যালকোহল অনেক বেশি পরিমাণে খায় এবং অনেক দিন ধরে খায়। অ্যালকোহল থেকে লিভার সিরোসিসে টার্ন করে।
নন-অ্যালকোহলিক লিভার সিরোসিস: নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার হলো যাদের ওবেসিটি আছে, ওজন অনেক বেশি, হাইপারটেনশন আছে, ডায়াবেটিস আছে, থাইরয়েডের সমস্যা আছে, এ সমস্ত কারণে বা অন্যান্য অনেক হরমোনাল কারণে ফ্যাটি লিভার হয়। ফ্যাটি লিভার চিকিৎসা করা না হলে এটা আল্টিমেটলি লিভার সিরোসিসে টার্ন করে।
৩. অটোইমিউন কিছু ডিজিজ আছে। যেমন: অটোইমিউন হেপাটাইটিস, অটোইমিউন প্রাইমারি বিলারি সিরোসিস। এগুলোর চিকিৎসা করা না হলো লিভার সিরোসিসে টার্ন করে।
৪. জেনেটিক ডিজিজ। যেমন: উইলসন’স ডিজিজ
(লিভার, মস্তিষ্ক ও অন্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে তামা জমা হওয়া)। এগুলো পারিবারিকভাবে বংশ পরম্পরায় চলতে থাকে। এগুলোর চিকিৎসা করা না হলে লিভার সিরোসিস হতে পারে।
৫. এ ছাড়া কিছু ওষুধের কারণে লিভার সিরোসিস হয়। যেমন: একটা ওষুধ আছে যেটা স্কিন ডিজিজের জন্য খায়, অনেকে আথ্রাইটিসের জন্য খায়। এ ধরনের ওষুধগুলো লং টার্ম খেলে এগুলো থেকে লিভার সিরোসিস হতে পারে। এ ছাড়া আরও অন্য ওষুধ আছে। প্যারাসিটামল, এমিওডেরন। এ জন্য এ ধরনের ওষুধ যারা খান, তাদেরকে রেগুলার ফলোআপে থাকতে হবে। লিভার ঠিকঠাক আছে নাকি লিভার সিরোসিসে টার্ন হচ্ছে, রেগুলার চেকআপে থাকতে হবে।
৬. হার্টের রোগীদের যদি লিভারের মধ্যে ক্রনিক একটা কনজেশন থাকে, এটাও লিভার সিরোসিসে টার্ন করতে পারে। এভাবে আরও অনেক কারণ আছে লিভার সিরোসিসের।
আরও পড়ুন:সংকটাপন্ন রোগীদের জন্য খুলনার অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ব্যবহার করা হচ্ছে অপরিশোধিত ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন। মেডিক্যাল অক্সিজেনের থেকে দাম কম হওয়ায় অধিক লাভের আশায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জেনে বুঝেই রোগীদের এই অক্সিজেন দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কম বিশুদ্ধ ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেনে গ্রহণের ফলে রোগীদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যেতে পারে। এমনকি ঘটতে পারে মৃত্যুও।
খুলনা মহানগরীর কেডিএ অ্যাভিনিউ রোডের রাশিদা মেমোরিয়াল হাসপাতালে গত সোমবার গিয়ে দেখা যায়, এক ব্যক্তি সিলিন্ডারে করে অক্সিজেন নিয়ে এসেছেন। এটি কোনো কোম্পানির অক্সিজেন তার কোন তথ্য সিলিন্ডারের গায়ে লেখা ছিল না।
জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন নামের ওই ব্যক্তি বলেন, আমি নিজে অক্সিজেন বিক্রি করি না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমার সঙ্গে মৌখিক চুক্তি করে। তাদের ফাঁকা সিলিন্ডারগুলো আমি রিফিল করে নিয়ে আসি।
তিনি জানান, খুলনা নগরীর কয়লা ঘাট এলাকায় অবস্থিত ‘রকি অক্সিজেন’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে এই অক্সিজেন রিফিল করা হয়। শহরের এমন দশটি হাসপাতালে এই অক্সিজেন তারা সরবরাহ করেন।
রাশিদা মেমোরিয়াল হাসপাতালের পাশেই রয়েছে কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল। সেখানে গিয়েও দেখা যায়, সিলিন্ডারের গায়ে কোনো কোম্পানি ট্যাগ নেই।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, কোথা থেকে হাসপাতালে বা ক্লিনিকগুলোতে অক্সিজেন আসে তা মালিকপক্ষ জানে না। কিছু ব্যক্তি আছেন যারা হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ করেন, তাদের সঙ্গে মৌখিক চুক্তি করলে নিয়মিত সিলিন্ডারগুলো রিফিল করে দিয়ে যান। তারা মেডিক্যাল অক্সিজেন দিলেন নাকি ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন দিলেন তা কেউ খোঁজ নেন না। শহরের অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালে এভাবেই চলছে।
খুলনায় প্রতি ঘনমিটার (১ ঘনমিটার সমান ১ হাজার লিটার) মেডিক্যাল অক্সিজেনের মূল্য হলো ৫২-৫৫ টাকা। আর ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেনের মূল্য হলো তার অর্ধেক, প্রতি ঘনমিটার ২০-২৫ টাকা। মেডিক্যালের চেয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেনের দাম কম হওয়ায় হাসপাতালগুলোতে রোগীদের জন্য এই অক্সিজেন বিক্রি করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনাতে ছয়টি প্রতিষ্ঠান থেকে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে তিন প্রতিষ্ঠানের বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। যেগুলো হলো- খুলনা অক্সিজেন কোম্পানি, লিন্ডে বাংলাদেশ ও স্পেকট্রা অক্সিজেন লিমিটেড। খুলনা অক্সিজেন কোম্পানি নামের প্রতিষ্ঠানটি খুলনাতেই মেডিক্যাল অক্সিজেন উৎপাদন করে। অন্যদিকে লিন্ডে ও স্পেকট্রার খুলনাতে ডিপো রয়েছে।
এছাড়া বাকি তিনটি কোম্পানির কোন বৈধ কাগজপত্র নেই। যেগুলো হলো- মহানগরীর জয় বাংলার মোড়ে অবস্থিত এসবি অক্সিজেন, কয়লা ঘাট এলাকায় অবস্থিত রকি অক্সিজেন ও বাগেরহাট জেলার ফকিরহাটে গ্যাস এবং গিয়ার বাংলাদেশ।
খুলনার বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে সব থেকে বেশি অক্সিজেন সরবরাহ করে রকি অক্সিজেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাদের শুধুমাত্র ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন রয়েছে। তবে ওষুধ প্রশাসন ও বিস্ফোরক অধিদপ্তরসহ অন্যান্য দপ্তরের কোনো অনুমোদন নেই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই প্রতিষ্ঠানটি করা হয়েছে একেবারেই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মধ্যে। তিন শ গজ দুরেই রকি ডক ইয়ার্ড। সেখানে প্রতিনিয়ত কাজ চলে জাহাজ নির্মাণের। অক্সিজেন কোম্পানির ঠিক বিপরীত পাশে এক শ’ গজ দূরেই একটি খাবার হোটেল। সেখানে তিন বেলা রান্নার কাজ চলে। দশ হাত দূরে রয়েছে একটি স’মিল। সেখানে স্বয়ংক্রিয় মেশিনে দিনরাত কাঠ চেরাই চলছে। এর কোনো একটি উৎস থেকে আগুনের অংশ যদি অক্সিজেন কোম্পানিতে লাগে তবে ঘটে যেতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা।
এ তুলনায় এসবি অক্সিজেন প্ল্যান্ট অনেকটাই নিরাপদ। এটির আশপাশে কোনো ঘনবসতি নেই । তবে কোনো অনুমতি ছাড়াই সিলিন্ডার রিফিল করছে প্রতিষ্ঠানটি
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রকি অক্সিজেনের মালিক মো. খুরশিদ আলম বলেন, ‘আমার সব প্রতিষ্ঠানের অনুমতি রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস, ওষুধ প্রশাসন, বিস্ফোরক অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সংস্থার লাইসেন্স রয়েছে। যেখানে কোম্পানি করেছি সেখানে কোন ধরনের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ’
বিস্ফোরক পরিদপ্তর খুলনার পরিদর্শক ড. মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘মেডিকেল ও ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল অক্সিজেনের কিছু কিছু উপাদানের মাত্রা একেবারেই ভিন্ন। ফলে দুটির উৎপাদন ও পরিশোধন পদ্ধতি ভিন্ন। মেডিক্যাল অক্সিজেন পরিশোধনে বিশুদ্ধতার মাত্রা থাকে ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশের ওপরে। এতে দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড ও পানির মিশ্রণ থাকে। আর ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন পরিশোধনে বিশুদ্ধতার মাত্রা থাকে ৯০ শতাংশের নিচে । এই অক্সিজেনের সাথে বায়ুমন্ডলের অন্যান্য গ্যাসের মিশ্রণের মাত্রা থাকে বেশি। যা দিয়ে ভারি লোহা ও ধাতব পদার্থ গলিয়ে ফেলা ও কাটা হয়। এটা মানুষের শরীরে জন্য ক্ষতিকর। এসবি বা রকি অক্সিজেনের কোনো লাইসেন্স বা অনুমোদন নেই।’
খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. তাহেরুল ইসলাম বলেন, ‘মেডিক্যাল অক্সিজেনের মধ্যে কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড ও পানির মিশ্রণের মাত্রা একেবারে কম বিধায় তা শরীরের জন্য সহনীয়। অন্যদিকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেনে বিশুদ্ধতার মাত্রা অনেক কম থাকে। অক্সিজেনের সঙ্গে মিশ্রিত বিভিন্ন ধরনের গ্যাস শরীরের রক্ত, ফুসফুস ও ব্রেইনসহ বিভিন্ন কোষকে ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন স্বাস্থ্যের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ।’
লিভারে অতিরিক্ত ফ্যাট বা চর্বি জমে যে রোগ হয়, সেটি পরিচিত ফ্যাটি লিভার হিসেবে। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের কারণে অনেকে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
এক ভিডিওতে এ রোগের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার জানিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হেপাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হোসেন মো. শাহেদ। পরামর্শগুলো তার ভাষায় তুলে ধরা হলো পাঠকদের সামনে।
কারণ
বর্তমানে ফ্যাটি লিভারটা খুব বেড়ে গেছে আমাদের সমাজে। এটার কারণ হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন। যেমন: আমাদের খাওয়া-দাওয়ার অনিয়ম, আমাদের চলাফেরায় অনিয়ম, আমাদের জীবনযাপনে অনিয়ম, ঘুমের অনিয়ম। এই ধরনের অনিয়মের কারণে আমরা ফ্যাটি লিভারে বেশি আক্রান্ত হচ্ছি।
লক্ষণ বা উপসর্গ
ফ্যাটি লিভার হলে প্রাথমিকভাবে উপসর্গ দেখা দেবে। শরীরে একটা অশান্তি বা অস্থিরতা কাজ করবে। শরীরের ওজন বেড়ে যাবে। পেটটা বড় হয়ে যাবে। পেটে একটা অশান্তি লাগবে। খাওয়ার অরুচি ধরবে।
এ ধরনের রোগীদের দেখা যায় যে, আস্তে আস্তে ডায়াবেটিস ডেভলাপ করে, হাইপারটেনশন ডেভলাপ করে। হাই কোলেস্টেরল ডেভলাপ করে।
পরীক্ষা
এ জন্য যখন দেখা যাবে যে, খাওয়ার অরুচি হচ্ছে বা শরীরের ওজন বেড়ে যাচ্ছে বা একটা অস্থির অস্থির ভাব লাগতেছে, তখন নিকটস্থ ডাক্তারের সাথে বা লিভার রোগের ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। তখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। করলে দেখা যাবে যে, রক্তের মধ্যে কোলেস্টেরল বেশি বা ব্লাড সুগারটা হয়তো বেশি থাকতে পারে, প্রেশারটা বেশি থাকতে পারে। তো এই ধরনের রোগীগুলো যখন কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যান বা আমাদের লিভার রোগের ডাক্তারের কাছে আসেন, আমরা তখন কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি।
১. আমরা ব্লাড সুগার প্রথমেই করি। ডায়াবেটিস আছে কি না, কোলেস্টেরল বা রক্তে চর্বির পরিমাণটা মাপি। হয়তো দেখা যাবে যে, কোলেস্টেরলটা অনেক বেশি থাকে।
২. তারপরে লিভার ফাংশনটা আমরা পরীক্ষা করি। তখন দেখা যায় যে, এলজিবিটি বলে একটা লিভার ফাংশন টেস্ট, এলজিবিটি অনেক বেশি থাকে।
৩. তারপর আমরা আল্ট্রাসনোগ্রাম করি পেটের। তখন দেখা যাবে, ফ্যাটি লিভার ধরা পড়ে। আল্ট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে ফ্যাটি লিভারটা প্রথমে ডায়াগনসিস হয়।
৪. এরপরে আমরা আরও সূক্ষ্মভাবে ফ্যাটি লিভারটা ধরার জন্য ফাইব্রোস্ক্যান অব দ্য লিভার নামের একটা নতুন টেস্ট আছে, এই পরীক্ষাটা করা হয়। এটা করলে আপনার লিভারে চর্বির পরিমাণ কতটুকু আছে, এর মাত্রাটা ধরা পড়ে। এই চর্বিটা লিভারের কোনো ক্ষতি করতেছে কি না বা ফাইব্রোসিস করতেছে কি না, এটারও একটা মাত্রা ধরা পড়ে। তখন আমরা ফাইব্রোস্ক্যানের যে রিপোর্ট, ফ্যাট কনটেন্ট এবং ফাইব্রোসিসের মাত্রা দেখে ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসাটা শুরু করি।
প্রতিকার
১.চিকিৎসার মধ্যে আমরা প্রাথমিকভাবে লাইফস্টাইল মডিফিকেশনটা (জীবনযাপনে পরিবর্তন) ফার্স্ট করি। মানে রোগী কী খাবে, কীভাবে ঘুমাবে, কীভাবে চলাফেরা করবে। এর মধ্যে আমরা প্রাথমিকভাবে যেটা করি, চর্বিযুক্ত খাবারটা পরিহার করতে বলি। ভাত এক বেলা খেতে বলি; রুটি দুই বেলা খেতে বলি। আর দৈনিক আধা ঘণ্টা থেকে ৪০ মিনিট; কারও কারও ক্ষেত্রে এক ঘণ্টা ব্যায়াম করতে বলি।
২. আমরা বডি হাইট (উচ্চতা) ও ওয়েট (ওজন) মেপে কতটুকু আইডিয়াল ওয়েট (আদর্শ ওজন) থাকা উচিত, প্রত্যেকটা প্যাশেন্টকে আমরা বলে দিই। যখন প্রতিটা প্যাশেন্ট উনাদের আইডিয়াল ওয়েট জানতে পারে, ওই অনুসারে উনাদের ওয়েটটা কমাতে হয়।
৩. ফ্যাটি লিভারের সাথে অ্যাসোসিয়েটেড যে কয়েকটা রোগ থাকে, কারও যদি হাইপারটেনশন থাকে, প্রেশার কন্ট্রোল করতে বলি। কারও ডায়াবেটিস থাকলে ডায়াবেটিস কন্ট্রোল করতে বলি। অনেকের দেখা যায় হার্টের রোগ থাকে, অন্যান্য রোগ থাকে। ওই রোগগুলো কন্ট্রোল করতে বলি।
৪. ফ্যাটি লিভারের এখন কিছু স্পেসিফিক চিকিৎসা বের হয়েছে। ওবেটিকোলিক অ্যাসিড বা সোডিঅক্সিকোলিক অ্যাসিড। এ ধরনের ওষুধগুলো আমরা প্রেসক্রাইব করে থাকি।
৫. ফ্যাটি লিভার হলে যে চিকিৎসা করতে হবে এমন কোনো কথা নাই। ডাক্তারের কাছে পরামর্শ করতে হবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরে কী ধরনের চিকিৎসা লাগবে, ডাক্তারই পরামর্শ দিয়ে থাকে, তবে মন খারাপ করার কিছু নাই। অনেক সময় ফ্যাটি লিভার ভালো হতে অনেক দিন সময় লাগে; ধৈর্য ধরে চিকিৎসা করতে হয়।
৬. আপনারা যারা ফ্যাটি লিভার বা এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বা এখনও জানেন না ফ্যাটি লিভার আছে, কিন্তু প্রেশার আছে, ডায়াবেটিস আছে, আপনারা অবশ্যই ফ্যাটি লিভার আছে কি না, চেক করে নেবেন। সেই ক্ষেত্রে ফ্যাটি লিভার ধরা পড়লে এটার চিকিৎসা শুরু করা যাবে।
পরীক্ষামূলকভাবে দেশের ১২ জেলা ও ৩৯ টি উপজেলার মোট ৫১ টি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বারের মাধ্যমে রোগী দেখার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বেলা ৩ টায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারি চিকিৎসকরা এযাবৎ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের বিকেলে চিকিৎসা সেবা নিতে প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিকে যেতে হতো। প্রধানমন্ত্রীর সেই নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগী হয়েছি। তাই আজ আপাতত পাইলটিং আকারে দেশের ১২ জেলা ও ৩৯ টি উপজেলার মোট ৫১ টি সরকারি হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের শুরু করা হলো। এই কার্যক্রম মানুষের ভালো লাগলে আমরা এ বছরেই দেশের সকল সরকারি হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম শুরু করা হবে।’
সরকারি হাসপাতালগুলো কিসের ভিত্তিতে কাজ করবে- এই প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে আমরা একটি নীতিমালা প্রনয়ণ করেছি। সেই নীতিমালা অনুযায়ী সব কাজ পরিচালিত হবে। নীতিমালায় একজন চিকিৎসক বা অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী কতদিন দায়িত্ব পালন করবেন, কীভাবে করবেন তা বিস্তারিত লেখা আছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব আজিজুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক টিটু মিয়াসহ জুম অনলাইনে ৫১ টি জেলা ও উপজেলা সরকারি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক।
রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে গেলে রক্তশূন্যতা ধরা হয়। চিকিৎসা শাস্ত্রে একে বলা হয় অ্যানিমিয়া। হিমোগ্লোবিনের প্রধান কাজ শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন সরবরাহ করা। হিমোগ্লোবিন রক্তের লোহিত কণিকায় থাকে।
পুরুষদের ক্ষেত্রে রক্তে স্বাভাবিক হিমোগ্লোবিনের মাত্রা প্রতি ডেসিলিটারে ১৪ থেকে ১৭ গ্রাম। নারীদের ক্ষেত্রে ১২ থেকে ১৫ গ্রাম। এ মাত্রা কমে নারী ও পুরুষ উভয়ের রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে।
রক্তশূন্যতা কেন হয়, বিশেষত নারীরা কেন এ ধরনের সমস্যায় ভোগেন, সে বিষয়ে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও হেমাটোলজিস্ট মনিরুল ইসলাম।
রক্তশূন্যতা কেন হয়
বিভিন্ন কারণেই রক্তশূন্যতা হতে পারে। রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরির অন্যতম প্রধান উপাদান হলো আয়রন। শরীরে আয়রনের ঘাটতি হলে রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া হতে পারে। একে বলে ‘আয়রন ডেফিসিয়েন্সি এনিমিয়া’। এ ছাড়া ভিটামিন-বি ও ফলিক অ্যাসিডের অভাব, দীর্ঘমেয়াদি বিশেষ কিছু রোগ, যেমন: কিডনি বিকল হয়ে যাওয়া, যক্ষা, ব্লাড ক্যানসার, থ্যালাসেমিয়া, রক্তক্ষরণ ইত্যাদি কারণে রক্তশূন্যতা হতে পারে।
আয়রনের ঘাটতিজনিত রক্তশূন্যতার হারই সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে। নারীদের মধ্যে এর হার বেশি।
বাংলাদেশে নারীদের গর্ভাবস্থায় আয়রনের ঘাটতিজনিত রক্তশূন্যতার হার সবচেয়ে বেশি। এই রক্তশূন্যতার কারণে গর্ভবতী মায়ের মৃত্যু হতে পারে।
আয়রনের ঘাটতির কারণ
সাধারণত অপুষ্টির কারণে আয়রনের ঘাটতি হয়। খাদ্যে পর্যাপ্ত আয়রন না থাকলে এ অভাব দেখা দেয়। গর্ভাবস্থায় নারীদের বাড়তি আয়রনের প্রয়োজন, কিন্তু দেখা যায় আমাদের দেশে গর্ভবতী মায়েরা অনেক ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের সুযোগ পান না।
আরও একটি কারণে নারীরা আয়রনের ঘাটতিতে ভোগেন। সেটি হলো ঋতুস্রাবে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ। আবার দীর্ঘমেয়াদি রক্তক্ষরণ হলেও আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয়। পেপটিক আলসার, পাইলসের মতো জটিলতার কারণেও আয়রনের ঘাটতি হয়ে রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে।
লক্ষণ
সিবিসি (কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট) পরীক্ষা করলেই রক্তশূন্যতা আছে কি না বোঝা যায়।
প্রতিকার
অ্যানিমিয়া প্রতিকারের মুলমন্ত্র খাবারে নিহিত। আপনি যদি রক্তশূন্যতায় ভোগেন, তাহলে সবার আগে নজর দেবেন প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায়। আর চেষ্টা করতে হবে অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পর প্রতিকার না খুঁজে আগেই প্রতিরোধ করার। কারণ একবার কোনো রোগ হয়ে গেলে তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া কষ্টকর। আর গর্ভবতী মায়েদের সঠিক নিয়মে খাওয়া-দাওয়া আরও বেশি জরুরি। তা না হলে তিনি ও তার অনাগত সন্তান উভয়ের ওপরই প্রভাব পড়বে।
রক্তশূন্যতায় কী কারণে আয়রনের ঘাটতি হলো তা আগে জানতে হবে।
সাপ্লিমেন্ট হিসেবে আয়রন ট্যাবলেট খেতে হবে। এ ছাড়া আয়রনসমৃদ্ধ খাবার, যেমন: কচুশাক, ডাঁটাশাক, পালং শাক, শিম ও শিমের বিচি, কাঁচা কলা, সামুদ্রিক মাছ, কলিজা, গরু-খাসির মাংসে প্রচুর আয়রন থাকে।
বাংলাদেশের নারীদের বিশেষ করে গর্ভকালীন একটা বড় সমস্যা রক্তশূন্যতা। একটু সচেতন হলেই এর সমাধান সম্ভব।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য