মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ঘটনার জন্য বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে পরস্পরের প্রতি ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক এক মন্ত্রী।
সেনা শাসক পারভেজ মোশাররফের আমলে তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া জাভেদ জব্বারের দাবি, ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে অবাঙালিদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে বাঙালিরা।
তিনি মুক্তিযুদ্ধকে তুলনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধের সঙ্গে। তার দাবি, সে সময় বাঙালিরা অবাঙালিদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে, ভারত সুযোগ নিয়ে ‘দুই ভাইয়ের মধ্যে’ বিভেদ তৈরি করেছে। আর ভৌগলিক দূরত্বের কারণে পাকিস্তান তার মাটি রক্ষা করতে পারেনি।
যুদ্ধ চলাকালে তার দেশ যে হত্যা, ধ্বংস, নারী নির্যাতন করেছে, তার বর্ণনা উপেক্ষা করে, এক শব্দে বর্ণনা করেছেন সাবেক পাকিস্তানি মন্ত্রী।
শিল্প, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে দারুণ মিল আছে দাবি করে অদূর ভবিষ্যতে ‘সোনার বাংলা’ ও ‘সোনার পাকিস্তানের’ এক হওয়ার খায়েশও জন্মেছে পাকিস্তানের এই রাজনীতিক ও কলাম লেখকের মধ্যে।
বাংলাদেশের বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানে পালিত হয় ঢাকা পতন দিবস। তবে গত কয়েক বছর ধরে এই দিনটিকে স্মরণ করাও ছেড়ে দিয়েছে পাকিস্তান। যদিও সে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতে নানা ধরনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ছাপা হয়, যাতে ৭১ এর দায় দেয়া হয় বাঙালিদের, দায় দেয়া হয় মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করা ভারতকে।
‘ঢাকা পতনের’ ৪৯ তম বার্ষিকীতে বুধবার পাকিস্তানের প্রভাবশালী দৈনিক ‘দ্য ডন’ ছেপেছে সাবেক মন্ত্রীর কলাম। এর শিরোনাম করা হয়েছে, ‘ফ্রম ১৯৭১ টু, ২০২১’।
এতে বলা হয়, আগামী বছর বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক ও নাগরিক সমাজ পর্যায়ে সম্পর্ক বাড়াতে পারে। আর পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তান ক্ষমা চেয়ে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে পারে।
পাকিস্তানি মন্ত্রীর এ ক্ষেত্রে পরামর্শ, প্রথমে ক্ষমা চাইবে পাকিস্তান। এতে গলবে বরফ।
তিনি লেখেন, বাংলাদেশ যদি ‘অবাঙালিদের হত্যার জন্য’ আনুষ্ঠানিক ক্ষমা নাও চায়, তাহলেও সম্পর্ক উন্নয়নে এ দায় পাকিস্তানের ওপর থেকে যাবে।
একাত্তরের নৃশংসতার জন্য পাকিস্তান আনুষ্ঠানিক ক্ষমা না চাইলেও দেশটির সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো ও পারভেজ মোশাররফ দুঃখ প্রকাশ করেছেন বলে উল্লেখ করেন। তবে তার দেশে বুদ্ধিজীবী, গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ ও রাজনীতিকদের একাংশ আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার পক্ষে সোচ্চার বলেও উল্লেখ করেন জাবেদ জব্বার।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা যে নজিরবিহীন হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংস, নারী নির্যাতন করেছিল, তাকে ‘বেশি বাড়াবাড়ি’ হিসেবে উল্লেখ করেন দেশটির সাবেক এই মন্ত্রী।
তার দেশের সেনাবাহিনীর হত্যা-নির্যাতনের কথা উল্লেখ না করলেও জাভেদ জব্বার দাবি করেছেন, তাদের পক্ষে থাকা লোকদের নাকি গণহত্যা করা হয়েছে। একাত্তরের ১ মার্চ থেকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীরা’ (স্বাধীনতাকামী বাঙালি) এই অংশে অবাঙালিদের উপর ‘নির্মমভাবে’ চড়াও হয়েছিল বলে দাবি করেন তিনি।
‘তিক্ত অতীত’ ভুলে গিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ ভবিষ্যত গড়ার তাগিদ দেয়া সাবেক পাকিস্তানি মন্ত্রী বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের সমালোচনাও করেন।
তার দৃষ্টিতে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের নামে অবিচার করে কয়েকজনকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের দুটি প্রজন্মের মধ্যে পাকিস্তান প্রশ্নে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে।
জাভেদ জব্বারের অভিযোগ, গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞের ব্যাপক প্রচার চালিয়ে পাকিস্তান বিদ্বেষী মনোভাব তৈরি করে রেখেছে।
জাভেদের দাবি, মুক্তিযুদ্ধে আত্মসমর্পণ করলেও তাদের সৈন্যরা যে বীরত্ব দেখিয়েছে সেটা ভুলা যাবে না। তার দাবি, তাদের ছিল মাত্র ৩৪ হাজার নিয়মিত এবং ৪৫ হাজার অনিয়মিত সেনা। অন্যদিকে বিপক্ষে ছিল আড়াই লাখ ভারতীয় সেনা এবং দেড় লাখ মুক্তিযোদ্ধা।
‘দায় ভারতের’
মুক্তিযুদ্ধকে যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করে পাকিস্তানের সাবেক মন্ত্রী জব্বার বলেন, ১৮৬১ থেকে ১৮৬৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে চলা গৃহযুদ্ধের মতোই ছিল একাত্তর। যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধের পর, সবগুলো রাজ্য এক থাকলেও, পূর্ব আর পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে দূরত্ব ছিল, হাজার মাইলের বেশি। দূরত্ব বেশি হওয়ায়, পূর্ব অংশের বাসিন্দারা সুযোগ সুবিধাও কম পেতেন পশ্চিমের তুলনায়। আর এই অবস্থার সুযোগ নিয়েছে পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এবং তাদের সহযোগিতা করেছে ‘ভারতীয় চররা’।
পাকিস্তানের সাবেক মন্ত্রীর দাবি, ২০২১ সাল তার দেশের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতাদের জন্য এক সুযোগ নিয়ে আসতে পারে। তার দাবি, ১৯৭১ সালে বাঙালি নিধন তাদের উদ্দেশ্য ছিল না, লক্ষ্য ছিল কেবল দেশের ঐক্য অঁটুট রাখা।
সোনার বাংলা ও ‘সোনার পাকিস্তান’ এক হওয়ার স্বপ্ন
কলামে পাকিস্তানি রাজনীতিক জব্বার লেখেন, বাস্তবতা মেনে অতীত ভুলে দুই দেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলে, লাভবান হতে পারে।
তিনি লেখেন, “দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় দুই মুসলিম দেশ ২০২১ সাল থেকে নতুন ভবিষ্যত গড়ার জন্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে পারে। সামরিক, সাংস্কৃতিক, শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা, গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ ও ক্রীড়াসহ বিভিন্ন খাতে বিনিময়ের মাধ্যমে পাকিস্তানের সোনালী মাটির সঙ্গে সোনার বাংলা মাটি ও আত্মার এক নতুন বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে চমৎকার ভবিষ্যত গড়ে তুলতে পারে।’
বাংলাদেশের বিছিন্ন হয়ে যাওয়ায়টা প্রতিটা পাকিস্তানির এখনও দুঃস্বপ্ন হয়ে তাড়া দেয় উল্লেখ করে জব্বার বলেন, ‘পাকিস্তান সরকারের অভ্যন্তরীণ কিছু মতবিরোধে দুই দেশের কূটনীতিক সম্পর্ক এগুচ্ছে না।’
আরও পড়ুন:আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী বা স্বনির্ভর হলে তার ভরণপোষণ না দেয়ার পক্ষে রায় দিয়েছে ভারতের দিল্লি হাইকোর্ট। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত জানায়, স্থায়ী ভরণপোষণ সামাজিক ন্যায়বিচারের একটি ব্যবস্থা, এটি স্বাবলম্বী ব্যক্তিদের মধ্যে সমৃদ্ধি বা আর্থিক সমতা বিধানের হাতিয়ার নয়। খবর এনডিটিভির।
বিচারপতি অনিল ক্ষেত্রপাল এবং হরিশ বৈদ্যনাথন শঙ্করের ডিভিশন বেঞ্চ শনিবার এ রায় দেন। রায়ে বলা হয়, আইন অনুসারে ভরণপোষণ চাওয়া ব্যক্তিকে প্রমাণ করতে হবে যে, তার আর্থিক সহায়তা প্রকৃতপক্ষেই প্রয়োজন।
হিন্দু বিবাহ আইনের ধারা ২৫ এর অধীনে বিচারিক ক্ষমতা ব্যবহার করে আর্থিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং স্বাধীন আবেদনকারীকে ভরণপোষণ দেয়া যাবে না। উভয় পক্ষের আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনা করে এবং আবেনকারীর প্রকৃত আর্থিক দুর্বলতার প্রমাণ না থাকলে তা দেয়া যাবে না।
একটি ভরণপোষণের দাবি খারিজ এবং বিবাহবিচ্ছেদের অনুমতি দিয়ে ফ্যামিলি কোর্টের আদেশ পুনর্বহাল রেখে এই পর্যবেক্ষণ জানান দিল্লির হাইকোর্ট।
স্বামী আইনজীবী এবং স্ত্রী ভারতীয় রেলওয়ে ট্রাফিক সার্ভিস কর্মকর্তা। গত ২০১০ সালের জানুয়ারিতে বিয়ে করেন তারা। এর আগে তাদের দুজনেরই বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছিল। এই বিয়ের মাত্র ১৪ মাসের মধ্যেই আলাদা হয়ে যান তারা।
স্বামী অভিযোগ করেন, স্ত্রী তাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন। অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার করেছেন, অপমানজনক মেসেজ পাঠান, দাম্পত্য অধিকার অস্বীকার এবং পেশাগত ও সামাজিকভাবে অপদস্থ করেছেন।
অন্যদিকে স্ত্রী এসব অভিযোগ অস্বীকার করে স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের পাল্টা অভিযোগ আনেন।
পারিবারিক আদালত তাদের রায়ে বিবাহবিচ্ছেদ মঞ্জুর করে এবং উল্লেখ করে যে স্ত্রী বিবাহবিচ্ছেদে রাজি হওয়ার শর্ত হিসেবে ৫০ লাখ রুপি আর্থিক সমঝোতা দাবি করেছিলেন। এই দাবি তিনি নিজেই হলফনামা ও জেরা চলাকালীন স্বীকার করেছেন।
দিল্লি হাইকোর্টও এই পর্যবেক্ষণের সঙ্গে একমত হন এবং বলেন এতে হস্তক্ষেপের কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।
বেঞ্চ বলেন, ‘ফ্যামিলি কোর্টের এই সিদ্ধান্তকে ভিত্তিহীন বা অযৌক্তিক বলা যায় না। আপিলকারীর (স্ত্রীর) এই মনোভাবের একটি সুস্পষ্ট আর্থিক দিক ছিল। বরং আদালতে উপস্থাপিত প্রমাণের ভিত্তিতে এটি ছিল একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত।’
হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, স্ত্রী তার স্বামী এবং তার মায়ের বিরুদ্ধে ‘অবমাননাকর ভাষা’ ব্যবহার করেছিলেন। এমনকি স্বামীকে ‘অবৈধ সন্তান’ বলে আখ্যা দেন, যা আদালতের মতে মানসিক নির্যাতনের শামিল।
ভারতে ভরণপোষণের জন্য বিপুল অর্থ দাবি করার ক্রমবর্ধমান প্রবণতার মধ্যে এই রায় এলো।
ভারত যদি রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা বন্ধ না করে, তবে দেশটির পণ্যের ওপর “ব্যাপক শুল্ক” আরোপ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লির মধ্যকার টানাপোড়েন আরও বেড়েছে।
যদিও ভারতের পক্ষ থেকে ট্রাম্পের এ বক্তব্য নিয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। সোমবার (২০ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে ব্যক্তিগতভাবে আশ্বস্ত করেছেন যে ভারত রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করবে। তিনি বলেন, “তিনি আমাকে বলেছেন, ‘আমি রাশিয়ান তেল নিয়ে আর কিছু করছি না’। কিন্তু যদি তারা (ভারত) এটা চালিয়ে যায়, তাহলে তাদের বিশাল শুল্ক দিতে হবে।”
রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখছে এমন দেশগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ক্রমেই বাড়ছে। ওয়াশিংটনের দাবি, এ ধরনের বাণিজ্য রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধ চালাতে পরোক্ষভাবে অর্থায়ন করছে।
অবশ্য ইতোমধ্যেই ভারতীয় পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক অনেক বেড়েছে। এ বছরের আগস্টে ট্রাম্প শুল্কহার বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করেছেন। আর এই শুল্ক টেক্সটাইল থেকে শুরু করে ওষুধ পর্যন্ত বিস্তৃত পণ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
তিনি বারবার জানিয়েছেন, রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ না করলে এসব শুল্ক বজায় থাকবে বা আরও বাড়ানো হবে। এছাড়া চলতি মাসের শুরুতেও ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি তাকে বলেছেন যে ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করবে।
তবে ভারতের পক্ষ থেকে ট্রাম্পের এ বক্তব্য নিয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল ক্রেতা হয়ে উঠেছে ভারত।
ফ্রান্সের সংস্কৃতি মন্ত্রী রাশিদা দাতি জানিয়েছেন, বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত শিল্পকলা জাদুঘর ল্যুভর মিউজিয়ামে রোববার সকালে একটি ডাকাতির ঘটনার পর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রী এক্স (পূর্বে টুইটার)-এ লিখেছেন, জাদুঘরটি খোলার ঠিক পরেই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। আমি বর্তমানে ঘটনাস্থলে আছি, পুলিশ তদন্ত করছে।
ল্যুভর কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিশেষ কারণবশত আজকের জন্য জাদুঘরটি বন্ধ থাকবে। তবে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
ফরাসি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, লুট হওয়া বস্তুগুলোর মধ্যে মূল্যবান গয়নাও থাকতে পারে।
প্যারিসের ল্যুভর জাদুঘর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরিদর্শিত জাদুঘরগুলোর একটি। এখানে সংরক্ষিত রয়েছে বহু ঐতিহাসিক ও বিখ্যাত শিল্পকর্ম, যার মধ্যে লিওনার্দো দা ভিঞ্চির মোনালিসা অন্যতম।
পুলিশ সূত্রে এএফপি জানিয়েছে, একদল অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতকারী স্কুটারে করে এসে জাদুঘরে প্রবেশ করে।
ঘটনাস্থলে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে এবং সংস্কৃতি মন্ত্রী রাশিদা দাতি নিজেও জাদুঘরে উপস্থিত আছেন।
ল্যুভর মিউজিয়াম থেকে সোনার ৯ আইটেম নিয়ে গেছে ডাকাতরা
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত ল্যুভর মিউজিয়ামে রোববার সকালে এক অবিশ্বাস্য ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
ফরাসি গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, তিনজন মুখোশধারী মিউজিয়াম খোলার কিছু পরেই ভেতরে প্রবেশ করে। তারা সেন নদীমুখী দিকের অ্যাপোলো গ্যালারিতে পৌঁছাতে একটি মালবাহী লিফট ব্যবহার করে, যেখানে ফ্রান্সের রাজকীয় গয়নার সংগ্রহ রাখা আছে।
ডাকাতরা কাচ ভেঙে গ্যালারিতে ঢোকে এবং নয়টি মূল্যবান সোনার আইটেম নিয়ে পালিয়ে যায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তারা একটি মোটর-স্কুটারে করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়েছে।
এখনো লুট হওয়া গয়নার মূল্য নির্ধারণের কাজ চলছে, তবে ধারণা করা হচ্ছে এগুলোর ঐতিহাসিক ও আর্থিক মূল্য দুটোই বিপুল।
জাদুঘর কর্তৃপক্ষ এক্স-এ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিশেষ কারণে ল্যুভর জাদুঘর বন্ধ রাখা হয়েছে।
ফরাসি সংস্কৃতি মন্ত্রী রাশিদা দাতি জানিয়েছেন, ঘটনাটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
প্রসঙ্গত, ল্যুভর মিউজিয়াম বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দর্শকপ্রিয় জাদুঘর, যেখানে লিওনার্দো দা ভিঞ্চির মোনালিসাসহ অমূল্য শিল্পকর্ম ও ঐতিহাসিক নিদর্শন সংরক্ষিত রয়েছে।
পাকিস্তান দেশটির নারীদের জন্য বিশেষভাবে গঠিত রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংক সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। গত শুক্রবার ফার্স্ট উইমেন ব্যাংক লিমিটেড (এফডব্লিউবিএল) আরব আমিরাতের ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিং কোম্পানির (আইএইচসি) কাছে বিক্রি করে দেয়। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ আবুধাবিভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিং কোম্পানির (আইএইচসি) কাছে পাকিস্তানি ব্যাংকটির মালিকানা হস্তান্তরকে পাকিস্তান–সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থনৈতিক সম্পর্কের এক মাইলফলক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, এই চুক্তি দুই দেশের মধ্যে আরও যৌথ উদ্যোগ ও অংশীদারত্বের পথ খুলে দেবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই লেনদেনকে তিনি ‘বৃষ্টির প্রথম ফোঁটা’ হিসেবে দেখছেন—যা পাকিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে আরও গভীর অর্থনৈতিক সহযোগিতার সূচনা করবে।
এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সরকার–থেকে–সরকার (জি–টু–জি) কাঠামোর আওতায় এফডব্লিউবিএলের বেশির ভাগ শেয়ার আনুষ্ঠানিকভাবে আইএইচসির হাতে হস্তান্তর করা হয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিনিধি দলটির নেতৃত্ব দেন টু–পয়েন্ট জিরো–এর চেয়ারম্যান শেখ জায়েদ বিন হামদান বিন জায়েদ আল নাহিয়ান।
এর আগে, পাকিস্তানের ফেডারেল ক্যাবিনেট ব্যাংকটির সরকারি মালিকানাধীন পুরো শেয়ার বিক্রির অনুমোদন দেয়। এর বাজারমূল্য প্রায় ১ কোটি ৪৬ লাখ ডলার (প্রায় ৪ দশমিক ১ বিলিয়ন রুপি) বলে ধারণা করা হচ্ছে, যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো মূল্য প্রকাশ করা হয়নি।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ব্যাংক অধিগ্রহণের পাশাপাশি আইএইচসি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে মোট ন্যূনতম ১০ বিলিয়ন রুপি মূলধন সরবরাহ করবে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এফডব্লিউবিএলের ইক্যুইটির পরিমাণ ছিল ৩ দশমিক ২ বিলিয়ন রুপি। নতুন বিনিয়োগকারী বাকি ৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন রুপি যোগ করে ঘাটতি পূরণ করবে।
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ বলেন, এই চুক্তি সফলভাবে সম্পন্ন করতে উপ–প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার ও বেসরকারীকরণবিষয়ক উপদেষ্টা মোহাম্মদ আলির ‘দৃঢ় ও মনোযোগী নেতৃত্ব’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তিনি বলেন, সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠন ও বেসরকারি খাতনির্ভর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
শাহবাজ শরিফ আরও জানান, নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার যে লক্ষ্য নিয়ে ফার্স্ট উইমেন ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তা শুধু বজায় থাকবে না—বরং পেশাদার ব্যবস্থাপনা ও কৃষি ও শিল্প খাতে লক্ষ্যভিত্তিক বিনিয়োগের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী হবে।
আইএইচসির প্রধান নির্বাহী সৈয়দ বাসার শুয়াইব বলেন, পাকিস্তানের ব্যাংকিং খাতে এই বিনিয়োগ আমাদের আস্থার প্রতিফলন এবং দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের যৌথ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে। তিনি বলেন, ‘আমরা পাকিস্তানের আর্থিক খাতে বড় সম্ভাবনা দেখছি। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যাংককে আধুনিকীকরণ, স্বয়ংক্রিয় ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক আর্থিক সিদ্ধান্তে অগ্রগতি আনতে আমরা কাজ করব।’
সরকারি এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ইন্টার–গভর্নমেন্টাল কমার্শিয়াল ট্রানজ্যাকশন অ্যাক্ট ২০২২–এর আওতায় এটিই প্রথম ব্যাংক বেসরকারীকরণ। ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ফার্স্ট উইমেন ব্যাংক বর্তমানে পাকিস্তানজুড়ে ৪২টি শাখা পরিচালনা করছে, যেখানে খুচরা, এসএমই ও করপোরেট গ্রাহকদের সেবা দেওয়া হয়।
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি) এবং ছোট ডানঘেঁষা দল জাপান ইনোভেশন পার্টি (জেআইপি বা ইশিন) একত্রে জোট সরকার গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যার মধ্য দিয়ে সানায়ে তাকাইচির দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পথ খুলে যাচ্ছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে।
কিয়োদো সংবাদ সংস্থা রোববার জানিয়েছে, এলডিপির নবনির্বাচিত নেতা সানায়ে তাকাইচি ও জেআইপি প্রধান হিরোফুমি ইয়োশিমুরা কাল সোমবার জোট সরকার গঠনের চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে যাচ্ছেন।
এ মাসের শুরুতে তাকাইচি ক্ষমতাসীন দল এলডিপির নেতা নির্বাচিত হন, কিন্তু তার নেতৃত্বাধীন পূর্বের জোট সরকার ভেঙে পড়লে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রচেষ্টা ভেস্তে যায়। এর পর থেকে এলডিপি নতুন রাজনৈতিক জোট গঠনের চেষ্টা চালিয়ে আসছে, যা তাকাইচির প্রধানমন্ত্রিত্বের সম্ভাবনাকে আবারও জোরদার করেছে। এলডিপি তাকাইচিকে জোট গঠনের দায়িত্ব দিয়েছে।
জাপানের প্রভাবশালী দৈনিক ইয়োমিউরি শিমবুনও জানিয়েছে, সোমবার বৈঠকের পর তাকাইচি ও ইয়োশিমুরা সম্ভবত জোট সরকার গঠনের চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন। অন্যদিকে, জেআইপি আজ ওসাকায় নির্বাহী বোর্ডের বৈঠক করবে এবং একই দিন পার্লামেন্ট সদস্যদের পূর্ণাঙ্গ সভায় এলডিপির সঙ্গে চুক্তির চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে।
এলডিপির দীর্ঘদিনের সহযোগী দল কোমেইতো ২৬ বছর পর সরকার থেকে সরে দাঁড়ালে নতুন জোট সরকার গঠনের আলোচনা শুরু হয় এবং জাপান রাজনৈতিক অচলাবস্থায় পড়ে। এলডিপি ও জেআইপি যদি আনুষ্ঠানিকভাবে জোট বাঁধে, তবে তাকাইচি মঙ্গলবারই প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হতে পারেন।
তবে, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের জন্য পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের ক্ষেত্রে দুই দল মিলে এখনো দুটি আসনের ঘাটতি রয়েছে। যদি ভোট দ্বিতীয় দফায় গড়ায়, তাহলে তাকাইচিকে শুধু প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে বেশি পার্লামেন্ট সদস্যের সমর্থন পেতে হবে।
এই জোট সরকার গঠনের প্রস্তুতি এমন সময় চলছে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জাপান সফরের মাত্র কয়েক দিন বাকি। ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ায় বার্ষিক এশিয়া–প্যাসিফিক ইকোনমিক কো–অপারেশন (অ্যাপেক) সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আগে জাপান সফরে যাবেন।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, শিকাগো, মায়ামি ও লস এঞ্জেলসসহ বিভিন্ন শহরে এই বিক্ষোভ হয়েছে। নিউইয়র্কে টাইম স্কোয়ারের সামনের সমাবেশে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়েছে।
সড়ক ও পাতাল রেলেও প্রবেশপথগুলো লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়েছিল। তারা ‘রাজতন্ত্র নয়, গণতন্ত্র’ এবং ‘সংবিধান বিকল্প কিছু নয়’- এমন শ্লোগান সংবলিত প্ল্যাকার্ড বহন করেছেন।
এই বিক্ষোভের আগে ট্রাম্পের সহযোগীরা অভিযোগ করেছেন যে, এর সাথে বামপন্থি অ্যান্টিফা আন্দোলনের যোগসূত্র আছে এবং এর নিন্দা করে তারা এই বিক্ষোভের নাম দিয়েছেন ‘হেইট আমেরিকা র্যালি’ বা ‘আমেরিকাকে ঘৃণা সমাবেশ’।
এদিকে আয়োজক ও বিক্ষোভকারীরা বলেছেন, শনিবার তাদের বিক্ষোভ ছিল শান্তিপূর্ণ। ‘নো কিংস’ কর্মসূচির মূল নীতিকে অহিংস বলে আয়োজক গোষ্ঠী তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে। তারা অংশগ্রহণকারীদের সম্ভাব্য যেকোনো উত্তেজনা পরিহারের আহ্বান জানিয়েছেন। নিউইয়র্কে বিক্ষোভকারীরা ড্রামসহ নানা বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে ‘গণতন্ত্র দেখতে এমনই’ এমন শ্লোগান দিচ্ছিলেন।
বিক্ষোভের সময় আকাশে হেলিকপ্টার ড্রোন উড়তে দেখা গেছে এবং পাশে পুলিশ অবস্থান করছিল। নিউইয়র্কের পুলিশ জানিয়েছে, ১ লাখেরও বেশি মানুষ ওই শহরে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে।
টাইম স্কোয়ারেই কুড়ি হাজারের বেশি মানুষের অংশ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার একজন পুলিশ কর্মকর্তা। ফ্রি ল্যান্স লেখক ও সম্পাদক বেথ জেসলফ বলছেন, তিনি এই প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন কারণ তার মনে হচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন ‘ফ্যাসিজমের দিকে যাচ্ছে এবং এটি একটি কর্তৃত্ববাদী সরকার’।
দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরে ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ব্যবহারের একটি বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছেন। তিনি কংগ্রেসের অনুমোদন করা তহবিল ছাড় করাতে নির্বাহী আদেশ ব্যবহার করেছেন। ফেডারেল সরকারের একাংশ ভেঙে দিয়েছেন এবং অনেক দেশের ওপর ব্যাপক শুল্কারোপ করেছেন। বিভিন্ন রাজ্য গভর্নরের আপত্তি সত্ত্বেও ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেছেন।
প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তার পদক্ষেপ দেশ পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ছিল। তিনি স্বৈরশাসক বা ফ্যাসিবাদী হওয়ার অভিযোগকে উন্মাদনা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তার সমালোচকরা অবশ্য বলছেন, তার কিছু পদক্ষেপ অসাংবিধানিক, যা আমেরিকার গণতন্ত্রের জন্য হুমকি।
মাসিমো মাসকলি নিউজার্সির একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী। তিনি বেড়ে উঠেছেন ইতালিতে। তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। কারণ তার মতে আমেরিকা এখন যেই পথ অনুসরণ করছে, তা তার দেশ ইটালি করেছিল গত শতাব্দীতে।
‘আমি একজন ইতালিয়ান বীরের ভাতিজা। তিনি মুসোলিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধে অংশ নিয়ে ফ্যাসিস্টদের হাতে মারা গিয়েছিলেন। ৮০ বছর পর আমেরিকাতে আবার সেই ফ্যাসিজম আমি আশা করি না,’ বলেছেন তিনি।
সিনেটে সংখ্যালঘু দলের নেতা ও নিউইয়র্কের ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমারও এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। ‘আমেরিকায় আমাদের কোনো স্বৈরশাসক নেই এবং আমরা ট্রাম্পকে আমাদের গণতন্ত্র ধ্বংস করতে দেব না,’ শুমার লিখেছেন সামাজিক মাধ্যম এক্সে।
ওয়াশিংটন ডিসির বিক্ষোভে বক্তব্য দিয়েছেন ভারমন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। ‘ঘৃণা নয়, বরং আমরা আমেরিকাকে ভালোবাসি বলেই আমরা এখানে,’ হাজার হাজার মানুষের এক সমাবেশে বলেছেন তিনি।
ওয়াশিংটন ডিসির এই মিছিল সমাবেশে ট্রাম্পের ‘আমেরিকাকে মহান করুন’ শ্লোগান লেখা টুপি পড়ে এক ব্যক্তিকেও যোগ দিতে দেখেছে বিবিসি। তিনি বলেছেন, তিনি বিক্ষোভটি দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
ওদিকে বিক্ষোভ হয়েছে ইউরোপেও। বার্লিন, মাদ্রিদ ও রোমে আমেরিকার বিক্ষোভের প্রতি সংহতি জানিয়ে রাস্তায় এসেছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। লন্ডনে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের সামনেও কয়েকশত মানুষ জড়ো হয়ে প্রতিবাদ করেছেন। টরেন্টোতে যুক্তরাষ্ট্রের কনস্যুলেটের সামনে বিক্ষোভ হয়েছে।
ফক্স নিউজের সাথে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বিদ্রূপ করে বলেছেন, সামনের সমাবেশগুলোতে তিনি ভাষণ দেবেন বলে তার কাছে মনে হচ্ছে। ‘কিং! এটা অভিনয় নয়,’ ট্রাম্প সাক্ষাৎকারটিতে বলেছেন। ‘আপনি জানেন তারা আমাকে রাজা বলছে। আমি রাজা নই’।
কানসাসের গভর্নর রজার মার্শাল সমাবেশের আগে সিএনএনকে বলেছেন ‘আমাদের ন্যাশনাল গার্ড বের করে আনতে হবে। আশা করি এটি শান্তিপূর্ণ হবে। আমার সন্দেহ আছে।’
বিভিন্ন রাজ্যে রিপাবলিকান গভর্নররা কয়েকটি রাজ্যে ন্যাশনাল গার্ডকে প্রস্তুত রেখেছিলেন। বিক্ষোভকে সামনে রেখে টেক্সাস গভর্নর গ্রেগ অ্যাবোট গত বৃহস্পতিবার রাজ্যে ন্যাশনাল গার্ডকে সক্রিয় করেছিলেন।
তিনি বলেছেন, ‘পরিকল্পিত অ্যান্টিফা-লিংকড বিক্ষোবের’ জন্য ট্রুপস দরকার হবে।
ডেমোক্র্যাটরা এসব পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছেন। রাজ্যের শীর্ষ ডেমোক্র্যাট নেতা গিনি উ বলেছেন শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমনে সশস্ত্র সৈন্য পাঠানোর মতো কাজই স্বৈরশাসক ও রাজা করে ‘এবং গ্রেগ অ্যাবোট নিজেকে তাদেরই একজন প্রমাণ করেছেন।’
ভার্জিনিয়ার রিপাবলিকান গভর্নর গ্লেন ইয়ংকিনও একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। ট্রাম্পের অনুরোধে ওয়াশিংটন ডিসিতেও ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন রয়েছে গত অগাস্ট থেকেই। তবে তাদের এবারের বিক্ষোভে চোখে পড়েনি। স্থানীয় পুলিশ অবশ্য রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের মধ্যে ট্রাম্পকে কেন্দ্র করে মারাত্মক বিভাজন রয়েছে। রয়টার্স ও ইপসসের সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে ৪০ শতাংশ তার পক্ষে আর ৫৮ শতাংশ তার বিপক্ষে। তবে সাধারণত দায়িত্ব পালনের সময় প্রেসিডেন্টদের জনপ্রিয়তা কিছুটা কমতে থাকে।
গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। তাদের দাবি হামাসও যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় নতুন করে বিমান হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র দাবি করেন, হামাস যুদ্ধবিরতির স্পষ্ট লঙ্ঘন করে ‘ইয়েলো লাইন’-এর ওপারে ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর একাধিক হামলা চালিয়েছে।
সেনাবাহিনীর দাবি, এই ‘ইয়েলো লাইন’ হচ্ছে সেই সীমারেখা, যার বাইরে ইসরায়েলি বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ অনুযায়ী নিজেদের সরিয়ে নিয়েছিল।
অন্যদিকে হামাস জানিয়েছে, তারা এখনো যুদ্ধবিরতিতে অঙ্গীকারবদ্ধ এবং বরং ইসরায়েলই একাধিকবার চুক্তি লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ করেছে।
বার বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে ইসরায়েলি বাহিনী। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি মাসের শুরুতে কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ৪৭ বার যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। ফলে ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১৪৩ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে ইসরায়েলি সরকার বলছে, গাজা ও মিসরের মধ্যবর্তী রাফা সীমান্ত ক্রসিং ‘পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত’ বন্ধ থাকবে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু হামাসের বিরুদ্ধে জিম্মিদের মরদেহ উদ্ধারে যথেষ্ট পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ করেছেন।
৪৭ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েল
বার বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে ইসরায়েলি বাহিনী। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি মাসের শুরুতে কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ৪৭ বার যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।
হামাস এরই মধ্যে আরও দুই জিম্মির মরদেহ ফেরত দিয়েছে। হামাস বলছে, নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতি চুক্তি ‘ব্যাহত করার জন্য তুচ্ছ অজুহাত’ কাজে লাগাতে চাচ্ছেন।
শনিবার রাতে হামাস জানিয়েছে, রাফা ক্রসিং বন্ধ থাকায় মৃতদেহ উদ্ধার ও স্থানান্তরে উল্লেখযোগ্য বিলম্ব হবে। গাজার মধ্যে এখনো বন্দি ও মৃতদেহ ফেরতের বিষয়টি যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়নের অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাফাহ ক্রসিং পুনরায় খোলার সঙ্গে সব মৃতদেহ পুনরুদ্ধারের বিষয়টি যুক্ত করেছে ইসরায়েল।
২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া সংঘাতে গাজায় কমপক্ষে ৬৮ হাজার ১১৬ জন নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজার ২০০ জন আহত হয়েছে। অপরদিকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত এবং প্রায় ২০০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়।
যুদ্ধবিরতির পরেও বন্ধ গাজার ‘লাইফলাইন’ রাফা ক্রসিং
যুক্তরাষ্ট্র, মিশর, কাতার, তুরস্কের মধ্যস্থতায় গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও এখনো বন্ধ রয়েছে ‘লাইফলাইন’ খ্যাত রাফা ক্রসিং। গাজার শহর থেকে প্রায় ৩০-৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণে মিসর সীমান্তে অবস্থিত এ চেকপোস্টটি মাত্র ৩০০ মিটারের একটি রাস্তা। তবে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ এবং ত্রাণ পৌছানোর প্রধান আন্তর্জাতিক প্রবেশদ্বার এ রাফা ক্রসিং।
হামাসের ওপর দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে ফিলিস্তিনিদের জীবন বাঁচানোর এ পথটি বন্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে রাফা ক্রসিং।
কার্যালয়ের বরাত দিয়ে দ্য নাশনালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রসিং পুনরায় খোলার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে হামাস কতটা তাদের দায়িত্ব পালন করছে তার ওপর। বন্দিদের ফিরানো এবং মৃতদেহ হস্তান্তরসহ সম্মত ফ্রেমওয়ার্ক বাস্তবায়ন করছে কিনা সে বিষয় বিবেচনা করে রাফা ক্রসিং খোলা হবে।
গাজার মধ্যে এখনও বন্দি ও মৃতদেহ ফেরতের বিষয়টি যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়নের অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাফা ক্রসিং পুনরায় খোলার সঙ্গে সব মৃতদেহের পুনরুদ্ধারের বিষয়টি যুক্ত করেছে ইসরায়েল।
এর আগে নয় মাস পর গত ফেব্রুয়ারিতে সীমিত সময়ের জন্য রাফা ক্রসিং খুলে দেওয়া হয়েছে। তখন যে পরিমান ত্রাণ প্রবেশের কথা ছিল তা হটে দেয়নি ইসরায়েল। এছাড়া তখন ছয় হাজারের বেশি রোগীকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা থাকলে তা করতে দেয়নি ইসরাইয়েল। ফলে দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচার হামলা ও গণহত্যার কারণে গাজায় মানব সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ শুরু হয়।
গাজায় ফের হামলা শুরু করতে বললেন ইসরায়েলি মন্ত্রীরা
ইসরায়েলের অতি-ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরসহ একাধিক মন্ত্রী গাজায় আবারও আক্রমণ শুরু করার জন্য নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
রোববার আল জাজিরা জানিয়েছে, বেন-গভির এক্স-পোস্টে বলেন, তিনি চান ইসরায়েলি বাহিনী ‘সর্বোচ্চ শক্তির সঙ্গে গাজা উপত্যকায় সম্পূর্ণরূপে যুদ্ধ পুনরায় শুরু করুক’।
আল জাজিরা জানিয়েছে, আজ সকালে গাজাজুড়ে বেশ কয়েকটি বিমান হামলা চালানো হয়েছে বলে ইসরায়েলি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর মন্ত্রীদের এ বক্তব্য এলো।
ইসরায়েলি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ এক্স-পোস্টে একটি শব্দ লিখে একই ইঙ্গিত দিছেন: ‘যুদ্ধ!’
প্রবাসীবিষয়ক মন্ত্রী আমিচাই চিকলি বলেন, ‘যতদিন হামাস থাকবে, যুদ্ধ থাকবেই।’
নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভার আরেক সদস্য আভি ডিচটার পরিস্থিতিকে ‘কঠিন ও জটিল’ বলে বর্ণনা করেছেন এবং হামাসকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনে অভিযুক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, সমস্ত জীবিত জিম্মিরা আমাদের হাতে, পরিস্থিতি বদলে গেছে। ইসরায়েল হামাসকে নিরস্ত্র করার ক্ষেত্রে হাল ছাড়বে না।
দীর্ঘদিনের গণহত্যা ও দুর্ভিক্ষের মাঝে কয়েকদিন আগে মার্কিন মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সই করে হামাস ও ইসরায়েল। তবে কয়েকদিন না গড়াতেই ইসরায়েলি মন্ত্রীদের এসব মন্তব্য তাদের প্রতিশ্রুতি নিয়ে সন্দেহ বাড়িয়ে দেয়।
মন্তব্য