পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল ও ভুটান। যৌথ এক বিবৃতিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে দেশ দুটি।
চুক্তি অনুযায়ী উভয় দেশ ‘পারস্পরিক সহযোগিতা ও সম্পর্ক আরও জোরদার করবে’ বলে শনিবার যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চুক্তি করে ইসরায়েল। তবে এসবের সঙ্গে হিমালয়বেষ্টিত ভুটানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের কোনো মিল নেই বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিবৃতিতে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় জানায়, সম্পর্ক স্থাপনের উদ্দেশে উভয় দেশের মধ্যে কয়েক বছর ধরে যোগাযোগ চলছিল। এর জের ধরেই হলো এই চুক্তি।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গ্যাবি আশকেনাজি বলেন, ‘ইসরায়েলের স্বীকৃতি পাওয়ার গন্ডি আরও প্রসারিত হচ্ছে। ভুটান কিংডমের সঙ্গে এই সম্পর্ক স্থাপন এশিয়ায় ইসরায়েলের বন্ধন দৃঢ় করায় একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।’
ভুটানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের চুক্তিতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। টুইটারে তিনি লিখেছেন- ‘শান্তিচুক্তিগুলোর মধ্যে এটা বাড়তি একটা ফল’।
নেতানিয়াহু জানান, আরও অনেক দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার খুব কাছে আছে ইসরায়েল।
যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, শনিবার ভারতে ইসরায়েল ও ভুটানের রাষ্ট্রদূত দেশ দুটির সম্পর্ক স্থাপন বিষয়ে চুক্তি করে। চুক্তির আওতায় পানি ব্যবস্থাপনা, কৃষি, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতে একসঙ্গে কাজ করার জন্য যৌথ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবে দেশ দুটি।
এই চুক্তিকে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেছেন ভারতে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত রন মালকা। টুইটারে লিখেছেন- ‘এই চুক্তির ফলে উভয় দেশের জনগণ লাভবান হয় এমন অনেক সুযোগ তৈরি হবে।’
এর আগে শনিবার উত্তর আফ্রিকার মুসলিম দেশ মরক্কোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকের ঘোষণা দেয় ইসরায়েল। চলতি বছরের আগস্টের পর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় চারটি আরব দেশের সঙ্গে এমন চুক্তি হলো ইহুদি রাষ্ট্রটির।
এর আগে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকের ঘোষণা দেয় সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও সুদান।
এসব চুক্তির কঠোর সমালোচনা করে আসছে ফিলিস্তিন। ভালোভাবে দেখছে না ইরান ও তুরস্কের মতো দেশগুলোও। তাদের মতে, অধিকৃত ভূমি ফিলিস্তিনকে ফিরিয়ে দেয়ার আগে এবং সেখানে শান্তি ফেরা পর্যন্ত ইরসায়েলকে স্বীকৃতি দেয়া উচিত হবে না।
ইসরায়েলের সঙ্গে মরক্কোর চুক্তির ঘোষণায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় ফিলিস্তিনও। এ বিষয়ে ২০০২ সালে স্বাক্ষরিত ‘আরব শান্তি উদ্যোগ’এর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে তারা।
ওই চুক্তি অনুযায়ী, ইরসায়েলকে ১৯৬৭ সালের সীমারেখা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। তখন পশ্চিম তীর ও গাজা নিয়ে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সাপেক্ষে আরব দেশগুলো ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেবে।
আরও পড়ুন:Historic day!
— Ron Malka 🇮🇱 (@DrRonMalka) December 12, 2020
Today 🇮🇱 & 🇧🇹 established formal diplomatic relations. I was honored & excited to be part of this historic moment & to sign the official note. This agreement will open up many more opportunities for cooperation for the benefit of both our peoples 🇧🇹🤝🇮🇱 pic.twitter.com/OBD8esreZQ
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সর্বশেষ মূল্যায়নে দেখা গেছে সম্প্রতি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে পরিচালিত মার্কিন হামলার ফলে দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি এক থেকে দুই বছর পিছিয়ে গেছে বলে বুধবার (০২ জুলাই) পেন্টাগন জানিয়েছে।
ওয়াশিংটন থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পার্নেল বুধবার (০২ জুলাই) সাংবাদিকদের বলেছেন, আমাদের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই হামলার ফলে তাদের কর্মসূচি অন্তত এক থেকে দুই বছর পিছিয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা ধারণা করছি এটি দুই বছরের কাছাকাছি সময়ের জন্য তাদের কার্যক্রম থামিয়ে দিয়েছে।
ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জেরে জাতিসংঘের পরমাণু নজরদারি সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে ইরান। এই পদক্ষেপকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে আখ্যায়িত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
তেহরান থেকে এএফপি জানায়, গত মাসে ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে ১২ দিনের সংঘাতের পরই এই সিদ্ধান্ত এলো। ওই সংঘাতে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে নজিরবিহীন হামলা চালায়, যা তেহরান ও আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)’র মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে।
গত ২৫ জুন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার একদিন পরই ইরানি আইনপ্রণেতারা আইএইএ-এর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করার পক্ষে বিপুল ভোটে রায় দেন। বুধবার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম নিশ্চিত করেছে যে, আইনটি এখন কার্যকর হয়েছে।
ইরানি গণমাধ্যমের তথ্য অনুসারে, এই আইনের লক্ষ্য হলো পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি)-এর অধীনে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের নিজস্ব অধিকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন নিশ্চিত করা, বিশেষ করে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের ওপর জোর দেওয়া।
ওয়াশিংটন গত ১৩ জুন ইসরাইলের সামরিক পদক্ষেপের কারণে স্থগিত হওয়া আলোচনা পুনরায় শুরুর জন্য তেহরানকে চাপ দিচ্ছিল। তারা ইরানের এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে।
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেছেন, ‘আমরা এটিকে অগ্রহণযোগ্য বলব। এমন এক সময়ে ইরান আইএইএ-এর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যখন তাদের সামনে শান্তির ও সমৃদ্ধির পথে ফেরার সুযোগ ছিল।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র এই সিদ্ধান্তকে ‘স্পষ্টতই উদ্বেগজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন।
এদিকে, পেন্টাগন বুধবার জানিয়েছে যে মার্কিন গোয়েন্দা মূল্যায়নে দেখা গেছে, ইরানের পরমাণু স্থাপনায় চালানো হামলায় দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি এক থেকে দুই বছর পিছিয়ে গেছে।
পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পার্নেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা তাদের কর্মসূচিকে অন্তত এক থেকে দুই বছর পিছিয়ে দিয়েছি। প্রতিরক্ষা বিভাগের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা মূল্যায়নে এটিই দেখা গেছে।’
তিনি পরে যোগ করেন, ‘আমরা মনে করি সময়টা সম্ভবত দুই বছরের কাছাকাছি।’
আইএইএ পরিদর্শকদের ইরানের ঘোষিত পরমাণু স্থানগুলোতে প্রবেশাধিকার থাকলেও, এই স্থগিতাদেশের কারণে তাদের বর্তমান অবস্থা অনিশ্চিত।
রোববার, জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাঈদ ইরাভানি বলেন, ‘পরিদর্শকদের কাজ স্থগিত করা হয়েছে, তবে তাদের বা আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রোসির বিরুদ্ধে কোনো হুমকির ঘটনা ঘটেনি।’
তিনি আরো বলেন, ‘পরিদর্শকরা ইরানে আছেন এবং নিরাপদ আছেন। কিন্তু তাদের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে এবং তারা আর আমাদের স্থাপনাগুলোতে প্রবেশের অনুমতি পাচ্ছেন না।’
নতুন আইনে স্থগিতাদেশের পর কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি।
আইএসএনএ বার্তা সংস্থা আইনপ্রণেতা আলিরেজা সালিমিকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘এখন থেকে পরিদর্শকদের পারমাণবিক স্থাপনায় প্রবেশ করতে হলে ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন লাগবে।’
অন্যদিকে, মেহর বার্তা সংস্থা আইনপ্রণেতা হামিদ রেজা হাজী বাবাইকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আইএইএ’র ক্যামেরা ব্যবহারের অনুমতিও বন্ধ করে দেওয়া হবে। যদিও এটি নতুন আইনের আওতায় আছে কি না, তা স্পষ্ট নয়।’
সংসদে বিলটি পাস হওয়ার পর গার্ডিয়ান কাউন্সিল তা অনুমোদন করে এবং প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে স্থগিতাদেশ কার্যকর করেন বলে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে।
জবাবে, ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সার ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির ইউরোপীয় স্বাক্ষরকারীদের প্রতি ‘স্ন্যাপব্যাক’ প্রক্রিয়া চালু করে ইরানের ওপর জাতিসংঘের সমস্ত নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করার আহ্বান জানান।
স্ন্যাপব্যাক, যা অক্টোবরে শেষ হওয়ার কথা, সেটি ছিল পরমাণু চুক্তির অংশ যা ট্রাম্প ২০১৮ সালে একতরফা ভাবে প্রত্যাহার করার পর ভেঙে পড়ে। ইরান এক বছর পর তার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসতে শুরু করে।
ইরানি কর্মকর্তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ‘স্ন্যাপব্যাক’ প্রক্রিয়া চালু হলে তারা এনপিটি থেকেও সরে যেতে পারে।
ইসরাইল পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ হিসেবে পরিচিত হলেও এনপিটি চুক্তির সদস্য নয়।
জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মার্টিন গিজ বলেন, আইএইএ-এর সঙ্গে ইরানের সহযোগিতা স্থগিত করার পদক্ষেপটি একটি ‘ভয়াবহ সংকেত’।
ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর থেকে তেহরান বারবার আইএইএ’র নীরবতার সমালোচনা করেছে।
১২ জুন জাতিসংঘে গৃহীত একটি প্রস্তাবনায় ইরানকে অসহযোগিতার জন্য অভিযুক্ত করা হয়। তেহরান বলছে, ওই প্রস্তাবই হামলার জন্য অজুহাত তৈরি করেছিল।
বুধবার ইরানের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আলী মোজাফফারি আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রোসি’র বিরুদ্ধে ‘চক্রান্তমূলক ও বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন’ তৈরি করে ইসরাইলকে হামলার ‘পটভূমি তৈরি’ করে দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন।
ইরান জানিয়েছে, গ্রোসি বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত স্থান পরিদর্শনের জন্য যেতে চাইলেও তেহরান তা প্রত্যাখ্যান করেছে। কারণ—তাদের মতে, তাতে ‘খারাপ উদ্দেশ্য’ রয়েছে।
ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি আইএইএ প্রধানের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের হুমকির নিন্দা জানিয়েছে।
সোমবার, ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই বলেন, সহযোগিতা বন্ধের ভোট জনসাধারণের ‘উদ্বেগ ও ক্ষোভের’ প্রতিফলন।
১২ দিনের যুদ্ধে ইরানের বহু সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হন। ইসরাইলের ওপর পালটা হামলায় ইরানও ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে প্রতিক্রিয়া জানায়।
গত ২২ জুন, ইসরাইলের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ফোরদো, ইসফাহান এবং নাতাঞ্জের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে নজিরবিহীন হামলা চালায়।
বিচার বিভাগ অনুসারে, এই সংঘাতে ইরানে ৯শ’র বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
ইসরাইলের সরকারি তথ্যমতে, ইরানের পালটা হামলায় দেশটিতে ২৮ জন নিহত হয়েছেন।
দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি স্বীকার করেছেন, ‘স্থাপনাগুলোতে গুরুতর ক্ষতি হয়েছে।’
তবে সিবিএস’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বোমা মেরে প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান ধ্বংস করা যায় না।’
ইতালির নাগরিক ও নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিসিও-বিডি’র কর্মকর্তা তাবেলা সিজারকে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় তিন জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
এছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায়, বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার এম এ কাইয়ুমসহ চার জনকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
আজ ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক শেখ ছামিদুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- তামজিদ আহমেদ ওরফে রুবেল, রাসেল চৌধুরী ও মিনহাজুল আরেফিন ওরফে ভাগনে রাসেল। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।
অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাদের আরো এক বছরের কারাভোগ করতে হবে।
খালাস পাওয়া অপর তিন আসামি হলেন- কাইয়ুমের ভাই আবদুল মতিন, সোহেল ও শাখাওয়াত হোসেন।
আদালতের পেশকার গোলাম নবী বাসস’কে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় গুলশান ৯০ নম্বর সড়কের পশ্চিম প্রান্তে গুলশান অ্যাভিনিউ সংলগ্ন গভর্নর হাউজের দক্ষিণের দেওয়াল ঘেঁষা ফুটপাতে দুর্বৃত্তরা তাবেলা সিজারকে গুলি করে।
ওই সময় স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
ওই হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আইসিসিও কো-অপারেশনের বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি হেলেন দার বিক বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাত তিনজনকে আসামি করা হয়।
২০১৬ সালের ২৮ জুন ঢাকার আদালতে বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার এম এ কাইয়ুমসহ সাত জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক গোলাম রাব্বানী।
মামলায় বিচার চলাকালে ৭০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪২ আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন।
ব্রাজিলিয়ান কফি বিন, ফরাসি শ্যাম্পেন আর চীনা চা—এই ধরনের পানীয়গুলো সাধারণত মার্কিন রেস্তোরাঁগুলোর লাভের মূল চালিকাশক্তি। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন বিশ্বব্যাপী শুল্ক নীতির কারণে গত তিন মাসে আমদানি খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে। এতে একদিকে ব্যবসার লাভের মার্জিন কমছে এবং অন্যদিকে ক্রেতাদের জন্য মূল্যবৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এ সংবাদ জানিয়েছে।
হোয়াইট হাউসের খুব কাছেই অবস্থিত 'ক্লাইডস রেস্টুরেন্ট গ্রুপ', যারা স্থানীয় উৎস থেকে মাংস ও অন্যান্য খাদ্যপণ্য সংগ্রহে গর্ববোধ করে, তারাও বাধ্য হয়েছে মেনুর দাম বাড়াতে।
প্রতিষ্ঠানটির কর্পোরেট বেভারেজ ডিরেক্টর জন ফিলকিন্স এএফপিকে জানান, ‘বাস্তবতা হল, কিছুটা খরচ আমাদের অতিথিদের দিকেই ঠেলতে হচ্ছে। গ্লাসে ওয়াইন, স্পিরিটস বা খাবারের কিছু আইটেমে ৫০ সেন্ট থেকে ১ ডলার পর্যন্ত দাম বেড়েছে।’
তিনি আরও জানান, কফি ও চায়ের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে। সেইসঙ্গে কাগজজাত পণ্য ও খাদ্যসামগ্রীর দামেও ধীরে ধীরে ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে।
১৯৬০-এর দশকে ওয়াশিংটনে যাত্রা শুরু করা ক্লাইড’স। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিসহ ও তার আশপাশে এক ডজনের বেশি রেস্তোরাঁ রয়েছে।
তাদের একটি রেস্তোরাঁ হ্যামিল্টন শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত, যেখানে পানীয়ের দাম কিছুটা বেড়েছে।
মালিকপক্ষ দাম বৃদ্ধিকে সীমিত রাখার চেষ্টা করলেও, ফিলকিন্স বলছেন এটি কঠিন হয়ে পড়ছে।
জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফিরে আসার পর ট্রাম্প নতুন করে শুল্ক আরোপ করায় ব্যবসায়ীরা সরবরাহ চেইনের বিঘ্ন এবং অতিরিক্ত ব্যয়ে জর্জরিত।
এপ্রিল মাসে প্রেসিডেন্ট তার সবচেয়ে বিস্তৃত শুল্ক ঘোষণা করেন, যার আওতায় অধিকাংশ বাণিজ্য অংশীদারের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। এটি আগামী সপ্তাহ থেকে আরও উচ্চ হারে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
ফিলকিন্সের মতো নেতারা আগামী বুধবারের দিকে নজর রাখছেন, যেদিন থেকে উঁচু হারে শুল্ক কার্যকর হতে যাচ্ছে।
প্রতিটি বাণিজ্য অংশীদার অনুযায়ী আলাদা হার নির্ধারিত হয়েছে—যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যের জন্য হার ২০ শতাংশে উঠবে এবং জাপানের জন্য এটি ২৪ শতাংশে পৌঁছাবে, যদি তারা চুক্তির মাধ্যমে হার কমাতে না পারে।
ফিলকিন্স সতর্ক করে বলেন, শুল্ক দীর্ঘদিন বহাল থাকলে ছোট ব্যবসায়ী, আমদানিকারক ও স্বাধীন রেস্তোরাঁর সংখ্যা কমে যেতে পারে।
তিনি বলেন, আশা করছি, আমরা এমন পর্যায়ে আর শুল্ক দেখব না । রেস্তোরাঁ শিল্প সাধারণত কম নগদ প্রবাহ ও কম মুনাফার উপর চলে।
তিনি বলেন, সাধারণত রেস্তোরাঁর মুনাফার হার এক অঙ্কের মধ্যেই থাকে । উদাহরণস্বরূপ, যদি ওয়াইন বাই দ্য গ্লাসের মুনাফার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারিয়ে যায়। সেটি বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে।
ফিলকিন্স বলেন, ক্লাইড’স কফির জন্য ব্রাজিল ও ইন্দোনেশিয়া থেকে বিন সংগ্রহ করে এবং তাদের চা আসে ভারত ও চীন থেকে। গত ছয় মাসে আমরা কফি ও চায়ের খরচে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি দেখেছি। এর কারণ হচ্ছে, সরবরাহকারী ও পরিবেশকেরা শুধু ১০ শতাংশ শুল্কই নয়, বিনিময় হারজনিত অতিরিক্ত খরচও দিচ্ছে।
চীন থেকে আমদানির ক্ষেত্রে বর্তমানে ৩০ শতাংশ শুল্ক প্রযোজ্য যদিও ওয়াশিংটন ও বেইজিং সাময়িকভাবে একে অপরের উপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক কমিয়েছে।
চুক্তি না হলে ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানিকৃত পণ্যে বুধবার থেকে ৩২ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে, এবং ভারতের জন্য এই হার হবে ২৬ শতাংশ। মদ, বিয়ার ও ওয়াইন ক্ষেত্রে, আমরা যে ওয়াইন আমদানি করি তার বেশিরভাগই ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আসে।
ফিলকিন্স বলেন, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন ও পর্তুগাল থেকে আসা পণ্যে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি। তবে তার কোম্পানি চেষ্টা করছে যাতে সব বাড়তি খরচ গ্রাহকের ওপর না পড়ে।
বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ভোক্তারা বেশি খরচ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন না উল্লেখ করে ফিলকিন্স বলেন, বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি কোভিড-১৯ মহামারির পর তুলনামূলকভাবে ভালো পারফর্ম করেছে। কারণ, শক্তিশালী শ্রমবাজার ভোক্তাদের খরচ চালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। তবে এখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান কমছে।
এই গ্রীষ্মে অর্থনীতিবিদরা দেখছেন শুল্ক যদি সামগ্রিক মূল্যস্ফীতিতে অবদান রাখে, তাহলে পরিবারগুলো আরও সতর্ক হয়ে খরচ করবে।
ট্রাম্পের ঘন ঘন শুল্ক ঘোষণা, পরিবর্তন ও স্থগিতাদেশ আর্থিক বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছে এবং ব্যবসাগুলো বিনিয়োগ পরিকল্পনা স্থগিত রাখতে বাধ্য হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ফিলকিন্স শুল্ক কমানোর প্রত্যাশা করছেন।
ফিলকিন্স বলেন, পরবর্তী আট দিনে কী হতে যাচ্ছে তা আমাদের পক্ষে বলা কঠিন। আমরা কেবল অনুমানের ওপর ভিত্তি করে সব সিদ্ধান্ত নিতে পারি না।’
ইলন মাস্কের কম্পানিগুলোকে ফেডারেল সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া বিলিয়ন ডলারের ভর্তুকি বন্ধ করার হুমকি দেওয়া হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত মঙ্গলবার এ হুমকি দেন। একসময়ের মিত্র এই দুই ব্যক্তির মধ্যে চলমান বাকযুদ্ধ আরো তীব্র হয়েছে।
বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ট্রাম্পের ‘বিগ বিউটিফুল বিল’—একটি ট্যাক্স-কাট ও ব্যয়সংকোচন বিল, যা পাস হয়েছে সিনেটে।
এই বিলের ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য বরাদ্দ সরকারি ভর্তুকি ও করছাড় বাতিল হতে পারে, যা টেসলা দীর্ঘদিন ধরে পেয়ে আসছিল। মাস্ক এই বিলের তীব্র সমালোচনা করেন—এবং সেখান থেকেই ফের জ্বলে ওঠে পুরনো দ্বন্দ্ব।
মাত্র কয়েকদিন আগেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আতিথেয়তায় রাজকীয় ভোজে অংশ নিয়েছিলেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী ও টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক। ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে এক ডাইনিং টেবিলে বসে তারা আলোচনা করেছেন রাজনীতি, অর্থনীতি থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত জীবন পর্যন্ত।
মাস্ক তখন ছিলেন ট্রাম্পের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মানুষদের একজন—সরকারি ব্যয় কমানোর লক্ষ্য নিয়ে গঠিত বিশেষ টাস্কফোর্স ‘ডিওজিই’-এর নেতৃত্বেও ছিলেন তিনি। তবে সময় বেশি দিন সহনশীল থাকেনি। হঠাৎ করেই বন্ধুত্বে দেখা দিয়েছে ফাটল, আর এখন তা রূপ নিয়েছে প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে। বন্ধুত্ব আর আস্থার জায়গা ছেড়ে এখন তারা মুখোমুখি দুই শিবিরে।
দ্বন্দ্ব কেবল রাজনীতি নয়, জড়িয়ে পড়ছে ব্যবসা, ব্যক্তিত্ব, এমনকি সামাজিক মাধ্যমে চরম বাকবিতণ্ডায়। কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছেন না—আর এই টানাপড়েনে ঝুঁকির মুখে পড়েছে মাস্কের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য ও ট্রাম্পের রাজনৈতিক কৌশল দুই-ই।
গত সোমবার মাস্ক ফের ট্রাম্পের ট্যাক্স-কাট ও ব্যয়ের বিলের সমালোচনা করেন। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘ও ( ইলন মাস্ক) তার ইভি (ইলেকট্রিক ভেহিকল) ম্যান্ডেট হারাতে যাচ্ছে বলে ক্ষুব্ধ। কিন্তু ও আরো অনেক কিছু হারাতে পারে।’
ইলন মাস্ক অতীতে সরকারি ভর্তুকি তুলে দেওয়ার পক্ষে মত দিলেও, বাস্তবে তার কম্পানি টেসলা এ ধরনের সুবিধা থেকে বহু বছর ধরে লাভবান হয়েছে। ৭ হাজার ৫০০ ডলার মূল্যের ট্যাক্স ক্রেডিটসহ নানা সুবিধা ভোক্তাদের বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রতি আগ্রহী করেছে, যা বর্তমানে ট্রাম্প প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণাধীন। মঙ্গলবার টেসলার শেয়ারমূল্য ৫ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে।
এদিকে মাস্ক হুমকি দিয়েছেন, তিনি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করবেন এবং ট্যাক্স বিল সমর্থনকারী আইনপ্রণেতাদের হারাতে অর্থ ব্যয় করবেন। যদিও তিনি সরকারি ব্যয় কমানোর পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট মাস্কের বাজেট ঘাটতির সমালোচনার জবাবে বলেন, ‘দেশের অর্থনীতির দেখভাল আমিই করব।’
মাস্কের উদ্যোগে গঠিত ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’ নামের ব্যয় সংকোচন প্রকল্প থেকেও মে মাসে তিনি নিজেই সরে দাঁড়ান। ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশালে লেখেন, ‘ইতিহাসে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি পেয়েছে ইলন মাস্ক।’ তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ‘রকেট লঞ্চ, স্যাটেলাইট বা ইভি উৎপাদন সব বন্ধ করলে আমেরিকার অনেক টাকা বাঁচবে।’
পরে ট্রাম্প আরো বলেন, ‘ডিওজিই এমন একটা দানব যেটা আবার ইলনকেই খেয়ে ফেলতে পারে।’
জবাবে মাস্ক নিজের প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ লেখেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলছি, সব ভর্তুকি বন্ধ করুন, এখনই।’ তিনি আরো পাল্টা আক্রমণ করতে পারতেন বলেও জানান, তবে আপাতত তা থেকে বিরত থাকার কথাও বলেন।
এই দ্বন্দ্ব মাস্কের ব্যবসা সাম্রাজ্যের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষ করে টেসলা বর্তমানে টেক্সাসের অস্টিনে পরীক্ষাধীন রোবোট্যাক্সি প্রোগ্রামের ওপর বড় বিনিয়োগ করেছে, যার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে সরকারি নীতিমালার ওপর।
বিশ্লেষক জিন মানস্টার বলেন, ‘টেসলার বাজারমূল্যের বড় অংশ নির্ভর করছে স্বয়ংচালিত প্রযুক্তির অগ্রগতির ওপর। যদিও তাৎক্ষণিক কোনো পরিবর্তন হবে না, তবে ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।’
বুধবার টেসলার দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক বিক্রয় প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার কথা। ইউরোপে বিক্রয় মিশ্র হলেও মাস্কের কট্টর ডানপন্থি অবস্থান অনেক বাজারেই টেসলার জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
ইভি ক্রেডিট বাতিল হলে টেসলার আয় ১.২ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত কমে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে জে.পি মরগান—যা ২০২৪ সালের মোট পরিচালন আয়ের প্রায় ১৭ শতাংশ। ইলেকট্রিফিকেশন কোয়ালিশন, একটি ইভি সমর্থনকারী সংগঠন, হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসকে অনুরোধ করেছে যেন তারা সিনেট বিলটি সংশোধন করে।
টেসলার বিনিয়োগকারী গ্যারি ব্ল্যাক জানান, গাড়ি বিক্রি কমে যাওয়ায় তিনি শেয়ার বিক্রি করেছেন এবং ইভি ক্রেডিট বাতিল হলে কম্পানিটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এদিকে স্পেসএক্স এখনো প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলারের সরকারি চুক্তির ওপর নির্ভরশীল। পাশাপাশি, টেসলা বিভিন্ন নিয়ম মেনে চলার মাধ্যমে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার রেগুলেটরি ক্রেডিট বিক্রি করে এসেছে। এ আয় ছাড়া কম্পানিটি এপ্রিল মাসে লোকসান দেখত।
জুনের শুরুতেই ট্রাম্প মাস্কের সরকারি চুক্তি বাতিলের হুমকি দেন। তখন থেকেই দুজনের মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে উত্তেজনা বাড়ে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি জানি না ওকে (মাস্ককে) ডিপোর্ট করা হবে কি না। এটা খতিয়ে দেখতে হবে।’
ঢাকা, ২ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ’র সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিতের আইন চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান।
বুধবার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে।
তেহরান থেকে এএফপি জানায়, রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিতের আইন অনুমোদন করেছেন মাসউদ পেজেশকিয়ান।
গত মাসে ইরান-ইসরাইল যুদ্ধের পর প্রণীত এই আইন আজ কার্যকর করা হলো।
ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের সময় গত মাসে ইরানের সেনাবাহিনী পারস্য উপসাগরের গুরুত্বপূর্ণ জলপথ হরমুজ প্রণালিতে স্থাপনের জন্য জল-মাইন ভর্তি নৌযান নিয়ে গিয়েছিল। দুই মার্কিন কর্মকর্তার বরাতে জানা গেছে, ইসরায়েল ইরানের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালানোর পর তেহরান হরমুজ প্রণালি অবরোধের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বিষয়টি নিয়ে ওয়াশিংটন শঙ্কিত হয়ে উঠেছিল।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দিয়ে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসরায়েল ১৩ জুন ইরানের ওপর প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর কিছুদিন পরই এই জল-মাইন নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিষয়টি এত দিন প্রকাশ্যে আসেনি। তবে হরমুজ প্রণালিতে এখনো এসব মাইন মোতায়েন করা হয়নি।
বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক নৌপথগুলোর একটি হরমুজ প্রণালি। ইরান যদি এটি বন্ধ করে দিলে বৈশ্বিক বাণিজ্য বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে এবং চলমান উত্তেজনা আরও ভয়াবহ রূপ নেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশ্বের মোট তেল-গ্যাস রপ্তানির প্রায় এক-পঞ্চমাংশ এই প্রণালি দিয়ে যায়। এটি বন্ধ হলে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম আকাশচুম্বী হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তবে এখন পর্যন্ত বাস্তবে তা ঘটেনি। বরং, যুক্তরাষ্ট্রের ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পর থেকে বিশ্ববাজারে তেলের দাম ১০ শতাংশের বেশি কমে গেছে। বড় ধরনের কোনো অস্থিতিশীলতা হয়নি বাজারে।
গত ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর পর ইরানের পার্লামেন্ট হরমুজ প্রণালি বন্ধের বিষয়ে প্রস্তাব অনুমোদন করে। তবে সেটি বাধ্যতামূলক ছিল না। ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের ওপর ছিল চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ভার। ইরান আগে বহুবার এই প্রণালি বন্ধের হুমকি দিলেও কখনো সেটি বাস্তবায়ন করেনি।
ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ চলাকালে ঠিক কখন তেহরান জল-মাইন মোতায়েনের জন্য জাহাজে তুলেছিল, তা নির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। এছাড়া, মাইনগুলো এখন জাহাজ থেকে নামানো হয়েছে কি না, তাও স্পষ্ট নয়।
যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে এই তথ্য জানতে পারল—সে বিষয়ে বিস্তারিত বলেননি মার্কিন কর্মকর্তারা। তবে সাধারণত স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে তোলা ছবি কিংবা গোপন সূত্রের মাধ্যমে এমন তথ্য সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।
হরমুজ প্রণালি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান জানতে চাইলে হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রেসিডেন্টের (ডোনাল্ড ট্রাম্প) দক্ষ নেতৃত্বে পরিচালিত অপারেশন মিডনাইট হ্যামার, হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সফল অভিযান এবং সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের কারণেই হরমুজ প্রণালি খোলা আছে। নৌ-চলাচলের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং ইরান এখন অনেকটাই দুর্বল।’
এ বিষয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর বা ইরানের জাতিসংঘ মিশনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। দুই মার্কিন কর্মকর্তা জানান, মাইন মোতায়েনের জন্য জাহাজে তোলার এই পদক্ষেপ আসলে ইরানের কৌশলগত চালও হতে পারে। তারা হয়তো দেখাতে চেয়েছে, হরমুজ প্রণালি বন্ধের বিষয়ে তারা সত্যিই প্রস্তুত। আবার তারা এমন প্রস্তুতি নিয়েছে, যাতে প্রয়োজন হলে তা বাস্তবায়ন করা যায়।
হরমুজ প্রণালি ওমান ও ইরানের মাঝখানে। এটি পারস্য উপসাগরকে দক্ষিণে ওমান উপসাগর ও আরব সাগরের সঙ্গে যুক্ত করেছে। সবচেয়ে সংকীর্ণ স্থানে প্রণালির প্রস্থ ২১ মাইল (৩৪ কিলোমিটার)। এর মধ্যে ২ মাইল করে নৌ-চলাচলের পথ রয়েছে।
ওপেকভুক্ত—সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত ও ইরাক তাদের অধিকাংশ তেল এই পথ দিয়ে এশিয়ায় রপ্তানি করে। বিশ্বের অন্যতম বড় তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রপ্তানিকারক কাতারও প্রায় সম্পূর্ণ রপ্তানি এই পথ দিয়ে করে। ইরান নিজেও তাদের অধিকাংশ তেল এই প্রণালি দিয়ে রপ্তানি করে। তাই সাধারণভাবে তাদের এই পথ বন্ধ করার ইচ্ছা কম। তবে তারা বরাবরই এই পথ বন্ধ করার সামরিক সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির ২০১৯ সালের হিসাব অনুসারে, ইরানের কাছে ৫ হাজারের বেশি জল-মাইন আছে। দ্রুতগামী ছোট নৌকা দিয়ে সেগুলো খুব সহজেই মোতায়েন করা যায়।
আরব সাগর অঞ্চলে বাণিজ্য নিরাপত্তা রক্ষায় বাহরাইনে অবস্থান করে যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম নৌবহর। সাধারণত সেখানে ৪টি মাইন-নিষ্ক্রিয়কারী (এমসিএম) জাহাজ থাকত। এখন এগুলোর পরিবর্তে আরও আধুনিক ‘লিটারাল কমব্যাট শিপ’ বা এলসিএস মোতায়েন করা হচ্ছে, যেগুলোতেও মাইন প্রতিরোধের প্রযুক্তি রয়েছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলার আগে সম্ভাব্য পাল্টা আঘাতের আশঙ্কায় বাহরাইন থেকে সব মাইন-নিষ্ক্রিয়কারী জাহাজ সরিয়ে নিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ইরান শুধু কাতারে অবস্থিত একটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইরানের পক্ষ থেকে আরও পাল্টা হামলার সম্ভাবনা তারা উড়িয়ে দিচ্ছেন না।
মন্তব্য