অল্প দিনের ব্যবধানে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দুটি কার্যকর টিকার খবরে বিশ্বজুড়ে স্বাভাবিক কার্যক্রমে যেন গতি ফিরেছে। উল্লম্ফন ঘটেছে আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজার ও জ্বালানি তেলের বাজারে।
ফাইজার ও মডার্না দিয়ে করোনার টিকা উদ্ভাবনের লড়াইটি কেবল শুরু বলে ধরা হচ্ছে। শিগগিরই টিকা নিয়ে আসছে আরও গরম খবর।
ফরেন পলিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এ মুহূর্তে বিশ্বজুড়ে সব মিলিয়ে দুই শতাধিক করোনা টিকা নিয়ে গবেষণা চলছে। এর মধ্যে ৫৩টি টিকা আছে মনুষ্য শরীরে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল স্তরে। গবেষণা ও উন্নয়নের পাপলাইনে আছে আরও ১৫৫টি টিকা।
এই প্রতিযোগিতায় রয়েছে বাংলাদেশের নামও। গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড করোনার টিকা তৈরির দৌড়ে থাকা একমাত্র বাংলাদেশি কোম্পানি। তাদের টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
সবচেয়ে কার্যকর টিকার লড়াইয়ে কোনটির জয় হবে, এর মধ্যে আসতে শুরু করেছে সে প্রশ্ন।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার ও জার্মানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বায়ো-এনটেক প্রাথমিক তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে জানায়, তাদের টিকা করোনা রোধে ৯০ শতাংশ কার্যকর।
‘এমআরএনএ’ জেনেটিক কোডের টিকাটি নিয়ে চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এটি সংরক্ষণ ও বহন করার উপায়টি খুবই জটিল। ফ্রিজে টিকাটি সংরক্ষণ করতে হবে মাইনাস ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায়।
গত সোমবার করোনা প্রতিরোধে আরও বেশি আশাবাদী হওয়ার মতো খবর নিয়ে আসে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বায়োটেকনোলজি প্রতিষ্ঠান মডার্না। তাদের উদ্ভাবিত টিকা মানুষকে করোনামুক্ত রাখতে প্রায় ৯৫ শতাংশ কার্যকর বলে দাবি করা হয়।
এই টিকার জেনেটিক কোডও ‘এমআরএনএ’। তবে সংরক্ষণ, বহন অনেকটাই সহজ। ফলে ব্যবসায়িক উপযোগিতাও বেশি।
মাত্র মাইনাস চার ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় রাখা যায়, সাধারণ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায় ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত।
টিকাটির বিষয়ে হার্ভার্ডের টিএইচ চ্যান স্কুল অফ পাবলিক হেলথের বিজ্ঞানী জ্যাপ গুডস্মিথ বলেছেন, ‘অসাধারণ কার্যকারিতার জন্যই আমি বিস্মিত হচ্ছি না; টিকাটির স্থিতিশীলতাও দারুণ। এর ফলে টিকা দেয়ার অভিযান অধিকতর সহজ হবে।’
একই কথা কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপার্ডনেস ইনোভেশনের সিইও রিচার্ড হ্যাটচেটেরও। যেমন আশা করছিলেন মডার্নার টিকাটি ততটুকুই ভালো বলে জানান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব নেয়ার আগে প্রায় একই মাত্রার কার্যকারী আরও টিকার ঘোষণা আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এসব টিকার ভিড়ে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ও কার্যকারিতার দিক থেকে যথাযথটি বেছে নেয়াটা যে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এদিকে টিকা নিয়ে রাজনীতিও শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এরই মধ্যে জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস সংকট নিরসনে তার প্রশাসনের নেয়া ‘অপারেশন র্যাপ স্পিড’ উদ্যোগের ফলেই কার্যকরী দুটি টিকা পাওয়া গেছে।
দুটি টিকার খবরকে করোনা রোধে ট্রাম্পের জয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও ট্রাম্পের জামাতা জেরার্ড কুশনার।
এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে রক্ষণশীল ভাষ্যকার হগ হিউইট তো বলেই ফেলেন, ‘কভিড-১৯ ভ্যাকসিন ট্রাম্পের লিগ্যাসি হওয়া উচিত।’
আরও পড়ুন:Worldwide, there are 53 vaccine candidates in human clinical trials right now, with another 155 further back in the research and development pipeline. But the euphoria of the moment just might be a mirage, FP's @Laurie_Garrett writes.https://t.co/xhqIsvJgJ0
— Foreign Policy (@ForeignPolicy) November 18, 2020
চট্টগ্রামে পেঁয়াজের বাজারে আগুন। চলছে চরম নৈরাজ্য। বেপরোয়া সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে ঘণ্টায় ঘণ্টায় দাম বাড়ছে। ২৪ ঘণ্টায় কেজিতে বেড়েছে ১৩০ টাকা। দেশি ও আমদানি করা দুই ধরনের পেঁয়াজের দামই বেড়েছে।
শনিবার পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হয়েছে ২৪০ টাকা। আগের দিন ছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকা। তারপরও বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে পেঁয়াজ।
জানা গেছে, আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছে ভারত। এ ঘটনার জেরে দেশের বাজারে একদিনের ব্যবধানে পাইকারি ও খুচরা উভয় পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
পেঁয়াজের এমন অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ ভোক্তারা। তারা বলছেন, ভারত তাদের অভ্যন্তরীণ বাজার ঠিক রাখতে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছে। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা এটিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে রীতিমতো নৈরাজ্য শুরু করেছে। তারা এক কেজি পেঁয়াজে ১৩০ টাকা পর্যন্ত মুনাফা করছেন।
অপরদিকে ব্যবসায়ীরা অজুহাত দিচ্ছেন, ভারত রপ্তানি বন্ধ করার কারণে বাজারে ব্যবসায়ীদের হাতে তেমন পেঁয়াজ নেই। যেহেতু চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেক কম, তাই বাজার লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, প্রতি ঘণ্টায় বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। এজন্য পাইকাররা দেশি পেঁয়াজ ছাড়ছে না। রিয়াজুদ্দিন বাজারেও ভোরে যে দাম ছিল, সকাল ৯টায় তা কেজিতে ৭০/৮০ টাকা বেড়ে গেছে।
কাজির দেউরি বাজারের ব্যবসায়ী হাবিব মিয়া বলেন, ‘ভারত রপ্তানি বন্ধ করেছে এমন খবরের কারণে পাইকারদের কাছ থেকে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায় কিনছি।’
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ ছাড়া দেশি পেঁয়াজ তেমন একটা নেই। ভারতে বন্যার কারণে পেঁয়াজের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। তাই তাদের দেশেও পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী। অভ্যন্তরীণ বাজার নিয়ন্ত্রন দেশটি রপ্তানিও বন্ধ করে দিয়েছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের বাজারে দাম বাড়ছে।
ভোক্তারা বলছেন, ভারত মাত্র রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। এ অবস্থায় দেশের বাজারে এখনই দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই।
চাক্তাই–খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ আড়ত বন্ধ। তারা বলছে যে আড়তে পেঁয়াজ নেই। অথচ প্রতিটি আড়তে পেঁয়াজ আছে। তারা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে।
যে গুটিকয় আড়ত বিক্রি করছে তা-ও চড়া দামে।
বর্তমানে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা কেজি। অথচ দুদিন আগেও তা বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়। অপরদিকে খুচরা বাজারে একদিন আগেও প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকায়। সেই পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকায়। অর্থাৎ একদিনেই কেজিতে দাম বেড়েছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের এক আড়তদার বলেন, বর্তমানে খাতুনগঞ্জে যেসব পেঁয়াজ রয়েছে সেগুলো বাজার পর্যন্ত আসতে খরচ পড়েছে কেজিপ্রতি ১০০ টাকা। কিন্তু ভারত রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয়ার পরপরই প্রতি কেজিতে ৮০-৯০ টাকা মুনাফা করছেন আমদানিকারকরা।
নগরীর রিয়াজুদ্দিন বাজার, কাজির দেউরি বাজার, বহদ্দারহাট, চকবাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি বাজারেই পেঁয়াজ বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। শনিবার প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা। কোনো দোকানেই এর কমে পেঁয়াজ বিক্রি হয়নি। অনেক দোকানে পেঁয়াজই নেই।
বহদ্দারহাটে বাজার করতে আসা মামুন মিয়া বলেন, ‘বাজারে দেশি পেঁয়াজ ২৪০ টাকা কেজির নিচে নেই। আর ভারতের পেঁয়াজ ২০০ টাকা কেজি। দুদিন আগেও দেশি পেঁয়াজ কিনলাম ১২০ টাকা করে। রাতের মধ্যেই বেড়ে গেল ১২০ টাকা। এটা কেমন কথা! দেশি পেঁয়াজের কেজি ২৫০ টাকা চাওয়া হচ্ছে। এভাবে হলে আমরা কীভাবে চলবো?’
চাক্তাই আড়তদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। ভারতের বাজারেও পেঁয়াজের সংকট রয়েছে। সেখানেও দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত রপ্তানি বন্ধ করার ঘোষণা দেয়ায় এখানে দাম বাড়ছে।’
তিনি দাবি করেন, ‘পেঁয়াজের দাম বাড়ানো বা কমানোর ব্যাপারে আড়তদারদের কোনো হাত নেই। আমদানিকারকরা যে দামে বিক্রি করতে বলেন সেই দামেই আড়তদাররা বিক্রি করেন।’
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজার ব্যবসায়ীদের মর্জির ওপর নির্ভর করে। তারা একেক সময় একেক অজুহাতে দাম বৃদ্ধি করেন। এখন বলছেন, ভারত রপ্তানি বন্ধ করেছে বলে দাম বেড়েছে। বাজারে বর্তমানে যেসব পেঁয়াজ আছে, সেগুলো তো দুই সপ্তাহ আগে আমদানি করা। প্রশাসনের উচিত অভিযান পরিচালনা করে পেঁয়াজের ক্রয় ও বিক্রয় মূল্য যাচাই করা এবং সে অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেয়া।’
গত কিছুদিন ধরেই দেশের পেঁয়াজের বাজার অস্থির। গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাজার নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের খুচরা দর সর্বোচ্চ ৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু এ দরে খুচরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা যায়নি। পরে সরকার পেঁয়াজ আমদানি উন্মুক্ত করে দিলেও পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
আরও পড়ুন:ভারত সরকারের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণায় বাংলাদেশে পণ্যটির বাজার আবারও অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির অন্যতম প্রধান স্থলবন্দর যশোরের বেনাপোলসহ শার্শা উপজেলার বিভিন্ন বাজারে শনিবার সকালে ঘুরে দেখা যায়, দুই দিন আগে যে পেঁয়াজের কেজি ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা, মাত্র এক দিনের ব্যবধানে আজ সে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা কেজি দরে।
বেনাপোল বাজারের পাইকারি বিক্রেতা সুরুজ মিয়া বলেন, ‘আমরা পেঁয়াজ যেভাবে কিনে থাকি, সেভাবেই বিক্রি করে থাকি। গত সপ্তাহেও পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকার নিচে ছিল। ভারত রপ্তানি বন্ধের ঘোষণায় সে পেঁয়াজ আজ বিক্রি করছি ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা দরে।’
দেশে যথেষ্ট পেঁয়াজ থাকলেও কিছু আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে দেশের বাজার অস্থিতিশীল করে রেখেছে বলে জানান তিনি।
বেনাপোল কাস্টমস জানায়, গত সপ্তাহে প্রতি টন পেঁয়াজের এলসি মূল্য ছিল ৮০০ ডলার। সর্বশেষ ৫৯ টনসহ গত মাসে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৫০০ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।
এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বৃহস্পতিবার ভারত সরকার সে দেশে সংকট দেখিয়ে আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয়, যা শুক্রবার থেকে কার্যকর হয়।
আরও পড়ুন:পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে ঢাকাসহ সারা দেশে অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির উপপরিচালক (প্রশিক্ষণ ও প্রচার) আতিয়া সুলতানা শনিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, ‘আজ ৯ ডিসেম্বর, ২০২৩ তারিখ ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্তৃক পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
‘উল্লেখ্য, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকাতে অধিদপ্তরের চারজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে চারটি পৃথক টিম বাজার অভিযান পরিচালনা করবে।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও শ্যামবাজার এলাকায় অভিযান চালাবেন ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট এলাকায় অভিযানে থাকবেন ভোক্তা-অধিকারের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাগফুর রহমান। এর বাইরে মিরপুরের শাহ আলী মার্কেট এলাকায় অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবদুস সালাম এবং যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযানে থাকবেন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শাহ আলম।
ভারত বৃহস্পতিবার পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যা কার্যকর হয় শুক্রবার। এরই মধ্যে বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের মূল্য বাড়তে শুরু করেছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
আগামী বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে অনুষ্ঠেয় লোকসভা নির্বাচনের আগে মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।
দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৪ সালের মার্চ নাগাদ এ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে বলে ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফরেইন ট্রেডের (ডিজিএফটি) বৃহস্পতিবার জারি করা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, পেঁয়াজ রপ্তানি নীতি ‘অবাধ’ থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমটি জানায়, নিষেধাজ্ঞা শুক্রবার কার্যকর হলেও তিনটি শর্তে পেঁয়াজ রপ্তানি করা যাবে।
এতে বলা হয়, প্রজ্ঞাপন জারির আগে জাহাজে বোঝাইকৃত পেঁয়াজ; পরিবহন মূল্য পরিশোধ, পেঁয়াজ বোঝাইয়ের জন্য জাহাজের ভারতের বন্দরে আগমন ও প্রজ্ঞাপনের আগে জাহাজগুলোর রোটেশন নম্বর বরাদ্দ এবং প্রজ্ঞাপনের আগে পেঁয়াজের চালান কাস্টমসের কাছে হস্তান্তর ও নিবন্ধিত হলে পণ্যটি রপ্তানি করা যাবে।
ভারতজুড়ে বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি পেঁয়াজের গড়মূল্য ছিল ৫৭ দশমিক ১১ রুপি। এ দর এক বছর আগের এ সময়ের তুলনায় ৯৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেশি।
আরও পড়ুন:গরুর মাংসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য তদারকি করতে শুক্রবার সারা দেশে অভিযান চালাবে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির উপপরিচালক (প্রশিক্ষণ ও প্রচার) আতিয়া সুলতানা স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আজ ৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ তারিখ ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্তৃক গরুর মাংসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য তদারকির লক্ষ্যে বাজার অভিযান পরিচালনা করা হবে।
‘উল্লেখ্য ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকাতে অধিদপ্তরের দুইজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে দুটি পৃথক টিম বাজার অভিযান পরিচালনা করবে।’
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ঢাকায় অভিযান চালাবেন ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ঢাকার সহকারী পরিচালক রোজিনা সুলতানা ও অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আবদুস সালাম।
অপ্রয়োজনীয় আমদানি কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেয়া পদক্ষেপের সুফল মিলতে শুরু করেছে। করোনা মহামারি আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের রেশ ধরে বিশ্বব্যাপী তৈরি হয় ডলার সংকট। বিশ্ব বাণিজ্যের বড় অংশই যেহেতু নিয়ন্ত্রণ হয় ডলারে, সেহেতু যুদ্ধ ও করোনা মহামারিকে পুঁজি করে বাড়তে থাকে মুদ্রাটির চাহিদা।
করোনা মহামারি-পরবর্তী বাংলাদেশেও বেড়ে যায় আমদানি চাহিদা। তাতে করে প্রয়োজন বাড়ে ডলারের। ঊর্ধ্বমুখী চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে দফায় দফায় বিক্রি করতে হয়েছে ডলার। ফলে দুই বছরের ব্যবধানে রিজার্ভ নেমে আসে প্রায় অর্ধেকে।
তবে ডলার সংকট কিংবা রিজার্ভ কমে যাওয়ার দুশ্চিন্তা থেকে ধীরে ধীরে সরে আসছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। বিশেষ করে গভর্নর হিসেবে আবদুর রউফ তালুকদার দায়িত্ব নেয়ার পরই অপ্রয়োজনীয় আমদানি কমাতে নেয়া হয় বেশ কিছু পদক্ষেপ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিজ্ঞপ্তি জারি করে বিলাসি পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করে নির্দেশনা দেয় ব্যাংকগুলোকে। সেসব পদক্ষেপের সুফল মিলতে শুরু করেছে। আমদানি ও রপ্তানির ঘাটতি পূরণে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে তাদের নেয়া পদক্ষেপ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের চার মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে প্রায় ৬০ শতাংশ।
ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য বলছে, গেল চার মাসে বাণিজ্য ঘাটতি কমে হয়েছে ৩৮০ কোটি ৯০ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিলো ৯৬২ কোটি ৪০ লাখ ডলার। অর্থাৎ বছরের চার মাসের হিসাবে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ৬০ দশমিক ৫০ শতাংশ।
তবে অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে বাণিজ্য ঘাটতি, ১৮২ কোটি ডলার। অতি প্রয়োজনীয় জ্বালানি ও সার আমদানির প্রভাবে এটা বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাণিজ্য ঘাটতি কমার ক্ষেত্রে বড় অবদান রেখেছে আমদানি নিয়ন্ত্রণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে দেশে মোট আমদানি হয়েছে ২ হাজার ২৬ কোটি ৯০ লাখ ডলারের পণ্য। আগের অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরে তা ছিলো ২ হাজার ৫৫১ কোটি ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে চার মাসে আমদানি কমেছে ২০ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
অন্যদিকে একই সময়ে রপ্তানি থেকে মোট আয় এসেছে ১ হাজার ৬৪৬ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ছিলো ১ হাজার ৫৮৮ কোটি ডলার। অর্থাৎ রপ্তানিতে বড় কোনো প্রবৃদ্ধি না হলেও বেড়েছে প্রায় ৩ দশমিক ৬১ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রপ্তানি বাড়ানো গেলে বাণিজ্য ঘাটতি আরও কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অপ্রয়োজনীয় আমদানি কমাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি কোনো আমদানিকারক যেন পণ্যের বাড়তি দাম দেখিয়ে আমদানি করতে না পারে সেদিকেও রয়েছে কঠোর নজরদারি।
‘প্রতিটি ব্যাংককে আমরা সতর্কতার সঙ্গে আমদানির ঋণপত্র খুলতে বলেছি। আমদানিতে যেন কোনোভাবেই কোনো মিথ্যা তথ্য না আসে সেদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর নজরদারি করছে। শুধু তাই নয়, আমদানির আড়ালে যেন কোনোভাবেই অর্থ পাচার না হয় সেদিকেও আমাদের নজরদারি রয়েছে।’
তিনি জানান, বর্তমানে বিশ্ববাজারে আমদানি পণ্যের দাম কিছুটা কমেছে। এছাড়া দাম বাড়তি মনে হলে তা সঙ্গে সঙ্গে থামিয়ে দেয়া হচ্ছে। এজন্য আমদানি কিছুটা কমে এসেছে।
আমদানি কমানোর প্রবণতা অব্যাহত থাকবে কিনা- এমন প্রশ্নে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা কোনো ভুল দামে পণ্য আমদানি করতে দেবে না। আমার মনে হয় এতে আমদানি ও রপ্তানির মধ্যে ঘাটতি কমে আসবে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে সার্বিক বাণিজ্য ঘাটতি কমে ৩ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এটা ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে ছিলো ১ হাজার ৭১৫ কোটি ডলার বা ১৭ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার।
রেকর্ড পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতি দেখা যায় ২০২০-২১ অর্থবছরে। করোনা মহামারি শুরুর প্রথম বছরে বাণিজ্য ঘাটতি সব রেকর্ড ভেঙে ছাড়িয়ে যায় ৩ হাজার ৩২৫ কোটি ডলারের ঘর। সে হিসাবে গত অর্থবছরে তার আগের বছরের চেয়ে প্রায় অর্ধেক হয় বাণিজ্য ঘাটতি। চলতি অর্থবছর শেষে তা আরও কমে আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। তবে এর প্রভাবে যেন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি কমে না আসে সেদিকে নজর দেয়ার পরামর্শ তাদের।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও দ্য ইনস্টিটিউট অফ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট অফ বাংলাদেশের (আইসিএবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদ হোসেন এফসিএ বলেন, ‘রিজার্ভের কথা চিন্তা করে আমদানি কমিয়ে আনতে হবে; সেটা ধীরে ধীরে হচ্ছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে রপ্তানিকারকরা কাঁচামাল আমদানি করতে না পারলে রপ্তানিও কমে আসবে।’
তার পরামর্শ, আমদানির আড়ালে যেন অর্থ পাচার না হয় সেদিকে নজরদারি বাড়াতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ল্যান্ড ডেভেলপার, বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা হাউজিং জিতল মর্যাদাপূর্ণ ‘ওয়ার্ল্ড বিজনেস আউটলুক অ্যাওয়ার্ড ২০২৩’। এই পুরস্কার প্রাপ্তির মাধ্যমে বসুন্ধরা হাউজিং বাংলাদেশের সবচেয়ে উদ্ভাবনী ল্যান্ড ডেভেলপার কোম্পানি হিসেবে স্বীকৃতি পেল যা রিয়েল এস্টেট সেক্টরের জন্য নতুন একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
গত ২৫ নভেম্বর থাইল্যান্ডের ব্যাংককের কুইন্স পার্কের ম্যারিয়ট মারকুইস-এ পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
এই পুরস্কারটি ডিপার্টমেন্ট অফ ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড প্রমোশন (ডিআইটিপি) থেকে তুলে দেন নাটিয়া সুচিন্দা এবং পুরস্কারটি গ্রহণ করেন জনাব বিদ্যুৎ কুমার ভৌমিক, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিভাগীয় প্রধান (বিক্রয় ও বিপণন), বসুন্ধরা গ্রুপ।
এই পুরস্কারটি একটি আধুনিক এবং গতিশীল জীবনযাত্রার পরিবেশ তৈরির জন্য বসুন্ধরা হাউজিং-এর অবদানকে তুলে ধরে, যা ঢাকায় প্রথম পরিকল্পিত এবং একমাত্র রাজউক-অনুমোদিত আধুনিক স্মার্ট সিটি।
মন্তব্য