তুরস্কের ইজমির শহরে ভূমিকম্পে ধসে পড়া ভবনের নিচ থেকে এক মা ও তার তিন শিশু সন্তানকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেছে উদ্ধারকর্মীরা।
শনিবার বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় ১৮ ঘণ্টা ধ্বংসস্তুপের নিচে আটকে ছিলেন তারা।
এদের মধ্যে একটি শিশু হাসপাতলে নেয়ার পর মারা গেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফাহরেতিন কোকা।
তাকে নিয়ে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৩৭ এ। এদের মধ্যে ৩৫ জন তুরস্কের ও ২ জন গ্রিসের।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ওই মায়ের চতুর্থ সন্তানকে উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছিলেন উদ্ধারকর্মীরা।
উদ্ধারকর্মীদের প্রসংশা করে এ ঘটনাকে ‘মিরাকল’ হিসেবে অভিহিত করেছেন ইজমিরের মেয়র টাঙ্ক সয়ের। তিনি জানান, ধবংসস্তুপে আরও অন্তত ১৮০ জন চাপা পড়ে আছে।
তুরস্কের দুর্যোগ বিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, বিভিন্ন ধ্বংসস্তুপ থেকে এ পর্যন্ত ১০০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। ভূমিকম্পে আহত হয়েছে ৮০৪ জন।
স্থানীয় সময় শুক্রবার দুপুরে তুরস্কের ইজিয়ান সাগরে একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭।
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ২৮ জন নিহত ও ৮৯ জন আহত হয়েছেন।
এ নিয়ে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ৫৫০ জনে।
তুরস্কের বার্তা সংস্থা ‘আনাদোলু’ রোববার এ খবর জানায়।
অবরুদ্ধ গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে আনাদোলুর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় আরও ২৮ জন নিহত হয়। এর ফলে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৬ হাজার ৫৫০ জনে দাঁড়িয়েছে।
হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত আগ্রাসনে ৮৯ জন আহত হয়, তবে অনেকে এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। কারণ, উদ্ধারকর্মীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গাজায় ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিখোঁজ রয়েছে।
উপত্যকায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল প্রাণঘাতী হামলা অব্যাহত রেখেছে।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে ভয়াবহ দাবানলে মঙ্গলবার পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির কিছুটা পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে।
দাবানলে এখন পর্যন্ত মারা গেছে অন্তত ১১ জন। ধ্বংস হয়েছে ১০ হাজারেরও বেশি বিলাসবহুল বাড়ি ও অবকাঠমো।
এক লাখ ৮০ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে ১৫০ বিলিয়নেরও বেশি ডলারের।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ এ দাবানলের মধ্যেই চলছে লুটতরাজ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্যালিসেইডস ও ইটন অঞ্চলে জারি করা হয়েছে কারফিউ।
নিউইয়র্ক থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
গত চার দিন ধরে দাউ দাউ করে জ্বলছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস। গোটা শহর যেন নরকে পরিণত হয়েছে।
কয়েকটি জায়গায় দাবানল কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও পরিস্থিতি এখনও ভয়াবহ।
ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ এ দাবানলে বেশ কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছেন। ধ্বংস হয়ে গেছে ১০ হাজারেরও বেশি বাড়িঘর।
এখনও বাসিন্দাদের সরানো হচ্ছে নিরাপদ স্থানে।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, দাবানলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পূর্বের রেকর্ড ছাড়াবে।
আগুন নেভাতে জীবন বাজি রেখে কাজ করে যাচ্ছেন ফায়ারফাইটাররা। টানা কাজের কারণে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তবুও স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্ধারে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
অভিজাত প্যাসিফিক প্যালিসেডস এলাকায় পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া বাড়িঘরগুলোতে লোকজনকে ফিরতে দেখা গেছে। অনেকে পোড়া বাড়িঘর দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
বিপদের মধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বাড়িঘরে চলছে লুটপাট। এরই মধ্যে ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্যাসিফিক প্যালিসেইডস ও ইটনসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় কারফিউ জারি করেছে কর্তৃপক্ষ। ন্যাশনাল গার্ডও মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে হেলিকপ্টারে পানি ছিটানো হচ্ছে।
স্থানীয় সময় শুক্রবার জুমার নামাজের পর লস অ্যাঞ্জেলেসে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটি মসজিদে বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেয়।
ওই দিন টেক্সাস, ওকলাহোমা, নর্থ ক্যারোলিনা ও জর্জিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বাতিল হয়ে যায় স্কুলের কার্যক্রম।
এমন পরিস্থিতিতে লাখ লাখ শিশুকে ঘরে বসেই অনলাইনে ক্লাস করতে হচ্ছে। বিভিন্ন অঞ্চলের অফিস-আদালতও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বৈরি আবহাওয়ার কারণে শার্লোট, ডালাস-ফোর্ট বিমানবন্দরে বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।
এদিকে আবহাওয়া অফিস জরুরি প্রয়োজন ছাড়া দুর্যোগের শিকার এলাকার বাসিন্দাদের ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
আরও পড়ুন:নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই শনিবার বলেছেন, তিনি তার জন্মভূমি পাকিস্তানে ফিরে আসতে পেরে ‘অভিভূত’ ও ‘আনন্দিত’।
ইসলামি বিশ্বে নারী শিক্ষাবিষয়ক বিশ্বব্যাপী এক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে তিনি এখন পাকিস্তানে অবস্থান করছেন।
ইসলামাবাদ থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, ২০১২ সালে স্কুলছাত্রী মালালাকে পাকিস্তানি তালেবানরা গুলি করে এবং এরপর তিনি বিদেশে চলে যান। বিদেশে যাওয়ার পর মাত্র কয়েকবার তিনি দেশে আসেন।
রাজধানী ইসলামাবাদে সম্মেলনে পৌঁছে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানে ফিরে আসতে পেরে আমি সত্যিই সম্মানিত, অভিভূত ও আনন্দিত।’
প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ দুই দিনব্যাপী এ শীর্ষ সম্মেলন উদ্বোধন করেন শনিবার সকালে। এতে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর প্রতিনিধিরা একত্রিত হবেন।
স্থানীয় সময় রোববার ইউসুফজাইয়ের সম্মেলনে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম এক্সে শুক্রবার তিনি বলেন, ‘আমি সকল মেয়ের স্কুলে যাওয়ার অধিকার রক্ষার বিষয়ে কথা বলব। আফগান নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য কেন তালেবান নেতাদের জবাবদিহি করতে হবে, সে ব্যাপারেও বলব।'
দেশটির শিক্ষামন্ত্রী খালিদ মকবুল সিদ্দিকী এএফপিকে জানান, আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে এ সম্মেলনে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তালেবান ইসলামাবাদের এ আমন্ত্রণে কোনো সাড়া দেয়নি।
আফগানিস্তান বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেখানে মেয়ে ও নারীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যেতে বাধা দেওয়া হয়। ২০২১ সালে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে তালেবান সরকার আফগানিস্তানে কঠোরভাবে ইসলামী আইন আরোপ করেছে। জাতিসংঘ একে ‘লিঙ্গ বর্ণবাদ’ বলে অভিহিত করেছে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, পাকিস্তান তীব্র শিক্ষা সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে। দেশটিতে দুই কোটি ৬০ লাখের বেশি শিশু স্কুলের বাইরে রয়েছে। তাদের অধিকাংশই দারিদ্র্যের কারণে স্কুলে ভর্তি হওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
প্রত্যন্ত সোয়াত উপত্যকার একটি স্কুল বাসে ২০১২ সালে পাকিস্তান তালেবান জঙ্গিদের হামলার পর ইউসুফজাই বিশ্বব্যাপী পরিচিত হয়ে ওঠেন। এরপর তাকে যুক্তরাজ্যে পাঠানো হয়।
পরবর্তী সময়ে তিনি নারী শিক্ষার জন্য বিশ্বব্যাপী প্রবক্তা হয়ে ওঠেন। ১৭ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী হন তিনি।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে ভয়াবহ দাবানলে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ১০ জনে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।
আগুনে ১০ হাজার ঘরবাড়ি, অন্যান্য ভবন ও অবকাঠামো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল নিয়ে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাটিক পার্টির গভর্নরের সঙ্গে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন।
পানি সংকটের জন্য ক্যালিফোর্নিয়া প্রশাসনের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প।
আলাদা ছয়টি দাবানলের মধ্যে অনেকগুলোই নিয়ন্ত্রণের পুরোপুরি বাইরে চলে গেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। তীব্র বাতাস, শুষ্ক আবহাওয়া এবং পানির চাপ কম থাকায় আগুন নেভাতে হিমশিম খাচ্ছেন ফায়ারফাইটাররা।
আগুনের তীব্রতা দেখে তা নিয়ন্ত্রণ করার বদলে সাধারণ মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছেন ফায়ারফাইটাররা। ফলে হতাহতের সংখ্যা বেশ কম হয়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের ফায়ার সার্ভিসের প্রধান অ্যান্থনি ম্যারন বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আগুন নেভাতে যুক্তরাষ্ট্রের আরও ছয় অঙ্গরাজ্য থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ক্যালিফোর্নিয়ায় আনা হয়েছে। আগুন নেভানোর কাজে নতুন সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে পানি।
তিনি আরও বলেন, প্যাসিফিক প্যালিসেইডস এলাকার কিছু আগুন নেভানোর জন্য পানি সরবরাহের হাইড্রেন্ট শুকিয়ে গেছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের দুই লাখেরও বেশি বাসিন্দাকে নিরাপদে সরে যেতে বলা হয়েছে।
স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যায় আগুন দেখা যায় চলচ্চিত্র জগতের তীর্থস্থান হলিউডে। আগুনে হলিউডের বেশ কয়েকজন তারকার বাড়ি পুড়ে যায়।
বিখ্যাত হলিউড সাইনবোর্ডটির বেশ কাছাকাছি আগুনের শিখা দেখতে পেয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন লস অ্যাঞ্জেলেসের মূল শহরের বাসিন্দারা। এ এলাকায় বেশির ভাগ বাংলাদেশির বসবাস।
এ পর্যন্ত তারা নিরাপদে আছেন বলে খবর পাওয়া যায়।
আগুনে ভস্মীভূত বাড়িঘরে লুটপাট করার খবরও পাওয়া যায়।
এ চরম সংকটেও যারা লুটপাট করছে তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন লস অ্যাঞ্জেলেসের পুলিশ কর্মকর্তা ক্যাথরিন বার্গারবলেন।
লুটপাটের ঘটনায় এরই মধ্যে ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আগুনে এ পর্যন্ত লস অ্যাঞ্জেলেসে প্রায় দুই হাজার অবকাঠামো ধ্বংস হয়। এর মধ্যে শত কোটি ডলারের বাড়িও রয়েছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অন্তত সাড়ে তিন লাখ বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।
দাবানলে এ পর্যন্ত ৫০ বিলিয়ন বা ৫ হাজার কোটি ডলারের বেশি সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়েছে।
এদিকে হোয়াইট হাউসে এক ব্রিফিংয়ে বিশেষ ফেডারেল ফান্ড থেকে দাবানলে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। দাবানলের কারণে তিনি বাতিল করেন ইতালি সফর।
আগুনের দাহ থেকে বের হওয়া সূক্ষ্ম কণা অনেক দূর পর্যন্ত যেতে পারে। আগুনের এসব কণা ফুসফুস এমনকি ধমনিতে পর্যন্ত প্রবেশ করে যে কাউকে মারাত্মক অসুস্থ করে দিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
গত কয়েক দিনের তুলনায় বাতাসের গতিবেগ কম হওয়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণ কিছুটা সহজ হবে বলে মনে করছেন দমকলকর্মীরা। তবে পানি সংকট নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়া প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ জানিয়েছেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানলে অন্তত পাঁচজনের প্রাণহানি হয়েছে। আরও প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আহত বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে বুধবার জানিয়েছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।
ফায়ারফাইটাররা অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার উত্তরাঞ্চলের আলটাডেনার শহরতলীর ১০ হাজার ৬০০ একর এলাকা আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর লস অ্যাঞ্জেলেসের প্রায় দেড় হাজার ভবন আগুনে পুড়ে গেছে। প্রায় ১ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
লস অ্যাঞ্জেলেসের শেরিফ রবার্ট লুনা জানান, এ পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আরও প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
লস অ্যাঞ্জেলেস ফায়ার সার্ভিসের প্রধান অ্যান্থনি ম্যারোনি জানান, পালিসেডস ও ইটন এলাকায় দুটি দাবানলে সাত হাজারের বেশি এলাকা পুড়ে যায়। পালিসেডসের আগুনে বিপুলসংখ্যক মানুষ আহত হন।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ ড্যানিয়েল সোয়াইন জানান, প্রবল বাতাসের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
ম্যারোনি জানান, ২৪ ঘণ্টা পার হলেও দাবানল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তো আসেইনি, এর আরও অবনতি হয়েছে। এরই মধ্যে এক হাজারেরও বেশি বাড়িঘর আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
এমন পরিস্থিতিতে লোকজন বাড়ি, গাড়ি ফেলেই নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা এ পরিস্থিতিকে হলিউডের সিনেমার দৃশ্যের সঙ্গে তুলনা করছেন।
আগুন নেভাতে ১ হাজার ৪০০ ফায়ারফাইটার কাজ করছেন। অত্যাধুনিক সরঞ্জাম দিয়েও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না।
প্যাসিফিক পলিসেডস এলাকায় জেনিফার অ্যানিস্টোন, ব্রাডলি কুপার, টম হ্যাঙ্কস, রিজ উইদারস্পুন, অ্যাডাম স্যান্ডেলার, মাইকেল কিটনসহ অনেক হলিউড তারকার বাড়ি রয়েছে।
ছড়িয়ে পড়া দাবানলে মঙ্গলবার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দুই হাজার ৯০০ একরেরও বেশি এলাকা পুড়ে যায়। কর্তৃপক্ষ রাজ্যজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয় এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যে তা চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। এতে অসংখ্য বাড়িঘর পুড়ে যায় এবং তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
কর্তৃপক্ষ ৩০ হাজার মানুষকে অন্যত্র সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছে ১৩ হাজার ভবন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সান্তা মনিকা ও মালাবু উপকূলীয় শহরগুলোর মধ্যে প্যাসিফিক প্যালিসেডস এলাকায় কমপক্ষে ২ হাজার ৯২১ একর পুড়ে যায়। এরই মধ্যে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
ওই এলাকার বাসিন্দা মার্টিন স্যানসিং জানান, গত ২০ বছরের মধ্যে দাবানলের এমন ভয়াবহতা আর কখনও দেখেননি।
কয়েকটি ছবিতে দেখা যায়, দাবানল ছড়িয়ে পড়া এলাকাগুলোতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। চারপাশ কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে আছে।
ছবিতে আরও দেখা যায়, অগ্নিনির্বাপণ কর্মীরা বিশেষ ব্যবস্থায় সমুদ্র থেকে পানি এনে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন। আগুনের শিখা বাড়িঘরকে ক্রমাগত গ্রাস করছে। বুলডোজারগুলো রাস্তা থেকে পরিত্যক্ত যানবাহনগুলোকে সরিয়ে নিচ্ছে।
এদিকে লস অ্যাঞ্জেলেসের ফায়ার সার্ভিস বিভাগ ছুটিতে থাকা কর্মীদের কাজে যোগ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
দাবানল ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ক্যালিফোর্নিয়ার ১৫ লাখ মানুষ বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে।
আরও পড়ুন:চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ শিজাংয়ে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে ৫৩ জন নিহত ও ৬২ জন আহত হয়েছেন।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ৯টা ৫ মিনিটে জিগাজে শহরের ডিংরি কাউন্টিতে ভূমিকম্প আঘাত হানে।
চীনের বার্তা সংস্থা সিনহুয়া হতাহতের সংখ্যাটি নিশ্চিত করে খবর প্রকাশ করেছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানায়, ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ১। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে। তবে চীনা কর্তৃপক্ষ মাত্রা ৬ দশমিক ৮ বলে জানায়।
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল তিব্বত অঞ্চলে, যেখানে ভারত ও ইউরেশিয়া টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষের ফলে ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তন ঘটে। এটি হিমালয়ের শৃঙ্গগুলোর উচ্চতাকেও প্রভাবিত করেছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম সিসিটিভি জানায়, ভূমিকম্পের উপকেন্দ্রের আশপাশের গড় উচ্চতা প্রায় ৪ হাজার ২০০ মিটার (১৩ হাজার ৮০০ ফুট)। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের চারপাশের ৫ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা বেশ কয়েকটি ছোট ছোট সম্প্রদায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এটি তিব্বতের রাজধানী লাসা থেকে প্রায় ৩৮০ কিলোমিটার (২৪০ মাইল) এবং এই অঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর জিগাজে থেকে ২৩ কিলোমিটার (১৪ মাইল) দূরে অবস্থিত।
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে ভূমিকম্পে বাসিন্দারা চমকে উঠেন। তারা তাদের বাড়িঘর থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হন। তবে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের কাছাকাছি দুর্গম পার্বত্য অঞ্চল থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানায়, গত ১০০ বছরে এ অঞ্চলে ৬ বা তারও বেশি মাত্রার ১০টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।
আরও পড়ুন:কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর বিরুদ্ধে তার নিজের দল লিবারেল পার্টিতে ক্ষোভ দানা বেঁধে উঠেছে। এর ফলে তিনি যেকোনো দিন দলের নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিতে পারেন বলে রোববার জানিয়েছে ‘দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেইল’।
লিবারেল পার্টির অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত আছেন এমন তিনটি অসমর্থিত সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে রোববার‘ দ্য গ্লোব’ জানায়, পদত্যাগের ঘোষণা দিতে পারেন ট্রুডো।
দ্য গ্লোবের সূত্রে জানা যায়, বুধবার লিবারেল পার্টির জাতীয় সম্মেলনের আগেই এ ঘোষণা আসবে।
দ্য গ্লোব আরও জানায়, পদত্যাগের পরও ট্রুডো অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ চালিয়ে যাবেন কি না, তা নিশ্চিত নয়। তাৎক্ষণিকভাবে নতুন কাউকে নেতৃত্ব দেওয়ার বিকল্পটিও রয়েছে লিবারেল পার্টির সামনে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ট্রুডোর জনপ্রিয়তা অনেক কমে এসেছে। তার সরকার কয়েক দফা অনাস্থা ভোট কোনোমতে এড়াতে সক্ষম হলেও সমালোচকরা তাকে একাধিকবার পদ ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
২০২৫ সালের অক্টোবরের নির্বাচন পর্যন্ত দলের নেতৃত্বে থাকার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন ট্রুডো। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত চাপের মুখে পড়েছেন তিনি, যা তাকে আরও বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে।
ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, ক্ষমতা গ্রহণ করেই কানাডার পণ্য আমদানির ওপর বাড়তি ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন।
ট্রাম্পের এই হুমকির বিরুদ্ধে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে, সে বিষয়ে মতভেদের জেরে ডিসেম্বরে পদত্যাগ করেন উপপ্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড। এটাই ট্রুডোর মন্ত্রিসভায় প্রথম ‘প্রকাশ্য’ বিদ্রোহের ঘটনা।
এ ঘটনার পর ট্রুডো মন্ত্রিসভায় বড় পরিবর্তন আনেন। তিন ভাগের এক ভাগ মন্ত্রী পরিবর্তন করে রাজনৈতিক অস্থিরতা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি।
এর আগে নভেম্বরে ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের বিলাসবহুল বাড়ি মার-এ লাগোয় বৈঠক ও নৈশভোজে যোগ দেন ট্রুডো । কিন্তু এতে তেমন কোনো কাজ হয়নি। এরপরও গণমাধ্যমে ট্রুডোকে নিয়ে অপমানজনক বক্তব্য দিয়ে গেছেন ট্রাম্প। তাকে কানাডার ‘গভর্নর বলে আখ্যায়িত করেন তিনি।
কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টিকে ‘চমৎকার পদক্ষেপ’ বলেও অভিহিত করেন ট্রাম্প।
২০১৫ সালে ক্ষমতায় আসেন ট্রুডো। একসময়ের অসম্ভব জনপ্রিয় এ নেতা এখন কনজারভেটিভ পার্টির পিয়েরে পোইলিভ্রের চেয়ে ২০ জনমত পয়েন্টে পিছিয়ে আছেন।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার প্রথম দুই মেয়াদে তিনি সিনেটের সংস্কার আনেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেন এবং কানাডার গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনে কার্বন ট্যাক্স চালু করেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য