আগামী মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেবেন, তখন তারা ভোট দিয়ে এমন কিছু লোককে জেতাবেন, যাদের নাম তারা নিজেরাই শোনেননি, বা যাদের তারা চোখে দেখেননি। তারা ভোট দিয়ে জয়ী করবেন হ্যাগনার মিস্টার অথবা রেক্স টেটার নামের কিছু লোককে।
কারা এরা?
হ্যাগনার মিস্টার ২০০১ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের কৃষিমন্ত্রী। আর টেটার হলেন টেক্সাসের এক ধর্মপ্রচারক। এরা দুজনেই ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ছিলেন ইলেকটোরাল কলেজের সদস্য। এদেরকে যারা নির্বাচিত করেছেন, সেই সাধারণ ভোটারদের বেশিরভাগেরই ধারণা ছিল না, এরা কারা।
তাহলে কেন এদেরকে সাধারণ ভোটাররা নির্বাচিত করলেন?
এখানেই আসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জটিল পদ্ধতির বিষয়টি। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ সরাসরি প্রেসিডেন্টকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন না। তারা নির্বাচিত করেন ইলেকটোরাল কলেজ সদস্যদের। এই কলেজ সদস্যরাই নিজেরা প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট বেছে নেন।
অঙ্গরাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলো বেছে নেন ইলেকটোরাল কলেজের প্রার্থীদের। নির্বাচনের দিনের পর বৈঠকে বসে ইলেকটোরাল কলেজের বিজয়ী সদস্যরা প্রেসিডেন্টকে নির্বাচিত করেন।
তাহলে ভোটররা যে ব্যালটে সিল মারেন, সেখানে কার নাম থাকে? প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের নাকি ইলেকটোরাল কলেজের প্রার্থীদের?
ভোটাররা ব্যালটে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের নাম দেখতে পান বটে, তবে তারা আসলে ওইসব প্রার্থীদের ভোট দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ইলেকটরদের নির্বাচিত করেন। যেমন হ্যাগনার মিস্টার ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটনকে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। আর টেটার ওই বছর প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে।
প্রত্যক্ষ ভোটাভুটির ব্যবস্থা না করে যুক্তরাষ্ট্র ইলেকটোরাল কলেজ নামক এরকম জটিল একটি পদ্ধতি চালু করল কেন?
বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইউনিভার্সিটি অব লুইসভিল ম্যাককোনেল সেন্টারের পরিচালক গ্যারি গ্রেগ বলেন, ইলেকটোরাল কলেজ ব্যাখ্যা করা আসলে কঠিন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল কলেজ সদস্যের সংখ্যা হয় প্রতিনিধি পরিষদে ওই অঙ্গরাজ্যের যতজন সদস্য নির্বাচিত হন, সেই সংখ্যার সঙ্গে দুই যোগ। কারণ প্রতি অঙ্গরাজ্যে দুজন করে সিনেটর থাকেন।
আমেরিকার সংবিধান যারা রচনা করেছেন, তারা প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার মধ্যে একটি ভারসাম্য আনার কথা ভেবেছেন গোড়া থেকে। তারা চেয়েছেন, কোনো কাজ সমাধার জন্যে প্রেসিডেন্টের যাতে নির্বাহী ক্ষমতাও থাকে, আবার একই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট হন একজন জনপ্রতিনিধি, যাতে পদটি স্বৈরতান্ত্রিক হয়ে না ওঠে।
আমেরিকা নামক দেশটির যখন যাত্রা শুরু হয়, তখন এর একেক অঙ্গরাজ্যের জনগোষ্ঠীর স্বার্থ ও মনোভাব ছিল একেক রকম। কারো সঙ্গে কারো মিল বা যোগাযোগ খুব একটা ছিল না। আজকের দিনের মতো যোগাযোগের উপকরণও ছিল না তখন। সকলের কাছে পরিচিত, গ্রহণযোগ্য একজন একক প্রার্থী বেছে নেওয়ার মতো রাজনৈতিক দলীয় ব্যবস্থাও তখন গড়ে ওঠেনি। সেসময় যদি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের ব্যবস্থা চালু করা হতো, সেটা হতো এক বিশৃঙ্খল ব্যবস্থা। নির্বাচন হলে বহু প্রার্থী শেষনাগাদ এতো কাছাকাছি ভোট পেতো যে প্রেসিডেন্ট কে হবেন সেই সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত নিতে হতো পার্লামেন্ট বা প্রতিনিধি পরিষদকেই।
এই সমস্যা কাটাতে অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে যে রফা হয়, সেটারই ফসল ইলেকটোরাল কলেজ। আর এ কারণে কংগ্রেসের প্রতিনিধিত্বের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়েছে একেক অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল কলেজের সদস্য সংখ্যা।
অঙ্গরাজ্যের জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে প্রতিনিধি পরিষদ সদস্য দেওয়া হয়েছে। তবে সিনেটের ক্ষেত্রে সব অঙ্গরাজ্য সমান দুজন করে সদস্য পেয়েছেন।
ইলেকটোরাল ভোট কেন একদিকে যায়
একেক অঙ্গরাজ্যে ইলেকটোরাল কলেজের সব ভোট একজন প্রার্থীর পক্ষে পড়ে। যে দল সেই অঙ্গরাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ ইলেকটোরাল আসন জিতেছেন, সেই অঙ্গরাজ্যের সবগুলো ইলেকটোরাল ভোট সেই দলের প্রার্থী পান, তা তারা অল্প ব্যবধানেই জিতুন আর হাজার হাজার বেশি ভোট পেয়েই জিতুন। কেবল নেব্রাসকা এবং মেইন একাধিক প্রার্থীর ইলেকটোরাল সমর্থন অনুমোদন করে।
ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস অ্যামহার্সটের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক আমেল আহমেদ এই ব্যবস্থাকে বেসবল ওয়ার্ল্ড সিরিজের সঙ্গে তুলনা করেছন। তিনি বলেন, ‘যে দল সিরিজে জয়লাভ করে, সেই দলই যে সবচেয়ে বেশি রান করবে এমন না। যে দল সবচেয়ে বেশি গেম জেতে, সেই জয়ী হয়।‘
আহমেদ বলেন, এই ব্যবস্থার ফলে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য, অর্থাৎ যে অঙ্গরাজ্যগুলো একেক বার একেক দলের দিকে ঝোঁকে, সেগুলো প্রার্থীদের ওপর বিপুল প্রভাব রাখতে পারে।
গত ৭০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে যেসব নির্বাচন হয়েছে, তার প্রতিটিই হয়েছে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। এ কারণে একবার রিপাবলিকান প্রার্থী জিতেছেন, তো আরেকবার জিতেছেন ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী। এ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই প্রমাণ করে, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ব্যবস্থা যতো জটিলই হোক, সেটা কার্যকরী।
নির্বাচনের পথরেখা
৩ নভেম্বরের ভোটাভুটিতে আসলে প্রেসিডেন্ট নন, নির্বাচিত হন ইলেকটোরাল কলেজের প্রার্থীরা। ডিসেম্বরে তারা নিজ নিজ অঙ্গরাজ্যে সভায় বসেন প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে ভোট দিতে। এই ভোটাভুটির ফলাফল পাঠানো হয় সিনেটের প্রেসিডেন্টের কাছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্টই সিনেটের প্রেসিডেন্ট।
জানুয়ারি মাসের শুরুর দিকে কংগ্রেস বসে ভোট গণনা করে। এরপর সিনেটের প্রেসিডেন্ট পদে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করেন। ২০ জানুয়ারি দুপুরে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট তার দায়িত্বে শপথ নেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টে পরিণত হন।
সৌদি আরবের যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমান (এমবিএস) জানিয়েছেন, তার দেশ আগামী চার বছরে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৬০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে চায়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৃহস্পতিবার ফোনালাপে এ পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
ফোনালাপে সৌদি যুবরাজ বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের প্রত্যাশিত সংস্কার ‘অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি’ তৈরি করতে পারে। সৌদি আরব এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে চায়। আরও সুযোগ সৃষ্টি হলে বিনিয়োগের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ) বৃহস্পতিবার সকালে জানায়, দ্বিতীয় দফায় আমেরিকার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ফোনে অভিনন্দন জানিয়েছেন সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ওভাল অফিসে ফিরে আসার জন্য ট্রাম্পকে নিজের এবং বাদশাহ সালমানের অভিনন্দনবার্তা পৌঁছে দেন তিনি।
বিন সালমান বলেন, সৌদি নেতারা আমেরিকার জনগণের আরও অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। ওই সময় ট্রাম্প বাদশাহ সালমান ও যুবরাজকে ধন্যবাদ জানান এবং উভয় দেশের সাধারণ স্বার্থে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
যুবরাজ এমবিএস ২০১৮ সালে বলেছিলেন, ‘অস্ত্র সরঞ্জামের একটি অংশ সৌদি আরবে তৈরি হবে। এ উদ্যোগ আমেরিকা ও সৌদি আরবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।
‘উভয় দেশের জন্য ভালো বাণিজ্য, ভালো সুবিধা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে আসবে। পাশাপাশি এটি আমাদের নিরাপত্তাকে সহায়তা করবে।’
ট্রাম্পের নতুন মেয়াদেও নিজেদের মধ্যে এ সহযোগিতা ধরে রাখতে চান তিনি।
প্রথম মেয়াদে ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম বিদেশ সফরে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন ট্রাম্প। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে তিনি বাদশাহ সালমান ও যুবরাজ এমবিএসের সঙ্গে রিয়াদে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি তরবারি নৃত্য এবং বিমান বাহিনীর ফ্লাই পাস্টের মাধ্যমে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
সে সময় সৌদি বাদশাহ দেশটির সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘কলার অব আবদুল আজিজ আল সৌদ’-এ ভূষিত করেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টকে।
প্রথম দফার শাসনামলে সৌদি আরবকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি ও নিরাপত্তা অংশীদার’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন দ্বিতীয় দফায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করা ট্রাম্প।
আরও পড়ুন:ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর ধ্বংসস্তূপে পরিণত ভবনের নিচ থেকে ২১২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানায়।
হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, উপত্যকায় ৫ হাজার নারী ও শিশুসহ ১৪ হাজার ২০০ মানুষ এখনও নিখোঁজ।
গাজা সীমান্তের কাছে গত বছরের ৭ অক্টোবর স্বাধীনতাকামী হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলের ভেতরে অনুপ্রবেশ করে কিব্বুৎজ এলাকার বাসিন্দাদের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে বেশ কিছু ইসরায়েলি বাসিন্দাকে হত্যা করেন এবং নারী-পুরুষ ও বয়োবৃদ্ধসহ প্রায় ২৪০ জনকে অপহরণ করেন। সে সময় থেকে মধ্যপ্রাচ্যে আবারও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
একই দিন ইসরায়েল গাজায় সর্বাত্মক অবরোধের ঘোষণা দেয় এবং উপত্যকায় বোমাবর্ষণ শুরু করে।
গত ১৫ জানুয়ারি মধ্যস্থতাকারীরা ঘোষণা দিয়েছিল, ইসরায়েল ও হামাস গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। উভয় পক্ষ বন্দি বিনিময়ও করেছে।
হামাস যোদ্ধারা তিন ইসরায়েলিকে মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে ইসরায়েলও ৯০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয়।
চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম দফায় ৪২ দিনে হামাস ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে ইসরায়েল কয়েক শ ফিলিস্তিনি কারাবন্দিকে মুক্তি দেবে। গত ১৯ জানুয়ারি রোববার থেকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে নতুন করে দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সময় বুধবার ৯ হাজার ৪০০ একরেরও বেশি ভূমি গ্রাস করে ফেলে আগুন।
জোরালো বাতাস ও শুষ্ক ঝোঁপঝাড়ের কারণে খুবই দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে দাবানল। এমন পরিস্থিতিতে ৩১ হাজারেরও বেশি বাসিন্দাকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সিবিএস নিউজের খবরে বলা হয়, স্থানীয় সময় পৌনে ১১টায় লেক হিউজেস রোড থেকে শুরু হয় দাবানল। মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই ৫০০ একর এলাকায় সেটি ছড়িয়ে পড়ে।
ফায়ারফাইটাররা আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। এর আগেও মহানগর এলাকার দুটি বড় দাবানল তারা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছিলেন।
আন্তর্জাতিক একাধিক সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, লস অ্যাঞ্জেলেসে ছড়িয়ে পড়া সবচেয়ে বিধ্বংসী দাবানলের একটি ইয়াটন ফায়ার।
লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির ক্যাসটেইক লেক এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক করে দিয়ে কর্মকর্তারা বলেন, তীব্র শুষ্ক ঝোড়ো বাতাসের কারণে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় ব্যাপক অগ্নিঝুঁকি রয়েছে। এতে নাগরিকদের জন্য শঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত ৩১ হাজার মানুষকে বাধ্যতামূলকভাবে দাবানল এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আরও ২১ হাজারকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। তাদেরও নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়া লাগতে পারে।
গেল ৯ মাসে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় উল্লেখযোগ্য বৃষ্টি হয়নি। এতে পুরো অঞ্চলটিতে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
আগামী শনিবার থেকে সোমবারের মধ্যে বৃষ্টি হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। সেটি ঘটলে ফায়ারফাইটাররা কিছুটা স্বস্তি পাবেন।
আরও পড়ুন:কানাডীয় পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্কারোপ করলে যেকোনো পরিস্থিতির জবাব দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প খুবই ভালো আলোচক। তিনি তার আলোচনার অংশীদারকে কিছুটা বিভ্রান্তিতে ফেলে দিতে চান।’
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর দ্বিতীয় দিনে বেশ কিছু নির্বাহী আদেশে সই করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এর আগে সোমবার কানাডা ও মেক্সিকান পণ্য আমদানিতে ব্যাপক শুল্কারোপের আভাস দিয়েছেন তিনি, যা আগামী ফেব্রুয়ারি থেকেই কার্যকর হতে পারে।
আন্তর্জাতিক একাধিক সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার অঙ্গীকার করলেও শুল্কারোপের বিষয়ে ধীরে ধীরে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম।
আর ট্রাম্পের সঙ্গে নিয়মিত কথা হয় জানিয়ে ট্রুডো বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের আচরণ অনিশ্চয়তা ডেকে আনে। পরবর্তী আনুষ্ঠানিক আলাপচারিতার অপেক্ষায় থাকুন।’
আমেরিকায় যে সমৃদ্ধির অঙ্গীকার ট্রাম্প করেছেন, সে জন্য কানাডীয় সম্পদের প্রয়োজন হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ট্রুডো বলেন, ‘আমেরিকান অর্থনীতিতে অনেক প্রয়োজনীয় জোগান কানাডা সরবরাহ করে। কাজেই দেশটির অর্থনীতির সমৃদ্ধি ও সম্প্রসারণের জন্য তা অপরিহার্য।’
এদিকে দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা সুরক্ষার অঙ্গীকার করেছেন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম। তবে ট্রাম্পের সঙ্গে সংলাপে বসার কথাও বলেছেন তিনি।
দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেওয়ার পর ট্রাম্পের কিছু পদক্ষেপ আগের মেয়াদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জানিয়ে ক্লাউদিয়া বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে দেশের স্বার্থ সুরক্ষা করব।
‘গতকাল ট্রাম্প যেসব ডিক্রিতে সই করেছেন, সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে আমি বলতে চাই, মেক্সিকোর জনগণ নিশ্চিত থাকতে পারেন, আমরা আমাদের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার সুরক্ষা দেব।’
তিনি যখন এমন অঙ্গীকার করেন, তখন দেশটির পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
ক্লাউদিয়া বলেন, ‘মাথা ঠান্ডা রাখা সবসময় গুরুত্বপূর্ণ।’
গত বছরের অক্টোবরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন মেক্সিকোর এ বামপন্থি নেতা। ক্লাউদিয়া দেশটির প্রথম কোনো নারী প্রেসিডেন্ট।
মেক্সিকান পণ্যে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্কারোপের যে আভাস ট্রাম্প দিয়েছেন, পাল্টা জবাবে আমেরিকান পণ্যে কোনো শুল্ক আরোপের হুমকি তিনি দেননি। ধীরে ধীরে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন ক্লাউদিয়া।
এর আগে মেক্সিকান পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র সরকার শুল্ক আরোপ করলে সমানভাবে জবাব দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন ক্লাউদিয়া ও তার অর্থমন্ত্রী। দেশটির ৮০ শতাংশ রপ্তানির গন্তব্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করেই যুক্তরাষ্ট্রে অনিবন্ধিত অভিবাসীদের শিশুদের জন্মগত নাগরিকত্ব বাতিল করতে একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ট্রাম্পের বিতর্কিত পদক্ষেপটি তাৎক্ষণিকভাবে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ সিদ্ধান্তটি চতুর্দশ সংশোধনীর পর থেকে ১৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রচলিত সাংবিধানিক ব্যাখ্যার বিপরীত।
‘প্রোটেকটিং দ্য মিনিং অ্যান্ড ভ্যালু অব আমেরিকান সিটিজেনশিপ’ শীর্ষক নির্বাহী আদেশে বলা হয়, ২০২৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারির পর যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী শিশুদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না— যদি তাদের মা অবৈধভাবে দেশটিতে থাকেন বা অস্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের জন্য অনুমোদিত হন এবং বাবা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা না হন।
ওভাল অফিসে সোমবার ওই আদেশে সই করার সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘এটি একটি বড় বিষয়। দশকের পর দশক ধরে মানুষ এটা করতে চাইছে।’
তিনি প্রশাসনের আইনি অবস্থানের প্রতি আস্থা প্রকাশ করে বলেন, নীতি রক্ষার জন্য তাদের কাছে ‘খুব ভালো যুক্তি’ রয়েছে।
পদক্ষেপটি চতুর্দশ সংশোধনীর প্রচলিত ব্যাখ্যা থেকে একটি উল্লেখযোগ্য বিচ্যুতি হিসেবে ধরা হয়। এর মাধ্যমে নিশ্চয়তা দেওয়া হয় যে ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী বা নাগরিকত্বপ্রাপ্ত সমস্ত ব্যক্তিই’ নাগরিক।
আইন বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে ধারাটিকে পিতা-মাতার মর্যাদা নির্বিশেষে জন্মগত নাগরিকত্বের ভিত্তি হিসেবে সমর্থন করে আসছেন।
আরও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে সিরিয়ার নতুন নেতা আহমেদ আল-শারা বলেছেন, ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনবেন বলে বিশ্বাস করেন তিনি।
দামেস্ক থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
শারা প্রশাসনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা আত্মবিশ্বাসী যে তিনিই (ট্রাম্প) মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি এবং এ অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার নেতা।
‘আমরা সংলাপ এবং বোঝাপড়ার ভিত্তিতে আমাদের দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত করার জন্য উন্মুখ।’
শারার ইসলামপন্থি গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) ৮ ডিসেম্বর বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিদ্রোহী অভিযানের নেতৃত্ব দেয়।
১৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা ধ্বংসাত্মক সংঘাতের পর দেশ পুনর্গঠনে সহায়তা করার জন্য সিরিয়ার নতুন নেতারা আর্থিক সহায়তা চাইছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো এবং সিরিয়ার প্রতিবেশীরাও নতুন শাসকের প্রতি ‘সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থা’ মোকাবিলার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছে।
ওয়াশিংটন-সমর্থিত সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) ২০১৯ সালে সিরিয়া থেকে ইসলামিক স্টেট (আইএস) গোষ্ঠীর জিহাদিদের বিতাড়িত করার সামরিক অভিযানের নেতৃত্ব দেয় এবং হাজার হাজার সন্দেহভাজন জঙ্গি ও তাদের আত্মীয়দের বন্দি রাখা বেশ কিছু কারাগার ও শিবিরের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
জিহাদি-বিরোধী জোটের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র উত্তর সিরিয়ায় সেনা মোতায়েন বজায় রেখেছে।
আরও পড়ুন:দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করার প্রথম দিনেই ক্যাপিটল ভবনে দাঙ্গার ঘটনায় অভিযুক্ত দেড় হাজারের বেশি আসামির সবাইকে ক্ষমা বা দায়মুক্তি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল ভবনে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির দাঙ্গার সঙ্গে জড়িত ছিল ক্ষমাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। এমনকি তারা রাষ্ট্রদ্রোহী ষড়যন্ত্র এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের ওপর আক্রমণ করার জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন।
পদক্ষেপটি ক্যাপিটলে হামলার পর বিস্তৃত বিচারিক কার্যক্রমকে কার্যকরভাবে উল্টে দিল। একই সঙ্গে কংগ্রেসের একটি যৌথ অধিবেশন এবং শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তাকে আহত করার বিচারকেও ব্যাহত করল।
অ্যাটর্নি জেনারেলকে দেওয়া ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের মধ্যে ক্যাপিটল দাঙ্গার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রায় ৪৫০টি বিচারাধীন মামলা খারিজ করার আদেশও রয়েছে।
এমনকি অভিযুক্তদের ‘দেশপ্রেমিক’ এবং অন্যায় বিচার বিভাগের শিকার হিসেবে বর্ণনা করে ট্রাম্প এ ক্ষমাকে ‘জাতীয় পুনর্মিলন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
তার কর্মকাণ্ড সমর্থক এবং প্রতিরক্ষা অ্যাটর্নিরা উদযাপন করেছেন। তবে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা এবং আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাসহ সমালোচকরা এটিকে ন্যায়বিচার ও জননিরাপত্তার অবমাননা আখ্যা দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
উল্লেখযোগ্যভাবে, এই ক্ষমার মধ্যে রাষ্ট্রদ্রোহী ষড়যন্ত্রের জন্য দোষী সাব্যস্ত ১৪ ব্যক্তি অন্তর্ভুক্ত ছিল। আর বাকিরা সম্পূর্ণ নিঃশর্ত ক্ষমা পান।
ট্রাম্পের ঘোষণাটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। এতে একদিকে সমর্থকরা কৃতজ্ঞতা ও আশাবাদ প্রকাশ করেছেন।
অন্যদিকে বিরোধীরা সংঘটিত সহিংস কাজ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ওপর প্রভাবকে তুলে ধরছেন, যাদের মধ্যে অনেকেই আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা রয়েছেন।
ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের বিচারের বিরুদ্ধে নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনের পর বিচার বিভাগ তার বিরুদ্ধে ফেডারেল ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার করে। এর পরই দায়ীদের ব্যাপক ক্ষমার এ ঘোষণা এলো।
গত চার বছরে ব্যাপক তদন্ত ও বিচারের ফলে ১ হাজার ২০০ জনেরও বেশি ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হন, যাদের অনেকেই দাঙ্গায় তাদের ভূমিকার জন্য যথেষ্ট কারাদণ্ডের সম্মুখীন হন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য