শয্যা সংখ্যা বাড়লেও সুযোগ-সুবিধা বাড়েনি কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধ বিপাকে ফেলছে রোগী, স্বজন ও দর্শনার্থীদের। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে ছড়িয়ে থাকা ময়লা-আবর্জনা। সিঁড়ি থেকে শুরু করে ওয়ার্ড ও জানালার পাশে জমে আছে পলিথিন, পরিত্যক্ত খাবার, ব্যবহৃত সিরিঞ্জসহ নানান আবর্জনা। এসব ময়লা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট ব্যবস্থা না থাকায় রোগী, স্বজন ও নার্সরাই জানালা দিয়ে বাইরে ফেলছেন, ফলে নিচে তৈরি হয়েছে ময়লার ভাগাড়। জরাজীর্ণ ভবনের ছাদ দিয়ে পড়ছে বৃষ্টির পানি, ধসে পড়ছে পলেস্তার। হাসপাতালজুড়ে রোগী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। নামে ৫০শয্যা হাসপাতাল হলেও প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। হাসপাতালের ১৩৬টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ৮৬ জন। শূন্য রয়েছে ৫০টি পদ। সামান্য রোগ নিয়ে আসা রোগীদের চিকিৎসার জন্য পাঠানো হচ্ছে জেলা হাসপাতালে। চিকিৎসক ছাড়াও বিভিন্ন পদ শূন্য থাকায় সেবা নিতে আসা রোগীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ৭ বছর আগে এ হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও প্রয়োজন অনুযায়ী জনবল নিয়োগ হয়নি।
গত রোববার দুপুরে এনসিপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হঠাৎ করেই পরিদর্শনে আসেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব প্রীতম দাশ। হাসপাতালটি ঘুরে দেখেন এবং রোগী, তাদের স্বজন ও কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। হাসপাতালে অবস্থানকালে তিনি বিভিন্ন সমস্যার খোঁজখবর নেন। রোগীদের অভিযোগ শোনার পাশাপাশি চিকিৎসকদের কাছ থেকেও দৈনন্দিন কার্যক্রম ও সমস্যার কথা শোনেন তিনি। পরে হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রীতম দাশ।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন যে সংখ্যক রোগী আসেন, তার তুলনায় চিকিৎসকের সংখ্যা অনেক কম। পরিছন্নতাকর্মীও অপর্যাপ্ত। ৪ লাখ মানুষের সেবা দেওয়ার জন্য মাত্র ৫০ শয্যার এ হাসপাতালে পর্যাপ্ত জনবল নেই। এতে চিকিৎসা সেবার মানও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় শুনে আসছি এই হাসপাতালে রোগীদের দুর্দশার কথা। তারা নানা ভাবে আমাদের জানিয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটা আমাদের প্রতিষ্ঠান। আমাদের ভ্যাট ট্যাক্সের টাকা এটা চলে। শুতারাং এখানে যারা সেবাদান করছেন তাদের সবসময় মনে রাখতে হবে তাদের বেতনটা জনগনের টাকায় হয়। আমরা এখানে এসে যেটা দেখলাম ডাক্তারসহ অন্যান্য চিকিৎসক স্টাফ তেমন নেই। পাশাপাশি আরেকটা জিনিস আমরা লক্ষ করলাম, এখানে বর্তমানে যে পরিমাণে জনবল আছে সে পরিমাণে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। প্রতিটা ওর্য়াডে যে পরিমাণ ময়লা,আবর্জনা পাশাপাশি টয়লেটে ঢোকাই যায় না। রোগীরা এসে কি সেবা নিবে ভালো মানুষরাই রোগী হয়ে যাবে। যদি কোনো ব্যক্তি এখানে একটা রোগের জন্য চিকিৎসা নিতে আসেন, বাসায় গেলে পরবর্তিতে আরও ৫টা রোগের ওষুধ নিতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা আশা করবো জেলা সিভিল সার্জনসহ সকল কর্মকর্তা এখানে এসে দেখে যান কি অবস্থা এই হাসপাতালের। দ্রত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। হাসপাতালে ঠিকমতো ওষুধ দেওয়া হয়না। সকাল থেকে আমার এখানে দাড়িয়ে দেখছি তেমন কোনো রোগী নাই। রেজিস্টার দেখানো হয়েছে অনেক রোগীকে ওষুধ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু বাস্তবতার সাথে কোনো মিল নাই। ওষুধগুলো কোথায় যায়? এছাড়া এই হাসপাতালে রাতের বেলা মাদকসেবন হয়, বিভিন্ন অপকর্ম হয়। একটা হাসপাতালে এসব কি? প্রশাসন সহ সকলের কাছে আমাদের অনুরোধ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। এই হাসপাতালটা নিজেই দুখছে। হাসপাতালে অনেক জায়গায় লাইট নষ্ট হয়ে থাকায় অন্ধকার থাকে। বৃষ্টি হলে হাসপাতালের বেডের ওপর পানি পড়ে। আসলে এগুলো সমাধান না হলে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
প্রীতম দাশ বলেন, আমরা এনসিপির পক্ষ থেকে দ্রুত স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে কথা বলব, যেন এখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স, পরিছন্নতাকর্মী ও নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, এই হাসপাতাল কখনো ঠিক হবে না। কারো নজর নেই এখানে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের আশেপাশে একাধিক ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, হাসপাতালের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া ৬ বছর ধরে এই হাসপাতালে আছেন। কিন্তু এই ৬বছর ধরে হাসপাতালের কোনো উন্নতি হয়নি। বরং তিনি কোটি টাকার জায়গা জমি কিনেছেন এখানে। তার দুর্নীতির শেষ নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা হাসনাত আলী অভিযোগ করে বলেন, একমাত্র সমাধান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া ও স্যানেটারী অফিসার দুলাল মিয়াকে এখান থেকে বদলি করলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
এদিকে তারেক আহমদ নামে একজন ফেইসবুকে হাসপাতালের সমস্যা নিয়ে একজন সাংবাদিকের একটি পোস্টের কমেন্টে করেছেন। তিনি সেই কমেন্টে লিখেছেন ‘মানুষের চিকিৎসার সেবাকে জিম্মি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া। তাকে নিয়ে ঠিকমত নিউজ করেন সে দুর্নীতি করতেছে তার কারণে কোন এমবিবিএস ডাক্তার আসতে পারছে না, মহিলা ডেলিভারি রুম খুবই খারাপ অবস্থা এটাই নিয়ে কিছু কথা বলেন তারেক আহমদ।’
দায়সারা কথা বললেন কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া। তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, প্রথম শ্রেণির ডাক্তার এবং কনসালটেন্টসহ ১৯টা পদ আছে। তার মধ্যে ৮পদে লোক আছে। বাকিগুলো খালি।
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য