করোনাভাইরাস প্রতিরোধী এমআরএনএ টিকা উদ্ভাবনে ভূমিকা রাখা গবেষণার জন্য চিকিৎসায় এ বছরের নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন দুই গবেষক।
নোবেল পুরস্কারের ওয়েবসাইটে জানানো হয়, নিউক্লিওসাইড বেজ মডিফিকেশন সংক্রান্ত আবিষ্কারের জন্য চিকিৎসায় ২০২৩ সালের নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছে কাতালিন কারিকো ও ড্রু ওয়েইজম্যানকে। তাদের এ আবিষ্কারের ওপর ভর করে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর এমআরএনএ টিকা উদ্ভাবন করা হয়।
চিকিৎসায় যৌথভাবে নোবেলজয়ী কাতালিন কারিকোর জন্ম ১৯৫৫ সালে হাঙ্গেরির সয়নক এলাকায়। তিনি হাঙ্গেরির সিইজড’স ইউনিভার্সিটি থেকে ১৯৮২ সালে পিএইচডি ডিগ্রি নেন।
১৯৮৫ সালে সিইজডের হাঙ্গেরিয়ান অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস থেকে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা করেন তিনি। পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার টেম্পল ইউনিভার্সিটি এবং বেথেসডার ইউনিভার্সিটি অফ হেলথ সায়েন্সে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা করেন এ ব্যক্তি।
১৯৮৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক নিযুক্ত হন কাতালিন কারিকো। ২০১৩ সাল নাগাদ সেখানে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি বায়োএনটেক আরএনএ ফার্মাসিউটিক্যালসের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০২১ সাল থেকে সিইজড ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করছেন কাতালিন। একই সঙ্গে তিনি পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটির পেরেলম্যান স্কুল অফ মেডিসিনের অ্যাডজাঙ্কট প্রফেসর হিসেবেও কাজ করছেন।
এবার চিকিৎসায় আরেক নোবেলজয়ী ড্রু ওয়েইজম্যান যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের লেক্সিংটনে ১৯৫৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৭ সালে বোস্টন ইউনিভার্সিটি থেকে এমডি ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের বেথ ইসরায়েল ডিকনেস মেডিক্যাল সেন্টার থেকে ক্লিনিক্যাল ট্রেনিং এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথ থেকে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা চালান তিনি।
১৯৯৭ সালে পেনসিলভ্যানিয়া ইউনিভার্সিটির পেরেলম্যান স্কুল অফ মেডিসিনে গবেষণা দল গড়েন ওয়েইজম্যান। তিনি ভ্যাকসিন রিসার্চ সেন্টারের রবার্টস ফ্যামিলি প্রফেসর এবং পেন ইনস্টিটিউট ফর আরএনএ ইনোভেশনসের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
১৯০১ সাল থেকে চিকিৎসায় নোবেল পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। এ যাবত ১২ জন নারী চিকিৎসায় নোবেল পেয়েছেন।
চিকিৎসায় সর্বকনিষ্ঠ নোবেলজয়ী হরেন ফ্রেডরিক জি. ব্যান্টিং। তিনি ইনসুলিন আবিষ্কারের জন্য ১৯২৩ সালে নোবেল পেয়েছিলেন। চিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি বয়সী নোবেলজয়ীর নাম পেটন রৌস। তিনি ৮৭ বছর বয়সে এ পুরস্কার পান।
সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের নামে ও তার রেখে যাওয়া অর্থে ১৯০১ সাল থেকে নোবেল পুরস্কার দেয়া শুরু হয়। প্রতি বছর চিকিৎসা, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, সাহিত্য, শান্তি ও অর্থনীতিতে দেয়া হয় বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কার। ১৮৯৫ সালে এক উইলে ‘মানবজাতির সর্বোচ্চ সেবায় অবদান রাখা’ ব্যক্তিদের জন্য এই পুরস্কার নিবেদিত করেছেন তিনি।
নোবেল পুরস্কারের মধ্যে চিকিৎসাশাস্ত্রের পুরস্কারটি সোমবার সুইডেনের স্টকহোমে ঘোষণা করা হয়। মঙ্গলবার ঘোষণা করা হবে পদার্থবিজ্ঞানের পুরস্কার। বুধবার রসায়ন ও বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হবে সাহিত্যের পুরস্কার।
আগামী শুক্রবার অসলো থেকে ঘোষণা করা হবে বহুল কাঙ্ক্ষিত নোবেল শান্তি পুরস্কার। আর অর্থনীতির পুরস্কারটি ঘোষণা করা হবে ৯ অক্টোবর।
আরও পড়ুন:মিয়ানমারের সংঘাতপূর্ণ রাখাইন রাজ্যে অবস্থিত জান্তা বাহিনীর একটি নৌঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি (এএ)। রাখাইনের জাতিগত এই সশস্ত্র গোষ্ঠী শনিবার এক বিবৃতিতে এমনটা দাবি করেছে।
আরাকান আর্মি বিবৃতিতে বলেছে, এক মাস তুমুল লড়াইয়ের পর বৃহস্পতিবার রাখাইনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর থানদের নাগপালি সৈকতের অদূরে নেভি সিল ট্রেনিং সেন্টারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তারা।
আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে যাওয়া ওই ঘাঁটির নাম সেন্ট্রাল নেভাল ডাইভিং অ্যান্ড স্যালভেজ ডিপো (সিএনডিএসডি)। প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে প্রথম কোনো নৌ সদর দপ্তর নিয়ন্ত্রণে নিল প্রতিরোধ যোদ্ধারা।
জান্তা বাহিনীর এই নৌঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নিতে ৭ আগস্ট বড় পরিসরে অভিযান শুরু করে আরাকান আর্মি। প্রথমে নৌঘাঁটির আশপাশের গ্রামে মোতায়েন জান্তা সেনাদের ওপর হামলা চালায় তারা।
আরাকান আর্মির হামলার মুখে জান্তা বাহিনী নৌঘাঁটির আশপাশ ঘিরে এক হাজার ২০০ জনের বেশি সেনা মোতায়েন করেছিল। পাশাপাশি প্রশিক্ষণরত নৌসেনারাও লড়াইয়ে অংশ নেয়। যুদ্ধজাহাজ এবং যুদ্ধবিমান থেকেও আরাকান আর্মির যোদ্ধাদের অবস্থানে হামলা চালানো হয়। এত কিছুর পরও জান্তা বাহিনী ঘাঁটিটির নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারেনি বলে আরাকান আর্মির বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে।
আরাকান আর্মির দাবি, নৌঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নিতে গত এক মাসের লড়াইয়ে জান্তা বাহিনীর চার শতাধিক সেনা নিহত হয়েছে। ঘাঁটিটি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করেছে তারা।
জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মিয়ানমারের জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো একটি জোট গঠন করেছে। গত বছরের ২৭ অক্টোবর এই জোট বড় পরিসরে হামলা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমবারের মতো বিতর্কে মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন। এই টেলিভিশন বিতর্ককে নির্বাচনী প্রচারে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এবিসির আয়োজনে মঙ্গলবার এই বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়ায়। হ্যারিস ও ট্রাম্পের মধ্যে এটি প্রথম এবং সম্ভবত শেষ টেলিভিশন বিতর্ক হতে যাচ্ছে।
বিতর্কের মঞ্চে সত্যিকার অর্থে কী মঞ্চায়িত হতে যাচ্ছে তা নিবিড়ভাবে প্রত্যক্ষ করতে অপেক্ষা করছে লাখ লাখ আমেরিকান।
এর আগে জুনে ট্রাম্পের সঙ্গে টেলিভিশন বিতর্কে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। এর ধারাবাহিকতায় ডেমোক্র্যাট শিবিরের অভ্যন্তরীণ চাপে তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। ডেমোক্রেট দলের কনভেনশনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে কমলা হ্যারিসকে মনোনয়ন দেয়া হয়।
এদিকে লাখ লাখ আমেরিকান সামনের কাতারে থেকেই নির্বাচনি লড়াইয়ে মরিয়া উভয় প্রার্থীর ঝুঁকিপূর্ণ এই বিতর্ক প্রত্যক্ষ করবেন। এই বিতর্ককে উভয় প্রার্থীর জন্যই গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল পরীক্ষা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
আমেরিকার নারী, কৃষ্ণাঙ্গ এবং দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক বক্তব্য থেমে নেই। বিতর্কের আগে জাতীয় জরিপে জনসমর্থনে ট্রাম্পের চেয়ে কমলা হ্যারিস এগিয়ে থাকলেও ট্রাম্প তাকে খাটো করে দেখানোর জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
মঙ্গলবারের টেলিভিশন বিতর্কেও ট্রাম্প তার আক্রমণাত্মক ভঙ্গি তুলে ধরবেন বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন। কারণ ৫৯ বছর বয়সী কমলা হ্যারিস ভোটের মাঠে প্রবেশের কারণে ৭৮ বছরের ট্রাম্প হয়ে পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনি ইতিহাসের সবচেয়ে প্রবীণ প্রার্থী।
রুটজার্স ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ কমিউনিকেশন অ্যান্ড ইনফরমেশনের এরিন ক্রিস্টি বলেছেন, ‘বয়স বিবেচনায় এমন একেবারে ভিন্ন ধরনের দুই প্রার্থী এর আগে কখনও মুখোমুখি হননি। তাই এই বিতর্ক হবে খুবই আকর্ষণীয় ও সচেতনতামূলক এবং নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারক।’
হ্যারিস ও ট্রাম্পের মধ্যে মঙ্গলবারের এ বিতর্কই হতে পারে শেষ বিতর্ক। কারণ এখনও পর্যন্ত উভয়ের কেউই নতুন বিতর্কের বিষয়ে সম্মতি দেননি।
আরও পড়ুন:থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পায়তংতার্ন সিনাওয়াত্রার মনোনয়ন অনুমোদন করেছে পার্লামেন্ট।
এর মধ্য দিয়ে দেশটির নবীনতম প্রধানমন্ত্রী হলেন বিলিয়নেয়ার থাকসিন সিনাওয়ার সর্বকনিষ্ঠ সন্তান।
আল জাজিরা শুক্রবার জানায়, ফিউ থাই পার্টির নেতা শ্রেথা থাভিসিনের উত্তরসূরি হচ্ছেন পায়তংতার্ন। গত বুধবার সাংবিধানিক আদালত থাভিসিনকে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে অপসারণ করে।
৩৭ বছর বয়সী পায়তংতার্ন উং ইং নামেই বেশি পরিচিত। বাবা থাকসিন সিনাওয়াত্রা ও ফুফু ইংলাক সিনাওয়াত্রার পর একই পরিবারের তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হলেন তিনি।
থাইল্যান্ডে সেনাবাহিনী, রাজাপন্থি প্রভাবশালী ও থাকসিন সিনাওয়াত্রা সমর্থিত দলগুলোর মধ্যে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বের সর্বশেষ প্রতিফলন দেখা গেল শ্রেথা থাভিসিনের ক্ষমতাচ্যুতিতে। ২০০১ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন থাকসিন। ২০০৬ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন তিনি।
গত বছর ফিউ থাই পার্টির সরকার গঠনের দিন থাইল্যান্ডে ফেরেন থাকসিন।
ফিউ থাইয়ের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোট বৃহস্পতিবার রাতে বৈঠকে পায়তংতার্নকে মনোনয়ন দেয়। জোটের অন্য ১০ দল কোনো বিকল্প না দেয়ায় থাকসিনকন্যাই প্রধানমন্ত্রী পদে মনোনীত হন।
আরও পড়ুন:মেডিক্যাল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের পর হত্যার প্রতিবাদে ভারত জুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। পশ্চিমবঙ্গসহ দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নারীদের বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে কঠোর শাস্তির আহ্বান জানিয়েছে।
মোমবাতি ও পোস্টার হাতে নিয়ে নারীরা ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় শহর কলকাতাসহ বিভিন্ন শহরে মিছিল করেছে। কলকাতার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ব্যাপক ভাঙচুর করে বিক্ষোভকারীরা। সেখানে গত সপ্তাহে একজন শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় সহকর্মী চিকিৎসকরা আরও ভাল ও নিরাপদ কর্মপরিবেশের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেছেন।
জুনিয়র ডাক্তাররা নির্যাতিতার ন্যায়বিচারের দাবিতে বাইরে বসে প্রতিবাদ করায় ভারতের বিভিন্ন শহরে অনেক সরকারি হাসপাতালে জরুরি বিভাগ ছাড়া সব চিকিৎসাসেবা স্থগিত রয়েছে।
শুক্রবার ৩১ বছর বয়সী ওই চিকিৎসককে কলকাতার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। পুলিশ জানিয়েছে যে তাকে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছে। এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত একজন পুলিশ স্বেচ্ছাসেবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভারতের ৭৮তম স্বাধীনতা দিবসে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘আমি এই ক্ষোভের মাধ্যমে অনুভব করতে পারছি যে সমাজে আমাদের মা, কন্যা ও বোনদের ওপর যে অত্যাচার চালানো হচ্ছে তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। এ নিয়ে দেশে ক্ষোভ বিরাজ করছে।’
এই ধর্ষণ ঘটনা ২০১২ সালে নয়াদিল্লির একটি ঘটনাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। সেখানে একদল লোক দিল্লির চলন্ত বাসে ২৩ বছর বয়সী এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে গুরুতর আহত অবস্থায় ফেলে চলে যায়। শেষ পর্যন্ত সেই ছাত্রীর মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন:প্রতি বছর মৌসুমে বাংলাদেশ থেকে ‘উপহার’ হিসেবে ভারতে ইলিশ যাওয়াটা ছিল অনেকটাই নিশ্চিত। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর চিত্র বদলে গেছে।
বাংলাদেশ থেকে ইলিশ রপ্তানি এখন বন্ধ। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের বাজারে সুস্বাদু এই মাছের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। আবার অবৈধপথে ভারতে কিছু ইলিশ গেলেও সেখানে তা বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।
শুধু ইলিশ নয়, বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অন্যান্য মাছের দামও বেড়েছে ভারতের বাজারে। এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কলকাতার জনপ্রিয় মাছের বাজারগুলো চলতি বর্ষায় ‘বেস্ট সেলার’ পদ্মা নদীর ইলিশের সংকটে পড়েছে। ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ। তবে এই মাছটি সীমান্তের অপর পাশে পশ্চিমবঙ্গ এবং ভারতের উত্তর-পূর্ব অংশের মানুষের কাছেও খুব প্রিয়।
এনডিটিভি বলছে, বাংলাদেশ থেকে আমদানি হওয়া ইলিশের সিংহভাগই পেয়ে থাকে পশ্চিমবঙ্গ। দুর্গা পূজা ঘিরে সুস্বাদু এই মাছের চাহিদা আরও বেড়ে যায়। ইলিশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশেই পাওয়া যায়। তবে বাংলাদেশের ইলিশের স্বাদ অতুলনীয়।
শঙ্কর পাল নামে কলকাতার এক মাছ ব্যবসায়ী বলেন, ‘বাংলাদেশি ইলিশের সরবরাহে আকস্মিক পতন ঘটেছে, তাই দাম বাড়ছে। আমরা এরই মধ্যে এক কেজি ওজনের ইলিশ ১৮০০ রুপিতে বিক্রি করছি, যা অবৈধভাবে আসছে।’
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বিখ্যাত ইলিশ কূটনীতির অংশ হিসেবে আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ভারতে বার্ষিক ইলিশ রপ্তানির সুবিধা দিতেন। ২০১২ সাল থেকে অন্যান্য দেশে রপ্তানি বন্ধ থাকলেও ভারতে মাছ রপ্তানির অনুমতি দিতো হাসিনার সরকার।
এনডিটিভি বলছে, পশ্চিমবঙ্গের পরে ইলিশ সরবরাহের এই সংকটে সবচেয়ে বেশি সমস্যার মুখে পড়েছে ত্রিপুরা। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এই রাজ্যটি পদ্মার ইলিশের অন্যতম প্রধান ক্রেতা এবং সেখানে সুস্বাদু এই খাবারের সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
আগরতলার মাছ বিক্রেতা তাপস সরকার বলেন, ‘সরবরাহ কমে গেছে। তাই আমাদের দাম বাড়াতে হবে। আজ প্রতি কেজি ইলিশ ১৬০০ রুপিতে কিনেছি। আগে এটি ১৫০০ রুপি, এমনকি ১৪০০ রুপিতেও বিক্রি হতো। শুধু ইলিশ নয়, বাংলাদেশ থেকে আসা অন্যান্য মাছের দামও বেড়েছে।’
ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনের মহাপরিচালক অজয় সাহাই গত সপ্তাহে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকটের কারণে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে আমরা অনুমান করছি। আমরা প্রতিদিন বাংলাদেশে প্রায় ৩০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে আসছিলাম।’
আরও পড়ুন:সদ্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরবর্তী পরিকল্পনা সম্পর্কে কোনো আপডেট নেই জানিয়েছে ভারত। বলেছে, এই মুহূর্তে তার পরিকল্পনা সম্পর্কে মন্তব্য করাও উচিত হবে না। সূত্র: ইউএনবি
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল শুক্রবার নয়াদিল্লিতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ (শেখ হাসিনা) ব্যাপারে আমি আপনাদের আগেও বলেছি, তার পরিকল্পনা সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনো আপডেট নেই। এ বিষয়ে জানানো তারই দায়িত্ব।’
সাপ্তাহিক ব্রিফিংকালে শেখ হাসিনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘(ভারতের) পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর সংসদে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এক বিবৃতিতে স্পষ্টভাবে বলেছেন, বাংলাদেশের সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বল্প সময়ের নোটিশে ভারতে আসার অনুমোদন দেয়া হয়েছিল।
‘আপনারা জানেন যে বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখনও পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে ওনার (শেখ হাসিনা) পরিকল্পনা নিয়ে মন্তব্য করা আমার পক্ষে ঠিক হবে না।’
বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা দ্রুত পুনরুদ্ধারের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে ভারত উল্লেখ করেছে, দেশটির নিজের এবং বৃহত্তর অঞ্চল উভয়ের স্বার্থেই এটা জরুরি।
জয়সওয়াল বলেন, ‘প্রতিটি সরকারের দায়িত্ব তার সব নাগরিকের কল্যাণ নিশ্চিত করা।’
সংখ্যালঘু ইস্যুতে এ সময় তিনি বলেন, তারা (বাংলাদেশের বর্তমান) পরিস্থিতির ওপর নিবিড়ভাবে নজর রাখছেন। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীও এ নিয়ে কথা বলেছেন।
‘আমরা আশা করছি, বিভিন্ন গোষ্ঠী ও সংগঠনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এবং আমরা এটিকে স্বাগতও জানিয়েছি। তবে আমরা চাই দেশটির আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হোক, যাতে স্বাভাবিক জীবন শুরু হয়।’
জয়সওয়াল বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে তারা ঢাকায় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে তারা বুঝতে পারছেন যে, যত দ্রুত সম্ভব দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতার পুনঃপ্রতিষ্ঠা প্রয়োজন।
‘আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। আমাদের মিশনগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত, যেসব কর্মী মিশনগুলো পরিচালনা করছেন এবং (বাংলাদেশে অবস্থানরত) ভারতীয় নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য আমরা তাদের (বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ) সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।’
ভারতীয় নাগরিক, হাইকমিশন ও কর্মীদের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মুখপাত্র বলেন, ‘আশা করছি, স্বাভাবিক লেনদেন ও জীবনযাত্রা শুরু করতে খুব শিগগিরই (বাংলাদেশের) আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। আমি আবারও জোর দিয়ে বলতে চাই, বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থই আমাদের কাছে সবার আগে।’
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং দেশের জনগণকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে জাতিসংঘ প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির উপ-মুখপাত্র ফারহান হক।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) নিউ ইয়র্কে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা জানান।
ফারহান হক বলেন, ‘নতুন সরকারের কাছ থেকে কী ধরনের আনুষ্ঠানিক অনুরোধ আসে তা দেখা হবে।
‘বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ যেভাবে প্রয়োজন মনে করবে, আমরা অবশ্যই সেভাবে তাদের পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত রয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বৃহস্পতিবারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে তিনি দেশের শান্তিপূর্ণ পরিবর্তনের প্রক্রিয়াটিতে সক্রিয় রয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে উপ-মুখপাত্র বলেন, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বাংলাদেশে যে সহিংসতা চলছে তা বন্ধ করতে চান তারা। তিনি বলেন, ‘আমরা এটা পরিষ্কার করে বলেছি, যেকোনো জাতিগত আক্রমণ বা সহিংসতায় উস্কানির বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান।’
মন্তব্য