দেশে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস নতুন কোনো বিষয় নয়। অনেকেই এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হওয়ার কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার এক ভিডিওতে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হেপাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হোসাইন মোহাম্মদ শাহেদ। তথ্যগুলো তার ভাষায় উপস্থাপন করা হলো পাঠকদের সামনে।
১. আমাদের দেশে বি ভাইরাসটা (হেপাটাইটিস বি) খুব কমন। আমাদের দেশের ইনসিডেন্ট প্রিভেলেন্স (আক্রান্তের সংখ্যা) হচ্ছে এইট টু টেন পারসেন্ট। এতসংখ্যক মানুষের মধ্যে বি ভাইরাসটা আমাদের দেশে পজিটিভ, কিন্তু অনেক মানুষ জানে না শরীরে এইচবিএসএজি আছে, যেটা টেস্ট করা হয়নি। বি ভাইরাসটা (সম্বন্ধে জানা) আমাদের জন্য খুব ইম্পরট্যান্ট। কারণ আমরা আসলে জানি না আমাদের কাদের বি ভাইরাস আছে। না জানার জন্য বি ভাইরাস থেকে অনেক সময় লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যানসার হয়ে যায়। যে রোগটা আগে থেকে চিকিৎসা করলে ভালো হয়ে যেত, ওইটা এমন একটা অবস্থায় নিয়ে আসে যখন আমাদের আর কিছু করার থাকে না। এ জন্য আমি বলব, বি ভাইরাস সম্বন্ধে যা বলি তা শুনবেন এবং এই অনুসারে চিকিৎসা করবেন। ইনশাল্লাহ ভালো হয়ে যাবে। এটা একটা প্রিভেন্টেবল ডিজিজ (প্রতিরোধযোগ্য রোগ)। এটার চিকিৎসা করলে ভালো হয়ে যায়।
২. অনেক মানুষ আছে যারা এইচবিএসএজি পজিটিভ নিয়ে আমাদের কাছে আসে। হঠাৎ করে ধরা পড়েছে বা শরীরে আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে অনেক সময় বি ভাইরাস ধরা পড়ে। দেখা যায় যে, কারও ব্লাডের কোনো রোগ হইছে, হেমাটোলজিস্ট পরীক্ষা করে দেখেন বি ভাইরাস। তখন আমাদের কাছে পাঠান। এমনও হতে পারে কোনো ক্যানসার রোগী ক্যানসারের ডাক্তারের কাছে গেছে, তো উনি ক্যানসারের ওষুধ দেয়ার আগে বি ভাইরাস পরীক্ষা করে দেখেন যে, পজিটিভ। তখন আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেন।
৩. অনেক সময় দেখা যায় যে, কিডনি রোগী ডায়ালাইসিস করবে। ডায়ালাইসিস শুরু করার আগে অনেক সময় বি ভাইরাস, সি ভাইরাস টেস্ট করা হয়। পজিটিভ হলে আমাদের কাছে আসে। এ ছাড়া এমনিতেই অনেক রোগী জন্ডিস নিয়ে আমাদের কাছে আসে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বি ভাইরাস ধরা পড়ে।
৪. অধিকাংশ মানুষের বি ভাইরাস থাকলে শরীরে কোনো সিম্পটম (লক্ষণ) থাকে না; অ্যাসিম্পটমিক (উপসর্গবিহীন)। হয়তো দেখা গেল বিদেশে যাওয়ার জন্য পরীক্ষা করেছে। বি ভাইরাস ধরা পড়েছে অথবা টিকা নিতে যাবে; ওখানে পরীক্ষা করতে গেছে টিকা দেওয়ার জন্য, বি ভাইরাস ধরা পড়েছে। এভাবে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বি ভাইরাসটা শরীরে ধরা পড়ে।
৫. বি ভাইরাসটা অধিকাংশ ক্ষেত্রে কেরিয়ার (বাহক) হিসেবে থাকে। শুধু এইচবিএসএজি পজিটিভ। অন্য কোনো অসুবিধা থাকে না, কিন্তু এটা অনেক সময় অ্যাকিউট হেপাটাইটিস করে, পরবর্তী পর্যায়ে ক্রনিক হেপাটাইটিস করে। এর পরবর্তী পর্যায়ে লিভার সিরোসিস এবং লিভার ক্যানসার করে।
৬. বি ভাইরাস নিয়ে আমাদের কাছে যখন কোনো রোগী আসে, আমরা তখন কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখি বি ভাইরাসটা শরীরে অ্যাকটিভ নাকি ইনঅ্যাকটিভ অবস্থায় আছে। ভাইরাসটা শরীরে কীভাবে থাকে? একটা ইনঅ্যাকটিভ, আরেকটা অ্যাকটিভ। যদি অ্যাকটিভ অবস্থায় থাকে, তাহলে এটার চিকিৎসা করলে ইনশাল্লাহ ভালো হয়ে যাবে। আর ইনঅ্যাকটিভ অবস্থার আরেকটা নাম হচ্ছে কেরিয়াস্টিকস। যদি কেরিয়ার (বাহক) অবস্থায় থাকে, শুধু এটার ফলোআপ করতে হয় তিন মাস পরপর। ফলোআপ করে করে এটা দেখতে হয়। যদি কোনো সময় ফলোআপের মধ্যে অ্যাকটিভ পাওয়া যায়, তখন এটার চিকিৎসা দেওয়া হয়।
৭. অ্যাকটিভ আমরা কীভাবে বুঝব? আমরা যখন কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এর মধ্যে এইচবিএসএজি যদি পজিটিভ থাকে, সাথে এইচবিইএজি, এসজিপিটি, অ্যান্টিএইচবিই, আলট্রাসনোগ্রাম, এইচবিপিটিএনের মতো পরীক্ষাগুলো করা হয়। পরীক্ষা করে এইচবিএসএজি কারও পজিটিভ থাকে, কারও নেগেটিভ থাকে। এটা যদি নেগেটিভ থাকে, এটাকে বলে মিউট্যান্ট ভ্যারাইটি। এটা খুব খারাপ একটা ভ্যারিয়েন্ট, যা থেকে লিভার রোগ খুব বেশি তাড়াতাড়ি হয়। ক্যানসার বা লিভার সিরোসিস, এগুলো খুব দ্রুত হয়ে যায়। এ জন্য এইচবিএসএজি খুব মারাত্মক। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসাটা অনেক বেশি দিন দেয়া লাগে।
৮. এরপরে আমরা দেখি এসজিপিটি। নরমালও থাকতে পারে, ওয়ান টাইম বা টু টাইমস বেশি থাকতে পারে। আর অ্যান্টি এইচবিই এটা করা হয়। এটা পজিটিভ থাকলে ধরা হয় শরীরে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে।
৯. এরপরে ডিএনএ করা হয়। ডিএনএ নেগেটিভ থাকতে পারে। পজিটিভ থাকলেও চিকিৎসা লাগে না যদি এর পরিমাণ একটা লেভেল পর্যন্ত থাকে। সেই লেভেল পর্যন্ত থাকলে আমরা চিকিৎসা করি। লো লেভেল থাকলে সাধারণত চিকিৎসা লাগে না।
১০. তাইলে আমরা বলছিলাম একটা অ্যাকটিভ, একটা ইনঅ্যাকটিভ। অ্যাকটিভ হলো যাদের এইচবিএসএজি পজিটিভ অথবা নেগেটিভ, যেকোনো একটা থাকতে পারে অ্যাকটিভে। এসজিপিটি রেইজ (বাড়া) থাকতে পারে ওয়ান টাইম বা টু টাইম বা এর বেশি এবং ডিএনএ পজিটিভ থাকবে। এগুলো যদি থাকে, আমরা বলি অ্যাকটিভ স্ক্রিনস। যদি অ্যাকটিভ ভাইরাস থাকে, এটা অবশ্যই চিকিৎসা করতে হয়। না হলে এ থেকে ক্রনিক হেপাটাইটিস হয়। সেখান থেকে লিভার সিরোসিস হয়। লিভার সিরোসিস পরে লিভার ক্যানসারে টার্ন করে। আর ইনঅ্যাকটিভ স্টেজ যদি হয়, তখন দেখা যায় যে, এইচবিএসএজি নেগেটিভ, এসজিপিটি নরমাল, ডিএনএ নেগেটিভ। এটা হলে ইনঅ্যাকটিভ স্টেজ। এটার কোনো চিকিৎসা লাগে না; শুধু তিন মাস পরপর ফলোআপ করতে হয়।
ফলোআপের মধ্যে যদি এগুলো নেগেটিভ থাকে, তাহলে এটাকে বলা হয় কেরিয়াস্টিকস। কেরিয়াস্টিকের কোনো চিকিৎসা লাগে না, কিন্তু ফলোআপে রাখতে হয়। কারণ ফলোআপের মধ্যে দেখা যায়, অনেক সময় এটা অ্যাকটিভে টার্ন করে।
১১. ভাইরাসটা শরীরের ইমিউনিটির ওপর ভিত্তি করে অ্যাকটিভ ইনঅ্যাকটিভ হয়। যদি ইমিউনিটি ভালো থাকে, তাইলে এটা ইনঅ্যাকটিভ স্টেজে থাকে। আর কোনো সময় ইমিউনিটি যদি শরীরে কমে যায়, তখন ভাইরাসটা ইনঅ্যাকটিভ থেকে অ্যাকটিভে টার্ন করে।
অ্যাকটিভ মানে এটা লিভার ড্যামেজ করে। লিভার ড্যামেজ করা মানে এটা ক্রনিক হেপাটাইটিস, লিভার সিরোসিস।
১২. এখন চিকিৎসা। যদি অ্যাকটিভ স্টেজে থাকে, তাহলে আমরা বিভিন্ন রকম অ্যান্টিভাইরাল এজেন্ট দিয়ে থাকি। এর মধ্যে লেমিভুডিন, যেটা আমরা আগে ইউজ করতাম। এখন করি না। এন্টাকাভির বর্তমানে ইউজ করা হয়। টেলবিভুডিন বর্তমানে ইউজ করা হয়।
বর্তমানে আমরা অ্যান্টিভাইরালগুলো বিভিন্ন মেয়াদে দিয়ে থাকি। যাদের এইচবিএসএজি ওদেরকে এক বছর চিকিৎসা দেয়া হয়। যাদের এইচবিএসএজি নেগেটিভ, তাদের তিন বছর চিকিৎসা দেয়া হয়, তবে একটা ট্রেন্ড বর্তমানে আমরা বিভিন্ন পাবলিকেশনে দেখতেছি। সেটা হলো আমরা নির্দিষ্ট সময়ে অ্যান্টিভাইরাল দেয়ার পরে ভাইরাসটা আবার ফলোআপ করতে হয়।
অ্যান্টিভাইরাল বন্ধ করার তিন মাস/ছয় মাস পরপর ডিএনএটা পরীক্ষা করা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, নেগেটিভই থাকে, তবে কারও কারও আবার পজিটিভও হয়। এ জন্য আবার অ্যান্টিভাইরাল শুরু করতে হয়, কিন্তু কিছু কিছু পাবলিকেশনে দেখা যাচ্ছে যে, অ্যান্টিভাইরালটা বন্ধ করলে ভাইরাসটার যেহেতু পুনরায় আবির্ভাব ঘটে, সেহেতু অ্যান্টিভাইরাল বন্ধ না করাই শ্রেয়। এটা সবসময় চালু থাকলে, ভাইরাসটা ইনঅ্যাকটিভ থাকলে লিভারটা সুরক্ষিত থাকে এবং লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যানসার থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে ধানক্ষেতে কাজ করার সময় সাপের দংশনে আহত হয়েছেন মিলন আলী নামে এক কৃষক। পরে অন্য কৃষকরা তাকে উদ্ধার করে শিবগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। এ সময় মিলন আলী সাপটিও হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
সোমবার দুপুরে শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা ইউনিয়নের বোগলাউড়ি এলাকার একটি ধানক্ষেতে এ ঘটনা ঘটে। আহত মিলন আলী ওই এলাকার তোবজুল হকের ছেলে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মিলন আলী বলেন, ‘সাপের ধরন চিহ্নিত করতে ও সঠিক চিকিৎসার জন্য সাপটি ধরে আমার ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে আসতে বলেছিলাম। তাই সে সাপটি ব্যাগে করে নিয়ে আসে। চিকিৎসকরা সাপটি দেখে রাসেল ভাইপার বলে নিশ্চিত করেছেন।’
শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মামুন কবির জানান, আক্রান্ত ব্যক্তি একটি সাপের বাচ্চাসহ হাসপাতালে আসেন। তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে তিনিশঙ্কামুক্ত। তারপরও আমরা ২৪ ঘণ্টা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছি।’
মাদারীপুরের শিবচরে একই দিনে তিনজনকে সাপে দংশন করেছে। তাদের মধ্যে দুজন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন। অপরজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
হাসপাতাল ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শনিবার বিকেলে শিবচর উপজেলার চর বাচামারা গ্রামের লোকমান খান বাড়ির পাশে বাদাম ক্ষেতে রাখা ঝাকার নিচ থেকে হাতে কাঁচি তুলছিলেন। এ সময় একটি সাপ তার হাতে দংশন করে। পরিবারের লোকজন তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা নিশ্চিত হন যে তাকে বিষধর সাপে দংশন করেছে। চিকিৎসকরা তাকে এন্টিভেনম দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে স্বজনদের অনুমতিপত্রে স্বাক্ষর করতে বললে তারা অস্বীকার করেন। এজন্য স্বজনদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোগীকে ঢাকায় রেফার করা হয়।
অপরদিকে একই দিন দুপুরে উপজেলার মাদবরচর ইউনিয়নের আলেপখাঁর খাঁড়াকান্দি গ্রামের শাহাবুদ্দিন হাওলাদার বাড়িতে পালা থেকে গরুর জন্য খড় বের করার সময় একটি সাপ তাকে দংশন করে। পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে দ্রুত শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
একই দিন সকালে উপজেলার সন্নাসীরচর ইউনিয়নের খাসচর বাচামারা গ্রামের মোসলেম কাজী বাড়ি সংলগ্ন খালের পানিতে পাট জাগ দিচ্ছিলেন। এসময় তাকে একটি সাপে দংশন করে। তার চিৎকারে পরিবারের সদস্যরা এসে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. ফারজানা সুলতানা বলেন, সাপের দংশনে আহত তিনজন রোগী হাসপাতালে এসেছেন। আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি দুজনকে বিষধর সাপে কাটেনি। তাই তাদেরকে এন্টিভেনম দেয়ার প্রয়োজন হয়নি। তবে তাদেরকে আমরা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছি। অপরজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ওষুধপত্র, স্যালাইনসহ হাসপাতালে সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। ডেঙ্গু মৌসুম শুরু হলে এ বিষয়ে আরও উদ্যোগ নেয়া হবে।
রোববার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। যুক্তরাজ্য ও সুইজারল্যান্ড সফর নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। খবর বাসসের
সামন্ত লাল সেন বলেন, সম্মিলিতভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতি যথেষ্ট। ডেঙ্গু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, দপ্তর এবং সিটি কর্পোরেশনের সমন্বিত উদ্যোগে কাজ করা উচিত। শিগগিরই এ বিষয়ে আন্ত:মন্ত্রণালয় সভার আয়োজন করা হবে।
যত্রতত্র অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বন্ধে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারণা জোরদার করা উচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে নিয়মিত তদারকি করা উচিত।
জেনেভা সফর নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে ফাইলেরিয়া নির্মূল এবং বিশ্বে প্রথম কালাজ্বর নির্মূল করায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ৭৭তম সাধারণ সভায় তার বক্তব্যে বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। মহাপরিচালক বলেছেন, অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বাংলাদেশ হতে পারে একটি যথাযথ রোল মডেল।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আজিজুর রহমান, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (আর্থিক ব্যাবস্থাপনা ও অডিট অনুবিভাগ) মো. আব্দুস সামাদ প্রমুখ।
২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ২২ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত হিসাবে এই তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এই সময়ের মধ্যে ৪৫৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যায়নি। এ পর্যন্ত ২৯ হাজার ৪৯৫ জন করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন। করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ২০ লাখ ১৭ হাজার ৮৮০ জন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, চিকিৎসকের ওপর কোনো আক্রমণ যেমন আমি সহ্য করব না, তেমন রোগীর প্রতি কোনো চিকিৎসকের অবহেলাও বরদাস্ত করা হবে না।
রোববার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে অনুষ্ঠিত ৪১তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) ও বিসিএস (পরিবার পরিকল্পনা) ক্যাডারে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। খবর বাসসের
সামন্ত লাল সেন বলেন, মন্ত্রী হিসেবে আমার বয়স মাত্র সাড়ে ৩ মাস। এই অল্প সময়ে আমি যেখানে গিয়েছি একটা কথাই বলেছি, আমি যেমন চিকিৎসকেরও মন্ত্রী, ঠিক তেমনি আমি রোগীদেরও মন্ত্রী। মন্ত্রী হিসেবে শুধু একটা প্রতিশ্রুতিই আমি দিতে পারি, তোমরা তোমাদের সর্বোচ্চ সেবাটুকু দিয়ে যাও, তোমাদের বিষয়গুলোও আমি দেখব।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম এর সভাপতিত্বে ওরিয়েন্টেশনে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আর বানু প্রমুখ।
নবনিযুক্ত চিকিৎসকদের উদ্দেশে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এ দেশের মানুষ অতি সাধারণ। তাদের চাওয়া-পাওয়াও সীমিত। ডাক্তারের কাছে এলে তারা প্রথমে চায় একটু ভালো ব্যবহার। একটু ভালো করে তাদের সাথে কথা বলা, একটু মনোযোগ দিয়ে তাদের কথা শোনা। এটুকু পেলেই তারা সন্তুষ্ট।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখতেন, তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়া। আমি মনে করি সে স্বপ্ন পূরণ করার কারিগর হচ্ছো তোমরা। যারা আজকে চিকিৎসক হিসেবে যোগদান করতে যাচ্ছো। আমার বিশ্বাস, তোমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবে।
অনুষ্ঠানে ৪১তম বিসিএস স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ ক্যাডারে সহকারী সার্জন পদে ১০৩ জন, সহকারী ডেন্টাল সার্জন পদে ১৭১ জন এবং পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদে ১৫৩ জন যোগদান করেন।
দেশে আরও ২৪ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টার এই হিসাব দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।
এতে জানানো হয়, নতুন করে ১৪ জনের শরীরে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৪৯ হাজার ৯৪৫ জনে।
তবে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনায় কারো মৃত্যু হয়নি। এখন পর্যন্ত ভাইরাসটিতে মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৪৯৪ জনের।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩০২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। একই সময় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ। মোট পরীক্ষায় এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৭ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মোট মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৯ জন। এ নিয়ে দেশে মোট সুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ১৭ হাজার ৩৭৪ জনে।
দেশজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহ ও উত্তপ্ত তাপমাত্রার কারণে শিশুদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়ে ইউনিসেফ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির বাংলাদেশ প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট।
বুধবার ইয়েট এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আপনার প্রতিবেশিদের দিকে নজর রাখুন- দুর্বল পরিবার, প্রতিবন্ধী শিশু, গর্ভবতী নারী এবং বৃদ্ধরা তাপপ্রবাহের সময় অসুস্থতা বা মৃত্যুর উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে। সময় নিয়ে প্রতিবেশীদের খোঁজখবর নিন, বিশেষ করে যারা একা থাকেন।’
ইউনিসেফের ২০২১ সালের শিশুদের জলবায়ু ঝুঁকি সূচক (সিসিআরআই) অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের ‘অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিতে’ রয়েছে বাংলাদেশের শিশুরা।
ইউনিসেফের মতে, তাপমাত্রার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে, বিশেষ করে নবজাতক, শিশু এবং ছোট বাচ্চাদের জন্য যারা তাপজনিত অসুস্থতা যেমন হিট স্ট্রোক এবং ডিহাইড্রেশনের কারণে বিশেষভাবে ডায়রিয়া ঝুঁকিপূর্ণ জনসংখ্যা হিসেবে বিবেচিত হয়।
ইয়েট বলেন, ‘যেহেতু শিশুদের ওপর ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার প্রভাবের উদ্বেগের কারণে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আগামী ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে, তাই ইউনিসেফ অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের হাইড্রেটেড ও নিরাপদ রাখতে অতিরিক্ত সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।’
এই তাপপ্রবাহের তীব্রতা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব থেকে শিশুদের রক্ষা করার জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়।
তাপমাত্রা নজিরহীনভাবে বাড়তে থাকায় অবশ্যই শিশু এবং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সুস্থতাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে বলে জানান ইয়েট।
এই তাপপ্রবাহ থেকে ইউনিসেফ কর্মী, বাবা-মা, পরিবার, যত্নগ্রহণকারী এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে শিশু ও গর্ভবতী নারীদের রক্ষায় নিচের পদক্ষেপগুলো নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে-
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
প্রাথমিক চিকিৎসা
যদি কোনো শিশু বা গর্ভবতী নারীর হিটস্ট্রেসের লক্ষণগুলো দেখা যায়, যেমন- মাথা ঘোরা, অতিরিক্ত ঘাম, বমি বমি ভাব, হালকা জ্বর, নাক দিয়ে রক্তপাত, পেশি খিঁচুনি, ফুসকুড়ি ইত্যাদি; ওই ব্যক্তিকে ভালো বায়ু চলাচলসহ শীতল, ছায়াযুক্ত জায়গায় রাখুন এবং ভেজা তোয়ালে বা শীতল পানি দিয়ে শরীর মুছে দিন।
পানি বা ওরাল রিহাইড্রেশন লবণ (ওআরএস) গ্রহণ করুন।
হিটস্ট্রেসের গুরুতর লক্ষণগুলোতে (যেমন: বিভ্রান্তি বা প্রতিক্রিয়া জানাতে অক্ষমতা, অজ্ঞান হওয়া, শরীরের উচ্চ তাপমাত্রা, দ্রুত হৃদস্পন্দন, খিঁচুনি এবং চেতনা হ্রাস) হলে জরুরিভিত্তিতে হাসপাতালে নেয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ।
মন্তব্য