আমাদের দেশে অনেকেই আইবিএস বা পুরাতন আমাশয়ের সমস্যায় ভুগছেন। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা নিলে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আইবিএস কী, এর কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা নিয়ে এক ভিডিওতে কথা বলেছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হেপাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হোসাইন মোহাম্মদ শাহেদ। পরামর্শগুলো তার ভাষায় পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করা হলো।
আইবিএস কী
আইবিএস বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বা ক্রনিক ডিসেন্ট্রি বা পুরাতন আমাশয়, বিভিন্ন নামে এ রোগটা পরিচিত। এটা আমাদের কমিউনিটি বা আমাদের সমাজে খুবই কমন একটা রোগ। আমাদের দেশের টেন টু ফিফটিন পারসেন্ট মানুষের আইবিএস বা ক্রনিক ডিসেন্ট্রি রোগটা সংক্রমিত আছে। এটা একটা পেটের রোগ, যেখানে রোগীর বাথরুম বা পায়খানার সমস্যা হয় এবং পেটের মধ্যে বিভিন্ন রকম ব্লটিং বা পেট ফোলা বা পেটের মধ্যে শব্দ, এ রকম বিভিন্ন রকম সিম্পটম থাকে। সাথে রোগীর লাইফস্টাইল, টেনশন/দুশ্চিন্তা এগুলোও জড়িত থাকে।
আইবিএসের কারণ
এ ধরনের রোগের অ্যাকচুয়াল কারণ জানা যায় নাই, তবে বিভিন্ন বইপত্র বা পাবলিকেশনসে আছে, অতিরিক্ত টেনশন বা দুশ্চিন্তা, যাদের পেশা খুব কঠিন বা টেনশনের মধ্যে থাকতে হয় বা যাদের জীবনে বিভিন্ন রকম অ্যাকসিডেন্ট বা দুশ্চিন্তা বা ফ্যামিলি ব্রেকডাউন হয়েছে, তাদের মধ্যে এটা বেশি দেখা যায়, স্টুডেন্টদের মধ্যে দেখা যায় বা যারা প্রফেশনালি খুব অ্যাকটিভ থাকে, ওদেরও অনেক সময় এটা বেশি দেখা দেয়।
আইবিএসের লক্ষণ বা উপসর্গ
এই ধরনের রোগীরা সাধারণত আমাদের কাছে বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে আসে। যেমন: পেট ফোলা, পেটে শব্দ করা, বাথরুম (পায়খানা) ক্লিয়ার হয় না, সকাল ঘুম থেকে উঠে তিন-চারবার বাথরুম হয় বা কোনো কিছু খাওয়ার পরপর বাথরুমে যাওয়া লাগে। বাথরুম অনেক সময় নরম হয়। অনেক সময় কঠিন হয়। অনেক সময় পায়খানার সাথে বিজল যায়।
এ ধরনের রোগীরা আমাদের কাছে দুই ভাবে প্রেজেন্ট হয়; একটা পাতলা পায়খানা, একটা কঠিন পায়খানা নিয়ে। তো কোনো কোনো রোগী আসে শুধু পাতলা পায়খানা নিয়ে। কোনো কোনো রোগী আছে কঠিন পায়খানা হয়।
আইবিএস রোগীর পরীক্ষা
আমরা কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি। যেমন: আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়ে থাকে। তারপরে পায়খানা পরীক্ষা করা হয়। তারপরে কোলোনোস্কপি করা হয়। সাধারণত এই পরীক্ষাগুলো এই রোগ ডায়াগনসিসের জন্য লাগে না, কিন্তু এই রোগের যে সিম্পটম (লক্ষণ), এই সিম্পটমগুলো আবার অনেক রোগের সঙ্গে মিলে যায়। যেমন: পেটের মধ্যে যদি টিউবারকলোসিস (যক্ষ্মা) হয়, ইনটেস্টাইনাল টিউবারকলোসিস, তখন কিন্তু অনেক সময় পাতলা পায়খানা হয়। আবার অনেক সময় ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজিজের ক্ষেত্রেও পাতলা পায়খানা থাকতে পারে।
এ জন্য কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হয় ভেতরে কোনো সমস্যা আছে কি না। এ জন্য স্টুল (মল) পরীক্ষা করা হয়, লিভার ফাংশন পরীক্ষা করা হয়। তারপরে কোলোনোস্কপি করা হয়।
আইবিএসে সাধারণত কোনো টেস্টে কোনো কিছু পাওয়া যায় না। শুধু অন্য ডিজিজগুলো আছে কি না পরীক্ষা করার জন্য টেস্ট করা হয়। এ পরীক্ষাগুলো করে আমরা আইবিএস ডায়াগনসিস করি।
চিকিৎসা
চিকিৎসার মধ্যে প্রথমে রোগীকে আশ্বস্ত করা হয় যে, আপনার যে পেটের সমস্যা, বাথরুমের সমস্যা, এটা আসলে ভেতরের কোনো সমস্যা না। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে; সব ভালো আছে। আশ্বস্ত করতে হয় রোগীকে।
রোগীর টেনশন/দুশ্চিন্তা এগুলো মুক্ত করতে হয়। এরপরে পাতলা পায়খানা হলে পেশেন্টের খাওয়া-দাওয়া সম্বন্ধে আমরা বলি যে, আপনি কী ধরনের খাবার খেলে পেট ভালো থাকবে। পাতলা পায়খানা যেন না হয়। এ জন্য দুধজাতীয় খাবারটা আমরা বন্ধ করে দিই। গ্লুটেন ফ্রি ডায়েট দিই। গ্লুটেন মানে গমজাতীয় খাবার, যেগুলো আমরা বন্ধ করে দিই। আর শাকজাতীয় খাবারগুলো বন্ধ করে দিই। এগুলো না খেলে পেটটা ঠিক থাকে।
যাদের কনস্টিপেশন (কোষ্ঠকাঠিন্য) থাকে, তাদেরকে আমরা বলি পানি বেশি করে খাবেন, শাকসবজি বেশি খাবেন, ব্যায়াম করবেন। তাইলে কনস্টিপেশনটা কম থাকে।
এগুলোর বাইরে আমরা অন্য ধরনের একটা ওষুধ, প্রোবায়োটিকস ইউজ করা হয়। এটা এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া। আমরা ধারণা করি যে, পেটের গণ্ডগোলটা ব্যাকটেরিয়ার ইমব্যালেন্সের কারণে হয়। আমাদের পেটের মধ্যে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার দরকার। ব্যাকটেরিয়া দুই রকম আছে। একটা ভালো, একটা খারাপ।
যখন খারাপ ব্যাকটেরিয়াটা বেড়ে যায়, তখন পাতলা পায়খানা হয়। আর যখন খারাপ ব্যাকটেরিয়া কম থাকে, ভালো ব্যাকটেরিয়া বেশি থাকে, তখন মানুষ সুস্থ থাকে। এ জন্য প্রোবায়োটিকস ইউজ করলে ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যাটা বেড়ে খারাপ ব্যাকটেরিয়াটাকে কন্ট্রোল করে রাখে। তখন পায়খানা ভালো হয়।
এ ছাড়া বিভিন্ন রকম ওষুধ আমরা ইউজ করি। যেমন: মেবেভেরিন হাইড্রোক্লোরাইড বা এ জাতীয় অনেক ওষুধ আমরা ইউজ করে থাকি। যদি গ্যাস্ট্রিকের কোনো ওষুধ লাগে, আমরা সাধারণত ফেমোটিডিনটা ইউজ করি বা রেমিপ্রাজটলটা ইউজ করি। অন্য গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সাধারণত পেটটা একটু নরম করে ফেলে। এ জন্য ওমিপ্রাজল, ইসমিপ্রাজল আইবিএসে ইউজ করা হয়।
সারকথা
তো আমি বলব, এভাবে যদি আপনারা জীবনযাপন করেন, খাওয়া-দাওয়া কন্ট্রোলের মাধ্যমে, নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে ওষুধগুলো রেগুলার খাওয়ার মাধ্যমে আর আমি যেভাবে বলছি, সেভাবে যদি চলেন, আশা করি আইবিএস থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
এটা নিয়ে টেনশন করার কিছু নেই। এটা ওই রকম বড় কিছু নয়। আইবিএসের একটা বিষয় হলো এটা সিরিয়াস কোনো রোগ না। এ থেকে কোনো ক্যানসার বা এখান থেকে খারাপ কিছু হওয়ার সম্ভাবনা নাই। এটা শরীরকে একটু ভোগায় বা কষ্ট দেয়। এটা মুক্ত করার জন্য জীবনপ্রণালি একটু চেঞ্জ করলে, খাওয়া-দাওয়া কন্ট্রোল করলে, নিয়মিত ব্যায়াম করলে আশা করি এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন:চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে ধানক্ষেতে কাজ করার সময় সাপের দংশনে আহত হয়েছেন মিলন আলী নামে এক কৃষক। পরে অন্য কৃষকরা তাকে উদ্ধার করে শিবগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। এ সময় মিলন আলী সাপটিও হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
সোমবার দুপুরে শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা ইউনিয়নের বোগলাউড়ি এলাকার একটি ধানক্ষেতে এ ঘটনা ঘটে। আহত মিলন আলী ওই এলাকার তোবজুল হকের ছেলে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মিলন আলী বলেন, ‘সাপের ধরন চিহ্নিত করতে ও সঠিক চিকিৎসার জন্য সাপটি ধরে আমার ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে আসতে বলেছিলাম। তাই সে সাপটি ব্যাগে করে নিয়ে আসে। চিকিৎসকরা সাপটি দেখে রাসেল ভাইপার বলে নিশ্চিত করেছেন।’
শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মামুন কবির জানান, আক্রান্ত ব্যক্তি একটি সাপের বাচ্চাসহ হাসপাতালে আসেন। তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে তিনিশঙ্কামুক্ত। তারপরও আমরা ২৪ ঘণ্টা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছি।’
মাদারীপুরের শিবচরে একই দিনে তিনজনকে সাপে দংশন করেছে। তাদের মধ্যে দুজন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন। অপরজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
হাসপাতাল ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শনিবার বিকেলে শিবচর উপজেলার চর বাচামারা গ্রামের লোকমান খান বাড়ির পাশে বাদাম ক্ষেতে রাখা ঝাকার নিচ থেকে হাতে কাঁচি তুলছিলেন। এ সময় একটি সাপ তার হাতে দংশন করে। পরিবারের লোকজন তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা নিশ্চিত হন যে তাকে বিষধর সাপে দংশন করেছে। চিকিৎসকরা তাকে এন্টিভেনম দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে স্বজনদের অনুমতিপত্রে স্বাক্ষর করতে বললে তারা অস্বীকার করেন। এজন্য স্বজনদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোগীকে ঢাকায় রেফার করা হয়।
অপরদিকে একই দিন দুপুরে উপজেলার মাদবরচর ইউনিয়নের আলেপখাঁর খাঁড়াকান্দি গ্রামের শাহাবুদ্দিন হাওলাদার বাড়িতে পালা থেকে গরুর জন্য খড় বের করার সময় একটি সাপ তাকে দংশন করে। পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে দ্রুত শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
একই দিন সকালে উপজেলার সন্নাসীরচর ইউনিয়নের খাসচর বাচামারা গ্রামের মোসলেম কাজী বাড়ি সংলগ্ন খালের পানিতে পাট জাগ দিচ্ছিলেন। এসময় তাকে একটি সাপে দংশন করে। তার চিৎকারে পরিবারের সদস্যরা এসে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. ফারজানা সুলতানা বলেন, সাপের দংশনে আহত তিনজন রোগী হাসপাতালে এসেছেন। আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি দুজনকে বিষধর সাপে কাটেনি। তাই তাদেরকে এন্টিভেনম দেয়ার প্রয়োজন হয়নি। তবে তাদেরকে আমরা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছি। অপরজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ওষুধপত্র, স্যালাইনসহ হাসপাতালে সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। ডেঙ্গু মৌসুম শুরু হলে এ বিষয়ে আরও উদ্যোগ নেয়া হবে।
রোববার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। যুক্তরাজ্য ও সুইজারল্যান্ড সফর নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। খবর বাসসের
সামন্ত লাল সেন বলেন, সম্মিলিতভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতি যথেষ্ট। ডেঙ্গু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, দপ্তর এবং সিটি কর্পোরেশনের সমন্বিত উদ্যোগে কাজ করা উচিত। শিগগিরই এ বিষয়ে আন্ত:মন্ত্রণালয় সভার আয়োজন করা হবে।
যত্রতত্র অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বন্ধে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারণা জোরদার করা উচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে নিয়মিত তদারকি করা উচিত।
জেনেভা সফর নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে ফাইলেরিয়া নির্মূল এবং বিশ্বে প্রথম কালাজ্বর নির্মূল করায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ৭৭তম সাধারণ সভায় তার বক্তব্যে বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। মহাপরিচালক বলেছেন, অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বাংলাদেশ হতে পারে একটি যথাযথ রোল মডেল।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আজিজুর রহমান, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (আর্থিক ব্যাবস্থাপনা ও অডিট অনুবিভাগ) মো. আব্দুস সামাদ প্রমুখ।
২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ২২ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত হিসাবে এই তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এই সময়ের মধ্যে ৪৫৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যায়নি। এ পর্যন্ত ২৯ হাজার ৪৯৫ জন করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন। করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ২০ লাখ ১৭ হাজার ৮৮০ জন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, চিকিৎসকের ওপর কোনো আক্রমণ যেমন আমি সহ্য করব না, তেমন রোগীর প্রতি কোনো চিকিৎসকের অবহেলাও বরদাস্ত করা হবে না।
রোববার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে অনুষ্ঠিত ৪১তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) ও বিসিএস (পরিবার পরিকল্পনা) ক্যাডারে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। খবর বাসসের
সামন্ত লাল সেন বলেন, মন্ত্রী হিসেবে আমার বয়স মাত্র সাড়ে ৩ মাস। এই অল্প সময়ে আমি যেখানে গিয়েছি একটা কথাই বলেছি, আমি যেমন চিকিৎসকেরও মন্ত্রী, ঠিক তেমনি আমি রোগীদেরও মন্ত্রী। মন্ত্রী হিসেবে শুধু একটা প্রতিশ্রুতিই আমি দিতে পারি, তোমরা তোমাদের সর্বোচ্চ সেবাটুকু দিয়ে যাও, তোমাদের বিষয়গুলোও আমি দেখব।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম এর সভাপতিত্বে ওরিয়েন্টেশনে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আর বানু প্রমুখ।
নবনিযুক্ত চিকিৎসকদের উদ্দেশে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এ দেশের মানুষ অতি সাধারণ। তাদের চাওয়া-পাওয়াও সীমিত। ডাক্তারের কাছে এলে তারা প্রথমে চায় একটু ভালো ব্যবহার। একটু ভালো করে তাদের সাথে কথা বলা, একটু মনোযোগ দিয়ে তাদের কথা শোনা। এটুকু পেলেই তারা সন্তুষ্ট।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখতেন, তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়া। আমি মনে করি সে স্বপ্ন পূরণ করার কারিগর হচ্ছো তোমরা। যারা আজকে চিকিৎসক হিসেবে যোগদান করতে যাচ্ছো। আমার বিশ্বাস, তোমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবে।
অনুষ্ঠানে ৪১তম বিসিএস স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ ক্যাডারে সহকারী সার্জন পদে ১০৩ জন, সহকারী ডেন্টাল সার্জন পদে ১৭১ জন এবং পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদে ১৫৩ জন যোগদান করেন।
দেশে আরও ২৪ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টার এই হিসাব দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।
এতে জানানো হয়, নতুন করে ১৪ জনের শরীরে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৪৯ হাজার ৯৪৫ জনে।
তবে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনায় কারো মৃত্যু হয়নি। এখন পর্যন্ত ভাইরাসটিতে মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৪৯৪ জনের।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩০২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। একই সময় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ। মোট পরীক্ষায় এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৭ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মোট মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৯ জন। এ নিয়ে দেশে মোট সুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ১৭ হাজার ৩৭৪ জনে।
দেশজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহ ও উত্তপ্ত তাপমাত্রার কারণে শিশুদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়ে ইউনিসেফ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির বাংলাদেশ প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট।
বুধবার ইয়েট এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আপনার প্রতিবেশিদের দিকে নজর রাখুন- দুর্বল পরিবার, প্রতিবন্ধী শিশু, গর্ভবতী নারী এবং বৃদ্ধরা তাপপ্রবাহের সময় অসুস্থতা বা মৃত্যুর উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে। সময় নিয়ে প্রতিবেশীদের খোঁজখবর নিন, বিশেষ করে যারা একা থাকেন।’
ইউনিসেফের ২০২১ সালের শিশুদের জলবায়ু ঝুঁকি সূচক (সিসিআরআই) অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের ‘অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিতে’ রয়েছে বাংলাদেশের শিশুরা।
ইউনিসেফের মতে, তাপমাত্রার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে, বিশেষ করে নবজাতক, শিশু এবং ছোট বাচ্চাদের জন্য যারা তাপজনিত অসুস্থতা যেমন হিট স্ট্রোক এবং ডিহাইড্রেশনের কারণে বিশেষভাবে ডায়রিয়া ঝুঁকিপূর্ণ জনসংখ্যা হিসেবে বিবেচিত হয়।
ইয়েট বলেন, ‘যেহেতু শিশুদের ওপর ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার প্রভাবের উদ্বেগের কারণে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আগামী ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে, তাই ইউনিসেফ অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের হাইড্রেটেড ও নিরাপদ রাখতে অতিরিক্ত সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।’
এই তাপপ্রবাহের তীব্রতা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব থেকে শিশুদের রক্ষা করার জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়।
তাপমাত্রা নজিরহীনভাবে বাড়তে থাকায় অবশ্যই শিশু এবং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সুস্থতাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে বলে জানান ইয়েট।
এই তাপপ্রবাহ থেকে ইউনিসেফ কর্মী, বাবা-মা, পরিবার, যত্নগ্রহণকারী এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে শিশু ও গর্ভবতী নারীদের রক্ষায় নিচের পদক্ষেপগুলো নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে-
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
প্রাথমিক চিকিৎসা
যদি কোনো শিশু বা গর্ভবতী নারীর হিটস্ট্রেসের লক্ষণগুলো দেখা যায়, যেমন- মাথা ঘোরা, অতিরিক্ত ঘাম, বমি বমি ভাব, হালকা জ্বর, নাক দিয়ে রক্তপাত, পেশি খিঁচুনি, ফুসকুড়ি ইত্যাদি; ওই ব্যক্তিকে ভালো বায়ু চলাচলসহ শীতল, ছায়াযুক্ত জায়গায় রাখুন এবং ভেজা তোয়ালে বা শীতল পানি দিয়ে শরীর মুছে দিন।
পানি বা ওরাল রিহাইড্রেশন লবণ (ওআরএস) গ্রহণ করুন।
হিটস্ট্রেসের গুরুতর লক্ষণগুলোতে (যেমন: বিভ্রান্তি বা প্রতিক্রিয়া জানাতে অক্ষমতা, অজ্ঞান হওয়া, শরীরের উচ্চ তাপমাত্রা, দ্রুত হৃদস্পন্দন, খিঁচুনি এবং চেতনা হ্রাস) হলে জরুরিভিত্তিতে হাসপাতালে নেয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ।
মন্তব্য