লিভারের মারাত্মক এক রোগ লিভার সিরোসিস। এ রোগে প্রতি বছরই অনেকের মৃত্যু হয়। প্রাণঘাতী রোগটির চিকিৎসা পদ্ধতি গত ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এক ভিডিওতে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হেপাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মেডিসিন, লিভার ও পরিপাকতন্ত্র রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ফরহাদ হোসেন মো. শাহেদ। পরামর্শগুলো তার ভাষায় পাঠকদের জন্য উপস্থাপন করা হলো।
লিভার সিরোসিসের চিকিৎসাটা আমরা তিন ভাগে ভাগ করে থাকি। একটা হলো সাধারণ চিকিৎসা, একটা হলো যে সমস্ত কারণে লিভার সিরোসিস হয়, কারণভিত্তিক চিকিৎসা এবং সর্বশেষ হচ্ছে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন।
সাধারণ চিকিৎসা
সাধারণ চিকিৎসার মধ্যে আসবে রোগীর খাওয়া-দাওয়া। সাধারণত লিভার সিরোসিসের রোগীদের আমরা হাই প্রোটিন ডায়েট দিই, হাই ফাইবার ডায়েট দিই এবং ব্রাঞ্চড চেইন অ্যামাইনো অ্যাসিড দিই।
হাই প্রোটিন ডায়েটের মধ্যে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ এগুলো থাকবে। হাই ফাইবার ডায়েটের মধ্যে টাটকা শাকসবজি, ফলমূল এগুলো থাকবে। আর ব্রাঞ্চড চেইন অ্যামাইনো অ্যাসিডেরে মধ্যে মটরশুঁটি, মসুরের ডাল, বাদাম এগুলো থাকবে।
এ ধরনের খাবারগুলো দেওয়া হয়, কারণ লিভার সিরোসিস হচ্ছে একটা ক্ষয়জনিত রোগ। এখানে লিভার কাজ করে না। লিভার না কাজ করার কারণে রোগীরা শরীরে শক্তি পায় না। এভাবে আস্তে আস্তে ওয়েট (ওজন) কমে যায়। এ জন্য প্রোটিনটা খুবই ইম্পরট্যান্ট। প্রোটিন যাতে রোগীরা সঠিকভাবে পায়, এটা আমাদের খেয়াল রাখতে হয়।
লিভার সিরোসিস রোগীদের সাধারণ চিকিৎসার মধ্যে দুই নম্বর হলো সবসময় লিভার সিরোসিস রোগীদের কিছু না কিছু ইনফেকশন থাকে এবং অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া লাগে। তারপরে রোগীর বাথরুম যাতে ক্লিয়ার থাকে। গাট স্টেরিলাইজেশন। এ জন্য আমরা লেক্সেটিভজাতীয় কিছু দিয়ে থাকি, যেমন: অ্যাভোলাক সিরাপ, লেকটিটলের মতো ওষুধ দিয়ে থাকি, যাতে বাথরুম দুই থেকে তিনবার হয়। তাহলে রোগীর ইনফেকশনটাও কম হয়, গাট স্টেরিলাইজ থাকে। রোগীর ইমপ্রুভ থাকে।
এরপর হলো পোর্টাল হাইপারটেনশন থাকে। লিভার সিরোসিসের রোগীদের পোর্টাল প্রেশারটা কমায়া রাখতে হয়, যে কারণে আমরা ইনডেভারের মতো ওষুধগুলো প্রেসক্রাইব করে থাকি। পোর্টাল প্রেশার কম থাকলে ব্লিডিংয়ের সম্ভাবনাও কম থাকে। এগুলো হচ্ছে সাধারণ চিকিৎসা।
কারণজনিত চিকিৎসা
কারণের চিকিৎসার মধ্যে আছে, যাদের হেপাটাইটিস বি বা বি ভাইরাস থাকে, তাদের বি ভাইরাসের চিকিৎসা দেওয়া হয়। বি ভাইরাসের জন্য আগে ভাইরাস ধরা পড়লে আমরা এক বছর, দুই বছর, তিনি বছর পরীক্ষার মাধ্যমে যতটুকু ইন্ডিকেশন দিতাম, কিন্তু এখন যেটা গেছে ভাইরাসের চিকিৎসা বন্ধ করার পর অনেক রোগী আমাদের কাছে সিরোসিস বা ক্যানসার নিয়ে আসে।
কাজেই এখন ট্রেন্ড হচ্ছে ভাইরাসের ওষুধ বন্ধ করা যাবে না। ডাক্তারের পরামর্শমতো প্রয়োজনে ৪ বছর, ১০ বছর, ১৫ বছর যা লাগে, সবসময় কন্টিনিউ করতে হবে। লিভার বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে যেভাবে খেলে ভালো হয়, সেভাবে খেতে হবে।
সি ভাইরাস যদি থাকে, আমরা সি ভাইরাসের চিকিৎসা দিয়ে থাকি। এটার একটা ভালো চিকিৎসা আছে।
ফ্যাটি লিভার যদি থাকে, অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের ক্ষেত্রে আমরা অ্যালকোহল বন্ধ করে দিই। আর নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের কারণগুলোর মধ্যে হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, ওবেসিটি এগুলো কমানোর কথা বলে থাকি।
এগুলো কমানোর সাথে সাথে এগুলো কন্ট্রোলের যে ওষুধ, সেগুলো আমরা খেতে বলি।
এরপর অটোইমিউন হেপাটাইটিস যদি থেকে থাকে, সেখানে আমরা স্টেরয়েড দিয়ে থাকি। এ ছাড়া যদি অটোইমিউন বিগ ডিজিজ থাকে, এগুলো চিকিৎসা করা হয়। এ ছাড়া উইলসন’স ডিজিজের মতো বংশগত যেসব রোগ আছে, এগুলোর সুন্দর চিকিৎসা আছে। চিকিৎসা করলে রোগী ইমপ্রুভ করে, অনেক দিন ভালো থাকে।
হার্ট ফেইলিউর রোগীদের যদি লিভার সিরোসিস থাকে, আমরা হার্ট ফেইলিউর কন্ট্রোল করি। তখন রোগী অনেক দিন ভালো থাকে।
ড্রাগসের কারণে যদি লিভার সিরোসিস হয়, সে অনুযায়ী ওষুধ পরিবর্তন করা হয়।
লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট
লিভার সিরোসিসের আমরা যে চিকিৎসাগুলো বলেছি, এগুলো এ কারণে যে, রোগী যেন জাস্ট সুস্থ থাকে এবং উপসর্গবিহীন থাকে, কিন্তু লিভার সিরোসিস যেটা হয়ে গেছে, এটার আসলে কোনো চিকিৎসা নাই। এর একটাই চিকিৎসা; লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট। এটা আমাদের দেশে চার-পাঁচটা অলরেডি হয়ে গেছে এবং সাকসেস খুবই ভালো। এ জন্য আমাদের বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অতি শিগগিরই লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট শুরু হচ্ছে। এটা নিয়ে এখন আর আমাদের কোনো চিন্তা নাই।
ইনশাল্লাহ যে সমস্ত লিভার সিরোসিস রোগী আছেন, আপনাদের চিকিৎসা ইনশাল্লাহ আছে। এটাও একটা চিকিৎসা, যেটাতে রোগী ইনশাল্লাহ সুস্থ হয়ে যায়, যে জন্য লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট এটা হচ্ছে লেটেস্ট ট্রিটমেন্ট। এটার মাধ্যমে রোগী সুস্থ হয়।
আরও পড়ুন:এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ২২০ জন।
শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে গত ২৪ ঘণ্টার এ হিসাব দেয়া হয়েছে।
নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদর মধ্যে ঢাকায় ১০৪ এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ১১৬ জন ভর্তি হয়েছেন।
অধিদপ্তর থেকে বলা হয়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট এক হাজার ৬০ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। ঢাকার ৫৩টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ৫৯১ এবং অন্যান্য বিভাগের হাসপাতালে ভর্তি ৪৬৯ জন রোগী।
এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে ৬০ হাজার ২৯৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৩৮ হাজার ১০৪ জন এবং ঢাকার বাইরে ২২ হাজার ১৯৪ জন।
এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে ২৬৬ জন মারা গেছেন। চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়েছেন ৫৮ হাজার ৯৭২ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ৩৭ হাজার ৩৪৯ জন এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে ২১ হাজার ৬২৩ জন সুস্থ হয়েছেন।
আরও পড়ুন:দেশের প্রায় ৫ কোটি মানুষ থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছেন। পুরুষদের তুলনায় নারীরা এই সমস্যায় পড়েছেন চার থেকে পাঁচ গুণ।
বুধবার রাজধানীতে অ্যাসোসিয়েশন অফ ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড্রোক্রাইনোলজি অ্যান্ড ডায়াবেটোলজিস্ট অফ বাংলাদেশ (এসিইডিবি) আয়োজিত বিশ্ব থাইরয়েড দিবস উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
এসিইডিবির অফিসে সংবাদ সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. ফরিদ উদ্দিন। সঞ্চালনা করেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. এম এ হালিম খান।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, থাইরয়েড রোগীর অর্ধেকের বেশি মানুষ জানেন না যে তারা এ সমস্যায় ভুগছেন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অধ্যাপক ইন্দ্রজিৎ প্রসাদ বলেন, বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণ থাইরয়েড সমস্যা। তাই গর্ভধারণ সংক্রান্ত সমস্যা হলে গাইনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শের পাশাপাশি থাইরয়েডের চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিৎ। তা না হলে নবজাতকের মানসিক ও শারীরিক বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
তিনি বলেন, এ অবস্থায় শিশু অস্বাভাবিক হিসেবে বেড়ে উঠতে পারে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে গর্ভবতী অবস্থায় ও প্রসবের আগে থাইরয়েড পরীক্ষা জরুরি।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক আতিকুর রহমান বলেন, সাধারণত আয়োডিনের অভাবে গলাফুলা রোগ হয়ে থাকে, যাকে সাধারণ ভাষায় ঘ্যাগ রোগ বলা হয়।
বাংলাদেশে আয়োডিন যুক্ত লবণ খাওয়া হলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ডায়াবেটিস ও হরমোন বিভাগের উদ্যোগে পরিচালিত সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, দেশের বেশিরভাগ স্কুলগামী শিশু এবং গর্ভবতী মায়েদের আয়োডিনের অভাব রয়েছে। আয়োডিন শরীরে খুব প্রয়োজনীয় থাইরয়েড হরমোন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অনুষ্ঠানে থাইরয়েড বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মীর মোশাররফ হোসেন বলেন, থাইরয়েডের বিষয়ে সচেতনতা জরুরি। থাইরয়েডের বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা না থাকায় অনেকে দেরিতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ না জেনেই অনেকের পরামর্শে পরামর্শে ওষুধ খান। এতে অনেক সময় ভুল ওষুধ খাচ্ছেন। এতে রোগের জটিলতা বাড়ছে।
থাইরয়েডের প্রকারভেদ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, হাইপো থাইরয়েড হলে, অল্প খাবার খেয়েও মানুষের ওজন বেড়ে যাবে, শরীর দুর্বল লাগবে। এসব রোগীদর কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়, নারীদের ক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত মাসিকের সমস্যা হয়। অপরদিকে হাইপার থাইরয়েডের ক্ষেত্রে তার বিপরীত লক্ষণ দেখা যায়। এর চিকিৎসাও আলাদা হবে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ঢাকার তাপমাত্রা কমাতে সম্প্রতি উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) নিয়োগ পাওয়া ‘চিফ হিট অফিসার’ (সিএইচও) বুশরা আফরিন।
ঢাকা উত্তর সিটির জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন নিউজবাংলাকে শুক্রবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, আজ সকালে তার জ্বর আসায় করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয় । নমুনা পরীক্ষার পর তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা যায়।
মকবুল হোসাইন বলেন, তিনি (বুশরা আফরিন) বর্তমানে বাসায় আইসোলেশনে আছেন। সেখানেই তার চিকিৎসা চলছে। বর্তমানে তার কাশি ও দুর্বলতা আছে। তিনি সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।
ঢাকা শহরের তাপমাত্রা কমাতে ডিএনসিসি এবং যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক অ্যাড্রিয়েন আরশট রকফেলার ফাউন্ডেশনের মধ্যে সমঝোতা চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়েছেন বুশরা আফরিন। এই চুক্তির ফলে সিটি করপোরেশন এবং প্রতিষ্ঠানটি যৌথভাবে কাজ করবে। বুশরা এশিয়ার প্রথম সিএইচও।
সিএইচও হিসেবে বুশরা আফরিন প্রচণ্ড গরমের প্রেক্ষাপটে ঢাকা উত্তরকে নিরাপদ করার জন্য নেতৃত্বে দেবেন। তাপমাত্রা কমাতে তিনি শহরব্যাপী নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবেন। ঢাকা উত্তরের জনগণের মধ্যে তাপ সচেতনতা বৃদ্ধি, সুরক্ষা প্রচেষ্টা ত্বরান্বিতকরণসহ নতুন নতুন কাজ করবেন।
ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলামের মেয়ে বুশরা কানাডায় গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে লেখাপড়া করা। তিনি যে পদে বসে শহরের তাপমাত্রা কমানোর চেষ্টা চালাবেন, বিশ্বের আরও সাত শহরে একই পদ নিয়ে একই কাজ করছেন আরও সাত নারী।
রাজশাহীতে হেপাটাইটিস ভাইরাসের সংক্রমণ ও জন্ডিস রোগী বাড়ছে। মূলত পানির কারণেই এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে যাচ্ছে বলে ধারণা করছেন চিকিৎসকরা।
রোগী বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি রাজশাহী সিটি করপোরেশনকে চিঠি দিয়েছে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে, শহরে পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান রাজশাহী ওয়াসা কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, তাদের পানির মান ঠিক আছে।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতলের তথ্যমতে, গত এক মাসে পানিবাহিত রোগে রাজশাহী নগরীর প্রায় ২৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। তারা হেপাটাইটিস ভাইরাসের বিভিন্ন ধরন ও জন্ডিস রোগে আক্রান্ত।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহম্মেদ বলেন, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতলে হেপাটাইটিস ও জন্ডিস রোগে আক্রান্ত রোগী বেড়েছে। এটি যেহেতু পানিবাহিত রোগ তাই আমরা সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগকে চিঠি দিয়েছি। সেখানে আমরা বলেছি-রোগী বাড়ছে তাই ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তথ্য মতে, রাজশাহীর নগরীতে গত এক সপ্তাহে নতুন করে ৯ জন জন্ডিস ও হেপাটাইটিস রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর আগের সপ্তাহে ১৬ জন জন্ডিস ও হেপাটাইটিস রোগী শনাক্ত হয়।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এফএমএ আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, পানিবাহিত রোগী নগরীতে বাড়ছে। এই সংক্রান্ত একটি চিঠিও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে পাঠানো হয়েছে। প্রতি সপ্তাহজুড়েই আমরা জন্ডিস ও হেপাটাইটিস রোগীর খবর রাখি ও তালিকা করি। আমাদের মাঠ কর্মীদের জন্ডিস ও হেপাটাইটিস রোগীর তথ্য নিতে বলা হয়েছে। এই রিপোর্ট অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে রাজশাহী ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাকীর হোসেন (অতিরিক্ত সচিব) বলেন, আমাদের কাছে এমন তথ্য নেই। এটা পানিবাহিত রোগ সেটা ঠিকই। সুনির্দিষ্টভাবে কোনো বাড়িতে এরকম হয়েছে এসব তথ্য পেলে আমরা আরেকটু খোঁজ নিতে পারি।
তিনি বলেন, তবে ওয়াসার পানিতে কোনো সমস্যা নেই, আমরা প্রতিনিয়ত পরীক্ষা করি। যারা ব্যবহার করে তারা যে রিজার্ভার থেকে পানি ব্যবহার করেন সেখানেও সমস্যা থাকতে।
বিশ্বজুড়ে অসুস্থতাজনিত মৃত্যুর অন্যতম কারণ স্ট্রোক। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) ডেটা অনুযায়ী, ২০২০ সালে কার্ডিওভাসকুলার রোগে আক্রান্ত প্রতি ছয়জনের একজনের মৃত্যু হয়েছে স্ট্রোকে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন।
গর্ভাবস্থায় অনেক নারী স্ট্রোকের শিকার হন। এ ক্ষেত্রে করণীয় কী, তা এক ভিডিওতে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. শফিকুল ইসলাম। পরামর্শগুলো তার ভাষায় উপস্থাপন করা হলো।
আপনারা অনেক ক্ষেত্রেই দেখবেন, বিভিন্ন সময় পাবেন, আপনার আশেপাশে দুই-একজনকে হয়তো পেয়েছেন প্রেগন্যান্সির সময় বা ডেলিভারির পরে স্ট্রোক নিয়ে আসেন। অনেক ক্ষেত্রে ব্রেনের, অনেক ক্ষেত্রে স্পাইনাল কর্ডেরও নিয়ে আসে। ব্রেনের স্ট্রোকটা প্রেগন্যান্সির সময় দুই ধরনের হয়। একটা হচ্ছে প্রেগন্যান্সির সময় আমরা জানি হাইপারডাইনামিক সার্কুলেশন থাকে রক্তের ভলিউম বেড়ে যায়, রক্ত চলাচল করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রেশারও বাড়ে, সেটা আমরা জানি। রক্তনালি জমাট বাঁধার টেনডেন্সি (প্রবণতা) একটু বেড়ে যায় অনেক ক্ষেত্রে। এই সংক্রান্ত দুই ধরনের স্ট্রোকই পাওয়া যায়।
ধমনি রিলেটেড স্ট্রোক বা শিরা রিলেটেড স্ট্রোক। শিরা রিলেটেড স্ট্রোকগুলোকে আমরা বলি সেরিব্রাল ভেনাস সাইনাস থ্রমবোসিস। ব্রেন এবং সাইনাস থ্রমবোসিস হলে যেটা হয়। এই রোগীগুলো তীব্র মাথাব্যথা নিয়ে আসে। আমাদের কাছে যখন আসে, তখন একটা বড় অংশের সিটি স্ক্যানে কালো দেখি রক্ত চলাচল কম হচ্ছে এ কারণেই। শিরা মানে কী, আর্টারি দিয়ে রক্ত যাচ্ছে। রক্তটা শিরা দিয়ে ফিরে আসতে পারতেছে। এই ধরনের স্ট্রোক। আর ধমনিতে স্ট্রোক মানে আর্টেরিতে রক্ত যাচ্ছে। জাস্ট উল্টা। তো অনেক ক্ষেত্র্রে শিরা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণও তৈরি হয়, যেটাকে আমরা বলি হেমোরেজিক ইনফল। এ ম্যানেজমেন্টগুলো একটু কঠিন। হাইড্রেশন লাগে। বিভিন্ন ধরনের রক্ত জমাট বাঁধার টেনডেন্সি কমে যায়, সেই টাইপের ওষুধ দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডিকমপ্রেসিভ সার্জারি লাগে। আবার অনেক নারীরই থাকে এ ধরনের রক্ত জমাট বাঁধার টেনডেন্সি বেশি। আমরা কিছু কিছু পরীক্ষা করে সে কারণগুলো দেখি এবং সেই রিলেটেড ওষুধ উনাকে দীর্ঘদিন চালাতে হয়। কারও কারও ক্ষেত্রে যে হেমোরেজ হয়েছে, রক্তক্ষরণ হয়েছে, আমরা কিছু সার্জারিও লাগে।
ইনিশিয়াল ড্যামেজটা যদি আমরা কন্ট্রোল করতে পারি, ভালো হয়ে যায়। সবাই ভালো হয় অলমোস্ট এবং নরমাল লাইফ ফিরে পায়। আর ধমনির জন্য যেটা হয়, এটা রাপচার এবিএম হইতে পারে, অ্যানিউরিজম রাপচার হতে পারে।
তো এই রোগীগুলো আমাদের ডিটেক্ট করা দরকার আছে যে, কী কারণে এগজ্যাক্টলি স্ট্রোকটা হয়েছে এবং চিকিৎসা করা। সমস্যা যেটা হয়, পেটে বাচ্চা আছে, এই সময়ে রক্তনালির অসুখটা ডিটেক্ট করতে আমাদের ঝামেলা হয়ে যায়। আমি এক্সরে করি বা সিটি স্ক্যান করি বা এনজিওগ্রাম করি, সবকিছু আসলে অনেক রেডিয়েশন এমিট হয়, যেটা বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর।
এই কেসগুলো আমরা কেয়ারফুলি ডিল করি, প্রত্যেকটা কেস বাই কেস। কোনো কোনো কেস আমাদের কাছে মনেই হয় যে, আমরা একটু অপেক্ষা করি। বাচ্চারা একটু ডেলিভারি হোক বা জেস্টেশন, মায়ের পেটে একটু বড় হোক। ফর দ্য সেইক অফ দ্যাট বেবি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যদি করতেই হয় যে, দেরি করলে আসলে ব্লিডিং হওয়ার চান্স বেশি, সেই ক্ষেত্রে আমরা স্পেশাল প্রটেকশনে বেবিকে আমরা লিডশিট কাভার দিয়ে এনজিওগ্রাম করে আমরা চিকিৎসার দিকে যাই।
আরও পড়ুন:টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চুয়াডাঙ্গায়। বইছে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। সূর্যের গনগনে আঁচে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। হাসপাতালে বাড়ছে গরমজনিত রোগীর সংখ্যা।
সবশেষ সোমবার বিকেল ৩টায় এখানে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি চলতি মৌসুমে জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর আগে শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে হাসপাতালের আন্তঃবিভাগে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২৫০ জন, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১৫২ জন, জ্বরসহ গরমজনিত অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়ে পুরুষ ও মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ২৪০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়া বহিঃবিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছেন চার শতাধিক রোগী। দিন যত বাড়ছে রোগীর সংখ্যাও বেড়ে চলেছে।
সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে তিনদিন আগে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত দুই বছরের মেয়েকে ভর্তি করেছেন সাবিনা খাতুন। তিনি বলেন, ‘ডাক্তার বলছেন আরও কয়েকদিন থাকতে হবে। এখানে অনেক রোগীর চাপ। ওয়ার্ডের ভেতরে কোনো জায়গা নেই। তাই মেয়েকে নিয়ে বারান্দায় রয়েছি।’
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ মাহবুবুর রহমান মিলন বলেন, ‘তীব্র গরমে হাসপাতালে শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। শয্যার চেয়ে প্রায় ৫ গুণ বেশি রোগী এখন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। তাই চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
‘এই গরমের সময় শিশুদের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বুকের দুধসহ তরল জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে।’
চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, গত কয়েকদিন থেকে চুয়াডাঙ্গা ও এর আশপাশ এলাকার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। গত টানা ১৬ দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। আগামীকাল (মঙ্গলবার) থেকে তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।’
আরও পড়ুন:মানুষের ক্ষতি হয়, তেমন কোন কাজ চলতে দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই ভবনে এফবিসিসিআই আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমনটি জানান।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ওষুধ খারাপ হলে রোগী অসুস্থ হয়ে যাবে। ডাক্তার ভালো, মেশিন ভালো কিন্তু ওষুধ যেটি খাওয়ালেন সেটা খারাপ, নকল, মেয়াদোত্তীর্ণ, নিন্মমানের তাহলে রোগ সারবে না। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স তৈরি হতে থাকে। এসব দেখার দায়িত্বতো আমাদের। এজন্য প্রায় ২০টি শিল্প বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি অনেক মেডিক্যাল কলেজও আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। মানুষের ক্ষতি হয় সেগুলো আমরা চলতে দেব না। দেশের লোকের ক্ষতি হয় সেগুলো যেভাবেই হোক আমরা এলাও করবো না। দেশের মানুষের স্বাস্থ্য নষ্ট হোক এটি আমরা চাইব না।
জাহিদ মালেক বলেন, কসমেটিকস মানুষের মুখে, শরীরে লাগানো হয়, বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়। কসমেটিকসে হারমফুল কোনো উপাদান থাকলে, সেগুলো ব্যবহার করে মানুষের ক্ষতি হয়। এসব ক্ষতিকর কসমেটিকস কেউ যদি দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবহার করে তাহলে স্ক্রিন ক্যান্সার হতে পারে, দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবহার করলে কিডনি, লিভার আক্রান্ত হয়। এ বিষয়গুলো তখন কে দেখবে। কোথাও কেউ মারা গেলে তার দায় দায়িত্ব চলে আসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওপরে। সুতরাং আমরা হালকাভাবে কোনো কিছু নিতে পারব না।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ, বিএসটিআই মহাপরিচালক মো. আবদুস সাত্তার ও নির্বাহী চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব), বিডা, লোকমান হোসেন মিয়া।
প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বিএসটিআই সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আরাফাত হোসেন সরকার, হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ডিএমডি ও সিইও মো. হালিমুজ্জামান, বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম. এ মুবিন খান, মিল্লাত কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডম্যানেজিং ডিরেক্টর মেহফুজ জামান, ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও অ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর জাভেদ আখতার।
সেমিনারে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি ও কসমেটিকস কোম্পানির প্রতিনিধিরা প্রস্তাবিত ওষুধ ও কসমেটিকস আইন-২০২৩ একত্র না পৃথকভাবে প্রণয়ন করার দাবি জানান। পাশাপাশি কোনো আইন করার আগে যেন সংশ্লিষ্ট সবা অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য