পরীক্ষামূলকভাবে দেশের ১২ জেলা ও ৩৯ টি উপজেলার মোট ৫১ টি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বারের মাধ্যমে রোগী দেখার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বেলা ৩ টায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারি চিকিৎসকরা এযাবৎ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের বিকেলে চিকিৎসা সেবা নিতে প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিকে যেতে হতো। প্রধানমন্ত্রীর সেই নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগী হয়েছি। তাই আজ আপাতত পাইলটিং আকারে দেশের ১২ জেলা ও ৩৯ টি উপজেলার মোট ৫১ টি সরকারি হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের শুরু করা হলো। এই কার্যক্রম মানুষের ভালো লাগলে আমরা এ বছরেই দেশের সকল সরকারি হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম শুরু করা হবে।’
সরকারি হাসপাতালগুলো কিসের ভিত্তিতে কাজ করবে- এই প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে আমরা একটি নীতিমালা প্রনয়ণ করেছি। সেই নীতিমালা অনুযায়ী সব কাজ পরিচালিত হবে। নীতিমালায় একজন চিকিৎসক বা অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী কতদিন দায়িত্ব পালন করবেন, কীভাবে করবেন তা বিস্তারিত লেখা আছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব আজিজুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক টিটু মিয়াসহ জুম অনলাইনে ৫১ টি জেলা ও উপজেলা সরকারি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক।
দেশজুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে শনিবার একদিনেই ৮০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। তবে প্রকোপটা বরাবরের মতোই ঢাকায় বেশি।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ২০২ জন ডেঙ্গু রোগী। তাদের মধ্যে ঢাকার সরকারি-বেসরকারি ৫৩টি হাসপাতালে রয়েছে ১৭৬ জন। বাকি ২৬ জন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শনিবার জানায়, এদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৮০ জন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৭৩ জন আর ঢাকার বাইরে ভর্তি হয়েছে সাতজন।
চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে মোট এক হাজার ৭০৪ জন। তাদের মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছে এক হাজার ১১৯ জন। আর চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১৩ জন।
২০০০ সালে দেশে ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পর থেকে বছরের প্রথম ৫ মাসে এতো মৃত্যু এবং হাসপাতালে এতোসংখ্যক রোগী আগে দেখা যায়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ডেঙ্গুর ধরন বদলেছে। তাতে একদিকে ডেঙ্গু যেমন ভয়ংকর হয়ে উঠছে, তেমনি ‘শহুরে রোগ’ ডেঙ্গু শহর ছাড়িয়ে ঝুঁকি বাড়িয়েছে দেশজুড়ে।
বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই ডেঙ্গুর বিপজ্জনক অবস্থার বিষয়ে তারা বলছেন, বর্তমান সময়ে এসে বর্ষাকাল বা বৃষ্টি এসবের সঙ্গে ডেঙ্গুর ততোটা সম্পর্ক নেই। কারণ ডেঙ্গু বিস্তারকারী এডিস মশার লার্ভা এখন জমে থাকছে নির্মাণাধীন ভবন, ওয়াসার মিটার বক্সসহ বিভিন্ন জায়গায়। আর এসব কারণে ডেঙ্গু হয়ে উঠেছে সারা বছরের রোগ। এটা কেবল ঢাকাকেন্দ্রিক নয়, পুরো দেশের ঝুঁকির কারণ।
আরও পড়ুন:প্রায় ১৮ বছর আগে গণমাধ্যমের খবরে দেশের মানুষ প্রথম জানতে পারে তাদের সম্পর্কে। সুশিক্ষিত দুই বোনের স্বেচ্ছা ঘরবন্দি জীবন ও তাদের আচার-আচরণ অবাক করে সবাইকে। কৌতূহলী পাঠকের আগ্রহ দেখে মিডিয়ায়ও একের পর এক খবর প্রকাশ হতে থাকে।
জানা যায়, আরও কয়েক বছর আগে থেকেই তারা স্বেচ্ছায় নিজেদের চার দেয়ালের ভেতর বন্দি করে নিভৃত জীবনযাপন করে আসছেন।
মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত ওই বোন হলেন রিতা ও মিতা। তাদের মধ্যে নুরুন নাহার মিতা প্রকৌশলী এবং আইনুন নাহার রিতা চিকিৎসক। তারা দু’জনই সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত।
দীর্ঘ সময় পেরিয়ে বর্তমানে তারা শারীরিকভাবে আগের তুলনায় অনেকটাই সুস্থ। তবে মানসিক অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি।
নিউজবাংলার সঙ্গে আলাপচারিতায় এমনটিই জানিয়েছেন তাদের বড় বোন কামরুননাহার হেনা। বর্তমানে তার ধানমণ্ডির বাসাতেই থাকেন তারা।
২০০৫ সালের ৭ জুলাই রাজধানীর মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের সি ব্লকের ৯ নম্বর সড়কের ১ নম্বর বাড়ি থেকে রিতা ও মিতাকে উদ্ধার করে একটি মানবাধিকার সংগঠন। সে সময় বাড়িটি ‘ভূতের বাড়ি’ নামেই পরিচিত ছিল।
বাসার দরোজা-জানালা বন্ধ করে থাকতেন তারা। কারও সঙ্গে মিশতেন না, কথাও বলতেন না। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে থাকা মা বিনা চিকিৎসায় মারা যান। দুই বোন মায়ের লাশ ঘরেই রেখে দেন। কাউকে না জানিয়ে মধ্যরাতে হারিকেনের আলোয় তারা ঘরের বাইরে মায়ের লাশ কবর দেয়ার উদ্যোগ নেন। আর তা দেখে ফেলেন প্রতিবেশীরা। এভাবেই পুরো বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়।
মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত দুই বোনকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। দিনের পর দিন ঘরবন্দি অবস্থায় থেকে তাদের শরীরের বর্ণ হয়ে গিয়েছিল ফ্যাকাশে। পুরো দেহ হয়ে উঠেছিল অস্থিচর্মসার। শরীরও প্রচণ্ড দুর্বল।
চিকিৎসায় দুই বোন কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠেন। বেশ কিছুদিন তাদের নিয়ে কোনো আলোচনাও ছিল না। ২০১৩ সালে কাউকে না বলে তারা বগুড়ায় চলে গেলে ফের আলোচনা শুরু হয়। সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করে এনে রাখা হয় বড় বোন কামরুন নাহার হেনার বাসায়।
‘কেমন আছেন সেই রিতা-মিতা’ শিরোনামে ২০২১ সালের ৩১ মে নিউজবাংলায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এরপর আবার তাদের সবশেষ অবস্থা জানতে সম্প্রতি নিউজবাংলার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় বড় বোন কামরুন নাহার হেনার সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘আল্লাহন রহমতে এখন ওরা আগের তুলনায় ভালো আছে। আগে যেমন একটু বেশি উচ্ছৃখল ছিলো, এখন তা কিছুটা কম। তবে আর যাই করুক এখন ওরা ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়াটা করে। আগে তো বেছে বেছে খাবার খেতো। বলতো- এটা খাবো না, সেটা খাবো না। কিন্তু তেমনটা অনেক কম করে।
‘অবশ্য ওদের আচরণটা এখনও আগের মতোই রয়ে গেছে। অনেকটা বাচ্চাসুলভ। কখনও ভালো ব্যবহার করে আবার কখনো উল্টোপাল্টা শুরু করে দেয়। এই ধরুন, ইচ্ছা হলো তো গান গাইতে শুরু করল। আবার ইচ্ছা জাগলে কুরআন শরীফ পড়ে। আর ঘর সব সময় অন্ধকার করে রাখে।
কামরুন নাহার বলেন, ‘বড় সমস্যাটা হলো যে ওরা দুজনই ঠিকমতো ওষুধ খেতে চায় না। আমি খাওয়ার জন্য ওষুধ দিয়ে এলে ওরা জানালা দিয়ে ফেলে দেয়। পাশের বাড়ি থেকে মানুষ দেখে ফেলে তারা আমাকে আবার সেই খবর জানিয়ে দেয়।
‘তখন আমি ওদের জিজ্ঞাসা করি ওষুধ কেন ফেলছো। তখন আবার ওরা কোনো কথা বলে না। এজন্য অনেক সময়ই আমি বুদ্ধি করে ওদের খাবারের সঙ্গে ওষুধ মিশিয়ে দেই। কোনোদিন ডালের সঙ্গে মিশিয়ে দেই; আবার আরেক হয়তো অন্য কোনো খাবারের সঙ্গে। অবশ্য মাঝে মাঝে দেখি ওরা নিজের ইচ্ছায়ই ওষুধ খেয়ে ফেলে।’
হেনা বলেন, ‘আগে আমার একমাত্র মেয়ে ওর দুই খালার দেখাশোনা করতো। বেশ কিছুদিন হলো সে ব্যারিস্টারি পড়তে লন্ডনে আছে। এখন আমাকেই ওদের দেখতে হয়। আমি ছাড়া তো ওদের আর কেউ নেই। ওরা শারীরিকভাবে অসুস্থ হোক আর মানসিকভাবে অসুস্থ হোক, অন্য কেউ তো ওদের নিতে চাইবে না।
আমি ওদের একমাত্র বড় বোন। আমি কি ওদের ফেলে দিতে পারি? আমি মায়ের মতোই ওদেরকে দেখে রাখি। আমার স্বামীও ওদের দিকে খেয়াল রাখে। সাথে আমার একটা কাজের লোক আছে। সেও ওদের দেখভাল করে।’
রিতা-মিতা কী খেতে পছন্দ করেন- এমন প্রশ্নের জবাবে হেনা বলেন, ‘ওরা আইসক্রিম আর রেস্টুরেন্টের খাবার খেতে পছন্দ করে। এই ধরুন ওদের মনে হলো এখন আইসক্রিম খাবে। তখনই আইসক্রিম কিনে দিতে হবে। অন্যথা হলেই খুব জেদ করে। তাই আমি বাসার ফ্রিজে আইসক্রিম কিনে রাখি। রিতা একটু সহনশীল হলেও মিতা আগে থেকেই একটু জেদী। ও-ই জেদ বেশি করে। তখন আবার রিতা ওর সঙ্গে তাল মেলায়।
‘আবার অল্প পরিমাণ আইসক্রিম দিলে ওরা খাবে না। কম দিলে বা না দিলে অনেক চিৎকার-চেঁচামেচি করে। হাতের কাছে কিছু পেলে সেটা ছুড়ে মারে। অথচ ডাক্তার ওদের আইসক্রিম কম খেতে বলেছেন।
‘করোনা মহামারির সময়ে আইসক্রিম নিয়ে ওরা বেশি ভুগিয়েছে। ওই সময়টাই ঠাণ্ডা কিছু খাওয়ার ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই চিকিৎসকরা নিষেধ করতেন। কিন্তু ওদের আইসক্রিম চাই-ই চাই। সে সময়টাতে এই অসুস্থ দুই বোনকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। তবে আল্লাহর রহমতে ওদের করোনা হয়নি।’
রিতা ও মিতা অন্ধকার রুমে দিন-রাত কী করে- এমন প্রশ্নের জবাবে বড় বোন হেনা বলেন, ‘ওরা একেক সময় একেকটি বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কোনো সময় ধ্যানে বসে, কোনো সময় বিড় বিড় করে কী যেন বলে। আবার কোনো সময় গান গায়। বিশেষ করে হিন্দি গান। আবার কোনো সময় কুরআন শরীফ পড়ে।
‘আসলে আমরা এখন এগুলো নিয়ে বেশি মাথা ঘামাই না। ওরা ওদের মতো করে থাকে, আমরা আমাদের মতো কাজ করি। মানসিক আচরণটা ওদের এই ভালো এই খারাপ। মোট কথা ওদের আচরণ আগের মতোই আছে। বাইরে বের হয় না। বাইরের কারো সঙ্গে মেশেও না। ওরা সব সময় অন্ধকার ঘরে থাকতেই পছন্দ করে।’
হেনা আরও বলেন, ‘রিতা-মিতাকে যে ডাক্তার দেখাই তিনি বলেছেন ওদের নিয়ে চিন্তা না করতে। ডাক্তার বলেছেন, ওরা যদি ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করে তাহলে কোনো সমস্যা হবে না। ওদের স্বাস্থ্যও এখন ভালো আছে।’
কামরুন নাহার হেনার একমাত্র মেয়ে সামিনা তুন নুরের সঙ্গে দুই বছর আগে কথা হয়েছিল নিউজবাংলার। সে সময় তিনি বলেন, ‘খালারা ওষুধ খেলে ছয়-সাত মাস ভালো থাকে। খাওয়া ছেড়ে দিলে আবার আগের মতো মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে; উল্টোপাল্টা কথা বলে।’
উল্টোপাল্টা কী বলেন- এমন প্রশ্নে তখন সামিনা বলেন, ‘এই যেমন বলে- আমি তো পুরা বাংলাদেশের মালিক। আমিই এই দেশ চালাব। এই পুরা বিশ্বব্রহ্মাণ্ড আমার। আমাদের কাছে আল্লাহর বাণী আসছে।
‘তারা বসে বসে শুধু বিভিন্ন কোড বানায় আর বিড় বিড় করতে থাকে। এসব আমরা বুঝি না। তবে তারা দিনে সময় করে কুরআন তেলাওয়াত করে এবং বাংলায় অর্থসহ পড়ে।’
তিনি বলেন, ‘তারা এতটাই উল্টোপাল্টা বলে যে মাঝে মাঝে আমাকেই বলে- তুমি তো আগে ছেলে ছিলা, এখন মেয়ে হলা কীভাবে? আমার বাবা-মাকে বলে- তোদের ছেলে কই? এই মেয়ে কে? অথচ আমার কোনো ভাই নেই, আমিই বাবা-মার একমাত্র মেয়ে।’
কেন তারা ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন জানতে চাইলে সামিনা বলেন, ‘গত বছর হঠাৎ করেই দুই খালা বলে বসে- আমরা ওষুধ খাব না। আল্লাহর ওহি আমাদের কাছে আসছে। আমাদের ওষুধ খেতে নিষেধ করা হয়েছে।
‘শুধু ওষুধ নয়, তারা মাঝে মাঝে খাওয়া-দাওয়াই বন্ধ করে দেয়। আল্লাহর ওহিতে নাকি তাদের সব খাওয়া-দাওয়া বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়। তারপর আমরা সবাই মিলে জোর করে ধরে খাওয়াই।’
রিতা-মিতার এই ভাগনি বলেন, ‘রাতের বেলা যখন আমি পানি খেতে উঠি, তখন মাঝে মাঝে দেখি খালাদের রুম থেকে আওয়াজ আসছে। তারা তখন রুমের লাইট বন্ধ করে দিয়ে গান গায়। পুরনো দিনের বাংলা সিনেমার গান গায়। দুজনে মিলে হাসিঠাট্টা করে। তারা আমাদের সামনে তেমন কথা না বললেও নিজেদের মধ্যে অনেক গল্প করে, গান গায়।’
সামিনা বলেন, ‘তারা ডিকশনারি পড়ে। একেকটা করে ওয়ার্ড মুখস্ত করে। আর তাদের মাথায় যা আসে সেটা ফিজিক্সের কোডের মতো করে লেখে। উল্টোপাল্টা যা মনে আসে তাই লেখে। একজন সাধারণ মানুষ সেই লেখা দেখলে কিছুই বুঝতে পারবে না।
‘আমরা এতোটা কাছে থেকেও তাদের লেখা বুঝতে পারি না। খালারা আগে নিয়মিত টিভি দেখত। এখন আর টিভি দেখে না। এখন তারা কাউকেই পছন্দ করে না। যেই কাছে যায় তাকে গালাগালি করা শুরু করে।’
রাজশাহী নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে এক প্রসূতির বাচ্চা চুরির অভিযোগ উঠেছে। স্বজনরা বলছেন, নবজাতক চুরি করা হয়েছে। আর চিকিৎসক বলছেন, বাস্তবে ওই নারী অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন না। এটি মানসিক সমস্যা, যাকে বলে ফ্যানটম প্র্যাগনেন্সি। মানসিক ধারণার প্রভাবেই রোগীর পেট ফুলে গিয়েছিল।
রাজশাহী নগরীর তালাইমারী এলাকার বাসিন্দা সৈয়দা তামান্না আখতার। বৃহস্পতিবার প্রসব বেদনা উঠলে রাজশাহী নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার রয়েল হাসপাতালে আসেন। সেখানে চিকিৎসকের পরামর্শে বেরা ২টার দিকে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। বিকেল ৩টার দিকে তাকে অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) নেয়া হয়। ওটিতে এক ঘণ্টা পার না হতেই রোগীকে বের করে আনা হয়। তবে এ সময় ওই নারীর সঙ্গে কোনো বাচ্চা ছিল না। রোগীর স্বজনরা জানতে চাইলে চিকিৎসকরা জানান, তার পেটে কোনো বাচ্চা নেই।
স্বজনদের অভিযোগ, তামান্না আখতারের গর্ভে দুটি সন্তান ছিল। ওটিতে নেয়ার পর রোগীকে অ্যানেসথেসিয়ার (অজ্ঞান করার) ইনজেকশনও দেয়া হয়। এরপর তিনি বাচ্চা প্রসব করেছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার সেই বাচ্চা চুরি করেছে।
তামান্না আখতার বলেন, ‘আমি ৯ মাস ১২ দিনের অন্তঃসত্ত্বা ছিলাম। এর আগেও আমি ডাক্তার দেখিয়েছি। আমার দুইটা বাচ্চা ছিল। আলট্রাসনোগ্রামে দেখা গেছে, একটি ছেলে ও একটি মেয়ে। বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালে ভর্তির পর আমাকে ওটিতে নেয়া হয়। এর আগে আমার সব কাগজপত্র জমা দেয়া হয়।
‘ওটিতে নেয়ার পর আমাকে একটি ইনজেকশন দেয়া হয়। এক পর্যায়ে আমার পুরো শরীর ঝাঁকি দিচ্ছিল। এরপর আমার আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান ফেরার পর জানতে পারলাম আমার পেটে নাকি কোনো বাচ্চা ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘যদি মৃত বাচ্চাও হয় সেটা আমাকে দেয়া হোক। আমার বেবি যদি না-ই থাকে তাহলে ৯ মাস ১২ দিন আমি কী ক্যারি করলাম?’
তামান্নার শাশুড়ি তাহেরা বিশ্বাস বলেন, ‘আমার বউমাকে ওটিতে নিয়ে যাওয়ার পর তারা বাচ্চার জন্য নতুন কাপড়ও নিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পরই তারা সেটি ফিরিয়ে দিয়ে যায়। আমাদের বলে রোগীর প্রেশার উঠেছে, ইনজেকশন দেয়া হয়েছে। এখন ঘুমাচ্ছে। প্রেসার কমলে অপারেশন করা হবে।
‘কিছুক্ষণ পরই আমার মেয়ে ওটিতে গিয়ে দেখে বউমার পেট নেমে গেছে। আগের মতো উঁচু নেই। এখানে নিয়ে আসার পর আমি দেখি রক্ত আসছে। কিন্তু কোনো অপারেশন করা হয়নি। এখন আমার বউমার পেট তাহলে কমল কিসে?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রয়েল হাসপাতালের অ্যানেসথেসিয়ার চিকিৎসক আলী চৌধুরী রিমন বলেন, ‘রোগীর অবস্থা গুরুতর ছিল। রোগীর ভাইয়ের কাছে শুনেছি তার পেটে দুটি বাচ্চা আছে। আমারও মনে হয়েছিল পেটে বাচ্চা ছিল। তাই অজ্ঞান করার ইনজেকশন দিয়েছি।’
হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ নিশাত আনাম বর্ণা বলেন, ‘তামান্নার পেটে বাচ্চা ছিল না। তাকে ওটিতে নেয়া হয়েছিল। সেখানে তার আল্ট্রাসনোগ্রামসহ অন্যান্য কাগজ দেখতে চাওয়া হলে তারা ২০২২ সালের ডিসেম্বরের একটি প্রেসক্রিপশন ছাড়া আর কোনো কাগজ দেখাতে পারেনি।
‘আসলে এটি একটি মানসিক সমস্যা। এর একটি সাইকোজিক্যাল টার্ম আছে, যাকে বলে ফ্যানটম প্র্যাগনেন্সি। রোগী মনে মনে ধরে নিয়েছিলেন যে তিনি প্র্যাগনেন্ট। এরই প্রভাবে তার পেট ফুলে গিয়েছিল। ওটিতে অ্যানেসথেসিয়া দেয়ার পর বিষয়গুলো স্বাভাবিক হয়ে আসে। তার যে ব্লিডিং হয়েছে সেটিও মেয়েদের স্বাভাবিক ব্লিডিং।’
রাজশাহী নগরীর রাজপাড়া থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসআই কাজল নন্দী বলেন, ‘এ বিষয়ে ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা বিষয়টির তদন্ত করছি। তদন্তে যা পাওয়া যাবে তার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বিশ্বে উচ্চ রক্তচাপের রোগী দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। সব মিলিয়ে দেশে উচ্চ রক্তচাপে ভোগা রোগীর সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি।
বুধবার বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে বাংলাদেশ মেডিসিন সোসাইটি ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যৌথভাবে এক সেমিনারের আয়োজন করে। এতেই উঠে আসে ওই তথ্য।
১৭ মে পালিত হচ্ছে বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস। ওয়ার্ল্ড হাইপারটেনশন লিগের সদস্য হিসেবে ‘হাইপারটেনশন কমিটি অফ ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অফ বাংলাদেশ’ ২০০৬ সাল থেকে প্রতি বছর এই দিনে দিবসটি পালন করে আসছে।
এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য ‘সঠিকভাবে রক্তচাপ মাপুন, নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং দীর্ঘজীবী হোন’।
সেমিনারে বলা হয়, দেশের জনসংখ্যার ২৭ শতাংশ বা চার কোটির বেশি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। আবার তাদের মধ্যে ৫৯ শতাংশ জানেনই না যে, তারা এই রোগে ভুগছেন। ওষুধ গ্রহণ করার পরও ৮৮ শতাংশ মানুষের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নেই।
মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ খান আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, ‘অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ হৃদ্যন্ত্র, কিডনি, মস্তিষ্ক ও চোখের ক্ষতি করে। নিয়ন্ত্রণহীন উচ্চ রক্তচাপ হঠাৎ মৃত্যু ডেকে আনতে পারে।’
২০২২ সালে প্রতি পাঁচজনে একজন বা জনসংখ্যার ২১ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ছিলেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই উচ্চ রক্তচাপের কারণে হৃদরোগ, হৃদরোগজনিত মৃত্যুঝুঁকি, স্ট্রোক এবং কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যুর হার কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
আরও পড়ুন:দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এই প্রথম ছেলে থেকে মেয়েতে রূপান্তরের ঘটনা ঘটেছে।
সফলভাবে বিরল এই অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেছেন খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইউরোলোজিস্ট অ্যান্ড এন্ড্রোলজিস্ট ডা. নিরুপম মণ্ডল।
ডা. মণ্ডল বলেন, ‘১৭ বছরের একজন ছেলে, যাকে অপারেশন করে নারীতে রূপান্তর করা হয়েছে। তিনি জীনগতভাবে পুরুষ, কিন্তু বাইরে নারী। একজন নারীর যেসব বৈশিষ্ট থাকে, সবই রয়েছে তার। সে দেখতে আকর্ষণীয়, সুন্দরী; কণ্ঠস্বর নারীর মতো। তার চলন-বলন, শরীরের গঠন-অঙ্গভঙ্গি সবই নারীর।
‘সামাজিকভাবে তিনি নারী হিসেবে বড় হয়েছেন। এখন তার বয়স ১৭ বছর। তার অভিভাবকরা ও তিনি চান নারীতে রূপান্তরিত হতে। সে কারণেই আমাদের এই অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে।’
এটা করতে অনেক কষ্ট হয়েছে বলেও জানান এ চিকিৎসক।
অস্ত্রোপচারে কত সময় লেগেছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাড়ে ৪ ঘণ্টা একটানা অপারেশন করা লেগেছে। আশা করি এখন একজন নারীর জীবন যাপন করতে পারবেন তিনি। কিন্তু একজন পূর্ণাঙ্গ নারীর জীবন পেতে হলে তো মাতৃত্বের স্বাদ পেতে হয়। এটা সে কোনোদিন পাবে না। এরপর তাকে আমরা হরমন রিপ্লেসমেন্ট দেব। কিন্তু তার সন্তান হবে না।’
অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ভিক্টোরিয়া নার্সিং হোমে শুক্রবার (১২ মে) এ অপারেশন করা হয়েছে। আমার সাথে অধ্যাপক ডা. সামসুন নাহার লাকি, প্রফেসর ডা. দিলীপ কুণ্ডসহ কয়েকজন সহযোগী ছিল।
‘দক্ষিণাঞ্চলে এটাই প্রথম এ ধরনের অপারেশন। রোগী ভালো আছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি ১০ বছরে একটি অপারেশন হতে দেখেছি।’
তিনি বলেন, ‘এটা সাধারণত কেউ করেন না। অনেকের লজ্জার ভয়ে গোপনে পাশের দেশে, আবার যার সামর্থ্য থাকে, তিনি উন্নত দেশে চলে যান। আমাদের এখানে এ ধরনের অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন হওয়া আমাদের জন্য এটা গর্বের।’
অস্ত্রোপচার করতে ওই রোগীর পরিবারের প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান তিনি।
পুরুষ থেকে নারীতে রূপান্তরিত হওয়া রোগীর অভিভাবকরা বলেন, ‘সে ছোটবেলা থেকেই মেয়েদের সাথে মিশত। সবাই তাকে মেয়ে হিসেবেই চেনে।
‘আমরা চেয়েছিলাম আমাদের মেয়েটা সমাজে মেয়ে হিসেবে পরিচিতি পাক, সংসার করুক। তার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে পারিবারিকভাবে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, স্বাস্থ্যখাতকে আধুনিক ও বিশ্বমানের করার সেই কঠিন কাজটিতেই আমরা এখন হাত দিয়েছি। স্বাস্থ্যখাতকে ঢেলে সাজাতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেয়েছি।
বুধবার সকালে রাজধানীর মিরপুরে ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, আইসিইউ ইউনিট ও ইমার্জেন্সি কমপ্লেক্স উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি আমলে দেশের স্বাস্থ্যখাত নিয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো কাজই করা হয়নি। তাদের সুদুরপ্রসারি কোন স্বাস্থ্যভাবনা ছিল না। সেই ভঙ্গুর অবস্থা কাটিয়ে উঠে বিশ্বমানের আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা করার কাজ মোটেও সহজ কাজ নয়।
‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের ৮ টি বিভাগের স্বাস্থ্যসেবার মান সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়েছে। পাশাপাশি ৮ বিভাগেই ৮ টি ১৫ তলা বিশিষ্ট উন্নত মানের ক্যান্সার, কিডনি, লিভার হাসপাতাল তৈরির কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। এগুলোর মাধ্যমে চিকিৎসা সেবাকে ডিসেন্ট্রালাইজড করা হচ্ছে। এগুলো উদ্যোগের মাধ্যমে মানুষ নিজ নিজ বিভাগ থেকেই তাদের কাঙ্খিত স্বাস্থ্যসেবা পাবেন। মানুষকে আগামীতে চিকিৎসা নিতে আর ঢাকায় আসতে হবে না।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এই ডেন্টাল হাসপাতালে প্রতিদিন ৬০০-৭০০ মানুষ সেবা নেয়। এই হাসপাতালসহ আমরা দেশের সব হাসপাতালের বেড দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়েছি। আগে দেশে বেড ছিল ২০ হাজারের মতো। এখন সেই বেড সংখ্যা ৭০ হাজার করা হয়েছে।
‘৪৫ হাজার নার্স ও ৩৩ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে টেকনিশিয়ান ও ফার্মাসিস্ট নিয়োগের কাজ চলমান আছে। দেশের হাসপাতালগুলোর অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি অনেকটাই কাভার করা গেছে। এখন এই লোকবল পুরণ হলে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় বড় উন্নয়ন ঘটবে।’
উল্লেখ্য, বুধবার উদবোধনকৃত ইমার্জেন্সি আউটডোর সেবা ব্যবস্থায় এখন থেকে দিনরাত ২৪ ঘন্টা সেবা দেয়া হবে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য