সিয়াম সাধনার মাস রমজানে ভোররাতে সেহরি খেয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার বর্জন করেন মুসলিমরা। এ সময়ে পাকস্থলীসহ শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বিশ্রাম পায়। এতে করে শরীরে নানাবিধ ইতিবাচক প্রভাব পড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
রোজার স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন উপকারিতার কথা এক ভিডিওতে তুলে ধরেছেন মনোদৈহিক ও জীবনযাপনবিষয়ক রোগের থেরাপিস্ট এবং কোয়ান্টাম হার্ট ক্লাবের কোঅর্ডিনেটর ডা. মনিরুজ্জামান। পরামর্শগুলো তার ভাষায় উপস্থাপন করা হলো নিউজবাংলার পাঠকদের সামনে।
শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিশ্রাম
রমজান আসল, রমজান চলে গেল। ৩০টি রোজা আমি রাখলামও। ৩০টি রোজার পরেও আমার ওজনের একটুও কম-বেশি হলো না। এইটুকু খোলা চোখে বলে দেয়া যায়, রোজা থেকে আমি কোনো কিছু ফায়দা নিতে পারলাম না। আমি ব্যর্থ হয়েছি রোজার মূল উদ্দেশ্য অর্জন করতে। বিজ্ঞান কী বলে?
সর্বপ্রথম ১৯৯৪ সালে মরক্কোর ক্যাসাব্লাঙ্কা শহরে সারা বিশ্ব থেকে বিজ্ঞানীরা একত্রিত হয়ে ৫০টিরও বেশি বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র তারা উপস্থাপন করেন। সেই সম্মেলনের নাম ছিল হেলথ অ্যান্ড রামাদান; সুস্থতা এবং রমজান। সেই সেমিনারে বক্তারা বলেন, রমজানের ৩০টি রোজা আমাদের শরীরের জন্য একটা বিশাল অপরচুনিটি; একটা বিশাল সুযোগ। তারা এভাবে তুলনা করে বলছেন, একটা জটিল মেশিন থেকে যদি সারা বছর পূর্ণ সার্ভিস চান, তাহলে অবশ্যই মাঝে মাঝে তাকে কিছু সময়ের জন্য হলেও তাকে বিশ্রামে রাখতে হবে। তো আমাদের শরীরটাও একটা মেশিন। এর মধ্যে অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র রয়েছে; হার্ট, লাং, লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক, পরিপাকতন্ত্র…কত ধরনের হার্ড ডিস্ক। এইসব মেশিনপত্র থেকে যদি আপনি সারা বছর পুরো সার্ভিস চান, তাহলে তাকে বছরের একটি মাস বিশ্রাম দিতে হবে। তাহলে বাকি ১১টা মাস সে পূর্ণোদ্যমে কাজ করে আপনাকে পূর্ণ সাপোর্ট দিতে পারবে। আপনি তার থেকে পুরো আউটপুট পাবেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, আপনি যদি সঠিক পদ্ধতিতে রোজা রাখতে পারেন, তাহলে অবশ্যই আপনার বাড়তি ওজন কমবে। বাড়তি ওজন ঝেড়ে ফেলে আপনি একজন স্লিম, স্মার্ট মানুষে রূপান্তরিত হবেন। আর যদি রোজার পরেও আপনার বাড়তি ওজন থেকে যায়, এইটুকু পরিষ্কারভাবে বলা যায়, যে পদ্ধতিতে রোজা রাখার কথা ছিল, সেই পদ্ধতিতে রোজা রাখতে পারেন নাই; রোজা রাখা হয় নাই। ফলে আপনি আপনার ওজন কমাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
মস্তিষ্ককে বুড়িয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা
আমেরিকার সরকারি সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথের (এনআইএইচ) একটি শাখা হচ্ছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অন এজিং। সেখানকার প্রখ্যাত নিউরোসায়েন্টিস্ট ড. মার্ক ম্যাটসন এবং তার সহযোগীরা দীর্ঘ গবেষণা করেন ফাস্টিং নিয়ে। এরপর তারা পাবলিশ করেন এর ফলাফল। সেখানে তারা পরিষ্কার করে বলছেন যে, একজন মানুষ যদি মাঝে মাঝেই ফাস্টিং থাকে, নিজেকে সকল ধরনের খাবার এবং পানীয় থেকে বিরত রাখে, তবে তিনি তার ব্রেনের যে এজিং, সে এজিংটাকে প্রতিরোধ করতে পারবে। ব্রেনকে বুড়িয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে পারবে এবং বৃদ্ধ বয়সে এখন যে রোগগুলো খুব দেখা যাচ্ছে, বৃদ্ধ বয়সে এসে আমাদের স্মৃতিভ্রষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং যেসব রোগগুলোতে স্মৃতি হারিয়ে যাচ্ছে, সেই রোগগুলোকে বলা হয় আলঝেইমারস, ডিমেনশিয়া, হান্টিংটন, পারকিনসনের মতো রোগগুলো আপনি প্রতিরোধ করতে পারবেন।
রক্ত পরিশোধন
বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমাদের রক্তে নানা রকম বর্জ্য পদার্থ এবং ক্ষতিকর পদার্থ ঘুরে বেড়ায়। এই রক্তকে পরিশোধন করার সবচেয়ে বড় অস্ত্র হচ্ছে রোজা।
কোষ পরিষ্কার
আমাদের শরীরে ৩০ ট্রিলিয়ন সেল বা কোষ আছে। এই কোষের ভিতরে প্রতিনিয়ত নানা রকম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান তৈরি হচ্ছে বিপাকক্রিয়ার ফলে এবং নানা ক্রিয়া-বিক্রিয়ার ফলে। শক্তি তৈরি হচ্ছে, হরমোন তৈরি হচ্ছে, এনজাইম তৈরি হচ্ছে। এগুলো তৈরির পাশাপাশি কিছু বর্জ্য পদার্থ বা টক্সিন তৈরি হচ্ছে। এইসব বর্জ্য পদার্থ বা টক্সিন দূর করার অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে ফাস্টিং বা রোজা। এটা নিয়ে গবেষণা করে যিনি নোবেল প্রাইজ পান, তিনি হচ্ছেন ড. ইয়োশিনোরি ওহসুমি। তিনিসহ অন্য বিজ্ঞানীরা এটার নাম দিয়েছেন অটোফেজি। এটি (অটোফেজি) যখন ১২ ঘণ্টা থেকে ১৬ ঘণ্টা হবে, এটি চমৎকার কাজ করবে। এটি যখন ১৮ ঘণ্টা, ২০ ঘণ্টা, ২২ ঘণ্টা, ২৪ ঘণ্টা হবে এক্সিলেন্ট।
টাইপ টু ডায়াবেটিস রোধে সহায়ক
আমরা জানি টাইপ টু ডায়াবেটিসের মূল কারণ হচ্ছে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স। সম্প্রতি দুটো গবেষণা বলছে, টাইপ টু ডায়াবেটিস রিভার্স করতে চাইলে সপ্তাহে অন্তত তিন দিন ২৪ ঘণ্টার ফাস্টিং করতে হবে। ২৪ ঘণ্টার ফাস্টিং কেউ যদি সপ্তাহে তিন দিন করেন, তবে তিনি টাইপ টু ডায়াবেটিস নিরাময় করতে সক্ষম হবেন। সেই সময় তার স্থূলতাও তার শরীর থেকে চলে যাবে।
দীর্ঘায়ু হওয়ায় সহায়তা
বিজ্ঞানীরা বলছেন, মাঝে মাঝে রোজা, উপবাস বা ফাস্টিং একজন মানুষের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি করে তাকে দীর্ঘজীবী করে। এই যে দেখেন না, হজরত শাহজালাল (র.) ১৫০ বছর বেঁচে ছিলেন। তিনি স্বল্পাহারি ছিলেন এবং প্রায়ই রোজা রাখতেন। তিনি এক বেলা খেতেন। এই যে ঢাকা থেকে কাছে সোনারগাঁয়ে ছিলেন বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারী। ১৬০ বছর বেঁচে ছিলেন। তিনিও স্বল্পাহারি ছিলেন। প্রায়ই উপবাস করতেন।
আমাদের প্রিয় মহানবী (সা.) সপ্তাহে দুই দিন রোজা রাখতেন; সোমবার এবং বৃহস্পতিবার। এ ছাড়াও তিনি প্রতি চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখে রোজা রাখতেন।
রোজা রাখলে কী ঘটে শরীরে
রোজায় দীর্ঘ সময় পাকস্থলী খালি থাকায় নানা ধরনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায় শরীর। ধাপে ধাপে সেটি কীভাবে হয়, তা প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে সুস্থতা নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট মাইন্ডবডিগ্রিন ডটকম।
প্রথম চার ঘণ্টা
খাওয়ার পর প্রথম চার ঘণ্টায় অভ্যন্তরীণ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সচল রাখার পাশাপাশি কোষ ও টিস্যুর বিকাশ ঘটায় শরীর। এ সময়ে দরকারি হরমোন ইনসুলিন উৎপন্ন করে অগ্ন্যাশয়। এর মধ্য দিয়ে রক্তে নিঃসৃত গ্লুকোজ ব্যবহারের পাশাপাশি পরবর্তী সময়ে ব্যবহারের জন্য কোষে বাড়তি শক্তিও মজুত করা যায়।
চার থেকে ১৬ ঘণ্টা
দেশভেদে সেহরি থেকে ইফতারের মধ্যকার সময়ে তারতম্য হয়। কোনো কোনো দেশে ১৬ ঘণ্টার বেশি সময় উপবাস থাকতে হয় রোজাদারদের।
১৬ ঘণ্টার মতো যারা রোজা রাখবেন, তাদের শারীরিক ক্রিয়ার দ্বিতীয় ধাপ শুরু হবে চতুর্থ ঘণ্টা থেকে। এ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় শক্তি জোগাতে সঞ্চিত অতিরিক্ত পুষ্টি ব্যবহার করা শুরু করে শরীর।
কোষে থাকা শক্তি ফুরিয়ে গেলে শরীর নজর দেয় সঞ্চিত চর্বি বা ফ্যাটে। শরীর থেকে চর্বি নির্গমন এবং শক্তি জোগাতে এগুলো পুড়িয়ে ফেলার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘কিটন বডিজ ফর এনার্জি’। এটি সাধারণত ঘটে ১৬তম ঘণ্টার কাছাকাছি সময়ে।
শরীর সঞ্চিত চর্বি পোড়ানোর পর্যায়ে কখন যাবে, সেটি নির্ভর করে রোজা বা উপবাস শুরুর আগে গ্রহণ করা খাদ্যের ধরনের ওপর। কেউ প্রচুর পরিমাণে শর্করা ও শ্বেতসার খাবার খেলে এ পর্যায় দেরিতে শুরু হবে। বিপরীতে কেউ চর্বি ও প্রোটিনজাতীয় খাবার খেলে আগেই সে পর্যায়ে পৌঁছাবে।
রোজা বা উপবাসের সবচেয়ে শক্তিশালী বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি অটোফেজি। ১৬ ঘণ্টার আশপাশের সময়ে এটি শুরু হয়।
অটোফেজি হলো এমন এক প্রক্রিয়া যার মধ্য দিয়ে কোষে থাকা মৃত বা ক্ষতিগ্রস্ত বস্তুগুলো সরিয়ে দেয় শরীর। এসব বস্তু বার্ধক্য, ক্যানসার ও দীর্ঘমেয়াদি রোগের কারণ হতে পারে।
১৬ থেকে ২৪ ঘণ্টা
রোজার সময় ১৬ ঘণ্টার বেশি হলে কোষে থাকা গ্লুকোজ ও লিভারে থাকা গ্লাইকোজেন এবং পেশিগুলো দ্রুত ক্ষীণ হতে থাকে। ফলে শক্তি জোগাতে জমানো চর্বি গলাতে হয় শরীরকে।
এ পর্যায়ে এসে শরীরে শক্তির চাহিদার অনেক বেশি পরিবর্তন দেখা যায় না। রোজাদার বা উপবাসে থাকা ব্যক্তি তখনও জেগে থাকা, দৈনন্দিন কাজ করা, লোকজনের সঙ্গে লেনদেন করা কিংবা ব্যায়াম করতে পারেন। এ কারণে উল্লেখযোগ্য মাত্রার শক্তির দরকার হতে পারে।
১৬ ঘণ্টার পরে শরীরে এএমপিকে নামের আরেকটি রাসায়নিক উৎপন্ন হয়। এটি শরীরজুড়ে অটোফেজি আরও বাড়িয়ে দেয়।
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হলে সোমবার সরস্বতী পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
সরস্বতী পূজামণ্ডপ পরিদর্শনকালে দুই উপদেষ্টা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। ওই সময় তারা পূজার সার্বিক পরিস্থিতির খোঁজখবর নেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাবির শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও পূজা উদ্যাপন কমিটির সদস্যরা।
এবার জগন্নাথ হলের মূল পূজামণ্ডপের বাইরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের আরও ৭২টি পূজামণ্ডপ স্থাপন করা হয়।
গাজীপুরের তুরাগ নদের তীরে লাখো মানুষের অংশগ্রহণে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে রবিবার শেষ হয়েছে ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব।
সকাল ৯টা ১১ মিনিটে শুরু হওয়া ২৪ মিনিটের আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন বাংলাদেশের তাবলিগ জামাতের মুরব্বি মাওলানা জুবায়ের।
আখেরি মোনাজাতে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লি অংশ নেন।
ইজতেমা মাঠের চারদিকে কয়েক কিলোমিটার এলাকায় মুসল্লিতে পূর্ণ হওয়ায় ভবনের ছাদ থেকে, যানবাহনে করে লোকজনকে দোয়ায় অংশ নিতে দেখা যায়।
পার্থিব জীবন ও আখিরাতে মুক্তি পেতে মহান আল্লাহর রহমত কামনায় অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। দোয়ায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারীও অংশ নেন।
মোনাজাত শেষে দেশের বিভিন্ন স্থানে মুসল্লিরা তাদের গন্তব্যে রওনা হলে সড়ক ও ট্রেনে প্রচণ্ড ভিড় হয়।
পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হকের আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুক্রবার সকালে ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হয়।
মুসল্লিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইজতেমা মাঠ ও এর আশপাশের এলাকায় সাদা পোশাকে কয়েক হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়।
তাবলিগ জামাতের শুরা-ই নেজামের গণমাধ্যম সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, ইজতেমার তিন দিনে মোট পাঁচজন মুসল্লির মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন:গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগতীরে শুক্রবার শুরু হয়েছে তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব।
জিকির-আসকার, ইবাদত-বন্দেগি ও ধর্মীয় আলোচনার মাধ্যমে শনিবার ইজতেমার দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত করছেন মুসল্লিরা।
আগামীকাল রোববার সকাল ৯টায় আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। এর মাধ্যমে শেষ হবে শুরায়ে নেজাম আয়োজিত ইজতেমার প্রথম পর্ব।
দ্বিতীয় দিন শনিবার ফজরের নামাজের পর বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা খোরশেদ আলম। বাংলা তরজমা করেন বালাদেশের মাওলানা উবায়দুর রহমান। আসরের পর অনুষ্ঠিত হবে যৌতুকবিহীন গণবিয়ে।
আগামীকাল ফজরের পর বয়ান করবেন ভারতের মাওলানা আবদুর রহমান। আখেরি মোনাজাতের আগে নসিহতমূলক বক্তব্য দেবেন মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা। এরপর অনুষ্ঠিত হবে আখেরি মোনাজাত।
সকাল ৯টায় আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন বাংলাদেশের মাওলানা জোবায়ের।
ইজতেমায় অংশ নিতে বিভিন্ন দেশের বিদেশি মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে গিয়ে উপস্থিত হন। তারা তাদের জন্য নির্ধারিত তাঁবুতে অবস্থান নিয়ে ইবাদত-বন্দেগিতে দিন পার করছেন।
এদিকে ইজতেমায় আগত চার মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। তারা বার্ধক্যজনিত ও অসুস্থ হয়ে তারা মারা যান বলে জানিয়েছেন ইজতেমার আয়োজকরা।
ইজতেমার এ ধাপে অংশ নিয়েছেন ৪১ জেলা ও ঢাকার একাংশের মুসল্লি। এরপর ৩ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় ধাপের ইজতেমা। আর ১৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি মাওলানা সাদের অনুসারীদের ইজতেমা পালনের কথা রয়েছে।
আরও পড়ুন:৫৮তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিন শনিবার শীর্ষ আলেমদের বয়ান শুনছেন মুসল্লিরা।
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে শুক্রবার ইজতেমা শুরুর পর থেকে তিনজন মুসল্লির মৃত্যু হয়।
বিভিন্ন দেশের আড়াই হাজারের বেশি হাজিসহ কয়েক লাখ মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে সমবেত হয়ে ইবাদতে মশগুল রয়েছেন।
এর আগে শুক্রবার ফজরের নামাজের পর মাওলানা জিয়াউল হকের আমবয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হয়।
পরের দিন শনিবার ফজরের নামাজের পর বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা খুরশেদ এবং তা বাংলায় অনুবাদ করেন মাওলানা ওবায়দুর রহমান।
এ ছাড়া বয়ান করবেন মাওলানা ইব্রাহিম দৌলা ও মাওলানা আকবর শরীফ।
এখনও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মুসল্লিরা বাস, ট্রাক, নৌকায় করে ও হেঁটে তুরাগ নদীর তীরে ইজতেমা ময়দানে আসছেন।
আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে রবিবার শেষ হবে ইজতেমার প্রথম পর্ব।
আজ বাদ আসর মাঠে গণবিয়ের অনুষ্ঠান হবে।
ইজতেমায় সর্বশেষ হবিগঞ্জ জেলার ইয়াকুব আলী নামের এক মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দুই দিনে তিন মুসল্লির মৃত্যু হলো।
মুসল্লিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইজতেমা মাঠ ও আশপাশের এলাকায় সাদা পোশাকে কয়েক হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্যসেবাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।
তাবলিগ জামাত ১৯৬৭ সাল থেকে এ ইজতেমার আয়োজন করে আসছে। বিপুলসংখ্যক লোকের সমাগমের জন্য ২০১১ সালে ইজতেমাকে দুই পর্বে ভাগ করা হয়।
আরও পড়ুন:জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের তাবলিগি মারকাজে সহাবস্থান বজায় রাখতে মাওলানা মোহাম্মদ জুবায়ের ও মাওলানা সাদের অনুসারীদের অনুরোধ জানিয়েছে সরকার।
এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি বৃহস্পতিবার জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এতে এক পক্ষকে অন্য পক্ষের মারকাজে কোনো ধরনের বাধা কিংবা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করতেও অনুরোধ করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাজধানীর কাকরাইল মসজিদের ক্ষেত্রে এর আগে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল, সেটি অনুসরণ করতে হবে।
গাজীপুরের টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দান দখল নিয়ে গেল ১৭ ডিসেম্বর রাতে তাবলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে অন্তত চারজনের প্রাণহানি হয়েছে।
পরে দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ইজতেমা ময়দান খালি করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এ ছাড়া পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ, মিছিল ও বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করে পুলিশ।
ইজতেমা ময়দান ঘিরে জারি করা সে নিষেধাজ্ঞা বৃহস্পতিবার প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার নাজমুল করিম খানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গাজীপুর মহানগর পুলিশ আইনের ক্ষমতাবলে গত ১৮ ডিসেম্বর দুপুর দুইটা থেকে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশের তিন কিলোমিটারের মধ্যে জারি করা আদেশগুলো বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা থেকে প্রত্যাহার করা হলো।
আরও পড়ুন:খুলনা মহানগরীর নিরালার তাবলীগ (মারকাজ) মসজিদে সাদপন্থী ও জুবায়েরপন্থী মুসল্লিদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। বর্তমানে সেই বিরোধ আরও জোরালো হয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শুক্রবার জুমার নামাজের সময় ওই তাবলীগ মসজিদে পাহারায় ছিলেন পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা।
মুসল্লিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাদপন্থীরা ঘোষণা দিয়েছেন যে আগামী দশ দিন জুবায়েরপন্থীর কোনো মুসল্লি তাবলীগ মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারবেন না। অপরদিকে জুবায়েরপন্থীরা পাল্টা ঘোষণা দেন তারা জুমার নামাজ নিরালা তাবলীগ মসজিদেই আদায় করবেন। এই পরিস্থিতিতে মুসল্লিদের ভেতরে যাতে সংঘর্ষ না বাধে সেজন্য শুক্রবার ফজরের নামাজের পর থেকে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও পুলিশ কঠোর নিরাপত্তা দেয়া শুরু করে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) উপ-কমিশনার মনিরুজ্জামান মিঠু বলেন, ‘এই দুই গ্রুপের মধ্যে যেন কোনো সংঘর্ষ না হয় সেজন্য পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও সেখানে উপস্থিত আছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সেখানে পাহারায় থাকবে।’
দুপুর ১২টার দিকে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, যৌথবাহিনী এলাকার সাধারণ মুসল্লি বাদে সাদপন্থী ও জুবায়েরপন্থী কাউকে মসজিদে ঢুকতে দিচ্ছে না। এক পর্যায়ে মুসল্লিদের চাপ বাড়লে তাবলীগ মসজিদের মেইন গেটে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। ফলে স্থানীয় সাধারণ মুসল্লিরাও ওই মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে পারেননি।
নিরালা তাবলীগ মসজিদ সংলগ্ন নাজিরঘাট এলাকার বাসিন্দা নুর ইসলাম বলেন, ‘মুসল্লিদের ভেতরে বিভাজনের কারণে আমরা আজ জুমার নামাজ পড়তে পারিনি। আমরা মুসলিম হিসাবে মুসলিমদের ভেতরে সাদপন্থী ও জুবায়েরপন্থী চাই না। সাধারণ মানুষের একটাই চাওয়া- মুসলমানদের ভেতরে সব ভেদাভেদ বাদ দিয়ে সবাই একসঙ্গে নামাজ পড়বে।’
আরও পড়ুন:তাবলীগ জামাতের বিবদমান দু’পক্ষকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে মাওলানা মোহাম্মদ জোবায়ের-এর অনুসারীদের শুক্রবার থেকে কাকরাইল মসজিদের আশপাশে কোনো রকমের বড় জমায়েত থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
একইসঙ্গে মাওলানা সাদ গ্রুপের অনুসারীদেরকেও শবগুজারিসহ (রাত্তযাপন) তাবলীগ জামাতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক-৬ শাখার উপসচিব ইসরাত জাহান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়।
মন্তব্য