বিশ্বজুড়ে অসুস্থতাজনিত মৃত্যুর অন্যতম কারণ স্ট্রোক। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) ডেটা অনুযায়ী, ২০২০ সালে কার্ডিওভাসকুলার রোগে আক্রান্ত প্রতি ছয়জনের একজনের মৃত্যু হয়েছে স্ট্রোকে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন।
স্ট্রোক কী
স্ট্রোকের ফলে মস্তিষ্কের রক্ত সরবরাহ বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং এতে মস্তিষ্কের কোষের মৃত্যু হয়। তাই পরবর্তী সময়ে মস্তিষ্কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশটি কার্যক্ষমতা হারায়।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সেসের ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শিরাজী শাফিকুল ইসলাম জানান, স্ট্রোকের রোগীকে সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে নেয়া জরুরি। এ সময়ের মধ্যে চিকিৎসা দেয়া না গেলে রোগীর ক্ষতি বেশি হয়, কিন্তু মানুষের মধ্যে সচেতনতা কম থাকায় রোগী আসে দেরিতে।
সিআরপির ফিজিওথেরাপি বিভাগের প্রধান আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সাধারণত দুই ধরনের স্ট্রোক রয়েছে। প্রথমটি মস্তিষ্কের রক্ত সংরোধজনিত এবং দ্বিতীয়টি রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক। দুই কারণেই মস্তিষ্কের কিছু অংশ ঠিকমতো কাজ করতে পারে না।’
লক্ষণ
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে প্রথমেই কথা জড়িয়ে যায়। হাত-পা একদিকে অবশ হয়ে যায়। হাঁটতে গিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তি হঠাৎ পড়ে যেতে পারেন বা কাজ করতে গিয়ে টেবিলে পড়ে যেতে পারেন।
হঠাৎ করে রোগী অস্বাভাবিক আচরণ করতে পারে বা কাজে অমনোযোগীও হয়ে যেতে পারে। আবার এমন হতে পারে হাঁটতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছেন।
চিকিৎসকেরা এই লক্ষণগুলোকে সংক্ষেপে BE FAST বলে থাকেন।
এখানে B মানে Balance, অর্থাৎ ভারসাম্য রাখতে না পারা। E মানে Eye, অর্থাৎ হঠাৎ চোখে দেখতে না পাওয়া। F মানে Face, অর্থাৎ মুখ যদি একদিকে বেঁকে যায়।
A মানে Arm, অর্থাৎ হাত অবশ হয়ে যাওয়া। S মানে Speed, অর্থাৎ গতি কমে যাওয়া বা কথা জড়িয়ে যাওয়া। T মানে Time, অর্থাৎ যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া।
অধ্যাপক শিরাজী জানান, স্ট্রোক দুই ধরনের হয়। ১. রক্তনালি ব্লক হয়ে যায়; ২. মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ।
তিনি বলেন, ‘লক্ষণগুলো দেখা দিলে যদি সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে কোনো বিশেষায়িত হাসপাতালে নেয়া যায়, তাহলে তাকে একটি ইনজেকশন দিতে হয়। এর নাম অ্যাল্টিপ্লেস।’
যদি কোনো রোগীর মস্তিষ্কের রক্তনালি বন্ধ হয়ে যায় অর্থাৎ ব্লক হয়ে যায় তাহলে এই ইনজেকশনে বন্ধ রক্তনালি খুলে যাবে। এতে স্ট্রোকে প্যারালাইজড হওয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
সাড়ে চার ঘণ্টা পার হলে কী করবেন
অধ্যাপক শিরাজী বলেন, ‘সে ক্ষেত্রেও চিকিৎসা হতে পারে। এটি অনেক দেশেই চালু রয়েছে। ভারত, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, আমেরিকায় সাড়ে চার ঘণ্টা পার হলেও স্ট্রোকের ট্রিটমেন্ট দেয়া যায়। এখন বাংলাদেশেও আমরা সেটি চালু করে করেছি।
‘এ ক্ষেত্রে এই রোগীকে এনজিওগ্রাম করে ব্রেনের ভেতর থেকে ওই জমাট রক্ত বের করে আনা হয়। এই বের করে আনার পদ্ধতিকে বলে মেকানিক্যাল থ্রম্বেকটমি। এটি লক্ষণ দেখা দেয়ার ৯ ঘণ্টার মধ্যে করা হয়। এই চিকিৎসা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সেস হসপিটালে রয়েছে। ইউনাইটেড হসপিটালেও আমরা চালু করতে যাচ্ছি।’
স্ট্রোকের কারণ
অধ্যাপক শিরাজী জানান, উচ্চ রক্তচাপ বা উচ্চ কোলেস্টেরল, চর্বি বেশি জমলে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে বা মদ্যপান করলে, ধূমপান, তামাকজাতীয় দ্রব্য সেবন করলে, পরিবারের কারও রোগের ইতিহাস থাকলে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। সাধারণত ৫৫ বছর বা তার বেশি বয়সী পুরুষদের এতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এ কারণে মা, খালা, বাবা, চাচাদের মধ্যে কারও স্ট্রোক হয়ে থাকলে বয়স ৪০-এর বেশি হলে রোগটিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে বয়স ৪০ বছরের কম হলেও স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
শিশু বা গর্ভবতী মায়েরাও স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন। যেসব শিশু আক্রান্ত হয়, তাদের সাধারণত জন্মগত ত্রুটি থাকে অর্থাৎ তাদের মস্তিষ্কের রক্তনালিগুলো জন্মগতভাবে ত্রুটিযুক্ত থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি চিকন হয়ে যায় এবং একপর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায়।
স্ট্রোকের আরেকটি কারণ হৃদরোগ বলে জানান চিকিৎসকরা।
জন্মনিরোধক পিল ও ইনজেকশন স্ট্রোকের আরেকটি কারণ হতে পারে। যারা এই পিল ও ইনজেকশন নেন, তাদের উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার আশঙ্কা বেশি। তাদের রক্ত ঘন থাকে এবং কম বয়সে স্ট্রোক হতে পারে।
জন্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে নারীরা কোন পিল খাবেন, কীভাবে নিরাপদে খাবেন বা খাবেন কি না, সেটি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিতে হবে। নিরাপদ হচ্ছে ‘কপার ট্রি’ ব্যবহার করা। এটি একটি ডিভাইস যা জরায়ুর মধ্যে রেখে দেয়া হয়। এটি ১০ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। তা ছাড়া ছেলেদের কনডম ব্যবহার করতে হবে।
অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশুর জন্ম হলে পানিস্বল্পতা এবং অস্ত্রোপচারের কারণে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বেড়ে যায়। এ থেকেও স্ট্রোক হতে পারে। সাধারণত সিজার হওয়ার ৭ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে। তাই সিজারের পর পানি খেতে হবে বেশি।
স্ট্রোকের ঝুঁকি রোধে করণীয়
চিকিৎসকেরা জানান, স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন করলে স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটা কমানো যায়। যেমন: উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে জানা ও নিয়ন্ত্রণ করা। ধূমপান না করা এবং মদ্যপান না করা বা বিরত থাকা, নিয়মিত ব্যায়াম করা।
এ ছাড়া শাকসবজি বেশি খাওয়া, মাখন বা ঘি কম খাওয়া, খাবারে সোডিয়ামের পরিমাণ কমানো, রক্তে কোলেস্টরেলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা, শরীরের ওজন ঠিক রাখা ও দুশ্চিন্তা না করার মাধ্যমে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
আরও পড়ুন:চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে ধানক্ষেতে কাজ করার সময় সাপের দংশনে আহত হয়েছেন মিলন আলী নামে এক কৃষক। পরে অন্য কৃষকরা তাকে উদ্ধার করে শিবগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। এ সময় মিলন আলী সাপটিও হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
সোমবার দুপুরে শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা ইউনিয়নের বোগলাউড়ি এলাকার একটি ধানক্ষেতে এ ঘটনা ঘটে। আহত মিলন আলী ওই এলাকার তোবজুল হকের ছেলে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মিলন আলী বলেন, ‘সাপের ধরন চিহ্নিত করতে ও সঠিক চিকিৎসার জন্য সাপটি ধরে আমার ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে আসতে বলেছিলাম। তাই সে সাপটি ব্যাগে করে নিয়ে আসে। চিকিৎসকরা সাপটি দেখে রাসেল ভাইপার বলে নিশ্চিত করেছেন।’
শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মামুন কবির জানান, আক্রান্ত ব্যক্তি একটি সাপের বাচ্চাসহ হাসপাতালে আসেন। তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে তিনিশঙ্কামুক্ত। তারপরও আমরা ২৪ ঘণ্টা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছি।’
মাদারীপুরের শিবচরে একই দিনে তিনজনকে সাপে দংশন করেছে। তাদের মধ্যে দুজন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন। অপরজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
হাসপাতাল ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শনিবার বিকেলে শিবচর উপজেলার চর বাচামারা গ্রামের লোকমান খান বাড়ির পাশে বাদাম ক্ষেতে রাখা ঝাকার নিচ থেকে হাতে কাঁচি তুলছিলেন। এ সময় একটি সাপ তার হাতে দংশন করে। পরিবারের লোকজন তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা নিশ্চিত হন যে তাকে বিষধর সাপে দংশন করেছে। চিকিৎসকরা তাকে এন্টিভেনম দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে স্বজনদের অনুমতিপত্রে স্বাক্ষর করতে বললে তারা অস্বীকার করেন। এজন্য স্বজনদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোগীকে ঢাকায় রেফার করা হয়।
অপরদিকে একই দিন দুপুরে উপজেলার মাদবরচর ইউনিয়নের আলেপখাঁর খাঁড়াকান্দি গ্রামের শাহাবুদ্দিন হাওলাদার বাড়িতে পালা থেকে গরুর জন্য খড় বের করার সময় একটি সাপ তাকে দংশন করে। পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে দ্রুত শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
একই দিন সকালে উপজেলার সন্নাসীরচর ইউনিয়নের খাসচর বাচামারা গ্রামের মোসলেম কাজী বাড়ি সংলগ্ন খালের পানিতে পাট জাগ দিচ্ছিলেন। এসময় তাকে একটি সাপে দংশন করে। তার চিৎকারে পরিবারের সদস্যরা এসে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. ফারজানা সুলতানা বলেন, সাপের দংশনে আহত তিনজন রোগী হাসপাতালে এসেছেন। আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি দুজনকে বিষধর সাপে কাটেনি। তাই তাদেরকে এন্টিভেনম দেয়ার প্রয়োজন হয়নি। তবে তাদেরকে আমরা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছি। অপরজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ওষুধপত্র, স্যালাইনসহ হাসপাতালে সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। ডেঙ্গু মৌসুম শুরু হলে এ বিষয়ে আরও উদ্যোগ নেয়া হবে।
রোববার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। যুক্তরাজ্য ও সুইজারল্যান্ড সফর নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। খবর বাসসের
সামন্ত লাল সেন বলেন, সম্মিলিতভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতি যথেষ্ট। ডেঙ্গু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, দপ্তর এবং সিটি কর্পোরেশনের সমন্বিত উদ্যোগে কাজ করা উচিত। শিগগিরই এ বিষয়ে আন্ত:মন্ত্রণালয় সভার আয়োজন করা হবে।
যত্রতত্র অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বন্ধে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারণা জোরদার করা উচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে নিয়মিত তদারকি করা উচিত।
জেনেভা সফর নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে ফাইলেরিয়া নির্মূল এবং বিশ্বে প্রথম কালাজ্বর নির্মূল করায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ৭৭তম সাধারণ সভায় তার বক্তব্যে বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। মহাপরিচালক বলেছেন, অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বাংলাদেশ হতে পারে একটি যথাযথ রোল মডেল।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আজিজুর রহমান, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (আর্থিক ব্যাবস্থাপনা ও অডিট অনুবিভাগ) মো. আব্দুস সামাদ প্রমুখ।
২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ২২ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত হিসাবে এই তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এই সময়ের মধ্যে ৪৫৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যায়নি। এ পর্যন্ত ২৯ হাজার ৪৯৫ জন করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন। করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ২০ লাখ ১৭ হাজার ৮৮০ জন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, চিকিৎসকের ওপর কোনো আক্রমণ যেমন আমি সহ্য করব না, তেমন রোগীর প্রতি কোনো চিকিৎসকের অবহেলাও বরদাস্ত করা হবে না।
রোববার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে অনুষ্ঠিত ৪১তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) ও বিসিএস (পরিবার পরিকল্পনা) ক্যাডারে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। খবর বাসসের
সামন্ত লাল সেন বলেন, মন্ত্রী হিসেবে আমার বয়স মাত্র সাড়ে ৩ মাস। এই অল্প সময়ে আমি যেখানে গিয়েছি একটা কথাই বলেছি, আমি যেমন চিকিৎসকেরও মন্ত্রী, ঠিক তেমনি আমি রোগীদেরও মন্ত্রী। মন্ত্রী হিসেবে শুধু একটা প্রতিশ্রুতিই আমি দিতে পারি, তোমরা তোমাদের সর্বোচ্চ সেবাটুকু দিয়ে যাও, তোমাদের বিষয়গুলোও আমি দেখব।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম এর সভাপতিত্বে ওরিয়েন্টেশনে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আর বানু প্রমুখ।
নবনিযুক্ত চিকিৎসকদের উদ্দেশে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এ দেশের মানুষ অতি সাধারণ। তাদের চাওয়া-পাওয়াও সীমিত। ডাক্তারের কাছে এলে তারা প্রথমে চায় একটু ভালো ব্যবহার। একটু ভালো করে তাদের সাথে কথা বলা, একটু মনোযোগ দিয়ে তাদের কথা শোনা। এটুকু পেলেই তারা সন্তুষ্ট।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখতেন, তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়া। আমি মনে করি সে স্বপ্ন পূরণ করার কারিগর হচ্ছো তোমরা। যারা আজকে চিকিৎসক হিসেবে যোগদান করতে যাচ্ছো। আমার বিশ্বাস, তোমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবে।
অনুষ্ঠানে ৪১তম বিসিএস স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ ক্যাডারে সহকারী সার্জন পদে ১০৩ জন, সহকারী ডেন্টাল সার্জন পদে ১৭১ জন এবং পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদে ১৫৩ জন যোগদান করেন।
দেশে আরও ২৪ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টার এই হিসাব দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।
এতে জানানো হয়, নতুন করে ১৪ জনের শরীরে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৪৯ হাজার ৯৪৫ জনে।
তবে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনায় কারো মৃত্যু হয়নি। এখন পর্যন্ত ভাইরাসটিতে মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৪৯৪ জনের।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩০২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। একই সময় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ। মোট পরীক্ষায় এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৭ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মোট মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৯ জন। এ নিয়ে দেশে মোট সুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ১৭ হাজার ৩৭৪ জনে।
দেশজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহ ও উত্তপ্ত তাপমাত্রার কারণে শিশুদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়ে ইউনিসেফ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির বাংলাদেশ প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট।
বুধবার ইয়েট এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আপনার প্রতিবেশিদের দিকে নজর রাখুন- দুর্বল পরিবার, প্রতিবন্ধী শিশু, গর্ভবতী নারী এবং বৃদ্ধরা তাপপ্রবাহের সময় অসুস্থতা বা মৃত্যুর উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে। সময় নিয়ে প্রতিবেশীদের খোঁজখবর নিন, বিশেষ করে যারা একা থাকেন।’
ইউনিসেফের ২০২১ সালের শিশুদের জলবায়ু ঝুঁকি সূচক (সিসিআরআই) অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের ‘অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিতে’ রয়েছে বাংলাদেশের শিশুরা।
ইউনিসেফের মতে, তাপমাত্রার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে, বিশেষ করে নবজাতক, শিশু এবং ছোট বাচ্চাদের জন্য যারা তাপজনিত অসুস্থতা যেমন হিট স্ট্রোক এবং ডিহাইড্রেশনের কারণে বিশেষভাবে ডায়রিয়া ঝুঁকিপূর্ণ জনসংখ্যা হিসেবে বিবেচিত হয়।
ইয়েট বলেন, ‘যেহেতু শিশুদের ওপর ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার প্রভাবের উদ্বেগের কারণে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আগামী ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে, তাই ইউনিসেফ অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের হাইড্রেটেড ও নিরাপদ রাখতে অতিরিক্ত সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।’
এই তাপপ্রবাহের তীব্রতা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব থেকে শিশুদের রক্ষা করার জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়।
তাপমাত্রা নজিরহীনভাবে বাড়তে থাকায় অবশ্যই শিশু এবং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সুস্থতাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে বলে জানান ইয়েট।
এই তাপপ্রবাহ থেকে ইউনিসেফ কর্মী, বাবা-মা, পরিবার, যত্নগ্রহণকারী এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে শিশু ও গর্ভবতী নারীদের রক্ষায় নিচের পদক্ষেপগুলো নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে-
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
প্রাথমিক চিকিৎসা
যদি কোনো শিশু বা গর্ভবতী নারীর হিটস্ট্রেসের লক্ষণগুলো দেখা যায়, যেমন- মাথা ঘোরা, অতিরিক্ত ঘাম, বমি বমি ভাব, হালকা জ্বর, নাক দিয়ে রক্তপাত, পেশি খিঁচুনি, ফুসকুড়ি ইত্যাদি; ওই ব্যক্তিকে ভালো বায়ু চলাচলসহ শীতল, ছায়াযুক্ত জায়গায় রাখুন এবং ভেজা তোয়ালে বা শীতল পানি দিয়ে শরীর মুছে দিন।
পানি বা ওরাল রিহাইড্রেশন লবণ (ওআরএস) গ্রহণ করুন।
হিটস্ট্রেসের গুরুতর লক্ষণগুলোতে (যেমন: বিভ্রান্তি বা প্রতিক্রিয়া জানাতে অক্ষমতা, অজ্ঞান হওয়া, শরীরের উচ্চ তাপমাত্রা, দ্রুত হৃদস্পন্দন, খিঁচুনি এবং চেতনা হ্রাস) হলে জরুরিভিত্তিতে হাসপাতালে নেয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ।
মন্তব্য