নিয়মিত জিমে যাওয়া ও পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণসহ স্বাস্থ্য রক্ষার সব নিয়ম মানার পরও শুকিয়ে যাচ্ছিলেন আবিদ ও সেজান (ছদ্মনাম)। অথচ তাদের বয়স যথাক্রমে ২২ ও ২৫ বছর। এক পর্যায়ে চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হয়ে তারা জানতে পারলেন কারণটা।
স্বাস্থ্য রক্ষার পাশাপাশি মাসলম্যান হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে নিয়মিত জিমে যাওয়াটাই তাদের জন্য কাল হয়েছে। জিমে অতিরিক্ত স্টেরয়েড ব্যবহারের কারণে তারা লিভার এনজাইম ও হরমোনাল ইমব্যালেন্স-এর মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
তাদের একজনের লিভার এনজাইমের মাত্রা অস্বাভাবিক পর্যায়ে চলে গেছে। আরেকজনের টেস্টোস্টেরন হরমোন উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। সাধারণত এই বয়সে এমন শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার কথা নয়।
জিমে গিয়ে স্টেরয়েড সঠিক মাত্রায় এবং সঠিক বয়সে না নেয়ায় তাদের আচরণে অস্বাভাবিকতা চলে আসে। পরিবারের সদস্যরাও বিষয়টি ধরতে পারেন। কারণ জিম করেও তারা শুকিয়ে যাচ্ছিলেন। অবশেষে চিকিৎসার জন্য এই দুই তরুণকে ঢাকায় আনা হয়।
রাজধানীর গ্রীন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক ডা. রায়হান শহীদুল্লাহ বলেন, এই দুই তরুণ এখনও পুরোপুরি রিকভার করে উঠতে পারেনি। আর এই শারীরিক সমস্যার চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয়বহুল।
ডা. রায়হান বলেন, ‘স্টেরয়েড সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি হলো চিকিৎসকরা বিভিন্ন রোগ বুঝে প্রেসক্রাইব করেন। আর জিমে যে স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয় তা আর্টিফিসিয়াল বডি বিল্ডিংয়ের জন্য।
‘বাংলাদেশের ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো এই স্টেরয়েড উৎপাদন করে না। এগুলোর বেশিরভাগই চীন থেকে আনা হয়। প্রতিবেশী ভারত থেকেও নিয়ে আসা হয়।’
তিনি বলেন, ‘এই স্টেরয়েড প্রেসক্রাইব করার কোনো অথেনটিসিটি নেই। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে জিমে সাপ্লিমেন্ট দেয়া যায়। তবে কোনো চিকিৎসকই বডি বিল্ডিংয়ের জন্য স্টেরয়েড প্রেসক্রাইব করেন না। কারণ এর কোনো অনুমোদন নেই। এগুলোর বেশিরভাগই আন্ডারগ্রাউন্ড ড্রাগ।
‘কোনো ফার্মেসিতেও এটা পাবেন না। দুই-একটা পাওয়া গেলেও সেটা নির্দিষ্ট কোনো রোগ যেমন ব্রেইন ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার- এসব ক্ষেত্রে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আর এগুলো খুবই ব্যয়বহুল। আবার চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র কোনো ফার্মেসি বিক্রিও করবে না।’
পার্শপ্রতিক্রিয়া
স্টেরয়েডের প্রধান কাজ হলো মাসল বৃদ্ধি। জিমে নিয়মিত ব্যায়াম করে এক বছরে যেটুকু মাসল বাড়ানো যায় সেটা স্টেরয়েড ব্যবহার করে দুই বা তিন মাসেই করা সম্ভব। এর বড় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো, শরীরে প্রাকৃতিকভাবে যে হরমোন তৈরি হয় সেটা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ছেলেদের ক্ষেত্রে দেখা গেল, টেস্টোস্টেরন হরমোন তৈরিই বন্ধ হয়ে গেল। তখন নানাভাবে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে শরীরে। যদি মেইল হরমোন অর্থাৎ ছেলেদের হরমোনই তৈরি না হয় সে ক্ষেত্রে তো ওই মানুষটি পুরুষের মতো আচরণই করবে না। তখন প্রজনন ক্ষমতার ক্ষেত্রেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এছাড়া পরিমাণ না বুঝে স্টেরয়েড ব্যবহারে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হার্ট ফেইলিউরও হতে পারে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে দেখা যায়, অনেক বডি বিল্ডার কম বয়সে হার্ট অ্যাটাকে মারা যাচ্ছে। স্টেরয়েডের অস্বাভাবিক ব্যবহার এর অন্যতম একটি কারণ।
তাহলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না জেনেই কি জিমে স্টেরয়েডের ব্যবহার হচ্ছে- এমন প্রশ্নে ডা. রায়হান শহীদুল্লাহ বলেন, ‘বছর দশেক আগেও মানুষ এ বিষয়ে তেমন একটা জানত না। অনেকে এগুলোকে সাপ্লিমেন্ট মনে করত। তিন/চার বছর ধরে মানুষ কিছুটা হলেও জানতে পারছে।
‘সঠিক নিয়মে জিম না করলে জয়েন্টে ইফেক্ট পড়তে পারে। লিগামেন্ট ছিঁড়ে যেতে পারে। এমনকি অপারেশন পর্যন্ত করতে হতে পারে।
‘তাই স্টেরয়েড নিলেও চার সপ্তাহ পর তা বন্ধ করে দিতে হবে। হরমোনাল ব্যালান্স আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য ‘Post Cycle Therapy’ দিতে হয়।
অলি-গলিতে জিম, নেই প্রশিক্ষক
রাজধানী ঢাকা তো বটেই, দেশের বিভাগ, জেলা এমনকি উপজেলা সদর পর্যায়েও গড়িয়ে উঠেছে জিম। এর সঠিক পরিসংখ্যান স্বাস্থ্য খাত-সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও জানে না।
ফিটনেস সেন্টার হিসেবে পরিচালিত এসব জিমে নেই সার্টিফিকেটধারী কোনো প্রশিক্ষক। ফলে এসব জায়গায় স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য গিয়ে অনেকেই কাঙ্ক্ষিত সেবাটা পাচ্ছেন না। উপরন্তু মাত্রাজ্ঞান ছাড়া স্টেরয়েডের ব্যবহারে তারা আক্রান্ত হচ্ছেন জটিল রোগে।
ট্রেনিং-এর বিষয়ে মিস্টার বাংলাদেশ এবং ফিটনেস কোচ সাকিব নাজমুস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি মালয়েশিয়া থেকে ছয় মাসের একটি ট্রেনিং নিয়েছি। সব জিমে ট্রেনার নেই, আবার জিম করতে করতে অভিজ্ঞতা হয়ে গেলে ট্রেনার হয়ে যায়। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা তাদের নেই। এর অবশ্য একটি বড় কারণ, জিমে ট্রেনিং দেয়ার মতো কোনো প্রতিষ্ঠানই দেশে নেই।’
তিনি বলেন, ‘স্টেরয়েড ব্যবহারে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অবশ্যই থাকে। তবে সমস্যাটা হয় এটা দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার করলে। স্টেরয়েড ব্যবহার করতে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য। সর্বোচ্চ ৫ মাস এর ব্যবহার করা যেতে পারে। আর মঞ্চে পারফর্ম করার মতো কোনো বিষয় যদি না থাকে তাহলে আমি সাজেস্ট করব স্টেরয়েড ব্যবহার থেকে দূরে থাকা। এর ব্যবহারকে আমি নিরুৎসাহিত করতে চাই।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি কখনোই স্টেরয়েড ব্যবহারের সাজেস্ট করি না, যদি না সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিটি প্রতিযোগিতায় যায়।
‘এটি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য নিলে আবার রিমুভ করা যায়। এর জন্য কিছু মেডিসিন ও ইনজেকশন আছে। তবে সেটারও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। ওজন কমানো বা বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হলেও স্টেরয়েড আসলে কোনোভাবেই অনুমোদিত নয়।’
প্রতিরোধ
ডা. রায়হান বলেন ‘প্রতিটি জিমে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করা যেতে পারে। বাংলাদেশে বডি বিল্ডিংয়ের প্রচলন বেড়েছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যগত সচেতনতা সৃষ্টিতে মিডিয়ারও একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা দরকার। কারণ হুজুগে গা ভাসালে হবে না। এর নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কেও সবার জানা থাকা দরকার।
সবচেয়ে বড় কথা, যেহেতু স্টেরয়েডের ব্যবহার শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, তাই জেনেশুনে কারও এটা ব্যবহার করা উচিত নয়। জিম চলবে শারীরিক সুস্থতার জন্য। মাসলম্যান বানানোটা এর উদ্দেশ্য হতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ, মিডিয়া, অভিভাবক- সবাইকে বুঝতে হবে স্টেরয়েড ব্যবহার করলেই স্বাস্থ্যবান থাকা যাবে না। বাহ্যিক দৃষ্টিতে হেলদি মনে হবে এটুকুই। তাই এটার ব্যবহার থেকে দূরে থাকাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।’
যা বলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
দেশজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা জিমগুলোতে যথেচ্ছ ব্যবহার ও এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে দেশের স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে বড় কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কোনো খোঁজখবর রাখে না।
নিউজবাংলার পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এমনটা জানা গেছে। একইসঙ্গে তারা বলেছেন, এখন থেকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জিমে স্টেরয়েডের ব্যবহার হয় এটি আমি ভাবতেই পারি না। স্টেরয়েড সাধারণত চিকিৎসকরা বিশেষ কিছু রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করেন। মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য চিকিৎসককে যখন কোনো জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয় তখন রোগীকে বাঁচানোর জন্য স্টেরয়েড দেয়া হয়।
বিষয়টি জানানোর জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে স্বাস্থ্য সচিব বলেন, ‘আমি জিমে খোঁজ নেব। এটি তো হতে পারে না। বডি বিল্ড ন্যাচারালি হয়। মাসল বিল্ড একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। সেটি তো হবেই, আর সেজন্য একটা নির্দিষ্ট টাইম লাগবে। তাড়াহুড়া করে বডি বিল্ড করার নামে ব্যবসা করবে, এটা তো মেনে নেয়া যাবে না। প্রপার চ্যানেলের মাধ্যমে আমি বিষয়টি দেখব।’
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ বদান রাখার জন্য চট্টগ্রাম বিভাগের ৫০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা দিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে রোববার দুপুরে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে তাদেরকে এই সম্মাননা দেয়া হয়েছে। এ সময় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্রেস্ট ও উত্তরীয় দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসিওরেন্স সেল (আইকিউএসি)-এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ মামুন। স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোহাম্মদ নূরুল আজিম সিকদার৷
সম্মাননা পাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- জাহাঙ্গীর আলম, জাহিদ হোসেন, জাহাঙ্গীর চৌধুরী, রফিক আহম্মাদ (বিল্লা), অমল মিত্র, মোহাম্মদ মহিউদ্দিন শাহ আলম, মুকুল দাস, মোহাম্মদ ইসমাইল, আনোয়ারুল আজিম, প্রফেসর ডা. জাহিদ শরিফ, মোহাম্মদ ইউসুফ, এ. এইচ. এম. জিলানী চৌধুরী, মো. আবুল ফয়েজ, নির্মল চন্দ্র নাথ, ফজরুল হক ভূঁইয়া, মহিউদ্দিন আহমেদ রাশেদ, বদিউল আলম, মোহাম্মদ ইউনুস, এ কে এম সরওয়ার কামাল দুলু, মো. গোফরানুল হক ও আলহাজ্ব সুলতানুল কবির চৌধুরী (মরণোত্তর)।
অন্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে রয়েছেন- মোহাম্মদ আবু ইউসুফ চৌধুরী, রাজেন্দ্র প্রসাদ চৌধুরী, মোহাম্মদ সোলায়মান, সৈয়দ মোহাম্মদ মাহবুব উল আলম, পংকজ কুমার দস্তিদার, নাসির উদ্দীন চৌধুরী, নওশের আলী খান, এস এম কামাল উদ্দিন (মরণোত্তর), মো. ইদ্রিস (মরণোত্তর), আবুল কাশেম চিশতী, ইউসূফ সালাহউদ্দিন আহমদ, মো. ছালেহ আহমেদ, শহীদুল হক চৌধুরী (সৈয়দ), আহামদ উল্লাহ, মোহাম্মদ নূর উদ্দিন, আবু সাঈদ সরদার, শেখ সাইফুল আনোয়ার, নুরুল বশর, শাহজাহান খান, হাজী জাফর আহমদ, সৌরেন্দ্র নাথ সেন, সেলিম উল্লাহ, রফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ ইলিয়াছ মিঞা, শেখ মো. নুরুজ্জামান (মরণোত্তর), ফজলুল হক ভূঁইয়া, আফছার উদ্দিন আহমদ, মোখতার আহমদ (মরণোত্তর) ও এস. এম. ফজলুল হক।
সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, ‘মহান স্বাধীনতা দিবসে আমরা সম্মানিত করছি ৫০ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে, যারা আমাদের হৃৎস্পন্দন। তাদের ত্যাগের বিনিময়ে আজকের এই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত। তাদেরকে সম্মাননা দিতে পেরে আমরা গৌরবান্বিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত বছরও আমরা ৫০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা দিয়েছি। আমরা দুটি ক্রাইটেরিয়া অনুসরণ করে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করে এই সম্মাননা দিচ্ছি। একটি হলো যারা ভাতাপ্রাপ্ত, আরেকটি হচ্ছে যাদের নাম লাল বইয়ে আছে। আমরা যেসব নাম প্রস্তাব করি, সেগুলো আবার মুক্তিযোদ্ধা সংসদ থেকে ভেরিফাই করেছি।
‘মুক্তিযোদ্ধা যারা আজ সম্মাননা নিচ্ছেন তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। আমরা প্রতিবছর সম্মাননা দেয়ার এই ধারা অব্যাহত রাখব।’
অনুষ্ঠান বর্জন শিক্ষক সমিতি ও কর্মকর্তা সমিতির
এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা অনুষ্ঠান বর্জন/বয়কট করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার সমিতি।
অনুষ্ঠানে প্রক্টরকে স্বাগত বক্তা হিসেবে রাখা, প্রশাসনিক পদে নেই এমন একজনকে অনুষ্ঠানের সভাপতি করা এবং মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কাদের সম্মাননা দেয়া হচ্ছে সে বিষয়ে কারও সঙ্গে আলোচনা না করায় অনুষ্ঠান বর্জন করে শিক্ষক সমিতি।
অন্যদিকে অনুষ্ঠানে সভাপতির দায়িত্বে রেজিস্ট্রারকে না রাখায় অফিসার সমিতি অনুষ্ঠান বর্জন করেন।
আলোচনা সভা বয়কটের বিষয়ে চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী বলেন, ‘অনুষ্ঠানে এমন একজন ব্যক্তিকে (প্রক্টর) স্বাগত বক্তা হিসেবে রাখা হয়েছে যার বিরুদ্ধে স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ড ও জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে৷ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেবেন স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা এক ব্যক্তি। এটা আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না। এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী।’
তিনি আরও বলেন, অনুষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে আইকিউএসির পরিচালককে রাখা হয়েছে, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কোনো পদে নেই। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কাদের সম্মাননা দেয়া হচ্ছে সে বিষয়েও কারও সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। তবে আমরা সংগঠন থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও স্বাধীনতা স্মৃতি ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছি।’
অন্যদিকে চবি অফিসার সমিতির সভাপতি রশীদুল হায়দার জাবেদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানগুলো পরিচালনা বা সভাপতিত্ব করে থাকেন রেজিস্ট্রার। কিন্তু স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান পরিচালনা বা সভাপতিত্ব কোনটিতেই রেজিস্ট্রারকে রাখা হয়নি। এছাড়া অন্যান্যবার স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে অফিসার সমিতিসহ অন্যান্য কর্মচারী সমিতির সভাপতিদের জন্য মঞ্চে আসন রাখা হয়। এবার এটাও করা হয়নি। সব মিলিয়ে আমরা মনে করেছি যে অনুষ্ঠানে আমাদের মূল্যায়ন নেই, সেখানে না যাওয়াই ভালো।’
আরও পড়ুন:২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছেন আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. এনায়েতুর রহিম।
বৃহস্পতিবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি আয়োজিত ‘১৯৭১ সালের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি: প্রয়োজন গবেষণা, প্রকাশনা ও কূটনৈতিক তৎপরতার তাৎপর্য’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ দাবি জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিচারপতি এম. এনায়েতুর রহিম বলেন, ‘২৫ মার্চকে গণহত্যা বা জেনোসাইডের স্বীকৃতি দিতে হবে- এই দাবি নতুন প্রজন্মকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে দিতে হবে। আমরা জেনোসাইডের স্বীকৃতি পেলাম কি পেলাম না সেদিকে না তাকিয়ে আমাদের দাবি তুলে ধরতে হবে।
‘বাঙালিকে ধর্ম দিয়ে বিভক্তিকরণের চেষ্টা সবসময়ই ছিল। তারপরও আমাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে হবে।’
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক ও ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. একেএম লুৎফর রহমান।
রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নাফিস আহমদের সঞ্চালনায় সেমিনারে প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এস এম মাসুম বিল্লাহ ও লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদের প্রাক্তন ডিন অধ্যাপক ড. মো. জাকারিয়া মিয়া।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট পরিচালক, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় চেয়ারম্যানবৃন্দ, শিক্ষক-শিক্ষকা এবং শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:পবিত্র রমজান মাসে মহানগর, ডবল শিফট ও সিঙ্গেল শিফট সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সময়সূচি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। আর প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৫ রমজান পর্যন্ত ৯ কার্যদিবস খোলা থাকবে।
সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় এ সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ।
র্যাগিংয়ের দায়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ শিক্ষার্থীকে আবাসিক হলে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া এক ছাত্রীকে মারধরের অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় আরেক ছাত্রকে আজীবনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বৃহস্পতিবার দুপুরে এ তথ্য জানান।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় জানিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘নবীন শিক্ষার্থীদের র্যাগিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ শিক্ষার্থীকে আবাসিক হলে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এখানে পুরো শিক্ষা জীবনে তারা আর হলে থাকতে পারবে না।’
বহিষ্কৃত সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী। তবে তাদের নাম প্রকাশ করেননি উপাচার্য।
তিনি আরও বলেন, ‘কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও এক ছাত্রীকে মারধরের ঘটনায় কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ঘটনা ছাড়াও ওই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মাদকাসক্তিসহ বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে।’
অন্য এক ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গাড়িচালককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে বলে জানান উপাচার্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ মুজতবা আলী হলের ১১১ নম্বর কক্ষে ২০ ফেব্রুয়ারি সিনিয়ররা জুনিয়রদের র্যাগিং করার অভিযোগ ওঠে। ২২ ফেব্রুয়ারি ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী বিভাগীয় প্রধানের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ দেন। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় সেদিন অভিযুক্ত ৫ শিক্ষার্থীকে হল ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
তারা হলেন- আপন মিয়া, আল আমিন, পাপন মিয়া, রিয়াজ হোসেন ও আশিক হোসেন। তারা সবাই ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী।
এছাড়া ওই ঘটনায় অধ্যাপক ড. মো. খায়রুল ইসলামকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
আরও পড়ুন:বগুড়ায় এক বিচারকের বিরুদ্ধে দুই ছাত্রীর মাকে অপদস্ত করার অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেয়াকে কেন্দ্র করে বিচারকের অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে সহপাঠীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে এ ঘটনার সূত্রপাত।
বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, “এই বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে বগুড়ার জজ আদালতের এক বিচারকের মেয়ে। বিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা পালাক্রমে শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে থাকে। সোমবার ওই বিচারকের মেয়ের শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেয়ার কথা ছিল। তবে নিজেকে বিচারকের মেয়ে পরিচয় দিয়ে সে শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দিতে অস্বীকার করে। এ নিয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডতা হয়।
“ওই রাতেই বিচারকের মেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মাধ্যমে মেসেঞ্জারে তার সহপাঠীদের বস্তির মেয়ে উল্লেখ করে পোস্ট দেয়। সে পোস্টে উল্লেখ করে, ‘তোরা বস্তির মেয়ে। আমার মা জজ। তোদের মায়েদের বল আমার মায়ের মতো জজ হতে।’
“ওই পোস্টে বিচারকের মেয়ের চার সহপাঠী পাল্টা উত্তর দেয়। এ নিয়ে ওই বিচারক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুনকে মঙ্গলবার অভিভাবকদের ডাকতে বলেন। মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে প্রধান শিক্ষকের ডাকে ওই ৪ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিদ্যালয়ে আসেন। সে সময় ওই বিচারক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে জেলে দেয়ার হুমকি দেন। এ সময় দুই অভিভাবককে ওই বিচারকের পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়।”
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী শিক্ষিকা বলেন, ‘বিচারকের মেয়ে ও কিছু শিক্ষার্থী পাল্টাপাল্টি পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে প্রধান শিক্ষিকার কক্ষে বিচার বসানো হয়। এ সময় বিচারক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জেলে দেয়ার হুমকি দিলে দুইজন অভিভাবক নিজে থেকেই পা ধরে ক্ষমা চান। তাদেরকে কেউ বাধ্য করেনি বা পা ধরতে বলেনি।’
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। সরকারি চাকরিজীবীদের সন্তানদের সঙ্গে বেসরকারি চাকরিজীবী বা ব্যবসায়ীদের সন্তানদের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব কাজ করে।
‘যতটুকু জেনেছি সোমবার বিচারকের মেয়ের ঝাড়ু দেয়ার কথা ছিল। তবে সে তিন মাস আগেই স্কুলে আসায় এই পরিবেশ হয়তো বুঝে উঠতে পারেনি। এজন্য সে ঝাড়ু দিতে প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে কাজটি সম্পন্ন করে। এ সময় অন্য শিক্ষার্থীরা তাকে ক্রিটিসাইজ করে। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।’
প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, ‘এ কারণে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবককে ডাকা হয়। তাদের সঙ্গে কথা বলা হয়। কিন্তু অভিভাবকদের মাফ চাওয়াকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে। অভিভাবকেরা ভয় পেয়ে এভাবে মাফ চেয়েছেন। তাদেরকে কেউ বাধ্য করেনি।’
এদিকে অভিভাবকদের লাঞ্ছনা ও শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে বগুড়ার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নিলুফা ইয়াসমিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হেলেনা আকতার বিদ্যালয়ে আসেন। তারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সুরাহা করার আশ্বাস দেন।
একইসঙ্গে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নিলুফা ইয়াসমিনকে তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক।
দেশের যুবসমাজকে নার্সিং শিক্ষা গ্রহণে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘নার্সের শিক্ষা গ্রহণ করলে শুধু দেশে নয়, বিদেশেও কর্মসংস্থান হবে। সারাবিশ্বে নার্সিং পেশার গুরুত্ব ও খ্যাতি বাড়ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বুধবার গাজীপুরের কাশিমপুরে ‘শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে নার্সিং কলেজ’-এর দ্বিতীয় স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান-২০২৩ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা গ্রাজুয়েট হলেন, ডিগ্রি পেলেন, তাদেরকে জনগণকে সেবা দেয়ার কথা সব সময় মনে রাখতে হবে। একজন রোগী চিকিৎসা ও ওষুধে যতটা না সুস্থ হবে তার চেয়ে বেশি ও দ্রুত সুস্থ হবে ডাক্তারদের সহানুভূতি এবং নার্সদের সেবা পেয়ে।’
এ সময় খ্যাতনামা নার্স ও মানবসেবী ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কলেজের ২১০ জন স্নাতকের মধ্যে সনদপত্র বিতরণ করেন। তিনি ছয়জন স্নাতক শিক্ষার্থীকে তাদের অসামান্য একাডেমিক রেকর্ডের জন্য ‘প্রাইম মিনিস্টার্স অ্যাওয়ার্ড’ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের একটি অ্যানালিটিক প্রতিষ্ঠান ‘গ্যালাপ’-এর হিসাব অনুযায়ী ২০২১ সালের মতো আবারও ২০২২ সালে নার্সিংকে সবচেয়ে বিশ্বস্ত পেশার খ্যাতি দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান সরকার জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে নার্সিং পেশাকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করেছে এবং প্রায় ৪০ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছে। তাছাড়া অভিজ্ঞতার জন্য চাকরির বয়সসীমাও শিথিল করা হয়েছে। পাশাপাশি দেশ-বিদেশে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, সরকার দেশে প্রথমবারের মতো ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার পর এখন বিভাগীয় পর্যায়েও মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করছে। পর্যায়ক্রমে সব বিভাগে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হবে।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘পুরনো ২৩টি নার্সিং ইনস্টিটিউটকে নার্সিং কলেজে উন্নীত করে চার বছর মেয়াদি বিএসসি ইন নার্সিং কোর্স ও পোস্ট বেসিক কোর্স পরিচালনা করা হচ্ছে। আরও ১৬টি নার্সিং ইনস্টিটিউটকে নার্সিং কলেজে উন্নীতকরণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
‘সরকারি পর্যায়ে বর্তমানে ৬৯টি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা, বিএসসি বেসিক ও পোস্ট বেসিক এবং মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে। নার্সিং ক্ষেত্রে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার জন্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অ্যাডভান্সড নার্সিং এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (নিয়েনার) প্রতিষ্ঠা করেছি।’
তিনি জানান, বর্তমানে দেশের সরকারি স্বাস্থ্য সেবায় ৪৪ হাজার ৫৩৪ জন নার্স ও মিডওয়াইফ কর্মরত। ২ হাজার ৩৬৭টি শূন্য পদের বিপরীতে সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান। এছাড়া ১০ হাজার সিনিয়র স্টাফ নার্স ও ৫ হাজার মিডওয়াইফের নতুন পদ সৃজন প্রক্রিয়াধীন আছে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে স্পেশালাইজড হসপিটাল অ্যান্ড নার্সিং কলেজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ তৌফিক বিন ইসমাইল এবং দ্বিতীয় ব্যাচের স্নাতক শিক্ষার্থী আনামুল হক।
স্নাতক বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন কেপিজে হেলথকেয়ার বেরহাদের সভাপতি নরহাইজাম বিনতি মোহাম্মদ।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে নার্সিং কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ মল্লিক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার প্রাথমিক আবেদন শুরু হচ্ছে ১৫ মার্চ, বুধবার। তা চলবে ২৭ মার্চ পর্যন্ত। পরবর্তীতে উত্তীর্ণরা ভর্তি পরীক্ষার জন্য চূড়ান্ত আবেদন করতে পারবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক খাদেমুল ইসলাম মোল্লা বলেন, বুধবার দুপুর ১২টায় প্রাথমিক আবেদন শুরু হবে। আবেদন প্রক্রিয়া চলবে ২৭ মার্চ রাত ১২টা পর্যন্ত। ভর্তিচ্ছুদের প্রাথমিকভাবে ৫৫ টাকা ফি দিয়ে আবেদন করতে হবে। বাছাই শেষে চূড়ান্ত আবেদন শুরু হবে ৯ এপ্রিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির তথ্যমতে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার ২৯ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত এ (মানবিক), বি (বাণিজ্য) এবং সি (বিজ্ঞান) এই তিন ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। প্রাথমিক আবেদনকারীদের মধ্য থেকে এইচএসসি/সমমান পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে প্রতি ইউনিটে সর্বোচ্চ ৭২ হাজার এবং বিভিন্ন কোটায় আবেদনকারী ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন।
ভর্তি আবেদনের যোগ্যতা
২০২১ ও ২০২২ সালে এইচএসসি/সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরাই ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এতে মানবিক শাখা থেকে আবেদন করতে এসএসসি/সমমান ও এইচএসসি/সমমান পরীক্ষায় (চতুর্থ বিষয়সহ) ন্যূনতম জিপিএ-৩ সহ মোট জিপিএ ৭ থাকতে হবে। বাণিজ্য শাখা থেকে ন্যূনতম জিপিএ ৩.৫ সহ মোট জিপিএ ৭.৫ থাকতে হবে। বিজ্ঞান শাখায় ন্যূনতম জিপিএ ৩.৫ সহ মোট জিপিএ ৮ থাকতে হবে।
মন্তব্য