আধুনিক জীবনের নানা সুযোগ সুবিধা কায়িক পরিশ্রম কমিয়ে জীবনকে সহজসাধ্য করলেও তা তৈরি করছে নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি। চিকিৎসকরা বলছেন, শুয়ে বসে থাকা, ফাস্ট ফুডে আসক্তি, খেলাধুলা না করাসহ নানা কারণে শিশু, কিশোর ও তরুণদের মধ্যেও ডায়াবেটিসের প্রকোপ বাড়ছে।
বয়স্কদের রোগ হিসেবে ধারণা থাকায় তরুণ বয়সে পরীক্ষা নিরীক্ষাও সেভাবে করা হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অন্য রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়ে ধরা পড়ছে রোগটিতে আক্রান্ত হচ্ছে কম বয়সীরাও। এতে তরুণ রোগী পাওয়া যাচ্ছে, প্রকৃত সংখ্যাটি তার চেয়ে অনেক বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ডায়াবেটিস নিজেও যেমন শারীরিক নানা জটিলতার কারণ, সেই সঙ্গে এটির কারণে অন্য রোগও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। ডায়াবেটিস থাকলে অন্য রোগ সারতেও দেরি হয়, যে কারণে রোগটি শনাক্ত করা জরুরি।
তাই রোগটি নিয়ে সচেতনতার তাগিদ দিয়ে বিশ্বজুড়েই একটি দিবস পালন করা হয়। ‘ডায়াবেটিস শিক্ষা, ভবিষ্যতের সুরক্ষা‘ প্রতিপাদ্য নিয়ে সোমবার নানা আয়োজন রাখা হয়েছে বাংলাদেশেও।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে সচেতনতার তাগিদ দিচ্ছেন। তারা বলছেন, যুবক বয়সে এখন অনেক রোগী পাওয়া যাচ্ছে, যা আগে সেভাবে দেখা যায়নি।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডায়াবেটিস, থাইরয়েড ও হরমোন বিশেষজ্ঞ ইন্দ্রজিৎ প্ৰসাদ বলছেন, তারা যত রোগী যাচ্ছেন তাদের মধ্যে ১২ শতাংশের বেশি যুবক এবং তা বাড়ছে।
কারণ কী-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এর কারণ যুবকরা এখন খেলাধুলা বা কায়িক শ্রম কম করে, তারা ফাস্টফুডে আসক্ত, সেই সঙ্গে মোবাইল, ইন্টারনেটে সময় কাটাচ্ছে বেশি।’
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমেরিটাস অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহও একই কথা জানিয়েছেন। তিনিও জানান, এখন তরুণ ও যুবক বয়সে অনেক রোগী পাচ্ছেন তারা।
কারণ জানতে চাইলে তিনিও বলেন, ‘তরুণরা খেলাধুলা, শারীরিক পরিশ্রম করেন না, অলস জীবন যাপন, খাওয়া দাওয়ায় অনিয়ম, টেনশন-এগুলোর জন্যই রোগটি হতে পারে।’
তিনি আরও জানান, তরুণ বা যুবকরা যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, সেটি লক্ষণে বোঝা যায় না প্রায় ক্ষেত্রেই। সাধারণত অন্য রোগের চিকিৎসা করতে গিয়ে রক্ত পরীক্ষায় ধরা পড়ে সেটি। ডেঙ্গু বা করোনার চিকিৎসা বা বিদেশ যাত্রার আগে মেডিক্যাল পরীক্ষায় ধরা পড়ছে রোগটি।
একজন তরুণ কী লক্ষণে বুঝবেন তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত?
দেশবরেণ্য অধ্যাপক আবদুল্লাহ বলেন, ‘লক্ষণ বলতে তেমন কিছু নাই। অনেক সময় কিছুই বোঝা যায় না। এমনও হয় খুব খায়, কিন্তু ওজন কমে যাচ্ছে, শুকিয়ে যাচ্ছে, অনেক সময় অনেক পিপাসা লাগে, ক্লান্তি অনুভব হয়।’
ঝুঁকির বাইরে নয় শিশুও
রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে সাড়ে ছয় বছর বয়সী একটি শিশুকে শারীরিক দুর্বলতা ও ঠান্ডার সমস্যা নিয়ে ভর্তির পর পরীক্ষায় প্রকাশ পেল সেও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। চিকিৎসকরা ধারণা করছেন, এটা জন্ম থেকেই হয়েছে।
শিশুটির বাবা বলছেন, তার বাচ্চা আরও ছোট থেকেই একটু বেশি প্রস্রাব করত। কিন্তু সেটি যে ডায়াবেটিসের কারণে, তা বুঝতে পারেননি। হাসপাতালে আনার পর অবাক হয়েছেন তারা।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ইন্দ্রজিৎ প্ৰসাদ বলছেন, ‘আমরা মনে করি, ডায়াবেটিস বয়ষ্কদের হয়। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। ডায়াবেটিসের কয়েকটা ধরন আছে। এটি নবজাতক শিশু থেকে শুরু করে বয়ষ্ক সবার হতে পারে। নবজাতকের যে ডায়াবেটিস হয়, তাকে বলা হয় নিউন্যাটাল ডায়াবেটিস। এটি সাধারণত জন্মের পর থেকে ছয় মাসের মধ্যে হয়ে থাকে। ছয় মাসের পর থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত যে ধরন তাকে আমরা বলি টাইপ ওয়ান। এর পরের বয়স থেকে যেটা সেটা হলো টাইপ টু।’
শিশুদের মধ্যে ৫ শতাংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এর বাইরেও বিশেষ ধরনের ডায়াবেটিস রয়েছে যেটা গর্ভাবস্থায় হয়। এটি সাধারণত প্রেগন্যান্সির ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহে হয়। অনেক ক্ষেত্রে এটি চলে যায় আবার কখনও কখনও তা সন্তান প্রসবের পর থেকেও যায়।
কীভাবে বোঝা যাবে সন্তান এই রোগে আক্রান্ত কি না
অধ্যাপক ইন্দ্রজিৎ বললেন, ‘ওজন কমে যাওয়া, দৃষ্টিশক্তিতে সমস্যা, অতিরিক্ত দুর্বলতা, মাথাব্যথা, খেলাধুলায় আগ্রহ থাকে না, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যওয়া ইত্যাদি লক্ষ্মণ দেখা দেয় তারে মধ্যে।’
তিনি বলেন, ‘শিশুদের ক্ষেত্রে আগে নির্ণয় করতে হবে কোন টাইপ ডায়াবেটিস। টাইপ ওয়ান হলেও ইনসুলিন। যদি টাইপ-টু হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে হাঁটাহাঁটি বা খেলাধুলা করতে হবে।’
শিশুরা কেন এই রোগে আক্রান্ত হয়- এই প্রশ্নে তিনি বললেন, তাদের ক্ষেত্রে ছয় মাসের পর টাইপ ওয়ানে আক্রান্ত হওয়ার কারণ অগ্ন্যাশয়ের বিটাসেল (যেখান থেকে ইনসুলিন তৈরি হয়) ধ্বংস হওয়া। এটা অটো ইমিউনিটির কারণে হয়। তাই প্রথম দুই বছর শিশুকে অবশ্যই মায়ের বুকের দুধ দিতে হবে।‘
ডায়াবেটিসের কারণ কী
চিকিৎসকদের মত প্রধানত বংশগত কারণে রোগটি হয়ে থাকে। মা বা বাবার যে কোনো একজনের ডায়াবেটিস থাকলে সন্তানের ঝুঁকি থাকে ১০ শতাংশ। আর দুজনেরই থাকলে ঝুঁকি থাকে ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ।
দ্বিতীয় কারণ হিসেবে উঠে এসেছে স্থূলতা। অতিরিক্ত মোটা হয়ে গেলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। যারা স্লিম তাদের তুলনায় মোটা মানুষদের ঝুঁকি দশ গুণ বেশি।
স্ট্রেস বা মানসিক চাপও রোগটির একটি বড় কারণ। অতিরিক্ত মানসিক চাপে স্ট্রেস হরমোন তৈরি হয়। এই হরমোনগুলো বেশি তৈরি হলেও তা ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে।
প্রয়োজনের চেয়ে কম ঘুমকেও বিপজ্জনক বলছেন চিকিৎসকরা। অধ্যাপক ইন্দ্রজিৎ বলেন, ‘অনেকেই অতিরিক্ত রাত জাগেন এবং সঠিক নিয়মে ঘুমান না। এতে তার ডায়াবেটিস হতে পারে।’
সুগার ফল হতে পারে বিপজ্জনক
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী অন্তত ৪২ কোটি ২০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এদের বেশিরভাগই নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে বাস করে এবং প্রতি বছর ২ লাখ ৮৪ হাজার ৪৯ জনের মৃত্যু হয় সরাসরি ডায়াবেটিসের জন্য।
ধারণা করা হয়, বাংলাদেশে অন্তত ১২ শতাংশ মানুষ রোগটিতে আক্রান্ত। চলতি বছর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করা একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশের ১ কোটি ৩১ লাখ মানুষের ডায়াবেটিস আছে।
ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইন্দ্রজিৎ বলেন, ‘বিশ্বে প্রতি মিনিটে ৮ জন মানুষ ডায়াবেটিসে মারা যায়। এর প্রধান কারণ হার্ট অ্যাটাক। ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের অন্য রোগীদের তুলনায় দুই থেকে চার গুণ বেশি আশঙ্কা থাকে হার্ট অ্যাটাকের।’
তাছাড়া হাইপোগ্লাইসেমিয়াতেও মানুষ মারা যায়। এটি সাধারণভাবে সুগার ফল বলে পরিচিত।
তিনি অরও বলেন, ‘অনেকেরই হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয় যাকে আমরা বলি সুগার ফল করেছে। এ সময় অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগা, ঘাম হওয়া, শরীর কাঁপতে থাকা, দুর্বল বোধ করা, মাথা ব্যথা হওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা- এ রকম নানা লক্ষ্মণ দেখা দেয়।’
কেউ যদি ডায়াবেটিসের ওষুধ বা ইনসুলিন বেশি পরিমাণে গ্রহণ করেন অথবা সঠিক পরিমাণে খাবার না খান বা একেবারেই বাদ দেন, তাহলে তার সুগার ফল হতে পারে।
এটি প্রতিরোধের উপায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দিনে ছয় বেলা অল্প করে বার বার খেতে হবে। সঠিক নিয়মে হাঁটাহাঁটি করতে হবে। ওষুধ এবং ইনসুলিনের মাত্রা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক নিয়মে এডজাস্ট করতে হবে।’
আবার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে সুগার অনেক বেড়ে গিয়ে ডায়াবেটিস বিষক্রিয়া হয়ে অনেকে মারা যায়। ফলে আক্রান্তদের নিয়মিত ডায়াবেটিসের মাত্রা পরীক্ষার পরামর্শও দেন চিকিৎসকরা।
প্রতিরোধে উপায়
চিকিৎসকদের মত হলো, ৮৫ শতাংশ ডায়াবেটিস প্রতিরোধযোগ্য। বংশে রোগটির প্রকোপ থাকলেও কিছু নিয়ম এটি প্রতিরোধ করতে পারে।
এ ক্ষেত্রে:
১। প্রতিদিন অন্তত ২০ মিনিট হাঁটতে হবে।
২। সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।
৩। ২৪ ঘণ্টায় ছয় ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।
আরও পড়ুন:চা পান করতে কমবেশি সবাই পছন্দ করে। তবে সারা দেশে এবার তীব্র দাবদাহ চলায় স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা মাথায় রেখে চাপ্রেমীরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। বিশেষজ্ঞরাও এ সময় ঘনঘন চা পান করা থেকে বিরত থাকতে বলছেন।
তবে চাপ্রেমীদের কাছে তা মানা কিছুটা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য অনেকেই প্রশ্ন করছেন গরমে ঠিক কত কাপ চা পান স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
ভারতের কলকাতার বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ শর্মিষ্ঠা রায় দত্তের কাছে এ বিষয়ে জানতে চায় ইন্ডিয়া টাইমস। তিনি বলেন, ‘চা হলো অত্যন্ত রিফ্রেশিং একটি পানীয়। তাই হাজার চাপের মধ্যে এক কাপ চা খেলে মাথা হালকা হয়, দুশ্চিন্তা কমে। শুধু মানসিক প্রশান্তি আনার কাজেই নয় নিয়মিত চা খেলে হার্ট ভালো থাকে।’
তবে এই তাপপ্রবাহে গরম চা এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে বলে মত এ পুষ্টিবিদের। তার ভাষ্য, ‘না হলে পেটের সমস্যা বাড়তে পারে। তবে এতসব কথা জানার পরও যারা গরম চা পান করতে আগ্রহী তারা একদম সকাল-সকাল এক কাপ ধূমায়িত চা পান করতে পারেন।’
গরমে শরীরের খেয়াল রাখতে চাইলে গরম চা পান করার পরিবর্তে ঠাণ্ডা চা বা কফি পান কর যেতে পারে। তাতেই শরীর ঠাণ্ডা থাকবে বলে জানিয়েছেন শর্মিষ্ঠা রায় দত্ত।
দুধ-চিনি ছাড়া চা পান করতে পারলে বিষয়টি আরও ভালো। চায়ের সঙ্গে দুধ মিশিয়ে খেলে এই পানীয়টির অ্যান্টি অক্সিডেন্ট নষ্ট হয়ে যায়। ফলে চা পান করে আর তেমন কোনো উপকার আসে না উল্টো গ্যাস-অ্যাসিডিটির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই গরমকাল অথবা সারা বছর; দুধ চা পান করা এড়িয়ে চলা ভালো। তার বদলে সুস্থ থাকতে বরং রং চা পান করলে মিলবে উপকার।
তবে সারা দিন অথবা তাপপ্রবাহে ঠিক কত কাপ চা পান করা ভালো তা একান্তই নিজের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। শরীরে বেশি কষ্ট অনুভব করলে তখন নিজের থেকেই চায়ের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া ভালো। নিজের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয় এমন কোনো অভ্যাসই ধরে রাখা ভালো নয়।
দেশজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহ ও উত্তপ্ত তাপমাত্রার কারণে শিশুদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়ে ইউনিসেফ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির বাংলাদেশ প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট।
বুধবার ইয়েট এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আপনার প্রতিবেশিদের দিকে নজর রাখুন- দুর্বল পরিবার, প্রতিবন্ধী শিশু, গর্ভবতী নারী এবং বৃদ্ধরা তাপপ্রবাহের সময় অসুস্থতা বা মৃত্যুর উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে। সময় নিয়ে প্রতিবেশীদের খোঁজখবর নিন, বিশেষ করে যারা একা থাকেন।’
ইউনিসেফের ২০২১ সালের শিশুদের জলবায়ু ঝুঁকি সূচক (সিসিআরআই) অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের ‘অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিতে’ রয়েছে বাংলাদেশের শিশুরা।
ইউনিসেফের মতে, তাপমাত্রার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে, বিশেষ করে নবজাতক, শিশু এবং ছোট বাচ্চাদের জন্য যারা তাপজনিত অসুস্থতা যেমন হিট স্ট্রোক এবং ডিহাইড্রেশনের কারণে বিশেষভাবে ডায়রিয়া ঝুঁকিপূর্ণ জনসংখ্যা হিসেবে বিবেচিত হয়।
ইয়েট বলেন, ‘যেহেতু শিশুদের ওপর ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার প্রভাবের উদ্বেগের কারণে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আগামী ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে, তাই ইউনিসেফ অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের হাইড্রেটেড ও নিরাপদ রাখতে অতিরিক্ত সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।’
এই তাপপ্রবাহের তীব্রতা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব থেকে শিশুদের রক্ষা করার জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়।
তাপমাত্রা নজিরহীনভাবে বাড়তে থাকায় অবশ্যই শিশু এবং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সুস্থতাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে বলে জানান ইয়েট।
এই তাপপ্রবাহ থেকে ইউনিসেফ কর্মী, বাবা-মা, পরিবার, যত্নগ্রহণকারী এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে শিশু ও গর্ভবতী নারীদের রক্ষায় নিচের পদক্ষেপগুলো নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে-
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
প্রাথমিক চিকিৎসা
যদি কোনো শিশু বা গর্ভবতী নারীর হিটস্ট্রেসের লক্ষণগুলো দেখা যায়, যেমন- মাথা ঘোরা, অতিরিক্ত ঘাম, বমি বমি ভাব, হালকা জ্বর, নাক দিয়ে রক্তপাত, পেশি খিঁচুনি, ফুসকুড়ি ইত্যাদি; ওই ব্যক্তিকে ভালো বায়ু চলাচলসহ শীতল, ছায়াযুক্ত জায়গায় রাখুন এবং ভেজা তোয়ালে বা শীতল পানি দিয়ে শরীর মুছে দিন।
পানি বা ওরাল রিহাইড্রেশন লবণ (ওআরএস) গ্রহণ করুন।
হিটস্ট্রেসের গুরুতর লক্ষণগুলোতে (যেমন: বিভ্রান্তি বা প্রতিক্রিয়া জানাতে অক্ষমতা, অজ্ঞান হওয়া, শরীরের উচ্চ তাপমাত্রা, দ্রুত হৃদস্পন্দন, খিঁচুনি এবং চেতনা হ্রাস) হলে জরুরিভিত্তিতে হাসপাতালে নেয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ।
যশোর-চুয়াডাঙ্গার পাশে হওয়ায় প্রতিদিনই মাগুরায় বাড়ছে তাপদাহ। তাপদাহের ফলে পুড়ছে মাঠ-প্রকৃতিসহ প্রাণীকুল। গরমে কোথাও স্বস্তি নেই। তাপদাহ বৃদ্ধির কারণে বেশি ভুগছে জেলার শিশু ও বৃদ্ধরা।
সরজমিনে মাগুরা সদর হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, শিশু ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। অনেকে সিট না পেয়ে অবস্থান নিয়েছেন মেঝেতে। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছেন অনেক বয়স্ক রোগীও। তাদের কষ্ট আরও বাড়িয়েছে লোডশেডিং।
সোমবার সকাল থেকে মাগুরা ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে শিশু ও অন্যান্য ওয়ার্ডগুলোতে অতিরিক্ত গরমে আক্রান্ত রোগীর ভিড় বাড়তে শুরু করে। গত এক সপ্তাহের মধ্যে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি এসেছে এ হাসপাতালে।
এরমধ্যেই রোগীর চাপ সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে কর্র্তপক্ষ। ফলে বাধ্য হয়ে ওয়ার্ডের বাইরে মানুষের চলাচলের রাস্তার মেঝেতে থাকছেন অনেক রোগী।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্যানুসারে, মাগুরা ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে বর্তমানে ৪৩৪ জন ভর্তি রয়েছেন। সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৪১টি শিশুই ভর্তি হয়েছে সেখানে, যাদের অধকিাংশই গরমজনতি বিভিন্ন রোগে (ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ও জ্বর) ভর্তি হয়েছেন।
শহরের খাঁপাড়া থেকে আসা অনন্যা রহমান তার মেয়েকে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করেছেন। তিনি জানান, গত পাঁচ দিন ধরে তার দুই মাসের শিশুর পাতলা পায়খানা ও জ্বর। পরে হাসপাতালে এসে জানতে পারেন, শিশুটির নিউমোনিয়া হয়েছে।
পৌরসভার কাদিরাবাদ গ্রামের আবু মিয়ার নাতনির তিন দিন ধরে পাতলা পায়খানা ও বমি এবং জ্বর, কিন্তু শয্যা না থাকায় হাসপাতালের বারান্দার মেঝেতে নানতির চিকিৎসা করাচ্ছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘একদিকে বিদ্যুৎ নেই, অন্যদিকে বাতাস চলাচলের জন্য ওয়ার্ডের কোনো একটা জানালা যে খুলব, সে উপায়ও নেই। ফলে প্রচণ্ড গরমে শিশুটি ছটফট করছে। আমাদের অবস্থাও তাই। হাতপাখা চালিয়ে গরম নিবারণ করা যাচ্ছে না।’
হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সাজিয়া আক্তার বলেন, ‘ডায়রিয়া পানিবাহিত রোগ। দূষিত পানি পান করার মাধ্যমে এ রোগ হয়। সাধারণত দিনে ৩ বা এর চেয়ে বেশিবার পাতলা পায়খানা হতে শুরু করলে তার ডায়রিয়া হয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়।
‘গরম এলেই ডায়রিয়ার সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করে। বিশেষ করে শিশু-কিশোররা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।’
এ বিষয়ে ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. মোহসিন উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অতি গরমে হাসপাতালে দিন দিন শিশুসহ অন্যান্য রোগী বাড়ছে।’
এক্ষেত্রে পানি ও তরল জাতীয় খাবার খাওয়ার পরার্মশ দেন এই চিকিৎসক। বলেন, ‘হাসপাতালে গরমে শিশু রোগীর সংখ্যা বেশি বেড়ে যাওয়ায় আমরা খুবই চিন্তিত। এ কারণে শিশু রোগীদের প্রতি বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে দেশের স্কুল-কলেজগুলোতে এক সপ্তাহের ছুটি দেয়া হয়েছে। স্কুলে আরও এক সপ্তাহ ছুটির নির্দেশ আসছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
তিনি বলেছেন, ‘আমি শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি, আমরা আরও এক সপ্তাহ স্কুলগুলোকে বন্ধ করার নির্দেশ দিচ্ছি। আমাদের কিছু নির্দেশনা আছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সেগুলো সব জায়গায় দেয়া হবে।
শনিবার দুপুরে সাভারের সিআরপি নার্সিং কলেজের ভবন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তিনি। অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বয়স্ক ও শিশুরা যেন প্রয়োজন না থাকলে ঘরের বাইরে না যায়। আর বাকি যে নির্দেশনাগুলো সেগুলো আজকেই চলে যাবে। স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে।’
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালের কার্ডিয়াক ইউনিটের ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টি আমরা তদন্ত করতে বলেছি। আজকেই তদন্ত হবে।’
স্বাস্থ্যখাতে কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে, জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, আমি সাধারণ মানুষের কাছে চিকিৎসা ব্যবস্থা পৌছে দেব। প্রত্যেকটা হেলথ কমপ্লেক্সকে, কমিউনিটি ক্লিনিককে উন্নত করতে হবে যেন সাধারণ মানুষ গ্রামেই চিকিৎসা পায়।’
সাভার ও ধামরাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেড সঙ্কট নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে এটাকে করা যায় কি না, তা নিয়ে কাজ করব।’
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন সিআরপি প্রতিষ্ঠাতা ড. ভ্যালেরি টেইলর, সিআরপির নির্বাহী পরিচালক ড. মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
এর আগে, শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ২১ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সাত দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
তারও আগে দেশজুড়ে চলমান দাবদাহের কারণে সরকারি প্রাথমিক স্কুলে অ্যাসেম্বলি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
পরবর্তীতে শনিবার বিকেলে মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজও সাত দিন বন্ধ থাকার সিদ্ধান্তের কথা জানান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) উপ-পরিচালক (কলেজ-১) মো. ওয়াহিদুজ্জামান।
পরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর ক্লাস বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেন বলেছেন, ‘পরবর্তী তারিখ ঘোষিত না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর ক্লাস বন্ধ থাকবে।’
তবে ক্লাস বন্ধ থাকলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সব পরীক্ষা বিদ্যমান সময়সূচি অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি।
গত কয়েক দিন ধরে তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশ। এর মধ্যে যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।
শনিবার যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এদিন চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজধানী ঢাকাও চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা অনুভব করেছে আজ। এদিন ঢাকায় মৌসুমের সর্বোচ্চ ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। শনিবার হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে চুয়াডাঙ্গা ও পাবনায় দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন:রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের কার্ডিওলজি বিভাগে শুক্রবার আগুন ধরেছে।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষের ডিউটি অফিসার লিমা খানম দুপুরে নিউজবাংলাকে জানান, বেলা একটা ৪৭ মিনিটে আগুন ধরার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাহিনীর পাঁচটি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ করছে।
আগুনে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।
তিনি আরও জানান, আগুন ধরার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয় তদন্তের পর বলা যাবে।
বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রোববার ও সোমবার দুই ঘণ্টা কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখা। বলা হয়েছে, এই দুদিন চিকিৎসকরা প্রাইভেট প্র্যাকটিসও করবেন না।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সামনে চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠনের অংশগ্রহণে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়। সূত্র: ইউএনবি
বিএমএ চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি অধ্যাপক ডা. মুজিবুল হক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন, স্বাধীনতা প্রকাশ পরিষদ, চট্টগ্রাম প্রকাশ সমিতিসহ ৯টি সংগঠন অংশ নেয়।
বিএমএ নেতারা বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে চিকিৎসকরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। বিচার না হওয়ায় চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনা বাড়ছে। চিকিৎসকরা তাদের কর্মস্থলে খুবই অনিরাপদ।
চিকিৎসকদের ওপর হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনারও দাবি জানান তারা।
মুজিবুল হক বলেন, ‘হামলার বিচার পাওয়ার জন্য আমরা পাঁচদিন অপেক্ষা করেছি। কিন্তু কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি।’
প্রসঙ্গত, ১০ এপ্রিল হৃদরোগে আক্রান্ত এক রোগীর চিকিৎসা দিতে দেরি হওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের হামলায় গুরুতর আহত হন চট্টগ্রামের পটিয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক রক্তিম দাস।
পরে ১৪ এপ্রিল ভুল চিকিৎসায় এক বছরের শিশুর মৃত্যুর অভিযোগে রোগীর স্বজনদের হামলায় রিয়াজ উদ্দিন শিবলু নামে আরেক চিকিৎসক আহত হন।
আরও পড়ুন:স্বাস্থ্যসেবায় চিকিৎসকদের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেছেন, ‘কোনো চিকিৎসকের ওপর হামলা যেমন মেনে নেব না, তেমনই চিকিৎসায় কোন ধরনের অবহেলা হলে সেটাও মেনে নিতে পারব না।’
বুধবার বিকেলে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন শেষে চিকিৎসদের নিয়ে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) চট্টগ্রামের পটিয়ায় চিকিৎসদের ওপর হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে চিকিৎসা কাজে চিকিৎসকদের আরও বেশি মনোযোগী ও আন্তরিক হওয়ার পরামর্শ দেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকদের যেমন সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্ব আমার, রোগীদের সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্বও আমার। কোনো চিকিৎসকের বিরুদ্ধে পেশাগত দায়িত্ব পালনে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবা বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের তুলনায় এগিয়ে আছে। বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবা নিয়ে সম্প্রতি ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক ভূয়সী প্রশংসা করেন। ভুটান রাজার আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সরকার ভুটানে বার্ন হাসপাতাল করার চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত করোনার টিকা নেয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে চর্ম রোগ দেখা দেয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যে কোনো ড্রাগেই এলার্জি প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। তবে এ বিষয়টি আমি এখনও শুনিনি।’
এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত এমপি বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার করোনার প্রধান মুখপাত্র প্রফেসর ফলস-এর গবেষণায় এখনও এমন কোনো তথ্য উঠে আসেনি। তবে এমনও হতে পারে যে করোনার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো এখন দেখা দিচ্ছে।’
এর আগে চান্দিনার মাধাইয়া ইউনিয়নের সোনাপুর কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর একান্ত সচিব কমল কুমার ঘোষ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সারওয়ার হোসেন, কুমিল্লার জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান, জেলা সিভিল সার্জন ডা. নাছিমা আক্তার, চান্দিনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা তপন বক্সী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাবের মো. সোয়াইব, পৌর মেয়র শওকত হোসেন ভূইয়া, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আরিফুর রহমান প্রমুখ।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য