গত সপ্তাহে দুই দিন ক্লাস বন্ধ রেখে জীবাণুমুক্ত করার পর রাজধানীর ইস্কাটনের এজি চার্চ স্কুল প্রাক-প্রাথমিকে সশরীরে ক্লাস বন্ধ করে করোনাকালের মতো আবার অনলাইন ক্লাসে ফিরে গেছে।
এই সিদ্ধান্তের কারণ শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া একটি রোগ, যা সাধারণভাবে জলবসন্ত বলে ধরা হলেও সেটি আসলে সম্পূর্ণ অন্য একটি রোগ। এতে সাধারণত দেড় বছর বয়সী থেকে শুরু করে ছয় বছর বয়সীরা আক্রান্ত হয়।
জলবসন্তের মতোই এই রোগেও শিশুদের হাত-পা থেকে গোটা শরীর ফুসকুড়িতে ভরে যায়। তার ভেতরে থাকে আবার পানি। গায়ে জ্বর আসে, সেই সঙ্গে থাকে ব্যথা।
রোগটির নাম ‘হ্যান্ড ফুট মাউথ’। হাতে, মুখে ও পায়ে ফুসকুড়ি বেশি হয় বলেই এই নাম দেয়া হয়েছে।
কক্সেকিভাইরাস নামের একটি ভাইরাসের আক্রমণে এ রোগ হয়।
বেশ কয়েকজন শিশু এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর এজি চার্চ স্কুলটি শিশুদের আর শ্রেণিকক্ষে নিয়ে আসতে চাইছে না।
একজন শিক্ষক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনেক ছেলেমেয়ে আক্রান্ত হয়েছে। তাই কোনো ঝুঁকি নিতে চাই না। ছেলেমেয়েদের স্বাস্থ্য আগে।’
ঢাকা শিশু হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ রেজওয়ান সরোয়ার নিউজবাংলাকে জানান, প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ জন শিশু এই রোগ নিয়ে তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে। এত বেশি রোগী এর আগে তারা পাননি।
অভিভাবকরা এই রোগ নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। তবে এই চিকিৎসক জানালেন, খুব বেশি উদ্বেগের কিছু নেই। এই রোগে তেমন কোনো জটিলতা হয় না। হাসপাতালে ভর্তিও নেয়া হয়নি কাউকে।
চিকিৎসক রেজওয়ান জানান, এই রোগে সাধারণত হাত, পায় ও মুখে বা মুখের ভেতরে জলবসন্তের মতো ফুসকুড়ি দেখা যায়। আকারে বড় হওয়ায় অভিভাবকরা ভয় পেয়ে যান।
ফুসকুড়ি হওয়ার আগে কারও এক দিন জ্বর থাকে, কারও জ্বর ওঠে না। অনেক বাচ্চা বলে ব্যথা হয়, অনেকে বলে চুলকায়। সে অনুযায়ী ওষুধ দেয়া হয়।
রাজধানীর কল্যাণপুরের বাসিন্দা তারিক আজিজ চৌধুরীর দুই বছর দুই মাস বয়সী সন্তান মিরাব মাহ্দী চৌধুরী পাঁচ দিন ভুগেছে।
তারিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দাঁতের নিচে মাড়িতে, জিহ্বা, আলা জিহ্বায় ঘাঁ হয়েছিল। হাত, পায় ও কোমরের নিচের অংশেও ঘায়ের মতো হয়েছিল। সে প্রচণ্ড কাঁদত, কিছু খেতে পারত না, যাই খেয়েছে বমি করত। মায়ের দুধও টানতে পারেনি।
‘এ রকম বাচ্চার পাঁচ দিন ছিল। ডাক্তার কিছু ওষুধ দিয়েছিল। একটা সিরাপ আর মুখের জ্বালা কমার জন্য একটা জেল দিয়েছিল। পরে ফুসকুড়ি ভালো হয়ে কালো হয়ে চামড়াটা উঠে গেছে।’
এই পাঁচ দিন শিশুটিকে সামলানো খুবই কঠিন হয়ে গিয়েছিল বলে জানান তার বাবা। বলেন, ‘কারও কোলে থাকতে চায়নি। কেবল কাঁদত। প্রথম তিন দিন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩-৪ ঘণ্টা ঘুমিয়েছে। সারাক্ষণ কাঁতরাচ্ছে আর প্রচণ্ড কান্নাকাটি করেছে। পানিও খেতে পারেনি।’
খাওয়াদাওয়ার কী অবস্থা ছিল- জানতে চাইলে তারিক আজিজ বলেন, ‘জোর করে কিছু খাইয়েছি। খাওয়ার পর আবার বমি করে ফেলে দিয়েছে। খুব কঠিন দিন গেছে।’
লক্ষণ কী
ঢাকা শিশু হাসপাতালের শিশুপুষ্টি, লিভার ও পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞ শফি আহমেদ মুয়াজ নিউজবাংলাকে বলেন, `হ্যান্ড ফুট মাউথের প্রাথমিক লক্ষ্মণ এক দিন বা দুই দিন জ্বর থাকে। ফুসকুড়ি উঠে যার ভেতরে পানি থাকে।’
জলবসন্ত থেকে পার্থক্য কীভাবে বোঝা যাবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘জলবসন্তের সঙ্গে এর পার্থক্য হলো জলবসন্ত ছোট ছোট ফুসকুড়ি হয়, সারা শরীরে হতে পারে। আর হ্যান্ড ফুট মাউথ এর ফুসকুড়িগুলো বড় ও শক্ত হয়। আর শরীরের সুনির্দিষ্ট জায়গায় হয়।
এর চিকিৎসা কী- জানতে চাইলে এই চিকিৎসক বলেন, ‘জ্বর হলে মেডিসিন দেয়া হয়। চুলকালে ফুসকুড়ির জন্য লোকাল এন্টিবায়োটিক বা মলম দিয়ে থাকি।’
তিনি জানান, ৫ থেকে ৭ দিনেই রোগটি সেড়ে যায়। এতে কোনো মৃত্যুঝুঁকি বা বড় ধরনের কোনো জটিলতা নেই।
খাবার বা পোশাকের ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ আছে কি না জানতে চাইলে বলেন, এ রকম কোনো বিধিনিষেধ নেই।
রোগটি নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ এটি ভীষণ ছোঁয়াচে। আর যেহেতু কম বয়সী শিশুরা আক্রান্ত হয় আর মুখের ভেতরে হলে খাবার খেতে সমস্যা হয়, তাই বাবা-মা ভীষণ উদ্বিগ্ন থাকেন।
শিশু বেশি ছোট বয়সী হলে তারা কথাও বলতে পারে না। ফলে তারা তাদের কষ্টের কথা বোঝাতেও পারে না।
প্রতিকার কী
চিকিৎসকরা জানান, আক্রান্ত শিশুর নাক, মুখ ও গলা থেকে নিঃসৃত লালা ও শ্লেষ্মা, আক্রান্তের শরীরে ফোস্কা এবং মল থেকেও এই রোগের ভাইরাসটি ছড়াতে পারে।
চিকিৎসক শফি আহমেদ মুয়াজ জানিয়েছেন, ঘরে একাধিক শিশু থাকলে যে শিশুর রোগটি হয়েছে, তাকে আইসোলেশন বা আলাদা করে ফেলতে হবে।
কোনো স্কুলে রোগটি দেখা দিলে সেই স্কুলে শিশুদের না পাঠানোর পরামর্শও এসেছে চিকিৎসকদের কাছ থেকে।
সেই সঙ্গে আক্রান্ত শিশুর সংস্পর্শ যেমন চুমু দেয়া বা জড়িয়ে ধরায় নিষেধ করছেন তারা। আক্রান্ত শিশুর জিনিসপত্র ধরলে বা ডায়াপার পাল্টে দিলে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নেয়ার পরামর্শও এসেছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, সরাসরি স্পর্শের পাশাপাশি ভাইরাস রয়েছে এমন বস্তু ধরলেও হাতে নাক, মুখ ও চোখে স্পর্শের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায়।
বাঁচতে হাঁচি-কাশি দেয়ার পরও সাবান না থাকলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করার পাশাপাশি শিশুদেরও হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার পরামর্শও দিয়েছেন তারা।
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় দেশে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৬৫ জন রোগী।
বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ছয়জন মারা যাওয়ার পাশাপাশি নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৬৫ জন।
নতুন করে আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫১৪ জন। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ৩৫১ জন ডেঙ্গু রোগী।
চলতি বছরের প্রথম দিন থেকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ১১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪৫ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৫৪ দশমিক ৬ শতাংশ নারী।
বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ২১ হাজার ৭৯ জন। তাদের মধ্যে ৬২ দশমিক ৩ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ নারী।
আরও পড়ুন:উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদানে পাঁচ বছরের কম বয়সী অন্তত ৩৪ লাখ শিশু মারাত্মক মহামারি রোগের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক তহবিল ইউনিসেফ।
এক বিবৃতিতে সুদানে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট মঙ্গলবার জানান, ভারি বৃষ্টিপাত ও বন্যার কারণে কলেরা, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু জ্বর, হাম ও রুবেলার মতো রোগ আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং আক্রান্ত রাজ্য ও এর বাইরে শিশুদের অবস্থা মারাত্মকভাবে খারাপ হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, চলমান অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে টিকাদানের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়া এবং স্বাস্থ্য, পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি অবকাঠামো ধ্বংসের কারণে এ সংকট দেখা দিয়েছে। সুদানের অনেক শিশুর পুষ্টির অবস্থার অবনতি তাদের আরও বেশি ঝুঁকিতে ফেলেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ইউনিসেফ গত ৯ সেপ্টেম্বর সুদানে ৪ লাখ ৪ হাজার ডোজ ওরাল কলেরা টিকা সরবরাহ করে। অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে সুদানে টিকা দেয়া ৮৫ শতাংশ থেকে প্রায় ৫০ শতাংশে নেমে এসেছে।
এতে বলা হয়, সংঘাতপূর্ণ এলাকাগুলোর ৭০ শতাংশের বেশি হাসপাতালেই কার্যকম বন্ধ রাখতে হয়েছে। কয়েক মাস ধরে বেতনও পাচ্ছেন না স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা।
গত বছরের এপ্রিলে সুদানের সশস্ত্র বাহিনী এসএএফ এবং র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে লড়াই শুরুর পর থেকে কমপক্ষে ১৬ হাজার ৬৫০ জন মারা গেছে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এ সময় কলেরা, ম্যালেরিয়া, হাম ও ডেঙ্গু জ্বরের মতো মহামারি রোগ ছড়িয়ে পড়েছে, যেসব রোগের কারণেও অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
গত ১৭ আগস্ট দেশটিতে কলেরার প্রাদুর্ভাব ঘোষণা করেন সুদানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাইথাম মোহাম্মদ ইব্রাহিম। কলেরা ছড়িয়ে পড়ার জন্য সংঘাতের কারণে সৃষ্ট পরিবেশগত অবস্থার অবনতি এবং অপরিষ্কার পানির ব্যবহারকে দায়ী করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়টি মঙ্গলবার জানায়, গত ১৫ জুলাই থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশটিতে ৩২৮ জনের মৃত্যুসহ ১০ হাজার ২২ জন কলেরায় আক্রান্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন:বাপ্পী হোসেনের বয়স ১৯ বছর। এই তরুণ রাজধানীর রায়েরবাজার এলাকায় গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন। সে সময় ছররা গুলিতে আহত হন তিনি। সারা শরীর তো বটেই, তার দুই চোখে বিঁধে যায় পাঁচটি গুলি, যার মধ্যে বাম চোখে তিনটি আর ডান চোখে দুটি।
বাপ্পীর সারা শরীরে এখনও রয়ে গেছে ১৯টি গুলি। চিকিৎসা চলছে রাজধানীর শ্যামলীর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের স্পেশালাইজড ডেডিকেটেড কেয়ার ইউনিটে। বেশ কয়েকবার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দুই চোখ থেকে গুলির স্প্লিন্টারগুলো বের করা হলেও দৃষ্টিশক্তি ফেরেনি বাপ্পীর।
মা মরিয়ম বেগম জানান, বাপ্পী আর কোনোদিন দেখতে পাবে না বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। অথচ বাপ্পীর মনে এখনও আশা- একদিন আগের মতোই দেখতে পাবে সে।
বরিশাল বিএম কলেজের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ২৬ বছর বয়সী রহমতউল্লাহ সরকার সাবির। মাস্টার্স শেষ করে পড়ছিলেন বরিশালের একটি ল’ কলেজে।
সাবিরের ভাই নজরুল ইসলাম ইউএনবিকে জানালেন, ৪ আগস্ট বিকেলে বিএম কলেজের সামনে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। সে সময় সাবিরের বাম চোখে তিনটি ছররা বুলেট আর ডান চোখে একটি রাবার বুলেট লাগে। বাম চোখে এখনও একটি বুলেট রয়ে গেছে। সেটা বের করতে হলে চোখই ফেলে দিতে হবে। ডান চোখে তেমন সমস্যা না থাকলেও এখন বাম চোখে কিছুই দেখছে না সাবির।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে এমনই সম্পূর্ণ বা আংশিক অন্ধত্বকে বরণ করতে হয়েছে অর্ধ সহস্রাধিক মানুষকে।
জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের তথ্যকেন্দ্র থেকে জানা যায়, ১৭ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৬১১ জন চোখে বুলেট নিয়ে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে দুই চোখ ক্ষতিগ্রস্ত ২৮ জনের, যারা পুরোপুরি অন্ধ হয়ে গেছেন।
এক চোখ আহত অবস্থায় এসেছেন ৫১০ জন। তাদের মধ্যে ১৭৭ জনের দু’বার সার্জারি করতে হয়েছে। বর্তমানে স্পেশালাইজড ডেডিকেটেড কেয়ার ইউনিটে ভর্তি আছেন ৪৬ জন, যারা সবাই ছররা বুলেটে আহত।
ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন সঞ্জয় কুমার বলেন, ‘রাবার বুলেট দিয়ে আহত কাউকে আমরা এখনও পাইনি। যারা এসেছেন তাদের চোখে বিদ্ধ সব গুলিই মেটালিক প্লেটের। এই পিলেটগুলোকে ছররা গুলি বলা হচ্ছে।
‘এগুলো যখন ছোড়া হয় তখন বুলেটের মধ্যে একটা হিট জেনারেশন হয়। এটি চোখে ঢুকলে রেটিনা তো ছিঁড়ে যায়-ই, অন্য স্ট্রাকচারগুলোও ডিসঅর্গানাইজড হয়ে যায়। এখান থেকে ব্যাক করার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যাদের রেটিনা ছিঁড়ে গেছে, নার্ভে কোনো ক্ষতি হয়েছে, অথবা ভেতরে কোনো হেমারেজ আছে তাদের দ্বিতীয়বারের মতো অপারেশন করতে হয়েছে। অনেক বেশি ড্যামেজ না হয়ে থাকলে আস্তে আস্তে ভালো হতেও পারে। আর বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ভালো হয় না।’
এক চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটির প্রভাব অন্য চোখেও পড়ে কি না জানতে চাইলে সঞ্জয় কুমার বলেন, ‘এটা হতে পারে। আমাদের এখানে একজন রোগী আছে যার এক চোখে পিলেটের আঘাতের কারণে অন্য চোখেও ইফেক্ট পড়েছে। এটা যদিও খুব রেয়ার।’
ছাত্র আন্দোলনে ছররা গুলি কেড়ে নিয়েছে পাঁচ শতাধিক মানুষের চোখের আলো। যদিও কর্তৃপক্ষের দাবি, আগ্নেয়াস্ত্রে যে বুলেট ব্যবহৃত হয়েছে সেগুলো প্রাণঘাতী নয়। সেগুলো এমন বুলেট যা অনেক ছোট ছোট ছররা গুলি ছুড়ে দেয়।
মূলত ‘বার্ডশট’ হিসেবে এই পরিচিত এই বুলেট শিকারের কাজে ব্যবহারের জন্য তৈরি। নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করে এই বুলেট আঘাত করে না; বরং অনেক বিস্তৃত পরিসরে ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়।
এর আকার অনুযায়ী প্রতিটি রাউন্ডে ৩০০ থেকে ৬০০টি পিলেট থাকে। কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু বা ব্যক্তির পাশাপাশি তাদের চারদিকে থাকা অন্যদেরও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার এবং গুরুতর আহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ কারণে সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনে বিক্ষোভে ছোড়া গুলিতে পথচারীরাও ব্যাপক পরিমাণে আহত হয়েছেন।
ছররা গুলির আঘাতে মৃত্যুর পরিবর্তে অন্ধত্ব, আহত বা পঙ্গু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। বিক্ষোভ বা জমায়েত নিয়ন্ত্রণে ‘মানবিক’ ও ‘গ্রহণযোগ্য’ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
তবে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মনে করে, বার্ডশট মানুষের ওপর আইন প্রয়োগের জন্য ব্যবহার একেবারেই অনুপযুক্ত এবং এটি কখনোই বিক্ষোভ প্রতিহত করতে ব্যবহার করা উচিত নয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতশাসিত কাশ্মীরে পিলেট-ফায়ারিং শটগান ব্যবহার নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
২০১৬ সালে সেখানে এক গণঅভ্যুত্থানের সময় ১১০০ জনেরও বেশি মানুষকে ছররা গুলিতে আংশিক বা পুরোপুরি অন্ধত্ব বরণ করতে হয়েছিল।
নিষেধাজ্ঞার এই আহ্বানে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘পিলেট-ফায়ারিং শটগানের আঘাতে আহত ব্যক্তিরা গুরুতর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন।
চোখে আঘাত পাওয়া স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, পড়াশোনা চালিয়ে যেতে তাদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
ভুক্তভোগীদের বেশ কয়েকজন যারা পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন তারা কাজ করতে পারবেন কি না এ নিয়ে ভয়ে আছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই বার বার অস্ত্রোপচার করেও দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাননি।’
বিশ্বে অনেক দেশেই ‘পশু-পাখি শিকারের গোলাবারুদ’ মানুষের ওপর প্রয়োগের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এজেন্ডায় পুলিশিং সংস্কারের বিষয়টি শীর্ষে থাকায়, জমায়েত বা বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে ‘বার্ডশট’ বা পিলেট গানের ব্যবহারের বিষয়টি কর্তৃপক্ষের মনোযোগ পাওয়ার দাবি রাখে।
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় সারা দেশে ৫৪৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে তিনজন মারা গেছেন। একই সময়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত ৫৪৮ জন রোগী।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াদের মধ্যে রয়েছেন- বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২৪ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৬ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১৬৯ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১৯০ জন, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২০ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২৪ জন, রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) নয়জন ও রংপুর বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১২ জন।
একই সময়ে সারা দেশে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন ডেঙ্গু রোগী। এ নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে শনিবার পর্যন্ত ১৬ হাজার ৫৫১ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে গেছেন।
চলতি বছরে ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে হাসপাতালে এসেছেন ১৮ হাজার ৫৮৯ জন। তাদের মধ্যে ৬২ শতাংশ পুরুষ ও ৩৮ শতাংশ নারী।
আর শনিবার সকাল পর্যন্ত সবশেষ তিনজনসহ চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মোট মারা গেছেন ১০৬ জন।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এক হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়। পাশাপাশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একটি শিপইয়ার্ডে জাহাজ কাটার সময় তেলের ট্যংকারে বিস্ফোরণে দগ্ধদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জাহাঙ্গীর আলম ও বরকতুল্লাহ মারা গেছেন। আজ শনিবার ভোরের দিকে ঢাকায় জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন তাদের মৃত্যু হয়। এর আগে আল-আমিন নামে আরও একজন মারা যান। এ নিয়ে ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়াল ছয়জন।
বার্ন ইনস্টিটিউটে মারা যাওয়া জাহাঙ্গীরের বাড়ি ফরিদপুরের মধুখালি থানার বেতকা গ্রামে। তার বাবার নাম আবেদ আলী হাওলাদার। আর বরকতুল্লাহ বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া থানার আলমগীর সওদাগর গ্রামে। তিনি মোহাম্মদ আইয়ুব আলীর ছেলে। তারা জাহাজ কাটার শ্রমিক ছিলেন।
বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক তরিকুল ইসলাম জানান, আজ শনিবার ভোরে বার্ন ইনস্টিটিউটে আইসিইউ-তে মারা যান দু’জন। জাহাঙ্গীর আলমের শরীরের ৭০ শতাংশ ও বরকতুল্লাহর ৬০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল।
ওই বিস্ফোরণে দগ্ধদের মধ্যে আবুল কাশেম ও আনোয়ার হোসেন বার্ন ইউস্টিটিউট চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
প্রসঙ্গত, প্রসঙ্গত, গত ৭ সেপ্টেম্বর সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ির তেঁতুলতলার এসএম শিপইয়ার্ডে জাহাজ কাটার সময় ট্যাঙ্কি বিস্ফোরণে ১২ জন দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে আটজনকে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসার পথেই আহমাদুল্লাহ নামে এক ব্যক্তি মারা যান। এর আগে বার্ন ইনস্টিটিউটে গত রোববার খাইরুল, সোমবার হাবিব ও পরে আল-আমিন নামে তিন শ্রমিকের মৃত্যু হয়।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে।
গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’ থেকে বুধবার রাত একটার পর রওনা হয়ে একটা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে পৌঁছান সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেনের বরাত দিয়ে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বাসসকে বিষয়টি জানান।
শায়রুল বলেন, ‘মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে।’
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে সিসিইউতে ভর্তি এক রোগীর মৃত্যুর জেরে কর্তব্যরত চিকিৎসককে মারধর করেছে ওই রোগীর স্বজনরা। এ সময় আইসিইউ, সিসিইউসহ হাসপাতালে ভাংচুর চালানো হয়।
এ ঘটনার প্রতিবাদে হাসপাতালে সব ধরনের চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দিয়েছেন চিকিৎসকরা। ঘোষণা দেয়া হয়েছে- ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা না হলে চিকিৎসক, নার্সসহ হাসপাতালের কর্মচারীরা কাজে ফিরবেন না।
মঙ্গলবার রাত দেড়টার সময় সিসিউতে ভর্তি থাকা কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া এলাকার আবদুল আজিজ নামের এক রোগী মারা যান।
স্বজনদের অভিযোগ, ব্যথানাশক ইনজেকশন পুশ করার পরই রোগীর মৃত্যু হয়। ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে দাবি করে তারা হাসপাতালের ভেতরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এক পর্যায়ে তারা কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সজীব কাজিকে মারধর করেন। চালানো হয় ভাংচুর।
হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. জাহিদুল মোস্তফা জানান, সংকটাপন্ন রোগীকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দেয়ার পরও কয়েক যুবক চিকিৎসককে ব্যাপক মারধর করে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। ভাংচুর চালানো হয় আইসিইউ, সিসিইউসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে। নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসার নানা সরঞ্জাম।
মারধরে আহত চিকিৎসক সজীব কাজীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
হাসপাতালের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, চার যুবক চিকিৎসক সজীবকে ধরে মারধর করছে। এক পর্যায়ে চিকিৎসক জ্ঞান হারিয়ে নিচে পড়ে যান। হামলাকারীদের মধ্যে দুজনকে ইতোমধ্যে শনাক্ত করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আসিফ ও মেহেদী নামের এই দুই যুবক মারা যাওয়া রোগীর স্বজন না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে চিকিৎসককে মারধর ও লাঞ্ছিত হওয়াকে কেন্দ্র করে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বুধবার সকাল থেকে হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। এই ঘটনার সুরাহা না হলে হাসপাতালের আবাসিক রোগীদের কোনো ধরনের সেবা দেয়া হবে না বলেও জানিয়ে দেন তারা। এমনকি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রবেশ করে জোরপূর্বক চিকিৎসা কার্যক্রমও বন্ধ করে দেন তারা। জরুরি বিভাগে সেবা সচল থাকলেও বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে সেটিও বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করেন চিকিৎসক-ওয়ার্ড কর্মীসহ হাসপাতালটির নানা শ্রেণীর কর্মচারীরা।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার নুরুল হুদা বলেন, ‘যদি নিরাপত্তা দিতে না পারে তাহলে কোনো স্টাফই কাজে ফিরবে না। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা নিশ্চিত করতে হবে। কথায় কথায় চিকিৎসকসহ স্টাফদের ওপর হামলা হচ্ছে। তাতে সবাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। তারপর সেবা।’
ওয়ার্ড কর্মীদের নেতা শোভন দাশ বলেন, ‘গেল তিন মাস কোনো ধরনের বেতন পাইনি। তারপরও আমরা সেবা নিশ্চিত করেছি। কিন্তু এখন নিজের ওপর হামলা হচ্ছে। নিরাপত্তা যদি না থাকে তাহলে কিভাবে কাজ করবো আমরা?’
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল কলেজের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (প্রশাসন) ডা. জি. আর. এম জিহাদুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি সমাধানে আলোচনায় বসেছেন চিকিৎসক-নার্স ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। বৈঠকটিতে সিদ্ধান্ত না এলে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে যেতে পারেন হাসপাতালে দায়িত্বরতরা।’
মন্তব্য