চতুর্থ ঢেউয়ে আগের তিন ঢেউয়ের তুলনায় মৃত্যুর হার কম থাকলেও গত দুই দিন ধরে হঠাৎ করেই চিন্তার ভাঁজ তৈরির উপক্রম হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ২৪ ঘণ্টায় চার জনের মৃত্যুর পর শুক্রবার আরও পাঁচ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
করোনার তৃতীয় ঢেউ গত মার্চে নিয়ন্ত্রণে আসার পর শনাক্ত, পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হারের পাশাপাশি কমে আসে মৃত্যুও।
মে থেকে করোনা সংক্রমণ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকার প্রবণতা দেখা গেলেও মৃত্যুর দিক থেকে স্বস্তিকর বার্তাই দিচ্ছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। টানা মৃত্যুহীন দিন হয়েছে তিন সপ্তাহেরও বেশি।
গত ১৬ জুন পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে তা ১০ শতাংশ, এমনকি ১৪ শতাংশ হয়ে যাওয়ার পরও মৃত্যুর সংখ্যা ছিল কমই। কোনো দিন একজন, কোনো দিন শূন্য মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
তবে গত সপ্তাহ থেকেই এক পেরিয়ে দুই, দুই পেরিয়ে তিন এবং তিন পেরিয়ে চার জনের মৃত্যুর তথ্য জানানো হয় ২৪ ঘণ্টায়।
এবার যে পাঁচ জনের মৃত্যুর তথ্য জানানো হয়েছে, সেটি সবশেষ ঘটেছিল গত ১১ মার্চ। সেদিনও পাঁচ জনের মৃত্যুর তথ্য জানানো হয়।
গত ২৪ ঘণ্টার মোট রোগী শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৮৯৭ জন। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৩১।
টানা চার দিন পর ২৪ ঘণ্টায় রোগীর সংখ্যা দুই হাজারের কম পাওয়া গেছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন পাঁচজনের মৃত্যু নিয়ে দেশে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২৯ হাজার ১৫৪ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া পাঁচজনের মধ্যে পুরুষ তিনজন এবং নারী দুজন।
বয়স বিবেচনায় ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে মারা গেছেন এক জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে তিনজন এবং ৮১ থেকে ৯০ বছর বয়সসীমার মধ্যে একজন আছেন। মৃতদের সবাই ঢাকার বাসিন্দা।
গত এক দিনে এই সময়ে নতুন আরও ১ হাজার ৮৯৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। টানা চার দিন পর দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দুই হাজারের নিচে এসেছে। এ নিয়ে শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১৯ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮২ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৩১ শতাংশ এবং করোনাকালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এ নিয়ে টানা ১৬ দিন নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ৫ শতাংশের ওপরে।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ২৪৮ জন এবং এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৯ লাখ ৭ হাজার ৭৫৭ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং মারা গেছেন ১ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
আরও পড়ুন:আবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যাকে হোয়াইট হাউসের চিকিৎসকরা দেখছেন প্যাক্সলোভিড নামের ওষুধ সেবনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে।
স্থানীয় সময় শনিবার আবার ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায় ৭৯ বছর বয়সী প্রেসিডেন্টের দেহে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত ২১ জুলাই করোনা ধরা পড়ে বাইডেনের। গত বুধবার তিনি আইসোলেশন থেকে বেরিয়ে আসেন। এ মুহূর্তে ভালো বোধ করছেন বলে জানিয়েছেন বর্ষীয়ান এ রাষ্ট্রপ্রধান।
প্রেসিডেন্টের দপ্তর হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, নতুন করে করোনা পজিটিভ আসায় কঠোর আইসোলেশনে যাবেন বাইডেন। এর অংশ হিসেবে উইলমিংটনে নিজ বাড়িতে সফর এবং দাপ্তরিক কাজের অংশ হিসেবে মিশিগান সফরের পরিকল্পনা বাতিল করেছেন তিনি।
আইসোলেশন থেকে বেরিয়ে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার জনসমক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন বাইডেন, তবে গত শুক্রবার তিনি কোনো অনুষ্ঠানে যাননি।
হোয়াইট হাউসের চিকিৎসক কেভিন ও’কনর জানান, প্যাক্সলোভিড সেবনের ফলে বাইডেনের দেহে ভাইরাস ফিরে এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে। ওষুধটি সেবনকারী অল্প কিছু রোগীর ক্ষেত্রে এমনটি হয়ে থাকে।
ফাইজারের করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ওষুধ প্যাক্সলোভিড। বেশি বয়সীসহ করোনায় উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা রোগীদের চিকিৎসায় ওষুধটি ব্যবহার করা হয়।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, টানা পাঁচ দিন প্যাক্সলোভিড সেবনের কয়েক দিনের মধ্যে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষুদ্র অথচ উল্লেখযোগ্য একটি অংশ আবার করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন।
আরও পড়ুন:করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে আর তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে রোগী শনাক্ত হয়েছে ৩৪৯ জন।
শনিবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে গত ২৪ ঘণ্টার হিসেবে এ তথ্য দেয়া হয়েছে।
সর্বশেষ শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ৬ হাজার ২৫৬ জনের নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে করোনা শনাক্তের হার ৬ দশমিক ৬৪।
এই ভাইরাসে আগের দিন মৃত্যু হয়েছিল একজনের। নতুন রোগী শনাক্ত ছিল ৩৫৫ জন। শনাক্তের হার ছিল ৫ দশমিক ৮৪।
সর্বশেষ মারা যাওয়া তিনজনের দুজন চট্টগ্রামের এবং একজন সিলেট বিভাগের বাসিন্দা।
দেশে এ পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৪ হাজার ৮৯২ জনের। মারা গেছেন ২৯ হাজার ২৮৮ জন। সুস্থ হয়েছেন ১৯ লাখ ৪১ হাজার ৫৪২ জন।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনা সংক্রমণের পর ২০২১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তা নিয়ন্ত্রণে আসে। মার্চের শেষে আবার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানে। সেটি নিয়ন্ত্রণে আসে গত ৪ অক্টোবর।
গত ২১ জানুয়ারি দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ দেখা দেয়। প্রায় তিন মাস পর ১১ মার্চ নিয়ন্ত্রণে আসে। তিন মাস করোনা স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতিতে ছিল। এরপর ধারাবাহিকভাবে বাড়তে শুরু করে সংক্রমণ।
আরও পড়ুন:বিরল ভাইরাস মাঙ্কিপক্সে আক্রান্তদের ৯৮ শতাংশই সমকামী কিংবা উভকামী পুরুষ। এমনটি জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সেই সঙ্গে বিরল এই ভাইরাসটিতে আক্রান্তের ৯৫ শতাংশই এখন ইউরোপ ও আমেরিকায়।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ডব্লিউএইচও কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় সময় বুধবার ডব্লিউএইচও মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেয়েসুস এসব তথ্য জানিয়েছেন।
ডব্লিউএইচও প্রধান বলেন, ‘আক্রান্তদের মধ্যে ৯৮ শতাংশই সমকামী পুরুষ অথবা তারা আক্রান্ত কোন পুরুষের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হওয়া মানুষের মধ্যে ৯৫ শতাংশই ইউরোপ ও আমেরিকা এই দুই অঞ্চলের বাসিন্দা।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত ৭৮টি দেশে মাঙ্কিপক্স আক্রান্তের সংখ্যা ১৮ হাজারের বেশি। এদের মধ্যে ইউরোপে ৭০ শতাংশের বেশি আর আমেরিকায় ২৫ শতাংশ।
গত শনিবার মাঙ্কিপক্স নিয়ে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা তৈরি করার জন্য সতর্কতা জারির ঘোষণা দেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘শনাক্ত হওয়া বেশির মানুষের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, হয় তারা সমকামী নতুবা উভকামী পুরুষ।’
ইউরোপের দেশ স্পেন, যুক্তরাজ্য ও পর্তুগালের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, সেখানে শনাক্ত হওয়া প্রায় সব রোগীই সমকামী পুরুষ। উত্তর আমেরিকার দেশ কানাডায় দেখা গেছে, শনাক্ত হওয়া প্রায় সবাই সমকামী পুরুষদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে বিরল মাঙ্কিপক্স ছড়িয়ে পড়ায় ওয়াশিংটন সরকার এরই মধ্যে রোগের সম্ভাব্য ভ্যাকসিন কিনে রেখেছে।
এর আগে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত রোগী পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার কিছু অংশে দেখা যেত। বিশেষ করে সংক্রমিত বন্যপ্রাণী যেমন ইঁদুর, কাঠবিড়ালির মাধ্যমে ছড়াত। চলতি মাসের শুরুর দিকে যুক্তরাজ্যে ‘নাইজেরিয়া ভ্রমণে যাওয়া’ একজনের দেহে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়। শুক্রবার পর্যন্ত ব্রিটেনে ২০ জনের দেহে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়েছে।
এরই মধ্যে স্পেন, পর্তুগাল, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, বেলজিয়াম, সুইডেন, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রেও এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।
১৯৮০ সালে নির্মুল হওয়া গুটিবসন্তের কাছাকাছি এই মাঙ্কিপক্স ভাইরাস। তবে এর লক্ষণগুলো অনেকটা চিকেনপক্সের মতো। প্রাথমিকভাবে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর, মাথাব্যথা, পেশি ব্যথা, পিঠে ব্যথা, ঠাণ্ডা লাগা ও ক্লান্তি। এর ফুসকুড়িগুলো মুখে ওঠা শুরু করে, পরে পুরো দেহে ছড়িয়ে পড়ে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মানুষ থেকে মানুষে ছড়ানোর ক্ষেত্রে সাধারণত শ্বাস-প্রশ্বাসের ড্রপলেট এবং সংক্রমিত রোগীর ত্বকের ক্ষতের সংস্পর্শে এলে।
আরও পড়ুন:চলে গেলেন দৈনিক দেশ রূপান্তরের সম্পাদক অমিত হাবিব। রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় তিনি মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর।
দেশ রূপান্তরের নির্বাহী সম্পাদক মোস্তফা মামুন নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অমিত হাবিবের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক শোক বার্তায় তিনি মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
২১ জুলাই দেশ রূপান্তর কার্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন অমিত হাবিব। তাৎক্ষণিক তাকে রাজধানীর পান্থপথে বিআরবি হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা জানান, তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে। পরে তাকে ওই হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়।
বিআরবিতে শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় পরে মঙ্গলবার অমিত হাবিবকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
সেখানে চিকিৎসকরা তাকে পর্যবেক্ষণে রেখে জানান, অমিত হাবিব ‘ডিপ কোমায়’ আছেন। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এ লড়াইয়ে তার জয়লাভের সম্ভাবনা ক্ষীণ। এখানে পর্যবেক্ষণে রাখার এক পর্যায়ে বৃহস্পতিবার রাতে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
নিউরো সায়েন্স হাসপাতালের যুগ্ম-পরিচালক ডা. বদরুল আলম মণ্ডল বলেন, ‘উনি ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন। মস্তিষ্কে ব্যাপক মাত্রায় রক্তক্ষরণ হয়েছে। তাকে যখন আমাদের হাসপাতালে আনা হয় তখন খুবই খারাপ অবস্থা ছিল। অধ্যাপক ডা. মালিহা হাকিমের অধীনে তাকে এখানে ভর্তি করা হয়। আমাদের চিকিৎসকরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু শেষরক্ষা হলো না।’
অমিত হাবিব এর আগে ২০২০ সালেও একবার স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে বেশকিছু দিন হাসপাতালে ছিলেন।
আজ শুক্রবার সকাল ১০টা দেশ রূপান্তর কার্যালয়ে অমিত হাবিবের প্রথম নামাজে জানাযা হবে। সেখান থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে জাতীয় প্রেসক্লাবে। সেখানে দ্বিতীয় দফা জানাযা শেষে আজই তাকে ঝিনাইদহে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে।
ছোট ভাই ফয়জুল হাবিব জানান, পারিবারিক সিদ্ধান্তে গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুরে অমিত হাবিবকে সমাহিত করা হবে।
অমিত হাবিবের জন্ম ১৯৬৩ সালের ২৩ অক্টোবর। ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার কাজির বেড় গ্রামে কেটেছে তার শৈশব। বাবা খন্দকার ওয়াহেদুল হক ছিলেন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। মা শামসুন্নাহার বকুল গৃহিণী। দুজনেই প্রয়াত। ছোট দুই ভাই ফয়জুল হাবিব রাঙ্গা ও মেহেদী হাসান থাকেন গ্রামের বাড়িতে। ঢাকায় পরিবারের তেমন কেউ নেই। তিনি দুবার বিয়ে করলেও সংসারে স্থায়ী হননি। দাম্পত্য বিচ্ছেদের পর অনেকটা একাকী জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন গুনী এ সাংবাদিক। সংবাদপত্রের বার্তাকক্ষ ছিল তার কাছে সবচেয়ে আপন। সেখান থেকে অসুস্থ হয়েই তিনি চিরবিদায় নিলেন।
যশোর এমএম কলেজ থেকে ১৯৮০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর ঢাকায় জগন্নাথ কলেজে পরিসংখ্যান বিভাগে ভর্তি হন। তার লেখালেখির শুরুটা তখনই।
১৯৮৬ সালে খবর গ্রুপ অফ পাবলিকেশন্সে একই সঙ্গে রিপোর্টার ও সাব-এডিটর হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন অমিত হাবিব। পরে সাপ্তাহিক পূর্বাভাস পত্রিকায় সাব-এডিটর পদে যোগ দেন তিনি। ১৯৯১ সালে দৈনিক আজকের কাগজ পত্রিকায় সিনিয়র সাব-এডিটর হিসেবে যোগ দেন তিনি। এর পরের বছর একই পদে যোগ দেন দৈনিক ভোরের কাগজে। অল্পদিনের মধ্যেই পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম বার্তা সম্পাদক ও পরে বার্তা সম্পাদক হন তিনি। ভোরের কাগজর কর্মজীবনে তিনি সবার প্রিয় ‘অমিত দা’ হয়ে ওঠেন। তার নেতৃত্ব ও সংবাদপত্রের অলংকরণ সমাদৃত হয় সব মহলে।
২০০৩ সালে দৈনিক যায়যায়দিন-এ প্রধান বার্তা সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন খ্যাতিমান এই সাংবাদিক। তবে পত্রিকাটি বাজারে আসে ২০০৬ সালে। পাঠকের কাছে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠা পত্রিকাটি তিনি স্বল্প সময়ে ছাড়েন প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ বিরোধে।
২০০৭ সালে চীনের আন্তর্জাতিক বেতারে বিদেশি বিশেষজ্ঞ হিসেবে যোগ দেন তিনি। বাংলা সংবাদপত্রের সঙ্গে তার এই বিচ্ছেদ অবশ্য দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। দেশে ফিরে পরের বছরই দৈনিক সমকালে প্রধান বার্তা সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। এরপর ২০০৯ সালে কালের কণ্ঠে নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে যোগ দিয়ে তিনি পত্রিকাটিকে বাজারে আনেন। মাঝে ‘সকাল সাতটা’ নামে একটি পত্রিকা বের করার চেষ্টা করেও তিনি সফল হননি। পরে ২০১৩ সালে কালের কণ্ঠে ফিরে উপদেষ্টা সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। সেখান থেকে বেরিয়ে সম্পাদক হিসেবে দৈনিক দেশ রূপান্তরের দায়িত্ব নেন।
শারীরিক সুস্থতা নিয়ে নিয়ে আগের চেয়ে বেশি সচেতন হচ্ছেন সৌদি আরবের নাগরিকরা। এ জন্য খেলাধুলাসহ শারীরিক কসরতের পেছনে সময় ব্যয় করার প্রবণতা বাড়ছে।
সৌদির জেনারেল অথরিটি ফর স্ট্যাটিস্টিকসের খেলাধুলা বিষয়ক পরিসংখ্যানের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে দেশটির ২৯ দশমিক ৭ শতাংশ নাগরিক সপ্তাহে ১৫০ মিনিটের মতো সময় শারীরিক কসরতে ব্যয় করেছেন। আর সপ্তাহে অন্তত ৩০ মিনিট সময় ব্যয় করেছিন সৌদির ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ নাগরিক।
এর দুই বছর আগে অর্থাৎ ২০১৯ সালের হিসাবে দেখা গেছে, সপ্তাহে ৩০ মিনিটের কসরত করতেন দেশটির ৪৫ শতাংশ নাগরিক।
আরব নিউজ বলছে, সব মিলিয়ে নাগরিকদের শারীরিক কসরতের সময় বাড়লেও বেশ পার্থক্য রয়েছে নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে। দেশটির ৫৪ দশমিক ৮ শতাংশ পুরুষ শারীরিক কসরতে অংশ নেন, আর নারীর হার ৩৮ দশমিক ৩ শতাংশ।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, মানুষ যে স্বাস্থ্য সচেতন হচ্ছে এই প্রবণতা তারই ইঙ্গিত। তারা বলছেন, এর মাধ্যমে সমাজ সচেতনতায় উন্নতি দেখা যাচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, প্রাপ্তবয়স্কদের সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট মাঝারি ধরনের শারীরিক কসরত করা উচিত। আর ৭৫ মিনিট ব্যয় করা উচিত ঘাম ঝরানো শারীরিক কসরতে।
তবে এর বাইরে আরও শারীরিক সুস্থতার জন্য প্রাপ্তবয়স্করা চাইলে সপ্তাহে ৩০০ মিনিটের মতো মাঝারি শারীরিক কসরতে সময় ব্যয় করতে পারেন।
আরও পড়ুন:করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে নতুন আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হওয়া মাঙ্কিপক্স নিয়ে বৈশ্বির জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
বিশ্বব্যাপী ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া আর সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জরুরি অবস্থা জারি করতে পারে।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ভাইরাসটি নিয়ে অনুষ্ঠিত জরুরি হিসেবে ডাকা দ্বিতীয় বৈঠক থেকেই ডব্লিউএইচও এই অবস্থা ঘোষণা করল।
ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক ডা. টেডরোস আধানম গেব্রিয়েসুস বলেন, বিশ্বের ৭৫ দেশে ১৬ হাজারের বেশি জনের শরীরে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আক্রান্তদের মধ্যে এরই মধ্যে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে।’
মাঙ্কিপক্সের মতো এখন আরও দুটি জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা জারি রয়েছে। যার একটি করোনাভাইরাস এবং আরেকটি পোলিও নির্মূল।
অবশ্য ভাইরাসটিকে বৈশ্বিক জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হবে কি না সে বিষয়ে এখনও কমিটি ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারেনি।
এরপরও তিনি বলছেন, মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ বেশ দ্রুত হচ্ছে। তাই একে বৈশ্বিক জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা হিসেবে দেখা উচিত।
টেডরোস আধানম অবশ্য বলেছেন, সংক্রমণের গতি এখন ঠিক কতটা ও সেটি কোন পর্যায়ে রয়েছে সেটি এখনও নির্ণয় করতে পারছে না বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
১৯৮০ সালে নির্মুল হওয়া গুটিবসন্তের কাছাকাছি এই মাঙ্কিপক্স ভাইরাস। তবে এর লক্ষণগুলো অনেকটা চিকেনপক্সের মতো। প্রাথমিকভাবে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর, মাথাব্যথা, পেশি ব্যথা, পিঠে ব্যথা, ঠাণ্ডা লাগা ও ক্লান্তি। এর ফুসকুড়িগুলো মুখে ওঠা শুরু করে, পরে পুরো দেহে ছড়িয়ে পড়ে।
এর লক্ষণগুলো সাধারণত সংক্রমণের ১ থেকে ২ সপ্তাহের মধ্যে দেখা দিতে শুরু করে এবং পরের দুই থেকে ৪ সপ্তাহ তা স্থায়ী হয়। যদিও মাঙ্কিপক্সের কোনো প্রতিষেধক নেই, তবে বেশির ভাগ রোগীই সুস্থ হয়ে ওঠেন।
চলতি বছরের মে মাসে বিশ্বে নতুন করে মাঙ্কিপক্স ছড়িয়ে পড়ার তথ্য জানায় ডব্লিউএইচও। এরপর সংস্থাটি বিশ্বের দেশগুলোকে সতর্ক করে দেয় যেন ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে না পারে।
তবে অল্প সময়ের মধ্যেই এটি ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে শনাক্ত হয়। বাংলাদেশেও ভাইরাসটি নিয়ে আতঙ্ক ছড়ায়। তুরস্কের এক নাগরিক দেশে আসার পর তার শরীরে ভাইরাসটি রয়েছে বলে আতঙ্ক ছড়ায়। অবশ্য বিমানবন্দর থেকে সরাসরি তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে জানানো হয়, তার শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়নি।
আরও পড়ুন:নাগরিকদের ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে তথ্য দিয়ে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। এডিস মশার প্রজননস্থল যদি নিজের বাড়ি অথবা প্রতিষ্ঠানে হয়, স্বপ্রণোদিত হয়ে তথ্য দিলে জরিমানা অথবা শাস্তি দেয়া হবে না বলে তিনি ঘোষণা দেন।
শনিবার সকালে রাজধানীর লালমাটিয়া এলাকায় ডেঙ্গুবিরোধী প্রচারাভিযানে অংশ নিয়ে মেয়র এসব কথা বলেন।
‘দশটায় দশ মিনিট প্রতি শনিবার, নিজ নিজ বাসা-বাড়ি করি পরিষ্কার’ স্লোগান নিয়ে ডেঙ্গুবিরোধী জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি নিয়েছে সিটি করপোরেশন।
নগরবাসীকে প্রতি শনিবার সকালে অন্তত ১০ মিনিট সময় দিয়ে নিজেদের আঙিনা ও বাসাবাড়ি পরিষ্কার করার আহ্বান জানান মেয়র।
তিনি বলেন, ‘আমাদের লার্ভার উৎস এবং ডেঙ্গু রোগীর তথ্য দিন। তথ্য দিলে আপনাদের কোনো শাস্তি দেব না। আমরা আপনার বাড়িতে ও আশপাশের বাড়িতে লার্ভিসাইডিং এবং ফগিং করার ব্যবস্থা নেব। তবে যদি তথ্য না দেন, আমরা গিয়ে লার্ভা খুঁজে পাই, তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘নিজেদের বাসাবাড়ি ও আশপাশের পরিবেশকে নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার মাধ্যমে এডিস মশা নির্মূল করতে হবে। নিজেদের বাসাবাড়িতে যেখানে ফুলের টব, অব্যবহৃত টায়ার, ডাবের খোসা, বিভিন্ন ধরনের খোলা প্যাকেট বা পাত্র কিংবা অন্য কিছু থাকে, সেখানে তিন দিনের বেশি যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের নানা কর্মসূচির ফলে এখন জনগণ অনেক সচেতন। এর ফলে গত বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গু অনেক নিয়ন্ত্রণে আছে। ড্রেনে বা নর্দমায় নয়, বাসাবাড়িতে জমে থাকা পানিতে এডিসের জন্ম হয়। তাই পানি জমতে দেয়া যাবে না। সবার সহযোগিতা পেলে ডেঙ্গুকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারব।’
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘বাসাবাড়ির ব্যালকনিতে, বারান্দায় কিংবা ছাদে যাওয়া কষ্টসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ। আমরা অত্যাধুনিক ড্রোনের মাধ্যমে বাসাবাড়ির ছাদে মশার উৎস আছে কি না সেটি খুঁজে বের করছি। ড্রোন অভিযানে এ মাসে প্রায় ২২ হাজার বাড়ি সার্ভে করা হয়েছে। মশক নিয়ন্ত্রণে ড্রোন সংযোজনের ফলে এ বছর তুলনামূলক কম সময়ে অনেক বাড়ি পরিদর্শন সম্ভব হয়েছে।’
নগরবাসীকে সচেতন করতে ডিএনসিসি এডিস মশা, ডেঙ্গুবিরোধী বিভিন্ন ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে ট্রাক সাজিয়ে এবং সচেতনতার বার্তা মাইকিং করে প্রচার চালাচ্ছে।
প্রচারকাজের সময় ডিএনসিসি মেয়র কয়েকটি বাড়ির ছাদবাগান, পার্কিং স্থান, ড্রেন এবং নির্মাণাধীন ভবন স্বশরীরে পরিদর্শন করেন।
শনিবার জনসচেতনতামূলক এ কর্মসূচিতে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমান, অঞ্চল-৫-এর নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বীর আহমেদ, ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ হাসান নূর ইসলাম, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর শাহিন আক্তার সাথীসহ ডিএনসিসির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ডেঙ্গুর ফ্রি পরীক্ষা
নগরবাসীর জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪৩টি নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডেঙ্গুর ফ্রি পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে।
বিনা মূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার স্থান জানতে ও যেকোনো তথ্য দিতে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। সেখানকান মোবাইল নম্বরগুলো হলো- ০১৭৬৯১০০৬৮০, ০১৭১৬৫০৬২৫৮, ০১৭১৫২৩৮৭৫৪, ০১৭১৫৪৫৬৬৯৮, ০১৭৫৬২০৯৪৮২, ০১৭১৬৩৯৮৮৮৬ ও ০১৭৩৫৮৪৩৬৯৩।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য