গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে শনাক্ত হাজার ছাড়িয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় রোগী শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। এ নিয়ে টানা সাত দিন নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ শতাংশের বেশি থাকল।
গত এক দিনে করোনা শনাক্তের হার চার মাসের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্তের হারের সংবাদ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেদিন এই হার ছিল ১৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
এ নিয়ে দেশে এক দিন ছাড়া টানা ২২ দিন নতুন করোনা রোগীর সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে বাড়ল।
বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ৮ হাজার ৫৩৬টি নমুনা পরীক্ষা করে ১ হাজার ১৩৫ জন করোনা নতুন রোগী পাওয়া গেছে। এর আগে ২৫ ফেব্রুয়ারি এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্তের সংবাদ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন শনাক্তের মধ্যে ১ হাজার ৬৯ জন ঢাকা জেলার।
দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৫৮ হাজার ২০৯ জনে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্তদের মধ্যে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে সরকারি হিসাবে করোনায় মোট মৃত্যু দাঁড়াল ২৯ হাজার ১৩৪ জনে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ১২২ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৯ লাখ ৬ হাজার ১০৫ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী করোনার কোনো ঢেউ চলার সময় শনাক্তের হার পরপর দুই সপ্তাহ যদি ৫ শতাংশের নিচে থাকে, তাহলে সেই ঢেউ নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে ধরা যাবে। বিপরীত দিক দিয়ে করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকার অবস্থার পর দুই সপ্তাহ শনাক্তের হার ৫ শতাংশের বেশি হলে করোনার পরবর্তী ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে বলে ধরা হবে।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর ধীরে ধীরে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। প্রথম ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। একই বছরের মার্চে ডেল্টা ধরনের করোনায় আসে দ্বিতীয় ঢেউ। এ পর্যায়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয় গত জুলাইয়ে। একপর্যায়ে শনাক্তের হার ৩৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়।
দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার পর দেশে তৃতীয় ঢেউ নিয়ে আসে করোনার আরেক ধরন ওমিক্রন। তৃতীয় ঢেউয়ের সময় ২৮ জানুয়ারি করোনা শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ দাঁড়ায়, যা দেশে করোনা সংক্রমণ ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। তবে তৃতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত বেশি হলেও মৃত্যু ছিল তুলনামূলক কম। এই ঢেউ দ্রুত নিয়ন্ত্রণেও আসে। গত ১১ মার্চ তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য বিভাগ।
আরও পড়ুন:প্রতিদিনই বাড়ছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার। অথচ করোনা প্রতিরোধে মাস্ক পরা নিয়ে মানুষের মধ্যে নেই আগ্রহ। অনেকের ধারণা, করোনার টিকা নেয়ার ফলে মাস্ক পরার দরকার নেই। বেশিরভাগ মানুষের এ নিয়ে রয়েছে উদাসীনতাও। একই সঙ্গে মাস্ক পরা নিয়ে মানুষের আগ্রহ কম থাকায় কমেছে মাস্কের বিক্রি।
শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরঝিল, মগবাজার ঘুরে মানুষের মাস্ক না পরার এমন প্রবণতার চিত্র দেখা গেছে।
কারওয়ান বাজারে দেখা হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ইসতিয়াক মিয়ার সঙ্গে। মুখে মাস্ক নেই কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘মাস্ক পরতে ভুলে গেছি। আর অনেক দিনের অভ্যাস তো, তাই মাঝে মাঝে ভুলে যাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘টিকা তো নিয়েছি, তাই মাস্ক পরা নিয়ে আমার তেমন মাথাব্যাথা নেই।’
একই অবস্থা দেখা গেল হাতিরঝিলে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা আব্দুল মালেকের বেলায়ও। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সবসময়ই মাস্ক পরি। আজ বেড়াতে আসছি তো তাই মাস্ক পরা হয়নি। আর আমি তো তিন ডোজ টিকাও নিয়েছি। তাই মাস্ক পরা নিয়ে তেমন একটা ভাবছি না।’
মাস্ক পরা নিয়ে অবশ্য ভিন্নমত রয়েছে মগবাজারের বাসিন্দা আরমান শেখের। তার দাবি, মাস্ক পরলেও করোনা ঠেকানো যাবে না।
তিনি বলেন, ‘মরণ যখন আসবে তা কেউ ঠেকাতে পারবে না। মাস্ক পরলেই কী করোনা ঠেকানো যাবে? মাস্ক পরে কী হবে? কিছুই হবে না। কপালে যা আছে তাই হবে।’
এ দিকে মাস্ক নিয়ে মানুষের উদাসীনতার বিষয়টির প্রভাব পড়েছে মাস্ক বিক্রির দোকানগুলোতেও। সেখানে আগের মতো মাস্ক বিক্রি হচ্ছে না।
জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের পাইকারি মাস্ক বিক্রেতা সেন্টু বেগ বলেন, ‘যখন করোনা খুব বেড়েছিল তখন দিনে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার মাস্ক বিক্রি করতাম, আর এখন তা ৩-৪ হাজারে নেমে এসেছে।’
একই অভিজ্ঞতার কথা জানালেন মগবাজারের মা ফার্মেসির মালিক সবুজ। তিনি বলেন, ‘আগের মতো মাস্ক বিক্রি হচ্ছে না। মানুষ ধারণা করছে, টিকা যেহেতু নেয়া হয়েছে তাই মাস্ক পরার দরকার নেই। আগে ৫০-৬০ বক্স মাস্ক বিক্রি করলেও এখন তা ১০-১৫ বক্সে নেমে এসেছে।’
বিশেজ্ঞরা যা বলছেন
রোগতত্ত্ব, রোগ নির্ণয় ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনা বাড়ছে মানুষের মধ্যে উদাসীনতা চলে আসার জন্য। সারা দেশেই মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। এ ছাড়া জনসমাবেশ ও বিয়ের অনুষ্ঠান বেড়েছে। সেখানে তারা ফেস মাস্ক পরছে না, মানা হচ্ছে না সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব।’
প্রকৃতপক্ষে সংক্রমণ আরও অনেক বেশি বলেও মনে করেন তিনি। বলেন, ‘প্রতিদিন যে সংক্রমণের হার দেখছেন, প্রকৃতপক্ষে সংক্রমণ আরও বেশি। একজনের শনাক্ত হলে, আরও পাঁচজন শনাক্তহীন হয়ে ঘুরে বেড়ায়।’
ড. আলমগীর বলেন, ‘আগের মতো সবাই মিলে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে আশা যায় খুব শিগগিরই সংক্রমণ কমে আসবে।’
করোনা নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কমিটির সদস্য ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘করোনা প্রতিরোধে অবশ্যই আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। এর জন্য সরকার থেকে জোরালো নির্দেশনা থাকতে হবে। একইসঙ্গে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধির সংশ্লিষ্টতাও নিশ্চিত করতে হবে। যাতে জনগণ স্বাস্থ্যবিধি মানতে আগ্রহী হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালগুলোতে সবধরনের প্রস্তুতি থাকতে হবে, পর্যাপ্ত অক্সিজেন মজুত রাখতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোভিডের পাশাপাশি রোগীর অন্যান্য ক্লিনিক্যাল অবস্থা মোকাবিলার সক্ষমতা থাকতে হবে। আইসিইউয়ের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখতে হবে। আমরা গত বছরেও দেখেছি, এক হাসপাতালে আইসিইউ না পেয়ে রোগীকে অন্য হাসপাতালে যেতে হয়েছে। এবার যেন সে পরিস্থিতিতে না পড়তে হয়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘দীর্ঘদিন করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকায় মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে উদাসীনতা দেখা দিয়েছে। অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে যা করণীয় সেটি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া চিঠি দিয়ে হাসপাতালগুলো প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে সারা দেশের সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
করোনা সংক্রমণ এখনও নিয়ন্ত্রণে বাইরে যায়নি জানিয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘সংক্রমণের হার এখনও ১৫ শতাংশের নিচে। এটি ২০ শতাংশের বেশি হলে অবশ্যই বিধিনিষেধ দেয়া হবে। পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
প্রতিদিনই বাড়ছে সংক্রমণ
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ হাজার ৮৩৩টি নমুনা পরীক্ষা করে নতুন এক হাজার ৬৮৫ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। যা চার মাসের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে গত ২১ ফেব্রুয়ারি এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্তের সংবাদ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেদিন এক হাজার ৯৫১ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছিল। এ নিয়ে এক দিন ছাড়া টানা ২৪ দিন নতুন করোনা রোগীর সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে বাড়ল।
শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষার বিবেচনায় রোগী শনাক্তের ১২ দশমিক ১৮ শতাংশ। গতকাল এই হার ছিল ১৪ দশমিক ৩২ শতাংশ। আগের দিন বুধবাব ছিল ১৩ দশমিক ৩০ শতাংশ।
করোনার তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার পর গত ১৬ জুন প্রথমবারের মতো পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ শতাংশ ছাড়ায়। এনিয়ে টানা ৯ দিন শনাক্তের হার ৫ শতাংশের উপরে থাকল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় শনাক্তের হার পরপর দুই সপ্তাহ ৫ শতাংশের বেশি হলে পরবর্তী ঢেউ ছড়িয়েছে বলে ধরা হবে।
নতুন শনাক্তের মধ্যে ১ হাজার ৫১১ জন ঢাকা জেলার। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত দেশে মোট রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৯ লাখ ৬২ হাজার ২১৩ জন।
আরও পড়ুন:দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ হাজার ৮৩৩টি নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে ১ হাজার ৬৮৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, যা চার মাসের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ।
এর আগে গত ২১ ফেব্রুয়ারি এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্তের সংবাদ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেদিন ১ হাজার ৯৫১ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছিল।
এ নিয়ে এক দিন ছাড়া টানা ২৪ দিন নতুন করোনা রোগীর সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে বাড়ল।
শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষার বিবেচনায় রোগী শনাক্তের ১২ দশমিক ১৮ শতাংশ। গতকাল এই হার ছিল ১৪ দশমিক ৩২ শতাংশ। আগের দিন বুধবার ছিল ১৩ দশমিক ৩০ শতাংশ।
করোনার তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার পর গত ১৬ জুন প্রথমবারের মতো পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ শতাংশ ছাড়ায়। এ নিয়ে টানা ৯ দিন শনাক্তের হার ৫ শতাংশের ওপরে থাকল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় শনাক্তের হার পরপর দুই সপ্তাহ ৫ শতাংশের বেশি হলে পরবর্তী ঢেউ ছড়িয়েছে বলে ধরা হবে।
নতুন শনাক্তের মধ্যে ১ হাজার ৫১১ জন ঢাকা জেলার। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত দেশে মোট রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৯ লাখ ৬২ হাজার ২১৩ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্তদের মধ্যে কারও মৃত্যুর সংবাদ দেয়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ নিয়ে পাঁচ দিন মৃত্যুহীন দিনের তথ্য দিল অধিদপ্তর। এক দিনে নতুন রোগী না থাকায় সরকারি হিসাবে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু দাঁড়াল ২৯ হাজার ১৩৫ জনে।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন আরও ১৮৫ জন রোগী। আক্রান্ত হয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন ১৯ লাখ ৬ হাজার ৪১৭ জন।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর ধীরে ধীরে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। প্রথম ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। একই বছরের মার্চে ডেল্টা ধরনের করোনায় আসে দ্বিতীয় ঢেউ। এ পর্যায়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয় গত জুলাইয়ে। একপর্যায়ে শনাক্তের হার ৩৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়।
দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার পর দেশে তৃতীয় ঢেউ নিয়ে আসে করোনার আরেক ধরন ওমিক্রন। তৃতীয় ঢেউয়ের সময় ২৮ জানুয়ারি করোনা শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ দাঁড়ায়, যা দেশে করোনা সংক্রমণ ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। তবে তৃতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত বেশি হলেও মৃত্যু ছিল তুলনামূলক কম। এই ঢেউ দ্রুত নিয়ন্ত্রণেও আসে। গত ১১ মার্চ তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।
তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর মাস্ক পরা ছাড়া করোনাসংক্রান্ত সব বিধিনিষেধ তুলে দেয়া হয়। তবে জনগণের মধ্যে মাস্ক পরা নিয়ে অনীহার বিষয়টি আবার দেখা যায়। করোনা সংক্রমণ ক্রমেই বাড়তে থাকলেও এ বিষয়ে সচেতনতার অভাবের বিষয়টি এখনও স্পষ্ট।
করোনা পরিস্থিতির অবনতিতে সব সরকারি চাকরিজীবীর মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে নির্দেশ জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
আরও পড়ুন:দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
মাউশির সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) রূপক রায়ের সই করা নির্দেশনা থেকে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানা যায়।
এতে বলা হয়, ‘করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন অফিস/ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরিধান করে অফিস/শ্রেণির কার্যক্রম পরিচালনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হলো।’
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর ধীরে ধীরে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। প্রথম ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। একই বছরের মার্চে ডেল্টা ধরনের করোনায় আসে দ্বিতীয় ঢেউ। এ পর্যায়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয় জুলাইয়ে। একপর্যায়ে শনাক্তের হার ৩৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়।
দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার পর দেশে তৃতীয় ঢেউ নিয়ে আসে করোনার আরেক ধরন ওমিক্রন। তৃতীয় ঢেউয়ের সময় করোনা শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ দাঁড়ায়, যা দেশে করোনা সংক্রমণ ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। তবে তৃতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত বেশি হলেও মৃত্যু ছিল তুলনামূলক কম। এই ঢেউ দ্রুত নিয়ন্ত্রণেও আসে। গত ১১ মার্চ তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।
তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর মাস্ক পরা ছাড়া করোনাসংক্রান্ত সব বিধিনিষেধ তুলে দেয়া হয়। তবে জনগণের মধ্যে মাস্ক পরা নিয়ে অনীহার বিষয়টি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া দ্বিতীয় বারের মতো করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তবে তার শরীরে করোনার কোনো লক্ষণ নেই, সুস্থ আছেন এবং বাসাতেই আইসোলেশনে আছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি তার ফেসবুকে এক পোস্টে করোনাভাইরাস পজিটিভ হওয়ার খবর জানান। পরে নিউজবাংলার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
জানা গেছে, গত সোমবার রুটিন চেকআপে বিপ্লব বড়ুয়ার করোনা পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ আসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে মঙ্গলবার তার সিলেট যাওয়ার কথা ছিল। সে সফরের আগেই তার করোনা পরীক্ষা করা হয়।
বুধবার বিপ্লব বড়ুয়া তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘অবাধ তথ্যপ্রবাহের যুগে কোন সংবাদই গোপন থাকে না। রাজনৈতিক দায়িত্বের কারণে নিয়মিত পরীক্ষায় গতকাল আমার করোনা রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। বিষয়টি কাউকে বলার মতো নয়, কারণ আমার কোনো প্রকার লক্ষণ নেই। বাসায় আছি, নিয়ম মেনে আইসোলেশন আছি। আমার ভ্যাকসিন নেয়া আছে। করোনার সংক্রমণ পুনরায় বৃদ্ধি পাচ্ছে, সবাই মাস্ক পরিধান করুন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন’।
দেশে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধির মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের এক অফিস আদেশে মঙ্গলবার এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
করোনার প্রাদুর্ভাব ক্রমেই বেড়ে চলছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছাড়িয়েছে ১১ শতাংশ। টানা ছয় দিন তা ৫ শতাংশের বেশি পাওয়া গেছে। এ কারণে করোনার চতুর্থ ঢেউ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় টানা ১৪ দিন শনাক্তের হার ৫ শতাংশের বেশি হলে পরবর্তী ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে বলে ধরা হবে।
করোনার তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে এসেছে গত ১০ মার্চ। এরপর শনাক্তের হার আরও কমতে কমতে একপর্যায়ে তা পরীক্ষার বিপরীতে এক শতাংশের নিচে নেমে যায়।
করোনা ক্রমেই নিম্নমুখী হওয়ার পর সাধারণের মধ্যে এই ভাইরাসসংক্রান্ত যেসব সাবধানতার পরামর্শ দেয়া হয়, সেগুলো পালনে অনীহা দেখা দেয়। মানুষের মুখ থেকে অনেকটাই উধাও হয়ে যায় মাস্ক।
মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়েছে, ‘বর্তমানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সব অনুবিভাগ প্রধান এবং অধীন দপ্তর বা সংস্থার প্রধানদেরকে তার আওতাধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর ধীরে ধীরে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। প্রথম ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। একই বছরের মার্চে ডেল্টা ধরনের করোনায় আসে দ্বিতীয় ঢেউ। এ পর্যায়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয় গত জুলাইয়ে। একপর্যায়ে শনাক্তের হার ৩৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়।
দেশে করোনার ওমিক্রন ধরন শনাক্ত হয় গত বছরের ১১ ডিসেম্বর। এরপর দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে তার সংক্রমণ। ২০ জানুয়ারি করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে প্রবেশ করে দেশ। ২৮ জানুয়ারি করোনা শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ দাঁড়ায়, যা দেশে করোনা সংক্রমণ ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। তবে তৃতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত বেশি হলেও মৃত্যু ছিল তুলনামূলক কম। এই ঢেউ দ্রুত নিয়ন্ত্রণেও আসে।
তিন সপ্তাহ ধরে দেশে করোনা সংক্রমণ আবারও বৃদ্ধির দিকে। মঙ্গলবার শনাক্তের হার পাওয়া গেছে ১১ দশমিক ৩ শতাংশ।
তবে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা এখনও অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। গত দুই দিনে দেশে একজন করে মানুষের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর আগে টানা ২০ দিন মৃত্যুহীন সময় গেছে।
আরও পড়ুন:টানা ছয় দিন নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ শতাংশের বেশি থাকা এবং প্রতিদিনই তা আগের হারকে ছাড়িয়ে যাওয়ায় দেশে করোনাভাইরাসের চতুর্থ ঢেউ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মঙ্গলবার জানিয়েছে, গত এক দিনে করোনা পরীক্ষা বিবেচনায় রোগী শনাক্তের হার ১১ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। এর আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি এই হার ছিল ১২ দশমিক ২ শতাংশ। তখন দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ চলছিল।
টানা ছয় দিন পরীক্ষা বিবেচনায় রোগী শনাক্তের হার ৫ শতাংশের বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৮৭৪ জনের, যা প্রায় চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এক দিনে এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল সর্বশেষ গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। সেদিন ৮৯৭ জনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। এ নিয়ে দেশে এক দিন ছাড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ টানা তিন সপ্তাহ নতুন রোগীর সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে বাড়ল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া ব্যক্তি পুরুষ। তিনি ঢাকার বাসিন্দা, বয়স ৭০ বছরের বেশি। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ নিয়ে সরকারি হিসাবে করোনা আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ২৯ হাজার ১৩৩ জনে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৭ হাজার ৯২৭টি নমুনা পরীক্ষা করে ৮৭৪ জন নতুন রোগী পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ঢাকা জেলার ৭৯০ জন।
এর বাইরে কক্সবাজারে ২০ জন, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে ১২ জন করে, গাজীপুর ও পাবনায় ছয়জন করে, সিলেটে চারজন, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা ও বরিশালে তিনজন করে, ফরিদপুর ও কুষ্টিয়ায় দুইজন করে এবং মানিকগঞ্জ, নরসিংদী, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, রাজশাহী, বগুড়া, খুলনা, মেহেরপুর, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠিতে একজন করে রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৫৮ হাজার ৭৪ জনে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৮৪ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৯ লাখ ৫ হাজার ৯৮৩ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী করোনার কোনো ঢেউ চলার সময় শনাক্তের হার পরপর দুই সপ্তাহ যদি ৫ শতাংশের নিচে থাকে, তাহলে সেই ঢেউ নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে ধরা যাবে। বিপরীত দিক দিয়ে করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকার অবস্থার পর দুই সপ্তাহ শনাক্তের হার ৫ শতাংশের বেশি হলে করোনার পরবর্তী ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে বলে ধরা হবে।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর ধীরে ধীরে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। প্রথম ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। একই বছরের মার্চে ডেল্টা ধরনের করোনায় আসে দ্বিতীয় ঢেউ। এ পর্যায়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয় গত জুলাইয়ে। একপর্যায়ে শনাক্তের হার ৩৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়।
দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার পর দেশে তৃতীয় ঢেউ নিয়ে আসে করোনার আরেক ধরন ওমিক্রন। তৃতীয় ঢেউয়ের সময় ২৮ জানুয়ারি করোনা শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ দাঁড়ায়, যা দেশে করোনা সংক্রমণ ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। তবে তৃতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত বেশি হলেও মৃত্যু ছিল তুলনামূলক কম। এই ঢেউ দ্রুত নিয়ন্ত্রণেও আসে। গত ১১ মার্চ তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য বিভাগ।
করোনা সতর্কতা না মানাসহ বিভিন্ন কারণে সংক্রমণ বাড়তির দিকে বলে কয়েক দিন ধরেই জানাচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। চতুর্থ ঢেউয়ের শঙ্কা নিয়ে আলোচনার মাঝেই মঙ্গলবার শনাক্ত ১১ শতাংশ ছাড়াল।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য