দেশে ডায়রিয়া ও কলেরার প্রকোপ কমাতে আগামী ২৬ জুন থেকে কলেরার মুখে খাওয়ার টিকা কার্যক্রম শুরু হবে।
মঙ্গলবার বিকেলে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) আয়োজিত এক আলোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এমন তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘প্রথম ধাপে রাজধানীর পাঁচটি এলাকায় এই টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। সেগুলো হলো- যাত্রাবাড়ী, দক্ষিণখান, মিরপুর, মোহাম্মদপুর ও সবুজবাগ।’
অন্তঃসত্ত্বা ব্যতীত এক বছরের বেশি সব বয়সের মানুষকে এই টিকা দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
প্রকোপ মোকাবিলায় রাজধানীর ঝুঁকিপূর্ণ পাঁচ এলাকার ২৩ লাখ মানুষকে কলেরার এই টিকা দেবে সরকার। দুই ডোজের এই টিকা কর্মসূচির প্রথম ডোজ দেয়া হবে। পরবর্তীতে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হবে।
শিশুদের করোনার টিকা দেয়া প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের হাতে এখনও শিশুদের টিকা আসেনি। কবে শিশুদের টিকা দেয়া হবে, সে সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত এখনও নেয়া হয়নি।’
মাঙ্কিপক্স প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘কিছু কিছু দেশে মাঙ্কিপক্স পাওয়া গেছে। আমাদের দেশে এখনও পাওয়া যায়নি। বিমানবন্দরগুলোতে সবাই সতর্ক আছেন। যদি কোনো ধরনের লক্ষণ নিয়ে কেউ এসেছেন, এমন কাউকে দেখেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।’
জাহিদ মালেক বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাতে গবেষণা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরও এগিয়ে নিতে এটি আধুনিকীকরণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। অনেক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি এবং বাস্তবায়ন করছি। এটি চলমান প্রক্রিয়া।’
নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় টানা দুই সপ্তাহ শনাক্তের হার ৫ শতাংশের ওপরে থাকায় দেশে করোনার চতুর্থ ঢেউ নিশ্চিত হয়েছে।
গত ১৬ জুন ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়া শনাক্তের হার টানা ১৪ দিন পর বুধবার দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ২৩ শতাংশ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় শনাক্তের হার পরপর দুই সপ্তাহ ৫ শতাংশের বেশি হলে পরবর্তী ঢেউ ছড়িয়েছে বলে ধরা হবে। সেই হিসাবে ভাইরাসটির চতুর্থ ঢেউ নিশ্চিত হয়ে গেল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ হাজার ৭১২টি পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ২৮১ জন। এক দিনে এত বেশি রোগী গত চার মাসে পাওয়া যায়নি।
এ নিয়ে টানা তিন দিন করোনা শনাক্ত দুই হাজারের ওপরে থাকল। করোনার প্রথম থেকে তৃতীয় ঢেউ পর্যন্ত রাজধানীই ছিল হটস্পট। এবারও তাই দেখা যাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন শনাক্তের মধ্যে ১ হাজার ৮১৪ জন ঢাকা জেলার।
এ নিয়ে এখন পর্যন্ত দেশে মোট রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৯ লাখ ৭১ হাজার ৬০২ জন।
করোনার রোগী ক্রমেই বাড়তে থাকলেও মৃত্যুর হার এখন পর্যন্ত অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্তদের মধ্যে কারও মৃত্যুসংবাদ দেয়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সরকারি হিসাবে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু ২৯ হাজার ১৪৫ জনে রয়ে গেল।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন আরও ১৫২ জন রোগী। আক্রান্ত হয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন ১৯ লাখ ৭ হাজার ২১৯ জন।
দেশ করোনার চতুর্থ ঢেউয়ে ঢুকলেও সাধারণের মধ্যে এই ভাইরাসটি নিয়ে সচেতনতার অভাব স্পষ্ট। আর সরকারও আগের তিন ঢেউয়ের মতো করোনা নিয়ে তেমন বিধিনিষেধ দেয়নি। যদিও ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ নীতি আবার ঘোষণা করা হয়েছে, তবে এর বাস্তবায়ন নেই বললেই চলে।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, আসন্ন পশুরহাট ও ঈদযাত্রায় সংক্রমণের হার আরও বাড়বে। জুলাইয়ের মাঝামাঝি সংক্রমণ চূড়ায় উঠবে। এরপর এক সপ্তাহ স্থিতাবস্থা থাকবে। পরে কমে আসবে।
করোনার আগের তিনটি ঢেউয়ের মতো এবার ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে জটিলতাও সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। ফলে অনেকেই ঘরে বসেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালে ভর্তির হারও অনেক কম।
অনেকেই জ্বর, সর্দি, কাশি দেখা দিলেও করোনা পরীক্ষা করেন না। ফলে কয়েক গুণ রোগী অ-শনাক্ত থেকে যাচ্ছে।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনা সংক্রমণের পর ২০২১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তা নিয়ন্ত্রণে আসে। মার্চের শেষে আবার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানে। সেটি নিয়ন্ত্রণে আসে গত ৪ অক্টোবর। গত ২১ জানুয়ারি দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ দেখা দেয়। প্রায় তিন মাস পর ১১ মার্চ নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর তিন মাস করোনা স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতি ছিল। এরপর ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে সংক্রমণ।
আইইডিসিআর-এর উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোশতাক হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওমিক্রনের যে সংক্রমণ আমরা দেখেছি, সেটা দ্রুত সময়ের মধ্যে সংক্রমণ চূড়ার উঠে আবার দ্রুত নেমে গেছে। করোনার চতুর্থ ঢেউয়ে ওমিক্রনের যে দুইটা সাব-ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে, এটা আরও দ্রুত সংক্রমিত করতে সক্ষম। আমার ধারণা, এই হার জুলাইয়ের মধ্যে নেমে যাবে।’
আরও পড়ুন:পাঁচ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকাদান জুলাই মাসের শেষের দিকে শুরু হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক।
সচিবালয়ে বুধবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) সই অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের টিকা কার্যক্রম চলমান আছে। আমরা শিশুদের টিকা কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। শিশুদের জন্য করোনার টিকা আমরা জুলাই মাসের মাঝামাঝি পেয়ে যাব বলে আশা করছি।
‘এটা হাতে আসলে জুলাইয়ের শেষে টিকা কার্যক্রম শুরু করতে পারব ৫ থেকে ১২ বছরের শিশুদের জন্য। সে জন্য যে ডকুমেন্টস প্রয়োজন, সেগুলো নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।’
করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কথা জানালেও মন্ত্রী বলছেন, তারা শঙ্কিত নন।
তিনি বলেন, ‘করোনা এখন ঊর্ধ্বমুখী। আমরা কিছুটা চিন্তিত। আমরা শঙ্কিত নই, আমরা প্রস্তুত আছি। সংক্রমণ রোধে গত সপ্তাহে আমরা সভা করেছি। সেখানে কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছিলাম।
‘অফিস, স্কুলে গেলে মাস্ক পরবেন। ট্রেনে, বাসে গেলে মাস্ক পরতে হবে। গত সপ্তাহে এ বিষয়ে অনুরোধ করেছি। ক্যাবিনেটসহ বিভিন্ন জায়গায় চিঠি দিয়েছি। জনগণ এই নির্দেশনা পালন করবে বলে প্রত্যাশা করছি। গত দুই দিন, তিন দিন ধরে দুই-তিনজন করে মারা যাচ্ছেন। আমরা আহ্বান জানাচ্ছি মানুষ যাতে ভ্যাকসিন নেয় এবং মাস্ক পরেন।’
জাহিদ মালেক বলেন, ‘করোনার বৃদ্ধির হার গত ১৫ দিন অনেক কম ছিল। এখন অনেক বেশি। এটার লাগাম টেনে ধরত চাই। আমাদের একার পক্ষে এটা সম্ভব নয়। জনগণের সচেতন ও মাস্ক পরিধান করা জরুরি। সেটি হলে অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
‘আমরা মাস্ক পরিধান করতে নির্দেশনা দিয়েছি। একটি চিঠি মন্ত্রিপরিষদ থেকে দিয়েছে। আমাদের সুপারিশ থাকে মাস্কটা শাস্তি দিয়ে নয়; আহ্বান করব মাস্ক পড়বে। তবুও ব্যত্যয় ঘটলে সরকার ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করবেন না।’
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি করতে আসা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এখন ভ্যাকসিন, করোনা নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ কাজ। নতুন যেসব প্রকল্প নিয়েছি এবং যেসব নিয়োগ কার্যক্রম সেগুলো গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আমাদের তদারকিতে গুরুত্ব দিতে হবে।
‘যেসব কাজ হাতে নেব, সঠিক সময়, সঠিকভাবে সমাপ্ত করতে পারব। যে সময়ে করা দরকার, সে সময়ের মধ্যে যেন কাজটি হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সে ক্ষেত্রে সঠিক জনবল দিতে হবে, সঠিক জিনিসপত্র ও ফান্ড দিতে হবে। যারা কাজ করবে, তাদের মধ্যে কোঅর্ডিনেশন থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘পূর্ত মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সঠিকভাবে কাজ সম্পন্ন করতে ও অর্থ বিভাগের সঙ্গে সঠিক সময়ে অর্থছাড়ের জন্য নিবিড়ভাবে যোগাযোগ রাখতে হবে। আমাদের বেশ কিছু অর্জন আছে। আমাদের সবাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছে। সে জন্য করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে।
‘আমাদের জনবলের যে ঘাটতি রয়েছে, তা পূরণ করতে হবে। প্রকল্প যেগুলো চলমান, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।’
আরও পড়ুন:সুনামগঞ্জসহ দেশের বন্যাকবলিত এলাকায় মানুষের জন্য ২৪ ঘণ্টা স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাসহ বন্যা পরবর্তী সময়ে সম্ভাব্য রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় পর্যাপ্ত ওষুধ ও উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিতের নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
সোমবার বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন শেষে জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্টদের করণীয় বিষয়ে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এমন নির্দেশনা দেন বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বন্যাকবলিত মানুষ আমাদেরই ভাই, আমাদেরই বোন। তারা এখন পানিবন্দি জীবন-যাপন করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সার্বিক নির্দেশনায় তাদের ঘরে শুকনা খাবার নিশ্চিত করা হয়েছে, পানিবাহিত নানা রোগব্যাধি থেকে মুক্ত রাখতে স্বাস্থ্যখাতও জোড়ালোভাবে এগিয়ে এসেছে।
তিনি বলেন, এসব এলাকায় এখন সাপের কামড় থেকে বাঁচাতে দ্রুত অ্যান্টিভেনম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন সরবরাহ করতে হবে। কোভিড সমস্যায় জরুরি ব্যাবস্থা নিতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, জরুরি প্রয়োজনে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে করে গুরুতর রোগীকে ঢাকায় পাঠাতে হবে। বন্যাকবলিত এলাকায় স্বাস্থ্যসেবার কোনো ঘাটতি মেনে নেয়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে বন্যায় কারো খাদ্য, চিকিৎসার কোন ব্যত্যয় হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা নেতৃত্বে আমরা বন্যা ও কোভিড মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি।
আরও পড়ুন:দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের ১২ বিচারক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
সোমবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এ তথ্য জানিয়েছেন।
সকালে আপিল বিভাগের বিচারকাজ শুরু হলে অ্যাটর্নি জেনারেলকে এ তথ্য জানান তিনি।
প্রধান বিচারপতি অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে মামলা পরিচালনায় সহযোগিতা চেয়ে বলেন, ‘আমাদের ১২ জন বিচারপতি করোনায় আক্রান্ত। দ্বৈত বেঞ্চের একজন করোনায় আক্রান্ত হলে ওই বেঞ্চের বিচারকাজ বন্ধ থাকে।
‘করোনার কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বেঞ্চে বিচারকাজ বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় আপনারা যদি সহযোগিতা না করেন, তাহলে আমাদের জন্য বিষয়টি কঠিন হয়ে পড়ে। আপনারা সহযোগিতা না করলে আমাদের ভার্চুয়ালি কোর্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তারপরও ধৈর্য ধরেন, আমরা দেখতেছি।’
আপাতত গুরুত্বপূর্ণ মামলাকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলেন প্রধান বিচারপতি। ওই সময় তিনি সব আইনজীবীর সহযোগিতা চান।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘মাই লর্ড, আমাদের অনেক আইনজীবীও করোনায় আক্রান্ত। আমরা আপনাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আপিল বিভাগের বিচারক বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক রাজিক আল জলিল, ইকবাল কবির লিটনসহ ১২ জন বিচারক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
আরও পড়ুন:রাজধানী ঢাকার পাঁচটি এলাকায় ৭০০টি অস্থায়ী কেন্দ্রে রোববার সকাল থেকে কলেরার মুখে খাওয়ার টিকার ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে।
রোববার বেলা ২টায় রাজধানীর মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) সাসাকাওয়া মিলনায়তনে এই ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
এই টিকাদান কর্মসূচি চলবে ২ জুলাই পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে ২৩ লাখ মানুষকে প্রথম ডোজ মুখে খাওয়ার কলেরা টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সব বয়সের মানুষকে ডায়রিয়ার ওর্যাল ভ্যাকসিন দেব। ঢাকার সংক্রমণপ্রবণ পাঁচটি এলাকার ২৩ লাখ মানুষকে এই টিকা দেব।
আমরা প্রথমবারের মতো দেশে বড় পরিসরে এই ভ্যাকসিন দিচ্ছি। এর আগে ট্রায়ালে যেসব এলাকায় টিকা দিয়েছি সেখানে কলেরার প্রাদুর্ভাব একদম কমে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একসময় কলেরা-ডায়রিয়ায় হাজার হাজার মানুষ মারা যেত। এখন তা হয় না। এর পেছনে সরকার ও আইসিডিডিআর,বির গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে।
‘সরকার সারা দেশে নিরাপদ পানি ও স্যানিটারির ব্যবস্থা করেছে। সরকার সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেছে। আমরা প্রতিটি জেলা-উপজেলার হাসপাতালে কলেরা-ডায়রিয়া ইউনিট চালুর নির্দেশ দিয়েছি।’
করোনা প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ইদানীং করোনার সংক্রমণ বেড়েছে। আমরা আতঙ্কিত না হলেও চিন্তিত। তবে সতর্ক অবস্থায় রয়েছি। আমরা বেশি বেশি করোনা পরীক্ষার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা দ্বিতীয় ডোজ দেয়া প্রায় শেষ করেছি। আজকের মধ্যে ৭০ শতাংশ নাগরিকের দ্বিতীয় ডোজ দেয়া শেষ হবে।
যারা বুস্টার ডোজ এখনও নেননি তাদের টিকা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘বুস্টার ডোজ নেয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুন:দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ হাজার ৭২৮টি নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে ১ হাজার ৬৮০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় রোগী শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ১২ শতাংশের ঘরে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
করোনার তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার পর গত ১৬ জুন প্রথমবারের মতো পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ শতাংশ ছাড়ায়। এ নিয়ে টানা ১১ দিন শনাক্তের হার ৫ শতাংশের ওপরে থাকল। আর তিন দিন শনাক্তের হার ৫ শতাংশের বেশি হলেই চতুর্থ ঢেউ নিশ্চিত হয়ে যাবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় শনাক্তের হার পরপর দুই সপ্তাহ ৫ শতাংশের বেশি হলে পরবর্তী ঢেউ ছড়িয়েছে বলে ধরা হবে।
নতুন শনাক্তের মধ্যে ১ হাজার ৫১৩ জন ঢাকা জেলার। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত দেশে মোট রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৯ লাখ ৬৬ হাজার ১৭৩ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্তদের মধ্যে দুজনের মৃত্যুর সংবাদ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর আগের দিন তিনজনের মৃত্যু তথ্য দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সরকারি হিসাবে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু দাঁড়াল ২৯ হাজার ১৩৪০ জনে।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন আরও ১৬৯ জন রোগী। আক্রান্ত হয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৮৮ জন।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর ধীরে ধীরে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। প্রথম ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। একই বছরের মার্চে ডেল্টা ধরনের করোনায় আসে দ্বিতীয় ঢেউ। এ পর্যায়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয় গত জুলাইয়ে। একপর্যায়ে শনাক্তের হার ৩৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়।
দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার পর দেশে তৃতীয় ঢেউ নিয়ে আসে করোনার আরেক ধরন ওমিক্রন। তৃতীয় ঢেউয়ের সময় ২৮ জানুয়ারি করোনা শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ দাঁড়ায়, যা দেশে করোনা সংক্রমণ ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। তবে তৃতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত বেশি হলেও মৃত্যু ছিল তুলনামূলক কম। এই ঢেউ দ্রুত নিয়ন্ত্রণেও আসে। গত ১১ মার্চ তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।
তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর মাস্ক পরা ছাড়া করোনাসংক্রান্ত সব বিধিনিষেধ তুলে দেয়া হয়। তবে জনগণের মধ্যে মাস্ক পরা নিয়ে অনীহার বিষয়টি আবার দেখা যায়। করোনা সংক্রমণ ক্রমেই বাড়তে থাকলেও এ বিষয়ে সচেতনতার অভাবের বিষয়টি এখনও স্পষ্ট।
করোনা পরিস্থিতির অবনতিতে সব সরকারি চাকরিজীবীর মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে নির্দেশ জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
আরও পড়ুন:বয়স ৪৫ পার হলে নানা রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেগুলো আগে কখনও হয়নি। তাই এসব সমস্যা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে হবে আগেই। এই বয়সে নিয়মিত কিছু চেকআপ করতে হবে। এবিপি আনন্দের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিষয়টি। চলুন দেখে নিই।
-
রক্তচাপ পরীক্ষা
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই বয়সে যেহেতু হৃদরোগের প্রবণতা অনেক বেশি থাকে, তাই রক্তচাপ নিয়মিত পরীক্ষা করানোটা অত্যন্ত জরুরি। রক্তচাপ সঠিক থাকলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, কিডনির সমস্যা এবং আরও নানা সমস্যা প্রতিরোধ করা যায় বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
-
প্রস্টেট পরীক্ষা
চিকিৎসকদের মতে, এই বয়সে পুরুষদের প্রস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি থাকে। প্রতি বছর বহু মানুষ প্রস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত হন। তাই বয়স ৪৫ পেরোলেই প্রস্টেট পরীক্ষা করা জরুরি।
-
থাইরয়েড পরীক্ষা
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মধ্যে অবশ্যই থাইরয়েড পরীক্ষা রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। যদি কখনও আচমকা অনেকটা ওজন কমে যায়, মাথা ঘোরা, বমিভাব, আচমকা ওজন বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখেন, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।
-
ডায়াবেটিস
এ রোগটি সম্পর্কে সচেতন করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ ডায়াবেটিস একবার শরীরে বাসা বাঁধলে তা চিরস্থায়ী। তবে নিয়মিত ওষুধ খেলে তা নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই ডায়াবেটিস পরীক্ষা করানোটা অত্যন্ত জরুরি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য