স্বাস্থ্য খাতে গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য ৩৫ লাখ টাকা করে অনুদান পেয়েছেন ১০ নারী বিজ্ঞানী।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ১০ নারী বিজ্ঞানীর হাতে সনদ ও অনুদানের চেক তুলে দিয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচজন আইসিডিডিআর’বির ও বাকিরা দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।
এই অনুদানের জন্য ৫০০ জন গবেষককে নির্বাচিত করা হয়। পরে তাদের মধ্যে এই ১০ জনকে অনুদান দেয় অধিদপ্তর।
মঙ্গলবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর’বি)-এ মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে স্বাস্থ্য গবেষণা অনুদান ও পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বদাই গবেষণার বিষয়ে তাগিদ দেন। তিনি চিকিৎসা গবেষণাকে বিশেষ গুরুত্ব দেন। আজ গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য ১০ নারী বিজ্ঞানীকে সম্মানিত করা হলো। এটি প্রমাণ করে, নারীর ক্ষমতায়নে আমরা অনেক এগিয়ে গেছি।
‘চিকিৎসা খাতে মোট শিক্ষার্থীর ৭৫ ভাগই নারী। আমরা চাই তারা আরও এগিয়ে যাক। সকল ক্ষেত্রে তারা পুরুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করুক।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্যের বিষয়গুলো আপগ্রেড হচ্ছে। তাই আমাদেরও নিয়মিত আপডেট থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে গবেষণা আমাদের আপডেট রাখতে পারে। যেমন, দেশে এক সময় সংক্রামক রোগের ব্যাপক বিস্তৃতি ছিল।
‘ডায়রিয়া, কলেরায় গ্রামের পর গ্রাম খালি হয়ে যেত। কিন্তু এখন নিয়ন্ত্রণে আমরা বহুলাংশেই সফল। আইসিডিডিআর’বি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আইসিডিডিআর’বির গবেষণা আমাদের এসব রোগের বিরুদ্ধে কাজ করতে সহায়তা করেছে।’
সম্প্রতি ডায়রিয়ার ব্যাপক সংক্রমণ দেখা দিলে আইসিডিডিআর’বি তা মোকাবিলায় অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছে। করোনা মোকাবিলাতেও আইসিডিডিআর’বির ভূমিকা রয়েছে বলে জানান জাহিদ মালেক।
সরকারের স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার পর দেশে মাত্র পাঁচটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ছিল। কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। বর্তমানে পাঁচটি শুধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ই রয়েছে। যাদের কাজ চলমান আছে। আমাদের কোনো ইনস্টিটিউট ছিল না, এখন প্রত্যেকটি রোগের জন্য আলাদা আলাদা বিশেষায়িত ইনস্টিটিউট রয়েছে।
‘করোনার শুরুতে আমরা কী করব জানতাম না। আমাদের আইইডিসিআর ছাড়া কোনো ল্যাব ছিল না। আমরা তখন সেটার দ্রুত ব্যবস্থা করেছি। অক্সিজেন ঘাটতি দূর করতে আমরা প্রতিটি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা করেছি। আলাদা হাসপাতাল তৈরি করেছি।’
করোনা আবার বাড়ছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
আইসিডিডিআর’বির পরিচালক (মাতৃত্ব ও শিশু) ডা. শামসুল আরেফিনের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিজ্ঞানী ড. ফেরদৌসী কাদেরী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।
আরও পড়ুন:দেশের উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতাল ছাড়াও দেশের ২২টি বিশেষায়িত হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধারা বিনা মূল্যে চিকিৎসা পাবেন বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে রোববার এ তথ্য জানান তিনি। মুক্তিযোদ্ধাদের ডিজিটাল সার্টিফিকেট, আইডি কার্ড, চিকিৎসাসেবা দেয়াসহ সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে এই সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
মন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের শতভাগ চিকিৎসা বিনা মূল্যে দেয়া হচ্ছে। দেশের উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় হাসপাতাল এবং দেশের ২২টি বিশেষায়িত হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা বিনা মূল্যে দেয়া হবে।’
সেই তালিকায় রয়েছে রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ, জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোল), জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতাল, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ফাউন্ডেশন হাসপাতাল মিরপুর ও বারডেম হাসপাতাল শাহবাগ।
এ ছাড়া রয়েছে খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল, গোপালগঞ্জের শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।
তিনি বলেন, ‘এসব হাসপাতালে ওষুধপত্র সবকিছু বিনা মূল্যে দেয়া হবে। বিদেশে চিকিৎসার জন্য গেলে মুক্তিযোদ্ধারা এক লাখ টাকা আর্থিক অনুদান পাবেন। এসব হাসপাতালে যে মুক্তিযোদ্ধারা সেবা পাচ্ছেন সে বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য আমাদের কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
‘এ ছাড়া সরকার থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে মন্ত্রণালয় একটি বুকলেট প্রকাশ করেছে। সেখানে সব বিষয় স্পষ্ট বলা আছে। সঠিক মুক্তিযোদ্ধাদের এমএ ডিজিটাল সার্টিফিকেট আইডি কার্ড দেয়া হবে, যা রোববার থেকে শুরু। সার্টিফিকেটে ১৪ ধরনের তথ্য দেওয়া থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জীবিত মুক্তিযোদ্ধারা আইডি কার্ড ও সনদপত্র পাবেন আর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সনদপত্র দেয়া হবে।‘
মুক্তিযোদ্ধাদের দেয়া ওই আইডি কার্ড ও সার্টিফিকেটে কিউআর কোড স্ক্যান করলে মোবাইলে জাতীয় সংগীত ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শোনা যাবে। গুগল প্লে স্টোর থেকে ফ্রিডম ফাইটার ভেরি ফায়ার এই মোবাইল অ্যাপসটি ডাউনলোডের পর কিউআর কোডে স্ক্যানের মাধ্যমে এটা শোনা যাবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।’
দেশে করোনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করে ওমিক্রনের ৯১ শতাংশই বিএ.২ উপ-ধরন (সাব-ভ্যারিয়েন্ট) পাওয়া গেছে। বাকি ৯ শতাংশ বিএ.৫ উপ-ধরন। মে মাসে দেশে ওমিক্রনের নতুন উপ-ধরনে বিএ.২-এর প্রাধান্য দেখা গেছে।
‘সার্স-সিওভি-২ ভ্যারিয়েন্টস ইন বাংলাদেশ টেকনিক্যাল ব্রিফিং রিপোর্ট: মে ২০২২’ শীর্ষক রিপোর্টে এ তথ্য উঠে এসেছে। তাতে বলা হয়েছে, মে মাসের ১ থেকে ৩১ তারিখ পর্যন্ত দেশে করোনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করে ওমিক্রনের ৯ শতাংশ বিএ.৫ ও ৯১ শতাংশ বিএ.২ উপ-ধরন পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনটি যৌথভাবে তৈরি করেছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর), আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি), ইনস্টিটিউট ফর ডেভেলপিং সায়েন্স অ্যান্ড হেলথ ইনিশিয়েটিভস (আইডেশি), চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন (সিএইচআরএফ) এবং বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন।
ওমিক্রনের এই দুটি উপ-ধরন জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হয়। মে মাসের শেষের দিকে এটি দক্ষিণ ভারতে শনাক্ত হয়। উপ-ধরনটি দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনা সংক্রমণের পঞ্চম ঢেউ এবং সম্প্রতি ভারতে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের জন্য দায়ী বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। ভ্যাকসিন নেয়া ব্যক্তিরাও করোনার এই উপ-ধরনে আক্রান্ত হচ্ছেন।
আগামী দিনে এটি সংক্রমণশীল অন্যান্য উপ-ধরনের তুলনায় বেশি সংক্রমণ ঘটাতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বিশ্বজুড়ে করোনার দুটি ধরনকে নজরদারির মধ্যে রেখেছে। ২০২১ সালের নভেম্বরের শেষের দিকে ‘ভ্যারিয়েন্টস অব কনসার্ন’ হিসেবে সবশেষ সংযোজিত হয় ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টটি। সংক্রমণের ক্ষমতা, ইমিউনিটি সিস্টেমকে আক্রমণের সক্ষমতা এবং ভ্যাকসিন রেসিস্ট্যান্সের কারণে এটিকে এই তালিকায় রাখা হয়।
সবশেষ ২০ জুন পর্যন্ত দেশে ওমিক্রন ধরন শনাক্ত হয়েছে ১২৮০ জনের দেহে।
অন্যদিকে গত মাসের ২৪ তারিখে দেশে প্রথম ওমিক্রনের বিএ.৫ ধরন শনাক্ত হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মে মাস জুড়ে দেশে যতগুলো করোনা কেস শনাক্ত হয়েছে তার শতভাগের ক্ষেত্রেই ওমিক্রন দায়ী।
সারা দেশে কোভিড-১৯ এর পজিটিভিটি রেট কমায়, মে মাসে নমুনার পরিমাণ কম ছিল। ফলে কনসোর্টিয়ামটি ১-৩১ এর মধ্যে কেবল ১১টি নমুনার সিকোয়েন্স করতে সক্ষম হয়। নমুনাগুলো ৬টি বিভাগ থেকে সংগ্রহ করা হয়।
আরও পড়ুন:বিশ্বে বছরে প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তাদের একটি বড় অংশই মারা যান কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত হয়ে। তবে একটু সচেতন হলেই ‘কার্ডিও-পালমোনারি রিসাসিটেশন’ (সিপিআর)-এর মাধ্যমে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বাঁচানো সম্ভব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মঙ্গলবার সিপিআর প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ নিয়ে এমন তথ্য জানান হেলো-আইপিডিআই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবদুল ওয়াদুদ চৌধুরী।
হেলো-আইপিডিআই ফাউন্ডেশন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা অনুষদ যৌথভাবে এই কর্মশালা আয়োজন করে।
অনুষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা অনুষদের অধ্যাপক ড. সালমা চৌধুরী, হেলদি হার্ট হ্যাপি লাইফ অর্গানাইজেশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু রেজা মো. কাইউম খান এবং হেলো-আইপিডিআই ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সেক্রেটারি জেনারেল হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মহসীন আহমদ।
আবদুল ওয়াদুদ চৌধুরী বলেন, ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত ব্যক্তিকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানোর অন্যতম উপায় হলো সিপিআর। কোনো ধরনের ডাক্তারি বিদ্যা ছাড়াই যে কোনো মানুষের পক্ষে সিপিআর পদ্ধতি শেখা সম্ভব। জনসাধারণের মাঝে সিপিআর-এর সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যেই হেলো-আইপিডিআই এমন উদ্যোগ নিয়েছে।’
হেলো-আইপিডিআই ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ডা. মহসীন আহমেদ ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট ও সিপিআর’ বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন শেষে বলেন, ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন বাঁচানোর পেছনে সিপিআর-এর ভূমিকা অনস্বীকার্য।’
উন্নত বিশ্বে এর গুরুত্ব সঠিকভাবে উপলব্ধ হয়েছে। অন্যদিকে আমাদের দেশে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট ও সিপিআর সম্পর্কে জনসাধারণের ধারণা না থাকায় এ ধরনের উদ্যোগ দেখা যায় না। এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে হেলো-আইপিডিআই ফাউন্ডেশন কাজ করে যাচ্ছে।
‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে জীবন বাঁচায় সিপিআর, ঘরে ঘরে হোক এর ট্রেনিং সেন্টার- এই অঙ্গীকার নিয়ে আমাদের আজকের এই কর্মশালার আয়োজন।’
কর্মশালায় আইপিডিআই ফাউন্ডেশনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. আসিফ জামান তুষার, ডা. মাহবুবা আক্তার চৌধুরী ও ডা. শিবলী শাহেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে হাতে-কলমে সিপিআর প্রশিক্ষণ দেন।
বাজেটে সিগারেট, বিড়ি এবং ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যে যে করের প্রস্তাব করা হয়েছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট নন তামাকবিরোধীরা। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত করের চেয়ে বেশি করারোপের পক্ষে তারা।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সেমিনার কক্ষে মঙ্গলবার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন সমন্বয় আয়োজিত এক আলোচনায় সংসদ সদস্যসহ আলোচকরা এ অভিমত দেন।
তামাকবিরোধী বিভিন্ন সংগঠন, গবেষক এবং অ্যাক্টিভিস্টরা সম্মিলিতভাবে তামাকপণ্যে কার্যকর করারোপের যে প্রস্তাবনা দিয়েছিল তা বাজেটে একেবারেই প্রতিফলিত হয়নি বলে মনে করেন আলোচকরা।
আলোচনায় অংশ নেয়া সংসদ সদস্যদের মধ্য ছিলেন শিরীন আখতার, ফজলে হোসেন বাদশা, উম্মে ফাতেমা নাজমা, আফতাব উদ্দিন সরকার, উম্মে কুলসুম স্মৃতি, ডা. সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল, মো. হারুনুর রশীদ এবং মো. সাইফুজ্জামান।
আলোচনায় ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে উন্নয়ন সমন্বয়ের সভাপতি অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো এক ধাক্কায় অনেকখানি কর বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল। যাতে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর মধ্যে তামাক ব্যবহারের মাত্রা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমিয়ে আনা যায়। কর আদায়ে সুবিধার জন্য সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাবনাও ছিল।
‘কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে শুল্কহার আগের মতোই রেখে বিভিন্ন স্তরের সিগারেটের দাম অতি-সামান্য বাড়ানো হয়েছে। সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়নি। এতে তামাকপণ্যে কার্যকর করারোপের সম্ভাব্য সুফল থেকে দেশ বঞ্চিত হবে।’
আলোচকরা বলেন, ‘বাজেটে সিগারেটের ওপর যে কর ধার্য করা হয়েছে তাতে সিগারেটের বিক্রি না কমে উল্টো দেড় শতাংশ বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাজেটে সিগারেটের প্রস্তাবিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সিগারেট ইতোমধ্যেই বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ফলে কর প্রস্তাব অপরিবর্তিত থাকলে সিগারেট কোম্পানির বিক্রি বৃদ্ধির পাশাপাশি কর ফাঁকি দেয়ার সুযোগও বেড়ে যাবে।
‘সুপারিশ অনুযায়ী বিদ্যমান কর ব্যবস্থা সংস্কার করলে তামাকের ব্যবহার কমবে, জীবন বাঁচবে এবং রাজস্ব আয় বাড়বে। নিম্ন স্তরে সিগারেটের মূল্যবৃদ্ধি তুলনামূলক স্বল্প আয়ের মানুষকে ধূমপান ছাড়তে উৎসাহিত করবে। উচ্চ স্তরে সিগারেটের দাম বাড়ানো হলে ধূমপায়ীদের পছন্দের সামর্থ্য সীমিত হবে। ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে এসব পণ্যের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করবে।’
সংসদ সদস্য শিরীন আখতার বলেন, ‘বাজেট অধিবেশন শুরুর আগেই অর্থমন্ত্রীর কাছে তামাকপণ্যে কার্যকর করারোপের প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন অন্তত ১০০ জন সংসদ সদস্য। এরপরও বাজেটে তা প্রতিফলিত না হওয়া লজ্জাজনক।’
ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘সংসদ সদস্যসহ অন্য সকল অংশীজনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অচিরেই বাংলাদেশে তামাকপণ্যে কার্যকর করারোপ সম্ভব হবে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা হলেও সেটি এখনও সংশোধনের সুযোগ আছে।’
আরও পড়ুন:চার দিন ধরে পানি জমে আছে চট্টগ্রামের মা ও শিশু হাসপাতালের নিচতলায়। দুর্ভোগ শেষ হচ্ছে না সেবা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই তলার কার্যক্রম সরিয়ে নেয়া হয়েছে দ্বিতীয় তলায় এবং হাসপাতালের নতুন ভবনে।
হাসপাতালের কর্মচারী মো. রাকিব বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকেলে হাসপাতালে পানি ঢুকে যায়। ওই দিন প্রথমে হাসপাতালের সামনে বৃষ্টির পানি জমে। এরপর খাল দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকলে ভেতরে পানি ঢুকতে শুরু করে।
‘পরে রাস্তার পানি নেমে গেলেও হাসপাতালের পানি বের হতে পারেনি। শুক্রবার সন্ধ্যার বৃষ্টিতে আরও পানি ভেতরে ঢোকে। তবে আজকে পানি কিছুটা কমেছে।’
নিচতলায় আছে শিশু ওয়ার্ড, অভ্যর্থনা কক্ষ, বহির্বিভাগ, প্রশাসনিক বিভাগ ও ক্যানসার ইউনিট। এসব সেবা অন্য জায়গায় সরিয়ে নিলেও আসা-যাওয়ায় ভোগান্তি পোহাচ্ছে ডাক্তার, রোগীসহ সবাই।
হাটহাজারীর ফতেয়াবাদ থেকে আড়াই বছরের ছেলেকে নিয়ে আসা কহিনুর বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে সিঁড়িতে স্লিপ খেয়ে পড়ে হাত ভেঙে গেছে। হাসপাতালে এসে দেখি নিচে হাঁটুপানি। পানির কারণে আসা-যাওয়ার অনেক সমস্যা হচ্ছে।’
আগামী মাসের মধ্যে নতুন ভবনে হাসপাতাল স্থানান্তর করা হলে এই দুর্ভোগের অবসান হবে বলে জানান হাসপাতালের পরিচালক নুরুল হক।
তিনি বলেন, ‘পানির সমস্যা বহু পুরোনো। তা ছাড়া এটা এখন জাতীয় সমস্যাও। দেশের অনেক জায়গা পানির নিচে তলিয়ে আছে৷
‘আমাদের অনেক সেবা নতুন ভবনে পার করা হয়েছে। আগামী মাসের মধ্যে আমরা সবকিছু নতুন ভবনে স্থানান্তর করব। তখন আর এই সমস্যা থাকবে না।’
আরও পড়ুন:বন্যার্তদের চিকিৎসাসেবা দিতে সারা দেশে ১৪০টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। তারা প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে সেবা দেবে।
শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মানিকগঞ্জ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এসব তথ্য দেন।
তিনি বলেন, ‘বন্যাকবলিত মানুষদের চিকিৎসাসেবা দিতে সারা দেশে ১৪০টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। তারা প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে গিয়ে সেবা দেবে। সিলেটের জেলা ও উপজেলা নিয়ে একটি কমিটি গঠন হয়েছে। সেই কমিটিতে ডাক্তার, নার্স, সিভিল সার্জন, এসপি, ডিসি ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও আছেন। সব মিলিয়ে ঢাকায় একটি সমন্বয় কমিটি গঠন হয়েছে।
‘কমিটির সবাই কাজ করছেন। তারা স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবেলেটসহ চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে যাচ্ছেন। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় নৌকা, স্পিডবোটসহ নানা বাহনে গিয়ে তারা মানুষকে সেবা দিচ্ছেন।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সিলেটে বন্যার পাশাপাশি অনেক জেলা প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে প্রত্যেক হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। পানি ঢুকে গেছে প্রতিটি হাসপাতালে এবং যাওয়া-আসার রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। চিকিৎসা দেয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
‘ওসমানী মেডিক্যালে কলেজেও বন্যার পানি ঢুকেছে, সেখানে বিদ্যুৎ নেই। জেনারেটরের মাধ্যমে আমরা সেই হাসপাতালের কার্যক্রম চালু রেখেছি। প্রধানমন্ত্রী এসব বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন, খোঁজখবর রাখছেন।’
দেশে করোনা আবার বাড়ছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাস বিষয়ে আমাদের সজাগ হতে হবে। মাস্ক পরতে হবে এবং টিকা না নিলে অবশ্যই বুস্টার ডোজ নিয়ে নেবেন। যতটুকু পারেন, সাবধানে থাকবেন।’
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জেলা মহিলা লীগের সভাপতি নিনা রহমান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সাফিয়া খাতুন, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মহীউদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম, সংসদ সদস্য এ এম নাঈমূর রহমান দূর্জয় ও মমতাজ বেগম।
আরও পড়ুন:এমনিতেই করোনায় বিপর্যস্ত কিম জং উনের দেশ উত্তর কোরিয়া। এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার আরেকটি সংক্রামক রোগের কথা জানায় পিয়ংইয়ং, যা মহামারির রূপ নিয়েছে।
নতুন মহামারিটি কতটা গুরুতর, তা স্পষ্ট নয়। এ রোগে কত জন আক্রান্ত হয়েছেন তাও জানা যায়নি।
কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব হাইজু শহরে আক্রান্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন দেশটির নেতা কিম উন। তিনি তার পরিবারের জন্য সংরক্ষিত ওষুধ আক্রান্তদের দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন।
অনেক পর্যবেক্ষক বলছেন, “উত্তর কোরিয়ায় ‘অন্ত্রের মহামারি’ বলতে টাইফয়েড, আমাশয় বা কলেরার মতো একটি সংক্রামক রোগকে বোঝায়। দূষিত খাবার এবং পানির মাধ্যমে বা সংক্রামিত মানুষের মলের মাধ্যমে এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে।”
স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট ডিপিআরকেহেলথ ডটকমের প্রধান আহন কিয়ং-সু বলেন, ‘ হাম বা টাইফয়েডের প্রাদুর্ভাব উত্তর কোরিয়ায় অস্বাভাবিক নয়। আমি মনে করি এটি সত্য। দেশটিতে সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। তবে উত্তর কোরিয়া এটিকে একটি সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করছে। কিম অসুস্থদের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছেন। তিনি বুঝতে পারেছেন ক্ষমতায় থাকতে হলে, জনসমর্থনের প্রয়োজন আছে।’
উত্তর কোরিয়া গত মাসে প্রথমবারের মতো করোনা প্রাদুর্ভাবের কথা স্বীকার করে। কেসিএনএ জানিয়েছে, দেশের দুই কোটি ৬ লাখ মানুষের মধ্যে ৪৫ লাখেরও বেশি মানুষ অজ্ঞাত জ্বরে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ৭৩ জন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য