চুয়াডাঙ্গা সদরে পক্সের উপসর্গ থাকায় হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখা সেই বৃদ্ধার গায়ের ফোস্কাগুলো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বলে জানিয়েছে মেডিক্যাল বোর্ড। সেগুলো মাঙ্কিপক্স কিংবা অন্য কোনো পক্স নয় বলে জানিয়েছেন বোর্ডের চিকিৎসকরা।
মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান আবুল হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ওই বৃদ্ধাকে শুক্রবার সদর হাসপাতালে এনে আইসোলেশনে রাখা হয়। তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ৩ সদস্যের বোর্ড গঠন করা হয়।
আবুল হোসেন বলেন, ‘আজ ওই বৃদ্ধার শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহের পর এটি মাঙ্কিপক্স বা কোনো পক্সই নয় বলে নিশ্চিত হয়েছি। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় তার শরীরে ফোস্কা হয়েছে। তার চিকিৎসার জন্য চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। খুব শিগগিরি সুস্থ হয়ে যাবেন তিনি।’
তবে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত রোগীকে হাসপাতালেই রাখা হবে বলে জানান তিনি।
বৃদ্ধার বাড়ি সদর উপজেলার ভান্ডারদহ গ্রামে।
সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন বৃহস্পতিবার তাকে পর্যবেক্ষণ করে বলেন, ‘হাতের তালু, আঙুল ও শরীরের বিভিন্ন অংশে বড় বড় ফোসকা নিয়ে হাসপাতালে আসেন ওই বৃদ্ধা। তার জ্বর ও মাথাব্যথা ছিল। শরীর ব্যথা ও দুর্বলতার কথাও বলেন।
‘তার শরীরে মার্বেলের মতো পক্সের উপসর্গ থাকায় বিষয়টি সিভিল সার্জন ও হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে অবহিত করি। তাদের পরামর্শে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ওই নারীকে হোম আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে।’
সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আওলিয়ার রহমান শুক্রবার জানান, পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বৃদ্ধাকে ফের হাসপাতালে আনা হয়েছে।
আরও পড়ুন:নাটোর সদরের পানমোকাম গ্রামে কারো অসুস্থ হওয়ার খবর পেলেই হাজির হন রাবেয়া বেগম। গভীর রাতে গানের তালে নামান ‘ভূত’। সেই ভূত বোতলে ভরে নিয়ে যান। এই কাজের জন্য নেন এক থেকে দুই হাজার টাকা।
কয়েকদিন আগে শহরতলীর দত্তপাড়ায় এক কিশোরীর মানসিক সমস্যার কথা জানতে পেরে সেখানে যান রাবেয়া। সেই কিশোরীকে ভূত ধরেছে জানিয়ে শুরু করেন ভূত নামানো।
কখনও কিশোরীটিকে নানা ধরনের শিকড়বাকড় শোকান, কখনও নাকের সামনে ধরেন হাড়। এভাবে চলে প্রায় তিন ঘণ্টা। এরপর বোতলে ‘ভূত ধরা শেষে’ নির্দিষ্ট পারিশ্রমিক নিয়ে বিদায় নেন।
রাবেয়া নিউজবাংলাকে জানান, কাউকে জিন বা ভূত ধরলে তিনি তা ধরে বোতলে ভরেন। কখনও তাকে ফোন করে ডেকে নেয়া হয়, কখনও নিজে থেকেই যান। ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে তিনি এই কাজ করেন। গায়েবিভাবে পেয়েছেন এই জিন-ভূত তাড়ানোর ক্ষমতা।
নাটোরে এভাবেই চলছে ওঝা-কবিরাজদের তথাকথিত চিকিৎসা। শুধু প্রত্যন্ত এলাকাতেই নয়, এমন কাজ চলছে শহরের হাটে-বাজারেও।
রাবেয়ার মতো আরেকজন হলেন বশির মিয়া। নলডাঙ্গা উপজেলার সমসখলসি গ্রামের বশির আগুন জ্বালিয়ে তন্ত্রমন্ত্রের মাধ্যমে জিন-ভূত তাড়ানো ও বন্ধ্যাত্ব দূর করে সন্তানপ্রাপ্তির প্রলোভনে অর্থ হাতিয়ে নিতেন।
বিষয়টি নজরে আসায় গত ২৯ জুন বিকেলে সদর উপজেলার বনবেলঘড়িয়া থেকে তন্ত্রমন্ত্রের সরঞ্জামসহ বশিরকে আটক করে র্যাব। ভ্রাম্যমাণ আদালতে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়ার কথা স্বীকারও করেন তিনি।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক জেলা প্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শওকত মেহেদী সেতু ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে বশিরকে দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। সেই সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। এরপর বশিরকে নাটোর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
এ ধরনের অবৈজ্ঞানিক ও ভুয়া কার্যকলাপে মানুষের বড় ধরনের শারীরিক আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা।
স্থানীয় একটি ক্লিনিকের চিকিৎসক পারসিয়া তাবাসসুম দীপ্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যে কোনো ধরনের ভুল চিকিৎসায় মানুষের বড় ধরনের শারীরিক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে আর্থিক ক্ষতি তো আছেই। অপচিকিৎসা রোধে প্রান্তিক পর্যায়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। ভুল চিকিৎসা প্রদানকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।’
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন রোজী আরা খাতুন বলেন, ‘অপচিকিৎসার খবর পেলেই স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়। মাঝে মাঝে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করা হয়।
‘কেউ অসুস্থ হলে যেন ওঝা বা কবিরাজের কাছে না যায় সেই প্রচারও অব্যাহত আছে।’
আরও পড়ুন:চতুর্থ ঢেউয়ে আগের তিন ঢেউয়ের তুলনায় মৃত্যুর হার কম থাকলেও গত দুই দিন ধরে হঠাৎ করেই চিন্তার ভাঁজ তৈরির উপক্রম হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ২৪ ঘণ্টায় চার জনের মৃত্যুর পর শুক্রবার আরও পাঁচ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
করোনার তৃতীয় ঢেউ গত মার্চে নিয়ন্ত্রণে আসার পর শনাক্ত, পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হারের পাশাপাশি কমে আসে মৃত্যুও।
মে থেকে করোনা সংক্রমণ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকার প্রবণতা দেখা গেলেও মৃত্যুর দিক থেকে স্বস্তিকর বার্তাই দিচ্ছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। টানা মৃত্যুহীন দিন হয়েছে তিন সপ্তাহেরও বেশি।
গত ১৬ জুন পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে তা ১০ শতাংশ, এমনকি ১৪ শতাংশ হয়ে যাওয়ার পরও মৃত্যুর সংখ্যা ছিল কমই। কোনো দিন একজন, কোনো দিন শূন্য মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
তবে গত সপ্তাহ থেকেই এক পেরিয়ে দুই, দুই পেরিয়ে তিন এবং তিন পেরিয়ে চার জনের মৃত্যুর তথ্য জানানো হয় ২৪ ঘণ্টায়।
এবার যে পাঁচ জনের মৃত্যুর তথ্য জানানো হয়েছে, সেটি সবশেষ ঘটেছিল গত ১১ মার্চ। সেদিনও পাঁচ জনের মৃত্যুর তথ্য জানানো হয়।
গত ২৪ ঘণ্টার মোট রোগী শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৮৯৭ জন। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৩১।
টানা চার দিন পর ২৪ ঘণ্টায় রোগীর সংখ্যা দুই হাজারের কম পাওয়া গেছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন পাঁচজনের মৃত্যু নিয়ে দেশে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২৯ হাজার ১৫৪ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া পাঁচজনের মধ্যে পুরুষ তিনজন এবং নারী দুজন।
বয়স বিবেচনায় ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে মারা গেছেন এক জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে তিনজন এবং ৮১ থেকে ৯০ বছর বয়সসীমার মধ্যে একজন আছেন। মৃতদের সবাই ঢাকার বাসিন্দা।
গত এক দিনে এই সময়ে নতুন আরও ১ হাজার ৮৯৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। টানা চার দিন পর দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দুই হাজারের নিচে এসেছে। এ নিয়ে শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১৯ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮২ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৩১ শতাংশ এবং করোনাকালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এ নিয়ে টানা ১৬ দিন নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ৫ শতাংশের ওপরে।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ২৪৮ জন এবং এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৯ লাখ ৭ হাজার ৭৫৭ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং মারা গেছেন ১ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
আরও পড়ুন:দেশে করোনার চতুর্থ ঢেউ ছড়িয়ে পড়া নিশ্চিত হওয়ার পরদিন সাড়ে তিন মাসের মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর তথ্য জানাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত এক দিনে ভাইরাসটিতে মৃত্যু হয়েছে চারজনের। এর চেয় বেশি মৃত্যু হয় গত ১১ মার্চ। সেদিন ২৪ ঘণ্টায় পাঁচজনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়।
এ নিয়ে ভাইরাসটিতে এখন পর্যন্ত মারা গেছে ২৯ হাজার ১৪৯ জন।
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১৩ হাজার ৯০৫টি নমুনা পরীক্ষা করে ২ হাজার ১৮৩ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
এ নিয়ে টানা চার দিন শনাক্তের সংখ্যা দুই হাজারের ওপরে থাকল। এর আগের দিন শনাক্ত ছিল ২ হাজার ২৮১ জন। মঙ্গলবার এই সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৮৬ জন। সোমবার ২ হাজার ১০১ জনের সংবাদ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার পাওয়া গেছে ১৫ দশমিক ৭০ শতাংশ। এ নিয়ে টানা ১৫ দিন পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ শতাংশের বেশি পাওয়া গেল।
করোনার তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার পর গত ১৬ জুন প্রথমবারের মতো পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ শতাংশ ছাড়ায়। টানা ১৪ দিন ৫ শতাংশের বেশি শনাক্তের হার পাওয়া যাওয়ার পর দেশে চতুর্থ ঢেউ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় শনাক্তের হার পরপর দুই সপ্তাহ ৫ শতাংশের বেশি হলে পরবর্তী ঢেউ ছড়িয়েছে বলে ধরা হবে। সেই হিসাবে দেশে এখন করোনা চতুর্থ ঢেউ চলে।
করোনার আগের তিনটি ঢেউয়ের মতো এবারও করোনার হটস্পট ঢাকা। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন শনাক্তের মধ্যে ১ হাজার ৭২৮ জনই এই জেলার।
এ নিয়ে এখন পর্যন্ত দেশে মোট রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৯ লাখ ৭৩ হাজার ৭৮৫ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতদের চারজনের তিনজন পুরুষ, অন্যজন নারী।
এদের মধ্যে দুজন চট্টগ্রামের বাসিন্দা। ঢাকা ও রাজশাহীতে আছেন একজন করে। এদের সবাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন আরও ২৯০ জন রোগী। আক্রান্ত হয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন ১৯ লাখ ৭ হাজার ৬০৭ জন।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনা সংক্রমণের পর ২০২১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তা নিয়ন্ত্রণে আসে। মার্চের শেষে আবার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানে। সেটি নিয়ন্ত্রণে আসে গত ৪ অক্টোবর।
গত ২১ জানুয়ারি দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ দেখা দেয়। প্রায় তিন মাস পর ১১ মার্চ নিয়ন্ত্রণে আসে। পরের তিন মাস করোনা স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতি ছিল। এরপর ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে সংক্রমণ।
আরও পড়ুন:নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় টানা দুই সপ্তাহ শনাক্তের হার ৫ শতাংশের ওপরে থাকায় দেশে করোনার চতুর্থ ঢেউ নিশ্চিত হয়েছে।
গত ১৬ জুন ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়া শনাক্তের হার টানা ১৪ দিন পর বুধবার দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ২৩ শতাংশ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় শনাক্তের হার পরপর দুই সপ্তাহ ৫ শতাংশের বেশি হলে পরবর্তী ঢেউ ছড়িয়েছে বলে ধরা হবে। সেই হিসাবে ভাইরাসটির চতুর্থ ঢেউ নিশ্চিত হয়ে গেল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ হাজার ৭১২টি পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ২৮১ জন। এক দিনে এত বেশি রোগী গত চার মাসে পাওয়া যায়নি।
এ নিয়ে টানা তিন দিন করোনা শনাক্ত দুই হাজারের ওপরে থাকল। করোনার প্রথম থেকে তৃতীয় ঢেউ পর্যন্ত রাজধানীই ছিল হটস্পট। এবারও তাই দেখা যাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন শনাক্তের মধ্যে ১ হাজার ৮১৪ জন ঢাকা জেলার।
এ নিয়ে এখন পর্যন্ত দেশে মোট রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৯ লাখ ৭১ হাজার ৬০২ জন।
করোনার রোগী ক্রমেই বাড়তে থাকলেও মৃত্যুর হার এখন পর্যন্ত অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্তদের মধ্যে কারও মৃত্যুসংবাদ দেয়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সরকারি হিসাবে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু ২৯ হাজার ১৪৫ জনে রয়ে গেল।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন আরও ১৫২ জন রোগী। আক্রান্ত হয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন ১৯ লাখ ৭ হাজার ২১৯ জন।
দেশ করোনার চতুর্থ ঢেউয়ে ঢুকলেও সাধারণের মধ্যে এই ভাইরাসটি নিয়ে সচেতনতার অভাব স্পষ্ট। আর সরকারও আগের তিন ঢেউয়ের মতো করোনা নিয়ে তেমন বিধিনিষেধ দেয়নি। যদিও ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ নীতি আবার ঘোষণা করা হয়েছে, তবে এর বাস্তবায়ন নেই বললেই চলে।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, আসন্ন পশুরহাট ও ঈদযাত্রায় সংক্রমণের হার আরও বাড়বে। জুলাইয়ের মাঝামাঝি সংক্রমণ চূড়ায় উঠবে। এরপর এক সপ্তাহ স্থিতাবস্থা থাকবে। পরে কমে আসবে।
করোনার আগের তিনটি ঢেউয়ের মতো এবার ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে জটিলতাও সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। ফলে অনেকেই ঘরে বসেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালে ভর্তির হারও অনেক কম।
অনেকেই জ্বর, সর্দি, কাশি দেখা দিলেও করোনা পরীক্ষা করেন না। ফলে কয়েক গুণ রোগী অ-শনাক্ত থেকে যাচ্ছে।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনা সংক্রমণের পর ২০২১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তা নিয়ন্ত্রণে আসে। মার্চের শেষে আবার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানে। সেটি নিয়ন্ত্রণে আসে গত ৪ অক্টোবর। গত ২১ জানুয়ারি দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ দেখা দেয়। প্রায় তিন মাস পর ১১ মার্চ নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর তিন মাস করোনা স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতি ছিল। এরপর ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে সংক্রমণ।
আইইডিসিআর-এর উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোশতাক হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওমিক্রনের যে সংক্রমণ আমরা দেখেছি, সেটা দ্রুত সময়ের মধ্যে সংক্রমণ চূড়ার উঠে আবার দ্রুত নেমে গেছে। করোনার চতুর্থ ঢেউয়ে ওমিক্রনের যে দুইটা সাব-ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে, এটা আরও দ্রুত সংক্রমিত করতে সক্ষম। আমার ধারণা, এই হার জুলাইয়ের মধ্যে নেমে যাবে।’
আরও পড়ুন:পাঁচ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকাদান জুলাই মাসের শেষের দিকে শুরু হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক।
সচিবালয়ে বুধবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) সই অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের টিকা কার্যক্রম চলমান আছে। আমরা শিশুদের টিকা কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। শিশুদের জন্য করোনার টিকা আমরা জুলাই মাসের মাঝামাঝি পেয়ে যাব বলে আশা করছি।
‘এটা হাতে আসলে জুলাইয়ের শেষে টিকা কার্যক্রম শুরু করতে পারব ৫ থেকে ১২ বছরের শিশুদের জন্য। সে জন্য যে ডকুমেন্টস প্রয়োজন, সেগুলো নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।’
করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কথা জানালেও মন্ত্রী বলছেন, তারা শঙ্কিত নন।
তিনি বলেন, ‘করোনা এখন ঊর্ধ্বমুখী। আমরা কিছুটা চিন্তিত। আমরা শঙ্কিত নই, আমরা প্রস্তুত আছি। সংক্রমণ রোধে গত সপ্তাহে আমরা সভা করেছি। সেখানে কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছিলাম।
‘অফিস, স্কুলে গেলে মাস্ক পরবেন। ট্রেনে, বাসে গেলে মাস্ক পরতে হবে। গত সপ্তাহে এ বিষয়ে অনুরোধ করেছি। ক্যাবিনেটসহ বিভিন্ন জায়গায় চিঠি দিয়েছি। জনগণ এই নির্দেশনা পালন করবে বলে প্রত্যাশা করছি। গত দুই দিন, তিন দিন ধরে দুই-তিনজন করে মারা যাচ্ছেন। আমরা আহ্বান জানাচ্ছি মানুষ যাতে ভ্যাকসিন নেয় এবং মাস্ক পরেন।’
জাহিদ মালেক বলেন, ‘করোনার বৃদ্ধির হার গত ১৫ দিন অনেক কম ছিল। এখন অনেক বেশি। এটার লাগাম টেনে ধরত চাই। আমাদের একার পক্ষে এটা সম্ভব নয়। জনগণের সচেতন ও মাস্ক পরিধান করা জরুরি। সেটি হলে অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
‘আমরা মাস্ক পরিধান করতে নির্দেশনা দিয়েছি। একটি চিঠি মন্ত্রিপরিষদ থেকে দিয়েছে। আমাদের সুপারিশ থাকে মাস্কটা শাস্তি দিয়ে নয়; আহ্বান করব মাস্ক পড়বে। তবুও ব্যত্যয় ঘটলে সরকার ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করবেন না।’
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি করতে আসা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এখন ভ্যাকসিন, করোনা নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ কাজ। নতুন যেসব প্রকল্প নিয়েছি এবং যেসব নিয়োগ কার্যক্রম সেগুলো গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আমাদের তদারকিতে গুরুত্ব দিতে হবে।
‘যেসব কাজ হাতে নেব, সঠিক সময়, সঠিকভাবে সমাপ্ত করতে পারব। যে সময়ে করা দরকার, সে সময়ের মধ্যে যেন কাজটি হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সে ক্ষেত্রে সঠিক জনবল দিতে হবে, সঠিক জিনিসপত্র ও ফান্ড দিতে হবে। যারা কাজ করবে, তাদের মধ্যে কোঅর্ডিনেশন থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘পূর্ত মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সঠিকভাবে কাজ সম্পন্ন করতে ও অর্থ বিভাগের সঙ্গে সঠিক সময়ে অর্থছাড়ের জন্য নিবিড়ভাবে যোগাযোগ রাখতে হবে। আমাদের বেশ কিছু অর্জন আছে। আমাদের সবাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছে। সে জন্য করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে।
‘আমাদের জনবলের যে ঘাটতি রয়েছে, তা পূরণ করতে হবে। প্রকল্প যেগুলো চলমান, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।’
আরও পড়ুন:সুনামগঞ্জসহ দেশের বন্যাকবলিত এলাকায় মানুষের জন্য ২৪ ঘণ্টা স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাসহ বন্যা পরবর্তী সময়ে সম্ভাব্য রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় পর্যাপ্ত ওষুধ ও উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিতের নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
সোমবার বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন শেষে জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্টদের করণীয় বিষয়ে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এমন নির্দেশনা দেন বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বন্যাকবলিত মানুষ আমাদেরই ভাই, আমাদেরই বোন। তারা এখন পানিবন্দি জীবন-যাপন করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সার্বিক নির্দেশনায় তাদের ঘরে শুকনা খাবার নিশ্চিত করা হয়েছে, পানিবাহিত নানা রোগব্যাধি থেকে মুক্ত রাখতে স্বাস্থ্যখাতও জোড়ালোভাবে এগিয়ে এসেছে।
তিনি বলেন, এসব এলাকায় এখন সাপের কামড় থেকে বাঁচাতে দ্রুত অ্যান্টিভেনম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন সরবরাহ করতে হবে। কোভিড সমস্যায় জরুরি ব্যাবস্থা নিতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, জরুরি প্রয়োজনে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে করে গুরুতর রোগীকে ঢাকায় পাঠাতে হবে। বন্যাকবলিত এলাকায় স্বাস্থ্যসেবার কোনো ঘাটতি মেনে নেয়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে বন্যায় কারো খাদ্য, চিকিৎসার কোন ব্যত্যয় হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা নেতৃত্বে আমরা বন্যা ও কোভিড মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি।
আরও পড়ুন:দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের ১২ বিচারক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
সোমবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এ তথ্য জানিয়েছেন।
সকালে আপিল বিভাগের বিচারকাজ শুরু হলে অ্যাটর্নি জেনারেলকে এ তথ্য জানান তিনি।
প্রধান বিচারপতি অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে মামলা পরিচালনায় সহযোগিতা চেয়ে বলেন, ‘আমাদের ১২ জন বিচারপতি করোনায় আক্রান্ত। দ্বৈত বেঞ্চের একজন করোনায় আক্রান্ত হলে ওই বেঞ্চের বিচারকাজ বন্ধ থাকে।
‘করোনার কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বেঞ্চে বিচারকাজ বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় আপনারা যদি সহযোগিতা না করেন, তাহলে আমাদের জন্য বিষয়টি কঠিন হয়ে পড়ে। আপনারা সহযোগিতা না করলে আমাদের ভার্চুয়ালি কোর্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তারপরও ধৈর্য ধরেন, আমরা দেখতেছি।’
আপাতত গুরুত্বপূর্ণ মামলাকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলেন প্রধান বিচারপতি। ওই সময় তিনি সব আইনজীবীর সহযোগিতা চান।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘মাই লর্ড, আমাদের অনেক আইনজীবীও করোনায় আক্রান্ত। আমরা আপনাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আপিল বিভাগের বিচারক বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক রাজিক আল জলিল, ইকবাল কবির লিটনসহ ১২ জন বিচারক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য