মাঙ্কিপক্স ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে তুরস্কের এক নাগরিককে রাজধানীর মহাখালীর ঢাকা সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে পাঠিয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় বিমানবন্দরে অবতরণ করে টার্কিশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট। ওই ফ্লাইটে আসা ৩২ বছর বয়সী তুরস্কের নাগরিক আকশি আলতে ইমিগ্রেশন পার হওয়ার সময় মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত বলে সন্দেহ করেন বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহরিয়ার সাজ্জাদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টার্কিশ এয়ারলাইনসে আসা এক বিদেশি নাগরিক ইমিগ্রেশন পার হওয়ার সময় মাঙ্কিপক্স ভাইরাসে আক্রান্ত বলে সন্দেহ হয়। তাকে প্রথমে বিমানবন্দর হেলথ সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়।’
সেখান থেকে ওই ব্যক্তিকে রাজধানীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছেন শাহরিয়ার সাজ্জাদ।
সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের পরিচালক মিজানুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সন্দেহভাজন ব্যক্তি তুরস্কের নাগরিক। তার দুই হাতে মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ পাওয়া গেছে। তিনি বর্তমানে হাসপাতালে আইসোলেশনে রয়েছেন। নমুনা পরীক্ষার জন্য তাকে আইইডিসিআরে পাঠানো হবে। পিসিআর টেস্ট পরীক্ষার ফলাফল শেষে নিশ্চিতভাবে জানা যাবে তার মাঝে মাঙ্কিপক্স সংক্রমণ আছে কি না।’
বিশ্বের ৩৬টি দেশের ৫০০ জনের বেশি মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসজনিত রোগ মাঙ্কিপক্সের বিষয়ে সতর্ক করে দেশের সব বন্দর-সংশ্লিষ্টদের কাছে এরই মধ্যে চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
চিঠিতে বিমানবন্দরের মেডিক্যাল অফিসারদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। কারও মধ্যে উপসর্গ থাকলে বা সন্দেহ হলে তাকে চিহ্নিত করে দ্রুত সংক্রামক হাসপাতালে পাঠাতে বলা হয়েছে।
মাঙ্কিপক্স নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ারও পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মাঙ্কিপক্স কতটা ভয়ের, আক্রান্ত হলে কী করবেন
মাঙ্কিপক্স কোনো নতুন রোগ নয়। ভাইরাসজনিত রোগটির প্রাদুর্ভাব পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে মাঝেমধ্যেই দেখা যায়। এবার ইউরোপ ও আমেরিকাতেও বেশ কয়েকজন এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এ কারণে ভাইরাস ছড়ানোর গতি বেড়েছে কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঙ্কিপক্সের বিস্তারের ধরন পর্যালোচনায় বোঝা যায় বিশ্বজুড়ে নতুন মহামারি সৃষ্টির আশঙ্কা বলতে গেলে নেই। তবে মাত্র বছর দুয়েক আগে কোভিড-১৯ মহামারির কারণেই রোগটি নিয়ে বাড়তি ভীতি তৈরি হয়েছে। তারা বলছেন, মাঙ্কিপক্সে শারীরিক জটিলতার মাত্রাও বেশ কম। কিছু বিরল ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি গুরুতর অসুস্থতার মুখে পড়তে পারেন।
কোন ভাইরাস দায়ী
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) তথ্য অনুযায়ী, বিরল রোগ মাঙ্কিপক্সের জন্য দায়ী ভাইরাসটির নাম মাঙ্কিপক্স ভাইরাস। এটি পক্সভিরিডাই পরিবারের অর্থোপক্সভাইরাস গণের অন্তর্গত। এই অর্থোপক্সভাইরাস গণের মধ্যেই রয়েছে ভ্যারিওলা ভাইরাস, যা গুটিবসন্তের জন্য দায়ী। আবার এই গণের অন্তর্ভুক্ত ভ্যাক্সিনিয়া ভাইরাস গুটিবসন্তের টিকা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণেই মাঙ্কিপক্সের ক্ষেত্রে গুটিবসন্তের মতো উপসর্গ দেখা যায়।
আফ্রিকা মহাদেশের ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোয় (ডিআরসি) ১৯৭০ সালে প্রথম একটি শিশুর দেহে মাঙ্কিপক্স সংক্রমণ শনাক্ত হয়। শিশুটিকে শুরুতে গুটিবসন্ত আক্রান্ত বলে সন্দেহ করছিলেন চিকিৎসকেরা।
অবশ্য মানুষের সংক্রমণ ধরা পড়ার এক যুগ আগে ১৯৫৮ সালে প্রথম মাঙ্কিপক্স শনাক্ত করেন বিজ্ঞানীরা। সেবার ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোয় গবেষণার জন্য আটকে রাখা বানরের দেহে গুটিবসন্তের মতো রোগের সংক্রমণ ধরা পড়ে। পরীক্ষা করে দেখা যায়, ওই রোগের জন্য দায়ী ভাইরাসটি গুটিবসন্তের ভাইরাসের চেয়ে কিছুটা আলাদা। আর এরপরই ভাইরাসটির নাম দেয়া হয় মাঙ্কিপক্স।
ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোয় মানুষের দেহে ভাইরাসটির সংক্রমণ শনাক্তের কিছুদিনের মধ্যে মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকান আরও অনেক দেশ যেমন ক্যামেরুন, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, কোত ডে ভোয়া, গ্যাবন, লাইবেরিয়া, নাইজেরিয়া, রিপাবলিক অফ দ্য কঙ্গো এবং সিয়েরা লিওনে মাঙ্কিপক্সের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। বেশির ভাগ সংক্রমণের ঘটনা অবশ্য ঘটেছিল ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোয়।
ছয় দশকেরও বেশি আগে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হলেও এর প্রাকৃতিক পোষক সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত নন। কেউ কেউ ধারণা করেন, আফ্রিকান ইঁদুর বা বানরজাতীয় প্রাণী ভাইরাসটির পোষক হতে পারে। আর সেসব প্রাণী থেকেই মাঙ্কিপক্স মাঝেমধ্যে মানুষে সংক্রমিত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বেশ কিছু প্রাণীকে মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের পোষক হিসেবে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে। এর মধ্যে আছে দুই প্রজাতির কাঠবিড়ালি (রোপ স্কুইরেল ও ট্রি স্কুইরেল), গাম্বিয়ান পাউচড ইঁদুর, ডর্মিস এবং বানর।
সংক্রমণ
মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের ঘটনা সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা যায় ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোয়। এ ছাড়া মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার বিভিন্ন দেশেও এই রোগের অস্তিত্ব রয়েছে। আফ্রিকার দেশগুলোয় ভ্রমণ ও আমদানি করা প্রাণীর মাধ্যমে বিশ্বের আরও কিছু দেশে বিভিন্ন সময়ে মাঙ্কিপক্সের অল্পবিস্তর সংক্রমণ দেখা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয় ২০০৩ সালে। টেক্সাসে ঘানা থেকে আমদানি করা পশুর একটি চালান থেকে ভাইরাসের সংক্রমণের ওই ঘটনা ঘটেছিল বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে গত বছরের নভেম্বর ও জুলাইয়েও মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়।
১৯৭০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আফ্রিকার ১১টি দেশে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৯৬-৯৭ সালে ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোয় বেশ বড় একটি প্রাদুর্ভাব ঘটে। তবে আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুহার ছিল বেশ কম। ২০১৭ সালে নাইজেরিয়ায় ৫০০-র বেশি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হন। সেখানে মৃত্যুর হার ছিল প্রায় ৩ শতাংশ। নাইজেরিয়া থেকে ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে ২০১৮ সালে ইসরায়েল, যুক্তরাজ্য ও সিঙ্গাপুরেও মাঙ্কিপক্সের বিস্তার ঘটেছিল।
মাঙ্কিপক্সের ভাইরাসের সঙ্গে গুটিবসন্তের ভাইরাসের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় গুটিবসন্তের টিকা দুটি ক্ষেত্রেই সুরক্ষা দিতে পারে। তবে ১৯৮০ সালে গুটিবসন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে নির্মূলের ঘোষণা দেয়ার পর বিভিন্ন দেশে এই টিকাদান বন্ধ রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এই সুযোগে মাঙ্কিপক্স জনস্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে সক্রিয় অর্থোপক্স ভাইরাস হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) তথ্য অনুযায়ী, মাঙ্কিপক্স সংক্রমিত কোনো প্রাণীকে স্পর্শ করলে বা সেটি কামড় দিলে অথবা ওই প্রাণীর রক্ত, শরীরের তরল, ফোসকা স্পর্শ করলে মানুষে এই ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে।
সংক্রমিত প্রাণীর মাংস ভালোভাবে রান্না না করে খেলেও মানুষ মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হতে পারে। এ ছাড়া সংক্রমিত প্রাণীর চামড়া বা পশম স্পর্শের মাধ্যমে সংক্রমণের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না এনএইচএস।
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস বলছে, মাঙ্কিপক্সের কারণে ফুসকুড়িতে আক্রান্ত ব্যক্তির পোশাক, বিছানা বা তোয়ালে স্পর্শ করা যাবে না। এ ছাড়া মাঙ্কিপক্সজনিত ফোসকা বা চলটা স্পর্শ না করার পাশাপাশি ফুসকুড়ি থাকা ব্যক্তির কাশি বা হাঁচি থেকে দূরে থাকতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, দীর্ঘক্ষণ আক্রান্ত ব্যক্তির মুখোমুখি অবস্থান করলে তার হাঁচি-কাশির ড্রপলেট বা অণুকণার মাধ্যমে সুস্থ ব্যক্তিও ভাইরাস আক্রান্ত হতে পারেন। এ কারণে স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীর পরিবারের সদস্যদের বাড়তি ঝুঁকি রয়েছে।
প্ল্যাসেন্টার মাধ্যমে মা থেকে ভ্রূণে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে। জন্মের সময় এবং পরে মায়ের সান্নিধ্যে থাকা সন্তানও ঝুঁকির বাইরে নয়।
সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকজনের ক্ষেত্রে শারীরিক মিলনের মাধ্যমে মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বক্তব্যে রয়েছে অস্পষ্টতা।
ডব্লিউএইচওর ওয়েবসাইটে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক বা দূষিত পদার্থ স্পর্শের মতো ঘনিষ্ঠ সংযোগের (সংক্রমিত ত্বকের ক্ষত, নিঃশ্বাসের ড্রপলেট বা শরীরের তরল স্পর্শ) মাধ্যমে মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ ঘটে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ডেভিড হেম্যানও সতর্ক করে বলছেন, ‘এখন যা ঘটছে বলে মনে হচ্ছে তা হলো এটি (মাঙ্কিপক্স ভাইরাস) যৌন ক্রিয়াকলাপ বা যৌনাঙ্গের মাধ্যমে কিছু মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। যৌনতার মাধ্যমে সংক্রমণের কারণেই সারা বিশ্বে ভাইরাসটির ছড়ানোর মাত্রা বেড়ে গেছে।’
তবে মাঙ্কিপক্স নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্যাক্টশিটে বলা হয়েছে, শারীরিক ঘনিষ্ঠতা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায় এমন ধারণাটি সুপরিচিত হলেও বিষয়টি নিয়ে এখনও অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। ঝুঁকির এই দিকটি ভালোভাবে বোঝার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।
লক্ষণ ও উপসর্গ
ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র বলছে, মাঙ্কিপক্সের ভাইরাস শরীরে প্রবেশের পর প্রতিলিপি তৈরি করতে শুরু করে। এরপর রক্তের মাধ্যমে সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণত সংক্রমণের এক-দুই সপ্তাহের আগে বাহ্যিক কোনো উপসর্গ দেখা যায় না।
মাঙ্কিপক্স ত্বকে গুটিবসন্তের মতো ক্ষত তৈরি করে, তবে লক্ষণগুলো সাধারণত গুটিবসন্তের তুলনায় মৃদু। আক্রান্তরা প্রাথমিকভাবে সাধারণ জ্বর ও মাথাব্যথায় ভুগতে পারেন। কারও কারও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। লক্ষণ প্রকাশের ১ থেকে ১০ দিন পর শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দেয়। ধীরে ধীরে তা পুঁজ ভরা ফোসকায় পরিণত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্যাক্টশিটের তথ্য অনুযায়ী, মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের ইনকিউবেশন পিরিয়ড (সংক্রমণ থেকে উপসর্গের সূত্রপাত পর্যন্ত সময়ের ব্যবধান) সাধারণত ৬ থেকে ১৩ দিন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ৫ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত হতে পারে।
এতে বলা হয়েছে, ভাইরাস আক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে (সর্বোচ্চ ৫ দিন পর্যন্ত) জ্বর, তীব্র মাথাব্যথা, লিম্ফ্যাডেনোপ্যাথি (লিম্ফ নোডের ফোলা), পিঠ ব্যথা, পেশিতে ব্যথা এবং প্রচণ্ড দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে। জলবসন্ত, গুটিবসন্ত বা হামের ক্ষেত্রে এ ধরনের সব লক্ষণ থাকলেও লিম্ফ্যাডেনোপ্যাথি দেখা যায় না।
জ্বরের এক থেকে তিন দিনের মধ্যে ত্বকে ফুসকুড়ি দেখা যায়। কাঁধের চেয়ে মুখ ও হাতের দিকে ফুসকুড়ি থাকে বেশি। আক্রান্তদের শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা করে ৯৫ শতাংশের মুখমণ্ডলে ফুসকুড়ি বেশি দেখা গেছে। এ ছাড়া হাতের তালু, পায়ের তলা, মুখের শ্লেষ্মা ঝিল্লি, যৌনাঙ্গ, এমনকি চোখের কর্নিয়াও আক্রান্ত হয়।
এই ফুসকুড়ি ধীরে ধীরে স্বচ্ছ তরলে পূর্ণ হয়, যা পরে পুঁজ তৈরি করে। সর্বশেষে চলটা শুকিয়ে ঝরে পড়ে। মাঙ্কিপক্সে শরীরে কয়েক হাজার পর্যন্ত ফুসকুড়ি তৈরি হতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে ত্বকের বড় অংশের চামড়া উঠে না যাওয়া পর্যন্ত ক্ষত সারে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মাঙ্কিপক্স সাধারণত আপনাআপনি সেরে যায়। রোগের লক্ষণের স্থায়িত্ব দুই থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত। ক্ষতের মাত্রা কতটা হবে, তা রোগীর স্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে।
মাঙ্কিপক্স সেরে যাওয়ার পরও অনেকে ত্বকের অন্য সংক্রমণ, ব্রঙ্কোপনিউমোনিয়া, সেপসিস, এনসেফালাইটিস এবং কর্নিয়ার জটিলতায় ভুগতে পারেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বর্তমানে মাঙ্কিপক্সে মৃত্যুহার ৩ থেকে ৬ শতাংশ। তবে কিছু বিশেষজ্ঞের দাবি, এই হার ১ শতাংশের নিচে।
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ রিডিংয়ের সেলুলার মাইক্রোবায়োলজির সহযোগী অধ্যাপক সাইমন ক্লার্ক বলছেন, ‘যুক্তরাজ্যে পশ্চিম আফ্রিকার ভাইরাসের যে ধরনটি ছড়িয়েছে তাতে মৃত্যুহার প্রায় ১ শতাংশ। আফ্রিকার কঙ্গো অঞ্চলের আরেকটি ধরন রয়েছে যেটি প্রায় ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে মারাত্মক হতে পারে, তবে যুক্তরাজ্যে সেটি দেখা যায়নি।’
চিকিৎসা
মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের দুই-চার সপ্তাহের মধ্যে জটিলতাগুলো এমনিতেই সেরে যায়। এ সময় রোগীকে পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বেশি করে তরল ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে। পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ ঠেকাতে লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসার ওপরও জোর দিচ্ছে তারা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, আক্রান্ত ব্যক্তিকে সেবা দেয়া স্বাস্থ্যকর্মী ও পরিবারের সদস্যদের সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। এ জন্য তাদের বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে। সম্ভব হলে গুটিবসন্তের টিকা নিয়েছেন এমন স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঙ্কিপক্স আক্রান্তদের সেবায় নিয়োজিত করতে হবে।
বন্য প্রাণী, বিশেষ করে অসুস্থ বা মৃত প্রাণীর মাংস, রক্ত এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। পশুর মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে ভালো করে সেদ্ধ করার পরামর্শও দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন তীব্র দাবদাহের কারণে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সারা দেশের হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
রোববার সচিবালয়ে সারাদেশের হাসপাতালের পরিচালক এবং সিভিল সার্জনদের সঙ্গে অনলাইনে আয়োজিত এক সভা থেকে তিনি এই নির্দেশনা দেন। সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের এই নির্দেশনার কথা জানান। খবর বাসসের
তিনি বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গরম চরম আকার ধারণ করেছে। তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলায় সারা দেশের হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখা এবং একই সঙ্গে হাসপাতালগুলোতে জরুরি রোগী ছাড়া ভর্তি না করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
বয়স্ক ও শিশুরা যেন প্রয়োজন ছাড়া বাসার বাইরে না যায়, সে বিষয়েও পরামর্শ দেয়া হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই গরমে সবচেয়ে বেশি ভালনারেবল বয়স্ক এবং বাচ্চারা। এবার এমন একটা জলবায়ু পরিবর্তন হলো যে আমরা জীবনে কখনো শুনিনি যে দুবাই বিমানবন্দর পানিতে ডুবে গেছে। যাহোক এটা প্রকৃতির নিয়ম। আমাদের এগুলোফেস করতে হবে।’
তীব্র দাবদাহে বাচ্চাদের ঝুঁকি এড়াতে পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমার কাছে যখন মেসেজ আসলো (হিট অ্যালার্ট), আমি শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সান্নিধ্যে গিয়ে স্কুলটা বন্ধ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। কারণ, সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে বাচ্চা এবং বয়স্করা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের ওরাল স্যালাইনের কোথাও কোনো ঘাটতি হলে যেন আমাকে সঙ্গে সঙ্গে জানানো হয়। এখন পর্যন্ত আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। প্রকৃতির ওপর তো আমাদের কারও হাত নেই। এটা আমাদের রেডি রাখতে হবে।
শিশুদের জন্য হাসপাতালগুলোতে পর্যপ্ত ব্যবস্থা আছে কি না- জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমি শনিবার শিশু হাসপাতালে গিয়েছিলাম। শিশু হাসপাতালগুলোকে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখার জন্যই সারাদেশের হাসপাতালগুলোকে নির্দেশ দিয়েছি। কোল্ডকেসগুলোকে এখন হাসপাতালে ভর্তি না করতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাচ্চাদের ব্যাপারে আজকে থেকে একটা অনলাইন ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করছি সারা দেশের চিকিৎসকদের নিয়ে।
সভায় জানানো হয়, মহাখালীতে করোনা চিকিৎসার জন্য ডিএনসিসি হাসপাতালে শিশু ও বয়স্কদের জন্য আলাদাভাবে বেড রাখতে বলা হয়েছে।
এ সময় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে মানুষের জন্য সহজলভ্য করতে যা যা করার দরকার তাই করবেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা সামন্ত লাল সেন।
শনিবার রাজধানীর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ঐতিহাসিক নেতৃত্ব এবং দেশের উন্নয়ন’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
মন্ত্রী বলেন, ‘ইদের পর থেকে তৃণমূল স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে আমি আবারও মাঠে নেমে পড়ব। প্রয়োজনে প্রত্যন্ত গ্রামে গঞ্জে চলে যাব। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে মানুষের জন্য সহজলভ্য করতে যা যা করার দরকার আমি তাই করব।’
সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘কথা কম বলে অসুস্থ মানুষের সেবায় কাজ করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ করতে হবে আমাদের। বঙ্গবন্ধু এই দেশকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন। তিনি ২৩ বছর লড়াই সংগ্রাম করেছেন বাংলাদেশ একদিন স্বাধীন হবে সেই জন্য। তার দীর্ঘদিনের স্বপ্নের দেশ স্বাধীন হয়েছে। তিনি কিন্তু দেশকে তার স্বপ্নের মতো করে সাজানোর সুযোগ পাননি।
‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) মাত্র তিন বছরের মত সময় ক্ষমতায় ছিলেন। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হলেও দেশে তেমন কোনো সম্পদ বা অর্থ ছিল না। সেই দুর্ভিক্ষ পীড়িত দেশের দায়িত্ব নিয়েই তিনি এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে তিনি কাজ শুরু করেননি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাতের সব ভালো উদ্যোগ জাতির পিতাই শুরু করে দিয়েছিলেন। তিনি যেভাবে শুরু করেছিলেন দেশের বিভিন্ন কুচক্রী মহলের কারণে সেগুলো সেভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। এখন তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা পিতার কাজগুলো এক এক করে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, জনগণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন করা। সেই কাজ করতে মুখে আমাদেরকে বড় বড় কথা বললেই হবে না, আমাদেরকে কাজ করে দেখাতে হবে। এজন্য আমরা যেন মুখে কথা কম বলে কাজ করেই আমাদের সক্ষমতা বুঝিয়ে দিতে পারি সে লক্ষ্যেই মাঠে নেমে পড়তে হবে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী, বিএসএমএমইউ এর ভিসি ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক অধ্যাপক টিটো মিয়া, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাকসুরা নূর, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান (অতিরিক্ত সচিব)-সহ অন্যান্যরা।
দেশে আরও ৪২ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার এই হিসাব দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।
এতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় কারও মৃত্যু হয়নি। এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৪৯ হাজার ৩২৯ জনে। এ পর্যন্ত ভাইরাসটিতে মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৪৯৩ জনের।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৮৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ সময়ে শনাক্তের হার ৬ দশমিক ১১ শতাংশ। মোট পরীক্ষায় এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৭ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মোট মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৩৭ জন। এ নিয়ে দেশে মোট সুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ১৬ হাজার ৫৫৫ জনে।
কোভিড-১৯ মহামারির প্রথম দুই বছরে বিশ্বব্যাপী মানুষের গড় আয়ু ১ দশমিক ৬ বছর কমেছে।
একটি বড় গবেষণায় মঙ্গলবার এ কথা বলা হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা বাসস।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশনের (আইএইচএমই) তথ্য অনুসন্ধানকারী গবেষকদের মতে, এক দশক ধরে বিশ্বব্যাপী আয়ুষ্কাল বৃদ্ধির পর এটি এখন উল্টো দিকে ঘুরছে।
আইএইচএমই গবেষক এবং দ্য ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত গবেষণার প্রধান লেখক অস্টিন শুমাখার বলেছেন, ‘বিশ্বব্যাপী প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য, কোভিড-১৯ মহামারিটি অর্ধ শতাব্দীতে সংঘাত এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ দেখা যেকোনো ঘটনার চেয়ে আরও গভীর প্রভাব ফেলেছে।’
তিনি একটি বিবৃতিতে বলেছেন, ২০২০ থেকে ২০২১ সময়কালে ২০৪টি দেশ ও অঞ্চলের বিশ্লেষণে ৮৪ শতাংশে আয়ু হ্রাস পেয়েছে, যা নতুন ভাইরাসগুলোর ‘বিধ্বংসী সম্ভাব্য প্রভাব প্রদর্শন করে।’
এই সময়ে ১৫ বছরের বেশি মানুষের মৃত্যুর হার পুরুষদের জন্য ২২ শতাংশ এবং মহিলাদের জন্য ১৭ শতাংশ বেড়েছে।
গবেষকরা অনুমান করেছেন, মেক্সিকো সিটি, পেরু এবং বলিভিয়ায় আয়ু সবচেয়ে বেশি কমেছে।
কিন্তু আইএইচএমইয়ের ল্যান্ডমার্ক গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজ স্টাডির আপডেট করা হিসাবে কিছু ভালো খবর পাওয়া যায়।
২০১৯ সালের তুলনায় ২০২১ সালে পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় অর্ধ মিলিয়ন কম শিশু মারা গেছে, যা শিশু মৃত্যুহারের দীর্ঘমেয়াদি পতন অব্যাহত রেখেছে।
আইএইচএমই গবেষক এই ‘অবিশ্বাস্য অগ্রগতি’কে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, বিশ্বকে এখন পরবর্তী মহামারি এবং বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্যের বিশাল বৈষম্য মোকাবেলার দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। গবেষকরা বলেছেন, ১৯৫০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে গড় আয়ু ২৩ বছর বেড়ে ৪৯ থেকে ৭২ বছর হয়েছে।
কোভিড ২০২০ থেকে ২০২১ সময়কালে সরাসরি ভাইরাস থেকে বা পরোক্ষভাবে মহামারী-সম্পর্কিত কারণে অতিরিক্ত ১৫.৯ মিলিয়ন লোকের মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন:সিয়াম সাধনার মাস রমজানে ভোররাতে সেহরি খেয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার বর্জন করেন মুসলিমরা। এ সময়ে পাকস্থলীসহ শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বিশ্রাম পায়। এতে করে শরীরে নানাবিধ ইতিবাচক প্রভাব পড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
রোজার স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন উপকারিতার কথা এক ভিডিওতে তুলে ধরেছেন মনোদৈহিক ও জীবনযাপনবিষয়ক রোগের থেরাপিস্ট এবং কোয়ান্টাম হার্ট ক্লাবের কোঅর্ডিনেটর ডা. মনিরুজ্জামান। পরামর্শগুলো তার ভাষায় উপস্থাপন করা হলো নিউজবাংলার পাঠকদের সামনে।
শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিশ্রাম
রমজান আসল, রমজান চলে গেল। ৩০টি রোজা আমি রাখলামও। ৩০টি রোজার পরেও আমার ওজনের একটুও কম-বেশি হলো না। এইটুকু খোলা চোখে বলে দেয়া যায়, রোজা থেকে আমি কোনো কিছু ফায়দা নিতে পারলাম না। আমি ব্যর্থ হয়েছি রোজার মূল উদ্দেশ্য অর্জন করতে। বিজ্ঞান কী বলে?
সর্বপ্রথম ১৯৯৪ সালে মরক্কোর ক্যাসাব্লাঙ্কা শহরে সারা বিশ্ব থেকে বিজ্ঞানীরা একত্রিত হয়ে ৫০টিরও বেশি বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র তারা উপস্থাপন করেন। সেই সম্মেলনের নাম ছিল হেলথ অ্যান্ড রামাদান; সুস্থতা এবং রমজান। সেই সেমিনারে বক্তারা বলেন, রমজানের ৩০টি রোজা আমাদের শরীরের জন্য একটা বিশাল অপরচুনিটি; একটা বিশাল সুযোগ। তারা এভাবে তুলনা করে বলছেন, একটা জটিল মেশিন থেকে যদি সারা বছর পূর্ণ সার্ভিস চান, তাহলে অবশ্যই মাঝে মাঝে তাকে কিছু সময়ের জন্য হলেও তাকে বিশ্রামে রাখতে হবে। তো আমাদের শরীরটাও একটা মেশিন। এর মধ্যে অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র রয়েছে; হার্ট, লাং, লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক, পরিপাকতন্ত্র…কত ধরনের হার্ড ডিস্ক। এইসব মেশিনপত্র থেকে যদি আপনি সারা বছর পুরো সার্ভিস চান, তাহলে তাকে বছরের একটি মাস বিশ্রাম দিতে হবে। তাহলে বাকি ১১টা মাস সে পূর্ণোদ্যমে কাজ করে আপনাকে পূর্ণ সাপোর্ট দিতে পারবে। আপনি তার থেকে পুরো আউটপুট পাবেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, আপনি যদি সঠিক পদ্ধতিতে রোজা রাখতে পারেন, তাহলে অবশ্যই আপনার বাড়তি ওজন কমবে। বাড়তি ওজন ঝেড়ে ফেলে আপনি একজন স্লিম, স্মার্ট মানুষে রূপান্তরিত হবেন। আর যদি রোজার পরেও আপনার বাড়তি ওজন থেকে যায়, এইটুকু পরিষ্কারভাবে বলা যায়, যে পদ্ধতিতে রোজা রাখার কথা ছিল, সেই পদ্ধতিতে রোজা রাখতে পারেন নাই; রোজা রাখা হয় নাই। ফলে আপনি আপনার ওজন কমাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
মস্তিষ্ককে বুড়িয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা
আমেরিকার সরকারি সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথের (এনআইএইচ) একটি শাখা হচ্ছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অন এজিং। সেখানকার প্রখ্যাত নিউরোসায়েন্টিস্ট ড. মার্ক ম্যাটসন এবং তার সহযোগীরা দীর্ঘ গবেষণা করেন ফাস্টিং নিয়ে। এরপর তারা পাবলিশ করেন এর ফলাফল। সেখানে তারা পরিষ্কার করে বলছেন যে, একজন মানুষ যদি মাঝে মাঝেই ফাস্টিং থাকে, নিজেকে সকল ধরনের খাবার এবং পানীয় থেকে বিরত রাখে, তবে তিনি তার ব্রেনের যে এজিং, সে এজিংটাকে প্রতিরোধ করতে পারবে। ব্রেনকে বুড়িয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে পারবে এবং বৃদ্ধ বয়সে এখন যে রোগগুলো খুব দেখা যাচ্ছে, বৃদ্ধ বয়সে এসে আমাদের স্মৃতিভ্রষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং যেসব রোগগুলোতে স্মৃতি হারিয়ে যাচ্ছে, সেই রোগগুলোকে বলা হয় আলঝেইমারস, ডিমেনশিয়া, হান্টিংটন, পারকিনসনের মতো রোগগুলো আপনি প্রতিরোধ করতে পারবেন।
রক্ত পরিশোধন
বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমাদের রক্তে নানা রকম বর্জ্য পদার্থ এবং ক্ষতিকর পদার্থ ঘুরে বেড়ায়। এই রক্তকে পরিশোধন করার সবচেয়ে বড় অস্ত্র হচ্ছে রোজা।
কোষ পরিষ্কার
আমাদের শরীরে ৩০ ট্রিলিয়ন সেল বা কোষ আছে। এই কোষের ভিতরে প্রতিনিয়ত নানা রকম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান তৈরি হচ্ছে বিপাকক্রিয়ার ফলে এবং নানা ক্রিয়া-বিক্রিয়ার ফলে। শক্তি তৈরি হচ্ছে, হরমোন তৈরি হচ্ছে, এনজাইম তৈরি হচ্ছে। এগুলো তৈরির পাশাপাশি কিছু বর্জ্য পদার্থ বা টক্সিন তৈরি হচ্ছে। এইসব বর্জ্য পদার্থ বা টক্সিন দূর করার অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে ফাস্টিং বা রোজা। এটা নিয়ে গবেষণা করে যিনি নোবেল প্রাইজ পান, তিনি হচ্ছেন ড. ইয়োশিনোরি ওহসুমি। তিনিসহ অন্য বিজ্ঞানীরা এটার নাম দিয়েছেন অটোফেজি। এটি (অটোফেজি) যখন ১২ ঘণ্টা থেকে ১৬ ঘণ্টা হবে, এটি চমৎকার কাজ করবে। এটি যখন ১৮ ঘণ্টা, ২০ ঘণ্টা, ২২ ঘণ্টা, ২৪ ঘণ্টা হবে এক্সিলেন্ট।
টাইপ টু ডায়াবেটিস রোধে সহায়ক
আমরা জানি টাইপ টু ডায়াবেটিসের মূল কারণ হচ্ছে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স। সম্প্রতি দুটো গবেষণা বলছে, টাইপ টু ডায়াবেটিস রিভার্স করতে চাইলে সপ্তাহে অন্তত তিন দিন ২৪ ঘণ্টার ফাস্টিং করতে হবে। ২৪ ঘণ্টার ফাস্টিং কেউ যদি সপ্তাহে তিন দিন করেন, তবে তিনি টাইপ টু ডায়াবেটিস নিরাময় করতে সক্ষম হবেন। সেই সময় তার স্থূলতাও তার শরীর থেকে চলে যাবে।
দীর্ঘায়ু হওয়ায় সহায়তা
বিজ্ঞানীরা বলছেন, মাঝে মাঝে রোজা, উপবাস বা ফাস্টিং একজন মানুষের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি করে তাকে দীর্ঘজীবী করে। এই যে দেখেন না, হজরত শাহজালাল (র.) ১৫০ বছর বেঁচে ছিলেন। তিনি স্বল্পাহারি ছিলেন এবং প্রায়ই রোজা রাখতেন। তিনি এক বেলা খেতেন। এই যে ঢাকা থেকে কাছে সোনারগাঁয়ে ছিলেন বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারী। ১৬০ বছর বেঁচে ছিলেন। তিনিও স্বল্পাহারি ছিলেন। প্রায়ই উপবাস করতেন।
আমাদের প্রিয় মহানবী (সা.) সপ্তাহে দুই দিন রোজা রাখতেন; সোমবার এবং বৃহস্পতিবার। এ ছাড়াও তিনি প্রতি চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখে রোজা রাখতেন।
রোজা রাখলে কী ঘটে শরীরে
রোজায় দীর্ঘ সময় পাকস্থলী খালি থাকায় নানা ধরনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায় শরীর। ধাপে ধাপে সেটি কীভাবে হয়, তা প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে সুস্থতা নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট মাইন্ডবডিগ্রিন ডটকম।
প্রথম চার ঘণ্টা
খাওয়ার পর প্রথম চার ঘণ্টায় অভ্যন্তরীণ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সচল রাখার পাশাপাশি কোষ ও টিস্যুর বিকাশ ঘটায় শরীর। এ সময়ে দরকারি হরমোন ইনসুলিন উৎপন্ন করে অগ্ন্যাশয়। এর মধ্য দিয়ে রক্তে নিঃসৃত গ্লুকোজ ব্যবহারের পাশাপাশি পরবর্তী সময়ে ব্যবহারের জন্য কোষে বাড়তি শক্তিও মজুত করা যায়।
চার থেকে ১৬ ঘণ্টা
দেশভেদে সেহরি থেকে ইফতারের মধ্যকার সময়ে তারতম্য হয়। কোনো কোনো দেশে ১৬ ঘণ্টার বেশি সময় উপবাস থাকতে হয় রোজাদারদের।
১৬ ঘণ্টার মতো যারা রোজা রাখবেন, তাদের শারীরিক ক্রিয়ার দ্বিতীয় ধাপ শুরু হবে চতুর্থ ঘণ্টা থেকে। এ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় শক্তি জোগাতে সঞ্চিত অতিরিক্ত পুষ্টি ব্যবহার করা শুরু করে শরীর।
কোষে থাকা শক্তি ফুরিয়ে গেলে শরীর নজর দেয় সঞ্চিত চর্বি বা ফ্যাটে। শরীর থেকে চর্বি নির্গমন এবং শক্তি জোগাতে এগুলো পুড়িয়ে ফেলার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘কিটন বডিজ ফর এনার্জি’। এটি সাধারণত ঘটে ১৬তম ঘণ্টার কাছাকাছি সময়ে।
শরীর সঞ্চিত চর্বি পোড়ানোর পর্যায়ে কখন যাবে, সেটি নির্ভর করে রোজা বা উপবাস শুরুর আগে গ্রহণ করা খাদ্যের ধরনের ওপর। কেউ প্রচুর পরিমাণে শর্করা ও শ্বেতসার খাবার খেলে এ পর্যায় দেরিতে শুরু হবে। বিপরীতে কেউ চর্বি ও প্রোটিনজাতীয় খাবার খেলে আগেই সে পর্যায়ে পৌঁছাবে।
রোজা বা উপবাসের সবচেয়ে শক্তিশালী বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি অটোফেজি। ১৬ ঘণ্টার আশপাশের সময়ে এটি শুরু হয়।
অটোফেজি হলো এমন এক প্রক্রিয়া যার মধ্য দিয়ে কোষে থাকা মৃত বা ক্ষতিগ্রস্ত বস্তুগুলো সরিয়ে দেয় শরীর। এসব বস্তু বার্ধক্য, ক্যানসার ও দীর্ঘমেয়াদি রোগের কারণ হতে পারে।
১৬ থেকে ২৪ ঘণ্টা
রোজার সময় ১৬ ঘণ্টার বেশি হলে কোষে থাকা গ্লুকোজ ও লিভারে থাকা গ্লাইকোজেন এবং পেশিগুলো দ্রুত ক্ষীণ হতে থাকে। ফলে শক্তি জোগাতে জমানো চর্বি গলাতে হয় শরীরকে।
এ পর্যায়ে এসে শরীরে শক্তির চাহিদার অনেক বেশি পরিবর্তন দেখা যায় না। রোজাদার বা উপবাসে থাকা ব্যক্তি তখনও জেগে থাকা, দৈনন্দিন কাজ করা, লোকজনের সঙ্গে লেনদেন করা কিংবা ব্যায়াম করতে পারেন। এ কারণে উল্লেখযোগ্য মাত্রার শক্তির দরকার হতে পারে।
১৬ ঘণ্টার পরে শরীরে এএমপিকে নামের আরেকটি রাসায়নিক উৎপন্ন হয়। এটি শরীরজুড়ে অটোফেজি আরও বাড়িয়ে দেয়।
আরও পড়ুন:সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। আর হাসপাতালে নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ১২ জন।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো নিয়মিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে শনিবার সকাল থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার হিসাবে এ তথ্য জানানো হয়।
মারা যাওয়া দুজনের একজন ঢাকায় ও আরেকজন বরগুনায় ছিলেন।
চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ নিয়ে মোট ২০ জনের মৃত্যু হলো। যাদের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে মার্চ মাসেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, রোববার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মহানগরে ৫ রোগী ভর্তি হয়েছেন, বাকি ৭ জন ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে।
এ নিয়ে এবছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪৮৪ জনে। ভর্তি রোগীদের মধ্যে ঢাকায় ৫২০ এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৬৪ জন।
আরও পড়ুন:বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ‘বাংলাদেশের ক্যানসারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে (সেমিনার অন: ক্যানসার সিচুয়েশন অফ বাংলাদেশ)’ শীর্ষক মাসিক সেন্ট্রাল সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের এ-ব্লক অডিটোরিয়ামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল সেমিনার সাব-কমিটি এ সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলোজি বিভাগের চেয়াম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সালাউদ্দিন শাহ ও অনকোলোজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাদিয়া শারমিন একটি করে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
সেমিনারে বলা হয়, এক বিংশ শতাব্দীতে অসংক্রমক রোগের মধ্যে ক্যানসার অন্যতম। বিশ্বে ক্যানসার প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের দেশেও ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের কেমোথেরাপি, ইমিউনোথেরাপি এবং রেডিও থেরাপীর মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়।
এতে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল অনকোলোজি বিভাগের মাধ্যমে গত বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৪ হাজার রোগী বর্হিবিভাগে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে সাড়ে ৫ হাজার নতুনভাবে শনাক্ত রোগীর চিকিৎসা গ্রহণ করেন। বাকি প্রায় সাড়ে ৮ হাজার রোগী বিভিন্নভাবে এখানকার চিকিৎসা এবং পর্যবেক্ষণের আওতায় রয়েছেন।
এতে আরও বলা হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডে-কেয়ার সেন্টারে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৪ জন ক্যানসার রোগী প্রতিনিয়ত কেমোথেরাপি, ইমিউনোথেরাপি ও টার্গেটেড থেরাপী গ্রহণ করেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তঃবিভাগে সর্ব মোট নারী পুরুষ বিছানা সংখ্যা ৬০টি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, আমাদের কাছে ক্যানসার রোগীর কোনো ডাটা নেই। আমাদের দেশে ক্যানসারের কোনো স্ক্রিনিং করা হয় না। আজকের সেমিনার থেকে আমার একটাই চাওয়া, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনকোলজি বিভাগকে ক্যানসার বিভাগসহ, অকুলার অনকোলজি, আই, ইএনটি, সার্জিক্যাল অনকোলজি, গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজিসহ সব বিভাগে ক্যানসার রোগীদের রেজিস্ট্রি করার দায়িত্ব নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্যানেল অফ এক্সপার্ট হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, অনকোলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. নাজির উদ্দিন মোল্লাহ্সহ বিভিন্ন বিভাগের সিনিয়র শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সেন্ট্রাল সাব কমিটির চেয়ারম্যান ও মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন হৃদরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফয়সাল ইবনে কবির। সেমিনারে বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন স্তরের শিক্ষক, কনসালটেন্ট, চিকিৎসক ও রেসিডেন্টগণ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য