অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে যে অভিযান শুরু হয়েছে, সেটি নিষ্ফল হতে পারে বলে মনে করেন স্বাস্থ্য খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তারা বলছেন, বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাবের কারণে এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এর দায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের।
নীতিমালা অনুযায়ী, নিবন্ধন ছাড়াই স্বাস্থ্যসেবা খাতে বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের সেবা কার্যক্রম চালু করতে পারে। কার্যক্রম চলমান থাকা অবস্থায় ধাপে ধাপে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর থেকে ছাড়পত্র নিয়ে চূড়ান্তভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিবন্ধন নেয় তারা। এতে কেটে যায় কয়েক বছর।
এ কারণে দেশে অবৈধভাবে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে ওঠার সুযোগ পাচ্ছে বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, প্রক্রিয়াগত ত্রুটির কারণে নিম্নমানের সেবা দিয়েও মুনাফা করছেন এমন অনেক প্রতিষ্ঠান। অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রোগী হয়রানির অভিযোগ ওঠে প্রতিনিয়ত। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদারকির অভাব, লোকদেখানো অভিযান, নিজস্ব জনবল সংকটের সুযোগ নিচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।
তবে নিজেদের ব্যর্থতার দায় নিচ্ছে না স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সরকারি এই সংস্থাটি বলছে, তারা এসব অবৈধ স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে। একই সঙ্গে নিবন্ধন পেতে যারা আবেদন করেছে, তাদের দ্রুত সময়ে নিবন্ধন দেওয়ার কাজ চলমান রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে নিবন্ধিত স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা ক্লিনিক রয়েছে ১০ হাজার ৯১৭টি। তবে বর্তমানে কতটি প্রতিষ্ঠান আবেদন করে নিবন্ধনের অপেক্ষায় রয়েছে, তা জানাতে পারেনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা শুরুর দিকে যদি লক্ষ করি, বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে স্বাস্থ্যসেবার বিকাশ ঘটেছিল বিশৃঙ্খলভাবে। ফলে নিবন্ধন না নিয়েই আইনের বাইরে সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল এগুলো। প্রথম দিকে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম থাকলেও তা বাড়ছে প্রতিনিয়ত।’
বেসরকারি খাত অনেক বড় হয়ে যাওয়ায় বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নজরে এসেছে।
লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মানসম্মত করার কাজটি কখনই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ধারাবাহিকভাবে করেনি। এর আগে অনেকবার উদ্যোগ নিলেও ব্যর্থ হয়েছে তারা।’
এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠানে মানহীন চিকিৎসার কারণে মানুষের জীবন ঝুঁকিতে পড়ছে বলে মন্তব্য করেন লেলিন চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই এই খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসুক। এখন হাসপাতালগুলো বন্ধ করা হচ্ছে, এরপর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদারকিটা নিয়মিত চলতে থাকতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যদি এই যাত্রায় ব্যর্থ হয়, তবে এটাই হবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বড় ব্যর্থতা।’
বেসরকারি খাতে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হলে নিরবচ্ছিন্ন তদারকি প্রয়োজন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি বাস্তবায়নে রাজনৈতিক ও সংঘবদ্ধ প্রভাব মোকাবিলা করতে হবে।’
অভিযানে বন্ধ করে দেয়া ক্লিনিকগুলো পরে আবারও খুলে দেয়া হয়। ফলে অধিদপ্তরের অভিযানের কোনো সুফল সেভাবে আসছে না। মালিকপক্ষের চাপের কারণে অধিদপ্তরকে অনেক সময় অসহায় ভূমিকায় দেখা যায় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
কিন্তু যেখানে-সেখানে খুলে বসা ক্লিনিকগুলো বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে যে অভিযোগ আছে, সেটা মানতে রাজি নন বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান ভুইয়া।
তিনি বলেন, ‘কী কারণে প্রতিবার খুলে দেয়া হয় আমার জানা নেই। তবে এবার আপনারা দেখতেই পারবেন কী করা হবে। এবার সেই সুযোগ থাকবে না। তবে যেসব কারণে ক্লিনিক বন্ধ করা হয়েছে, সেসব কারণ যদি ফুলফিল করে তাহলে খুলে দেওয়া হবে।’
যেসব ক্লিনিকে চিকিৎসক নেই, নার্স নেই, রোগী সেবা দেয়ার কোনো অবকাঠামো নেই, সেসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিলে আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, ‘অনেকে হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালনা করছে, কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নিবন্ধনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। তাই যে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে সেই অভিযানে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমরাও চাই পথেঘাটে ক্লিনিক, দোকানের মধ্যে ক্লিনিক বন্ধ হোক।’
তিনি বলেন, যেসব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিবন্ধনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আবেদন করেছে, তাদের দ্রুততম সময়ে নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা হোক। কিছু হাসপাতাল মালিক আমাদের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে অনলাইনে নিবন্ধন প্রক্রিয়া অনেক জটিল। এই সেবা সহজ করতে ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে অভিযানে নামে অধিদপ্তর। কিন্তু সোমবার এসে হোঁচট খেয়েছে চলমান এই অভিযান। এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠান বন্ধে এ দিন রাজধানীতে কোনো অভিযান পরিচালনা করা হয়নি বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক অধ্যাপক বেলাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘জেলা শহরে হয়তো হতে পারে। অভিযান চলমান প্রক্রিয়া।’
তবে রাজধানীর বাইরে অভিযানে কোনো তথ্য দিতে পারেনি হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার এই পরিচালক।
অভিযান কতদিন চলবে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা তো অভিযান বন্ধ করিনি। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত চলমান থাকবে। তবে ক্রাশ প্রোগ্রাম যেটা ছিল, সেটা ক্রাশ প্রোগ্রাম হিসেবে চলবে না। এটা রুটিন প্রোগ্রাম হিসেবে চলমান থাকবে।’
২০২০ সালেও এমন অভিযানে নেমেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু মালিক পক্ষের চাপে অভিযান দেখেনি আলোর মুখ। ফলে অবৈধ অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হলেও পরে তা আবার চালু করা হয়।
এবারও ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে কিনা জানতে চাওয়া হয় অধ্যাপক বেলাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মালিকপক্ষের চাপে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অভিযান বন্ধ করেছে, এমন কোনো প্রমাণ আমার হাতে নেই।’
হাসপাতাল মালিকপক্ষের চাপে রোববার ডাকা অধিদপ্তরের সংবাদ সম্মেলনটিও স্থগিত করা হয়নি বলে দাবি করেন এই কর্মকর্তা। ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে তিনি বলেন, ‘অনিবার্য কারণবশত সংবাদ সম্মেলনটি বন্ধ করা হয়েছে। পরে যখন সংবাদ সম্মেলন করা হবে, তখন আপনাদের জানানো হবে।’
প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক অবৈধ স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে ওঠা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ব্যর্থতা কী না এমন প্রশ্নের জবাবে বেলাল হোসেন বলেন, ‘আমি এখানে আমাদের ব্যর্থতা দেখি না। আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। নতুন নতুন হাসপাতাল হবে নিবন্ধন নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা এটা স্বাভাবিক। করোনার কারণে গত দুই বছর হয়ত আমাদের তদারকি কিছুটা কম হয়েছে। বিপুল সংখ্যক বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বিপরীতে হাসপাতাল শাখার জনবল অনেক অপ্রতুল।’
আরও পড়ুন:বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল আবার পেছানো হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমানের আদালত গতকাল সোমবার আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর নতুন দিন ধার্য করেন।
এ পর্যন্ত এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা মোট ১২০ বার পিছিয়ে এসেছে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি নির্মমভাবে খুন হন। ঘটনার সময় বাসায় তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ উপস্থিত ছিলেন। সাগর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা এবং রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। মামলার প্রধান আসামিরা হলেন — রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মাসুম মিন্টু, কামরুল ইসলাম ওরফে অরুন, আবু সাঈদ, সাগর-রুনির বাড়ির দুই নিরাপত্তা রক্ষী পলাশ রুদ্র পাল ও এনায়েত আহমেদ এবং তাদের ‘বন্ধু’ তানভীর রহমান খান।
এদের মধ্যে তানভীর ও পলাশ জামিনে রয়েছেন, বাকিরা বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছেন।
তদন্ত প্রতিবেদন বারবার পিছিয়ে আসায় এ মামলার দ্রুত বিচার ও ন্যায়বিচার প্রত্যাশায় সংশ্লিষ্ট পক্ষের মাঝে উদ্বেগ বিরাজ করছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় পুলিশের সদস্যসহ ৩০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের শুনানি আজ।
সোমবার (২৮ জুলাই) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ এই শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ আজ এই মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি করবেন বলে জানানো হয়েছে।
এর আগে, শুক্রবার (২৫ জুলাই) কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ছয় আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
এই ছয় আসামি হলেন— সাবেক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরীফুল ইসলাম, রাফিউল, আনোয়ার পারভেজ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা ইমরান চৌধুরী আশেক।
গত ১০ জুলাই পলাতক ২৬ আসামিকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত।
এর আগে, ৩০ জুন আবু সাঈদ হত্যায় পুলিশের সদস্যসহ মোট ৩০ জনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী আন্দোলনের সময় ১৬ জুলাই বিকালে পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন। আবু সাঈদ ছিলেন জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত প্রথম শিক্ষার্থী।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ধানমণ্ডির বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ভূঁইয়া তার গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে কোন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।
তিনি জানান, তথ্য এলে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে ২০১০ সালে খায়রুল হক শপথ নেন। পরের বছর ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
২০১৩ সালে তাকে তিন বছরের জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই মেয়াদ শেষে কয়েক দফা একই পদে পুনর্নিয়োগ দেওয়া হয় সাবেক এই বিচারপতিকে।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে ১৩ আগস্ট তিনি আইন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছিল না।
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীসহ বহু হতাহতের ঘটনায় আজ বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করেছে দেশের সকল আদালত।
আজ সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৭ বিচারপতি আপিল বিভাগ তাদের বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করেন। এদিকে আজ হাইকোর্ট বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগেও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অন্যদিকে, প্রধান বিচারপতির আদেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. আজিজ আহমদ ভূঞা স্বাক্ষরিত অধস্তন আদালতে নীরবতা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে হৃদয়বিদারক এই দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে সরকার ২২ জুলাই সারা দেশে শোক দিবস ঘোষণা করেছে। দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশের সর্বস্তরের মানুষ শোক প্রকাশ করছেন। বিচার বিভাগীয় পর্যায়েও বিষয়টি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা আবশ্যক। এমতাবস্থায়, এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে ও তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ২২ জুলাই দেশের সকল অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। সেই সাথে দেশের সকল অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হবে। এছাড়া ২২ জুলাই হতে ২৪ জুলাই পর্যন্ত সকল জেলা জজশীপ ও ম্যাজিস্ট্রেসিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান স্থগিত রাখার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
সারাদেশে মুজিব শতবর্ষ পালন ও শেখ মুজিবুর রহমানের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল নির্মাণের আর্থিক হিসাব চেয়ে ৬৪ জেলায় চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগ অনুসন্ধানে উপপরিচালকের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি টিম অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালন করছে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের উপপরিজালক আকতারুল ইসলাম ব্রিফিংয়ে চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
দুদক জানায়, ৬৪ জেলা পরিষদ বরাবর পাঠানো চিঠিতে মুজিবর্ষ পালনে কত টাকা ব্যয় হয়েছে, ব্যয় করা মন্ত্রণালয়ের নাম, ব্যয়িত অর্থের পরিমাণ, ব্যয়ের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তার নাম পরিচয় জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া, জেলায় কতগুলো এবং কোথায় ম্যুরাল তৈরি হয়েছে, ম্যুরাল নির্মাণে কত টাকা খরচ হয়েছে, ব্যয়ের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তার পরিচয় জানতে চাওয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ পালন ও শেখ মুজিবের ১০ হাজারেরও বেশি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণ করে ওই অর্থ অপচয় ও ক্ষতিসাধন করার অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন। তাই রেকর্ডপত্র দ্রুত দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।
বিভিন্ন দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যনুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর আগে দেশে শেখ মুজিবুর রহমানের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল, ভাস্কর্য ও প্রতিকৃতি স্থাপন করে আওয়ামী লীগ সরকার। টানা ১৫ বছর ধরেই ভাস্কর্য, ম্যুরাল ও প্রতিকৃতি তৈরির মহোৎসবে মেতে উঠেছিল দলটি। অভিযোগ রয়েছে, অপ্রয়োজনীয় ম্যুরাল ও ভাস্কর্য তৈরিতে ৪ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়ে থাকতে পারে। শুধু তাই নয়, পুরো প্রকল্পই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
সূত্র জানায়, জেলা পরিষদে পাঠানোর আগে একই চিঠি বাংলাদেশ বেতার, কৃষি গবেষণা কাউন্সিলেও পাঠানো হয়েছে।
গত বছরের আগস্টে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর মুজিববর্ষ পালনে অর্থ অপচয় ও এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করা হবে বলে জানিয়েছিল দুদক।
র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি), অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান বলেছেন, মব ভায়োলেন্স বা মব সন্ত্রাস করে এ দেশের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করা যাবে না। অপরাধী যেই হোক বা যে দলেরই হোক, আমরা তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করব।
শনিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে ঘটে যাওয়া ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবস্থা গ্রহণের অগ্রগতিসহ আরও কয়েকটি ঘটনায় অপরাধীদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে প্রেস ব্রিফিং করেন র্যাবের ডিজি। ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, ‘র্যাব এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেকোনো ধরনের অপরাধ সংঘটনের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের বিষয়ে তৎপর রয়েছে। দেশে বিগত কয়েক মাসে ঘটে যাওয়া অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের র্যাব গ্রেপ্তার করেছে। তাদের যেন শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়, সে ব্যাপারে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি। মব ভায়োলেন্স সৃষ্টির অপরাধে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ জন অপরাধীকে র্যাব আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে।’
‘গত ২ জুলাই লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানায় সন্ত্রাসী কর্তৃক মব সৃষ্টির মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের আহত করে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমরা ৩ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। এ ছাড়াও গত ৩ জুলাই কুমিল্লার মুরাদনগরে ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় একই পরিবারের মা ও দুই সন্তানের ওপর মব ভায়োলেন্সের অযাচিত ঘটনায় ৬ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
সলিমুল্লাহ মেডিকেলের সামনে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র্যাব কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত এজাহারনামীয় ৪ নম্বর আসামি আলমগীর (২৮) এবং ৫ নম্বর আসামি মনির ওরফে লম্বা মনিরকে (৩২) আমরা গতকাল (শুক্রবার) রাজধানীর কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।’
‘এ ঘটনায় আমরা ছায়া তদন্ত করছি, আর পুরো বিষয়টি দেখছে ডিএমপির তদন্ত বিভাগ।’
র্যাবের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বরখাস্ত হওয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুতির আদেশ অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে জ্যেষ্ঠতা ও অন্যান্য সুবিধাসহ তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হাইকোর্টের রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বুধবার (৯ জুলাই) বিচারপতি রেজাউল হাসান ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
তিন বছর আগে ২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়। কোনো ধরনের কারণ দর্শানো ছাড়াই কোনো কর্মীকে চাকরি থেকে অপসারণ-সংক্রান্ত দুদক কর্মচারী বিধিমালার ৫৪(২) বিধির বৈধতা নিয়ে ও চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশনা চেয়ে একই বছরের ১৩ মার্চ শরীফ রিট করেন।
প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক পদ থেকে শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুতির আদেশ কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বেতন, সব সুবিধাসহ তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয় রুলে। দুদকসহ বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
রুলের ওপর গতকাল মঙ্গলবার শুনানি শেষে আদালত আজ রায়ের জন্য দিন রেখেছিলেন। রুল যথাযথ (অ্যাবসোলিউট) ঘোষণা করে আজ রায় দেওয়া হলো।
রায়ের সময় শরীফ উদ্দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালতে শরীফ উদ্দিনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. সালাহ উদ্দীন দোলন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মিয়া মোহাম্মদ ইশতিয়াক। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আসিফ হাসান।
রায়ের পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দীন দোলন বলেন, শরীফ উদ্দিনের চাকরিচ্যুতির আদেশ অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। জ্যেষ্ঠতা ও সব সুযোগ-সুবিধাসহ তাঁকে চাকরিতে ৩০ দিনের মধ্যে পুনর্বহাল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দুদকের আইনজীবী আসিফ হাসান বলেন, রায়ের বিষয়টি দুদককে জানানো হবে। আপিল করবে কি না, সে বিষয়ে দুদক সিদ্ধান্ত নেবে।
মন্তব্য