ক্যানসারের চিকিৎসা হয় এমন হাসপাতালগুলোতে মেডিক্যাল ফিজিসিস্ট বা চিকিৎসা পদার্থবিদদের কাজে লাগানো জরুরি বলে মনে করছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল ফিজিক্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমপিএ)।
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে চিকিৎসায় পদার্থবিদ্যার প্রয়োগ নিয়ে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার বিএমপিএর আলোচকরা এ মত দেন।
বিএমপিএ ও বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনের এবারের প্রতিপাদ্য ‘ক্যানসার সারাতে মেডিক্যাল ফিজিক্সের সচেতনতা তৈরি’।
সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা ইউনিভার্সিটির মেডিক্যাল ফিজিক্স অ্যান্ড ডসেমেট্রির পরিচালক অধ্যাপক সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, চিকিৎসা পদার্থবিদদের কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উন্নত দেশগুলোর তুলনায় অনেক পিছিয়ে। পাশাপাশি সব হাসপাতালে যেসব আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতির ব্যবহার হচ্ছে, তার সঠিক ও দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহারের জন্য বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ দেয়া দরকার। এ বিষয়ে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন চেয়ারম্যান ড. মো. আজিজুল হক বলেন, রেডিয়েশন থেরাপির মাধ্যমে ক্যানসারের মানসম্পন্ন চিকিৎসা নিশ্চিত করতে গবেষণা বাড়াতে হবে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ক্যানসার রিসার্চ অ্যান্ড হসপিটালের (এনআইসিআরএইচ) পরিচালক অধ্যাপক ডা. স্বপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, স্বাস্থ্যসেবায় চিকিৎসায় পদার্থবিদ্যার প্রয়োগ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। এক্সটার্নাল-বিম রেডিওথেরাপি বা ব্র্যাকিথেরাপির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের চিকিৎসা হয়। চিকিৎসা পদার্থবিদ্যা নিয়ে গবেষণা বাড়ানো অপরিহার্য।
তিনি বলেন, রেডিয়েশন থেরাপি ক্যানসার চিকিত্সার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে রয়ে গেছে। ক্যানসার রোগীদের প্রায় ৫০ শতাংশ রেডিয়েশন থেরাপি নেন।
এনআইসিআরএইচের পরিচালক আরও বলেন, বাংলাদেশে যোগ্য চিকিৎসা পদার্থবিদের অভাবে রোগীরা রেডিয়েশন থেরাপির সর্বোত্তম সুবিধা পান না। চিকিৎসা পদার্থবিদ্যা সম্পর্কে সচেতনতার অভাব থাকায় এ সমস্যাটি নজরে আসেনি।
সিয়াম সাধনার মাস রমজানে ভোররাতে সেহরি খেয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকেন মুসলিমরা। দীর্ঘ এ সময়ে খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ না করায় পাকস্থলীসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিশ্রাম পায়। এতে শরীরে নানাবিধ ইতিবাচক পড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়, কিন্তু সেহরি ও ইফতারে অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণসহ ভুল জীবনাচরণের কারণে অনেকে সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন।
রমজান মাসজুড়ে সুস্থ থাকতে করণীয় ও বর্জনীয়গুলো বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তুলে ধরেছে বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারটান)। সেগুলো নিউজবাংলার পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করা হলো।
সেহরিতে করণীয়
১. সামর্থ্য অনুযায়ী আঁশজাতীয় খাবার (লাল চাল, লাল আটা, শাকসবজি, বিচিজাতীয় শস্য তথা শিমের বিচি, মটরশুটি) গ্রহণ করা প্রয়োজন। আঁশজাতীয় খাবার ধীরে হজম হয়। ফলে ক্ষুধা অনুভব কম হয় এবং পর্যাপ্ত শক্তি পাওয়া যায়।
২. বেশি খাওয়ার মানসিকতা পরিহার করতে হবে। ভাতের পরিমাণ কমিয়ে শাকসবজি এবং মাছ, মাংস ও অন্যান্য তরকারি গ্রহণ করা উচিত হবে।
৩. প্রতিদিনের আমিষের চাহিদা পূরণ ও দেহের ক্ষতিপূরণে ছোট-বড় মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, দুধ ও দুধজাতীয় খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন।
৪. রোজায় পানিশূন্যতা রোধে সহজে হজম হয় এমন শাকসবজিকে (যেমন: লাউ, ঝিঙে, পটল, চিচিঙ্গা, চালকুমড়া) অগ্রাধিকার দেয়া যেতে পারে।
৫. সেহরি খাওয়ার পর টক বা মিষ্টি জাতীয় ফল রাখা ভালো।
সেহরিতে বর্জনীয়
১. সেহরিতে চা ও কফি পান না করাই ভালো। এগুলোতে থাকা ক্যাফেইন তৃষ্ণার সৃষ্টি করে, অ্যাসিডিটি উৎপন্ন করে এবং খাদ্যের পুষ্টি পরিশোষণে বাধা দেয়।
২. অতিরিক্ত তেল, মসলা ও চর্বিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা বাঞ্ছনীয়।
৩. তেহারি, খিচুড়ি, বিরিয়ানির মতো খাবার সেহরিতে না খাওয়াই ভালো। এসব খাবার হজম করতে দেহকে প্রচুর পানি খরচ করতে হয়, যা রোজাদারকে তৃষ্ণার্ত করে।
ইফতারে করণীয়
১. ইফতারে পানীয় হিসেবে ঘরে তৈরি তাজা ফলের শরবত, ডাবের পানি, তোকমা, ইসবগুল প্রভৃতি গ্রহণ করা যেতে পারে, যা দেহের পানি ও লবণের (ইলেকট্রোলাইট) ভারসাম্য রক্ষা করতে সহায়তা করবে ও কোষ্ঠ্যকাঠিন্য প্রতিরোধে কাজ করবে।
২. যেকোনো মিষ্টি ফল (যেমন: খেজুর, তরমুজ, কলা প্রভৃতি) গ্রহণ করা যেতে পারে, যা দেহের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ লবণের চাহিদা পূরণ করতে সহায়তা করবে।
৩. পুষ্টিসমৃদ্ধ ও সহজে হজম হয় এমন খাবার ইফতারে রাখা যেতে পারে। যেমন: সিদ্ধ ছোলা, দই-চিড়া, সবজি খিচুড়ি, বিভিন্ন ধরনের বাদাম এবং শসা-টমেটোর মিশ্রণে তৈরি সালাদ।
৪. ইফতারে আমিষের চাহিদা পূরণের জন্য ডিম বা ডিমের তৈরি খাবার গ্রহণ করা যেতে পারে।
৫. ইফতারে খাবার খেতে হবে ধীরে ও ভালোভাবে চিবিয়ে, যা খাবার সহজে হজমে সহায়ক হবে।
ইফতারে বর্জনীয়
১. অধিক মসলা ও কৃত্রিম রংযুক্ত খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চললে ইফতার পরবর্তী বদহজম, অস্বস্তি ও অন্যান্য শারীরিক জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
২. ইফতারে অতিরিক্ত ভাজাপোড়া বা গ্রিল করা খাবার, যেমন: মাংসের ফ্রাই, গ্রিল বা শিক কাবাব পরিহার করা প্রয়োজন। এসব খাবারে তৈরি হওয়া ট্রান্সফ্যাট হৃদরোগ, স্ট্রোকসহ বিভিন্ন প্রাণঘাতী অসংক্রামক রোগের অন্যতম প্রধান কারণ।
৩. অতিরিক্ত লবণ ও চিনিযুক্ত খাবার ও পানীয় (যেমন: চিপস, জিলাপি, কার্বোনেটেড সফট ড্রিংকস, শিঙাড়া, সমুচা, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, কেক-পেস্ট্রি, পিৎজা, বার্গারসহ যাবতীয় জাংক ফুড) এড়িয়ে চলা ভালো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সাম্প্রতিক সমীক্ষায় উঠে এসেছে, অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার গ্রহণের জন্য ২০৩০ সাল নাগাদ ৭০ লাখ মানুষ হৃদরোগ বা স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যাবে।
ইফতার ও সেহরির মধ্যবর্তী সময়ে করণীয়
১. দেহের পানির চাহিদা পূরণে ইফতার ও সেহরির মাঝের সময়ে আড়াই থেকে তিন লিটার বা ৬ থেকে ১৪ গ্লাস নিরাপদ পানি পান করতে হবে। রোজায় পর্যাপ্ত পানি পান করলে মাথাব্যথা, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়েও সহায়ক হবে।
ইফতার ও সেহরির মধ্যবর্তী সময়ে বর্জনীয়
১. রাতের খাবার গ্রহণের পরে সঙ্গে সঙ্গে ঘুমাতে যাওয়া পরিহার করতে হবে।
২. সেহরি পর্যন্ত রাত জেগে থাকা পরিহার করুন। পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিশ্চিত করুন।
আরও পড়ুন:সিয়াম সাধনার মাস রমজানে ভোররাতে সেহরি খেয়ে দিনভর খাদ্য ও পানীয় বর্জন করে সংযম পালন করবেন বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলিমরা। এ সময়টা যেহেতু অনেক লম্বা, সে ক্ষেত্রে কী খেলে দিনটা ভালো কাটবে, তা জানা জরুরি।
সেহরিতে কোন ধরনের খাবার গ্রহণ ও কোনগুলো বর্জন করা উচিত, তা এক ভিডিওতে জানিয়েছেন মনোদৈহিক ও জীবনযাপনবিষয়ক রোগের থেরাপিস্ট এবং কোয়ান্টাম হার্ট ক্লাবের কোঅর্ডিনেটর ডা. মনিরুজ্জামান। পরামর্শগুলো তার ভাষায় উপস্থাপন করা হলো নিউজবাংলার পাঠকদের সামনে।
অতিভোজন নয়
সেহরিতে উঠে আমাদের প্রথম মনে হয়, ওরে সর্বনাশ! সারা দিন কিছু খাব না! একটু বেশি করে খেয়ে নিই। না হলে না জানি কত কষ্ট হবে। অতএব গলা পর্যন্ত আমরা খেয়ে ফেলি। ভাত বা রুটি, সাথে প্রচুর শাকসবজি থাকে। মাছ-মাংস থাকে, ডিম থাকে, এটা সেটা থাকে, ভাজাপোড়া থাকে। শরীরের প্রথম কষ্ট শুরু করলেন আপনি এই পুরো ক্ষতিকর খাবার দিয়ে।
খাদ্যতালিকা
তো সেহরিতে কী করবেন? সেহরিতে আপনি এমন খাবার খাবেন যেন সারা দিন আপনি ঝরঝরে থাকতে পারেন, তরতরে থাকতে পারেন এবং প্রাণবন্ত থাকেন। সারা দিন পিপাসার কষ্ট যদি আপন না পেতে চান, সারা দিন যদি ঝরঝরে থাকতে চান, তাহলে সেহরিতে আমিষ বা প্রোটিন খাওয়া বন্ধ করুন। মাছ, মাংস, ডিম বন্ধ রাখুন। খাবেন এগুলো; ইফতারে খাবেন।
তাহলে কী খাবেন সেহরিতে আর কী বর্জন করবেন? কোনো রকম ভাজাপোড়া, ফাস্ট ফুড এগুলো খাবেন না। তাহলে সেহরিতে আমরা কী খাব?
খুব হালকা খাবার। স্টোমাকের (পাকস্থলি) জন্য সফট, দেহের জন্য সফট এবং আপনার জন্য হেলদি। কী খাবার? আপনি অল্প একটু ভাত নেন এবং সবজি নেন। ব্যস। তারপর পানি পান করুন। হয়ে গেল আপনার সেহরি অথবা আপনি দুই-তিনটা খেজুর নিন। একটা বা দুটো কলা নিন। ব্যস। তারপর পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
এর বাইরে এক মুঠো বা দুই মুঠো চিড়া ভিজিয়ে রাখুন। এর সাথে টক দই দিয়ে, খেজুরের গুড় দিয়ে মিশিয়ে চমৎকারভাবে চিড়া, টক দই খেয়ে ফেলুন।
সারা বছর যেন আমার ইমিউন সিস্টেম (রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা) তরতাজা থাকে, ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ যেন করতে পারি, সেই জন্য সেহরিতে প্রত্যেক রাত্রে এক কোয়া কাঁচা রসুন এবং আদা চা চামচ কালোজিরা খাবারের সাথে মিশিয়ে চিবিয়ে খেয়ে ফেলেন। আর পর্যাপ্ত পানি পান করুন সাথে।
আপনার যদি অনেক ওজন বেশি থাকে, আপনার যদি টাইপ টু ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে আপনি কী করতে পারেন? ২৪ ঘণ্টার ফাস্টিং আপনি রাখতে পারেন সপ্তাহে তিন দিন। তাহলে পুরো রমজানজুড়ে ১২ কে ১৪ দিন আপনি ২৪ ঘণ্টার ফাস্টিং। কীভাবে? সেই ক্ষেত্রে আপনি সেহরি করবেন শুধু পানি দিয়ে। পর্যাপ্ত পানি পান করবেন। এটাই হলো আপনার জন্য সেহরি, আবার ইফতার। পরের দিন ভোররাত্রে পানি, আবার ইফতার। এই ২৪ ঘণ্টা ফাস্টিং সপ্তাহে তিন দিন। পরপর তিন দিন। আবার চার দিন নরমালি। নরমাল সেহরি ইফতার। আবার পরপর তিন দিন ২৪ ঘণ্টার ফাস্টিং।
সম্প্রতি দুটি গবেষণা বলছে, সপ্তাহে তিন দিন ২৪ ঘণ্টার ফাস্টিং আপনার ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স রিভার্স করে আপনার টাইপ টু ডায়াবেটিস নিরাময় করতে সক্ষম হবে।
আরও পড়ুন:চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে সিয়াম সাধনার মাস রমজান। এ মাসে অন্য অনেকের মতো ডায়াবেটিস রোগীরাও রোজা রাখবেন। সে ক্ষেত্রে তাদের করণীয় ও বর্জনীয়গুলো এক ভিডিওতে তুলে ধরেছেন ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাকলায়েন রাসেল। পরামর্শগুলো তার ভাষায় পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হলো।
প্রস্তুতি
সবাই যারা সামর্থ্যবান মুসলিম, যাদের ওপর রোজা ফরজ হয়েছে, আমরা সবাই আসলে চাই এ সময়ে রোজা রেখে ওপরওয়ালার নৈকট্য লাভের যে সুযোগ, সেটা থেকে যেন আমরা কেউই বঞ্চিত না হই। এরই অংশ হিসেবে আমরা আসলে প্রতি বছর রোজা রাখি; রোজা রাখছি আমরা অনেকেই, কিন্তু যারা ডায়াবেটিস রোগী, তাদের মধ্যে অনেকগুলো প্রস্তুতির বিষয় আছে। তাদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত অনেকগুলো গাইডলাইন প্রয়োজন।
যেমন: প্রথম কথাই হচ্ছে আপনি রোজা রাখবেন রমজান মাসে টানা এক মাস। আপনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী। প্রস্তুতি শুরু করবেন কখন? উত্তরটা কিন্তু তিন মাস আগে। সেটা কী? আমি রোজা শুরু করার আগে আমার চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে নেব যে, ‘আমি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত একজন রোগী। আমি রোজা রাখব। আমার জন্য কী কী উপদেশ আছে?’
উনি (চিকিৎসক) তখন আপনাকে চেকআপ করবেন এবং আপনার রেকর্ডগুলো দেখবেন, আপনার ডায়াবেটিস লেভেলটা ফ্লাকচুয়েট করে কি না, ওপরে-নিচে হয় কি না। আপনার কিডনিটা ভালো আছে কি না, আপনার অন্য কোনো রোগ আছে কি না। এগুলো যদি দেখে মনে হয় আপনি স্ট্যাবল (স্থিতিশীল) আছেন, সে ক্ষেত্রে আপনাকে কিন্তু উপারা সাজেস্ট করবেন যে, ‘হ্যাঁ, আপনি রোজা রাখেন। সে ক্ষেত্রে আপনার কোনো সমস্যা নাই।’
এখন যেহেতু হাতে আর সময় নেই, এই ভিডিওটি প্রথমবার যারা দেখলেন, তাদের হাতে মাত্র কয়েক দিন, কয়েক ঘণ্টা বাকি আছে। আমি তাদের ক্ষেত্রে বলব, আপনি তো জানেন আপনার রিসেন্টলি ডাটাগুলো কেমন, আপনার ডায়াবেটিস কেমন থাকছে, কমছে না বাড়ছে, ফ্লাকচুয়েশনটা কেমন হয়, এটা আপনি যদি মাথায় রাখেন, আমার মনে হয় টেনশন করার কোনো কারণ নাই।
সেহরি
এখন আসেন যে, কিছু টিপস দিব, খুব গভীরে যাব না। একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি যদি মনে করেন যে, আমি সুস্থ আছি, আমার সব ঠিক আছে, আমি রাখতে চাই, কোনো বাধা নেই। আপনার যদি অন্য কোনো খারাপ কন্ডিশন না থাকে, রাখতে পারেন। রাখার ক্ষেত্রে যদি আমরা সেহরির কথা চিন্তা করি, সেহরিতে কী খাব? একদম সরাসরি কথা।
সোজা কথা হচ্ছে আপনি সেহরিতে যে খাবারটি গ্রহণ করবেন, আপনাকে মাথায় রাখতে হবে যে, আমি ১৪/১৫ ঘণ্টা একেবারেই না খেয়ে থাকব। তার মানে সেহরির সময় আমি এমন একটা খাবার গ্রহণ করব, যেটা মোটামুটি আমাকে লম্বা সময় এনার্জি দেয়।
সে ক্ষেত্রে কিন্তু দেখবেন যে, ভাতের থেকে রুটি কিন্তু বেশি সময় মানুষের শরীরে শক্তির জোগান দেয়। ভাত কিন্তু খুব দ্রুত শক্তি দেয় এবং খুব দ্রুত নিঃশেষ হয়ে যায়। সে কারণে আমরা ভাতকে খুব একটা সাজেস্ট করি না।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আমরা সেহরির ক্ষেত্রে বলি আপনি একটু অপেক্ষা করেন। একেবারে আজান হওয়ার, অর্থাৎ সেহরির সময় শেষ হওয়ার একেবারে শেষ মুহূর্তে গিয়ে খাবেন। তাহলে আপনার জন্য সারা দিন রোজা রাখতে কষ্ট হবে না। তখন ডিউরেশনটা কম হবে। অনেকে রাত একটা-দুইটার মধ্যে খেয়ে ফেলেন। এটা ঠিক না। বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিস রোগী।
সে ক্ষেত্রে খাবারের আইটেমের ক্ষেত্রে যদি সকালবেলা প্রবলেম না হয়, তারা যদি ফলমূল রাখতে পারেন, যদি খেজুর রাখেন, রুটিটা রাখেন, আমার মনে হয় যে, তিনি অনেক বেশি পুষ্টি বা এনার্জি নেয়ার একটা অবস্থায় থাকবেন।
সারা দিন না খেয়ে থাকব, সে জন্য কোনো অবস্থাতেই পেট ভরে খাব, চান্স পেয়েছি খেয়ে নিই, এমনটা যেন না হয়। তাতে দেখা যাবে যে, আপনার সকালবেলা পেট খারাপ হবে। তখন কিন্তু আপনি রোজাটাও রাখতে পারবেন না; প্রবলেমটা আরও বাড়বে। এমনিতেই অনেকের পেট খারাপ হয়। কারণ খাবারের প্যাটার্নটা চেঞ্জ হচ্ছে।
সকালবেলা আপনি ঘুম থেকে উঠবেন। সারা দিন থাকলেন। ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ভয় কখন? ভয়টা হচ্ছে বিকেলের দিকে।
তার কিন্তু হঠাৎ করে হাইপো (রক্তে শর্করা কমে যাওয়া) হয়ে যেতে পারে। অনেক কমে যেতে পারে। কমে গিয়ে তিনি কিন্তু অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। যদি মাথা ঘোরায়, চোখে অন্ধকার দেখেন, পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়, ঘাম হয়, এ সময় তো আল্লাহর বিধানই আছে। রোজা না রাখা আপনার জন্য সেই সময় দায়িত্ব। সেটা আপনি মেনে নিলেন।
টেস্ট
এখন সারা দিনে আপনি রোজা রাখছেন। মনে রাখতে হবে যে, আমি যে রোজা রাখলাম, আমার এখন তাহলে করণীয়টা কী? আমার তো পরীক্ষা করতে হবে। গ্লুকোজ টেস্ট করতে হবে। আমি রোজা রেখেছি। আমি কি পারব? এটার জন্য বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি অনেক আগেই সমাধান দিয়েছে। তারা বিশ্বের আলেম, বাংলাদেশের আলেমদের সাথে কথা বলে একটা চুক্তিনামা করেছে এবং তারা প্রমাণ করে দেখিয়েছে যে, ডায়াবেটিস রোগী যদি শুধু নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য ব্লাড টেস্ট করে, রক্ত গড়িয়ে পড়ে না, তাহলে কিন্তু রোজার ক্ষতি হয় না। ফলে আমাদের সম্মিলিত আলেম সমাজের যে মতামত, সেটা অনুযায়ী কিন্তু যদি আপনার প্রয়োজন হয় জীবন রক্ষার্থে এবং একই সঙ্গে রোজা রাখার স্বার্থে, টেস্ট করতে পারেন। তাতে কোনো ক্ষতি নাই।
ইফতার
ইফতারের সময় আপনি কীভাবে কী করবেন? এটা জটিলতর একটা বিষয় যে, ইফতারের সময় তো আমার একটু ভাজাপোড়া না খেলে হবে না। আবার ওষুধ নিতে হবে। আবার একটু শরবত না খেলে কী রকম হয়? বলা হয়ে থাকে, যারা ডায়াবেটিস রোগী চেষ্টা করেন, যত কমসংখ্যক, একেবারে না খেলে আরও ভালো। ভাজাপোড়াটা অ্যাভয়েড করাটা সবচেয়ে ভালো।
যদি শরবতের দিকে আসি, চিনির শরবত কোনো দরকারই নাই। আপনি যদি ডাব একটা ম্যানেজ করতে পারেন, খুবই ভালো। যদি ডাব ম্যানেজ করতে না পারেন, একটু ফ্রুটগুলোকে জুস করে নিলেন, খুব বেশি সেখানে চিনি যোগ করলেন না, তাহলে কিন্তু আপনি অনেকটা ভালো খাবার গ্রহণ করলেন। চেষ্টা করবেন যে, ইফতারের পরপর কিছুটা বিশ্রাম নিতে।
রাতের খাবার
এখন নেক্সট কোশ্চেন আসে যে, আমি রাতের খাবারটা খাব কি খাব না? এটা আপনার ওপর নির্ভর করে। আপনি যদি মনে করেন যে, আমি ভালোভাবে ইফতার করেছি, আমি আর খেতে চাই না, ওকে; নো প্রবলেম। এটা নিয়ে টেনশন করার কোনো দরকার নাই।
এরপর কোশ্চেন আসে যে, ডায়াবেটিস রোগীর তো একটা হাইপো হওয়ার ভয়। আরেকটা কী ভয়? আরেকটা ভয় হচ্ছে তার শরীরে পানিশূন্যতা হতে পারে। সারা দিন তিনি পানি গ্রহণ করেননি। সেই ক্ষেত্রে তাদের জন্য টিপস হচ্ছে আপনি ইফতারের পর থেকে একবারে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টায় পানি গ্রহণ করবেন। তাতে কী হবে? আপনার ডিহাইড্রেশনটা ফিলআপ (পানিশূন্যতার ঘাটতি পূরণ) হয়ে যাবে এবং সকালবেলা (ভোররাত) আপনি যখন সেহরি করতে আবার উঠবেন, তার আগে কিন্তু টোটালি ফিলআপ। আপনি একদম ফিল ফ্রি।
ব্যায়াম
এবার আসল ব্যায়ামের কথা। সব মানুষেরই ব্যায়ামের প্রয়োজন। ডায়াবেটিস রোগীরা বাধ্য হন ব্যায়াম করতে। এ কারণে আমাদের শ্রদ্ধেয় ইব্রাহিম স্যার বলতেন, ‘আপনার ডায়াবেটিস হয়েছে। তার মানে আপনি ভাগ্যবান। কারণ আপনার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেড়ে গেল। কারণ সাধারণ মানুষ নিয়ম মানতে চায় না। ডায়াবেটিস হলে তখন সবাই নিয়ম মানে। তার আয়ু আল্লাহ হয়তো বা বাড়িয়ে দেন অথবা যতদিন তার আয়ু আছে, তিনি সুস্থ থাকেন।’ সো এটা এক দিক থেকে গুড নিউজ, ডায়াবেটিস আছে।
ব্যায়ামের ক্ষেত্রে যেটা করণীয়, সেটি হলো যে আপনার ব্যায়ামের সময় মনে রাখতে হবে যে, আমি অবশ্যই রাতের দিকে ব্যায়াম আমি করতে পারি, কিন্তু যদি আপনি চিন্তা করেন আমি ২০ রাকাত নামাজ, তারাবির নামাজ একেবারে ২০ রাকাতই প্রতিদিন পড়ব, কোনো দরকার নেই তাহলে (বাড়তি ব্যায়ামের)।
ওইটাই বড় ব্যায়াম। নতুন করে ব্যায়ামের আর কোনো প্রয়োজন নেই। সো যিনি ২০ রাকাত নামাজ পড়ছেন, তার কোনো দরকার নাই আলাদা করে ব্যায়াম করার।
কেউ যদি না মনে করেন যে, না আমার আলাদা করে করতেই হবে, তাহলে ইফতারের পরে হালকা রেস্ট নিয়ে উঠে একটু হালকা হাঁটাহাঁটি করলেন। এটাই এনাফ। এখন তো আমরা সবাই ঘরেই থাকছি; ঘরেই নিয়ে নিলে হবে।
ওষুধ
ওষুধ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে আমরা যেটা বলি যে, আপনার সকালটা। আপনি সকালবেলাতে একটা ওষুধ গ্রহণ করতেন, ওইটা হয়ে যাবে আপনার ইফতারের সময়। তাই না? আর রাতেরটা হয়ে যাবে সেহরির সময়। তাইলে ধরেন যে, আপনি সেহরির সময় যে ডোজটা নেবেন, সেটা আপনি অরিজিনাল যে ডোজটা নিতেন, তার অর্ধেক নেবেন। অর্ধেক নেবেন কী কারণে? সেহরির সময় যদি আপনি ফুল ডোজ নিয়ে নেন, তাহলে কী হবে? সারা দিনে খুব দ্রুতই কিন্তু সুগারটা ফল করতে পারে। আমরা হাফ ডোজ দিচ্ছি তাইলে কী কারণে, যাতে বিকালের দিকে আপনি হাইপো না হন।
আপনার গ্লুকোজ লেভেল যাতে ফল না করে। সে কারণে আপনি রিগুলার ডোজ যেটা রাতে নিচ্ছেন, সেটার আপনি অর্ধেক নেবেন।
আর ইফতারে...আপনারা জানেন যে, কিছু কিছু ওষুধ আমরা ইফতারের, মানে খাওয়ার আধা ঘণ্টা পরে নিই। যেমন: সকালের নাশতাটাই তো আপনার ইফতার, তাই না? সকালের নাশতাটা ইজ ইকোয়াল টু ইফতার। তাহলে সকালে নাশতার আধা ঘণ্টা আগে আপনি ওষুধ খেতেন অন্য সময়। এখন কী করবেন?
খুবই সহজ। সেটা হলো আপনি পানিটা মুখে দিয়েই ওষুধটা নিলেন বা ইনসুলিনটা নিলেন, নিয়ে আপনি ইফতারটা দ্রুতই করে ফেলুন। এখানে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করার কোনো দরকার নাই।
আরও পড়ুন:গরম মানেই ডিহাইড্রেশন, চিকেন পক্স, জ্বর, ঠান্ডা, পেটের সমস্যা-এ রকম নানা অসুস্থতা। সঙ্গে চুল পরা, ঘামাচি, এলার্জির বাড়তি উপদ্রব তো আছেই। তাই এই তাপদাহে নিজেকে সুস্থ ও ফিট রাখতে প্রয়োজন সঠিক খাবার গ্রহণ, আরামদায়ক পোশাক নির্বাচন এবং নিয়মিত ত্বকের যত্ন।
খাবারে সতর্কতা
সুস্থ থাকতে প্রথমেই চলে আসে খাবারের ব্যাপারে সতর্কতা। তাই কী কী খাবার খেলে প্রচণ্ড গরমেও সুস্থ থাকতে পারবেন সে ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার নেটওয়ার্ক (এনএইচএন)-এর সিনিয়র পুষ্টিবিদ তাকলিমা আক্তার।
প্রথমেই প্রচুর তরল খাবার খেতে হবে গরমে। কারণ এই সময় শরীর থেকে ঘাম এর সাথে লবণ চলে যায়। এতে ডিহাইড্রেশন হয়। তার জন্য পানি, শরবত, ডাবের পানি, এবং ঘরে তৈরি ফলের জুস পান করুন। সবুজ শাকসবজি, ফল, নারকেল বেশি করে খেতে শুরু করুন।
ময়দার রুটি না খেয়ে লাল আটার রুটি খান। এটা বেশি স্বাস্থ্যকর। ব্রেকফাস্টে গম জাতীয় খাবার যেমন নুডলস, ব্রেড, ছাতু রাখতে পারেন। কড়াইশুঁটি, ব্রকোলি, ফুলকপি, অঙ্কুরিত ছোলা, খেজুর, পেঁয়াজ, রসুন, বিট- লাল ও সবুজ রঙের সবজি খাদ্যতালিকায় রাখুন। তবে পরিমাণমত খাবেন। সঙ্গে কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, কিসমিস, এগুলো ড্রাই ফ্রুট হিসেবে খেতে পারেন।
ডেয়ারি উপাদানের মধ্যে পানি মিশিয়ে দুধ, মাখন, টক দই খেতে পারেন। সব ধরনের ভাত, রাইস কেক, রাইস পাস্তা রাখতে পারেন ডায়েট চার্টে। দুধ চা বা কফির বদলে গ্রিন টি খাওয়ার অভ্যেস শুরু করুন। রং চা খেতে পারেন। আর অবশ্যই দিনে অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করুন। আর কর্মজীবীদের যেহেতু দৈনন্দিন জীবন একটা রুটিনে বাধা তাই খাবারের ক্ষেত্রেও একটা রুটিন অনুসরণ করুণ।
আরামদায়ক পোশাকে
গরমে আরামের পোশাক হিসেবে সুতি কাপড়ের কোনো বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে কে-ক্র্যাফট এর প্রধান উদ্যোক্তা শাহনাজ খান বলেন, সুতি কাপড়ের তৈরি পোশাক শরীরকে ঠাণ্ডা রাখে। এ ছাড়া হালকা রঙের সুতি ও ভয়েল কাপড়ের পোশাক রোদ ও তাপ কম শোষণ করে বলে শরীরকে স্বস্তি দেয়। গরমে আমাদের অনেকেরই অ্যালার্জির মতো সমস্যা দেখা দেয়। এ সময়টা সুতি কাপড়ের সালোয়ার কামিজ, ঢিলেঢালা ফতুয়া পরা উচিত।
তিনি বলেন, যারা অনেক গরম পরিবেশে কাজ করেন, তারা সুতি বা তাঁতের তৈরি কাপড়ের পোশাক পরতে করতে পারেন। স্কুল-কলেজ, ইউনিভার্সিটির মেয়েরা, যাদের প্রতিনিয়ত বাইরে যাওয়া আসা করতে হয়, ক্লাস করতে হয়, তারা এই গরমে সুতির সালোয়ার-কামিজ এবং ফতুয়া ও পালাজো পরতে পারেন। অফিসেও একই রকম পরতে পারেন। আর যারা শাড়ি পরতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তারা এই গরমে পিংক, আকাশি, হালকা নীল, লেমন এরকম হালকা রঙের সুতি শাড়ি, টাঙ্গাইলের শাড়ি অথবা ব্লক-বাটিকের ট্রেন্ডি শাড়ি বেছে নিতে পারেন। ছেলেরা সুতি শার্ট, পাঞ্জাবি বা ফতুয়া বেছে নিন। সেই সঙ্গে গরমে আরাম পেতে আপনি চোখ বুজে নির্ভর করতে পারেন চিরন্তন রং সাদার সঙ্গে হালকা যেকোনো রঙের কম্বিনেশনের পোশাক।
নিজের যত্নে
তীব্র গরমে প্রয়োজন বাড়তি যত্নের। পানি তো বেশি খেতে হবেই। সেই সঙ্গে নিজের চলাফেরায় আলাদা খেয়াল রাখা দরকার। বিশেষ করে কর্মজীবীরা বাইরে বের হওয়ার কারণে শরীর, ত্বক ও চুলেও এর প্রভাব পরে।
বাইরে বের হওয়ার আগে প্রথমে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে তার দশ মিনিট পর সানস্ক্রিন দিয়ে বিশ মিনিট পর বের হন। সাথে ব্যাগে এক প্যাকেট ফেসিয়াল ওয়াইপ, পকেট পারফিউম রেখে দিন। বাইরে থেকে ফিরে মুখে এক টুকরো বরফ ঘষে নিন। এতে ত্বকে ঠান্ডা ভাব বজায় থাকে। এছাড়া ঠান্ডা শশা ও তরমুজের রস লাগাতে পারেন।
গরমে বেশি মেকআপ একদমই মানায় না। তাই যেটুকু না করলেই না যেমন কাজল, আইলাইনার আর মুখে ফেসপাউডার লাগাতে পারেন। রোদের তীব্রতা বেশি থাকলে দিনে দু বার গোসল করে নিতে পারেন। সকালে বের হবার সময় এবং বাসায় ফিরে। এতে আরামবোধ হবে। ত্বকও সতেজ থাকবে।
দিনে যতবার সম্ভব মুখে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিন। তোয়ালে দিয়ে না মুছে পানিগুলো ত্বককেই শোষন করতে দিন। স্ক্রাবিং এর জন্য লেবুর রস ও চিনি, চালের গুঁড়ো একসঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করুন। ব্রণ থাকলে নখ লাগাবেন না কখনোই। আর সব সময় ত্বককে গভীর থেকে পরিষ্কার রাখুন। গরমে চুলের অবস্থাও কিন্তু নাজুক হয়ে যায় রোদের তীব্রতায়। তাই চুলের ব্যাপারেও অবহেলা করা একদম ঠিক হবে না। গরমে মাথার ত্বক ঘামে তাই চুল পরিষ্কার রাখতে হবে। শাওয়ার শেষে চুল ফ্যানের বাতাসে শুকিয়ে নিন।
এই গরমে নিজের খাদ্যাভ্যাস, চলাফেরার নিয়মানুবর্তিতার ওপরই নির্ভর করে আপনার সুস্থতা ও ভালো থাকা। তাই এই বৈরি আবহাওয়ার সাথে তাল মিলিয়ে নিজের প্রতিটি ব্যাপারেই সতর্ক থাকুন।
আরও পড়ুন:চাঁদ দেখা সাপেক্ষে বাংলাদেশে ২৪ মার্চ শুরু হতে পারে সিয়াম সাধনার মাস রমজান। এ মাসে সারা দিন রোজা রাখার পর ইফতারে অনেকেই গোগ্রাসে গিলতে থাকেন একের পর এক খাবার। এসবের বেশির ভাগই তৈলাক্ত কিংবা অস্বাস্থ্যকর। এগুলো খাওয়ার ফলে একদিকে যেমন রোজার সংযম নষ্ট হয়, তেমনই বড় ক্ষতি হয় শরীরের।
ইফতারে কোন ধরনের খাবার বর্জন এবং কোনগুলো গ্রহণ করা উচিত, তা এক ভিডিওতে তুলে ধরেছেন মনোদৈহিক ও জীবনযাপনবিষয়ক রোগের থেরাপিস্ট এবং কোয়ান্টাম হার্ট ক্লাবের কোঅর্ডিনেটর ডা. মনিরুজ্জামান। পরামর্শগুলো তার ভাষায় উপস্থাপন করা হলো নিউজবাংলার পাঠকদের সামনে।
ভাজাপোড়া খাওয়া থেকে বিরত থাকা
ইফতারের কথা মনে হলে আমাদের মনটা আনন্দে ভরে ওঠে। আহ, কী চমৎকার প্লেটভর্তি খাবার! মুড়ি, চানাচুর, ছোলা, ভাজা, বেগুনি, পেঁয়াজু, চপ, চিকেন ফ্রাই, জিলাপি। অল দিজ আর ডেড ফুড (এর সবগুলোই মৃত খাবার)। অল দিজ আর নট ফুড (এগুলো আদতে কোনো খাবারই নয়)। এসব মৃত খাবার, তৈলাক্ত, চর্বিযুক্ত, ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার আপনার শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
আপনি ১২ ঘণ্টা, ১৪ ঘণ্টা, ১৬ ঘণ্টা স্টোমাককে খাবার থেকে বিরত রেখেছেন। সে নিজেকে পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত করেছে, নিজেকে তৈরি করছে, যেন সে সারা বছর আপনাকে ভালো সার্ভিস দেয়। ১২ ঘণ্টা, ১৪ ঘণ্টা অভুক্ত থেকে আপনি এ রকম অবৈজ্ঞানিক এবং চর্বিযুক্ত, ভাজাপোড়া খাবার দিলেন। তাকে এই রকম ভাজা পোড়া খাবার; তাকে দিলেন এই রকম হালিম। স্টোমাকের আপনি বারোটা বাজায়া দিলেন।
আপনার পরিপাকতন্ত্রের বিশ্রাম হলো না। পরিপাকতন্ত্র রমজানের পূর্বেও যে রকম ছিল, রমজানের মধ্যেও একই অবস্থায় থাকবে। ফলে সে আপনার জন্য কোনো সার্ভিস দিতে পারবে না। অতএব রমজানে হালিম, ফাস্ট ফুড এই জাতীয় খাবার থেকে আপনি বিরত থাকুন।
ইফতার উৎসব নয়
আর কী করবেন? ইফতার উৎসবে মত্ত হবেন না। রমজানের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আত্মশুদ্ধি। আপনি যদি ইফতার পার্টিতে আনলিমিটেড ইফতার খান, এইটুকু বলে দিতে পারি যে, রমজানের মধ্যেই আপনি আগে থেকে অসুস্থ হবেন, এমনকি আপনার হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতে পারে, স্ট্রোক হয়ে যেতে পারে। ওজন আরও বাড়বে। এসব তৈলাক্ত, চর্বিযুক্ত খাবারে প্রচুর ক্যালোরি থাকে।
যা খাবেন
তাহলে আমরা ইফতারে কী খাব? ভেরি সিম্পল। রোজা রাখার কারণে ১২/১৪/১৬ ঘণ্টা আপনার স্টোমাক রেস্টে থাকে। খুবই সফট, খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার খেয়ে আমাদের প্রিয় নবী (সা.) রোজা ভাঙতেন। সেটি হলো খেজুর।
দুই থেকে তিনটা খেজুর নিন এবং এক থেকে দুই গ্লাস পানি নিন। পান করুন। ব্যস, ফাইন। ফার্স্ট ক্লাস একটা ইফতার হয়ে গেল। এটিই হচ্ছে ইফতার। খেজুর আপনাকে পূর্ণ এনার্জি সাপ্লাই দেবে। কীভাবে?
খেজুরের মূল উপাদান হচ্ছে সুক্রোজ। এই খেজুর ভালো করে চিবাবেন, সময় নিয়ে চিবাবেন। চিবিয়ে গিলে নেবেন। স্টোমাকে গিয়ে এই খেজুর থেকে সুক্রোজ ভেঙে তৈরি হবে গ্লুকোজ এবং ফ্রুকটোজ। ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে এই গ্লুকোজ এবং ফ্রুকটোজ রক্তে প্রবেশ করবে। এর ফলে আপনার যে ব্লাড সুগার কমে গিয়েছিল, আপনার সেই ব্লাড সুগারকে রিপেয়ার করে ফেলবে; মুহূর্তের মধ্যে আপনি চাঙা হয়ে যাবেন; যে চাঙা হওয়ার জন্য আপনারা গুড়ের শরবত, চিনির শরবত, এই শরবত, ওই শরবত খেতেন। কোনো শরবত খাওয়ার প্রয়োজন নাই।
দুই থেকে তিনটি খেজুর। সাথে পর্যাপ্ত পানি পান করুন। নামাজে চলে যান। এরপর নামাজ থেকে ফিরে এসে রাতের খাবার খেয়ে ফেলুন।
রাতের খাবারে কী থাকতে পারে
রাতের খাবারে কী থাকতে পারে? আমরা সারা বছর দুপুরে যে খাবার খাই, সেটাই হবে রমজানে আপনার রাতের খাবার। কী রকম? একটা বড় প্লেট নেন। ভাত নেবেন এক কাপ। এনাফ।
এক কাপের বেশি ভাত নেবেন না এবং অবশ্যই নিতে হবে লাল চালের ভাত। সাথে পর্যাপ্ত সবজি, ভর্তা, শাক, সালাদ, ডাল, এক টুকরো মাছ অথবা মুরগি হলে এক টুকরো মুরগি। গরু এবং খাসি পুরো রমজানজুড়ে আপনি অ্যাভয়েড করুন।
আর কী করবেন? এর সাথে কয়েক রকম ফল রাখুন। একটা ডিম খেতে পারেন। একটু ভেজানো ছোলা আদা দিয়ে খেয়ে ফেলেন। কিছু টকদই খেতে পারেন, কিছু বাদাম খেতে পারেন, কিছু বীজ খেতে পারেন। অল্প অল্প করে খেতে পারেন। ব্যস।
আমরা বলতে পারি এইভাবে যদি আমরা ইফতার করি ৩০টা রমজানে, ৩০ দিন পর আপনার বাড়তি ওজন কমে যাবে। আপনার টাইপ টু ডায়াবেটিস রিভার্স হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। আপনি অনেকগুলো ক্রনিক রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবেন। আপনার ব্রেনের আয়ু বেড়ে যাবে।
আরও পড়ুন:নাক ডাকার প্রবণতা থাকলে মস্তিষ্কের ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। এতে আইকিউ তো কমেই, সেই সঙ্গে স্মৃতিশক্তিও ঝাপসা হতে শুরু করে।
ঘুমের মধ্যে নাক ডাকার সমস্যায় অনেকে ভোগেন। আশপাশের মানুষের ঘুম নষ্ট হওয়ার অভিযোগও শুনতে হয় এমন মানুষকে।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আমিনুল ইসলাম শেখ বলেন, ‘নাক ডাকার প্রবণতা থাকলে মস্তিষ্কের ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। ফলে আইকিউ তো কমেই, সেই সঙ্গে স্মৃতিশক্তিও ঝাপসা হতে শুরু করে। তাই হালকাভাবে না নিয়ে এর সমাধানের চেষ্টা করাটা জরুরি।’
কারণ
আমিনুল ইসলাম শেখ জানান, বেশ কিছু কারণে মানুষ নাক ডাকতে পারে।
১. শরীরের বাড়তি ওজন, গর্ভাবস্থা ও কিছুটা বংশগত কারণ।
২. অ্যালার্জি, নাক বন্ধ হওয়া অথবা নাকের ভিন্ন গঠন। এসব কারণে নাকের ভেতরে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করতে পারে না ও নাক ডাকার সৃষ্টি হয়।
৩. মদ্যপান, ধূমপান ও বিশেষ কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
৪. বয়স বেড়ে যাওয়ার কারণে শরীরে চামড়া ঝুলে যায়, পুরু হয় ও গলার কিছু পেশি ফুলে যায়। এ কারণে বয়স্করা নাক ডাকেন তুলনামূলক বেশি।
মুক্তির উপায়
নাক ডাকা পেতে মুক্তি পেতে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন ডা. আমিনুল ইসলাম শেখ।
অতিরিক্ত ওজন কমানো
শরীরের অতিরিক্ত ওজন নাক ডাকার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। বাড়তি ওজন নাকের ভেতরে বাতাস চলাচলের জায়গা সংকীর্ণ করে দেয় এবং শ্বাস-প্রশ্বাস চলাচলের সময় শব্দের সৃষ্টি করে। তাই ওজন কমালে এই সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্ত হওয়া সম্ভব।
শোয়ার অবস্থান সঠিক করা
শোয়ার অবস্থানের কারণেও কেউ নাক ডেকে থাকতে পারে।
সোজা ও চিৎ হয়ে শোয়ার কারণে জিহ্বা ও নরম তালু পেছনের দিকে হেলে যায়। এ কারণে মুখের ভেতরে বাতাস চলাচলের জায়গাটা আটকে যায় ও শব্দের সৃষ্টি হয়। ডান কাতে শোয়া এ ক্ষেত্রে খুবই ভালো একটি সমাধান। বাম কাতে শোয়ার জন্য বুকের ওপর বেশি চাপ পড়তে পারে।
অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ বা ছেড়ে দেয়া
অ্যালকোহল গ্রহণ শুধু নাক ডাকা নয়, শরীরের বিভিন্ন সমস্যার জন্য দায়ী। এটি বিভিন্ন পেশিকে অনেক বেশি শিথিল করে দেয়। ফলে শিথিল মাংস পেশিগুলো মুখের ভেতরে জায়গা আটকে দেয়। তাই যারা মদ্যপান ছাড়তে পারছেন না, তারা নাক ডাকার হাত থেকে রেহাই পেতে এখনই সচেষ্ট হোন।
পর্যাপ্ত ঘুম
আপনার যদি দৈনিক পর্যাপ্ত ঘুম (৭ থেকে ৯ ঘণ্টা) না হয়ে থাকে, তাহলে নাক ডাকা বেড়ে যেতে পারে কিংবা হঠাৎ করে শুরুও হতে পারে। অতিরিক্ত ক্লান্তি শরীরের পেশিগুলোকে অলস করে দেয়, যা নাক ডাকার আরেকটি কারণ।
নাক পরিষ্কার করা
নাক বন্ধ থাকার জন্যও নাক ডাকার সৃষ্টি হতে পারে। এ জন্যই অনেকে যারা কখনোই নাক ডাকেন না, তারাও নাক ডাকছেন বলে ঘরের লোকজন জানান। ঠান্ডাজনিত কারণে আপনার নাক বন্ধ হয়ে থাকলে শোয়ার আগে গরম পানির ভাপ নিয়ে যথাসম্ভব নাক পরিষ্কার করে ফেলুন।
ধূমপান ছেড়ে দেয়া
সিগারেটের ধোঁয়া নাকের ভেতর ও গলার মেমব্রেন টিস্যুর ক্ষতি করে। তাই ধূমপান এড়িয়ে চলুন।
বালিশে ভারসাম্য
ঘুমানোর সময় একটি বাড়তি বালিশ নিয়ে মাথাটা একটু উঁচু জায়গায় রেখে ঘুমানোর অভ্যাস করুন। মাথা উঁচু থাকলে এই সমস্যা থেকে অনেকটা রেহাই পাওয়া যায়, তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন শুধু মাথা ও বুকের দিকটাতেও যেন সামঞ্জস্য বজায় রাখে।
মেডিটেশন
মেডিটেশন বা ধ্যান শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন সমস্যার অন্যতম সমাধান। ধ্যানের মাধ্যমে আপনার অজানা অনেক সমস্যার সমাধানও হতে পারে। হয়তো এর মাধ্যমে আপনি নাক ডাকা থেকেও মুক্তি পেতে পারেন।
প্রাকৃতিক উপাদান
এ ছাড়া প্রাকৃতিক কিছু উপাদান যেমন এলাচ, হলুদ, মধু, ঘি এবং অলিভ অয়েল এগুলো খেলেও নাক ডাকাসহ শরীরের নানা সমস্যার সমাধান মিলতে পারে, তবে এগুলো কী পরিমাণে খাবেন বা আদৌ খাবেন কি না, সে বিষয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নেয়া সর্বোত্তম।
নাক ডাকা খুব দীর্ঘস্থায়ী হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
কোষ্ঠকাঠিন্য বা পায়খানা কষা হওয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই ইসবগুলের ভুসি খেয়ে থাকেন। এর বাইরেও নানা স্বাস্থ্যগত উপকারিতা রয়েছে খাদ্যটির।
বাংলাদেশে অনেকের কাছে পরিচিত ইসবগুলের গুণাগুণ ও খাওয়ার নিয়ম এক ভিডিওতে তুলে ধরেছেন ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান ও পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী। তার মুখের বিষয় পরামর্শগুলো তুলে ধরা হলো পাঠকদের সামনে।
ইসবগুল কী
ইসবগুল বা ইসপাগুলা হাস্ক আসলে সিলিয়াম হিসেবে পরিচিত বাইরের দেশে এবং এ সিলিয়াম আসলে একটি সিড (বীজ) থেকে আসে এবং যেটি দুটি ফরমে (ধরন) পাওয়া যেতে পারে। একটি হচ্ছে হাস্ক (তুষ বা ভুসি), আরেকটি হচ্ছে পাউডার (গুঁড়া)। অর্থাৎ ইসপাগুলা হাস্ক বা ইসবগুল যখন হাস্ক ফরমে খাচ্ছেন, বাজার থেকে যেটি নরমালি নিয়ে আসেন, সেটি আসলে অর্গানিক (প্রক্রিয়াজাতকৃত নয়)। কারণ এটি আসলে জাস্ট ক্লিনিং প্রসেস করা হয় এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে শুকিয়ে এটিকে জাস্ট জারে ভরা হয়।
দ্বিতীয়টি হচ্ছে পাউডার ফরমে যেটি, সেটি আসলে কমার্শিয়ালি (বাণিজ্যিকভাবে) তৈরি হয়ে থাকে। যেহেতু কমার্শিয়ালি তৈরি হয়, স্বাভাবিকভাবেই তার মধ্যে কিছুটা কালার অ্যাডেড হয়, ফ্লেভার অ্যাড হয় এবং ডায়েট সুইটনারের কিছু ইনগ্রেডিয়েন্টস (উপাদান) থাকে, সেগুলো অ্যাড হয়ে থাকে।
স্বাস্থ্যগত উপকারিতা
ইসবগুলের বেশ কিছু স্বাস্থ্যগত উপকারিতার কথা তুলে ধরেছেন তামান্না চৌধুরী।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা
ইসবগুল আমরা সাধারণত যে কনসেপ্ট থেকে খেয়ে থাকি, এটি একটা সলিউঅ্যাবল ফাইবার (আঁশ), যা আসলে লেক্সিটিভের কাজ করে। অর্থাৎ কনস্টিপেশন (কোষ্ঠকাঠিন্য) ঠিক করতে ইসবগুল সাহায্য করে। কেননা ইসবগুল বা এই হাস্ক বা পাউডার যেই ফরমেই আপনি খান না কেন, লেক্সিটিভ প্রোপারটিজের কারণে এটি পানির সাথে ফরমেশন করে ইন্টেস্টাইন থেকে বাওয়েল মুভমেন্টকে স্মুথ (অন্ত্র থেকে মল বের হয়ে আসা সহজ) করে, যার ফলে কনস্টিপেশন প্রিভেন্ট (কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ) হয় এবং যখন কনস্টিপেশন প্রিভেন্ট হয়, তখন যাদের পাইলস বা অ্যানাল ফিশারের প্রবলেম থাকে, সেটাও কিন্তু অনেকটা প্রিভেনশন হয়। তাই যারা শুধু পায়খানার সমস্যায় ভুগছেন, কনস্টিপেশনে আছেন, তাদের জন্য এটি একটি এক্সিলেন্ট খাদ্য উপাদান।
পাতলা পায়খানা দূরে সহায়তা করতে পারে
কিছু কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে, লুজ মোশনের (পাতলা পায়খানা) ক্ষেত্রেও ইসবগুলের দারুণ ব্যবহার হয়েছে। কীভাবে? একটা এগজাম্পল দিচ্ছি। যারা ক্যানসার প্যাশেন্ট (রোগী), কেমোথেরাপি নিচ্ছেন, তাদের কিন্তু মেডিক্যাশন (ওষুধ সেবন) বা কেমোর কারণে লুজ মোশন হয়ে থাকে। দেখা গেছে, ইসবগুল পানিটাকে, লুজ ওয়াটারের মোশনটাকে ফরম করতে সাহায্য করে। যেহেতু তার স্টুল ফরমেশনের (মল তৈরি হওয়ার) জন্য পর্যাপ্ত পানির প্রয়োজন হয়, তখন কনসিস্ট্যান্সিটা অনেকটা উন্নত হয়। তাই কিছু কিছু ডায়রিয়ায় ডক্টরের পরামর্শে কিন্তু আপনি ইসবগুল খেতে পারেন।
আইবিএস চিকিৎসায় কাজে আসতে পারে
আইবিএস চিকিৎসাতেও কিন্তু ইসবগুলের ভালো ব্যবহার হয়। দেখা যাচ্ছে আইবিএসে যারা ভুগছেন তাদের অল্টারড হয়। রেগুলার পায়খানাটা কখনও কনস্টিপেশন (কষা) হচ্ছে, কখনও লুজ (পাতলা) হচ্ছে একটু। তাই তাদের ক্ষেত্রেও অনেক সময় ডাক্তাররা সিলিয়াম হাস্ক বা পাউডার বা ইসবগুলের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করতে পারে
অনেক স্টাডিতে দেখা গেছে যে, ডায়াবেটিসকে ম্যানেজ করতে ইসবগুল সাহায্য করে। কেননা এটি গ্লাইসেমিক ইনডেস্ককে কন্ট্রোল করতে পারে। অর্থাৎ হঠাৎ করে সুগার বেড়ে যাওয়াটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, যার ফলে আমরা অনেক সময় ডায়েটিশিয়ান হিসেবে ডায়াবেটিক প্যাশেন্টরা যদি খুব আবদার করেন যে আমি একটু ফ্রুট জুস কীভাবে খেতে পারি মাঝে মাঝে? তখন আমরা তাকে পরামর্শ দিয়ি থাকি যে, যদি কোনো ফ্রুট জুস আপনার খুব শখ হয়, খেতেই হয়, তাহলে তার সাথে অবশ্যই এক চামচ ইসবগুল মিক্স করে নেন। কেননা এটাতে ওই ফ্রুট জুসের গ্লাইসেমিক ইনডেক্সটাকে ইমপ্রুভ করা সম্ভব, তবে এটা অবশ্যই প্রতি সময়ে প্র্যাকটিসের জন্য কিন্তু নয়।
রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে সহায়ক হতে পারে
রক্তে ব্যাড (ক্ষতিকর) কোলেস্টেরল কমাতে কিন্তু ইসবগুল সাহায্য করে। যেহেতু এটা হাস্ক, এটাতে ফাইবার (আঁশ) রয়েছে এবং এটা যেহেতু বাওয়েল প্রসেসটাকে (মল বের হওয়ার প্রক্রিয়া) ঠিক রাখে, অবশ্যই এটি গুড কোলেস্টেরলকে বাড়িয়ে ব্যাড কোলেস্টেরলকে কমাতে সাহায্য করে, যার ফলে হার্ট ডিজিজ প্রিভেনশনের ক্ষেত্রেও ইসবগুলের পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে
ওয়েট রিডাকশনের (ওজন কমানো) ক্ষেত্রে আমরা ডায়েটিশিয়ানরা কিছু সময়ের জন্য ওয়েট ম্যানেজমেন্টের ডায়েটে যখন থাকবেন, তখন আসলে ইসবগুল হেল্প করে। কেননা ওয়েট রিডাকশন মানে হচ্ছে ক্যালোরি কন্ট্রোল, যেখানে আপনাকে অনেক খাবারটা একটু পরিমাণে কমিয়ে ফেলতে হয়, যার ফলে ফাইবারের চাহিদা পূরণে এবং রেগুলার যাতে আপনার ডায়েট করার কারণে কনস্টিপেশন প্রবলেম না হয়, সেই জন্য কিন্তু ইসবগুল আমরা পরামর্শ দিয়ে থাকি।
খাওয়ার সঠিক নিয়ম
ইসবগুল আপনি পাউডার বা হাস্ক যেভাবেই খান না কেন, বেশ কিছু জার্নালে বলা হয়েছে পাঁচ থেকে ১০ গ্রাম পর্যন্ত। অর্থাৎ এক থেকে দুই চা চামচ পর্যন্ত সারা দিনে রেকমেন্ডেশন (পরামর্শ) রয়েছে, তবে এটি অবশ্যই ডক্টরের পরামর্শে হতে হবে।
যারা ডক্টরের পরামর্শ ছাড়া খাচ্ছেন, তাদের জন্য ফাইভ গ্রাম বা এক চা চামচই যথেষ্ট এবং নিয়ম হচ্ছে আপনাকে ২৪০ এমএল (মিলিলিটার) ওয়াটার, অর্থাৎ বড় এক গ্লাস পানির মধ্যে খুব ভালো করে মিলিয়ে এটি খেতে হয়। এটি (পানির সঙ্গে) মিলানোর সাথে সাথে আপনাকে খেতে হবে। কোনোভাবেই মিলিয়ে রেখে দেওয়া যাবে না। কারণ এই ইসবগুল পানির সাথে গিয়েই কিন্তু আপনার ইনটেস্টাইনে (অন্ত্র) বাওয়েলের সাথে কাজ করবে। তাই অবশ্যই এটি স্ট্যাট ডোজ (প্রস্তুতের পরপরই গ্রহণ) হিসেবে খাবেন এবং ২৪০ এমএল পানির মধ্যে এক চামচ ইসবগুল আপনারা খাবেন। যাদের দুই চামচ খাওয়ার রেকমেন্ডেশন আছে, দিনে দুইবার খেতে পারেন।
মন্তব্য