লেখক ও শিক্ষক অ্যালেনা কাটজাপ, লস অ্যাঞ্জেলসের বাসিন্দা। ৩ দিনের বেশি সময় ধরে জ্বর ও কাশিতে শয্যাশায়ী থাকার পর তিনি বুঝতে পারেন, এর জন্য হয়তো করোনাভাইরাসই দায়ী। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। এর পরও তিনি খুব একটা চিন্তিত ছিলেন না, কারণ তার আক্রান্তের লক্ষণগুলো ছিল মৃদু। তার শ্বাসকষ্টজনিত কোনো সমস্যা হয়নি, এমনকি হাসপাতালেও যেতে হয়নি। তিনি কয়েক দিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যান।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাটজাগ বলছিলেন, আমার মনে আছে। ঈশ্বর, আবার সুস্থ হতে পেরে খুব ভালো লাগছে। তারপর হটাৎ করে পরের দিনই আমি ধাক্কাটা খাই। বমি আসতে থাকে, পেটের পীড়ায় ভুগছিলাম আমি ও বিরক্তিকরভাবে স্মৃতিভ্রষ্টতায় আক্রান্ত হই।
মোটামুটি ৮ কোটি আমেরিকান, যারা এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে বেঁচে যাওয়া প্রতি চারজনের একজন ‘কগনিটিভ ইমপায়ারম্যান্ট’ সমস্যায় ভুগছেন। সাধারণত এ ধরনের সমস্যায় একজন ব্যক্তি নতুন কোনো কিছু শেখার ক্ষেত্রে, বোঝার ক্ষেত্রে, কোনো কিছু মনে করতে গেলেও সমস্যার সম্মুখীন হন। এই সমস্যাকেই বলা হচ্ছে ‘ব্রেইন ফগ’।
যদিও ‘ব্রেইন ফগ’ এখন পর্যন্ত মেডিক্যাল টার্ম হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি। টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যার অধ্যাপক এডওয়ার্ড শার্টার ‘ব্রেইন ফগের’ ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, ‘এটি মূলত বিভ্রান্তি তৈরি, শব্দ খুঁজে পেতে অসুবিধার সম্মুখীন হওয়া, স্বল্পমেয়াদি স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, মাথা ঘোরানো এবং মনোনিবেশ করতে অক্ষমতা এসব কিছু বোঝানোর ক্ষেত্রে একটি প্রতীকী শব্দ হয়ে উঠছে।’
কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের থেকেও প্রায় তিনগুণ বেশি রোগী কোভিড-পরবর্তী ‘কগনিটিভ ইমপায়ারম্যান্ট’ সমস্যায় ভুগছেন।
মস্তিষ্কের স্ক্যানগুলোতে দেখা যাচ্ছে, কোভিডের মৃদু সংক্রমণেও মস্তিষ্কের অংশ সংকুচিত হতে পারে। যার ফলে প্রায় ১০ বছর বয়সের সমান শারীরিক পরিবর্তন হতে পারে।
মস্তিষ্ক সাধারণত সংকুচিত হতে শুরু করে যখন একজন ব্যক্তির বয়স ৩০ ছাড়িয়ে যায় এবং ৬০-এর পর তা সংকুচিত হওয়ার গতি বৃদ্ধি পায়। তবে মস্তিষ্কের সংকোচন, তার সব অংশে একই রকমভাবে হয় না। এখন দেখা যাচ্ছে, করোনাভাইরাসে মৃদু সংক্রমণে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে হুট করেই মস্তিষ্ক সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে।
যা বলছেন গবেষকরা
নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ফেইনবার্গ স্কুল অফ মেডিসিনের স্নায়ু বিশেষজ্ঞ আয়ুশ বাত্রা বলেন, কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হওয়ার পরে স্নায়ুতে স্থায়ী ইনজুরি হওয়ার জৈব ও জৈব রাসায়নিক প্রমাণ রয়েছে। রোগীরা তাদের উপসর্গের বিষয়টি জানাচ্ছে। এটি তাদের জীবনযাত্রার মান এবং দৈনন্দিন কাজকর্মকে প্রভাবিত করছে।
কোভিড-১৯ সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আগে এবং পরে মানুষের মস্তিষ্কের পরিবর্তন নিয়ে গবেষণা করছিলেন যুক্তরাজ্যের একদল গবেষক। তারাও মৃদু সংক্রমণে স্নায়বিক ক্ষতির প্রমাণ পেয়েছেন।
৫১ থেকে ৮১ বছর বয়সী ৭৮৫ জন এই গবেষণা জরিপে অংশগ্রহণ করেছেন। মহামারি শুরুর আগে যাদের মস্তিষ্ক স্ক্যান করা হয়েছিল। ইউকে বায়োব্যাংক প্রকল্পের অংশ হিসেবে তিন বছর পর তাদের মস্তিষ্ককে পুনরায় স্ক্যান করা হয়েছিল। এদিকে মেডিক্যাল বোর্ডের রিপোর্টে বলা হয়েছে, স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে ৪০১ জন কোভিড-১৯-এ সংক্রমিত হয়েছিল। এর বেশির ভাগই হালকা সংক্রমণ, ৪০১ জনের মধ্যে মাত্র ১৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
স্ক্যানের ফলাফলগুলো দেখায়, কোভিডে সংক্রমণের প্রায় সাড়ে চার মাস পরে আক্রান্ত ব্যক্তিরা গড়ে ০.২ থেকে ২ শতাংশ মস্তিষ্কের আকার হারিয়েছে। যেখানে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি প্রতিবছর গড়ে মস্তিষ্কের হিপ্পোক্যাম্পাস এলাকার ০.২ থেকে ০.৩ শতাংশ হারায়, যা স্মৃতির সঙ্গে যুক্ত।
এ ছাড়া গন্ধের সঙ্গে যুক্ত মস্তিষ্কের অঞ্চলে, সুস্থ লোকের তুলনায় কোভিড-১৯ আক্রান্তের ০.৭ শতাংশ বেশি টিস্যুর ক্ষতি হয়েছে।
বিভিন্ন ধরনের ‘কগনিটিভ টেস্ট’ যেমন মনোযোগ, ভিজ্যুয়াল স্ক্রীনিং ক্ষমতা এবং প্রক্রিয়াকরণের গতি পরিমাপ করা দুটি পরীক্ষায় তারা ৮ থেকে ১২ শতাংশ বেশি সময় নিয়েছে। তবে প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে খুব একটা প্রভাব পড়েনি।
এদিকে ইউনিভার্সিটি অফ প্যারিসের ল্যারিবোইসিয়া হাসপাতালের স্নায়ু বিশেষজ্ঞ জ্যাক হুগন বলেন, ‘আমরা ঠিক জানি না মস্তিষ্কে কী ঘটছে, তবে এটি একটি ঝুঁকি। আমাদের আগামী বছরেও কোভিড-১৯ আক্রান্তদের সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।’
শুধু মস্তিষ্কের ক্ষতিই নয়, কোভিড-১৯ ছয় মাস পর্যন্ত রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বাড়ায়, যা স্ট্রোকের কারণ হতে পারে। এ ছাড়া ইউএস ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ বলছে, ফুসফুসের বাইরে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে ফেলতেও ভূমিকা রাখতে পারে।
আরও পড়ুন:কোভিড-১৯ মহামারির প্রথম দুই বছরে বিশ্বব্যাপী মানুষের গড় আয়ু ১ দশমিক ৬ বছর কমেছে।
একটি বড় গবেষণায় মঙ্গলবার এ কথা বলা হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা বাসস।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশনের (আইএইচএমই) তথ্য অনুসন্ধানকারী গবেষকদের মতে, এক দশক ধরে বিশ্বব্যাপী আয়ুষ্কাল বৃদ্ধির পর এটি এখন উল্টো দিকে ঘুরছে।
আইএইচএমই গবেষক এবং দ্য ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত গবেষণার প্রধান লেখক অস্টিন শুমাখার বলেছেন, ‘বিশ্বব্যাপী প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য, কোভিড-১৯ মহামারিটি অর্ধ শতাব্দীতে সংঘাত এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ দেখা যেকোনো ঘটনার চেয়ে আরও গভীর প্রভাব ফেলেছে।’
তিনি একটি বিবৃতিতে বলেছেন, ২০২০ থেকে ২০২১ সময়কালে ২০৪টি দেশ ও অঞ্চলের বিশ্লেষণে ৮৪ শতাংশে আয়ু হ্রাস পেয়েছে, যা নতুন ভাইরাসগুলোর ‘বিধ্বংসী সম্ভাব্য প্রভাব প্রদর্শন করে।’
এই সময়ে ১৫ বছরের বেশি মানুষের মৃত্যুর হার পুরুষদের জন্য ২২ শতাংশ এবং মহিলাদের জন্য ১৭ শতাংশ বেড়েছে।
গবেষকরা অনুমান করেছেন, মেক্সিকো সিটি, পেরু এবং বলিভিয়ায় আয়ু সবচেয়ে বেশি কমেছে।
কিন্তু আইএইচএমইয়ের ল্যান্ডমার্ক গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজ স্টাডির আপডেট করা হিসাবে কিছু ভালো খবর পাওয়া যায়।
২০১৯ সালের তুলনায় ২০২১ সালে পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় অর্ধ মিলিয়ন কম শিশু মারা গেছে, যা শিশু মৃত্যুহারের দীর্ঘমেয়াদি পতন অব্যাহত রেখেছে।
আইএইচএমই গবেষক এই ‘অবিশ্বাস্য অগ্রগতি’কে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, বিশ্বকে এখন পরবর্তী মহামারি এবং বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্যের বিশাল বৈষম্য মোকাবেলার দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। গবেষকরা বলেছেন, ১৯৫০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে গড় আয়ু ২৩ বছর বেড়ে ৪৯ থেকে ৭২ বছর হয়েছে।
কোভিড ২০২০ থেকে ২০২১ সময়কালে সরাসরি ভাইরাস থেকে বা পরোক্ষভাবে মহামারী-সম্পর্কিত কারণে অতিরিক্ত ১৫.৯ মিলিয়ন লোকের মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন:বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৯ লাখ ২২ হাজার ৩৭২।
এদিকে সর্বশেষ বৈশ্বিক পরিসংখ্যান অনুসারে, মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৯ কোটি ৬০ লাখ ৫০ হাজার ৪৬ জন। খবর ইউএনবির
বিশ্বব্যাপী করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৬৬ কোটি ৮০ লাখ ৬৬ হাজার ৫১৪ জন।
করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্রে শনাক্তের সংখ্যা ১০ কোটি ৮৭ লাখ ৫৮ হাজার ৬০৫। এখন পর্যন্ত দেশটিতে মারা গেছে মোট ১১ লাখ ৭৭ হাজার ৭৯৩ জন। মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যায় শীর্ষে রয়েছে দেশটি।
ভারতে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছে ৪ কোটি ৪৯ লাখ ৯৮ হাজার ৮৭৪। মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩১ হাজার ৯৩০ জনে।
বাংলাদেশ পরিস্থিতি
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, দেশে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু হয়নি। ওই সময় নতুন করে সাত জনের শরীরে এ ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে।
এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় ২৯ হাজার ৪৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে ও শনাক্তের সংখ্যা ২০ লাখ ৪৫ হাজার ৭৪১ জনে পৌঁছেছে।
আরও পড়ুন:দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের নিম্নগতি ছিল, দৈনিক শনাক্তের হার ছিল এক শতাংশেরও নিচে। কিন্তু ফের ভাইরাসটি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষায় ৬১ জনের দেহে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়। সংক্রমণের হার ৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২৬ মে সকাল ৮টা থেকে ২৭ মে সকাল ৮টা পর্যন্ত ৯২৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
এর আগে সর্বশেষ গত ২৮ মার্চ একজনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছিল অধিদপ্তর। সে হিসেবে দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৪৪৬ জনের এবং ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৩৮ হাজার ৮৯৮ জনের দেহে।
গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের মধ্যে ৫৭ জনই ঢাকার বাসিন্দা, চারজন সিলেটের।
এদিকে শুক্রবার শনাক্তের হার ছিল ৪ দশমিক ৩১ শতাংশ। বৃহস্পতিবার ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ আর তার আগের দিন ছিল ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ।
দেশে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে মোট রোগী শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ২২ শতাংশ, শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৮ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
দেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিন রোগী শনাক্ত হবার কথা জানায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ( আইইডিসিআর)। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চে করোনাতে আক্রান্ত হয়ে প্রথম রোগীর মৃত্যু হয়।
করোনার বিভিন্ন ধরণের মধ্যে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে দেশে একদিনে ২০২২ সালের ২৮ জুলাই সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ২৩০ জন রোগী শনাক্ত হয়।
২০২১ সালের ৫ ও ১০ আগস্ট একদিনে সর্বোচ্চ ২৬৪ জনের মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন:করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারি শুরুর প্রায় তিন বছর পর চীনে প্রবেশের পর কোয়ারেন্টিনের বিধিনিষেধ তুলে নিল দেশটির সরকার।
স্থানীয় সময় রোববার থেকে দেশটিতে ঢোকার পর আর কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে না বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
বিক্ষোভের মুখে গত মাসে কঠোর করোনা বিধি থেকে সরে আসে চীন। এর পর থেকেই দেশটিতে ভাইরাসটির সংক্রমণ বড় পরিসরে বাড়তে থাকে।
রয়টার্স জানায়, ২০২০ সালের মার্চ থেকে চীনে পৌঁছানোর পর দেশটির সরকারের অধীনে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হতো বিদেশিদের। প্রথম দিকে এ কোয়ারেন্টিনের মেয়াদ ছিল তিন সপ্তাহ। গত গ্রীষ্মে সে সময় কমিয়ে এক সপ্তাহে আনা হয়। পরে নভেম্বরে তা আরও কমিয়ে পাঁচ দিন করা হয়।
করোনার কঠোর বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার পরই চীনের জনগণ জনপ্রিয় ভ্রমণ ওয়েবসাইটগুলোতে বিদেশে ভ্রমণ নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেন, তবে এক ডজনেরও বেশি দেশ চীন থেকে আসা যাত্রীদের ওপর বাধ্যতামূলক কোভিড পরীক্ষাসহ নানা বিধিনিষেধ আরোপ করে। এ পদক্ষেপকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আখ্যা দিয়েছে বেইজিং।
চান্দ্র নববর্ষের ছুটিতে চীনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
চীন থেকে বাংলাদেশে আসা দেশটির এক নাগরিকের শরীরে করোনাভাইরাসের নতুন উপধরন বিএফ ডটসেভেন শনাক্ত হয়েছে।
রোববার দুপুরে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, ওই চারজনের করোনা পরীক্ষার পর একজনের শরীরে উপধরনটি শনাক্ত হয়েছে।
বিএফ ডটসেভেন করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরনের নতুন উপধরন।
আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একজন চীনা নাগরিকের শরীরে ওমিক্রনের নতুন উপধরন বিএফ ডটসেভেন শনাক্ত হয়েছে। তবে তিনি ভালো আছেন।’
এর আগে গত ২৬ ডিসেম্বর চীন থেকে আসা দেশটির চার নাগরিকের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। চীন থেকে তারা কোভিড নেগেটিভ সনদ সঙ্গে এনেছিলেন। তবে বাংলাদেশে র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় তাদের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়।
সম্প্রতি চীনে আবার করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের মধ্যে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আবার চীনসহ কয়েকটি দেশ থেকে আসা যাত্রীদের করোনা পরীক্ষা শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন:বিক্ষোভের মুখে বিধিনিষেধ শিথিলের পর চীনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হু হু করে বাড়ছে বলে খবর প্রকাশ করছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। এর মধ্যেই দেশটিতে দৈনিক করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রকাশ বন্ধ করা হলো।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশন (এনএইচএস) গত তিন বছর ধরেই প্রতিদিন করোনা আক্রান্তের হিসাব প্রকাশ করে আসছিল, তবে রোববার থেকে এ তথ্য আর প্রকাশ হবে না বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিবৃতিতে এনএইচএসের পক্ষ থেকে বলা হয়, রেফারেন্স ও গবেষণার জন্য করোনাসংশ্লিষ্ট তথ্য চীনের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন সেন্টার প্রকাশ করবে।
কী কারণে করোনার দৈনিক হিসাব প্রকাশ বন্ধ করা হলো, তা নিয়ে এনএইচএসের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি।
ব্লুমবার্গ ও ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের বরাত দিয়ে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি মাসের প্রথম ২০ দিনে চীনে ২৫ কোটি মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন দেশটির শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
ওই প্রতিবেদন সঠিক হলে চীনের ১৪০ কোটি জনগণের প্রায় ১৮ শতাংশই চলতি মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে, তবে সিএনএন এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।
আরও পড়ুন:চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় চংকিংয়ের পিপল হাসপাতাল। চীনে করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণের খবরের মধ্যে শুক্রবার স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানটিতে যান এএফপির এক প্রতিবেদক। সেখানে রোগীর চাপে বারান্দাকে বানানো হয়েছে অস্থায়ী করোনা ওয়ার্ড।
হাসপাতালটিতে প্রতিরক্ষামূলক গিয়ারে থাকা এক কর্মী ‘মৃত, মৃত’ বলে চিল্লাতে চিল্লাতে এক নার্সের হাতে ডেথ সার্টিফিকেট বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন।
একটি কক্ষে প্রায় ৪০ জন বৃদ্ধ ও মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি হাতে স্যালাইন লাগানো অবস্থায় ছিলেন, যাদের মধ্যে কেউ কেউ দিচ্ছিলেন কাশি।
হাসপাতালের এক নার্স এএফপিকে জানান, ওয়ার্ডের সবাই করোনা রোগী।
ওই কক্ষটির পাশেই নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটের (আইসিইউ) বিছানায় শুয়ে ছিলেন তিন রোগী।
হাসপাতালটির জরুরি বিভাগেও ৫০ জনের সারি দেখা যায়, যাদের মধ্যে অনেকে করোনা রোগী। সেখানে থাকা একজন জানান, তারা এক ঘণ্টার বেশি ধরে অপেক্ষা করছেন।
চংকিংয়ের আরেকটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগেও একই চিত্র দেখা যায়। সেখানে ৩০ জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে হাতে স্যালাইন লাগানো অবস্থায় দেখা গেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস নিচ্ছিলেন, অনেকের হাতে পালস অক্সিমিটার লাগানো ছিল।
হাসপাতালটির এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও এক নার্স এএফপিকে জানান, সরকার করোনার বিধিনিষেধ শিথিলের পর প্রতিদিন বেশ কয়েকজন মারা যাচ্ছেন।
মৃত ব্যক্তিরা সবাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি হাসপাতালটির কর্মীরা।
এএফপির প্রতিবেদকের চোখে করোনাভাইরাসের যে চিত্র ধরা পড়েছে, তার সঙ্গে মিলছে না দেশটির সরকারের দেয়া মৃত্যুর হিসাব।
করোনাভাইরাসে মৃত্যুকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করেছে চীন। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, করোনায় মৃত্যুর তালিকায় তাদেরই অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যারা কোভিড পজিটিভ ছিলেন এবং শ্বাসকষ্টে মারা গেছেন।
‘বেশির ভাগের মৃত্যু করোনায়’
এএফপির টিম বৃহস্পতিবার একটি সমাধি পরিদর্শন করে, যেখানে দুই ঘণ্টায় ৪০টি মরদেহ নামানো হয়। মৃত ব্যক্তিদের স্বজনরা জানান, তাদের বেশির ভাগের মৃত্যু হয় করোনায়।
এক নারী জানান, তার বৃদ্ধ আত্মীয় ঠান্ডাজনিত উপসর্গে ভুগছিলেন। তার করোনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসে, কিন্তু অবস্থা খারাপ হওয়ার পর সময়মতো অ্যাম্বুলেন্স না পাওয়ায় মৃত্যু হয়।
২০ বছর বয়সী আরেক নারীর শঙ্কা, তার বাবাও করোনায় মারা গেছেন, যদিও পরীক্ষা করানো হয়নি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য