করোনাভাইরাসের টিকা নেয়ার জন্য সরকার নির্ধারিত কেন্দ্রগুলোতে শত শত মানুষ ভিড় করেও একদিনে নির্ধারিত সংখ্যার বাইরে টিকা পাওয়া যাচ্ছে না।
এই পরিস্থিতে রাজধানীর দক্ষিণখানে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে বসে মর্ডানার টিকা বিক্রি করছিলেন একজন প্যারামেডিক। প্রতি ডোজ টিকার দাম ৫০০ টাকা।
দরিদ্র পরিবার সেবা সংস্থা নামে এই ক্লিনিকের মালিক বিজয় কৃষ্ণ তালুকদার। তিনি ক্লিনিকে বসে অবৈধভাবে করোনাভাইরাসের টিকা বিক্রি করছেন এমন তথ্য পায় দক্ষিণখান থানা পুলিশ।
ক্রেতা সাজিয়ে একজনকে ক্লিনিকে পাঠায় পুলিশ। টিকা পুশ করার আগেই বুধবার রাত ১১টার দিকে ক্লিনিকে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় বিজয় কৃষ্ণ তালুকদারকে। তার ক্লিনিক থেকে মর্ডানা টিকার একটি ভায়াল (ছোট শিশি) জব্দ করা হয়। পরবর্তীতে তার বাসার ফ্রিজ থেকে আরও একটি ভায়াল জব্দ করা হয়।
বিজয় কৃষ্ণ তালুকদারকে আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ এবং টিকা নিয়েছেন এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে, মর্ডানা টিকার প্রতি ডোজ ৫০০ টাকা করে বিক্রি করছিলেন বিজয় কৃষ্ণ।
কীভাবে তিনি টিকা নিয়ে এসেছেন, কে কে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন তা জানতে রিমান্ডে এনে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় পুলিশ।
তবে আদালতে তদন্ত কর্মকর্তা উপস্থিত না থাকা আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ঢাকার মহানগর হাকিম আবু সাঈদ। একই সঙ্গে আসামির ১০ দিনের রিমান্ড শুনানির দিন আগামী ২৩ আগস্ট ধার্য করেন বিচারক।
প্যারামেডিক বিজয় কৃষ্ণ তালুকদারের কাছে মর্ডানা টিকার দুটি ভায়াল পাওয়া গেলেও এই ভায়ালগুলো রাখার জন্য কাগজের খালি প্যাকেট পাওয়া গেছে অনেক।
এই ক্লিনিক থেকে কতজন মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে তা এখনও নিশ্চিতভাবে জানতে পারেনি তদন্তকারী কর্মকর্তা ও থানা পুলিশের সংশ্লিষ্টরা।
দক্ষিণখান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল হক মিয়া বলেন, দুজন ব্যক্তি এই ক্লিনিক থেকে টিকা নিয়েছেন, এই তথ্য নিশ্চিত হতে পেরেছি। তবে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে আরও অনেক মানুষ টিকা নিয়েছে বলে জানতে পেরেছি।
সরকারের তত্ত্ববধানে সারা দেশে করোনাভাইরাসের টিকা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। নির্ধারিত কেন্দ্রের বাইরে টিকা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। একটি কেন্দ্রের জন্য যে পরিমাণ ভায়াল দেয়া হয়, সেগুলো শেষ হলে খালি ভায়ালগুলো ফেরত দিয়ে নতুন ভায়াল (ছোট শিশি) নিতে হয়।
এই প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকেও প্যারামেডিক বিজয় কৃষ্ণ তালুকদারের কাছে কীভাবে মর্ডানার টিকা এলো, তা তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণখান জোনের অতিরিক্ত উপ কমিশনার ইয়াসিন আরাফাত।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা একটি ভায়ালে অল্প পরিমাণ টিকা পেয়েছি। আরেকটি খালি ছিল। আমরা এগুলো পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠাবো। কীভাবে এই টিকা তার হাতে এল তা তদন্ত করছি।’
বিজয় কৃষ্ণ সরকারে টিকা কার্যাক্রমে উত্তরখান এলাকায় ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করেছেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। তবে কোন কেন্দ্রে ছিলেন, এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জানাতে পারেনি পুলিশ।
কীভাবে বিজয় কৃষ্ণ তালুকদারের কাছে মর্ডানার টিকা গেল তা তদন্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত শেষে দ্রুত সময়ের মধ্যে অধিদপ্তর রিপোর্ট দিবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ঘটনার মূলে কারা থাকতে পারে সেটি খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পুলিশও গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। অধিদপ্তরের কারো সম্পৃক্ততাও থাকতে পারে, সেটি বের করা হবে। যদি তাই হয় তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তের জন্য ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, চীন ও তুরস্কের বিশেষজ্ঞদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তারা তদন্ত করে কারণ ও দায় নির্ধারণে সহায়তা করবেন।
শনিবার (২৫ অক্টোবর) বেলা পৌনে ১২টায় হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত কার্গো ভিলেজ ও ই-গেট পরিদর্শন শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। ফায়ার সার্ভিস ফেল করেনি। তারা সময়মতো ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভাতে কাজ করেছে। এয়ারপোর্ট অথরিটির চারটি ইউনিট চার মিনিটের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। ফায়ার ব্রিগেডের ইউনিটগুলোও ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে আসে। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে কারণ ওই জায়গায় খাদ্যপণ্য বেশি ছিল, কেমিক্যাল নয়।
তিনি আরো বলেন, বিমানবন্দরে ইলেকট্রনিক গেট স্থাপন দ্রুত চালুর বিষয়ে আলোচনা চলছে। এছাড়া রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের পাসপোর্ট সংক্রান্ত ভোগান্তি কমাতে সরকার পদক্ষেপ নেবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
বিমানবন্দরের ফায়ার ইউনিটের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, যে ফায়ার ইউনিট বিমান পরিচালনার জন্য থাকে, সেটি কার্গো ভিলেজেও কাজ করতে পারে—এতে কোনো সমস্যা নেই। যেমন আমরা বাসায় যে পোশাক পরি, তা প্রয়োজনে পরে আত্মীয়ের বাড়িতেও যাওয়া যায়।
এ সময় বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিকসহ অন্যান্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
নীলফামারীতে পঞ্চাশ বছরের পুরোনো একমাত্র চলাচলের রাস্তা দখল করে দোকান নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে সেতু নামে স্থানীয় এক প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে। এতে সদর উপজেলার চড়াইখোলা ইউনিয়নের নগর দাড়োয়ানী টেক্সটাইল কবিরাজ পাড়া গ্রামের ১৫টি পরিবার চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। স্থানীয়রা জানান, রাস্তাটি দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তারা বাজার, স্কুল, মসজিদ ও হাসপাতালে যাতায়াত করে আসছিলেন। কিন্তু রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় পুরো গ্রাম প্রায় অবরুদ্ধ। বিষয়টি নিয়ে তারা চড়াইখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে অভিযোগের পরও কোনো ব্যবস্থা নেয় নি তারা।
ভুক্তভোগী আঞ্জুয়ারা সুমি বলেন, “আমরা প্রায় ৫০ বছর ধরে এই রাস্তায় চলাচল করছি। এখন সেতু দোকান তুলে পুরো পথ বন্ধ করে দিয়েছে। রাস্তাটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে কষ্ট হচ্ছে।”
রুবি বেগম বলেন, “বাড়ি থেকে বাজারে যেতে এখন অনেক দূর ঘুরে যেতে হয়। বৃদ্ধ মানুষদের জন্য এটা অনেক কষ্টকর।”
শিক্ষার্থী ফারজানা আক্তার বলেন, “রাস্তায় দোকান উঠায় স্কুলে যেতে অনেক দেরি হয়। ক্লাসও মিস করি।” নয়ন ইসলাম বলেন, “আমরা খেলাধুলা বা পড়াশোনার কাজে বাইরে যেতে পারি না, কারণ রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ।”
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত সেতু বলেন,“তারা এখন পর্যন্ত আমাদের জমিতে বসবাস করতেছে। আমরা তাদের রাস্তা দিয়েছি, থাকার জমি দিয়েছি। তাদের এখন ওই রাস্তা দিয়ে চলতে দূর হয় নাকি। তারা যে অভিযোগ করছে তা সত্য নয়। তাদের চলাচলের রাস্তা রয়েছে।”
এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন,“বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।”
ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের রামাল্লায় বিয়ে করতে যাওয়ার পথে এক বরকে ধরে নিয়ে গেছে ইসরাইলি সেনারা। গত শুক্রবার এ ঘটনা ঘটে।
বার্তা সংস্থা ওয়াফা নিউজ জানিয়েছে, বর তার বাবাসহ একটি গাড়িতে ছিলেন। তারা রামাল্লার রেন্টিস শহরে যাচ্ছিলেন।
স্থানীয়দের বরাতে বার্তা সংস্থাটি জানিয়েছে, আওন সাফি নামে ওই বরের সঙ্গে একই গাড়িতে যাচ্ছিলেন তার বাবা মাজেন সাফি। তারা রেন্টিস শহরের প্রবেশদ্বারে এলে ইসরাইলি সেনারা গাড়িটি আটকায়। তাদের প্রথমে আটক এবং পরে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। এ ছাড়া সেনারা গাড়ির চাবিও নিয়ে যায়।
একটি সূত্র জানিয়েছে, এই যুবকের পুরো পরিবার বিয়ে বাড়িতে যাচ্ছিলেন। তখন বাবা ছেলেকে ধরে নিয়ে গেছে ইসরাইলি সেনারা।
সূত্র : আলজাজিরা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) আলোকে বাংলাদেশ সরকার প্রথমবারের মতো সরকার টু সরকার (জিটুজি) পদ্ধতিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানি কার্যক্রম শুরু করছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, এই চুক্তির আওতায় মোট ৪ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানি করা হবে, যার প্রথম চালান হিসেবে ৫৬ হাজার ৯৫৯ মেট্রিক টন গমবাহী জাহাজ আজ চট্টগ্রাম বন্দরের বহিঃনোঙরে পৌঁছেছে।
জাহাজে রাখা গমের নমুনা পরীক্ষার কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে বলেও জানিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গমের নমুনা পরীক্ষা শেষে দ্রুত খালাসের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ৫৬ হাজার ৯৫৯ মেট্রিক টন গমের মধ্যে ৩৪ হাজার ১৭০ মেট্রিক টন চট্টগ্রামে এবং অবশিষ্ট ২২ হাজার ৭৮৯ মেট্রিক টন গম মোংলা বন্দরে খালাস করা হবে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নে অস্ত্র ও মাদকবিরোধী অভিযানে বিদেশি পিস্তল, গুলি ও হেরোইনসহ জাহিদুল ইসলাম জামিল মালিথা (৪০) নামে চরমপন্থী ৪০ বাহিনীর সদস্য গ্রেপ্তার করেছে কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়ন (৪৭ বিজিবি)।
গ্রেপ্তারকৃত জামিল মালিথা ফিলিপনগর এলাকার কুখ্যাত চরমপন্থী ৪০ বাহিনীর প্রধান রাখির সহযোগী। এছাড়াও অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। তিনি ফিলিপনগর ইউনিয়নের সিরাজনগর মালিথাপাড়া গ্রামের মৃত জালাল মালিথার বড় ছেলে।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) রাতে ফিলিপনগর ইউনিয়নের আবেদের ঘাট এলাকায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার হেফাজত থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, এক রাউন্ড গুলি এবং ০.০৪৮ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়।
কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়ন ৪৭ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব মোর্শেদ রহমান পিএসসি জানান, জামিল দীর্ঘদিন ধরে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে অবৈধ অস্ত্র ও মাদক আমদানি করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন। পদ্মা নদী সংলগ্ন সীমান্ত এলাকা হওয়ায় তিনি স্থানীয় ও সীমান্তপারের একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান পরিচালনা করতেন।
স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, জামিল মালিথা ফিলিপনগর, চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নসহ পদ্মা নদীসংলগ্ন চরাঞ্চলজুড়ে মাদক (বিশেষ করে ফেনসিডিল ও হেরোইন) এবং অস্ত্র ব্যবসার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতেন। তিনি চরমপন্থী সংগঠন ‘৪০ বাহিনী’র প্রধান রাখির ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবেও পরিচিত। এর আগে অস্ত্র ও মাদকসহ একাধিক মামলায় তার নাম রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোলাইমান শেখ দৈনিক বাংলা কে বলেন, শুক্রবার রাতে বিজিবির অভিযানে শীর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী জামিল মালিথাকে অস্ত্র ও হেরোইনসহ গ্রেপ্তার করে থানায় হস্তান্তর করেছে। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পৃথক মামলা দায়ের করে আদালতে প্রেরণের প্রক্রিয়া চলছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান মুকুল দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছেন।
শুক্রবার (২৩ অক্টোবর ২০২৫) রাত ৮টার দিকে নবীনগর পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের পদ্মপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাত সাড়ে ৮টার দিকে নবীনগর বাজার থেকে রিকশাযোগে নিজ বাড়িতে ফেরেন মফিজুর রহমান মুকুল। বাড়ির গেইটের সামনে রিকশা থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে ওত পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তার পিঠে অস্ত্র ঠেকিয়ে পরপর দুটি গুলি করে পালিয়ে যায়। এতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ তিনটি গুলির খোসা উদ্ধার করেছে।
চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
গুলিবিদ্ধ মফিজুরের বড় ভাই মিজানুর রহমান বলেন,“মানুষের চিৎকার শুনে বাইরে এসে দেখি ভাই রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছেন। দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।”
নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর ইসলাম জানান,ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তদন্ত চলছে এবং জড়িতদের শনাক্তে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।”
নবীনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, মফিজুর রহমানের পিঠের নিচে কোমরের কাছে দুটি গুলি লেগেছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তার রক্তচাপ অত্যন্ত কম ছিল।
জানা যায়, শুক্রবার রাতে উপজেলার বিটঘর ও শিবপুর ইউনিয়নে দলীয় কর্মসূচি শেষে তিনি নিজ বাড়ি পদ্মপাড়ায় ফিরছিলেন। বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছালে পেছন থেকে দুর্বৃত্তরা গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়।
স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।
বাঙ্গালীর ইলিশের রাজ্য হিসেবে খ্যাত লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগরের মেঘনায় জাটকা ও মা-ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে আজ (২৫ অক্টোবর) শনিবার রাত ১২ টায়। নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশ শিকারে নদীতে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এ অঞ্চলের জেলেরা।
গত ৩ অক্টোবর রাত ১২ টা থেকে ২৫ অক্টোবর রাত ১২ টা পর্যন্ত মোট ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে আজ শনিবার। এই ২২ দিনে বেশীরভাগ জেলেরা ইলিশ ধরা থেকে বিরত থাকলেও রামগতি উপজেলা মৎস্য অফিসের সহকারী আব্দুজ্জাহের ও বড়খেরী নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির নিয়োগকৃত দালাল ও যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ ইসমাইলের সেল্টারে রামগতি মাছঘাট, বয়ারচর ব্রীজঘাট, গাবতলী ঘাট, টাংকিরঘাট সহ মেঘনা নদীর কয়েকটি পয়েন্টে নৌকা প্রতি ১০ থেকে ১৫ হাজার করে টাকা নিয়ে অবাধে মা-ইলিশ নিধন করার অভিযোগ রয়েছে। অভিযানের শেষ দুই দিন জাটকা ও মা-ইলিশ নিধনের প্রতিযোগিতায় নামেন বড়খেরী নৌ-পুলিশ ও মৎস্য অফিস। গতকাল শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) বেশ কিছু নৌকা আটক করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে নৌকা প্রতি ১০ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয় নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সফিকুর রহমান। এমনটাই জানিয়েছে ২ জন জেলে। এতে মৎস্য সম্পদ রক্ষায় সরকারের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। খোদ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষরাই এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করাই জনমনে ক্ষোভ-অসন্তোষ দেখা গেছে।
এদিকে নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা নদীতে মাছ শিকারের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলেরা। নৌকা-ট্রলার ধোয়ামোছার কাজে ব্যস্ত তারা। অনেকেই জাল বুনতে দেখা গেছে।
রামগতি ও কমলনগর উপজেলার কয়েকটি জেলে পল্লীতে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে, কেউ জাল ও মাছ ধরার নৌকা মেরামত করে আগেই প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছেন,আবার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে নদী পাড়ের মাছের আড়তগুলো। কয়েক ঘন্টা পর নদীতে নামবেন তারা। তাই এখন দম ফালানো সময় নেই তাদের। অভিযান সফল হওয়ায় আগামীতে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, কমলনগরে ১৪ হাজার ৯৮ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। আর রামগতিতে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ২০ হাজার ৩৬০ জন। দুই উপজেলায় মোট ৩৪ হাজার ৪৫৮ জন জেলে রয়েছে।
আলেকজান্ডার মাছঘাটের জেলে রবিউল মাঝি জানান,অন্যবারের তুলনায় এবারের নিষেধাজ্ঞায় ছিল নড়েবড়ে। এ কারণে প্রচুর জেলে নদীতে মা-ইলিশ শিকার করতে পেরেছে। ফলে আমরা যারা নিষেধাজ্ঞা মেনে নদীতে যায়নি,তারা কেউ মহাজন থেকে, কেউ এনজিও থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে সংসার চালিয়েছি।
বিবিরহাট উছখালী ঘাটের জেলে মফিজ মাঝি জানান, এই ২২ দিন অনেক কষ্ট করে সংসার চালিয়েছি। সরকার সামান্য কিছু চাল দেয়, তা দিয়ে তার ৯ জনের সংসার চলেনা। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় বেশ খুশি তিনি।
কমলনগর উপজেলার লুধুয়া মাছঘাটের জেলে নিজাম উদ্দিন বলেন আমার তিনটা ছোট বাচ্চা, স্ত্রী, মা সবাই তাকিয়ে থাকে আমার রোজগারের দিকে। নিষেধাজ্ঞার ২২ দিন একটি এনজিও থেকে ২০ হাজার টাকা সুদের উপর ঋণ নিয়ে চলেছি। নিষেধাজ্ঞা শেষ এখন নদীতে গিয়ে ওই ঋণ পরিশোধ করতে হবে সংসারও চালাতে হবে।
মৎস্য অফিস সুত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনল এলাকার ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ৩ অক্টোবর রাত ১২ টা থেকে ২৫ অক্টোবর মোট ২২ দিন মেঘনা নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। এই ১০০ কিলোমিটার মেঘনা নদী এলাকাকে ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করছে সরকার। নিষেধাজ্ঞার সময় ওইসব এলাকায় সব রকমের ইলিশ সংরক্ষণ, আহরণ, পরিবহন, বাজারজাতকরণ ও মজুতকরণ নিষিদ্ধ ছিল।
কমলনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুর্য সাহা ও রামগতি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ সৌরব-উজ জামান বলেন, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা সফলতার সাথে শেষ হয়েছে। মৎস্য বিভাগ, জেলা-উপজেলা প্রশাসন, নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সমন্বয়ে প্রতিদিন অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
মন্তব্য