জমজমাট নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে দেশে যে দীর্ঘ লাইন দেখা যায়, সেই স্মৃতি যেন ফিরিয়ে আনল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে শুরু হওয়া গণটিকাদান কর্মসূচি।
প্রথম দিন শনিবার দেশের বেশিরভাগ টিকাকেন্দ্রে দেখা গেছে আগ্রহীদের দীর্ঘ সারি। দেখে মনে হতেই পারে সেখানে ভোট চলছে। একেক করে প্রত্যেককে প্রবেশ করানো হচ্ছে কক্ষে; দেয়া হচ্ছে টিকা।
সারা দেশে একযোগে এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে শনিবার সকাল ৯টা থেকে; চলবে বেলা ৩টা পর্যন্ত।
প্রতিটি কেন্দ্রেই পূর্ব নির্দেশনা অনুযায়ী জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে নিবন্ধন করা হচ্ছে। এরপর দেয়া হচ্ছে টিকার প্রথম ডোজ।
‘প্রথমে ডরাইছিলাম এখন আর নাই’
টাঙ্গাইলের বাসাইলের নথখলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকালে টিকা নিতে আসেন ৬২ বছর বয়সী আবুল কাশেম।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বাবারে প্রথমে খুব ডরাইছিলাম। তাই টিকা নেই নাই। মেলাজনেই মেলা কথা কইছে। তারপরও টিকা নেই নাই। ভাবছিলাম কী না কী হয়। তয় আজকে দেখলাম বেক্কেই নিবার আইলো। তাই আমিও তাগো পিছে পিছে আইছি আইডি কার্ড নিয়া।
‘আওয়ার নগে নগেই দেহি ডাক দিলো আমারে। ভিতরে ঢুকলাম। আইডি কার্ড নিল, কাগজে কী জানি লেখল আর মোবাইল নাম্বার জিগাইল...তারপরই সিরিঞ্জ বাইর কইরা ভিতরে ওষুধ ডুকাইয়া আমার ডাইন হাতের ডেনায় ডুকাইয়া দিল। এট্টুও দুক্কু পাই নাই। এহন আর ডর নাই।’
কাশেমের মতো সকাল থেকেই এ কেন্দ্রে টিকা নিতে আগ্রহীরা ভিড় করেছেন। জেলার ৯৮টি ইউনিয়ন ও তিনটি পৌরসভায় চলছে গণটিকাদান। সবগুলো কেন্দ্রেই কম-বেশি ভিড়। মুখে মাস্ক থাকলেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে দেখা যায়নি কোথাও।
জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে কেন্দ্রে নিবন্ধন করে টিকা পাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
সিলেটে প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা
বিপুল উৎসাহে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা নিতে দেখা গেছে সিলেটের গ্রহীতাদের। জেলা ও মহানগরী এলাকায় প্রায় ৪ শতাধিক বুথে শুরু হয় গণটিকাদান। প্রতিবন্ধী ও চলাচলে অক্ষমদের টিকা দেয়া হচ্ছে বিশেষ ব্যবস্থায়।
সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় ২৭টি ওয়ার্ডে ৮১টি বুথে শনিবার দুপুর ৩টা পর্যন্ত ২৪ হাজার ৩০০ জন পাবে টিকা।
সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, দেশব্যাপী এক দিন ক্যাম্পেইন চললেও সিলেট মহানগরীতে রোববার ও সোমবারও চলবে এই কার্যক্রম।
জেলার প্রতি ইউনিয়নে তিনটি করে মোট ৩০০টি বুথে টিকা দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। প্রতিটি বুথে সর্বোচ্চ ২০০ জন করে মোট ৬০ হাজার জনকে টিকা দেয়ার লক্ষ্যের কথা জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
নগরীতে মডার্না এবং উপজেলা ও জেলায় দেয়া হচ্ছে সিনোফার্মের টিকা।
নগরের রেড ক্রিসেন্ট মাতৃমঙ্গল হাসপাতালে সিলেট সিটি করপোরেশন শনিবার সকাল ৯টায় টিকা ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করেন। তাতে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন।
মেহেরপুরে টিকা না পাওয়ার অভিযোগ বৃদ্ধদের
মেহেরপুরের ১৮টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় চলছে গণটিকাদান। বয়স্কদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেয়ার নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
টিকা নিতে এসে ফিরে যাওয়া সদরের ৪ নম্বর বামন্দী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ষাটোর্দ্ধ হাজী আজীরন খাতুন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বয়স ষাট বছর হই গিছে। আমার নাম নাই। মেম্বার আমার নাম দেইনি। এ জন্য আমি টিকা পাইছিনি। তাই বাড়ি চইলি যাইছি।’
আরেক বৃদ্ধা জমেলা বেগম জানান, তার বয়স ৫৯। ৬০ বছর না হওয়ায় তিনি টিকা পাননি।
তিনি বলেন, ‘আমি অসুস্থ মানুষ। তাই ইউনিয়ন পরিষদে টিকা নিতে আসছি। কিন্তু আমার বয়স ষাট বছর না হওয়ায় টিকা দিল না। অথচ ত্রিশ বছরের একজনকে টিকা দিল।’
ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কামাল হোসেন বলেন, ‘গতকাল রাতে চেয়ারম্যান সাহেব ফোন দিয়ে বলল, আগামীকাল পরিষদে টিকা প্রদান করা হবে। ষাটোর্ধ্ব ৬৫ জনের নাম দিতে হবে। আমি পইড়ি গিছি বিপদে। সত্তর, আশি বছরের যা মানুষ আছে তা ১০০ জনের উপরে হবে। তাই আমি মানুষের অত্যাচারে ফোন বন্ধ রাইখিছি।’
তবে সিভিল সার্জন নাসির উদ্দিন বলছেন, বৃদ্ধ ও অসুস্থরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা পাবেন। তিনি জানান, আঠারো ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় প্রথম দিন ১২ হাজার ৬০০ জনকে টিকা দেয়া হবে।
চট্টগ্রামে অগ্রাধিকারের তালিকায় দুর্গম এলাকার মানুষ
চট্টগ্রামে মহানগর ও উপজেলার মোট ৩২৬টি কেন্দ্রে গণটিকাদান চলছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জেলার ১৪টি উপজেলার ২০৩টি বুথে এবং মহানগরের ১২৩টি বুথে চলবে টিকাদান। পৌর এলাকার বাসিন্দারা স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে টিকা পাবেন।
জেলা সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বয়স্ক, নারী, প্রতিবন্ধী ও দুর্গম এলাকা থেকে আগতদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেয়া হচ্ছে। প্রতিটি বুথে পাঁচ জনের একটি টিম টিকাদানে কাজ করছে৷ এর মধ্যে দুজন সরাসরি টিকা দান করছেন। অন্য তিনজন তাদের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে আছেন।’
অব্যবস্থাপনা লালমনিরহাটে
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, জেলার ৪৫টি ইউনিয়ন পরিষদ ও দুই পৌরসভায় টিকা দেয়ার জন্য খোলা হয়েছে ১৫০টি কেন্দ্র। প্রথম দিন টিকা পাওয়ার কথা ২৯ হাজার ৪০০ জনের।
লালমনিরহাট পৌরসভায় ২ নম্বর ওয়ার্ডের গিয়াস উদ্দিন বিদ্যালয়ে নারী-পুরুষদের একই বুথে টিকা দেয়া হচ্ছে বলে ক্ষোভ জানিয়েছেন গ্রহীতারা। সেই সঙ্গে ভিড় সামলাতে প্রশাসনের লোকজন দেখা যায়নি বলে অভিযোগ তাদের।
জেলা সিভিল সার্জন নির্মলেন্দু রায় নিউজবাংলাকে জানান, প্রথম দিন হওয়ায় উপচে পড়া ভিড় প্রায় সব কেন্দ্রে। আস্তে আস্তে প্রতিদিন ভিড় কমবে।
‘আমরা শেখ হাসিনার কাছে ঋনী’
নাটোর সদরের দিঘাপতিয়া ইউনিয়নের শিবদূর গ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ঘুরে দেখা গেছে টিকা নিতে আগ্রহীদের ভিড়। সেখানে চেয়ার নিয়ে বসে ডাক পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন বৃদ্ধ শামসুল হক।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সরকার আমাদের বাড়ির কাছে টিকা লেওয়ার সুযোগ করে দিছে। আমরা শেখ হাসিনার কাছে ঋনী হয়ে থাকনু।’
এই কেন্দ্রেই হুইলচেয়ারে করে এসেছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী মানিক সরকার।
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পাইত্যে টিক্যা লিতে আসিছি। গ্রেরামেত টিক্যা দেয়ার ব্যবস্থা করাত টিকা লেওয়া অনেক সহজ হছে।’
এই জেলার ৬ উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়ন ও নাটোর পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে একযোগে চলছে গণটিকাদান।
সিভিল সার্জন কাজী মিজানুর রহমান জানান, শনিবার মোট ৩১ হাজার ২০০ জনকে টিকা দেয়া হবে।
টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে প্রশাসনের লোকজন নজরদারিতে আছেন বলে জানান জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ।
রংপুরে অস্থায়ী কেন্দ্রে টিকা পাচ্ছে না আগে থেকে নিবন্ধনকারীরা
রংপুরে অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে উপচে পড়া ভিড় সকাল থেকেই। জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে সেখানে নিবন্ধন করে টিকা নিচ্ছেন আগ্রহীরা। তবে আগে থেকে যারা নিবন্ধন করেছিলেন, তাদের সেখানে টিকা দেয়া হচ্ছে না বলে জানালেন অনেকে।
নগরীর সাতমাথা খাশবাগ এলাকার মুনিরা বেগম বলেন, ‘খাশবাগ স্কুলে সাড়ে দশটার দিকে গেছিলাম। আমাকে বলেছে যেহেতু রেজিস্ট্রেশন করেছেন আগে, তাই মেডিক্যালের কেন্দ্রে যান। আমি মেডিক্যালের কেন্দ্রের দিকে যাচ্ছি।’
নগরীর বাবু খাঁ এলাকার জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আমি আগে রেজিস্ট্রেশন করেছি। তাই ওয়ার্ডের টিকাদান কেন্দ্রে টিকা দেয়নি। এখন মেডিক্যালে যাচ্ছি।’
নগরীর লালকুটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে দেখা যায়, সেখানে ২০০ জনকে টিকা দেয়ার কথা। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে এই কেন্দ্রে ১৬০ জনের রেজিস্ট্রেশন হয়েছে বলে সেখানকার পরিদর্শক রায়হানুল ইসলাম জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, অতিরিক্ত মানুষ হওয়ায় এই কেন্দ্রে ২০৯ জনকে টিকা দেয়া যাবে। এর বেশি হলে মজুত নেই।
জেলা সিভিল সার্জন অফিস জানিয়েছে, সিটি করপোরেশন ও জেলার আট উপজেলায় ৬৫ হাজার ৪০০ জনকে টিকার আওতায় আনা হবে। এ জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে টিকাদান কেন্দ্রে তিনটি করে বুথ রয়েছে। আর সিটি করপোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডে একটি করে টিকাদান কেন্দ্রে তিনটি বুথ রয়েছে।
জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়েও টিকা না পাওয়ার অভিযোগ
কুদ্দুস ব্যাপারির বয়স আশি, থাকেন রাজবাড়ী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে। শনিবার সকালেই জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে টিকার জন্য তিনি যান ওয়ার্ডের কাজী হেদায়েত হোসেন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থেকে, পরিচয়পত্র দেখিয়েও তিনি টিকা পাননি।
এই অভিযোগ সেখানকার অনেকেরই। আবার অনেক কেন্দ্রে আগে থেকে নিবন্ধন করা লোকজন গেলে তাদের টিকা দেয়া হচ্ছে না।
৮ নম্বর ওর্য়াডের মো. সালাম জানান, রেজিস্ট্রেশন করে টিকা কার্ড আনার পরও বলা হয়েছে পরিচয়পত্র দেখাতে। তাই টিকা না নিয়ে ফেরত যান।
নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি ওয়ার্ডে টিকা পাওয়ার কথা ২০০ জনের।
এ বিষয়ে জেলার সিভিল সার্জন ইব্রাহিম টিটন জানান, বয়স্কদের ক্ষেত্রে শুধু জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলেই টিকা দেয়া হবে। সরেজমিনে তা মানা হচ্ছে না, এমন অভিযোগ তিনি খতিয়ে দেখবেন।
তিনি জানান, রাজবাড়ী পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড, পাংশা পৌরসভার ১টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে মোট ৫২টি কেন্দ্রে ২৭ হাজার ৩০০ জন শনিবার টিকা পাবেন।
এছাড়া, গণটিকাদান কর্মসূচির প্রথম দিন ব্যাপক সাড়া মিলেছে বরিশাল, ভোলা, চাঁদপুর, চুয়াডাঙ্গা, কক্সবাজার, গোপালগঞ্জ, হবিগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, নেত্রকোণা, নীলফামারী, পাবনা, পঞ্চগড়, পটুয়াখালী, সাতক্ষীরা ও শেরপুরেও।
প্রায় সব কেন্দ্রেই দুপুর ১২টা নাগাদ টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের বেশি মানুষের নিবন্ধন করে টিকা নিয়ে ফেলেছেন বলে জানিয়েছেন নিউজবাংলার প্রতিবেদকরা।
আরও পড়ুন:নোয়াখালীতে গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক সচরতা বৃদ্ধিতে স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের অংশ গ্রহণের সমন্বিত পরিকল্পনা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বুধবার সকাল ১১ টার দিকে (২৫ জুন) জেলা প্রশাসকের কার্যালয় তৃতীয় তলায় মিনি কনফারেন্স হলরুমে কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক জালাল উদ্দিন,নোয়াখালী অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইয়াসিন, গ্রাম আদালত নোয়াখালী ম্যানেজার আহসানুল্লাহ চৌধুরী মামুনসহ এনজিও প্রতিনিধি, সাংবাদিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ,সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের একটি বিচারাধীন মামলার নথি থেকে এজাহারের কপি রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়ে গেছে। আদালতের নথি থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই কাগজ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়ে মামলার বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির ও আসামিপক্ষের আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুলকে শোকজ করেছেন বিচারক। তাদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যাখা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ঘটনাটি ঘটে গত ২২ জুন যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে। ওই দিন মামলাটির (এসসি-১৬৬৯/২০১৮) সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য নির্ধারিত ছিল। আদালতে আসামি, রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ও আসামিপক্ষের আইনজীবী—সবাই উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে বিচারক মো. সালেহুজ্জামান মামলার নথি পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পান, নথিতে মামলার এজাহারের কপি নেই। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি আদালতের বেঞ্চ সহকারীকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি জানান, সাক্ষ্য গ্রহণের আগে আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল তার কাছ থেকে নথি নিয়ে গিয়েছিলেন এবং এজাহার দেখে প্রয়োজনীয় তথ্য লিখে নিয়েছিলেন। এরপর তিনি আবার নথি বিচারকের কাছে জমা দেন।
এরপর এজলাসেই বিচারক আইনজীবীর কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে মন্তব্য করেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারাসহ সিনিয়র আইনজীবীরা এজলাসে হাজির হন। একপর্যায় বিচারক ওই দুইজনকে শোকজ করে আগামী ১৩ আগস্ট মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিচারক এজলাসে ওঠার আগে আইনজীবী মামলার নথি নিয়েছিলেন। পরে ফেরত দেন। আমি নিজে নথিতে কোনো হেরফের করিনি। আইনজীবী কিংবা আইনজীবীর সহকারীর মাধ্যমে এই ঘটনা ঘটতে পারে।’
অন্যদিকে, আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল জানান, তিনি নথি নিয়েছিলেন ঠিকই, তবে বিচারক এজলাসে চলে আসায় তা যথাযথভাবে বেঞ্চ সহকারীর কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তিনি আসামির চালান কপি থেকে তথ্য নিয়েছেন। এজাহার সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলেও দাবি করেন।
যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ গফুর বলেন, ‘ঘটনাটি আমাদের নজরে এসেছে। একজন আইনজীবী এমন কাজ করতে পারেন না। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছি।’
আদালত ও আইনজীবী সমিতি সূত্র আরও জানায়, আদালতে থাকা মামলার মুল কপি থেকে মামলার এজাহারের কপি সরিয়ে নিয়ে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার সুযোগ নেই। এ ছাড়া এজাহার কপি হারিয়ে গেলেও মামলার বিচারের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ ওই মামলার এজাহারের ফটোকপি রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলির কাছে সংরক্ষিত থাকে। এর বাইরেও অনেক মাধ্যমে মামলার এজাহারের কপি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তবে, মুল নথিতে এজাহারের কপি না থাকাটা সমীচীন নয়। এ বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে জানায় সূত্র।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে মিজানুর রহমান রিপন (৪৮) নামের এক স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীকে মারধর ও লাঞ্চিতের ঘটনা ঘটেছে। মিজানুর রহমান রিপন ফিলিপনগর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে।
গত রবিবার সন্ধার দিকে দৌলতপুর উপজেলা পরিষদ বাজারে এই ঘটনা ঘটে। মিজানুর রহমান রিপন ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক আমর সংবাদ পত্রিকার দৌলতপুর উপজেলা প্রতিনিধি ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল ডেইলি নিউজ বাংলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে কাজ করে আসছেন। এঘটনায় ওই দিন রাতে ভূক্তভুগী নিজে বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় একটি লিখিত এজাহার দায়ের করেন।
এযাহার সূত্রে জানাযায়, গত ৮ জুন উপজেলার তারাগুনিয়া থানার মোড় এলাকার তারাগুনিয়া ক্লিনিকে আখি খাতুন (২২) নামের এক প্রশুতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় তিনি সহ উপজেলার বেশ কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মী সংবাদ প্রকাশ করে। তারি জের ধরে উপজেলা বাজারে থাকা সরকার নিষিদ্ধ ক্লিনিক বেবি নার্সিং হোম এর মালিক আহসান হাবিব কালুর ছোট ছেলে খালিদ হাসান আর্জু উপজেলা বাজারে তাকে মারধর করে।
এবিষয়ে মিজানুর রহমান নামের ওই গণমাধ্যম কর্মী বলেন, গতকাল বিকেলে আমি উপজেলা বাজারে বাড়ির দৈনন্দিন বাজার করছিলাম এসময় খালিদ হাসান আর্জু উপজেলা বাজারের বেবী ক্লিনিক মালিকের ছেলে আমার উপর হামলা চালায়। এসময় সে আমাকে বলে আমার হাসপাতালে যে ডাক্তার আসে সেই ডাক্তারের নামে তুরা নিউজ করেছিস বলে আমার উপর হামলা চালিয়ে বেদড়ক মারধর করে। এঘটনার পর আমি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
গণমাধ্যম কর্মীকে মারধরের বিষয়ে, দৌলতপুর উপজেলার একজন প্রবীন গণমাধ্যম কর্মী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যে ধরনের ঘটনা ঘটেছে এটি কখনই কাম্য নয়। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা নেওয়া উচিৎ।
এঘটনায় দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি নাজমুল হুদা জানান, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
অভিযুক্ত খালিদ হাসান আর্জু
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী কর্তৃক ফেনী এলাকায় গত '২৪ এর ভয়াবহ বন্যা পরবর্তী বিভিন্ন উন্নয়নমূলক, সংস্কার ও পুর্নগঠন কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে।
সোমবার (২৩ জুন) সকাল ১১ টায় ফেনী ছাগলনাইয়া উপজেলার ঘোপাল ইউনিয়নের দুর্গাপুরে হাবিব উল্যাহ খাঁন উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ উপলক্ষে এক আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন, বিবিপি, ওএসপি, জিইউপি, এনএসডব্লিউসি, পিএসসি।
বিমান বাহিনী প্রধান ফেনী এলাকায় বন্যা পরবর্তী উন্নয়নমূলক সংস্কার ও পুর্নগঠন কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুদানের চেক হস্তান্তর করেন। হাবিব উল্যাহ খান উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বৃক্ষরোপণ ও পরে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেন। উদ্বোধন উপলক্ষে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সহায়তায় ছাগলনাইয়া উপজেলার হাবিব উল্যাহ খান উচ্চ বিদ্যালয় এর নবনির্মিত শাহীন ভবন উদ্বোধন এবং দুর্গাপুর সিংহনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নুরুল কোরআন ইসলামিয়া মাদ্রাসার উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন করেন।
এ ছাড়া বিমান বাহিনী কর্তৃক ফেনী জেলার বন্যা দুর্গতদের সহায়তায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম, বন্যা দুর্গতদের জন্য মেডিকেল সেবা পরিচালনা ও চিকিৎসা সেবা সহায়তা প্রদান কার্যক্রম পরিদর্শন ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন বিমান বাহিনী প্রধান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিমান বাহিনী প্রধান ফেনী জেলায় ২০২৪ সালের আকস্মিক বন্যাকালীন ও বন্যা পরবর্তী সময়ে বিমান বাহিনীর ভুমিকার ভূয়সী প্রসংশা করেন এবং পাশাপাশি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে যে সকল প্রতিষ্ঠান আর্থিক, ত্রাণ ও বিভিন্নভাবে সার্বিক সহায়তা প্রদান করেছেন তাদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি বিমান বাহিনীর উন্নয়ন কার্যক্রমে স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকাবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতেও বিমান বাহিনী দেশ ও জনগণের পাশে থাকবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন।
তিনি আরো বলেন, বন্যার সাথে তৎকালীন বৈরী আবহাওয়া ও বিছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী পেশাদারিত্বের সাথে বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসে, যা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং ছিল। এ পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা দিকনির্দেশনায় এবং বিমান বাহিনী প্রধানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ভয়াবহ এ বন্যাদুর্গত কুমিল্লা, নোয়াখালী এবং বিশেষ করে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ফেনী জেলায় হেলিকপ্টার ও ইউএভি এর মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে এরিয়াল রেকোনাইসেন্স মিশন পরিচালনা করে বন্যা দুর্গত মানুষের সহায়তায় প্রয়োজনীয় জরুরী উদ্ধার, ত্রাণ বিতরণ ও চিকিৎসা কার্যক্রমে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
বিমান বাহিনীর সূত্র জানায়, সামগ্রিকভাবে বিমান বাহিনী বন্যা পরবর্তী এ পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী উপজেলার বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এতিমখানা, ধর্মীয় উপাসনালয় ও রাস্তা-ঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ এবং সংস্কার কার্যক্রম ইতিমধ্যে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া, দূর্গাপুর, ছাগলনাইয়্যা-এ অবস্থিত হাবিব উল্যাহ্ খান উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্রমবর্ধমান ছাত্র-ছাত্রী ও স্থানীয় জনসাধারণের চাহিদা বিবেচনা করতঃ শাহীন ভবন নামে একটি চারতলা ভিত বিশিষ্ট দুইতলা ভবন আসবাবপত্রসহ নির্মাণ করা হয়েছে, যেটি দুর্যোগকালীন সময়ে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে। এ উন্নয়নমূলক কার্যক্রমগুলো মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করেছে ঢাকাস্থ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশার ও বিমান বাহিনী ঘাঁটি একে খন্দকার।
অনুষ্ঠানে সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (প্রশাসন), বিমান ঘাঁটি বাশারের এয়ার অধিনায়ক, বিমান বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকতাবৃন্দ, ফেনী জেলা প্রশাসক, সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফেরার পথে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে অপহরণ করে মুক্তিপন দাবি করে দুষ্কৃতিকারীরা।
পরে মুক্তিপণ না পেয়ে মোবাইল ফোন-মানিব্যাগ রেখে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে ছেড়ে দেয় অপহরণকারীরা।
সোমবার (২৩ জুন) বরিশাল থেকে গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ যাওয়ার পথে মাদারিপুরে সকাল ৮টার দিকে বাস থেকে নামলে অপহরণের শিকার হন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম মো. আসাদ, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায়।
আসাদের পরিবার ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অপহৃত শিক্ষার্থীর বড় চাচা মারা যাওয়ায় আজ ভোরে ৬টায় বরিশাল থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে মাদারিপুর পর্যন্ত যান বাসে। বাস থেকে নেমে মাদারিপুর নেমে ঝিনাইদহে যাওয়ার জন্য গাড়ি খুঁজতেছিলেন এমন সময় মাইক্রোবাসটি তাকে ঝিনাইদহে পৌঁছে দিবে বলে উঠিয়ে নেয়। উঠিয়ে নেয়ার পর অপহরণকারীরা পরিবারের সঙ্গে ০১৫১৮৪৯৫৬০৯ নম্বর থেকে যোগাযোগ করে মুক্তিপণ দাবি করে। বিষয়টি পরিবারের মাধ্যমে জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুলিশের সহযোগিতা নেন, প্রশাসনের তৎপরতার খবর পেয়ে অপহরনকারীরা তার সব কিছু রেখে তাকে ছেড়ে দেন।
এ বিষয়ে আসাদের সহপাঠী রাফিদ হাসান জানান, আসাদের চাচা মারা যাওয়ায় ও আজ ভোরের দিকে বরিশাল থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন, পথিমধ্যে এই ঘটনার শিকার হন ।
এ বিষয়ে আসাদের বাবা বলেন, আসাদের বড় চাচা গতকাল রাতে মারা যাওয়ায় আজকে ভোরে বাড়ি আসার পথে মাদারিপুর থেকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণ না পেয়ে ওর মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। পরে অন্য একটি বাসে করে আসাদ বাড়ি ফিরছে বলে জানান।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সোনিয়া খান সনি বলেন, মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে বরিশাল থেকে ঝিনাইদাহ বাড়ি যাওয়ার পথে মাদারিপুরে আটকিয়ে মুক্তিপণ দাবি করা হচ্ছে, এমন ঘটনা জেনে সাথে সাথে মাদারিপুর পুলিশকে কল করি। শিক্ষার্থী এখন নিরাপদে আছে সে বাড়ি ফিরতেছে শিক্ষার্থী এবং পরিবারের সাথে কথা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হাসেম আলী (৩৫) নামে এক নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার (২২ জুন) সকাল ৯টার দিকে উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের হোসেনাবাদ গোড়ের পাড়া গ্রামে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত হাসেম আলী দৌলতপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের গোবরগাড়া গ্রামের মৃত আছান শেখের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্মাণাধীন একটি ভবনে ইট ভেজাতে গিয়ে বৈদ্যুতিক মোটরে কাজ করার সময় অসাবধানতাবশত বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন হাসেম আলী। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা বলেন, “বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) এক ছাত্রীকে অচেতন করে ধর্ষণের অভিযোগে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. মোখলেসুর রহমানকে প্রধান করে শনিবার এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো সাইফুল ইসলাম এবং ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং ও টি টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক বেলাল শিকদার।
এসব তথ্য জানিয়ে শাবি প্রক্টর মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। নির্ধারিত সময়ে রিপোর্ট দেবো। এর সাথে আরও কেউ জড়িত কি না তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হবে। যাদেরই সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এরআগে শুক্রবার বিকেলে ওই ছাত্রী বাদি হয়ে সিলেটের কতোয়ালি থানায় ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
মামলায় শান্ত তারা আদনান এবং স্বাগত দাস পার্থ’র নাম উল্লেখ করে অজ্ঞতনামা আরও তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।
আদনান ও পার্থকে বৃহস্পতিবার রাতেই আটক করে পুলিশ। পরে মামলায় তদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তারা দু'জনই শাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার শান্ত তারা আদনান নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি শাবি ছাত্রলীগের সভাপতি খলিলুর রহমানের অনুসারী ছিলেন। আওয়ামী লীগ শাসনামলে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসীূচতে তাকে দেখা গেছে। আদনান বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যান্ড দল ‘নোঙর’-এরও সদস্য ছিলেন।
অপরদিকে, ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া আরেক শিক্ষার্থী স্বাগত দাস পার্থ গত বছরের জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে সক্রিয় ছিলেন বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষার্থী। তার ফেসবুকে প্রোফইলেও জুলাই আন্দোলনের সমর্থনে ছবি যুক্ত রয়েছে। তবে কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিযোগ, পার্থ ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন। তবে তিনি তেমন সক্রিয় ছিলেন না।
এদিকে, পার্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যসংগঠন ‘দৃক থিয়েটার’-এর কর্মী ছিলেন বলে জানা গেছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে ভুক্তভোগী ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর ধর্ষণের লিখিত অভিযোগ করেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগ এবং বিশ্ববিদ্যালের শৃঙ্খলা-বডি সূত্রে জানা যায়- গত ২ মে সন্ধ্যারাতে সহপাঠী শান্ত তারা আদনান এবং স্বাগত দাস পার্থের সঙ্গে শহরের কনসার্টে যাচ্ছিলেন ওই ছাত্রী। কনসার্টে যাওয়ার পূর্বে তারা ওই ছাত্রীকে সুরমা এলাকার একটি মেসে নিয়ে যান। এ সময় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে অচেতন করে ধর্ষণ করেন আদনান এবং পার্থ। একইসাথে এই ঘটনার ভিডিও এবং মেয়েটির নগ্ন ছবি ধারণ করেন। পরে ওইসকল ভিডিও ও নগ্ন ছবি দেখিয়ে আদনান এবং পার্থ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে নিয়মিত ব্ল্যাকমেইল করছিলেন এবং ঘটনা জানাজানি করলে ভিডিও ও ছবি অনলাইনে ছেড়ে দেওয়ার হুমকিও দেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী প্রক্টর বরাবর অভিযোগ করলে প্রক্টর অধ্যাপক মোখলেছুর রহমান তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে পুলিশকে জানান। পরে পুলিশ আদনান এবং পার্থকে আটক করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসেন। এরপর প্রক্টরের সঙ্গে আলোচনা শেষে তাদেরকে থানায় পুলিশ হেফাজতে নেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোখলেছুর রহমান বলেন, 'বৃহস্পতিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থী শ্লীলতাহানির বিষয়ে অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনার সত্যতা পেয়েছি আমরা। বর্তমানে অপরাধীরা পুলিশ হেফাজতে আছে এবং মামলার বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া চলমান।'
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম বলেন, 'প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে যে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন তা নেওয়া হচ্ছে।'
মন্তব্য