বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় দেশে টিকা আসা নিয়ে যে শঙ্কা ছিল, তা কেটে গেছে। প্রভাবশালী দেশগুলো থেকে নিয়মিতই আসছে টিকার চালান। কেটে গেছে টিকা পাওয়া নিয়ে ভাবনা।
আগস্ট থেকে সপ্তাহে এক কোটি নাগরিককে টিকা দেয়ার কথা ভাবছে সরকার। এর মধ্য দিয়ে ২০২২ সালের প্রথমার্ধে ৮০ ভাগ মানুষকে টিকা দিয়ে স্বাভাবিক চলাচলে সক্ষম করতে চায় বাংলাদেশ।
সংশ্লিষ্ট ও কূটনীতিক মহলের দাবি, সরকারের ভারসাম্যপূর্ণ কূটনীতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঠিক নির্দেশনার কারণেই এমনটা সম্ভব হয়েছে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে টিকা কেনার চুক্তি হওয়ার পর বিশ্বে আমরা খুবই ভালো অবস্থানে ছিলাম। কিন্তু তাই বলে আমরা বসে থাকিনি। অন্যদের সঙ্গেও টিকা নিয়ে কথা বলা শুরু করি। টিকা কিনতে আমরা আগে থেকেই টাকা রেখে দিই। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় জনগণের জন্য টিকা নিশ্চিতই ছিল আমাদের মূল লক্ষ্য।
‘কিন্তু সমস্যা ছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) অনুমোদনহীন টিকার ব্যবহার বা আমদানি নিয়ে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কেবল ডব্লিউএইচও অনুমোদিত টিকাই আমরা আমদানি করব। একই সঙ্গে আমরা এখনও মনে করি, কেবল আমদানি করা টিকায় জনগণকে বাঁচানো যাবে না। এ জন্য নিজেদের টিকা উৎপাদন শুরু করব। এরই মধ্যে চীন ও রাশিয়া বাংলাদেশে টিকা উৎপাদন, বোটলিং, ফিনিশিং ও লেভেলিং শুরু করতে বাংলাদেশি কোম্পানির সঙ্গে কাজ শুরু করেছে।’
তিনি বলেন, “ডিসেম্বরে আমরা গণটিকা শুরু করি। এরপর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বাংলাদেশ সফরে আসেন তাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর উপলক্ষে। তখন টিকার বিষয়টি আমরা জারি রাখি। এর আগে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়াল সামিট অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে নরেন্দ্র মোদি ‘নেইবার ফার্স্ট’ বলে কথা দেন। এরপর মার্চে মোদির বাংলাদেশ সফরেও টিকার সরবরাহ নিয়ে তিনি বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেন। আবার যখন ভারত টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়, তখনও আমরা টিকা পেতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখি।”
বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে টিকা নিয়ে বাংলাদেশের তৎপরতা প্রসঙ্গে মোমেন বলেন, ‘জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ফেব্রুয়ারিতে বাইডেন প্রশাসনের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাই। তখনও ভারত থেকে সিরামের টিকা পেতে তেমন কোনো সংকট দেখা যায়নি।
‘প্রতি মাসে তারা আমাদের ৫০ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহে চুক্তিবদ্ধ ছিল। তবু আমি যুক্তরাষ্ট্র গিয়ে টিকার বিষয়ে আলাপ করি। সেবার এ নিয়ে আমার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন, সিনেটের ফরেন রিলেশনস কমিটির চেয়ারম্যান বব মেনেন্দেজসহ আরও কয়েকজন সিনেটরের বৈঠক হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমি সব বৈঠকেই করোনা মহামারির ভয়াবহতার কথা তুলে ধরে টিকার বিষয়ে সহায়তা চাই। এরপর এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় আসেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জলবায়ুবিষয়ক উপদেষ্টা জন কেরি।
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাইডেনের আমন্ত্রণপত্র তুলে দিতে আসেন তিনি। আমার সঙ্গে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার বৈঠক হয়। তখন টিকা নিয়ে ভারত সমস্যায় পড়তে শুরু করেছে। আমি সে সময় টিকার বিষয়ে তার (কেরি) সহায়তা চাই।’
টিকা নিয়ে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘৬ মে টিকা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারের সঙ্গে আমার জরুরি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে আমি জরুরি ভিত্তিতে দুই কোটি ডোজ টিকা চাই। এর মধ্যে দেশের চলমান টিকা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অন্তত ৪০ লাখ ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা চাওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যখন তাদের হাতে থাকা ৬০ মিলিয়ন (৬ কোটি) ডোজ টিকা বিভিন্ন দেশকে দিতে রাজি হলো, তখন বাংলাদেশের সংক্রমণ ও মৃত্যুহার কম ছিল। এ কারণে তাদের তালিকায় তখন বাংলাদেশের নাম ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার ছিল ভারত, ব্রাজিল ও নেপাল। কারণ দেশগুলোতে কোভিড ভয়াবহতায় রোমহর্ষক পরিবেশ তৈরি হয়েছিল।
‘এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মিলার আমাকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভারতীয় কমিউনিটি খুবই শক্তিশালী। তারা বাইডেনের নির্বাচনে প্রচুর খরচ করেছেন। তারা চায় আগে যুক্তরাষ্ট্র ভারতে টিকা পাঠাক। তাদের কারণেই বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশে মৃত্যুহার কম থাকায় টিকা দিতে পারছে না। তিনি তখন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশি কমিউনিটিকে কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন।’
যুক্তরাষ্ট্র থেকে টিকা পেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা প্রবাসী ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ সাদেক, ডা. মাসুদুল হাসান, মাহমুদ উস শামস চৌধুরী ও ডা. চৌধুরী হাফিজ আহসান। ফাইল ছবি
প্রবাসী বাংলাদেশিদের আন্তরিকতার প্রশংসা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এরপরই আমি আমাদের কমিউনিটির সঙ্গে যোগাযোগ করি। আমরা টিকা পেতে মরিয়া ছিলাম। বিশ্বের সব জায়গায় টিকা পেতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।
‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে টিকা পেতে আমাদের প্রবাসী ভাই-বোনদের অবদান অস্বীকার করার নয়। তারা স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন। হোয়াইট হাউসে সেই স্বাক্ষর জমা দিয়েছেন, সর্বোচ্চ লবিং চালিয়েছেন। তারা সরকারের পক্ষে বড় প্রেশার গ্রুপ হিসেবে কাজ করেছেন।’
তিন কোটির চুক্তি করে ভারতের সরবরাহ ৭০ লাখ
কূটনীতি বিশ্লেষকদের মতে, প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক গভীর। দুই দেশের নিবিড় বন্ধুত্বের সময়ে এসে চুক্তির মাধ্যমে আগাম টাকা দিয়ে টিকার সরবরাহে অনিশ্চয়তা তৈরি হলে জনগণের কাছে ভুল বার্তা যায়।
এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মো. তৌহিদ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সংকটে এসে সবাই স্বার্থপর হয়ে যায়। তারপরও দুই দেশের সম্পর্কে যে ঘনিষ্ঠতা আমরা দাবি করি, সেদিক থেকে দেখলে এ ধরনের পরিস্থিতি না হলেই ভালো হতো।
‘প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজের বদলে ২৫ লাখ ডোজ দিয়ে যদি বলা হতো বাকিটা দ্রুত দিয়ে দিচ্ছি, তাহলেও ভরসা পাওয়া যেত। কিন্তু একেবারেই বন্ধ রাখাটা ঠিক হলো না।’
করোনার টিকা দেয়া নিয়ে বাংলাদেশ চমক সৃষ্টি করেছিল শুরুতেই। ৫ নভেম্বর ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড আমদানির ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করে বাংলাদেশ।
বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট চুক্তিতে সই করে।
চুক্তির আওতায় প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে তিন কোটি ডোজ টিকা বাংলাদেশকে দেয়ার কথা ছিল সিরামের।
জানুয়ারিতে প্রথম টিকার চালান আসে বাংলাদেশে। ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয় গণটিকাদান। তখন মাত্র ৩২টি দেশ টিকা দেয়া শুরু করেছিল।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একধিক কর্মকর্তার ভাষ্য, এটি ছিল বাংলাদেশের টিকা কূটনীতির প্রথম বিজয়। ‘প্রতিবেশী আগে’-ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এই স্লোগানকে কাজে লাগিয়েছিল বাংলাদেশ।
এর আগে বাংলাদেশের সঙ্গে নানা ইস্যুতে কিছুটা সম্পর্কের শিথিলতা তৈরি হলেও টিকাকে কূটনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিল ভারত। কেবল বাংলাদেশই নয়; নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ভুটানকেও টিকা দেয় ভারত।
দেশটির প্রতিদ্বন্দ্বী চীন বাংলাদেশকে টিকা সরবরাহের কূটনীতিতে এ ক্ষেত্রে ভারতের পেছনে পড়ে যায়। তাদের দুই কোম্পানি সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাকের টিকা তখনও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পায়নি।
অন্যদিকে রাশিয়া উৎপাদনস্বল্পতার কথা বলে বাংলাদেশকে টিকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য নিজেদের চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অন্যদিকে উন্নত দেশগুলো বৈশ্বিক টিকার ৯০ ভাগের বেশি নিজেদের কবজায় নেয়ার প্রতিযোগিতা শুরু করে।
এ সুযোগটা নিয়েছিল ভারত। তখন তারা বাংলাদেশকে অন্য দেশ থেকে টিকা আমদানি না করার শর্ত দিয়ে ডোজ সরবরাহের চুক্তি করে।
কিন্তু ভারত তাদের সেই অবস্থান এক মাসের মধ্যেই হারাতে শুরু করে। টিকার কাঁচামাল রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া নিষেধাজ্ঞা, সিরামের উৎপাদন প্ল্যান্টে আগুন ও ভারতে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছানোয় দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে সরকার টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়।
এ নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশের টিকাদান কর্মসূচি হুমকিতে পড়ে এবং একসময় বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে প্রথম ডোজ টিকা নিয়ে প্রায় ১৪ লাখ মানুষ দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় থাকেন।
দেশের কিছু কূটনীতিক একে ভারতের এক ধরনের ‘অপ্রতিবেশীসুলভ’ আচরণ বলে মনে করেন। বিশেষ করে দ্বিতীয় ডোজের জন্য ১৫ লাখ কোভিশিল্ড সরবরাহ না করাকে ‘অমানবিক’ বলে মনে করেন তারা।
তবে বাংলাদেশ বিকল্প খোঁজার চেষ্টা করেছে। এ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টিকা আবিষ্কারের (উদ্ভাবন) আগেই আমরা টিকা পেতে মরিয়া ছিলাম। এরই অংশ হিসেবে যখন টিকা কেবল বিভিন্ন দেশের গবেষণাগারে পরীক্ষা-নিরীক্ষাধীন, সে সময়ই আমরা কোভ্যাক্সকে টাকা পরিশোধ করে রাখি।
‘একই সঙ্গে যখনই যে দেশের টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পেয়েছে, তখনই ওই টিকা পেতে যোগাযোগ রেখেছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রীই প্রথম বিশ্বনেতা হিসেবে করোনার টিকাকে বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করে তা প্রাপ্তিতে সবার ন্যায্যতা নিশ্চিতের দাবি জানান।’
মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশ ভারতের টিকা সরবরাহের প্রতিবন্ধকতা ভালোভাবেই আমলে নিয়েছে। তারপরও কূটনৈতিক চ্যানেলে দেশটির কাছে টিকার দাবি অব্যাহত ছিল। একই সঙ্গে পৃথিবীর প্রতিটি কোনায় টিকার জন্য যোগাযোগ চালিয়েছি। আমরা চীন, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাজ্য, জাপানসহ প্রায় ৩০টির মতো দেশের কাছে টিকা চাই। এমনকি যেসব দেশের কাছে ১০ হাজার ডোজ টিকা ছিল, তাদের কাছেও গেছে বাংলাদেশ। কিন্তু প্রথমে সবাই কথা দিয়েছে। টিকা দেয়নি।’
‘এটাকে কূটনৈতিক টুলস হিসেবে ব্যবহার করেছে। আমরা হাল ছাড়িনি। আমরা লেগে ছিলাম। এখনও লেগে আছি। দেশের ৮০ ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন। এটা বাস্তবায়নে কাজ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলো। আমরা টিকা উৎপাদন, সরবরাহ ও মজুতকারীদের সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের লাইন করিয়ে দিয়েছি। বাকি সব করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পারচেজ, দর, উৎপাদন নিয়ে তারা কাজ করেছে।’
সংকট কাটিয়ে আশার আলো
কেবল জুলাই ও আগস্টেই সরকারের হাতে তিন কোটি টিকা পৌঁছানোর কথা, যা ২০২২ সালের প্রথমার্ধে গিয়ে দাঁড়াবে ২১ কোটিরও বেশি। ফলে একসময় বন্ধ হয়ে যাওয়া টিকা কর্মসূচি পূর্ণ্যোদমে সচল থাকায় কোনো বাধা থাকবে না।
এখন সারা দেশে ২৫ বছর বয়সী সবাইকে টিকা নিবন্ধনের আওতায় আনা হলেও কিছুদিনের মধ্যেই বয়সসীমা নেমে আসবে ১৮তে।
প্রথমে জেলা, উপজেলা পর্যায় থেকে এখন ইউনিয়ন ও গ্রামে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে টিকা। বয়স্ক ও শারীরিক অক্ষমদের জন্য বাড়িতে গিয়ে টিকা দেয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, কেবল ২৯ জুলাই ২ লাখ ৫০ হাজার ৯২৮ জনকে প্রথম ডোজ ও ৭ হাজার ৫৭ জেনকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার, মডার্না ও সিনোফার্মের টিকা দেয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমানে সরকারের হাতে এক কোটির ওপরে করোনার টিকা রয়েছে। আগস্টের মধ্যেই আরও দুই কোটি টিকা এসে পৌঁছাবে। এভাবে চীন থেকে তিন কোটি, রাশিয়া থেকে সাত কোটি, জনসন অ্যান্ড জনসনের সাত কোটি, অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটিসহ আগামী বছরের শুরুর মধ্যেই সরকারের হাতে প্রায় ২১ কোটি টিকা চলে আসবে। এর মাধ্যমে দেশের অন্তত ৮০ ভাগ মানুষকে টিকা দিতে সক্ষম হবে সরকার।’
তিনি জানান, দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্বিঘ্ন রাখতে এবং অধিকাংশ নাগরিককে টিকার আওতায় আনতে ১৮ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকদের টিকা দেয়া শুরু হবে।
দেশে বিদ্যমান সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) কার্যকর করা হবে করোনা টিকার ক্ষেত্রেও।
গ্রাম পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্য অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রগুলোকেও কাজে লাগানো হবে। স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মীরাও টিকাদান কার্যক্রমে অংশ নেবেন।
আরও পড়ুন:র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি), অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান বলেছেন, মব ভায়োলেন্স বা মব সন্ত্রাস করে এ দেশের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করা যাবে না। অপরাধী যেই হোক বা যে দলেরই হোক, আমরা তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করব।
শনিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে ঘটে যাওয়া ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবস্থা গ্রহণের অগ্রগতিসহ আরও কয়েকটি ঘটনায় অপরাধীদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে প্রেস ব্রিফিং করেন র্যাবের ডিজি। ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, ‘র্যাব এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেকোনো ধরনের অপরাধ সংঘটনের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের বিষয়ে তৎপর রয়েছে। দেশে বিগত কয়েক মাসে ঘটে যাওয়া অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের র্যাব গ্রেপ্তার করেছে। তাদের যেন শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়, সে ব্যাপারে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি। মব ভায়োলেন্স সৃষ্টির অপরাধে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ জন অপরাধীকে র্যাব আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে।’
‘গত ২ জুলাই লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানায় সন্ত্রাসী কর্তৃক মব সৃষ্টির মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের আহত করে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমরা ৩ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। এ ছাড়াও গত ৩ জুলাই কুমিল্লার মুরাদনগরে ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় একই পরিবারের মা ও দুই সন্তানের ওপর মব ভায়োলেন্সের অযাচিত ঘটনায় ৬ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
সলিমুল্লাহ মেডিকেলের সামনে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র্যাব কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত এজাহারনামীয় ৪ নম্বর আসামি আলমগীর (২৮) এবং ৫ নম্বর আসামি মনির ওরফে লম্বা মনিরকে (৩২) আমরা গতকাল (শুক্রবার) রাজধানীর কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।’
‘এ ঘটনায় আমরা ছায়া তদন্ত করছি, আর পুরো বিষয়টি দেখছে ডিএমপির তদন্ত বিভাগ।’
র্যাবের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।
রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগকে (৩৯) নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনাকে খুবই দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
শনিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর পুরান ঢাকার মিল ব্যারাকে পুলিশের বিশেষ কল্যাণ সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ব্যবসায়ী হত্যা ও মব সহিংসতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র বলেন, ‘ঢাকায় যে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে, সেটা খুবই দুঃখজনক। এ ঘটনায় এরই মধ্যে পাঁচজনকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। গতকালও র্যাব দুজন ও ডিএমপি দুজনকে ধরেছে। পরে আরও একজনকে ধরা হয়েছে।’
বাকিদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সতর্ক অবস্থায় আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা মোটামুটি অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছি। ছোটখাট ঘটনায়ও সংঘাতে জড়িয়ে পড়ি। এই জিনিসটা বন্ধ করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এর আগে চাঁদপুরে, খুলনা ও চট্টগ্রামের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। যেগুলো হচ্ছে, আমরা সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
পুলিশের মিল ব্যারাক এলাকা পরিদর্শন নিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে পরিদর্শনের উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের সঙ্গে একটু কথা বলা। তাদের থাকা ও খাবারের মান দেখা। আগামী নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজনে তাদের একটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব এখানে।’
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে চাই বলেও এ সময় মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কবে হবে, সেটা আমরা জানি না। সেটা জানাবে নির্বাচন কমিশন।’
অভিযানে গৌরবময় অবদান রাখায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের টাগবোট ‘বিসিজিটি প্রমত্ত’ এবং এর ক্রুদের ‘প্রশংসাপত্র’ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও)।
শনিবার সকালে কোস্টগার্ড সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন-অর-রশীদ বাসস’কে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থানকালে গত বছর ৫ অক্টোবর রাতে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) মালিকানাধীন তেলবাহী জাহাজ ‘এমটি বাংলার সৌরভ’-এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দ্রুত ও কার্যকর অগ্নিনির্বাপণ এবং সামুদ্রিক পরিবেশগত বিপর্যয় রোধে ‘বিসিজিটি প্রমত্ত’ অসাধারণ ভূমিকা রাখে।
ঘটনার সময় ট্যাংকারটিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে এবং আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যা সামুদ্রিক জীববৈচিত্র ও পরিবেশের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। তৎক্ষণাৎ জরুরি উদ্ধার অভিযান শুরু করে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড।
‘বিসিজিটি প্রমত্ত’ এবং এর সাহসী নাবিকরা ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সফল অভিযান পরিচালনা করেন। সেই অভিযানে ৪৮ জন নাবিককে উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি তেল ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে কার্যকর ব্যারিয়ার স্থাপন ও বর্জ্য সংগ্রহের মাধ্যমে গভীর সমুদ্রে দূষণরোধ করা হয়।
এই দৃষ্টান্তমূলক ও সাহসিকতাপূর্ণ অভিযানের জন্য আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও) ‘বিসিজিটি প্রমত্ত’ এবং এর ক্রুদের ‘লেটার অব কমান্ডেশন' দিয়েছে।
আইএমও এই অভিযানে প্রদর্শিত পেশাদারিত্ব, দক্ষতা, পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা এবং আন্তর্জাতিক নৌ নিরাপত্তা নীতিমালা অনুসরণের বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে মূল্যায়ন করেছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আইএমও’র এই স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও দেশের জন্য বড় অর্জন। এটি শুধু কোস্টগার্ড নয়, পুরো দেশের জন্যই গর্বের। এই স্বীকৃতি প্রমাণ করে, কোস্টগার্ড একটি আধুনিক ও দক্ষ বাহিনী হিসেবে যেকোন দুর্যোগে সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম।
লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন-অর-রশীদ আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ কোস্টগার্ড সর্বদা সমুদ্রসীমায় নিরাপত্তা বিধান, বিপদগ্রস্তদের উদ্ধার, সমুদ্র দূষণ প্রতিরোধ ও পরিবেশ সুরক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভবিষ্যতেও বাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী দায়িত্ব পালনে বদ্ধপরিকর থাকবে।
টানা চার দিনের মুষলধারে বৃষ্টিপাতের পর টানা দুদিন নোয়াখালীতে রোদ্রৌউজ্জ্বল আবহাওয়া বিরাজ করছে। এতে অধিকাংশ উপজেলায় জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর, দুর্গাপুর ও লক্ষীনারায়ণপুর গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামে পানি বেড়েছে। স্থানীয়দের ধারণা ফেনীর পানি ঢুকে বৃষ্টি না থাকলে এ অঞ্চলে পানি বেড়েছে।
শনিবার (১১ জুলাই) সকালে জেলার সদর, সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলার বাসিন্দারা জানায় তাদের এলাকায় পানি নামছে ধীর গতিতে। এজন্য বেশিরভাগ এলাকায় এখনো বন্যার পানি জমে থাকায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলার ছয়টি উপজেলার ৫৭টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে। এতে ৪৬ হাজার ৭০টি পরিবারের প্রায় ১ লাখ ৯২ হাজার ৫০৩ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। কবিরহাট ও সুবর্ণচর উপজেলায় আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৫টি বসতঘর। সুবর্ণচরে একটি বসতঘর সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ,পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাব এবং পানি নিষ্কাশনের নালা ও জলাশয় গুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় শহরবাসীর এ দুর্ভোগ। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন অনেকে। হালকা বৃষ্টিতেই নোয়াখালী পৌরসভা এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এদিকে মাইজদীর লক্ষ্মীনারায়ণপুর, সেন্ট্রাল রোড, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা শিল্পকলা একাডেমিসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় এখনো রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে রয়েছে। আশপাশের অনেক বাসাবাড়িতেও পানি জমে রয়েছে। টানা বৃষ্টির বিরতিতে মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেলেও জলাবদ্ধতা ও বন্যা পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি।
জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালীতে তেমন কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি। আপাতত ভারী বৃষ্টিরও সম্ভাবনা নেই। তবে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে।
জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান বলেন, পাঁচটি উপজেলায় ৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ১ হাজার ৮৫০ জন মানুষ এবং ১৭১টি গবাদি পশু। দুর্গতদের চিকিৎসায় ৫১টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে, যার মধ্যে ২৯টি কাজ শুরু করেছে। বন্যার ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, পানি নিষ্কাশনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বৃষ্টি না হলে জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, মিটফোর্ডের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারে সরকার বদ্ধপরিকর। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইনের অধীনে দ্রুততম সময়ে বিচার শেষ করা হবে।
উপদেষ্টা শনিবার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, মিটফোর্ডের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারে সরকার বদ্ধপরিকর। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৫ জনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
তিনি আরো বলেন, এই পাশবিক হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হবে এবং ধারা ১০-এর অধীনে দ্রুততম সময়ে বিচার নিশ্চিত করা হবে।
গত বুধবার রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯)। হত্যার আগে তাকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে ও ইট-পাথরের আঘাতে মাথা ও শরীর থেঁতলে দেওয়া হয়।
এই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ, মামলার এজাহার, নিহতের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা এবং তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে হত্যাকাণ্ডের এমন বর্ণনা উঠে এসেছে।
মিটফোর্ড (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) হাসপাতালের সামনের ব্যস্ত সড়কে প্রকাশ্যে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। তদন্তকারী কর্মকর্তারা ও স্থানীয় সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ চাঁদাবাজি। নিহত লাল চাঁদ একসময় যুবদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
এদিকে, অভিযুক্ত নেতা-কর্মীদের দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে বিএনপি। পাশাপাশি ঘটনার নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। বিএনপি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে আসকর আলী (২৪) নামে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন।
শনিবার (১২ জুলাই) ভোরে উপজেলার মিনাপুর সীমান্তের ৩৫৩ নম্বর প্রধান পিলারের কাছে ভারতের অভ্যন্তরে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আসকর আলী হরিপুর উপজেলার জীবনপুর গ্রামের কানুরার ছেলে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
স্থানীয় সূত্র ও বিজিবি জানায়, শনিবার ভোর আনুমানিক চারটার দিকে আসকর আলীসহ কয়েকজন মিনাপুর সীমান্তের ৩৫৩ নম্বর প্রধান পিলার সংলগ্ন এলাকা দিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে যান। এ সময় ভারতের কিষাণগঞ্জ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে আসকর আলী ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তার মরদেহ ভারতের প্রায় ২০০ গজ অভ্যন্তরে পড়ে আছে বলে জানা গেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সীমান্তে অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। অপরদিকে, ভারতের সীমান্তেও অতিরিক্ত বিএসএফ সদস্য মোতায়েন রয়েছে বলে জানা গেছে।
দিনাজপুর ৪২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা শুরু করেছে। নিহত যুবকের লাশ ফেরত আনার জন্য বিএসএফকে পতাকা বৈঠকে বসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
৪২ বিজিবি জানিয়েছে, "আমরা বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে লাশটি ফেরত আনার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক কার্যালয়ের আঞ্চলিক পরিচালক সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে পুতুলের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের গুরুতর অভিযোগের তদন্ত চলাকালীন শুক্রবার এ সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি।
ডব্লিউএইচও’র এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ সরকার বলেছে, আমরা এটিকে জবাবদিহিতার পথে গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দেখি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম শনিবার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে সরকারের এই বক্তব্য তুলে ধরেন।
সায়মা ওয়াজেদকে পদ থেকে অপসারণ প্রসঙ্গে তিনি লেখেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এর একটি স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন, যেখানে সায়মা ওয়াজেদকে তার পদ থেকে অপসারণ করা হবে, তার সকল সুযোগ-সুবিধা বাতিল করা হবে এবং এই মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্বের সততা ও জাতিসংঘ ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধার করা হবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ও বিশ্ববাসী স্বচ্ছতা, সততা ও ন্যায়বিচারের আবির্ভাবে আনন্দিত।
মন্তব্য