গ্রামাঞ্চলের মানুষদের করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নিশ্চিতে আগস্ট থেকে ক্যাম্পেইনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। নির্ধারিত বয়সের কেউ জাতীয় পরিচয় পত্র নিয়ে টিকা কেন্দ্রে আসলেই দেয়া হবে টিকা।
করোনারোধী টিকার সার্বিক বিষয় নিয়ে রোববার বিকেলে নিউজবাংলার এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআরের) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর।
তিনি জানান, গ্রামের মানুষের টিকা নিশ্চিতে আগামী মাস থেকে ক্যাম্পেইন করে টিকা দেয়া হবে। শিশুদের বেশ কয়েকটি রোগ থেকে প্রতিরোধের জন্য নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচি যেভাবে বাস্তবায়ন হয় অনেকটা সেভাবেই গ্রামে করোনা টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন হবে।
আলমগীর বলেন, ‘ইউনিয়ন পর্যায়ে যেসব টিকাদানকেন্দ্র রয়েছে। এসব টিকাদান কেন্দ্রে করোনার টিকা দেয়া হবে। সেখানে এসে মানুষ টিকা নিতে পারবেন। টিকা নিতে আসার সময় জাতীয় পরিচয় পত্র সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, আগামী ৭ আগস্ট থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত গ্রামাঞ্চলে টিকার ক্যাম্পেইন চলবে। এ সময়ের মধ্যে ৬০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
নিবন্ধন জটিলতার কারণে গ্রামাঞ্চলের অনেক মানুষ করোনারোধী টিকা নিতে আগ্রহী হচ্ছে না। এ জটিলতা নিরসনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর টিকাদান কর্মসূচি আরও সহজ করার উদ্যোগ নিয়েছে।
বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর তালিকায় আবারও জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। এতে ঢাকা আজ চতুর্থ শহর হিসেবে অবস্থান করছে।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সকালে আন্তর্জাতিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইকিউএয়ার-এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার বায়ু মান সূচক (AQI) দাঁড়িয়েছে ১৫৯, যা ‘অস্বাস্থ্যকর’ শ্রেণিতে পড়ে।
তালিকায় শীর্ষে আছে পাকিস্তানের লাহোর (AQI 311), এরপর ভারতের দিল্লি (AQI 222), ও কলকাতা (AQI 198)। ঢাকার ঠিক নিচে রয়েছে পাকিস্তানের করাচি (AQI 159)।
আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে আইকিউএয়ারের ঢাকার গড় বায়ুমান ১৯৩। এই মান অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
রাজধানীতে চলতি মাসে বায়ুর মান এতটা খারাপ হয়নি। বায়ুর মান ২০১ হলে তাকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়। আজ অবশ্য নগরীর দু-একটি স্থান আছে, যেখানে বায়ুর মান খুব অস্বাস্থ্যকর। মোট আটটি স্থানে বায়ু অনেক বেশি দূষিত।
বায়ুদূষণের এ পরিস্থিতি তুলে ধরেছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। প্রতিষ্ঠানটি বায়ুদূষণের অবস্থা নিয়মিত তুলে ধরে। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সেই সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় ও সতর্ক করে।
নগরীর ৮ এলাকায় দূষণ বেশি
নগরীর আট এলাকায় দূষণ পরিস্থিতি বেশ খারাপ। এসব এলাকার মধ্যে শীর্ষে আছে পুরান ঢাকার বেচারাম দেউড়ি, স্কোর ২৫৫। এই মানকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলে বিবেচনা করা হয়।
বাকি সাত এলাকা হলো বে’জ এজ ওয়াটার (১৯৩), কল্যাণপুর (১৯৩), দক্ষিণ পল্লবী (১৯৩), গোরান (১৯১), ইস্টার্ন হাউজিং (১৮৩), গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল (১৭১) ও শান্তা ফোরাম (১৬৮)।
আজ ঢাকা ও অন্য শহরগুলোর যে বায়ুমান, এর পরিপ্রেক্ষিতে নগরবাসীর জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছে আইকিউএয়ার। এর মধ্যে আছে ঘরের বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরে যেতে হবে, জানালা বন্ধ রাখতে হবে, ঘরের বাইরে ব্যায়াম যতটুকু সম্ভব এড়িয়ে যেতে হবে। আর যেসব এলাকায় বায়ুর মান অস্বাস্থ্যকর, সেসব এলাকায় অবশ্যই বাড়ির বাইরে গেলে মাস্ক পরতে হবে।
বিপুল সংখ্যক আসামির জামিন দেয়ায় হাইকোর্টের তিন বিচারপতির কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। মঙ্গলবার সকালে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে জুলাই-আগস্টের একটি হত্যা মামলার আসামি আব্দুল হক প্রামাণিকের জামিন শুনতে বিব্রতবোধ করেছেন আপিল বিভাগ।
হাইকোর্ট বিভাগের এ তিন বিচারপতি হলেন- বিচারপতি আবু তাহের সাইফুর রহমান, বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি জাকির হোসেন।
রাশিয়া যদি বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, তবে পাল্টা হামলা চালিয়ে মস্কোকে “মানচিত্র থেকে মুছে দেবে” ন্যাটো। এমন কড়া হুঁশিয়ারিই দিয়েছেন বেলজিয়ামের প্রতিরক্ষামন্ত্রী থিও ফ্রাঙ্কেন।
একইসঙ্গে ইউরোপে ৬০০টি এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান মোতায়েনের ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।
সোমবার বেলজিয়ান দৈনিক ডি মর্গেন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফ্রাঙ্কেন বলেন, “যদি (রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির) পুতিন ব্রাসেলসের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে, আমরা মস্কোকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলব।”
ন্যাটোর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ইউরোপে যেসব সংশয় দেখা দিয়েছে, তা তিনি গুরুত্বহীন বলে মন্তব্য করেন।
ফ্রাঙ্কেন বলেন, “ইউরোপে আমেরিকান সরকারের বিরুদ্ধে পক্ষপাত এতটাই প্রবল যে সেটা অবিশ্বাস্য। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র শতভাগ ন্যাটো মিত্রদের পাশে থাকবে। ব্রাসেলসে ক্রুজ মিসাইল হামলা? এটা তো বোঝাই যাচ্ছে, সেক্ষেত্রে কেউই দ্বিধা করবে না। পুতিনও এটা জানেন।”
তবে তিনি সতর্ক করে দেন, রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতাকে ছোট করে দেখার ভুল যেন কেউ না করে।
তার ভাষায়, “রাশিয়া এখন তার সামরিক সক্ষমতা অনেক বাড়িয়েছে। তাদের যুদ্ধ অর্থনীতি এখন ন্যাটোর সব দেশ মিলে যত গোলাবারুদ তৈরি করে, তার চারগুণ উৎপাদন করছে। অথচ ইউরোপের এখনো কোনো কেন্দ্রীয় সামরিক কমান্ড নেই।”
ফ্রাঙ্কেন বলেন, “রাশিয়া ইউক্রেনে সমস্যায় পড়েছে কারণ তারা পুরো পশ্চিমা বিশ্বের বিপক্ষে লড়ছে। ইউক্রেনীয়রা আমাদের অস্ত্র, গোলাবারুদ ও অর্থ দিয়েই যুদ্ধ চালাচ্ছে, নইলে অনেক আগেই তারা পরাজিত হতো।”
আগামীদিনের পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ফ্রাঙ্কেন বলেন, পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে রাশিয়া ও চীনের যৌথ চ্যালেঞ্জের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
তিনি বলেন, “চীন চায় ইউক্রেনের যুদ্ধ যতদিন সম্ভব চলুক, কারণ এতে পশ্চিমা বিশ্ব দুর্বল হবে। চীন বিপুল পরিমাণে রাশিয়ার কাঁচামাল কিনছে, অস্ত্র সরবরাহ করছে, আর রাশিয়ায় উত্তর কোরীয় সৈন্য পাঠানোকেও তারা ভালো চোখে দেখছে।”
ফ্রাঙ্কেন আরও বলেন, “রাশিয়া নিকট ভবিষ্যতে বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোতে বড় আক্রমণ করবে বলে মনে হয় না। কারণ, সেগুলো ন্যাটো সদস্য। খুব শিগগিরই ইউরোপে ৬০০টি এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান মোতায়েন হবে। রাশিয়ানরা এগুলোকে ভয় পায়, কারণ তাদের পক্ষে এগুলো শনাক্ত করা সম্ভব নয়।”
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ আল মামুনের বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে মধ্যরাতে বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১১টায় বিশ্বিবদ্যালয়ের জোহা চত্বর থেকে তারা এই বিক্ষোভ শুরু করেন।
অধ্যাপক মামুন তার ফেসবুকে রাকসু হল সংসদের নারীদের শপথ গ্রহণের ছবি দিয়ে লেখেন ‘এই ব্যক্তিগত স্বাধীনতা আমি এন্ডর্স করছি। কাল আমি এরকম ব্যক্তিগত স্বাধীনতা পরে ও হাতে নিয়ে ক্লাসে যাবো। পরবো টু-কোয়াটার, আর হাতে থাকবে মদের বোতল। মদ তো ড্রাগ না! মদ পান করার লাইসেন্সও আমার আছে! শিবির আইসেন, সাংবাদিকরাও আইসেন!’
তার এই পোস্টের পরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা। পরবর্তীতে তিনি পোস্টটি ডিলিট করে দেন। এরপরই শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভের ডাক দেন। হল থেকে শিক্ষার্থীরা জোহা চত্বরে জড়ো হন। তারপর সেখান থেকে পশ্চিমপাড়ায় মেয়েদের হলগুলোর সামনে দিয়ে বিক্ষোভ নিয়ে যান তারা। এ সময় হল থেকে অন্য মেয়েরাও যুক্ত হন বিক্ষোভে।
এ সময় তারা ‘মামুনের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’, ‘মামুনের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না, ‘মদখোরের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘তোমার আমার পরিচয়, হিজাব হিজাব’, ‘রাবিয়ানদের অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘জ্বালোরে জ্বালো, আগুন জ্বালো’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
চট্টগ্রামের সাগরিকা এলাকায় মালবাহী একটি ট্রেনে ধাক্কা দিয়েছে চালবোঝাই একটি ট্রাক। এতে দুমড়ে-মুচড়ে গেছে ট্রাক, লাইনচ্যুত হয়েছে ট্রেন। দুর্ঘটনার ফলে মালবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) ভোরে নগরীর সাগরিকা স্টেডিয়াম রেলগেইট এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
রেলওয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ভোরে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মালবাহী ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। সাগরিকা এলাকায় পৌঁছালে একটি ট্রাক সিগন্যাল না মেনে ট্রেনের ইঞ্জিনে সজোরে আঘাত করে। এতে ট্রেনের ইঞ্জিন উল্টে যায়।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ট্রাক ও মালবাহী ট্রেনের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে মালবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। লাইনটি শুধু মালবাহী ট্রেন ও কনটেইনার পরিবহনের জন্য ব্যবহার হয়। এতে যাত্রীবাহী কোনো ট্রেন চট্টগ্রামে সমস্যা হচ্ছে না। ট্রেনটি উদ্ধারের কাজ চলছে।’
সরকারের কাছে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় সম্পর্কিত সুপারিশ দিতে যাচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে এই সুপারিশ হস্তান্তর করা হবে।
এর আগে সোমবার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত হয় কমিশনের সমাপনী বৈঠক। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ও কমিশন সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এতে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ সহ ৬ সদস্য ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। অন্য সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নেও সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কমিশন সদস্যরা।
এসময়, কমিশন গঠনের পর থেকে চূড়ান্ত সুপারিশ প্রদান পর্যন্ত সমস্ত ডকুমেন্ট, আলোচনার ভিডিও, অডিও, ছবি সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
গত ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় জুলাই সনদের স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। এতে বিএনপি-জামায়াতসহ প্রথম ধাপে ২৪টি রাজনৈতিকদল ও জোট এতে স্বাক্ষর করেন। এর ২ দিন পরে জাতীয় জুলাই সনদে স্বাক্ষর করে গণফোরাম।
তবে এখনও সই করেনি এনসিপিসহ কয়েকটি বাম দল। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠক বসে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বাংলাদেশে একটি স্থায়ী জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপনের জন্য কাজ করেছে- উল্লেখ করে কমিশন সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি আইন বিশেষজ্ঞ, বিচারপতি, শিক্ষাবিদসহ নাগরিক সমাজের বিশিষ্টজনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়েছে।’
বাংলাদেশ থেকে এক লাখ দক্ষ কর্মী নিয়োগের অগ্রগতি জানাতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে জাপানের ব্যবসায়িক ফেডারেশন ‘ন্যাশনাল বিজনেস সাপোর্ট কম্বাইন্ড কো-অপারেটিভস’ (এনবিসিসি)।
সোমবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রোববার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথিশালা যমুনায় এনবিসিসির ২৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এ সময় প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি-বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।
সমঝোতা স্মারক ও নিয়োগ পরিকল্পনা
‘ন্যাশনাল বিজনেস সাপোর্ট কম্বাইন্ড কো-অপারেটিভস’ হলো ৬৫টিরও বেশি কোম্পানির সমন্বয়ে গঠিত একটি জাপানি ব্যবসায়িক ফেডারেশন। সম্প্রতি সংস্থাটি বাংলাদেশের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (MoI) স্বাক্ষর করেছে, যার লক্ষ্য জাপানে বাংলাদেশি দক্ষ কর্মীদের প্রশিক্ষণ, সার্টিফিকেশন ও কর্মসংস্থানের জন্য একটি কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা।
এই চুক্তির আওতায় আগামী পাঁচ বছরে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং প্রোগ্রাম (TITP) এবং স্পেসিফাইড স্কিলড ওয়ার্কার্স (SSW) কর্মসূচির অধীনে এক লাখের বেশি কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রতিনিধি দলের সদস্যরা জানান, সমঝোতা স্মারকের আওতায় প্রথম ধাপে আগামী বছর দুই হাজার দক্ষ কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। পরবর্তী ধাপে ২০২৭ সালে ছয় হাজার এবং ২০২৮ সালে ১৮ হাজার কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে।
এর মধ্যে নির্মাণ, সেবা, এভিয়েশন, গার্মেন্টস ও কৃষি খাতে সবচেয়ে বেশি কর্মীর প্রয়োজন হবে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে গাড়িচালক, অটোমোবাইল ও রিসাইক্লিং খাতেও দক্ষ কর্মীর চাহিদা বাড়বে বলে প্রতিনিধি দল জানায়।
প্রশিক্ষণ কার্যক্রম
বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের লক্ষ্যে খুলনা ও গাজীপুরের কাপাসিয়ায় দুটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সম্ভাব্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এনবিসিসির প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ইতোমধ্যেই কেন্দ্র দুটি পরিদর্শন করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকে কর্মীদের প্রশিক্ষণে কোনো ঘাটতি আছে কি না জানতে চান। জবাবে এনবিসিসি চেয়ারম্যান মিকিও কেসাগায়ামা বলেন, “আমি গত মার্চ মাসে ট্রেনিং সেন্টার দুটি পরিদর্শন করেছিলাম। এবার এসে অবাক হয়েছি—সাত মাসের মধ্যে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। প্রশিক্ষণ নিয়ে আমরা খুবই সন্তুষ্ট। আমরা আশাবাদী, আগামী বছরই দুই হাজার দক্ষ কর্মী নিয়োগ দিতে পারব।”
তবে তিনি প্রশিক্ষকদের ভাষাগত দক্ষতা আরও বাড়ানোর পরামর্শ দেন।
ভাষা প্রশিক্ষণ ও নারীদের অংশগ্রহণ
ভাষাগত দক্ষতা অর্জনকেই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এর জন্য ভার্চুয়াল ক্লাস নেওয়া যেতে পারে। জাপান থেকে শিক্ষকরা অনলাইনে ক্লাস নেবেন। পাশাপাশি, জাপান থেকে প্রশিক্ষকদের এনে এখানে প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করা যেতে পারে।”
তিনি বাংলাদেশের নারীদের পরিশ্রম ও পারদর্শিতার প্রশংসা করে বলেন, “কেয়ারগিভিং সেক্টরে বাংলাদেশের নারীরা অনন্য। ভাষাগত দক্ষতা ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ পেলে তারা জাপানের কেয়ারগিভিং সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।”
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, “প্রথমে কিছুটা কঠিন মনে হলেও একবার প্রশিক্ষণ পেলে বাংলাদেশের মেয়েরা নিজেরাই অন্যদের শেখাতে পারবে। একবার যাওয়া শুরু হলে অন্যরাও উৎসাহ পাবে।”
এনবিসিসি প্রতিনিধিরা জানান, আগামী কয়েক বছরে জাপানে ৪ লাখের বেশি দক্ষ নার্সের প্রয়োজন হবে। তাই বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি নার্স নিয়োগের বিষয়টি তারা বিবেচনা করছেন।
সরকারের উদ্যোগ
বৈঠকে উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, সরকার জাপানে কর্মী নিয়োগের অগ্রগতি নিয়মিতভাবে পর্যালোচনা করছে। এ বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করা হবে। তিনি জানান, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে জাপানে কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্যা নিরসনে একটি বিশেষ সেল গঠন করা হয়েছে।
মন্তব্য