মহামারির কারণে পরপর দ্বিতীয় বছর কোরবানির ঈদে ছুটি পাওয়া হলো না চিকিৎসকদের। মানুষের সেবা নিশ্চিতে ও জীবন বাঁচাতে তারা রয়ে গেছেন হাসপাতালে। নিজেদের পরিবার পরিজন ছেড়ে তারা এই সংকটকালে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন মানুষের প্রাণ রক্ষায়।
কোভিড ডেডিকেটেড একাধিক হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা ঈদের ছুটির কথা চিন্তা না করে বরং মহামারির এই সময়ে কী করে রোগীর সেবা করা যায় সেটাই তাদের কাছে মুখ্য।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, হাসপাতালে সেবা কার্যক্রম ঠিক রাখতে স্বাভাবিক সময়ে বড় উৎসবে ৬০ শতাংশ চিকিৎসককে ছুটি দিয়ে ৪০ শতাংশ চিকিৎসককে রোগীর সেবায় হাসপাতালে রাখা হয়। তবে করোনা মহামারি কারণে বিগত চারটি ঈদে চিকিৎসকদের ছুটি দেয়া হচ্ছে না।
এরইমধ্যে ঈদুল আজহার উপলক্ষ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন সব স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থানের নির্দেশ দিয়েছে অধিদপ্তর।
এতে বলা হয়, করোনা রোগী সেবা নিশ্চিতে স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকারি ছুটিকালীন নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করতে হবে।
রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই হাসপাতালের মেডিসিন কনসালটেন্ট আহমেদ লুৎফর মবিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মহামারি মধ্যে চারটি ঈদ অতিবাহিত করছি। আমার আলাদা করে ঈদের আনন্দ অনুভাব করছি না। অন্যান্য ঈদের মতো এই ঈদের করোনা ইউনিটে দায়িত্ব পালন করছি। এটা আমাদের নিয়মিত দায়িত্বে মধ্যে পড়ে গেছে।’
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে করোনা শুরু থেকেই আমাদের রোগী সেবা করে আসছে হচ্ছে। যে কোনো মহামারিতে একটি গোষ্ঠীকে সামনের সারিতে এসে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তাদেরকে সামনে এগিয়ে আসতে হয়। করোনাকালে চিকিৎসকরা এগিয়ে এসেছে। এর বাইরেও অনেক পেশার লোক এই করোনা মোকাবিলায় গুরু দায়িত্ব পালন করছেন। লকডাউনের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সামনের সারিতে এসে কাজ করেছে। এই মহামারির সবার উদ্দেশ্য হলো এই যুদ্ধে আমাদের জয়ী হতে হবে।’
করোনা মহামারীতে গত দুই সপ্তাহ ধরে দেশে রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। মৃত্যুও বেড়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা শঙ্কা করছেন, ঈদের পর এই পরিস্থিত আরও খারাপ হতে পারে।
কেমন কাটছে ঈদ জানতে চাইলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতলের মেডিক্যাল অফিসার শামীমা আক্তার একটু হেসে বলেন, ‘সাধারণত বড় ধরনের উৎসব চিকিৎসকদের ছুটি থাকে না। কারণ, এই সময়ে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। তাই বড় উৎসবের আগেই আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রাখি। মানসিক প্রস্তুতিটায় এসব চিকিৎসকদের বেশি থাকে।
‘ঈদের দিন বড় একটা সময়ে আমরা হাসপাতালে অবস্থান করি। রোগীর সঙ্গে সংযুক্ত থাকি। এভাবেই আমাদের ঈদ পার হয়ে যায়।’
এর মধ্যে যে আক্ষেপ থাকে এমন নয়। শামীমা বলেন, ‘এটার মধ্যেই অনেক মজা হয়েছে। চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে পারছি এটা আনন্দের। হয়ত পরিবার থেকে দূরে আছি কিছুটা। তারপরেও এই দূরত্ব মনে হয় না।
‘কষ্টটা অনেক কমে আসে যখন চিকিৎসা সেবা দিয়ে একটি রোগীকে সুস্থ করতে পারি। ঈদের দিনে সুস্থ হয়ে হাসি মুখে যখন রোগী বাড়িতে ফেরে, এই দৃশ্য দেখে আমরা আমাদের কষ্ট ভুলে যাই।’
লাইফস্প্রিং মেডিসিন কনস্যালটেন্ট নওসাবাহ্ নূর দীর্ঘদিন ধরে করোনা রোগীর সুরক্ষা দিয়ে আসছেন। যদিও সশরীরের তাদের ঈদের দিন দায়িত্ব পালন করতে হয় না। তবে অনলাইনে রোগী দেখতে হবে।
তিনি বলেন, ‘করোনা রোগীর সঙ্গে প্রতিদিনই কাজ করতে হচ্ছে। পরিবার-পরিজন থেকে রোগীরাই এখন আমাদের কাছে বেশি আপন মনে হয়।’
ঈদের দিন দুপুরের পর থেকে রোগী দেখা শুরু হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মহামারি আসার পর থেকে হাসপাতালে অধিকাংশ ঈদ কাটছে। গতকাল থেকে ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে। আমাদের দায়িত্ব আমরা ঠিকভাবেই পালন করে যাচ্ছি। গতকালও কিছু রোগী দেখছি।’
গতকালই ঈদের দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চিকিৎসা পেশায় জেনেবুঝেই এসেছি। করোনা পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। সে কারণে হাসপাতালে রোগীর চাপও বেশি। কিছু চিকিৎসকরা হয়তো পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ করবে। কিন্তু বেশিরভাগের ঈদ কাটবে হাসপাতালে।’
পরিবার-পরিজন ছাড়া কেমন কাটে দিন- এমন প্রশ্নে নওসাবাহ নুর বলেন, ‘এটার মধ্যে অন্য রকম একটি আনন্দ রয়েছে। গতকাল চুয়াঙ্গায়া থেকেই একটি রোগী এসেছিলেন। আবার সারাদিন অনলাইনে ফোন করেন রোগীরা। এমনকি অনেক রাতেও কল আসে। এতে আমি বিরক্ত হই না।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ফরিদ হোসেন মিঞা বলেন, ‘দেশে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত সকলকে কর্মস্থলে থাকতে বলা হয়েছে। কেউ ছুটি পাননি। তাদের প্রতি আমরা ঋণী। তাদের ঋণ কখনও শোধ হবে না। তারপরও আমরা চাই সকলে চিকিৎসা পাক। করোনামুক্ত হোক দেশ।’
আরও পড়ুন:দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য